এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভোটবাক্স  লোকসভা - ২০২৪

  • স্মৃতির রাজ্য শুধুই শ্লোগানময়-২

    প্রবুদ্ধ বাগচী লেখকের গ্রাহক হোন
    ভোটবাক্স | লোকসভা - ২০২৪ | ০১ জুন ২০২৪ | ৩৪৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • স্মৃতির রাজ্য শুধুই শ্লোগানময়-২
    প্রবুদ্ধ বাগচী 

          আশির দশকের একেবারে শেষপর্বে এসে রাজ্যের ও দেশের রাজনীতির ইস্যুগুলোই পাল্টে যায়। বোফর্স কামান কেনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী রাজীবের নাম যুক্ত হয়ে যাওয়া যদি একটা পর্ব হয় তবে আরেকটা প্রান্ত হল মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টকে কেন্দ্র করে দেশে দলিত ও পিছড়েবর্গ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে নতুন এক ভোট রাজনীতি। দুটো বিষয়ই সামনে এনে সেই সময় মিডিয়ার নজর কেড়ে নিয়েছিলেন রাজীব মন্ত্রীসভার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মণ্ডার রাজা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং ওরফে ভিপি। কার্যত “পিছড়েবর্গ” এই শব্দটা তখন দেশের রাজনীতিতে নতুন পরিভাষা হিসেবে উঠে এল। আরও দুটো বিষয় এখানে বলতে হবে। একটা হল এই মণ্ডল রাজনীতি-র মূল কেন্দ্র ছিল দেশের তফশিলী জাতি ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণি যারা উচ্চবর্ণের হিন্দুজনগোষ্ঠীর বাইরের মানুষ। এই শ্রেণির দ্রুত মূল রাজনীতির স্রোতে উঠে আসা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দল হিসেবে ভারতীয় জনতা পার্টি সুনজরে দেখেনি। প্রধানত হিন্দি বলয়ে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক রক্ষার জন্য তাঁরা সরাসরি এই মণ্ডল রাজনীতির বিরোধিতা করে সংরক্ষণ-বিরোধী অবস্থান নিলেন —- খবরের কাগজের ভাষায় এর নাম হল ‘কমণ্ডলু’ রাজনীতি, যার প্রধান প্রবক্তা ছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানি ও তার কিছু বাছাই সহযোগী যাদের আর দু-তিন বছরের মধ্যেই আমরা দেখতে পাব আরও আরও হিংস্র ভূমিকায়। এদের উস্কানিতে কিছু বর্ণহিন্দু ছাত্র নিজেদের গায়ে আগুন দিয়ে বিষয়টাকে আরও তীব্রতর করে। তবে সবথেকে কুৎসিত ও অপমানজনক ঘটনা হল এদেরই ছাত্রযুব সংগঠনের কর্মীরা পিছিয়ে পড়া মানুষকে সংরক্ষণের আওতায় আনার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রাস্তায় জুতো পালিশ ও জুতো সারাই করতে বসে যান চর্মকার-সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ করে। আজকে সারাদেশেই যখন পিছিয়ে পড়া জাতির মানুষকে সামাজিক শারীরিক ও আর্থিক হিংসার শিকার হতে দেখি আমরা তখন হয়তো মিলিয়ে নেওয়া যায় আসলে তার শিকড় কোন গভীরে ঢুকে বসে আছে। 

          রাজ্যের রাজনীতিতে এই মন্ডল-প্রসঙ্গ ততটা উচ্চকিত হতে পারেনি কারণ বামফ্রন্টের আমলে মনে করা হত এরাজ্যে জাতের বিচার তেমন কিছু একটা বিষয় নয়, এখানে শ্রেণির অবস্থানই প্রধান। কিন্তু ‘কমণ্ডলু’র রাজনীতি যে একটা দুর্যোগের আশঙ্কা ডেকে আনছে এটা কুশলী বামনেতৃত্ব কেউ কেউ বুঝেছিলেন। তা নিয়ে কিছু দেওয়াল লিখন যে হয়নি তা নয় । তাদের  আহ্বান  ছিল,  ‘বিজেপির  সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পরাস্ত করুন’ এই ধরনের —-- নিজেদের আদর্শগত কাজ কেন তাঁরা জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছিলেন তা অবশ্য খুব স্পষ্ট ছিল না। বরং তাদের সামনে অন্য একটা ঘোর বিপর্যয় এসে পড়ল সোভিয়েতের পতন ও তার প্রতিক্রিয়ায় তথাকথিত সোস্যালিস্ট ব্লক ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, দেশের ও রাজ্যের তাবড় তাবড় বাম তাত্ত্বিক নেতারা ওই দেশগুলির ভিতরের প্রকৃত ‘খবর’ রাখতেন না। দলীয় সফরে সোভিয়েট বা অন্য দেশে এঁরা অনেকেই গেছেন কিন্তু যেহেতু তাদের অনেকটাই ‘সাজানো বাগান’ দেখানো হয়েছিল তাই অন্দরের বার্তা তাঁরা পড়তে পারেননি। এই কথাটা বলছি আরও এই কারণে, এই সময়েই কিন্তু আমরা শহরের নানা জায়গায় দেওয়ালের লিখন দেখেছি — ‘মার্কসবাদ সত্য কারণ এটি একটি বিজ্ঞান’ বা ‘পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ সমাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্রই শেষ কথা’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা ঠিক, সোভিয়েতের ‘পতন’ হওয়ার সঙ্গে মার্কসবাদ ‘অসত্য’ প্রতিপন্ন হওয়ার কোনো সংযোগ নেই। কিন্তু পূর্ব ইউরোপের একেকটি দেশের করুণ বিপর্যয় দেখে বামমহলে একটু আড়ষ্ট কানাকানিও চলছিল —- আসলে ওই দেশগুলিতে বোধহয় প্রকৃত অর্থে সোশ্যালিজম ছিল না ! তাহলে তাঁরা দুনিয়ার তিনভাগের একভাগ ‘সমাজতন্ত্রের দখলে’ বলে দেওয়াল লিখেছিলেন কেন, এর জবাব তাঁরাই দিতে পারেন। 
     
            কথায় বলে বিপদ কখনো একা আসে না। রাজ্যের তথা দেশের বামপন্থীদের সামনে ঠিক এর পরের দশকের গোড়াতেই মুখোমুখি হতে হল, দুটো নির্দিষ্ট বিষয়ে যার জন্য তাঁরা কতটা প্রস্তুত ছিলেন জানা নেই।  শরিক দলগুলির নিজেদের অন্তঃকলহে কেন্দ্রের স্বল্পস্থায়ী জোট সরকারের পতন প্রায় অনিবার্য ছিল, ভিপি সিং সরকারের ওপর যে বিজেপি সমর্থন তুলে নেবে সামগ্রিক পরিস্থিতি সেদিকেই ইঙ্গিত করছিল, ঘটলও তাই। এর পরে লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই ঘটে গেল রাজীব গান্ধির মর্মান্তিক হত্যাকান্ড। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস দল স্থায়ী সরকারের সমর্থনে প্রচুর দেওয়াল লিখেছিলেন — ‘কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার গড়তে কংগ্রেসকে ভোট দিন’, দেওয়ালে নতুন এক শব্দের জন্ম দেখলাম আমরা — ‘খিচুড়ি সরকার’ ।  তাঁরা  রাজীবজির  ফিরে আসা ও নতুন সরকার গড়ার স্বপ্নও দেখিয়েছিল —-- হায়, তাঁরা জানতেন না অমন তরতাজা মানুষটা কীভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবেন মানববোমার আঘাতে। জনগণেশের ইচ্ছেয় সেবার অবশ্য প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিনহা রাওয়ের নেতৃত্বে সরকার গড়লেন কংগ্রেস দল, তবে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতার জন্য বাইরের কিছু সমর্থন অবশ্য দরকার হয়েছিল। তখন দেশে উঠে আসছে নতুন বিরোধী শক্তি ভাজপা, বাবরের নামাঙ্কিত মসজিদের জায়গাতেই তাঁরা নতুন রামমন্দির তৈরি করার নামে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে দেশের। আর একই সঙ্গে দেশের নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিনহা ঠিক সেই সময়েই দেশের অর্থনীতিকে ভাসিয়ে দিলেন খোলা হাওয়ায়। সাবেকি পরিকল্পিত অর্থনীতির ‘নেহেরু মডেল’ সেই প্রথম ধ্বস্ত হল এক শিখ প্রৌঢ়ের হাতে। এ এমন সর্বনেশে হাওয়া যা আমূল বদলে দিতে লাগল এতদিনের চেনা অবয়ব। 

         রাজ্যের দেওয়ালে দেওয়ালে গর্জে উঠলেন বামপন্থীরা। নতুন স্লোগান এল ‘খোলা বাজারি অর্থনীতি মানছি না, মানব না’, বলা হল ‘সরকারি ক্ষেত্রে ঢালাও বেসরকারিকরণ রুখতে হবে’, ‘লাভজনক সরকারি সংস্থার হস্তান্তর চলবে না’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এই প্রতিটি দাবিই ছিল ন্যায্য, কিন্তু রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার তখন কেন্দ্রের শরিক নন ফলে সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করার মতো অবস্থায় তাঁরা ছিলেন না। অন্যদিকে ধীরে ধীরে বাম- রাজনীতির পাশে পাশে ইতিউতি দেখা যেতে লাগল ‘কমল’ চিহ্নের পায়চারি। সম্ভবত, আদবানি ‘রাম-রথ’ তৈরি করে দেশ পরিভ্রমণে বেরোলেন এর কাছাকাছি সময়েই। ইতিমধ্যে বিজেপি উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় ক্ষমতা দখল করে ফেলেছে। ‘রাম রাজনীতির’ হাত ধরে উঠে এল কিছু নতুন শব্দ আর স্লোগান —- ‘রাম-শিলা’, ‘ করসেবা’ এবং খুব ব্যঞ্জনাবহ ‘সিউডো সেকিউলার’ বা ‘মেকি ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সংখ্যালঘু তোষণ’ ।  দেওয়ালের  দখল তাঁরা যে খুব একটা নিতে পেরেছিলেন এমন নয় তবে ‘মন্দির ওহি বানায়ঙ্গে’র মতো হিন্দিভাষী স্লোগান সেই প্রথম ঢুকে পড়ল বাংলা বাজারে পরে যাকে আরো স্তরে স্তরে বিকশিত হতে দেখব আমরা। একই সঙ্গে ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ নামক এক শব্দও খুব কায়দা করে ভাসিয়ে দেওয়া হল দেশভাগের প্রত্যক্ষ শিকার এই রাজ্যে। বামপন্থীরা যে নীরব ছিলেন তা নয়। তাঁরা আওয়াজ তুলছিলেন ‘সাম্প্রদায়িক বিজেপি বাংলা থেকে দূর হঠো’ বা  কবি সুকান্তের কবিতাংশ ‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি/ বুঝে নিক দুর্বৃত্ত’। এই সময় কার্যত দুটো ফ্রন্টেই লড়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা — নতুন অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে একদিকে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত —- তখন তাঁরা দুই পক্ষ থেকেই সমদূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। কেন্দ্রীয় ‘সর্বনাশা’ আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে তাঁরা কত যে বনধ ডেকেছেন তা আর বলার নয় —- এইসব হরতালের পক্ষে প্রচারে ছিল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিনহার আদ্যশ্রাদ্ধ। তাঁরা একরকম নামই দিয়েছিলেন ‘মনমোহিনী অর্থনীতি’, তাঁকে ‘বিশ্বব্যাঙ্কের দালাল’, ‘মার্কিন পুঁজির চৌকিদার’ ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়েছে বারবার, এমনকি নিজেদের স্বার্থেই আই এম এফ যে তাঁকে দেশের অর্থমন্ত্রী করেছেন এই অপবাদও দেওয়া হয়েছে। এগুলির সত্যাসত্য বিচার করার কোনো পরিসর এখানে নেই। কিন্তু এইসবের মধ্যেই আদবানির ‘রামরথ’ এসে পড়ল রাজ্যের সীমানায়। প্রচারমাধ্যমের বিপুল আলো এবং দাঙ্গার উস্কানির সামনে কিছু স্লোগান তৈরি হল উভয়পক্ষেরই। স্বভাবত ভাজপার স্লোগানে ছিল উগ্র ঝাঁঝ —- ‘এক ধাক্কা আউর দো/ উস ধাঁচা কো তোড় দো’ র আড়ালে ছিল বাবরের নামাঙ্কিত মসজিদ ভেঙে ফেলার প্ররোচনা। রাজ্যের বামফ্রন্ট সম্প্রীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার আহ্বানে দেওয়াল লিখলেন, স্লোগান দিলেন, মিছিল করলেন, তৈরি করলেন মানববন্ধন। তবে আদবানির রথ-কে, যাকে ডাকা হত ‘দাঙ্গা রথ’ বলে, কিন্তু এই রাজ্যে ঠেকানো গেল না —-- তিনি গড়িয়াহাটার মোড় দিয়ে রথ নিয়ে সভা করতে করতে এগোলেন আসানসোল পেরিয়ে বিহারের দিকে। আর পিছড়েবর্গের প্রতিনিধি হিসেবে যে লালুপ্রসাদ যাদব কে উচ্চবর্ণ ‘লালু লালু’ বলে ব্যঙ্গ করত,  বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েও সেই তিনিই আদবানির রথ আটকে তাঁকে বন্দি করে পাঠিয়ে দিলেন সরকারি অতিথিশালায়। এটা সেই সময়ের প্রেক্ষিতে একটা বড় রাজনৈতিক ইভেন্ট। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবু মনে করেছিলেন রথ আটকালে বিজেপি বেশি প্রচার পেয়ে আরও গোলমাল করবে, সত্যিই তেমন কোনো বড় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ রাজ্যে হয়নি, তার কৃতিত্ব নিশ্চয়ই বামপন্থীদের প্রাপ্য। 

         তবে এখানে এটাও বলা দরকার, এর পরের পর্বে যখন ‘রামমন্দির আন্দোলন’ আরও তুঙ্গে উঠল তখন কিন্তু রাজ্যের উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর একটা অংশ তাদের এতদিনের বামপন্থী অবস্থান পরিবর্তন করে কিছুটা হলেও ‘রামপন্থী’দের দিকে হাত বাড়িয়েছিল। এটা দেখা গেল যখন ‘রামশিলা’ নামক ইট নিয়ে দলে দলে মানুষ ছুটলেন অযোধ্যায়। এই ‘করসেবা’র আহ্বানে কিছু দেওয়াল লেখাও চোখে এসেছিল সেই সময়। অবশেষে, বিরানব্বই এর ডিসেম্বরে ভারতের ইতিহাসের সব থেকে কলঙ্কিত অধ্যায়টির সূচনা হল পাঁচশো বছরের পুরোন মসজিদ ভেঙে ফেলার মধ্যে দিয়ে। দেশের প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও রইলেন নীরব দর্শক আর উত্তরপ্রদেশের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই ধ্বংসলীলায় উৎসাহ দিলেন —- একই ছবির ফ্রেমে দেখা গেল আদবানি, মুরলি মনোহর জোশি, উমা ভারতী প্রমুখ উগ্রবাদী ষড়যন্ত্রীদের। এই আগুন নিয়ে খেলার পরেই ঘোষিত হল তাদের নতুন স্লোগান : ইহে তো কেবল ঝাঁকি হ্যায়/ কাশি মথুরা বাকি হ্যায়। এই অসম্ভব এক উত্তেজনার মুহূর্তে কলকাতা শহরেও যখন ফুলকি ছড়াচ্ছে আগুনের, রাজধানীতে শুরু হয়েছে সেনার রুট মার্চ — ঠিক তখনই উঠে এসেছিল কিছু নিজস্ব স্লোগান। বামপন্থীরা সেই সঙ্কট মুহূর্তে হয়তো দেওয়াল লেখেননি কিন্তু স্লোগান তুলেছিলেন : ‘মানুষ আগে ধর্ম পরে / ধর্ম কেন মানুষ মারে ?’ —- বাস্তবিকই সারাদেশ তখন জতুগৃহ যার আগুনে লাশ গুণে গুণে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছেন হিন্দুত্ববাদীরা। এই সময়েই জনপ্রিয় ও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে রাজনৈতিক কর্মী ও কবি সজল রায়চৌধুরীর একটি গানের কিছু অংশ : ‘হাতে হাত রেখে পার হব এই বিষের বিষাদসিন্ধু/ দুশমনদের ফাঁদে কেন বলো পড়ব’। এরই পাশাপাশি লালনের সুবিখ্যাত গান ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত, সংসারে/ লালন বলে, জেতের কী রূপ দেখলেম না এই নজরে’ বা রবীন্দ্রনাথের পরিচিত কবিতার লাইন ‘ধর্মের বেশে মোহ এসে যারে ধরে/ অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে’ সংহতির মিছিলে নতুন করে প্রাসঙ্গিক হতে থাকে। এইটাই বোধহয় বাঙালির সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য যে জাতির কঠিন সময়ে কান্ডারী হয়ে এগিয়ে আসে আমাদের কবিতা গান নাটক ছবির সুমহান ঐতিহ্য। আজও যারা বাংলার বুকে মন্দির-মসজিদ আর হিন্দু-মুসলমান করছেন তাদের নিরেট মগজে এই সত্যিটা যদি একবারও প্রতিফলিত হত ! 

        স্থায়ী সরকারের ধুয়ো তুলে কংগ্রেস কেন্দ্রের ক্ষমতায় এলেও তাঁদের প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও ছিলেন ভীরু ও দুর্বলচিত্ত। ফলে নব্বই দশকের মাঝামাঝি যে নির্বাচন হল তাতে খুব স্পষ্ট রায় তাঁদের পক্ষে গেল না। আবার সেই মিলিজুলি সরকারের হাতে চলে গেল দেশ। প্রধানমন্ত্রীর পদ নিয়ে রেষারেষি এল প্রকাশ্যে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী  জ্যোতিবাবুর কাছে প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব এল এবং তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন। বামফ্রন্টের সঙ্গে তখনও কংগ্রেসের সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায় ফলে রাজ্যের ভোটে সেবারও হই হই করে জিতে গেল বামেরা। কিন্তু এই ডামাডোলের বাজারে আসলে গোকুলে বেড়ে উঠছিল বিজেপি আর পোক্তভাবে কেন্দ্রের সরকারে আসতে গেলে যে কিছু ‘বন্ধুদল’ জুটিয়ে নেওয়া দরকার সেটাও তাঁরা বুঝেছিলেন। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বর্ণহিন্দু জাতীয়তাবাদ নিয়ে কলকে পাওয়া যাবে না। তাই তৈরি হল এন ডি এ — যার মুখ হলেন তুলনায় ‘নরম হিন্দু’ বাজপেয়ি আর শরীর হলেন উগ্রহিন্দুত্বের ‘পোস্টারবয়’ আদবানি। দেশের রাজনীতি ধীরে ধীরে সরে আসতে লাগল একটা অন্যমেরুতে , রাজ্যের পরিস্থিতিও তার ব্যতিক্রম ছিল না। নিজের তীব্র ‘বাম-বিরোধী’ ইমেজ নিয়ে রাজ্য কংগ্রেসের সঙ্গে এতদিন তীব্র সংঘাতের মধ্যে দিয়ে যিনি চলছিলেন সেই যুব নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে গঠন করলেন তৃণমূল কংগ্রেস। নব্বই সালের আগস্ট মাসে ভবানীপুর থানার সামনে তার শারীরিক নিগ্রহ ঘটিয়ে বামেদের অতি উগ্র সমর্থকরা মমতার পালে হাওয়া লাগিয়ে দিয়েছিলেন, তার বছর পাঁচের মধ্যে রাজ্যের নানা জায়গায় তার মেঠো আন্দোলন এবং কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বা প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর বিবাদ ছিল খবরের কাগজের নিত্যদিনের খোরাক। খুব সুচতুরভাবে তিনি তাঁর একটা ‘ফায়ার ব্র্যান্ড’  মূর্তি আলাদা করে নির্মাণ করে কংগ্রেস দলের নিবেদিত সমর্থকদের মধ্যে একটা পাল্টা ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করছিলেন। তিরানব্বই সালের একুশে জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেসের আয়োজনে গণহিস্টিরিয়ার মতো তাঁর ‘রাইটার্স দখল অভিযান’  কলকাতা শহরের বুকে কয়েকটা তাজা প্রাণ কেড়ে নেয় ।  রাজ্যের পুলিশের নিশ্চয়ই উচিত ছিল গুলিচালনার আগে আরও সংযত থেকে মারমুখী জনতাকে শান্ত করা, কিন্তু ওইদিন ঘটনাস্থলের খুব কাছে থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম কীভাবে জড়ো হওয়া মানুষকে নেতানেত্রীরা উস্কানি দিয়ে খেপিয়ে তুলছেন। গুলি চালনার পরে ছত্রভঙ্গ ও ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া সমর্থকদের পাশে কিন্তু কেউ ছিলেন না, স্বয়ং মমতা গিয়ে ‘নাকি’ কোনো বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি হয়েছিলেন, বেশ কিছুদিন আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

       তবে নব্বই দশকের প্রথমাংশ জুড়ে যেহেতু রাজ্যের প্রধান যুযুধান দুইপক্ষ ছিল বাম আর কংগ্রেস তাঁদের মধ্যে দেওয়াল দখলের যুদ্ধ আর স্লোগানের আড়াআড়ি তো ছিলই। কংগ্রেসের আর্থিক নীতি এবং বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দুইই বিদ্ধ হয়েছে তাঁদের তিরে। কংগ্রেস দলও চেষ্টা করেছে শাসক দলকে নানা অভিযোগ তুলে বেকায়দায় ফেলতে —-- বেঙ্গল ল্যাম্প কেলেঙ্কারি, মাটি কেলেঙ্কারি, ট্রেজারি কেলেঙ্কারি এইসব নানা ইস্যু বারবার উঠেছে জনপরিসরে, সংবাদমাধ্যম খবর করেছে ।  কিন্তু এগুলির খুব পাথুরে প্রমাণ কিছু ছিল না ফলে সাময়িক আলোড়নের বুদবুদ তুলে এগুলো মিলিয়েও গেছে নিজের নিয়মে। মুখ্যমন্ত্রীর পুত্র চন্দন বসুও কখনো কখনো শিরোনামে এসেছেন, প্রশ্ন উঠেছে তার সম্পত্তি নিয়ে —-- কংগ্রেস দেওয়াল লিখেছে ‘বামফ্রন্টের দুটি অবদান নন্দন আর চন্দন’।  জ্যোতিবাবুর মতো প্রবল ব্যক্তিত্বের জন্যও বরাদ্দ হয়েছে বেঙ্গল ল্যাম্প ‘কেলেঙ্কারি’ নিয়ে কার্টুন, প্রশান্ত শূরের সঙ্গে মিশেছে জমি ‘কেলেঙ্কারি’ আর একদা জ্যোতিবাবুর আপ্ত সহায়ক তথা আলিপুরের বিধায়ক অশোক বসুকে যুক্ত করা হয়েছে ‘ট্রেজারি কেলেঙ্কারি’ র সঙ্গে। তবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল অভিযোগ ছিল প্রদেশ কংগ্রেসের মাথারা সিপিএমের সরকারের প্রতি ‘নরম’ —- কথাটা একদম ফেলে দেওয়ার মতো ছিল না। সম্প্রতি উত্তর কলকাতার গৌরিবাড়ি এলাকার একদা প্রতাপান্বিত কংগ্রেস বাহুবলী হেমেন মণ্ডল বলেছেন ওই সময়ে প্রদেশ কংগ্রেস ছিল সিপিএমের ‘রক্ষিতা’। এর ফলাফলে আর যাই হোক মমতা একটা নতুন প্ল্যাটফর্ম পেয়ে যাচ্ছিলেন সেটাকেই তিনি ব্যবহার করে গড়ে নিলেন তার নতুন দল। এবং অচিরেই কংগ্রেসের ডি এন এ নিয়ে তিনি হাত ধরলেন বিজেপির—- এন ডি এ নামক যে জোট ১৯৯৮ সালে নির্বাচনে গেল ও জিতে নিল লোকসভা সেখানে তার দল হল প্রধান শরিক এবং মমতা নিজে হাই-প্রোফাইল মন্ত্রী। 

           কার্যত, এখান থেকেই নব্বই দশক দেখা দিল রাজনৈতিক বিচারে রাজ্য রাজনীতির নতুন নিদর্শ হিসেবে। সেই প্রথম ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ’ স্লোগান দিয়ে মমতার দল বেশ কিছু আসন পেলেন এবং সিপিএমের দুর্গ বলে পরিচিত কিছু এলাকায় বিজেপি নিজেদের সাংসদকে জিতিয়ে নিতে পারল ও কেন্দ্রে মন্ত্রীও করল। জ্যোতিবাবু বলেছিলেন, মমতার সব থেকে বড় অপরাধ খাল কেটে কুমির আনা (অর্থাৎ বিজেপিকে বাংলায় ডেকে আনা) —-- আজকের মাটিতে দাঁড়িয়ে যখন দেখা যাচ্ছে বিজেপির মতো বিভেদকামী শক্তি বাংলার মাটিতে পোক্ত ভিত গড়েছে তখন এই সমালোচনা ভুল ছিল বলে মনে হয় না। এটাও ঠিক মমতার সাংগঠনিক সাহায্য ও রাজনৈতিক মদত ছাড়া বিজেপি এখানে তাঁদের ঘাঁটি শক্ত করতে পারত না। তবে পাশাপাশি এটাও ঠিক মতাদর্শের দিক দিয়ে একেবারে বিপরীতপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বামপন্থীরা নিজেদের সদস্য সমর্থকদের অন্তরমহলে যদি উদার মনোভাবের চেতনা জাগরূক করে রাখতেন তাহলে দক্ষিণপন্থার এতটা উত্থান হতে পারত না, সবটাই মমতার দিকে দায় চাপিয়ে তাঁরা তাঁদের ভূমিকা উপেক্ষা করতে পারেন না। নব্বইয়ের প্রান্তভাগে যখন শতাব্দী শেষ হয়ে আসছে তখন রাজ্যের কংগ্রেস প্রায় স্তিমিত, প্রবল বামপন্থা কিছু শিথিল ও বামফ্রন্ট সরকারও রাজ্যে কুড়ি বছর রাজত্ব করে ফেলেছে। কট্টর বাম-বিরোধী কংগ্রেসিরা ক্ষমতার গন্ধ পেয়ে মমতার দলে ভিড়েছেন ও এন ডি এ-র নৌকায় চেপে তাঁর রাজনীতির  দুর্বার গতি একটা বার্তা দিতে পারল। মূল কংগ্রেসি স্রোতের বাইরে স্বতন্ত্র দল করে রাজ্যে রাজ্যে অন্য গোষ্ঠীগুলি যখন হতোদ্যম তখন বাংলায় কংগ্রেস-ছুট হিসেবে তিনি সফল। আগামী শতকে এই দিক বদল ধীরে ধীরে নির্ণায়ক হবে বাংলার রাজনীতির। দক্ষিণপন্থী রাজনীতির আশঙ্কার সঙ্গে সঙ্গে বাম ও কংগ্রেস কেন্দ্রীয় স্তরে ক্রমশ কাছে আসছে, যদিও রাজ্যে তার প্রত্যক্ষ ছাপ আবছায়া কারণ বাংলায় কংগ্রেসের সব আলো শুষে নিয়েছেন মমতা, তার ছায়া লম্বা হচ্ছে। শতাব্দী শেষ হল দেওয়ালে আদবানি বাজপেয়ীর ছবির পাশে ততদিনে ‘দিদি’ হয়ে ওঠা মমতার ছবি দিয়ে, প্রকাশ্য হল তীব্র বাম বিরোধী স্লোগান। জ্যোতি বসু রাজ্যের রাজনীতি থেকে অবসর নিলেন। বাংলার রাজনীতি বাংলার দেওয়াল সেজে উঠল নতুন নতুন শব্দে বিচিত্র অক্ষরে পাঁচমিশেলি বার্তায়। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভোটবাক্স | ০১ জুন ২০২৪ | ৩৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন