এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • কলেজ স্ট্রিটের পাঁচালি - ১

    প্রবুদ্ধ বাগচী লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৬১৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • কলেজ স্ট্রিটের পাঁচালি
    প্রবুদ্ধ বাগচী

    ( একটা সময় অবধি সাবেক কলকাতা শহরের বাসিন্দা না হলেও শহরতলির নাগরিক হিসেবে কলেজ স্ট্রিটের সঙ্গে পরিচয় ও যোগ গত সাড়ে চার দশকের বেশি। এই সুদীর্ঘ সময়কালে নানা উত্থান-পতন ও বিবর্তনের স্মৃতির কেন্দ্রে রয়েছে কলেজ স্ট্রিট ও তার সামগ্রিক বইপাড়া, তার সাংস্কৃতিক মানচিত্র। দেশের সাংস্কৃতিক জীবনের রাজধানী যদি কলকাতা হয়, তবে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু নিশ্চয়ই কলেজ স্ট্রিট। আনুমানিক অনধিক দশ বর্গ কিলোমিটার ভৌগোলিক পরিসীমার মধ্যে একটা জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও মননের চিহ্ন এইভাবে পৃথিবীর আর কোথাও ছড়িয়ে আছে বলে আমার জানা নেই। এই ইতিহাস-লিপ্ত জনপদের নানা রঙের আখ্যানচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনে। ব্যক্তি হিসেবে এই স্মৃতিযাপন আসলে এই এলাকার সঙ্গে নিজেদের বেড়ে ওঠার এক আলেখ্য যার কেন্দ্রীয় চরিত্র আসলে কলেজ স্ট্রিট ও তার ব্যাপ্ত পরিমণ্ডল। নিছক স্মৃতিচর্চার বাইরে সমকাল ও তার পরিবর্তনের একটা নিরপেক্ষ নৈর্ব্যক্তিক চিত্রও তুলে ধরার প্রয়াস থাকবে এই রচনায়। সময়ের চাপে কিছু স্মৃতি স্বাভাবিক নিয়মেই হারিয়ে যায়, তবু লেখায় উল্লিখিত তথ্য বিষয়ে যথাসাধ্য সতর্ক থাকারই চেষ্টা করা হয়েছে , তবু অনবধানতায় কিছু ভুল হতে পারে। তার জন্য আগাম মার্জনা চেয়ে রাখলাম। আজ ১ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে প্রতি পনেরো দিন অন্তর এই লেখার একেকটি পর্ব প্রকাশিত হবে। )

    পর্ব ১

    শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড় থেকে শুরু হওয়া আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড যেখানে আরেক বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর নামাঙ্কিত রাস্তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, আজ অনেকদিন হল ওই দুই বিজ্ঞানীকে মিশিয়ে দিয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে ফ্লাইওভার। শিয়ালদহ মেন স্টেশনের বাহির পথের সামনে এপার-ওপার সেই সেতুর সরকারি নাম ‘বিদ্যাপতি সেতু’, যদিও লোকমুখে তার ডাকনাম শেয়ালদা ফ্লাইওভার। দক্ষিণ প্রান্তে তার সীমা শতাব্দী প্রাচীন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের সামনে নেমে যাওয়ার আগে আরেকটা প্রান্ত নেমে গেছে বেলেঘাটার দিকে, যেদিকে এখন শিয়ালদহ রেলস্টেশনে ঢোকার গাড়ির রাস্তা, তার পাশে রেলের বি আর সিং হাসপাতাল, অল্প এগিয়ে শেয়ালদা সাউথ সেকশনের ঢোকার পথ। সম্প্রতি সেখানেই খুলে গেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ স্টেশনের দরজা। কিন্তু এটা যখনকার কথা তখন শিয়ালদহ ফ্লাইওভার তথা ‘বিদ্যাপতি সেতু’ র কোনো অস্তিত্ব ছিল না।

    পার্কসার্কাস ট্রাম ডিপো থেকে তখন দুটো ট্রাম ছাড়ত হাওড়া আসার। একটা হল কুড়ি নম্বর। এটা আসত মল্লিকবাজার, মৌলালি মোড় হয়ে সোজা শিয়ালদহ, তারপর বাঁ দিকে ঘুরে মহাত্মা গান্ধী রোড (তখন অবশ্য মহাত্মা গান্ধী রোড নামটার থেকে বেশি চালু ছিল হ্যারিসন রোড নামটাই) ধরে সোজা এসে কলেজ স্ট্রিট-এর মোড় পেরিয়ে বড়বাজার হয়ে ট্রাম উঠত হাওড়ার ব্রিজে। অন্য রুটে চলত হাওড়াগামী একুশ নম্বর ট্রাম। মল্লিকবাজার পেরিয়ে সেই ট্রাম ঢুকে যেত বাঁ দিকে ইলিয়ট রোডে, সেখান থেকে ওয়েলেসলি স্ট্রিট (আজকের রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড) হয়ে ওয়েলিংটন স্কোয়ার। সেখান থেকে আবার বাঁয়ে ঘুরে ধর্মতলা স্ট্রিট (পরবর্তী সময়ে লেনিন সরণী) ধরে এসপ্ল্যানেডের ট্রামগুমটি, বিবাদী বাগ হয়ে স্ট্র্যান্ড রোড ধরে হাওড়ার ব্রিজে উঠত ট্রাম। যেহেতু এই রুটটি তুলনায় দীর্ঘ এবং একটা সময় যখন স্ট্র্যান্ড রোড উভয়মুখী ছিল তখন সেটা চিহ্নিত ছিল এক বিভীষিকার পথ হিসেবে যেখানে ট্র্যাফিক জ্যাম ছিল নিত্যসঙ্গী। তাই ওই পথ পরিহার করাই ছিল শ্রেয়। পুজোয় বা শীতের সময় কিংবা গরমের ছুটিতে কলকাতার বাইরে বেড়াতে গেলে হাওড়া স্টেশনের দূরপাল্লার ট্রেনযাত্রীদের টেনশনের মূল কেন্দ্র ছিল ওই স্ট্র্যান্ড রোড। জ্যামে পড়ে গাড়ি ফেল করেছেন এমন যাত্রীদের কথা আমরা এখানে ওখানে শুনেছি। এ নিয়ে বাংলা সাহিত্যে গল্পও লেখা হয়েছে।

    যাই হোক, পার্ক সার্কাসে যেহেতু ছিল আমাদের জ্যাঠামশায়ের বাড়ি তাই কলকাতা শহর থেকে বাইশ কিলোমিটার দূরের মফসসলে থাকলেও রাজধানী শহরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল জীবন্ত। আমাদের বাবাও রোজ চাকরিসূত্রে আসতেন কলকাতার ‘বিবাদী বাগ’ অঞ্চলে, তখন ‘ডালহৌসি’ বলেই তার খ্যাতি ছিল সমধিক। কার্যত, আশির দশকে কলকাতায় মিনি বাস চালু হওয়ার আগে সরকারি বা প্রাইভেট বাসের গায়ে ‘বিবাদী বাগ’ লেখা থাকত না। ট্রাম-বাস কন্ডাক্টারদের সূত্রে ওই ডালহৌসির নামই মুখে মুখে ফিরত, এখনো যে সেই ডাকনাম একেবারে মুছে গেছে এমন নয়। তো সেই পার্কসার্কাস থেকে আমরা যখন হাওড়া স্টেশনে ফিরতাম আমাদের একমাত্র পরিবহন ছিল ট্রাম ডিপো থেকে ট্রামে উঠে পছন্দমতো একটা সিট নিয়ে বসে পড়া। ঘটনাচক্রে আমাদের জ্যাঠামশায়ের বাড়ি থেকে ট্রাম ডিপো ছিল নেহাতই হাঁটা পথ। যদিও বলা দরকার মল্লিকবাজারের মোড় থেকে (যেখানে এখন ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স) যে রাস্তা বাঁ দিকে ঘুরে গেছে (যার নাম নিউ পার্ক স্ট্রিট) ট্রামের লাইন ছিল ও এখনো আছে ওই রাস্তাতেই। ওখানেই ছিল অধুনালুপ্ত ‘পার্ক শো’ সিনেমাহল, জ্যাঠামশায়ের বাড়ি যেতে হলে ওই সিনেমা হল এর স্টপেজে ট্রাম থেকে নামতে হত। ১৯৭৮ সালের এক শীতের দুপুরে ওই ট্রাম স্টপে নামতে গিয়ে আমি ট্রাম থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে হাঁটুতে ভাল রকম চোট পাই, ফুল প্যান্টের হাঁটুর কাছে কিছুটা ছিঁড়ে যায়, রক্ত জমে যায়। আমার সঙ্গে ছিলেন আমার এক পিসতুতো দাদা, তিনি আমার হাতের ছোট সুটকেশটা নিয়ে আমার আগেই নেমে পড়েছিলেন। তাকে নেমে পড়তে দেখে আমি গতি-পাওয়া ট্রামের ফুটবোর্ড থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়েই এই বিপত্তি। সেবার আমার উদ্দেশ্য ছিল আরেক পিসতুতো দাদা যিনি মেটিয়াবুরুজে থাকতেন তার বিয়েতে যোগ দিতে যাওয়া। সেই সময়কালে ছেলের বিয়ের সময় নিতবর (মতান্তরে মিতবর বা কোলবর) যাওয়ার একটা রীতি ছিল। কনিষ্ঠ বালক হিসেবে আমি সেখানে ওই ‘নিতবর’ পদে মনোনীত হয়েছিলাম। বিয়েবাড়িতে আমায় নিয়ে যাবেন আমার জ্যাঠামশায়, সেই উপলক্ষ্যেই আমার তার বাড়িতে যাওয়া। যাক, ওসব গল্প এখন মুলতুবি থাক।

    এই ‘পার্ক শো’- র একটা স্টপ পেরিয়েই আজকের পার্ক সার্কাস ‘সেভেন পয়েন্ট’ ক্রশিং আজকে যার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আর আগের চিহ্ন একটুও খুঁজে পাওয়া যায় না। অন্য একটা তথ্য সম্প্রতি জেনেছি। ‘পার্ক শো’ সিনেমা হলের বিপরীত দিকে যেখানে মৃগেন্দ্র লাল মিত্র রোড শুরু হচ্ছে তার একটা দুটো বাড়ি পরেই ছিল পার্কসার্কাস ডাকঘর। আজও আছে। ওই ভাঙ্গাচোরা বাড়িটার দোতলার একটা ঘরে একসময় আশ্রয় নিয়েছিলেন বিনয় বাদল দীনেশ তিনজনই। সেটা ছিল রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের আগের দিনের রাত। পরের দিন এখান থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁদের টেগার্ট-বিরোধী খতম অভিযান। আরেকটা কথাও এখানে বলা দরকার, আমাদের একেবারে ছেলেবেলায় পার্কসার্কাস থেকে হাওড়া স্টেশন আসার বিকল্প পরিবহন ছিল নিতান্তই কম। বালিগঞ্জগামী দশ নম্বর সরকারি ডাবল ডেকার বাস বা মল্লিকবাজার ছুঁয়ে যাওয়া সেই কিংবদন্তী এইট বি বাস ছাড়া আর বাস কোথায়? বলা বাহুল্য ওইসব সরকারি বাসের দেখা মিলত খুব কম। ফলে হাতের কাছে ট্রামই ছিল আমাদের সহজ বিকল্প। সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং থেকে হাওড়াগামী ‘বাঁকড়া - পার্ক সার্কাস’ মিনিবাস বা নিউ পার্ক স্ট্রিট দিয়ে যাওয়া ‘কসবা রথতলা- হাওড়া’ মিনিবাস চালু হয়েছে অনেক পরে। সুতরাং কুড়ি নম্বর ট্রামে চেপে শিয়ালদহ ঘুরে হাওড়া আসা। মনে না থেকে উপায় নেই হাওড়া ব্রিজে ওঠার পরেই ট্রামের লাইনের সঙ্গে চাকার ঘর্ষণ আর বিশালাকায় ব্রিজের কাঠামোর সঙ্গে একটা প্রকান্ড ধাতব আওয়াজে গমগম করে উঠত ট্রাম। জানলা দিয়ে ছুটে আসত শরীর জুড়িয়ে দেওয়া গঙ্গার হাওয়া। আর সামনের দিকে সিটে বসলে ট্রাম ব্রিজে ওঠার সময় সামনে তাকালেই দেখা যেত কাছিমের পিঠের মতো হাওড়া ব্রিজের ঢাল, সম্ভবত বাস বা ট্যাক্সি বা অন্য কোনো যানে চাপলে এই দৃশ্য দেখার সুযোগ ঘটত না। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে হাওড়া ব্রিজ মেরামতির অজুহাতে তৎকালীন সরকার ব্রিজের ওপর ট্রাম লাইন উপড়ে ফেলেন , সেই সঙ্গে হাওড়া স্টেশনের সঙ্গে কলকাতার ট্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই সময় শাসক ফ্রন্টের মধ্যে কিছু মতবিরোধ ঘটে। শরিক দল সিপিয়াই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত সাময়িক। ব্রিজ মেরামত হয়ে গেলেই আবার ট্রাম লাইন পাতা হবে। বাস্তবে অবশ্য তা ঘটেনি। চিরতরে হাওড়া স্টেশন ট্রাম রুটে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কলকাতা থেকে। এখন অনেকদিন হল, হাওড়া ব্রিজের আগে স্ট্র্যান্ড রোড ও মহাত্মা গান্ধী রোডের সংযোগস্থলে সব হাওড়াগামী ট্রামের যাত্রা শেষ হয়ে যায়। ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্রামে চড়ার আনন্দ বিদায় নিয়েছে আমাদের জীবন থেকে।
    সেই সাবেকি কুড়ি নম্বর ট্রাম তখন পার্ক সার্কাস থেকে বেরিয়ে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু (পূর্বতন, লোয়ার সারকুলার রোড) ধরে এসে নীলরতন সরকার হাসপাতালের মেন গেট পেরিয়ে ঢুকে যেত এক সরু দুইদিক ঘেরা পথে। সেই পথের দু ধারে পরপর হকার্স স্টল, মাঝখান দিয়ে আপ ডাউন ট্রামের লাইন। দোকান বিছিয়ে বসেছে বিক্রেতার দল আর তারই মাঝখান দিয়ে ঠুং ঠুং ঘণ্টি মেরে এগিয়ে চলত ট্রাম। জানলার ধারে বসে হাত বার করে অনায়াসে ছুঁয়ে ফেলা যায় তাদের পসরা। বোঝাই যাচ্ছে এটা ‘বিদ্যাপতি সেতু’ তৈরি হওয়ার আগের কথা, এই সেতু চালু হয় ১৯৭৮ সালের কোনো এক সময়ে। এই হকার বাজারের মধ্যে দিয়ে ট্রামের চলা শেষ হত মোটামুটি ‘পূরবী’ সিনেমাহল পর্যন্ত। ‘বিদ্যাপতি সেতু’ চালু হওয়ার পরে এইসব হকারদের স্টল দেওয়া হয়েছে ব্রিজের নিচে, এখন যেখানে আমরা দেখতে পাই বহুবিধ পসরার জমজমাট বাজার। হকার্স স্টল পেরিয়ে তারপর মির্জাপুর স্ট্রীট (সূর্য সেন স্ট্রীট)-এর ক্রশিং যার একদিক চলে গেছে গোলদিঘীর পাড় দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে, অন্যপ্রান্ত গিয়ে পড়েছে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে ‘জগৎ’ সিনেমা হলের পাশ দিয়ে রাজাবাজারের দিকে। এরপরে আমহার্স্ট স্ট্রিট পেরোলেই শুরু হয়ে গেল কলেজ স্ট্রিট পাড়া। হাওড়াগামী ট্রাম লাইনের বাম ফুটপাথে দেখা যেতে লাগল ছোট ছোট বইয়ের স্টল, বিয়ের কার্ড বা খেলাধুলোর সরঞ্জামের দোকান। বিপরীত দিকেও তাই। মহেন্দ্র দত্তের সুবিখ্যাত ছাতার দোকান পেরোলেই ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের বাড়ি, তার পাশেই বেনিয়াটোলা লেনের মুখে আনন্দ পাবলিশার্স। রাস্তা যত এগোবে সামনে আসবে কলেজ স্ট্রিটের চৌমাথা, তার দুই প্রান্ত জুড়ে বইপাড়ার ডানা মেলা অস্তিত্ব।

    অবশ্য শেয়ালদা ফ্লাইওভার-বিহীন কলকাতায় যে ট্রামযাত্রার কথা লিখছি সেই সময় ওইসব বইয়ের দোকানের নাম ধাম ইত্যাদি আমাদের জানা ছিল না। কিন্তু একেবারে ছেলেবেলা থেকে কলকাতা আসা ও ট্রামে চড়ে ওই বইপাড়ার পাশ দিয়ে যাতায়াতে আমরা জেনে গিয়েছিলাম কলকাতার এই ঐতিহাসিক এলাকার পরিচয় ও ঐতিহ্য । কারণ আমাদের পরিবারে বইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল খুব নিবিড়। তাই বই কেনা মানেই কলেজ স্ট্রিট এটা ছিল একেবারে যেন স্বতঃসিদ্ধ বিষয়।

    এটা যে সময়ের কথা সেটা মোটামুটি সত্তরের দশকের প্রথমার্ধ, পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক উত্তাপ তখন আস্তে আস্তে মিইয়ে আসছে। পরে জানব, সেই উত্তাল সময়ের একটা জ্যান্ত চরিত্র হল কলেজ স্ট্রিট, যার উল্লেখ পাব নানা গল্পে-উপন্যাসে-প্রবন্ধে-চলচ্চিত্রে । ওই এলাকার প্রতিটি বাড়ি প্রতিটি গলি প্রতিটি দোকানে লেগে আছে সেই ইতিহাসের আলোকবিন্দু। না বললেও চলে, ট্রামে চড়ে যেতে যেতে তখন তার কোনো আদল আমাদের কাছে স্পষ্ট ছিল না। তখন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা অবাক আলোর লিপি। সেই লিপির পাঠোদ্ধার ঘটবে সময়ান্তরে আর তার পরে নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে কলেজ স্ট্রিটের গত সাড়ে চার দশকের ওঠাপড়া আর টানাপোড়েন।

    (ক্রমশঃ)
    পরের পর্ব প্রকাশিত হবে ১৫ জানুয়ারি
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৬১৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সন্তোষ বন্দোপাধ্যায় | 2401:4900:3ee4:1297:0:5e:b2b:***:*** | ০১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৭514948
  • ভালো লাগছে। ভালো লাগবে। অপেক্ষা করে থাকবো। পরবর্তী লেখার জন্য। ধন্যবাদ।
  • Ranjan Roy | ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪৯514969
  • অপেক্ষায় রইলাম। 
    আমি পার্কাসার্কাসের ট্রাম ডিপোর থেকে হাঁটাপথের দূরত্বে ধাঙড়বাজারের সামনে একটি ফ্ল্যাটে ১৯৬৯ অব্দি কাটিয়েছি। আপনার বর্ণ্না আমার সেই সব স্মৃতিকে   উসকে দিল । বিশেষ করে ২০ নম্বর ট্রাম, তার সীটে বসার আনন্দ, রেক্সিনের গন্ধ, ড্রাইভারের ঘটাং ঘট করে লিভার ঘোরানো  । সে তুলনায় বাসে চড়ে যাওয়া কেমন ম্যাটমেটে ম্যাড়মেড়ে লাগত।
  • Gobu | 42.***.*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৩১515001
  • শুরুটা আশাজনক ...
     
    অন্য লেখা লিন্ক হয়ে আছে কেন? 
  • Debasish Sengupta | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:০০515083
  • অপেক্ষা করে থাকবো পরবর্তী লেখার জন্য। 
  • Angsuman Ghosh | ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:০০515352
  • খুব ভালো লাগছে। তবে একটা কথা আমার মনে আসছে,দশ নম্বর বাস বোধহয় মল্লিকবাজার হয়ে যেত না সি আই টি রোড ধরে যেত। আমি অবশ্য ১৯৭৩ সাল বা তার পরের কথা বলছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন