আজ ৬ই মে, ২০২৪। ইউক্রেনে এখনো যুদ্ধ চালু। মণিপুরে এখনো আগুন জ্বলছে। গাজ়ায় পরিকল্পিত নরহত্যা আর মানব-সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের দ্রুত নিষ্পত্তি হবে—এমন কোনো চিহ্ন নেই। বরং প্যালেস্তাইনের সমর্থনে/বিপক্ষে গোলযোগ বেঁধেছে আমেরিকায় (এক্ষুনি খবর পেলাম: নেতানিয়াহু ইজ়রায়েলে আল জাজ়িরার সব লোকাল অফিস বন্ধ করে দিয়েছে)।
দেশে চলছে নির্বাচন। রাজ্যে রাজ্যে তার আলাদা রূপ। আমার রাজ্যে, বিজেপি তার গণতন্ত্রের মুখোশ খুলে ফেলে পুরো ঘৃণা-বাণিজ্যের জামা পরে ফেলেছে, সিপিয়েম কোনো এক লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল দিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখে কথা বসাচ্ছে, তৃণমূল চুরি করেছে কিনা কেউ জিজ্ঞেস করছে না—শুধু প্রশ্ন, চুরি কতটা? পুকুর, দীঘি, না পুরো সমুদ্দুর!
পাড়ায় পাড়ায় গুন্ডার দল—যারা আজ তৃণমূলের—প্ল্যান ছকছে: রেজাল্ট ঠিক কেমন হলে দলবদল করবে। বিজেপি তার ওয়াশিং মেশিন চালিয়ে সেই সিদ্ধান্ত ত্বরান্বিত করছে। কিছু বামপন্থী, যাঁরা নিজেদের মার্ক্সিস্ট মনে করে অনুভূতিতে প্লাবিত হন, এখনো বুঝে উঠতে পারেননি, যে দিবারাত্র ফেসবুকে তক্কো আর হ্যা হ্যা করতে করতে তাঁরা আসলে ট্রোল-এ পরিণত হয়েছেন, তাই যেসব যুবনেতা-নেত্রীর ছবি শেয়ার করে তাঁরা উদ্বেল, তাঁদের কাজে লাগার বদলে ক্ষতিই করছেন বেশি।
মানুষ তিক্ত, দেশগুলি যুযুধান, পৃথিবী উষ্ণতর।
আত্মবিস্মৃত।
আবার কি একটা প্যানডেমিক দরকার এই অলক্ষুণেদের মনে করাতে – যে রক্তের গ্রুপ হয়, ধর্ম না? অক্সিজেনের রঙ নেই, ঝান্ডার আছে? প্রিয়জনের মৃত্যুর সময়ে তার পাশে না থাকতে পারার চেয়ে বড় যন্ত্রণা কিছুতে নেই—সে তার রাজনৈতিক আদর্শ যা-ই হোক না কেন? যে সমস্ত ভয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অসূয়া, অসহিষ্ণুতা আমাদের 'পৃথক' করে, আসলে তা বিশ্বব্যাপী? সেসবই আমাদের 'মানুষ' বানায়?
কবে বুঝবে গড্ডল, যে, বিজ্ঞান আর নৈতিকতার মিশেলে আসে প্রগতি? কোনো মোদি, দিদি বা নেতানিয়াহুর হাত ধরে নয়? কবে সভ্যতা তার উত্তেজনা সীমাবদ্ধ রাখবে দার্শনিক তর্কের প্রাঙ্গনে—দেশ, জমি, পাড়া, চাকরিদখলের পেশিপ্রদর্শন করবে না? নিজের অপ্রাপ্তির ভার অনলাইনে ষোল বছরের শিশুর সাফল্যের খবরের নীচে উগরোবে না? শ্রদ্ধার সঙ্গে পুজো গুলিয়ে, আজ অনুকূল ঠাকুর, কাল মেঘনাদ সাহার ছবিতে মাল্যদান করবে না? কবে দূরদর্শী হবে ভারতীয়? কবে 'সত্যমেব জয়তে'-র বিকল্প হিসেবে 'ধন্দা হি সব কুছ হ্যায়' বসানোর নির্বুদ্ধিতা খেয়াল করবে?
নির্বাচন এসেছে। মতের সমর্থন, বিরুদ্ধাচরণ করুন। ক্ষমতাবানেদের প্রশ্ন করুন।
প্রতিবেশীর, সহকর্মীর, সহযাত্রীর সঙ্গে লড়বেন না। তাঁদের চোর, চাড্ডি, পাপ্পু, মাকুর বাচ্চা, চটিচাটা বলে থুতু ছুঁড়বেন না। কাল যখন আপনার পরিবারের কেউ অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকবে, ওঁরাই আসবেন, পাশে দাঁড়াবেন।
সকলেই ভীত – আমরা সব্বাই রক্তভরা ক্ষয়িষ্ণু চামড়ার ব্যাগ। রাগবেন না। ভালো থাকুন। সকলেরই সন্তান দুধে ভাতে থাকুক।