এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্মৃতিচারণ  নস্টালজিয়া

  • চেনা মানুষ অজানা কথা - ১৫ 

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | নস্টালজিয়া | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৭২৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)

  •  
     
    ইতিহাস এমনই – আজকের আপাত ছোট এক ঘটনা যে কালকের পৃথিবীতে বিশাল বড় দাগ কেটে যাবে তা সবসময় বোঝা যায় না ঘটনাটি যখন ঘটছে! এ যেন সেই ‘বাটারফ্লাই এফেক্ট’ – মানে ধরুন সেই সুদূর আমেরিকার কোন এক জায়গায় এক প্রজাপতি ডানা ঝাপটালো – তাতে বাতাসে যে কম্পন সৃষ্টি হল, সেই জিনিস আমাদের বর্ধমানে সৃষ্টি করল ঘূর্ণিঝড়! না হলে কে ভাবতে পেরেছিল প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ ১৯১৩ সালে বিদেশে পদার্পণ করে লন্ডন যাবার ট্রেন মিস করলেন, সেই ঘটনায় শুধু তাঁর নিজের জীবনই বদলে যাবে তাই নয়।  আজকের দিনের আমাদের যে হাওড়া ব্রীজ, সেই ডিজাইনের হাওড়া ব্রীজ-ও হয়ত আমরা পেতাম না সেদিন প্রশান্ত বাবু ট্রেন-টি মিস না করলে!  

    প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ এর পরিচয় নতুন করে আর কি দেব! জাষ্ট একটু ধরিয়ে দেওয়া যাক – তাঁকে বলা হয় ভারতের আধুনিক সংখ্যাতত্ত্বের পিতা (ফাদার অফ মর্ডান স্ট্যাটিসটিক্স)।  তিনি না থাকলে স্বাধীন ভারতের শিল্পনোন্নয়ন এতটা হত কিনা সন্দেহ আছে, আর আজকের দিনে ভারতের ছেলেপুলে এবং স্ট্যাটিসটিক্স পড়ানোর কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় গুলির যে এত নাম সারা পৃথিবী জুড়ে সেটা হত না এতে কোন সন্দেহ নেই। আর যাতে হালকা সন্দেহ আছে, তিনি না থাকলে স্বাধীন ভারতের বেশীর ভাগ জনতাই এখনো মাঠে বা খাটা পায়খানায় কাজ সারত – এই ব্যাপারটায়।  সে সরকারই এতে কৃতিত্ব নেবার দাবী করুক – এর মাথা ছিলেন প্রশান্ত বাবু যখন তিনি প্রায় একা বেশীর ভাগ দ্বায়িত্ব নিয়ে স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার রূপকার হিসেবে দেখা দিলেন।  কলকাতায় জন্ম এবং বেড়ে ওঠা হলেও ততদিনে প্রশান্ত বাবু কবিগুরুর সাথে অনেক সময় কাটিয়েছেন – কবির শেষ জীবনে তিনি সেক্রেটারী হিসেবে কাজ করেছিলেন, এবং তার পরে শান্তিনিকেতনে কাজ করেছিলেন। 

    সকালের বেলায় খোয়াই-এর দিকে হাঁটতে বেরিয়ে মহলানবীশ দেখতেন যে অসংখ্য মানুষ মাঠে বাহ্যি সারতে যাচ্ছে। এবং তাদের মধ্যে কিছু কিছু নামকরা আশ্রমিক-ও আছে।  এই খোলা মাঠে পায়খানা করার ব্যাপারটা মন থেকে ঠিক মেনে নিতে পারলেন না প্রথমে কলকাতা এবং পরে বিলেতের সফিসটিকেশনের মধ্যে বেড়ে ওঠা তিনি।  তাই নেহেরু যখন বললেন, “প্রশান্ত, ইন্দিরা বড় হচ্ছে – ওকে গুরুদেবের আশ্রমে পাঠাবো ভাবছি। কিন্তু খোয়াই-য়ের মাঠে সকালের দিকে ওই খোলামেলা ব্যাপারটা নিয়ে তুমি কিছু ভাব।  তাছাড়া এটা তো শুধু শান্তিনিকেতনের সমস্যা নয়, সারা ভারতের সমস্যা।  তোমাকে আমি ওই দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার টিমের মেম্বার করে দিচ্ছি – তুমি এই নিয়ে কিছু ফান্ডা দাও”।

    মহলানবীশ নেহেরুর সেই অফার লুফে নিলেন – সারা ভারতের পয়ঃপ্রণালীর ভজকট স্যাটাস-কে সিধে করাই নয়, দ্বিতীয় পঞ্চবর্ষীকি পরিকল্পনায় তিনি নিজের দায়িত্বে ঢুকিয়ে নিলেন ভারতে সংখ্যাতত্ত্ব পড়াশুনা ছড়িয়ে দেবার ভার এবং তার সাথে ভারতের শিল্পোন্নয়ন।  আজকের দিনের ‘ইন্ডিয়ান স্টাস্টিটিক্যাল ইন্সিটিটিউট’ (আই এস আই) পত্তন করলেন তিনি এবং তার সাথে ভারতের নানা জায়গায় সংখ্যাতত্ত্ব পড়ানোর ব্যবস্থা।  এর অনেক পরে একাধিক নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ স্বীকার করেছেন যে আই এস আই এর মতন পুরো দেশজ ভাবনা থেকে উদ্ভূত অন্য কোন উন্নয়নশীল দেশের কোন প্রতিষ্ঠান এত অবদান রাখতে পারে নি আই এস আই যে করেছে।

    অথচ আমরা সবাই জানি যে মহলানবীশ নিজে গণিত নিয়ে ডিগ্রী লাভ করেন নি  - তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ফিজিক্স নিয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী লাভ করেছিলেন।  তখন তাঁর শিক্ষক ছিলেন জগদীশ বোস, প্রফুল্ল রায় – ওদিকে এক ক্লাস নীচে মেঘনাদ সাহা, আর দুই ক্লাস নীচে সুভাষ বোস।  ১৯১২ সালে প্রেসিডেন্সীর পড়াশুনা শেষ করে প্রশান্ত বাবু ১৯১৩ সালে বিদেশ পাড়ি দিলেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনে পড়াশুনা করবেন বলে। 

    কিন্তু ওই যে – বিধির বিধান খন্ডাবে কে! জাহাজ থেকে নেমে ট্রেন ধরার কথা ছিল লণ্ডনের – কিন্তু মিস হয়ে গেল ট্রেন।  তখনকার দিনে তো আর আজকের মত ঘন্টায় ঘন্টায় ট্রেন ছিল না – তাই তিনি থেকে গেলেন কেমব্রীজের কিংস কলেজে এক বন্ধু সাথে।  কিংস কলেজ দেখে তো মহলানবীশ পুরো ফিদা – তাঁর মুদ্ধতা দেখে বন্ধু পরামর্শ দিল সেখানেই পড়াশুনা করতে।  সেই মত কিংস কলেজেই ভর্তি হয়ে গেলেন – পড়াশুনায় চিরকাল ভালো ছিলেন বলে সেখানেও ভালো রেজাল্ট করতে সমস্যা হল না।  এই সময়েই কেমব্রীজে তাঁর প্রথম আলাপ ভারতের সেই বিখ্যাত গণিতবিদ রামানুজনের সাথে।  এখন যদি সালের হিসেব করি তাহলে জানব সেই সব দিন ছিল রামানুজনের জীবনের প্রায় শেষ দিক বলতে গেলে (রামানুজন মারা যান ১৯২০ সালে)।  প্রশান্ত মহালনবীশের সাথে রামানুজনের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে যায়।  অনেকে হয়ত খেয়াল করেছেন যে রামানুজনের জীবনী নিয়ে যে বই এবং সিনেমা আছে “দি ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি’ তাতে মহলানবীশের উল্লেখ আছে। এমনকি সিনেমায় ছোট খাট দৃশ্যতে দুজনকে একসাথে দেখানো হয়েছে, যেখানে মহলানবীশের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন শাজাদ লতিফ।

    আমরা সবাই জানি যে রামানুজন ছিলেন খুবই ধার্মিক ব্যক্তি।  এই নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে রামানুজন নাকি দাবী করতেন যা সমস্ত অঙ্ক তাদের সমাধান নাকি তিনি স্বপ্নে দেখতে পেতেন।  ব্যাপার এমন দাঁড়ায় যে রামানুজন কোন এক প্রবলেমের উত্তর জানেন, কিন্তু কি করে সেই উত্তরে লজিক্যালি পৌঁছাতে হবে তা তিনি জানতেন না! কেমব্রীজে জি এইচ হার্ডি-র কাছে তিনি সেই লজিক্যাল ফাউন্ডেশন-টা শিখছিলেন।  প্রশান্ত মহালনবীশের সাথে রামানুজনের আলাপ সেই দিক দিয়ে ধরতে গেলে ধার্মিক দিক থেকেই।  এমনিতে ধার্মিক না হলেও বা ব্রাহ্ম সমাজের আবহাওয়ায় বেড়ে উঠলেও, প্রশান্ত বাবু খুব ভালো ভক্তিগীতি গাইতে পারতেন, কীর্তন সহ।  একদিন কেমব্রীজ ইউনিভার্সিটির বাগানে বসে হালকা গলা খুলেই কীর্তন করছিলেন প্রশান্ত বাবু আশেপাশে কেউ ছিল না বলে।  রামানুজন পাশ দিয়ে যাবার সময় সেই গান শুনে আকৃষ্ট হন – গানের ভাষা না বুঝলেও এই সুর তিনি শুনেছেন আগে।  রসম বানানোর জন্য কেমব্রীজের যে দোকানটায় তেঁতুল কিনতে যেতেন রামানুজন সেই দোকানটি ছিল এক বাঙালীর – তার গলাতেই সেই গান শুনেছেন।  এইভাবেই মহলানবীশের সাথে রামানুজনের আলাপ।  রামানুজন অনুরোধ করতেন গোবিন্দদাস বা অন্য পদকর্তা-দের রচিত গান গুলি শোনাবার জন্য – মহলানবীশ শোনাতেনও।   
     
    কেমব্রীজের পড়াশুনা মোটামুটি শেষ করে মহলানবীশ কিছু দিনের জন্য ব্রেক নিয়ে কলকাতা ফিরে এলেন।  ফিরে গিয়ে কলকাতা প্রসিডেন্সী কলেজের প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে আপাল যাঁর অনুরোধে তিনি সেখানের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে পড়ানো শুরু করলেন।   

    তারপর মহলানবীশ আবার ফিরে গেলেন ইংল্যান্ড।  তা সেবারে ইংল্যান্ড এসে গেলেন রামানুজনের সাথে দেখা করতে কেমব্রীজে, তখন ১৯১৯ সালের শেষদিক।  রামানুজনের স্বাস্থ্য তখন ভেঙে পড়েছে – শরীর খুব একটা সুবিধার নয়।  পরের বছরেই মারা যাবেন তিনি।  কিন্তু অঙ্ক নিয়ে মেতে থাকলেই তিনি ভালো থাকেন বলে ডাক্তারে সেই নিয়ে আর নিষেধ করেন নি।  প্রশান্ত মহলানবীশও ভাবলেন হাওড়া ব্রীজের সমস্যাটা শুনিয়ে যদি রামানুজন-কে চিয়ার আপ করা যায় একটু।  খুব মন দিয়ে শুনলেন ব্যাপারটা রামানুজন – বললেন, “আমাকে দুদিন সময় দাও প্রশান্ত।  খুবই ইন্টারেষ্টিং এটা”। 

    দুদিন পরে প্রশান্ত বাবু আবার দেখা করতে গেলে রামানুজন শিশুর মতন উচ্ছ্বাসে বলে উঠলেন সমাধান করে ফেলেছি।  গত রাতে স্বপ্নেই তিনি দেখতে পান সমাধানটা। 

    হাওড়া ব্রীজের সমস্যাটি ঠিক কি ছিল যার জন্য রামানুজনের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল প্রশান্ত মহলানবীশ-কে?  এটা জানার জন্য তাহলে হাওড়া ব্রীজ নিয়ে একটু গভীরে ঢুকতে হবে।

    এটা আমরা অনেকেই জানি যে আজকের দিনের হাওড়া ব্রীজ (মানে রবীন্দ্র সেতু আর কি) এর উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৪৩ সালে, সময়ের হিসেবে দেখতে গেলে প্রায় ৭৯ বছরের পুরানো।  হয়ত এটাও আমরা অনেকে জানি বা চাইলেই চট করে খুঁজে নিতে পারবো – যে এই ব্রীজের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৩৬ সালে এবং শেষ করতে করতে লেগে গিয়েছিল ১৯৪২ সাল।  প্রায় ছয় বছর লেগেছিল ব্রীজটি বানাতে।

    এই পর্যন্ত ঠিক আছে – কিন্তু এর বেশী যতই গভীরে ঢুকবো, ততই অস্পষ্ট এবং ধোঁয়াটে হয়ে উঠবে এই ব্রীজের ইতিহাস।  ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল এই ব্রীজের পরিকল্পনা? ঠিক কি কারণে বহুদিন ধরে এই ব্রীজের নির্মাণ আটকে ছিল? এই ব্রীজের প্রকৃত রূপকার কে? – এই সব প্রশ্নের উত্তর আপনি চট করে পাবেন না।  হ্যাঁ চট করে গুগুল সার্চ করে নিলে উইকি-তে বেশ কিছু তথ্য পেয়ে যাবেন হাওড়া ব্রীজ নিয়ে। কিন্তু যা লেখা আছে, তার থেকেও অনেক বেশী জটিল এবং প্রচ্ছন্ন এর প্রকৃত ইতিহাস।  হাওড়া ব্রীজে রূপায়ণের সাথে জড়িয়ে আছে ভারতের দুই মহান কৃতি সন্তানের তথা দুই বিশ্ববিখ্যাত গণিতজ্ঞের কথা – প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ এবং রামানুজন।  সেই ইতিহাস অনেকেই জানেন না। কি ভাবে জড়িয়ে ছিলেন এই দুজন? সেই গল্প নিয়েই আজকের লেখা  

    তো ভিতরের গল্পে ঢোকার আগে হাওড়া ব্রীজের সামগ্রিক ব্যাপারটা নিয়ে দু-চার কথা কয়ে নিই।  হাওড়া ব্রিজের মোট দৈর্ঘ্য ৭০৫ মিটার মত এবং সেতুটি দুদিকে দুই ফুটপাথ মিলিয়ে ২২ মিটার মত চওড়া। হাওড়া ব্রিজের উচ্চতা ৮২ মিটার (মানে ২৮ তলা বাড়ির সমান উচ্চতার) – আর সেতুর যে ঝোলা অংশটি দেখেন তার দৈর্ঘ্য ৪৬০ মিটারের মত। ইঞ্জিনিয়ারিং টার্মে এই ব্রিজটি হচ্ছে ‘ব্ল্যালেন্সড ক্যান্টিলিভার’ ডিজাইনে তৈরি। হাওড়া ব্রিজটি তৈরি করতে মোটমাট লেগেছিল ছাব্বিশ হাজার টন ইস্পাত এবং তার সিংহভাগটাই এসেছিল আমাদের আরেক গর্বের টাটা স্টিল থেকে।

    আর একটা জিনিস আমরা ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছে, তা হল হাওড়া ব্রিজ বানাতে কোন নাট-বল্টু ব্যবহার করা হয় নি। এটা কিন্তু কোন উপকথা নয়, একদম খাঁটি সত্যি। আমাদের হাওড়া ব্রিজ বানাতে সত্যিই কোন নাট-বল্টু ব্যবহার করা হয় নি, হয়েছিল রিভেট জয়েন্ট। এটা কেমন জিনিস – ধরুন যে দুটো জিনিসকে জুড়বেন তাদের কাছে এনে বল্টুটা লাগালেন – কিন্তু এবার নাট লাগাবেন না, বরং ওই ওই বোল্টের বেরিয়ে থাকা দুই দিকের অংশটা ঘা মেরে মিশিয়ে দেবেন দু দিক থেকে ডিম্বাকৃতি করে। এটা সাধারণত গরম করে করা হয়, কারণ ঠান্ডা হলে সেই বোল্ট একটু সংকুচিত হয়ে আরো টান টান করে রাখবে কাঠামোকে।

    এটাও আমরা সবাই জানি যে নতুন হাওড়া ব্রীজের আগে ছিল পুরানো হাওড়া ব্রীজ যার ডিজাইনের মাথা ছিলেন স্যার ব্র্যাডফোর্ড লেসলি, চীফ ইঞ্জিনিয়ার অফ ইষ্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে।  সেই ব্রীজ যাতাযাতের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল ১৮৭৪ সালে, সেটা ছিল একটা ভাসমান ব্রীজ, যার আবার মাঝেখানটা কাটা ছিল যাতে করে জাহাজ, নৌকা ইত্যাদি যাতাযাত করতে পারে।  ১৯৪৩ সালে নতুন হাওড়া ব্রীজ চালু হওয়ার আগে স্যার ব্র্যাডফোর্ডের সেই পন্টুন ব্রীজ জনতার ব্যাপক সেবা করে এসেছে।

    তাহলে নতুন ব্রীজ কেন? পাবলিকের যাতায়াত বাড়ছিল, গাড়ি ঘোড়া ইত্যাদিও খুব বেশী বেড়ে যাচ্ছিল হাওড়া এবং কলকাতার মধ্যে।  তাছাড়া বারে বারে ট্রাফিক থামিয়ে ব্রীজের মাঝখান উঠিয়ে জাহাজ যাতাযাত করানো বেশ চাপের হয়ে যাচ্ছিল।  তাই কিছু একটা ভাবতেই হত তৎকালীন কর্তাদের – তো এই ভাবনা মাথায় ঘুরতে শুরু করে ১৯০০ শতকের প্রথম থেকেই। ওদিকে ১৯১১ সালে কলকাতা থেকে দিল্লী স্থানান্তরিত হয়ে গেল ভারতের রাজাধানী।  কাজের সুবিধার জন্য সেই স্থানান্তর করা হলেও ইংরাজদের মধ্যে কলকাতার প্রতি একটা অন্যরকম টান ছিলই। তাই ভাবনা চিন্তা ছিল যে এমন একটা ব্রীজ বানাতে হবে যা কিনা একটা স্টেটমেন্ট হয়ে দাঁড়ায় – শুধু পাবলিকের যাতায়াত নয়, একটা স্থাপত্যের মুগ্ধতাও থাকবে।  চয়েস ছিল দুটো – একদল বলছিল যে আবার একটা বড়সড় ভাসমান ব্রীজ বানানো হোক যার খরচা কম পড়বে, আর অন্যদিকে ছিল মার্কেটে নতুন আসা ক্যান্টিলিভার ব্রীজ যার খরচা প্রায় দুগুণ হবে ভাসমান ব্রীজের তুলনায়। 

    চমকানোর মত জিনিস করতে চাইছিল বলে কর্তারা ভেবে নিল ক্যান্টিলিভার ব্রীজই বানানো হবে। কিন্তু বানাবে কে? ক্যান্টিলিভার ব্রীজ বানাবো বললেই তো আর বানানো যায় না! এর টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জ প্রচুর – তখনকার দিনে সারা পৃথিবীতে খুব বেশী এমন ব্রীজ ছিল না।  তো আলোচনা করে ঠিক হল, তাহলে একটা ডিজাইন কম্পিটিশনের আহ্বান করা যায় সারা পৃথিবীর বিখ্যাত সব কনস্ট্রাকশন কোম্পানী এবং ডিজাইনারের কাছ থেকে।  সেট মত ১৯১১ সালে ঘোষণা করা হল ৩০০০ পাউন্ড অর্থমূল্যের পুরষ্কার – যার ডিজাইন সিলেক্ট হবে, সে পাবে।      

    সারা পৃথিবীর এদিক ওদিকে থাকে ১৮ টি ডিজাইন এল – এর মধ্যে নয়টি বিখ্যাত ফার্ম জমা দিল সব মিলিয়ে ১২টি ডিজাইন। কিন্তু কেউ সেই ক্যান্টিলিভার ডিজাইন করতে সাহস করল না! ক্যান্টিলিভার ডিজাইনের মূল চ্যালেঞ্জ দুই দিক থেকেই ছিল – ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনলজি।  অন্তত এমনটাই বলা হল সবাইকে

    এই করতে করতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঢুকে গেল ফাঁকে – ব্রীজের গল্প সাময়িক ভাবে চাপা পড়ে গেল – ১৯১২ থেকে ১৯২০ প্রায় চুপচাপ ‘নিউ হাওড়া ব্রীজ অ্যাক্ট’।  ১৯২১ সালের পর আবার শুরু হল ব্রীজ নিয়ে হইহই। তখনো কিন্তু ডিজাইন ফাইন্যাল হয় নি – ক্যান্টিলিভার বনাম ভাসমান তর্কের নিষ্পত্তি তখনো বাকি। ওদিকে ১৯১৭ সালে কানাডার ক্যুবেক শহরের সেই বিখ্যাত ‘পন্ট দ্যা ক্যুউবেক’ ক্যান্টিলিভার ব্রীজ ভেঙে পড়েছে – ফলে কেউই আর ভয়ে হাওড়া ব্রীজের মত এত বড় ব্রীজ ক্যান্টিলিভার ডিজাইনের বানাতে পারছে না।    

    এমন সময় ১৯১৯-১৯২০ সাল নাগাদ হাওড়া ব্রীজের ডিজাইনের ব্যাপারে ঢুকে পড়লেন তখনকার দিনের বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার  রাজেন্দ্র নাথ মুখার্জী – যাকে সংক্ষেপে বলা হত আর এন মুখার্জী।  ইনি না থাকলে আজকের দিনের এই ডিজাইনের হাওড়া ব্রীজ আপনারা দেখতে পেতেন না।  আর এন মুখার্জী ১৯২২ সালে নাইটহুড পান – স্যার আর এন মুখার্জী হয়ে যান হাওড়া ব্রীজের ডিজাইন করার আগেই।  মুখার্জীর সাথে সাহেব স্যার টমাস মার্টিনের পার্টনারশিপে ছিল বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম ‘মার্টিন অ্যান্ড কোং’ যারা ততদিনে বানিয়ে ফেলেছিল কলকাতার দিকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, আর এদিকে হাওড়ায় বেলুড় মঠ।  ১৯২১ সালে যখন তিনি হাওড়া ব্রীজ ফাইন্যাল করার জন্য ‘মুখার্জী কমিটি’-র প্রধান হলেন, ততদিনে তিনি ক্যান্টিলিভার ব্রীজ ডিজাইনের প্রধান সমস্যা সমাধান করে ফেলেছেন।  এমনি ইতিহাস ঘাঁটলে দেখবেন সেই নিয়ে কোন কথাই নেই! সাহেবদের দ্বারা লিখিত ইতিহাসে উল্লেখ করা আছে এই কমিটি নাকি কনসাল্ট করেছিল স্যার বাসিল মট-কে, যিনি নাকি ক্যন্টিলিভার ব্রীজের ডিজাইনের সমস্যার সমাধান করেছিলেন!

    কিন্তু ইংরাজদের লেখা ইতিহাস ভালো করে ব্যখ্যা করে নি যে স্যার মট আদপে যে সমস্যার সমাধান করেছিলেন বলে দাবী উঠছে, সেই সমস্যাটি কি? আর স্যার মট কিভাবেই তার সমাধান করেছিলেন! ইংরাজ লিখিত ইতিহাস এখানে নীরব!

    প্রধান টেকনিক্যাল সমস্যাটি কি ছিল একটু হালকা করে বুঝে নেওয়া যাক – ব্রীজের ডিজাইন ইত্যাদি করতে গিয়ে যে জিনিস পত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয় তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিক্স। বেশীর ভাগ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্ররাই প্রায় একমত হবে সে এর থেকে বেশী ভীতপ্রদ সাবজেক্ট খুব একটা নেই।  এর মূল কারণ ফোর্স – ফোর্স ব্যালেন্স করতে করতেই জীবন কাবার! কমপ্লেক্স সব ইকোয়েশন – সেই সবে এখানে ঢুকবো না, ব্যাপার জটিল হয়ে যাবে। শুধু এটুকু বলে রাখি একটা ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সিষ্টেমে যেমন ফ্রী ইলেকট্রন ঘুরে বেড়াতে পারে না, তেমনি এই বলবিদ্যাতেও ফ্রী ফোর্স ভেসে থাকতে পারে না। মানে এদিকে দু-কেজি হলে, অন্য কোন না কোনদিকে সেই দু-কেজিকে কাউন্টার ব্যালেন্স করতে হবে। যত বেশী বীম, তত বেশী জটিল ইক্যুয়েশন। হাওড়া ব্রীজে দেখেছেন তো কত বীম, পিলার ইত্যাদি! তাহলে বুঝতে পারছেন এই ব্রীজের ইকিউইলিব্রিয়াম ইক্যুয়েশন কেমন জটিল হবে!

    আজকের দিনে বিশাল কম্পিউটিং পাওয়ার দিয়ে এমন সব ইক্যুয়েশন সলভ করতে একদিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আর আজ থেকে একশো বছর আগে বিনা কম্পিউটারে এই জিনিস কেমন করে সলভ করা যাবে বুঝতে পারছেন? সিম্পলি প্রায় অসম্ভব! প্রথমে যদিও অনেকে সাহস করছিল, পরে যখন শুনল যে হাওড়া ব্রীজ যেখানে হবে সেই ফাউন্ডেশনের মাটি খুব একটা ভালো নয়। যদি দুশো বছরের ডিজাইন লাইফ ধরে ক্যালকুলেট করতে হয়, তাহলে ডায়নামিক সয়েল সিঙ্কিং (গোদা বাংলায় মাটি বসে যাওয়া) ফ্যাক্টর ঢোকাতে হবে ইক্যুয়েশন অফ স্টেটে – সেই শুনেই হয়ে গেল সবার! স্ট্যাটিক ইক্যুয়েশন সলভ করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে, তারপরে আবার ডায়নামিক ইক্যুয়েশন! তার সলিউশন কারো জানা ছিল না তখনকার দিনে!
     
    ওদিকে আর এন মুখার্জী এর সাথে ছিলেন প্রশান্ত চন্দ মহলানবীশএর বেশ ভালো চেনাশুনা ছিল।  মহলানবীশ নিজে ফিজিক্সের লোক হয়েও অ্যাপ্লায়েড ম্যাথে ঝুঁকেছেন ততদিনে – আর বিশেষ করে স্ট্যাটিসটিক্স।  উনি যে পরে স্ট্যাটিসটিক্সের নতুন দিগন্ত খুলে দেবেন সেটাও আমরা অনেকে জানি। তবে সেই সব নিয়ে আলোচনা অন্য কোনদিন – আজকে হাওড়া ব্রীজের ব্যাপারে ঢোকা যাক।  মহলানবীশ ততদিনে প্ল্যানিং, শহর ইত্যাদিতে বিশাল ইন্টারেষ্ট পাচ্ছেন।  তা মহলানবীশ এর কাছ থেকে মুখার্জী এর আগেও অনেক পরামর্শ নিয়েছেন।  ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের মাথায় যে অ্যাঞ্জেল অফ ভিক্টোরি কে দেখা যায়, তেনাকে কত উচ্চতায়, কোন দিকে, ঘুরলে বলবিয়ারিং-কে কত রোটেশন টলারেট করতে হবে, সেই সব মহালনবীশই গনণা করে বের করে দিয়েছিলেন।  বেলুড় মঠের জলনিকাশি ব্যবস্থার মেন প্ল্যানটাও প্রশান্ত-বাবু দিয়েছিলেন মুখার্জীবাবু-কে।

    আর এন মুখার্জী যবে প্রশান্ত-বাবুকে হাওড়া ব্রীজের সলভ না করতে পারা ইক্যূয়েশনের মূল সমস্যাটা বললেন, তার কিছুদিন পরেই প্রশান্ত বাবুর একটা ইংল্যান্ড যাওয়া।  জাহাজ যাত্রায় পুরো সময়টা এর পিছনে দিয়েছিলেন। এমনকি রবিঠাকুরও তাঁর প্রিয় প্রশান্ত-কে বেশ বেশ অন্যমনষ্ক দেখেছিলেন জাহাজ যাত্রার আগে তাঁর সাথে দেখা করতে এলে।  যাঁরা রবিঠাকুরের গান লেখার ইতিহাস নিয়ে নাড়া চাড়া করেন তাঁরা নিশ্চয়ই জানবেন যে “দূরে কোথায় দূরে দূরে, আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে” এই গানটি সেই দিনের প্রশান্ত মহলানবীশের অবস্থা দেখেই কবিগুরু লিখেছিলেন। 

    বিলেত যাত্রার জাহাজের অনেক সহযাত্রীই পরে লিখেছিলেন যে প্রশান্ত-কে তাঁরা এমন অসামাজিক কোনদিন দেখেন নি। জাহাজের কেবিনে দিনরাত বসে বসে বই এবং খাতায় মুখ গুঁজে আছে – সামাজিকতার তোয়াক্কা না করে। উনারা তো আর জানতেন না যে প্রশান্ত মহালনবীশের মাথায় ঘুরছে হাওড়া ব্রীজের ইক্যুয়েশন! কিন্তু পুরো জাহাজ যাত্রায় এই সমস্যার সমাধান তিনি করতে পারলেন না।

    শুরুতেই তো লিখেছি হাওড়া ব্রীজের সমস্যা সমাধানের দিনটির কথা।  ইংল্যান্ডে এসেই সেবারে প্রশান্ত মহলনবীশ ছুটেছিলেন রামানুজনের কাছে কারণ তিনি জানতেন যদি কেউ এই সমস্যার সমধান করতে পারেন কম সময়ে, তা সেটা একমাত্র রামানুজনই!

    তো এই হল গল্প – রামানুজন না থাকলে হাওড়া ব্রীজের সেই সিঙ্কিং সয়েল নিয়ে ইক্যূয়েশন কবে বা কে সলভ করত কে জানে! আর প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ না থাকলেই সেই সমস্যা রামানুজনের কাছে পৌঁছাতোই বা কে! ইতিহাসের সমস্যা একটাই যে কে লিখছে তার উপর নির্ভর করে এই সব সত্যিকারের গুনী মানুষদের তাঁদের প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া হবে কিনা!

    দূর্ভাগ্যের বিষয় এই যে রামানুজন দেখে যেতে পারেন নি হাওড়া ব্রীজের নির্মাণ।  এর অনেক অনেক দিন পরে, ভারত ততদিনে স্বাধীন হয়ে গেছে – প্রশান্ত মহলানবীশ পুনরায় কেমব্রীজ গেলে রামানুজন যেই ঘরে বসে ইক্যুয়েশনটি সলভ করেছিলেন, সেই ঘরে রেখে এসেছিলেন হাওড়া ব্রীজের একটি ছবি।     
     
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • স্মৃতিচারণ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৭২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 174.25.***.*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:৩৩511638
  • রামানুজের টেবিলের সামনে সেই ছবিই কি? ​​​​​​​
  • যোষিতা | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৪৭511644
  • "রসম বানানোর জন্য কেমব্রীজের যে দোকানটায় তেঁতুল কিনতে যেতেন রামানুজন সেই দোকানটি ছিল এক বাঙালীর"
    উফ্! অসাম সুকি!
  • dc | 2401:4900:1cd0:4789:35f2:47f8:2f80:***:*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:১২511645
  • খুব ভালো লাগলো লেখাটা। 
     
    "উনি যে পরে স্ট্যাটিসটিক্সের নতুন দিগন্ত খুলে দেবেন সেটাও আমরা অনেকে জানি" - একদম ঠিক কথা। মহালনবিশ এর নামে মহালনবিশ ডিসট্যান্স নামের একটা মেট্রিক আছে, যা সমস্ত স্ট্যাটিসটিক্স প্যাকেজে থাকে, এসপিএসএস, স্যাস, R ইত্যাদিতে। ওদিকে রামানুজন একজন এনিগমা - মানব সভ্যতার সেরা কয়েকজন ম্যাথামেটিশিয়ানদের মধ্যে একজন।  অনেকবার ভেবেছি রামানুজন এর এই স্বপ্নে সলিউশান পাওয়ার ব্যাপার নিয়ে একটা টই খুলব, কারন এর সাথে নন-কমপুটেবল প্রসেসের হয়তো কোন সম্পর্ক থাকতে পারে, যা আবার পেনরোজের প্রিয় বিষয়। সময় পেলে লিখবো।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন