এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বাঙালের রোমানিয়া গমন! 

    কিংবদন্তি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ এপ্রিল ২০২৩ | ১২০৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ১৭/০৪/২০২৩ 

    ভাষার আধিপত্য। কিংবা বলা চলে হিন্দির আধিপত্যের নতুন একটা নমুনা দেখলাম এখানে। গতকাল রাতে ১২ জন ভারতীয় নাগরিক আমাদের এই আবাসস্থলে এসে হাজির। আমাদের কোম্পানিতে এসেছে আমাদের মতোই কাজের জন্য। আসার পরে তাদেরকে আমাদের অনেকেই সাহায্য করলেন। না, আমি উঠি নাই। সকালে কাজে যেতে হবে ভেবে আগেই শুয়ে পড়ছিলাম, ঘুমানোর চেষ্টা করতেছিলাম। তো আমি রাতে বেশি কিছু আর দেখি নাই। সকালে দেখলাম সবাই দিব্যি তাদের সাথে হিন্দিতে কথাবার্তা চালাচ্ছে! আমি বুঝলাম না, সবার এক সাথে সেটিং পরিবর্তন হয়ে গেল কেমনে? ভাষা বাংলা ইংরেজি থেকে হিন্দিতে চলে গেল? কারণ জিজ্ঞাস করলাম, উত্তর হল আরে ওরা বাংলা পারবে? তাইলে আপনে হিন্দি কেন চালাচ্ছেন? ওরা আসছে, ওদের নানা সাহায্য দরকার। প্রয়োজনে ওরা গুগল করে বাংলায় জিজ্ঞাস করবে কী দরকার। কালকে রাতে তাৎক্ষনিক সাহায্য করেছে, খুব ভাল করেছে। যদিও তা নিয়ে ভেজাল আছে, তা পড়ে লিখছি। তখন ঠিক আছে। কিন্তু এরপরেও সবার ভাষা হিন্দি হয়ে গেল? শুধু তাই না, এরা আসছে পাঞ্জাব থেকে, কেউ কেউ পাঞ্জাবের ভাষাও জানে মনে হল, পাঁজি, তুসসি সহ আরও কী কী বলতেছিল! যাই হোক, আমি বলার পরে মনে হল এমন আজব কথা জীবনে শুনে নাই কেউ বলে মনে হল। আমি দুই একজনের সাথে ইংরেজিতে কথা বললাম, ওরা ভালই ইংরেজি বলে। অন্তত আমি যাদের সাথে কথা বলছি তারা ইংরেজি পারে। 

    শুরুতেই আত্মসমর্পণ করাটা আমাদের বাংলা নিয়ে হীনমন্যতা থেকেই আসছে। এরা রোমানিয়ায় থেকে রোমানিয়ানদের থেকে কিছুই শিখে নাই। ওরা ইংরেজির মত ভাষাকে দুইটা পয়সা দিয়ে পাত্তা দিচ্ছে না, আর হিন্দির প্রেমে আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি। রোমানিয়া খুব শক্তিশালী রাষ্ট্র তাও না। জার্মান, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি পর্তুগালে ইংরেজির একটা বর্ণ চলে না। তারা শক্তিশালী রাষ্ট্র, তারা ইংরেজিকে পাত্তা দিচ্ছে না অর্থনৈতিক কারণে, এমনটা বলা হয় অনেকেই। কিন্তু আসলে তা না। আর তার প্রমাণ রোমানিয়া। একটা দোকানের সাইনবোর্ড পর্যন্ত ইংরেজিতে দেখি নাই। আমি রোমানিয়ার রাজধানীতে থাকি। যে কয়েকটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি আছে তারা শুধু সাইনবোর্ডে ইংরেজি রাখছে। আর কোথাও ইংরেজি নাই। কেএফসি, স্টারবাক্স ইংরেজিতে অর্ডার নিয়েছে, স্থানীয় কোন দোকানে অর্ডার পর্যন্ত নেয় না ইংরেজিতে। তুর্কি দোকান আছে, তারা দয়া করে ইংরেজি বলে। আমি ওদের ইংরেজি নিয়ে মজা করছি কিন্তু আমি আসলে ওদের এই আচারনে মুগ্ধ, আমি সম্মান করি ওদের এই রীতিকে। 
    আমাদের প্রথম চিন্তাই, আরে ওরা বাংলা বলবে? কী আশ্চর্য! 'আমনে আমাত্তে বেশি বুঝেন' আমাকে বুঝাল আরে আমরা হিন্দি পারি, এইটা আমদের একটা কৃতিত্ব না? ওরা একটা ভাষা জানে বা ইংরেজি সহ দুইটা জানে, আমরা ইংরেজি সহ তিনটা জানি, এইটা ভাল না? অবশ্যই ভাল! এর চেয়ে ভাল উত্তর আর কী হতে পারে? 

    ভেজালের কথা বলব লেখছি। শুনেন ভেজালের গল্প। তারা হুড়মুড় করে চলে আসার পরে আমাদের মাঝে যারা সাহায্য করতেছিল তাদের খেয়াল হল উনারা এত রাতে নিশ্চয়ই না খেয়ে রয়েছে, সবাই নিশ্চয়ই ক্ষুধার্ত। যৌক্তিক চিন্তা। এরপরের চিন্তাটা অসুস্থ চিন্তা। একজন আমার রুমে এসে বললেন, ভাই খাবার কিছু আছে? অনেকেই মুসলিম, না খেয়ে আছে! আমার ঘুমানোর মুড মুহূর্তে চলে গেল! মেজাজ খুব খারাপ হল। এমনেই রুমে উঠার পরে একটা ক্যাচাল হইছিল, এখন তা স্বাভাবিক আছে। এরপর থেকে আমি এগুলা নিয়ে কোন শব্দ করি না। কিন্তু কালকে আমি আবার ধরলাম। বললাম, মিয়া, মানুষ হওন একটু! ক্ষুধার্তরে খাবার দিবেন, হিন্দু মুসলিম খুঁজে দিবেন? ধর্ম না খুঁজলে হব না? হিন্দু ক্ষুধার্তকে খাবার দিলে আল্লা নারাজ হব? কেউ কিচ্ছু বলল না আমাকে। গতকাল যেখানে ইফতার করেছিলাম সেখান থেকে বক্স করে আমাদেরকে অনেক গুলো পাউরুটি, মিষ্টি সহ আরও কী কী জানি দিয়ে দিয়েছিল আমাদেরকে। সব দিয়ে দেওয়া হল। 

    আমি জানি না এই ক্যাম্পে ভারত বাংলাদেশ, হিন্দু মুসলিম মিলে মিশে কীভাবে থাকবে! আমি ভারতীয়দের বিশেষ করে ভারতের আরেক প্রান্তের নাগরিকদের সম্পর্কে তেমন জানি না। কাছ থেকে চেনাজার সুযোগ হয়নি কখনও। আমার চাকরি জীবনের শুরুতে ভিশাল নামে একজন বস ছিল আমার। তিনি খুব নরম করে ডাক দিতেন, শরীফ, কাম হিয়ার! এমন ভাবে বলতেন মনে হত আমাকে অর্ডার দিতে উনি খুব কষ্ট পাচ্ছেন, নেহায়েত দিতে হচ্ছে বলেই দিচ্ছেন! আমি উনার অধীনে কাজ করে খুব তৃপ্তি পেয়েছিলাম। আমাদের যে কোন বিল, ছুটি ইত্যাদিতে নির্দ্বিধায় সাক্ষর করে দিতেন। তো উনিই একমাত্র দূরের ভারতের লোক, যার সংস্পর্শে গিয়েছিলাম। বাকিদের কথা আমি জানি না। কিন্তু আমি আমাদের লোকজনকে চিনি। আর তাই ভয় আমার, শঙ্কা আমার। দেখা যাক কথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারি আমরা!   
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ এপ্রিল ২০২৩ | ১২০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৪৫518927
  • সাদেক 
    দেশটাকে প্রায়  তিরিশ বছর চিনি । আপনার  পর্যবেক্ষণ শক্তি অসাধারণ ,  বর্ণনা মধুর ।  অনেক কিছু মনে পড়ছে যা হয়তো লক্ষ্য করি নি আগে যেমন সাইনবোর্ডে ইংরেজি ভাষার অনুপস্থিতি যদিও আমার অভিজ্ঞতায় চেক স্লোভাক রাশিয়ানদের তুলনায় গড়পড়তা রোমানিয়ান ভালো ইংরেজি বলে । আপনি যদি কখনও গালাতস যান ( রোমানিয়ার জামশেদপুর , স্টিল সিটি ) পথে ঘাটে দোকানে বাজারে হিন্দি শুনবেন - মিত্তল সাহেব ইস্পাতের কারখানা কিনে নিয়ে প্রচুর ভারতীয় কর্মী এনেছেন সেখানে। লিখুন আরও । 
  • | ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১০:২৪518929
  • আপনার পর্যবেক্ষণশক্তি আর সেন্স অব হিউমার চমৎকার। 
  • যোষিতা | ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৩৩518931
  • ইংরিজি সবচেয়ে কম চলে ইয়োরোপে।
  • হীরেন সিংহরায় | ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১১:২৪518932
  • আমার অভিজ্ঞতায় মধ্য রাতে পথ হারিয়ে  ইংরেজির কল্যাণে ইউরোপের কিছু শহরে সঠিক ঠিকানা খুঁজে  পাওয়ার সম্ভাবনা আছে - যেমন আইসল্যান্ড সুইডেন ফিনল্যান্ড ডেনমার্ক ( নরওয়ে অতোটা নয় ) , বেলজিয়াম হল্যান্ড এবং অবশ্যই সাইপ্রাস , মাল্টা।  পূর্ব ইউরোপে টালিন রিগা ( ভিলনিউস নয় )। ভি এস নাইপাল কোথায় যেন বলেছেন দেশের আপন জনসংখ্যা কম হলে বিদেশি ভাষা শেখাটা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়ায় ( হতো অ্যান এরিয়া অফ ডার্কনেস ) 
  • Ranjan Roy | ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:২১518950
  • মারহাব্বা! মারহাব্বা!
  • কিংবদন্তি | ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:২৩518956
  • হীরেন দা, মেইল করছি, একটু দেইখেন। আপনার হোয়াটসঅ্যাপ কাজ করছে না! মেইলে আমার নাম্বার দিছি, নক দিয়েন। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন