এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্মৃতিচারণ  স্মৃতিকথা

  • কলেজ স্ট্রিটের পাঁচালি

    প্রবুদ্ধ বাগচী লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ০২ জুলাই ২০২৩ | ৬২৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কলেজ স্ট্রিটের পাঁচালি
    প্রবুদ্ধ বাগচী

    (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

    পর্ব ১৪

    একুশ শতকের প্রথম দশকে, নৈহাটি- র (উত্তর চব্বিশ পরগণা) ‘সোপান’ নামক একটি অ-সরকারি প্রতিষ্ঠান মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের নিয়ে আঞ্চলিকভাবে কিছু কিছু কাজ করার চেষ্টা করছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের নেপথ্যে ছিল আমাদের পরম বন্ধু এক মানসিক রোগের চিকিৎসক ও তাঁরই কিছু সুহৃদ। এই কাজকর্মের সূত্রেই ঠিক হয়, ‘কৈশোরক’ নামের একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা তাঁরা প্রকাশ করবেন, যাতে কিশোর কিশোরী ও তাঁদের অভিভাবকদের নানা সমস্যা নিয়ে লেখাপত্র প্রকাশ করা হবে। ২০০৭-এর ফেব্রুয়ারিতে সেই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। প্রথম দিকের একটা-দুটো সংখ্যা স্থানীয় প্রেসে ছাপা হলেও তারপরে ঠিক হয়, ছাপার কাজ পরিচালিত হবে কলেজ স্ট্রিট এলাকা থেকে। ঘটনাচক্রে এই পত্রিকার প্রকাশনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ায় আবার অনেকদিন পরে কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় যাতায়াত শুরু হল মাঝে মাঝেই। সেই সূত্রেই যোগাযোগ হল ‘জয়শ্রী প্রেস’ এর সঙ্গে।
     
    ‘জয়শ্রী প্রেস’ এর অনেকদিন আগে থেকেই খুব নামী প্রেস। এদের ছাপাখানার পরিকাঠামো অত্যন্ত ভাল। প্রচুর খ্যাতনামা প্রকাশন তাঁদের বই ছাপার জন্য এই প্রেসেই বরাত দেন। কিন্তু নিজে চোখে আমাদের সেগুলি দেখার সুযোগ হল এই প্রথম। প্রেসের অবস্থান এমন জায়গায় যে সূর্য সেন স্ট্রিটের থেকে যে রাস্তা বৈঠকখানা রোডের দিকে চলে গেছে সেই পথেও ঢোকা যায়, আবার, কেশব সেন স্ট্রিটের যে অংশটা রাজাবাজারের মোড়ের কাছে এসে পড়েছে সেখান দিয়েও একটা গলিপথে পৌঁছে যাওয়া যায় প্রেসে। গত কয়েক দশকে মুদ্রণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ যে কীরকম সুউচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এই যাতায়াতের সূত্রে আবার তা নতুন করে উপলব্ধি করা গেল। শুধু আধুনিক ব্যবস্থার প্রচলনই নয়, এই পর্বে এসে দেখলাম সেই ব্যবস্থা আমাদের মতো স্বল্প-পুঁজির পত্রিকাও তা ব্যবহার করতে ( ইংরিজিতে afford শব্দটা বোধহয় এক্ষেত্রে সুপ্রযুক্ত) পারে। ওই প্রেসের সদাশয় মানুষটি ছিলেন শ্রীকান্তবাবু, পত্রিকা ছাপা ইত্যাদি বিষয়ে আমরা তাঁর সঙ্গেই যোগাযোগ করতাম। আশ্চর্য এইটাই যে ‘জয়শ্রী প্রেস’ এ যারা নিজেদের প্রকাশনার কাজ করাতেন তাঁরা অনেকেই নাম-করা প্রকাশক আর তাঁদের সঙ্গে এই প্রেসের আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি, তুলনায় আমাদের পত্রিকা ছাপিয়ে তাঁরা ক’টাকাই বা পেতেন ! কিন্তু তাঁর আচরণে এই কম- বেশির ব্যাপারটা কখনও দেখিনি, সবাইকেই তিনি খদ্দের হিসেবে সমান চোখে দেখতেন এবং সেইভাবেই সমান ব্যবহার করতেন। পরের দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর আমাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হত না। 

    মনে পড়ে যাচ্ছিল, আশির দশকের মাঝামাঝি  সেই মফসসলের সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের শারদ-সংখ্যার প্রস্তুতির সঙ্গে যখন নিজেদের যুক্ত রেখেছিলাম তখনকার কথা । শারদীয় সংখ্যায় কোনো কোনো বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক-চলচ্চিত্র নির্দেশক-অভিনেতার সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও সেগুলি ছাপার ব্যবস্থা হত ওই পত্রিকারই প্রেসে। যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হত তাদের ছবি (অবশ্যই সাদা-কালো) ছাপার জন্য তাঁদের থেকে প্রথমে জোগাড় করতে হত তাঁদের ছবি, সেই ছবি থেকে তৈরি হত ব্লক, আবার সেই ব্লক তৈরির পর ফিরিয়ে দিয়ে আসতে হত ছবি। শুধু তাই নয় এই ছবি ছাপার জন্য বাড়তি যে খরচটুকু হত, তা আমাদের সম্পাদক বহন করতে পারতেন কেবল ওই শারদ-সংখ্যার জন্যই —- কারণ এই উপলক্ষ্যে তিনি কিছু বাড়তি বিজ্ঞাপন পেতেন। সাধারণ-সংখ্যা পত্রিকায় ছবি ছাপা ছিল ব্যয়বহুল। শুধু এই ধরনের ছোট পত্রিকাই বা কেন, ‘যুগান্তর’ সংবাদপত্রের এক প্রবীণ সাংবাদিকের স্মৃতিচারণায় পড়েছি, কীভাবে তাঁদের বাগবাজারের অফিসের একটা অংশে আলাদা করে ব্লক ছাপার ব্যবস্থা রাখতে হত। পরে এই ব্লক তৈরির ইউনিটটি শ্যামপুকুর এলাকায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বাড়ির কাছে স্থানান্তরিত হয় । রাতের শেষ প্রহরে কোনও বড় খবর এলে বা বিশিষ্ট কারোর প্রয়াণ ঘটলে খুব দ্রুততার সঙ্গে গাড়ি পাঠিয়ে সেখান থেকে ব্লক তৈরি করে এনে পরের দিনের প্রভাতী সংস্করণে তা ছাপা হত। এই প্রসঙ্গে একটা তথ্য জানিয়ে রাখি, সংবাদপত্রের অন্দরমহলে নাকি এইটাই রীতি যে কোনও ভি আই পি বা আজকের ভাষায় ‘সেলিব্রিটি’ কোনো কারণে অসুস্থ হলেই সঙ্গে সঙ্গে তার ‘অবিচুয়ারি’ লিখে সংরক্ষিত রাখা হয় —-- এই গোপন তথ্যটি জানিয়েছেন ‘যুগান্তর’-এর ওই সাংবাদিক ও প্রাক্তন কর্মকর্তা শ্রীদেবব্রত মুখোপাধ্যায়। 

    যাই হোক, কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশনা ব্যবস্থার এই ‘নবজাগরণ যুগে’ পা-রেখে দেখা গেল সাবেকি লেটার প্রেস উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে প্রচুর ডি টি পি (ডেস্কটপ পাবলিশিং) ইউনিট। টেবিলের ওপর একটি ছোট কম্পিউটার যন্ত্র, সঙ্গে বড়জোর একটি প্রিন্টার বা স্ক্যানার —-- মেরেকেটে দশ স্কোয়ারফুট জায়গার মধ্যে এইরকম একটা ইউনিট বসিয়ে ফেলা সম্ভব। একটি একশো স্কোয়ার ফুটের ঘরে পাঁচ-ছটা এমন ইউনিট অনায়াসে ধরে যায়। ঘটেছেও তাই। নির্দিষ্ট সফটওয়ারের সহায়তা নিয়ে বাংলা বা ইংরিজি দিব্যি কম্পোজ করে ফেলা যায়, ব্যবহার করা যায় হরেক রকমের ফন্ট ও নানা ধরনের ডিজাইন। সব থেকে বড় কথা এই কম্পোজ করা কপি সংরক্ষণ করা যায় কম্পিউটারের মগজে এবং প্রয়োজনে তা পুনরুদ্ধার করে আবার  সেটিকে পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা যায়। আমাদের পত্রিকা ‘কৈশোরক’ এর ডিটিপি হত ‘পূরবী’ সিনেমা হলের বিপরীত দিকে যে ‘মিত্র ইন্সটিটিউশন’ স্কুল, তার পাশে একটা অফিসে। পুরনো এলাকার অপরিসর ঘর, একই বাড়িতে অজস্র অফিস, দোকানঘর মনে করিয়ে দেয় ‘জন-অরণ্য’ ছবির সেই দৃশ্যটা যেখানে বিশুদা (উৎপল দত্ত)  বড়বাজারের একটা বহুতল বাড়ির দিকে আঙুল তুলে সোমনাথ (প্রদীপ মুখোপাধ্যায়) কে বোঝাচ্ছেন এই একটা বাড়ির মধ্যেই রয়েছে বিচিত্র এক বাণিজ্যের ভুবন। আমাদের এই বাড়িটি অবশ্য বহুতল ছিল না, কিন্তু বহুতর বাণিজ্যের উৎসভূমি তো ছিলই। ডি টি পি ইউনিটটির মালিক ছিলেন আশিস দাস (অমি প্রিন্টার্স)---- এঁরাই কম্পোজ করা কপি পৌঁছে দিতেন ‘জয়শ্রী প্রেস’-এ।

    গ্যালিতে প্রুফ তুলে তা সংশোধনের আমল চলে গেছে কবেই। এখন আমরা প্রুফ দেখতাম প্রিন্ট আউটের ওপর। এমনকি সময় বাঁচাতে সরাসরি কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখেও সংশোধন করা যেত প্রুফ, কোন অক্ষরের কোন ফন্ট ব্যবহার হবে তা-ও জানানো যেত ওইভাবে। মনে পড়ে যায় লেটার প্রেসের সেই ‘পাইকা’ ‘স্মল পাইকা’ ওইসব সিসের অক্ষরের সেটিং —-- এসব এখন ধূসর অতীত। আর এর পরেও ঝকঝকে ম্যাপলিথো কাগজে রঙিন প্রচ্ছদে ‘জয়শ্রী প্রেস’ থেকে ছেপে বেরোতো আমাদের পত্রিকা। অনেকে বলেন, ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে চাওয়া একটা নেশার মতো —- কথাটা ভুল নয় । কিন্তু এর চেয়েও বড় আনন্দ কয়েকজন মিলে যখন একটা পত্রিকা- কে দিনের আলো দেখানো যায় —-- আবার অনেকদিন পর প্রেস থেকে পত্রিকার বান্ডিল নিয়ে গাড়ি করে বাড়ি ফেরা, সেইসব পত্রিকার কপি বিভিন্ন বুক স্টলে পৌঁছে যাওয়া। হলদেটে নিউজপ্রিন্টের ওপর ভাঙাচোরা টাইপ ফন্ট আর ব্লক-করা শিরোনাম আর নয় এখনকার মুদ্রন-প্রযুক্তির কল্যাণে যে পত্রিকা শোভন, চিত্রিত, অলংকৃত —-- তার পরেও সেই পত্রিকার দাম কখনো পঁচিশ টাকা পেরোয়নি । এরই সমান্তরালে  পাঠক হিসেবে পত্রিকার পাঠ-প্রতিক্রিয়ায়  কারোর কারোর মন্তব্যও  জড়িয়ে গেছে  নিজেদের কাজকর্মের প্রত্যহে — সেটাও একরকম প্রাপ্তি । মুদ্রণ প্রযুক্তির এই আধুনিকীকরণের কথা বারবার বলতে হচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু হাল আমলের ডিটিপি- কম্পোজিং ও অফসেট ছাপা প্রসঙ্গে একটা ঐতিহাসিক তথ্য এই যে   আজ থেকে পঁচাত্তর বছর আগে ধর্মতলা স্ট্রিটে ‘জ্যোতি সিনেমাহল’ এর বিপরীতে      ‘কমলালয় স্টোর্সে’  সুবিখ্যাত রাম হালদার যে বইয়ের বিপণি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁরই উদ্যোগে ‘দীপঙ্কর ভবন’ নামক এক প্রকাশনা-সংস্থা ভারতবর্ষে প্রথম মাল্টি-কালারে ছাপা ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য ( যাদের বলে beginners) ‘ননসেন্স রাইম’ এর বই প্রকাশ করেন (১৯৪৮) —-- সেগুলোতে ছবি এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায়, গোপাল ঘোষ, শৈল চক্রবর্তী প্রমুখ। ১৯৫৫ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি থেকে এই বই পুরস্কৃত হয়। ‘ কথকতা কমলালয় ও প্রসঙ্গ সত্যজিৎ রায়’ — রাম হালদার- লিখিত এই গ্রন্থে এই বিষয়ের উল্লেখ আছে। আজকে ভাবতে বসলে ব্যাপারটা খুবই অবাক করার মতো।  এই সঙ্গে জানিয়ে রাখা দরকার ‘কৈশোরক’ পত্রিকা ঘিরে আমাদের উদ্দীপনা ও উদ্যোগ আমরা স্থায়ী করতে পেরেছিলাম ২০১৫ অবধি, তারপর নানা কারণেই তাতে ছেদ পড়ে। 

    কলেজ স্ট্রিটের আনাচ কানাচে ঘুরতে ঘুরতে আমরা অনেকটাই পরিক্রমা করে ফেলেছি গত কয়েকটি পর্বে। এবার কয়েকটা ভিন্ন প্রসঙ্গে ঘুরে যেতে আবার আমরা ফিরে যাই একেবারে কলেজ স্ট্রিট আর মহাত্মা গান্ধি রোডের মোড়ে —- শ্যামবাজারের দিকে মুখ করে দাঁড়ালে যার ডান কোনে ‘পাতিরাম বুক স্টল’। এই পত্রিকা স্টলটির নাম জানেন না এমন মানুষ পশ্চিম ও পুববাংলায় খুব কমই আছেন, অন্তত যারা কোনো না কোনোভাবে সাহিত্য, পত্র-পত্রিকা, লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। মূলত একজন সাধারণ পত্রিকা-বিক্রেতার প্রচেষ্টায় এই স্টলের প্রতিষ্ঠা নিশ্চয়ই মনে রাখার মতো ঘটনা , তাঁদের সামান্য পরিসরের দোকানে আজ পাওয়া যায় সারা রাজ্যের বেশিরভাগ ছোট পত্র-পত্রিকা, কার্যত ‘পাতিরাম বুক স্টল’ বহু বছর ধরেই কলেজ স্ট্রিটের ল্যান্ডমার্ক । কিন্তু এখানে একটা কথা আছে । পরিকাঠামোর দিক দিয়ে ‘পাতিরাম’-এ  বলতে গেলে প্রায় কিছুই নেই। দুটো ছোট দোকানঘর, যার সামনে একটা চওড়া জায়গায় বিছানো থাকে হরেক পত্র-পত্রিকা —- একদিকে মননশীল পত্রপত্রিকা অন্য ধারে মাটিতে বিছানো বাণিজ্যিক পত্র-পত্রিকা —- বিচিত্র এক বৈপরীত্য ! এমন অনেক সময় খেয়াল করেছি, একদিকে যখন কোনো পাঠক স্টলে এসে সংগ্রহ করছেন কোনো পত্রিকার ‘রাহুল সংকৃত্যায়ন’ বিশেষ সংখ্যা ঠিক তাঁর পাশে দাঁড়িয়েই কেউ চোখ বোলাচ্ছেন ‘স্টারডাস্ট’ বা ‘প্লেবয়’ পত্রিকার ওপর ।  আমি একটুও বলতে চাইছি না, যারা ‘স্টারডাস্ট’ বা সমগোত্রীয় পত্রিকা পড়েন তাঁরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক — আসলে এই বৈপরীত্যের কূটাভাস দেখা যায় এখানেই। তবে সব অ-বাণিজ্যিক পত্র-পত্রিকার গন্তব্য ‘পাতিরাম’ হওয়ায় সমস্যা এই যে, এত পত্রিকার ভিড়ে মাঝে মাঝেই এঁদের পুরোনো না-বিক্রি হওয়া পত্রিকাগুলি পেছনে সরিয়ে ফেলতে হয়, এতে পাঠকের অসুবিধে হয় —- কিন্তু এত অপরিসর জায়গায় বিকল্প উপায়ই বা কী ? তবে ‘পাতিরাম’ এর কিন্তু একটা ‘দুর্নাম’- ও আছে। সেটা হল এঁদের কাছে বিক্রির জন্য পত্রিকা বা বই জমা দিলে তা বিক্রি হয়ে গেলেও এঁরা টাকা দিতে খুব সমস্যা করেন । একদা আমার প্রথম কবিতার বই এঁদের কাছে দশ কপি জমা রেখে রশিদ নিয়েছিলাম, তার আর কোনো হদিশ আজ পর্যন্ত পাইনি। তবে ‘পাতিরাম’ নিয়ে কথা বলতে গেলে একটা প্রসঙ্গ উল্লেখ করা দরকার। এই স্টলটির অবস্থানের বিশিষ্টতা ও খ্যাতির কথা মাথায় রেখে বই-প্রেমিক রমাপ্রসাদ দত্ত একসময় নিয়মিত প্রতি মাসে আর্ট পেপারের ওপর একটা পোস্টার লিখে ‘পাতিরাম’ এর ওপরদিকে প্রদর্শনের জন্য টাঙিয়ে রাখতেন —- তাতে লেখা থাকত বই ও বইপড়া, বই কেনা নিয়ে নানান বিশিষ্ট মানুষের বক্তব্য। তিনি নিজেও একটা ছোট টুল পেতে পাতিরামের সামনে বসে থাকতেন অনেকসময় । প্রতিমাসে তাঁর পোস্টারের বিষয় বদলে যেত। এই প্রয়াস সীমায়িত হলেও নতুন ধরনের যা প্রশংসার দাবি রাখে। যতদূর জানি রমাপ্রসাদ নিজেও বইপাড়ায় টুকিটাকি প্রুফ দেখা ও সম্পাদনার কাজকর্ম করতেন।  কোভিড মহামারীর পরে ইদানিং আর সেই পোস্টারের দেখা মেলে না, দেখা মেলে না হাওড়ার এই বই-প্রেমিক মানুষটির। কিন্তু বইপাড়ার এই আখ্যানে তার নামটুকু উল্লেখ করা জরুরি।

    একইভাবে আরেকটি চাপাপড়া চরিত্রের কথা এখানে বলা দরকার। তার নাম ‘ভেটকি’ । কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জুড়ে থাকা এই খর্বকায় মানুষটির প্রকৃত নাম বা পদবী আমরা কেউই জানতাম না। কিন্তু তাঁর বড় বড় চোখ,  মুখ-ভর্তি পান, অস্বাভাবিক বড় ঠোঁট ( সম্ভবত তাঁর ‘ভেটকি’ নামের সূত্র এটাই)  আর মলিন পোশাক ছিল ওই কফিঘরের অঙ্গ। তবে তাঁর বিশদ পরিচয় ছিল ভিন্ন। আদপে ‘ভেটকি’ ছিলেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের পরম ভক্ত ও সূর্যাস্তের পর তাঁর পানশালার অভিন্ন-হৃদ্য়-সুহৃদ। পানোন্মত্ত শক্তি নাকি ‘ভেটকি’-র কাঁধে হাত রেখে রাস্তা চলতেন, এমন জনশ্রুতি ছিল। কিন্তু ‘ভেটকি’-র অসাধারণত্ব এইখানেই যে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অজস্র কবিতা ছিল তাঁর কণ্ঠস্থ। আমরা তাকে যে-সময়টায় দেখেছি, তখন শক্তি চট্টোপাধ্যায় খ্যাত ও প্রবল জনপ্রিয় ফলে কফি হাউসে তাঁর পা পড়ার সুযোগ ছিল না, কিন্তু ‘ভেটকি’ নিয়মিত সেখানে আসতেন। তাঁকে গোটা কফি হাউস চিনত, আর, ওখানে বসেই তিনি অনায়াসে বলে যেতেন শক্তির সব অমোঘ পঙক্তিমালা —- মুখ-ভর্তি পানের রস ছিটকাতো তাঁর উচ্চারণে, এমনকি প্রখর মধ্যাহ্নেও তাঁর মুখ থেকে নির্গত হত ‘অন্যরকমের মদিরা সুবাস’। কবির নিজের লেখালিখির বাইরে তাঁর জীবনযাপন, পানাসক্তি, হুল্লোড়বাজি এগুলোর প্রচার কতটা দরকার তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে ও থাকবে । শক্তি চট্টোপাধ্যায় বড় মাপের কবি হলেও এইসব অনুষঙ্গে নিজেকে খ্যাত করার অভিপ্রায় তাঁর একেবারেই  ছিল না, এই কথা বলা যায় না —- নিজেকে নিয়ে এইসব ‘কিম্বদন্তী’ হয়তো তিনি উপভোগ করতেন। কিন্তু নিজের লেখালিখির ভাবনা ও বিন্যাসকে প্রশস্ততর ও সমুন্নত করার জন্য  ব্যক্তিজীবনের এইসব ‘মাতামাতি’ থেকে সসম্ভ্রমে দূরে থেকেও যে নিজেকে বিশিষ্ট করে তোলা যায় তার সব থেকে বড় উদাহরণ আমাদের সময়ে শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। তবু যে কোনোভাবেই হোক শক্তির জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে এইসব ‘কিম্বদন্তী’। শোনা যায়, কলকাতা শহরের রাতের ট্যাক্সিওয়ালারা দুজন খ্যাত মানুষকে চিনতেন —- একজন কাজী সব্যসাচী , অন্যজন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। যাই হোক, শক্তির এই পরমভক্ত ‘ভেটকি’-কে সম্পূর্ণ ভিন্ন চেহারায় দেখেছিলাম সেইদিন, যেদিন শান্তিনিকেতনে প্রয়াত ( ২৩ মার্চ ১৯৯৫)  শক্তির মরদেহ এনে শায়িত রাখা হয়েছিল ‘নন্দন’ চত্বরে গাছের তলায়। অস্থায়ী সামিয়ানার তলায় সেদিন আমাদের মতো শক্তির গুণগ্রাহীদের জমাট ভিড়, আর সেই ভিড়ের মধ্যেই এসে দাঁড়ালেন ‘ভেটকি’ —- বিস্রস্ত, বিধ্বস্ত ।  নিজের সমস্ত সত্ত্বা উজাড় করে ‘ভেটকি’-কে প্রবল কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখেছিলাম আমরা, সেই বিলাপ বা শোচনায় কোনো খাদ ছিল না, নিজের আত্মজন চলে গেলেও মানুষ এমন আছাড়িপিছাড়ি কান্না কাঁদেন কি না সন্দেহ। কিন্তু ‘ভেটকি’ র শোকের মধ্যে কোনো বাড়তি আড়ম্বর ছিল বলে মনে হয়নি সেদিন, আর আশ্চর্য এই যে মাঝে মাঝে কান্না থেমে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই  ‘ভেটকি’ র গলায় দানা বাঁধছিল শক্তির কবিতামালা —- ‘ সারাদিন ভেঙ্গেছো পাথর
                                                         পাহাড়ের কোলে
                                                         আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে
                                                         তবু নও ব্যথায় রাতুল
                                                         আমার সর্বাংশে হলো ভুল 
                                                        একে একে শ্রান্তিতে পড়েছি নুয়ে।
                                                       সকলে বিদ্রূপভরে দ্যাখে।’ 
    সম্পূর্ণ উচ্চারনের আগেই থমকে যাচ্ছিল তাঁর কন্ঠ, বেদনা এসে আবার তাঁকে টেনে নিচ্ছিল চোখের জলের জোয়ারে। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রয়াণলেখ- তে  বুদ্ধদেব বসু এই শোক-সঞ্জাত বিলাপের পক্ষ নিয়ে লিখেছিলেন, ‘ …….. যখন মৃত্যুর আঘাতে অন্য এক মহাসত্য উদ্ঘাটিত হয়ে পড়ে, তখন, সেই আদিগন্ত গহ্বরের সামনে, মূক হয়ে থাকতে হবে কি আমাদের ?’  মানুষের  সাহিত্য-চেতনায় তো সেই উচ্চারণ খুব বিরল নয়। মহাভারতে বা হোমারের কাব্যে আমরা দেখি কোনো বীরের প্রয়াণে শোকের প্রকাশ কী উদাত্ত অথচ অপ্রমত্ত আবেগে বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়ায়। মহাকাব্যের একটি প্রত্যঙ্গ এই বিলাপ, সেখানে পান্ডবে-কৌরবে ভেদাভেদ নেই —- বেদনার তীব্র মুহূর্তেও যেন মৌনতা নিতান্ত অমার্জনীয়।  সেদিন এক কবির প্রয়াণে তাঁর পরম ভক্তের এই অবিমিশ্র প্রতিক্রিয়া মনে করিয়ে দিয়েছিল বুদ্ধদেবের ওই অবলোকন।
     
    এতদূর পর্যন্ত শোকের না হলেও বেদনার একটি বিধুর অধ্যায় আমার স্মৃতিতে জাগরূক যার মূল কেন্দ্র হল কলেজ স্ট্রিটের একটি পুস্তক বিপণি। ঘটনাটা পারিবারিক হলেও এই আখ্যানে তাকে ঠাঁই দিলে তা খুব ‘গুরুচন্ডালি’ হবে বলে মনে হয় না। একটু আগেই ‘পাতিরাম’ নিয়ে কথা হচ্ছিল। ওই ‘পাতিরাম’ যে বাড়িটির একতলায়, সেই বাড়িটির তিনতলায়  অফিস ছিল ‘সায়েন্টিফিক বুক এজেন্সি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের। পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী মহকুমার একটি গ্রামের সম্পন্ন একটি পরিবারের এই পুস্তক ব্যবসার পত্তন করেন। বিভিন্ন বিদেশি প্রকাশন সহ দেশের অনেক নামি-দামি প্রকাশনের কলকাতার ‘এজেন্সি’ ছিল এঁদের হাতে। মূলত বিজ্ঞান ,প্রযুক্তি ও মেডিক্যাল বিষয়ের বই এঁরা আমদানি করতেন, সরবরাহ করতেন বিভিন্ন সংস্থায়। উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণায় যেহেতু বিদেশি বইই বেশি প্রয়োজন হয় তাই বিভিন্ন বিজ্ঞান সংস্থা, মেডিক্যাল কলেজ, সরকারি দফতর ছিলেন এঁদের একচেটিয়া ক্রেতা। আমার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় চাকরি করতেন এই সংস্থায়। মূলত গ্রামতুতো পরিচয়ের সূত্রে আগে এরকম চেনা লোককে চাকরি দেওয়ার প্রথা ছিল —- এক্ষেত্রেও বিষয়টা ছিল তাই। এই ব্যবসার যারা কর্ণধার তাঁদের গ্রামেরই ছেলে হিসেবে এই চাকরি তিনি পেয়েছিলেন। কলেজ স্ট্রিটের ওই অফিস ছাড়াও রাজা উডমান্ড স্ট্রিটের ( হাওড়া ব্রিজ থেকে ব্রাবোর্ণরোড-গামী ফ্লাইওভার ঠিক যেখানে ব্রাবোর্ন রোডে মিশছে সেখানে) একটি বাড়ির দোতলায় ছিল তাঁদের বইয়ের গুদাম। যেহেতু ওই সংস্থা ‘ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট’ এরও ‘এজেন্ট’ ছিলেন সেই সূত্রে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের প্রকাশনায় প্রচুর ছোটদের বই তাঁদের সংগ্রহে থাকত। ওই আত্মীয়ের কাছ থেকে তেমন অনেক বই আমরা উপহার হিসেবেও পেয়েছিলাম। মনে পড়ছে রয়্যাল সাইজের রঙিন ছবি চিত্রিত  ‘বাপু’ নামক হাতির গল্প, ইংরিজিতে একটি মোরগছানার গল্প আবার খ্যাত ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে জীবনীমূলক কিছু বাংলা বই ( যেমন বিজয় মার্চেন্ট)  এগুলো আমাদের হাতে হাতে ফিরত। রাজা উডমান্ড স্ট্রিটের বইয়ের গুদামে বেশ কয়েকবার যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি ছোটবেলায় —- চারদিকে বই আর বই, বিচিত্র তাদের বিষয়, রকমারি তাদের সজ্জা, আকার, আয়তন। সম্ভবত বিপুল বইয়ের আনাগোনার ফলে গুদামে অনেক ‘ডিফেক্টিভ বই’  বেরোতো  যেগুলো আর বিক্রি হত না, খুঁজে পেতে দুহাত ভরে তেমন কত বই নিয়ে এসেছি বাড়িতে , আজও তার দুয়েকটা হয়তো খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে। 

    এইরকম একটি চালু ও প্রায় একচেটিয়া লাভজনক ব্যবসার অন্দরে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছিল অন্য এক  আশঙ্কা। আটের দশকের গোড়া থেকেই মালিকরা কী কারণে আর তাদের ব্যবসায় মন দিচ্ছিল না। কলেজ স্ট্রিটের ওইরকম সুবিধেজনক জায়গায় অফিস, অফিস পাড়ায় গুদাম —- অর্ডার আসছে প্রচুর কিন্তু তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বোঝা গেল কোথাও একটা ছন্দপতন হতে যাচ্ছে। প্রথমে কর্মীদের বেতন অনিয়মিত হতে লাগল। আমার আত্মীয় তার স্ত্রী-পুত্র নিয়ে পড়লেন অকূল পাথারে। মনে আছে, তিনি নিয়মিতভাবে আমার বাবার কাছে এই বিষয়ে পরামর্শ করতে আসতেন। বাবা নিজের বিবেচনামতোন তাঁকে চিঠিপত্র ড্রাফট করে দিতেন। নানা জায়গায় চিঠিপত্র পাঠানো হল, নানা জায়গায় দরবার চলতে লাগল । কিন্তু ব্যক্তি-মালিকানাধীন একটি অসংগঠিত সংস্থা শ্রম-আইন, প্রফিডেন্ট ফান্ড আইন এইসবের তোয়াক্কা তখনও করত না, আজও করে না। তাছাড়া এইভাবে ‘গ্রামতুতো’ সম্পর্কের খাতিরে কর্মী নিয়োগ করলে তাঁরা অনেক বশ্য হন এবং পারতপক্ষে কর্মী ইউনিয়ন - টিউনিয়ন  ইত্যাদির ধার মাড়ান না —- ফলে এঁদের ‘পেটে লাথি’ মারলে কর্তৃপক্ষ অনেক নিরাপদ থাকেন। এক্ষেত্রেও বিষয়টা গড়িয়ে গড়িয়ে সেইদিকেই গেল। একদিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল কলেজ স্ট্রিটের অফিস, মালিকদের আর ঠিকানা পাওয়া গেল না, কর্মীরা তাদের বকেয়ার কানাকড়িও না-পেয়ে পথে বসলেন। সম্ভবত মালিকরা তাদের মূলধন সরিয়ে নিচ্ছিলেন অন্য কোনো ব্যবসায়ে, কিন্তু পূর্বতন সংস্থার কর্মীদের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র সহানুভূতি বা আইনি দায়বদ্ধতা ছিল না । আমাদের পারিবারিক এই মানুষটিরও কার্যত অথৈ পাথারে পড়লেন । পরবর্তী জীবনে পাটকল বা অন্যান্য শিল্পে মালিকদের  এইরকম একচেটিয়া ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ ও তার বিপরীতে ‘আক্রান্ত’ শ্রমিক কর্মচারীদের দুরবস্থা এবং সরকারের হিরণ্ময় নীরবতা বা ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’- গিরি বিস্তর দেখেছি —-- একটা চালু বইয়ের ব্যবসাকে নষ্ট করে তার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের নিঃস্ব ও বিপন্ন করার কোনো তুলনীয় উদাহরণ আছে কি না আমাদের জানা নেই। প্রসঙ্গত, বলতে চাইব, জন-পরিসরে একসময় শোনা যেত  কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ নাকি শ্রমিক কর্মচারীদের ‘ইউনিয়নবাজি’ —- এই বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আশির দশকে একটি কমিশন গঠন করেছিলেন (তেওয়ারি কমিশন) । কমিশনের প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছিল, কল-কারখানা বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে মাত্র দুই শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী ‘শ্রমিক অশান্তি’ ! সুতরাং যা রটে তার অনেকটাই ঘটে না ! কলেজ স্ট্রিটের এলাকায় এসে দাঁড়িয়ে এই  পুরনো সত্যটাকেই আমরা অঙ্গীভূত করে নিলাম আরেকবার। কারণ, কলেজ স্ট্রিটের এই ঐশ্বর্য-ঐতিহ্য আর মহানতার পাশে পাশে এইসব ছোট ছোট মানুষের সুখ-দুঃখের কাহিনিও জড়িয়ে আছে তার ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে। 

    (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

    (পরবর্তী ও শেষ পর্ব প্রকাশিত হবে ১৬ জুলাই )

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • স্মৃতিচারণ | ০২ জুলাই ২০২৩ | ৬২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Aranya | 2601:84:4600:5410:2045:80f9:b35f:***:*** | ০৩ জুলাই ২০২৩ ১০:১৩520955
  • সুন্দর 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন