উত্তম কুমারের সাথে শিশির ভাদুড়ির সম্পর্ক নিয়ে আমার বেশী কিছু জানানোর নেই – তবে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি নানা জনের লেখায় বা স্মৃতিচারণে ঘুরে ফিরে সেই কয়েকটা ঘটনার কথাই উঠে এসেছে! অথচ তার বাইরেও এনাদের সম্পর্ক কেমন ছিল, উত্তম কুমারকে একেবারে ঠিক প্রথম দিকে শিশির বাবু কেমন সাহায্য করেছিলেন সেই নিয়ে তেমন আলোচনা দেখি না। তাই ভাবলাম আজ সেই শুরুর কথাটা সবাইকে জানাই –
উত্তম কুমার তখনও উত্তম হন নি – কোলকাতা পোর্টে অরুণ নামেই চাকুরী করছেন। আর ওদিকে শিশির ভাদুড়ি মতের মিল না হবার জন্য বেশ কিছুদিন আগে ম্যাডোনা কোম্পানীর মঞ্চ ছেড়ে দিয়ে টুকটাক চলচিত্রে অভিনয় শুরু করেছেন। কিন্তু তত দিনে তাঁর খ্যাতি একদম টপ যাকে বলে রঙ্গমঞ্চের জগতে গিরিশ ঘোষ ছাড়া এমন ব্যক্তিত্ব আর কেউ আসেন নি। সবাই তাঁকে ‘বড় বাবু’ বলত – কোলকাতা পোর্টে চাকুরীজীবি অরুণেরও তাই বড় বাবুর বাইরে বেরিয়ে দাদা বা কাকু কিছু ডাকার সাহস হয় নি।
ঠিক ভাবে লিখতে গেলে অরুণকুমার লিখতে হয়, কিন্তু এখানে আমরা সংক্ষেপে অরুণ –ই লিখছি। সারাদিন পোর্টে একঘেয়ে কলম চালিয়ে কেরানীর কাজ করেন – কিন্তু মনে স্বপ্ন অভিনেতা হবেন। চলচিত্র নাকি নাট্য মঞ্চ সেই নিয়ে দ্বিধা তখনো তাঁর মনে আসে নি, নিজেকে তৈরী করার পালা তখন।
তাই খুঁজে পেতে পৌঁছে গেলেন বড় বাবু শিশির ভাদুড়ির কাছে – কিনা মঞ্চের টেকনিক, অভিনয় ইত্যাদি শিখে অভিনেতা হবেন। অরুণের শেখার আগ্রহ এমনিতেই প্রবল, তার উপর দেখতেও খুব একটা খারাপ নয় – তখনকার মঞ্চ অভিনেতাদের ক্যাটাগরী ভুক্ত না হলেও, চেহারায় কেমন একটা কোমল এবং রোমান্টিক ভাব লুকিয়ে আছে। কয়েকদিনের মধ্যেই চোখে পড়ে গেলেন বড়বাবুর। একদিন বড় বাবুর সাথে কথা বলতে বলতে অনেক কিছু তলিয়ে দেখা হয়ে গেল – বলতে গেলে অভিনেতা অরুণের নবজন্ম সেই দিনই হল। শিশিড় বাবু কথা প্রসঙ্গে বললেন –
- তা অরুণ, তোর লঙ টার্ম প্ল্যানটা কি?
- বড়বাবু, আমি অভিনেতা হতে চাই
- অভিনেতা হতে চাই বলেলেই তো হবে না, তার জন্য নিজেকে তৈরী করতে হবে
- আমি রাজী আছি, যা বলবেন করব
- কিন্তু কি জানিস, মঞ্চের অবস্থা আজকাল খুব একটা ভালো নয়। আমার মনে হয় তুই চলচিত্রে অভিনয়ের কথা ভাব। সামনে এমন সময় আসছে যখন ওটাই রাজত্ব করবে
- আমার আপত্তি নেই বড়বাবু
- তুই তো বললি নিজেকে তৈরী করতে কিছু ট্রাই করতেই তো আপত্তি নেই
- হ্যাঁ, সব পরিশ্রম করতেই রাজী আমি
- তাহলে আমি বলি কি, তুই কিছুদিন যাত্রা করে আয়
- যাত্রা! যাত্রা বলছেন, নাকি আপনি নাটক বলতে চাইছেন?
- না যাত্রাই বলতে চেয়েছি। তবে যাত্রা শুনে কিছু হেলাফেলা করিস না। মনে রাখিস আমাদের জাতীয় নাট্য বলিয়া যদি কিছু থাকে, তাহাই যাত্রা
- সে আপনি বলছেন যখন তখন মাথা পেতে নেব। কিন্তু যাত্রা করে আমি কোন জিনিসটা শেখায় ফোকাস করব?
- কত কিছু শেখার আছে তোর! এখনো তো আদো আদো কথা গেল না – কন্ঠ হতে হবে পুরুষালি, জোরালো। তারপর ঠিক ঠাক এখনো মুখে আলো নিতে শিখিস নি, ভয়েস থ্রো-র মাধ্যমে একসাথে কত লোককে শোনাবি, মডুলেশন কেমন হবে এমন কত কিছুই শেখার আছে
- আচ্ছা, তাহলে তো অনেক কিছু শিখতে পারি
- হ্যাঁ, তা তো পারিস ই। তবে তার থেকেও বড় কথা কি জানিস, এই যে তুই রোজ সন্ধ্যে বেলা এসে ইনিয়ে বিনিয়ে শোনাস সারাদিন চাকুরী করে কত পরিশ্রম করছি – তা একবার যাত্রা করতে গেলে দেখবি পরিশ্রম কাকে বলে! শিল্পীর পরিশ্রমের মর্যদা প্রকৃত অর্থে বুঝতে শিখবি, খালি আতুপুতু আমি দিনে চাকুরী – রাতে নাটক করে ফাটিয়ে দিচ্ছি – এই সব ফালতু ধারণ থেকে বেড়িয়ে আসবি। আর ফীডব্যাকের দিকটা ভেবে দেখলেও সেটাও একদম হাতে গরম – রিটেকের চান্স নেই, ভালো করবি তো জনতা মাথায় তুলে নাচবে। আর যদি ছড়াস, তাহলে পাবলিকের গালাগাল খাবি। এই কলকাতার মত রিভিউ সিষ্টেম, আঁতেলপনা ওখানে নেই।
- তাহলে বড়বাবু চিৎপুরে ট্রাই করতে চাই আমি। কার কাছে যাব একটু যদি পরামর্শ দেন।
- দ্যাখ যাত্রা দলের নামের থেকেও তোর দরকার যাত্রার জমকালো ক্যারেকটারে অভিনয়ের সুযোগ। ঠিক আছে পরের বারে ব্রজেনের সাথে দেখা হলে আমি কথা বলে দেখছি
ব্রজেন দে তখন যাত্রা লিখে কাঁপিয়ে দিচ্ছেন – যাত্রার ধরণ, যাত্রা লেখার স্টাইল সব ভেঙেচুড়ে নতুন করে বানাচ্ছেন। আট ঘন্টার যাত্রাকে ছোট করে তিন ঘন্টায় দাঁড় করিয়েছেন। ব্রজেন দের সাথে বড় বাবুর দেখা হলে উনি বললেন অরুণ বাবুর কথা। ব্রজেন দে কিন্তু কিন্তু করে জানালেন,
- আপনার কথা তো আর ফেলতে পারি না বড় বাবু। কিন্তু কি জানেন এখন তো সিজিনের প্রায় শুরু হল বলে। আমার সব যাত্রা পালার রিহার্সেল সেই কবে শুরু হয়ে গেছে অভিনেতা ঠিক হয়ে গিয়ে। তবে একটা চান্স হতে পারে
- কোথায় বলো ব্রজেন
- আমার লেটেষ্ট যাত্রাপালা “মায়ের ডাক” করছে অন্নপূর্ণা অপেরা। তবে ওদের একটা সাইড প্ল্যানের রিহার্সাল শুরু হবে বলছিল – এক্সপেরিমেন্টাল টাইপের। ওরা লাভের দিকটা ভেবে এটা করছে না – করছে মূলত পরের জেনারেশনের অভিনেতা তুলে আনতে
- তাহলে তো খুবই ভালো হয়, তুমি তাহলে একটু হেল্প করে দাও ব্রজেন
তা ব্রজেন বাবু হেল্প করলেন। উনার কথাতেই অন্নপূর্ণা যাত্রা অপেরা ডেকে পাঠালো অরুণ কুমারকে একদিন। অরুণকুমার গিয়ে দেখলেন একদমই নতুন ধরণের যাত্রা – নাম “শের আফগান”। সেখানে আলি কুলী খাঁ-য়ের চরিত্রে অভিনয় করছে কম বয়সী, কিন্তু তুখড় একজন ছেলে। সেই ছেলেই পরে শান্তিগোপাল নামে বাংলার ঘরে ঘরের নাম হয়ে ওঠে। অরুণের জন্য ওঁরা ভেবেছিলেন কুতুবউদ্দিন কোকা-র চরিত্র।
তবে চরিত্রে ফাইন্যাল করার আগে যাত্রার পরিচালক অরুণকুমারকে টেষ্ট করে নিতে লাগলেন – একটা অন্য কোন যাত্রাপালা থেকে বড় ডায়লগ তাঁকে পড়তে দিলেন, আরো বললেন অভিনয় করে দেখাতে। ডায়লগটা ছিল নিম্নরূপ –
“খোদা বান্দার মনের কথা ঠিকই জানেন। আমি তোমাকেই ভাবছিলাম সখিনা। তোমাকেই! আমার খোয়াবের গুলিস্তানে তুমি তো রোজ আস তোফা-ই-উলফত হাতে নিয়ে, গুলশানের গোলাপ নিয়ে। আমি তোমাকে দেখি। তুমি লহর লহর হেসে যাও। বিজুরি চমকে তোমার নজরে। যখনই হাত বাড়াই খোয়াব ঠুটে যায়। ছটফট করি। পেয়ালার পর পেয়ালা শরাবে বুঁদ হয়ে থাকি। আর ভাবি, যদি রসম-ই-উলফত পালন করতে এসে তোমার গোলাবী অধরের স্বাদ পেত আমার পিয়াসী অধরের জমিন। তুমিই তো দিল-ই-বাহার, তুমিই তো খোশনসিবি। তুমি বললে এই সুলতানাত তোমার নামে করে দেব”!
এ ডায়লগ অরুণ বলবেন কি! এমন অভিজ্ঞতা তাঁর একদম নেই! সেই স্ক্রীণ টেষ্টই বলুন আর যাই বলুন প্রচুর ছড়ালেন অরুণকুমার। পাশের ঘরে ব্রজেন বাবু এসেছিলেন কাজে – তাঁকে গিয়ে পরিচালক বললেন, “এ কাকে রেকমেন্ড করলেন ব্রজ-দা! এর তো মুখ দিয়ে কথায় বের হচ্ছে না! ঠিক ঠাক হাঁ-ই করতে পারছে না, দমের কাজ জানে না! একে নিয়ে কি করে কাজ করব!”
ব্রজেন বাবু বললেন, “আপনারা তো পরের জেনারেশনের অভিনেতা তৈরী করতে চাইছেন! তাহলে একবার একে দিয়ে চেষ্টা করতে দোষ কি! তাছাড়া বড় বাবু রেকমেন্ড করেছেন যখন তখন এর মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু দেখেছেন! আপনি কি বড় বাবুর জাজমেন্ট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন?”
পরিচালক এক হাত জিব কেটে বললেন, “আরে কি যে বলেন, বড় বাবুর উপরে কথা বলার আমি কে!”।
ব্রজেন বাবুর নিজের হালকা ইন্টারেষ্ট ছিল, জানতে চাইলেন –
- কিন্তু দম নেই এমনটা কি করে বুঝতে পারলেন?
- আরে একটা সীনে শের আফগান আর কুতুবউদ্দিনের ফেস অফ আছে। তা সেখানে একটানা হাসবে দুই জনাই, শান্তিগোপাল যেখানে একটানা হাসল প্রায় চুয়াল্লিশ সেকেন্ড মত, সেখানে এই ছেলে পনেরো সেকেন্ড হেসেই ক্ষান্তি দিল!
ব্রজবাবু তখন অরুণ-কে পাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে কি সব বোঝালেন। অরুণ-বাবু ফিরে এসে পরিচালক-কে বললেন, “স্যার, আমাকে আপনি সাতটা দিন সময় দিন রিহার্সেলে। তার মধ্যে যদি আপনার মনমত ডেলিভারী না দিতে পারি, আমাকে আপনি নেবেন না”।
সেই প্রথম বোঝা গেল অরুণকুমারের জেদ – পরে যা আমরা উত্তমকুমাদের জেদ বলে চিনব। সাত দিন পরে আগের অরুণ-কে আর চেনা গেল না। সেই বছরেই প্রথম যাত্রা করতে নামলেন অরুণ-কুমার
সিজিনের প্রথম অভিনয় হবে মেদিনীপুরের গড়বেতার দিকে এক গ্রামে – বায়না এসেছে। কোলকাতা থেকে কম্পানীর বাসে করে যেতে যেতে অরুণ কুমার বুঝতে পারলেন অভিনেতার কষ্ট কাকে বলে! ছোবড়ার সীটে বসে পাছার মাংসপেশী ক্লান্ত হয়ে গেল –
যাই হোক, অভিনয়ের প্রথম রাত। ধান কেটে নেবার পর ফাঁকা জমিতে হচ্ছে যাত্রা। চট দিয়ে ঘেরা গ্রীনরুমে প্রায় রেডি হয়ে গেছেন ড্রেস করে শান্তিগোপাল এবং অরুণ – আলি কুলি খাঁ (যাকে আমরা শের আফগান নামে চিনি) এবং কুতুবউদ্দিন কোকা যথাক্রমে। শান্তি গোপাল এর আগেও অনেক যাত্রা করেছেন – তার জন্মই হয়েছে মনে হয় যাত্রা করার জন্য। আর এদিকে অরুণকুমারের সেই প্রথম দিন। শান্তিগোপাল বয়েসে অরুণের থেকে ছোট বলে দাদা বলে ডাকত। টিপস্ দেবার জন্য বলল,
- অরুণদা, যাত্রার ড্রেসটা চড়াবার আগে ঠিক ঠাক পেচ্ছাপ বসে নেবে
- কেন?
- কেন আবার কি! কোনদিন রাজার ড্রেস পরে পেচ্ছাপ বসতে গিয়ে দেখেছো? পাতলুনের দড়িই খুঁজে পাবে না অন্ধকারে তাড়াতাড়িতে! নিজে অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এখানে তো কেউ নেই, তুমি ওই পাশের চটটা ফাঁক করে কাজটা সেরে নাও!
এই প্রথম টিপস্ পাওয়া অরুণকুমারের – পরবর্তী জীবনে আউটডোর শ্যুটিং-এ গিয়ে যা অনেক কাজ দিয়েছিল।
দুজনে ড্রেস করে বসে আছে, প্রথম ঘন্টা পড়ে গেছে। এমন সময় হন্ত দন্ত হয়ে এল যে ক্লাব যাত্রা দিচ্ছে তাদের সেক্রেটারী। হাতে একটা ঠোঙা –
- দাদা, একটা অনুরোধ আছে, আগে বলতে ভুলে গেছি। যাত্রার ফাঁকে শের আফগান-কে এক বার এই ঠোঙা থেকে একটা ফুলুরি তুলে খেয়ে বলতে হবে, “এত জায়গার ফুলুরি খেয়েছি, কিন্তু গণশার ফুলুরীর মতন এমন জিনিস আগে খাই নি”
এমন অদ্ভূত অনুরোধ শুনে শান্তিগোপাল ফায়ার – অরুণ বাবু হতচকিত। শান্তিগোপাল বললেন, “ফাজলামো হচ্ছে, শের আফগান ফুলুরি খাবে?”
হইচই শুনে যাত্রা দলের ম্যানেজার ছুটে এলেন। স্থানীয় কর্তা তাঁকে বুঝিয়ে বললেন যে এখানে ঐতিহাসিক অ্যাকুয়েরিসি নিয়ে মাথা ঘামালে হবে না, গণেশ-দা অনেকটা টাকা ক্লাবকে দিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে তার ফুলুরি-র নাম করা হবে সেই মর্মে। এখন যদি তা না হয় – তাহলে যাত্রা দলের পেমেন্ট-এর সমস্যা হয়ে যাবে। পেমেন্ট পাওয়া যাবে না শুনে ম্যানেজারের হয়ে গেছে – সে শান্তি গোপালকে বলল
- বাবা শান্তি, একবার বলে দে না! কি সমস্যা!
- আমি পারব না! শের আফগান ফুলুরি খাচ্ছে এটা আমি থাকতে হবে না। তুমি অরুণদা-কে বলো
ম্যানেজার এবার ধরল অরুণকে। অরুণ আর কি বলেন, এই প্রথম বার তাঁর যাত্রা করা, শান্তির মত পায়ের তলায় জমি নেই। তিনি বললেন –
- সে না হয় বলে দিচ্ছি, কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, বর্ধমানে এত দিন বাস করে শের আফগান ফুলুরি খেতে শিখল না, আর আমি গায়ে মোগল রক্ত নিয়ে ফুলুরি খেয়ে যাচ্ছি!
- আহা, এমনটা আমরা ইম্প্রোভাইস করতেই পারি যে এই প্রথম বারের জন্য তুমি বাংলায় ফুলুরি খাচ্ছ। এক চাকর তোমার হাতে গিয়ে দেবে ঠোঙায়, তুমি সেই জিনিস খেয়ে মুদ্ধ হয়ে গিয়ে তাকে প্রশ্ন করবে, কি জিনিস খাওয়ালে আমাকে, এত অপূর্ব স্বাদ! চাকর উত্তর দেবে, গণশার ফুলুরি। এবার তুমি সেটা রিপিট করবে জোর করে, ‘আহা কি স্বাদ এই গণশার ফুলুরি-র’।
তেমনটাই ঠিক হল – যাত্রা চলাকালীন অরুণকুমার সেই ফুলুরি-র সিন এলে সত্যিকারেই কামড় দিলেন আরো অথেন্টিক করার জন্য। আগের প্ল্যান মত গণশার ফুলুরির নাম করলেন। এবার সেই ফুলুরি খেয়ে সত্যি করেই দারুণ লাগলো তাঁর, তাই জুড়ে দিলেন –
- একি অপূর্ব মোহব্বত দিলে খোদা আমায়
এর পর থেকেই অরুণ কুমারের হেঁসেলে ঢুকে পড়ে ফুলুরি। যাঁরা উত্তমকুমারের সাথে আড্ডা মেরেছেন পরে, বা তাঁর বাড়িতে গেছেন – সে গৌরী দেবীর লক্ষী পুজো বা সুপ্রিয়ার ইতুপুজো, ফুলুরি মাষ্ট ছিল। এমনকি বনপলাশীর পদাবলী সিনেমায় মাছের টোপ হিসেবেও ব্যবহার করেছিলেন ফুলরি।
ও হ্যাঁ আরো একটা কাকতলীয় ব্যাপার বলে আজকের লেখা শেষ করি। সেদিনের সেই যাত্রা দেখতে এসেছিল এক প্রায় যুবক, সেটা তার মামার বাড়ির গ্রাম। সামনের মহিলাদের বসার জায়গার পিছনেই বসে সে তন্ময় হয়ে শুনছিল এবং দেখছিল যাত্রা। অরুণ কুমারের সেই ডায়লগ “একি অপূর্ব মোহব্বত দিলে খোদা আমায়” লাইনটা মনে গেঁথে যায় – তার কাছে মনে হয় কাব্যিক। এর অনেক দিন পরে সে এই পঙতি থেকেই ধার করে লিখেছিল “একি অপূর্ব প্রেম দিলে বিধাতা আমায়”।
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন – সেদিনের সেই ছেলেটিকে পরে পুলক বন্দোপাধ্যায় নামে সারা বাংলায় পরিচিত হবেন।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।