এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্মৃতিচারণ  স্মৃতিকথা

  • কলেজ স্ট্রিটের পাঁচালি

    প্রবুদ্ধ বাগচী লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ০৯ এপ্রিল ২০২৩ | ৯০০ বার পঠিত
  • কলেজ স্ট্রিটের পাঁচালি
    প্রবুদ্ধ বাগচী

    (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

    পর্ব ৮

    ‘নবপত্র প্রকাশন’ এর কর্ণধার প্রসূন বসু নিজে প্রথম জীবনে চল্লিশের দশকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৪৯ সালে কলকাতার বউবাজারের মোড়ে যেদিন ( ২৭ এপ্রিল ) চারজন কমিউনিস্ট মহিলা নেত্রী ( লতিকা সেন, প্রতিভা গাঙ্গুলি, , অমিয়া দত্ত, গীতা সরকার)  গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন, সেদিন সেই মিছিলের পিছনে প্রসূনবাবুও ছিলেন। আজ যেখানে ‘যোগাযোগ ভবন’ তার পেছনের গলিতে একটা ঘরে সেইদিন কমিউনিস্ট কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন ইটের টুকরো ও পাথর নিয়ে যাতে পুলিশি আক্রমণ হলে কিছুটা পাল্টা আক্রমণে যাওয়া যায়। নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা তিনি লিখেছেন ‘খন্ডিত জীবন’ নামক দুই খণ্ডে প্রকাশিত স্মৃতিকথায়। এই বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডে ধরা আছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়ে তাঁর স্মৃতি। সেটা কলেজ স্ট্রিট-কেন্দ্রিক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে চলছে ছাত্র- পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ, টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় অবরুদ্ধ কলেজ স্ট্রিট। রাস্তার গাড়িঘোড়া বন্ধ, স্থানীয় দোকানপাটও বন্ধ হয়ে গেছে গোলমালের আঁচ থেকে বাঁচতে । আর ‘ফেভারিট কেবিন’ এর ভিতর আটকে পড়েছেন ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত দীর্ঘদেহী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখে সিগারেট নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি পায়চারি করে চলেছেন দোকানের ভিতর। এই দৃশ্যের সাক্ষী ছিলেন প্রসূন বসু। এই লেখা যখন পড়ি তখন ‘ফেভারিট কেবিন’ নামটা শুনলেও জায়গাটা ঠিক চিনতাম না। অথচ কলেজ স্ট্রিট নিয়ে লিখতে বসলে ‘ফেভারিট কেবিন’ কে বাদ রাখা অসম্ভব। কলেজ স্ট্রিট ‘কফি হাউস’  নিয়ে যত গল্প-কাহিনির কিম্বদন্তী শোনা যায় সেদিক দিয়ে ‘ফেভারিট কেবিন’ একেবারেই ব্রাত্য। 

    এর আগের পর্বে আমাদের কলেজ স্ট্রিটে টিফিন খাওয়ার গল্প শুনিয়েছি। সেটা আশির দশকের মাঝামাঝি সময়। এর পরে নিজেদের আর্থিক অবস্থার একটু মানোন্নয়ন ঘটলে, নিজেরা চাকরি-বাকরি পেলে নিজের মত একটু খরচ করার স্বাধীনতা পাই। কিন্তু সেই পর্যায়টায়ও কিন্তু ‘ফেভারিট কেবিন’-এ যাওয়ার কথা আমাদের মাথায় আসেনি। কলেজ স্ট্রিট মানেই ‘কফি হাউস’ এরকম একটা স্বতঃসিদ্ধ কীভাবে যেন আমাদের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল। কলেজ স্ট্রিটের বাইরে তখন অবশ্য যাদবপুরের এইট বি বাস স্ট্যান্ডের পাশে গড়ে উঠেছে আরেকটা ‘কফি হাউস’ —- দক্ষিণ কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রিক মেধা চর্চার সেটা আরেকটা বিকল্প রাজধানী হয়ে উঠছে আস্তে আস্তে। আর ছিল মধ্য কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-এর ‘কফি হাউস’ যা আকারে আয়তনে ছোট হলেও তার আড্ডাধারীদের কৌলীন্যে বেশ অভিজাত । ওই কফি-ঘরেই একদা আড্ডা দিতেন স্বয়ং সত্যজিৎ, সঙ্গে তাঁর ইন্টেলেকচুয়াল বন্ধুদল — রাধাপ্রসাদ গুপ্ত, রাধারমণ মিত্র, চিদানন্দ দাশগুপ্ত প্রমুখ। পরে ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকার ‘বিতর্কিত’নাট্য সমালোচক ধরণী ঘোষ বা জীবনবীমা কর্মচারী আন্দোলনের নেতা তথা বিশিষ্ট অভিনেতা দিলীপ বোস ছিলেন এই কফি হাউসের দুপুরবেলার নিয়মিত ক্রেতা। আমার অভিজ্ঞতায় আমি এঁদের দুজনকেই নিয়মিত দেখেছি নব্বই দশকেও —- যদিও তখন জানতাম না, শম্ভু মিত্রের সঙ্গে ধরণী ঘোষের বিরোধ এতদূর অবধি গড়িয়েছিল যে আকাডেমি অফ ফাইন আর্টস- এ যখন ‘ক্যালকাটা রেপার্টরি’র প্রযোজনায় ও ফ্রিৎজ বেনেভিৎজ (জার্মান নাট্য নির্দেশক)-এর নির্দেশনায় ব্রেখটের ‘গ্যালিলিও’ অভিনীত হয় (১৯৮০) , যার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন শম্ভু মিত্র —- দুজন নাট্য সমালোচক যাতে সেই শো দেখতে না- পারেন তার জন্য নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা করা হয়েছিল, এমনকি টিকিট কাউন্টারে টিকিট কেটেও যাতে তাঁরা আসতে না- পারেন তার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল আয়োজকদের তরফে। এই দুজনের একজন হলেন এই ধরণী ঘোষ ও অন্যজন শ্রীশমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। 

    যাই হোক, আমায় প্রথম ‘ফেভারিট কেবিন’ চিনিয়েছিলেন অভিভাবক-স্থানীয় কথাসাহিত্যিক অমলেন্দু চক্রবর্তী । সেটা নব্বই দশকের গোড়ার দিক। বিকেলের দিকে কলেজ স্ট্রিট গেলে মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যেত এই পরম সুহৃদ আশ্চর্য মানুষটির সঙ্গে। এরকমই একদিন বিকেলে তার সঙ্গে দেখা হতে তিনি নিয়ে গেলেন ‘ফেভারিট কেবিন’। বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট ও সূর্য সেন স্ট্রিটের সংযোগস্থল থেকে শ্রদ্ধানন্দ পার্কের দিকে দু একটা দোকান পরেই মলিন বিবর্ণ এক ঘর। গোটা ছয়েক পাথরের টেবিল, তার গায়ে-গায়ে লাগানো চেয়ার। তারই একদিকে ছোট একটা কাউন্টার, সেই টেবিলে বয়ামে রাখা কেক, বিস্কুট, সস্তা প্যাটিজ। তারপরে একটা লম্বা ঘর, সেটাই ওদের কিচেন। এই দোকানের সঙ্গে বিরাট কফি হাউসের কোনো তুলনাই হয় না। আর খাওয়ার উপাদান এখানে নিতান্তই সীমিত। স্লাইস পাউরুটি দিয়ে বানানো টোস্ট ( চিনি অথবা মরিচ) , আর চা (দুধ/চিনি/ লিকার/ লেবু) । তবে প্রথম দিন ঢুকেই বুঝেছিলাম  চায়ের স্বাদ অপূর্ব। কিন্তু চায়ের স্বাদ নিতে নিতেই চারদিক ঘুরে ঘুরে তাকিয়ে দেখেছি এর প্রাচীনত্ব, যার সঙ্গে লগ্ন হয়ে আছে বাঙালির সাংস্কৃতিক  ইতিহাস। 

    তথ্য অনুযায়ী এই ‘ফেভারিট কেবিন’ চালু হয়েছিল ১৯১৮ সালে, চট্টগ্রাম থেকে আসা দুই বড়ুয়া ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে। এঁরা ধর্মে বৌদ্ধ ছিলেন বলে তাঁদের দোকানে ডিম বা মাছ-মাংসের কোনো পদ পাওয়া যেত না। সেদিক দিয়ে কলেজ স্ট্রিট এলাকার খাবার দোকানের মধ্যে এর প্রাচীনতা ‘কফি হাউস’এর থেকে বেশি। ‘ইন্ডিয়ান কফি বোর্ড’ এর উদ্যোগে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-এ  কফি হাউস, একটু আগেই যার কথা উল্লেখ করেছি, সেটি প্রথম চালু হয়েছিল ১৯৪১-৪২ সালে, যাকে একসময় বলা হত ‘হাউস অফ লর্ডস’। এর কিছু পরে তা চালু হয় কলেজ স্ট্রিটে। যদিও আজ আমরা ‘কফি হাউস’কে যে চেহারায় দেখি তার সূত্রপাত ১৯৫৭-য়, যখন কফি বোর্ড কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস পরিচালনা থেকে সরে আসেন এবং তার শ্রমিকরা ‘শ্রমিক সমবায়’ করে নিজেরাই কফি হাউসের পরিচালনভার তুলে নেন —- আজও সেই ব্যবস্থা চলছে। অন্যদিকে প্রাচীনতর ‘ফেভারিট কেবিন’ এর উল্লেখ পাওয়া যায় অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত-র বিখ্যাত ‘কল্লোল যুগ’ বইয়ে —- সেই যুগের লেখকরা আড্ডা জমাতেন এই দোকানেই। শিবরাম চক্রবর্তীও নিয়মিত ছিলেন এই দোকানের । শুধু তাই বা কেন? এই কেবিনের বিখ্যাত চার নম্বর টেবিলেই এসে বসতেন সুভাষচন্দ্র বসু। প্রেসিডেন্সিতে পড়াকালীন তাঁর নিয়মিত যাতায়াত ছিল এখানে। ওই টেবিলে বসেই তাঁকে গান শোনাতে আসতেন কাজি নজরুল। স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবীদের অন্যতম প্রধান মিটিংস্থল ছিল এখানেই। স্বয়ং সূর্য সেন এই দোকানে আসতেন নিয়মিত। পুলিশি তল্লাশির খবর থাকলেই আগেভাগে মালিক বড়ুয়া ভাইরা সতর্ক করে দিতেন বিপ্লবীদের —-- তাঁরা পালিয়ে যেতেন পেছনের দরজা দিয়ে।   ১৯৭০-সালে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় ‘ফেভারিট কেবিন’ এ চায়ের দাম ২৫ পয়সা থেকে ৫ পয়সা বাড়িয়ে ৩০ পয়সা করা হয়েছিল, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় একটা প্রতিবাদী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ‘কফি হাউস’এর পাশে পাশে এই দোকানেও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেক আড্ডা দিয়েছেন সুনীল। জায়গা কম হলেও বিকেলের দিকে গিয়ে দেখেছি অনেক মানুষ আজও কলেজ স্ট্রিট এলে কিছুটা সময় এখানে পরিচিতজনের সঙ্গে আড্ডা জমিয়ে যান। শ্রদ্ধেয় শিক্ষাচিন্তক-গবেষক ও সমাজকর্মী সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যখনই কলেজ স্ট্রিট আসেন, এখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন বহু সাহিত্য ও সমাজকর্মী তরুণ । আমিও বেশ অনেকবার গিয়েছি তাঁর সঙ্গে — সঙ্গী হয়েছেন ‘ঋতাক্ষর’ প্রকাশনার মূল সংগঠক মানব চক্রবর্তী,  কবি-গল্পকার প্রদীপ রায়গুপ্ত। রবীন্দ্রগানের এক তরুণী গবেষক দৃপ্তা পিপলাই বা বাংলা সিনেমার প্রবীণ গবেষক দেবপ্রসাদ ঘোষের সঙ্গে আমার আলাপ জমেছে এখানেই। বলার কথা এইটাও যে, এখনও সেই বড়ুয়া পরিবারের হাতেই রয়েছে এই দোকানের মালিকানা। প্রতিষ্ঠাতা নূতনচন্দ্র বড়ুয়া ও পূর্ণচন্দ্র বড়ুয়ার ছবি টাঙানো আছে দোকানে। এমন একটা ঐতিহাসিক জায়গা নিয়ে কিন্তু আমাদের উত্তেজনা তুলনায় কম, যত আলোচনা সবই হয় ‘কফি হাউস’ ঘিরে। যদিও দীর্ঘ লকডাউনের ধাক্কা সামলে কলেজ স্ট্রিটের এই ঐতিহাসিক চা-ঘর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি —-- গত দুবছর ধরে তাঁদের ঝাঁপ বন্ধ। এই লেখার সময়কালে তাঁদের দোকানটির চারদিকে মাকড়সার জাল, ধুলো, বন্ধ দরজার তালায় মরচের বিপন্ন উঁকিঝুঁকি। ‘এগিয়ে বাংলা’র ব্র্যান্ডের কেউ এঁদের পুনর্বাসন বা পুনরুজ্জীবন নিয়ে ভাবছেন এমন খবর আমাদের কাছে নেই। আমরা আপাতত হারিয়ে ফেলেছি আমাদের সাময়িক আড্ডার একটা সাবেকি কেন্দ্রস্থল। 

    কলেজ স্ট্রিট ‘কফি হাউস’এর সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছে অনেকটা পরে। তার একটা কারণ অর্থনৈতিক। অন্যটা হল অনেকদিন অবধি লেখালিখির মূল স্রোতে ঢুকে এই ধরনের  নানা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বা পরিচয় আমার ছিল না। একটা প্রান্তীয় অবস্থানে থেকে অল্পবিস্তর লেখালিখি আর তার বেশিটাই ছিল মফসসল-কেন্দ্রিক। কলেজ স্ট্রিটের সঙ্গে যোগ কখনোই বিচ্ছিন্ন হয়নি ঠিকই কেননা যখন যেটুকু সঞ্চয় করতে পেরেছি তাই দিয়ে বই কেনারই আগ্রহ থেকেছে তুঙ্গে। এখানে আরেকটা কথা না বলে উপায় নেই। নন-টেক্সট বই অর্থাৎ গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি বইয়ের বিপণনের পরিধি কিন্তু তেমন ভাবে বাড়েনি। আমাদের শহরতলির জনপদে এই ধরনের বই পাওয়ার কোনো সুযোগ  আমাদের সময়ে অন্তত ছিল না এখনও কতটা আছে জানা নেই। তবে উত্তর- বিশ্বায়ন পর্বে মফসসল জীবনে যেভাবে ফ্ল্যাট বাড়ি, শপিং মল, এটিএম কাউন্টার, বিলিতি সুরার বিপণি ইত্যাদি দ্রুত গড়ে উঠতে থাকে সেই তুলনায় পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বইয়ের দোকান সেইভাবে তৈরি হয়নি। তখনো একটা গল্প উপন্যাসের বা কবিতার বই কেনার জন্য আসতে হত কলেজ স্ট্রিটে । নব্বই দশকের মাঝামাঝি অবধি এই চরিত্রটা আশেপাশের সব এলাকার ক্ষেত্রেই একরকম ছিল । অবশ্য অনেক পরে,  বালি পুরসভা এলাকায় ‘সন্দীপনী’ নামক একটা বই-বিপণির খোঁজ পেয়েছি ; কলকাতার আরও কাছে হওয়া সত্ত্বেও সেখানে অনেককাল  আগে থেকেই গল্প-উপন্যাস এসবের বই পাওয়া যেত এবং তাঁরা কমিশনও দিতেন, আজও দেন। ফলে সাধারণভাবে বই কিনতে গেলে আমাদের অবশ্য গন্তব্য ছিল কলেজ স্ট্রিট, কিন্তু তার মানে ‘কফি হাউস’-এ বসে আড্ডা নয়। কারণ অপরিচয়ের আড়াল ভেঙে আড্ডা দেব কাদের সঙ্গে ? তবে হাতে একটু খরচ করার মতো রেস্ত এলে কফি হাউসের কোল্ড কফি, পকোড়া বা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-বর্ণিত ‘অমৃত’ মাটন অমলেট চেখে দেখার সুযোগ হয়েছে। আসলে ‘কফি হাউস’কে কেন্দ্র করে এত বেশি আড্ডা বসে যে শনিবারের বিকেলে সেখানে জায়গা পাওয়াই প্রায় অসম্ভব। অন্য কাজের দিনেও সকাল থেকে দুপুর ভিড়ে উপচে থাকে ‘কফি হাউস’ কারণ, ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও  আজও কিছু নিয়মিত আড্ডাধারী আছেন যারা ‘কফি হাউস’ ছাড়া কোথাও বসেন না। লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রীদের মতোই তাঁদের জায়গা আগে থেকেই ‘বুক’ হয়ে থাকে। অবশ্য কফি হাউসের সংস্কারের পরে, তিন তলায় সেখানকার দুই প্রান্তের লম্বা বারান্দা জুড়ে বেশ কয়েকটা  দুজনে বসার টেবিল সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো হয়েছে , দেওয়ালে টাঙানো হয়েছে নানা ছবি, তার ওপরে ছোট ছোট আলো লাগিয়ে পরিবেশটা বেশ মার্জিত —- যা প্রেমিক-প্রেমিকাদের গপ্পো গুজবের পক্ষে আদর্শ। কয়েকবার সেখানে বিভিন্ন বন্ধু- বান্ধবী সহযোগে যে বসিনি তা নয়, তবে ‘কফি হাউস’ সূত্রেই যে তুমুল সাহিত্য-রাজনীতির আড্ডা ও মেধাচর্চার একটা ইমেজ মনে আসে —- আমাদের চোখের সামনে ঠিক সেই চেহারাটা ধরা পড়েছে বলে দাবি করতে পারব না। হ্যাঁ, বেশ কয়েকবার সেখানে গিয়ে দেখেছি নিচের তলার হলটিতে জায়গায় জায়গায় মূলত কবি ও পত্রিকা সম্পাদকদের জমায়েত — কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা পরস্পরের পিঠ চুলকে দেওয়ার একটা মঞ্চ। ওই ‘কফি হাউস’-এর টেবিল জড়ো করেই সেখানে নতুন কবিতার বই উদ্বোধন হয়, এখন সেই ঘটনার ছবি/ ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পরে সমাজমাধ্যমে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এই ‘লোক দেখানো’ বিষয়গুলোর সঙ্গে আমরা কখনোই নিজেদের মিলিয়ে নিতে পারিনি। শুনেছি, ‘এক্ষণ’ সম্পাদক নির্মাল্য আচার্য একটা সময় সকালে কফি হাউস খুললেই সেখানে কাগজপত্র পত্রিকার প্রুফ এইসব নিয়ে এসে বসতেন, ওটাই ছিল বলতে গেলে ‘এক্ষণ’ পত্রিকার সম্পাদকীয় দফতর। সেই ধরনের কোনো ঘটনা আমাদের সময়ে দেখিনি। ‘কফি হাউস’ নামের একটা ছোট পত্রিকাগোষ্ঠী আছেন, এক সময় খেয়াল করেছি তাঁদের কাজকর্মের কেন্দ্র এই ‘কফি হাউস’, কিন্তু গুণে বা মানে সেই পত্রিকা এমন কিছু উল্লেখ্য নয় বলেই আমার মনে হয়েছে। ‘কফি হাউস’কে অন্যভাবে যারা বিখ্যাত করেছিলেন সেই ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার তরুণ তুর্কিরা আমাদের যাতায়াত কালে সবাই প্রায় খ্যাতনামা, তখন তাঁরা আর কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে আসতেন না।  

    কলেজ স্ট্রিট এলাকার খাওয়ার জায়গা বলতে আরও অন্তত তিনটে দোকানের কথা উল্লেখ করা দরকার। আমার দাদু (মাতামহ) এক সময় কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকতেন, সেটা বিশ শতকের তৃতীয় দশক। ওঁর কাছেই শুনেছিলাম কলেজ স্ট্রিটের ‘দিলখুশা কেবিন’ এর নাম। সেকালের অতি সুপরিচিত এই রেস্টুরেন্টের সূচনা ১৯১৯ সালে। মহাত্মা গান্ধী রোড ও কলেজ স্ট্রীটের সংযোগস্থলে ( ৮৮, মহাত্মা গান্ধী রোড) এই শতাব্দী-প্রাচীন রেস্টুরেন্টে প্রথম যেদিন ঢুকেছিলাম মনে হয়েছিল যেন টাইম মেশিনে চড়ে ফিরে এলাম পুরোনো কলকাতায়। সাবেকি কাঠের চেয়ার টেবিল, জানলায় লাল পর্দা, বেলজিয়ান গ্লাসের আয়নার সঙ্গে মেনুতেও কিছুটা বনেদিয়ানার ছাপ। বিশ্বায়ন-উত্তর কলকাতায় ব্রেস্ট কাটলেট বা ফিস কবিরাজি কিংবা মাটন কাটলেট এখন আর কেউ খান না, তবু এখানে পাওয়া যেতে দেখেছি এইসব মেনু। অবশ্য পরে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যখন ‘চিনের চাউমিন আমাদের চাউমিন’ বিপ্লব সংগঠিত হয়ে গেল তখন চাউমিন, ফ্রায়েড রাইস বা চিলি চিকেন এঁরাও এখন তৈরি করেন। এক সময় প্রাচীন কলকাতার থিয়েটার পাড়ার নামজাদা অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক, কবি-সাহিত্যিক, বিদ্বজ্জনদের নিয়মিত আড্ডা বসতো এই কেবিনে। ঠিক যেন ‘কফি হাউস’এর ক্ষুদ্র সংস্করণ। স্বাধীনতা সংগ্রামের কালে বিপ্লবীদের অনেক গোপন পরিকল্পনার আঁতুড়ঘর ছিল এই কেবিন। প্রতিষ্ঠাতা চুনীলাল দে নিজের দোকানের বাইরে সিমেন্ট খোদাই করে যে নামফলক লাগিয়েছিলেন আজও তা টিকে আছে।

     ‘দিলখুশা’-র  এর পরেই আসবে সূর্য সেন স্ট্রিটের ‘পুটিরাম’-এর কথা। বাবার মুখে এই দোকানের কথা শুনেছিলাম, তবে, আমি এই দোকানে প্রথম ঢুকেছি নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। এঁদের কচুরি আর আলুর দম নাকি সুবিখ্যাত হট আইটেম। মধ্য কলকাতার অনেক বাসিন্দা আজও সকালের জলখাবার এখান থেকেই কিনে নিয়ে যান। সাবেক বাঙালি দোকান হিসেবে তাই এর পরিচিতি বিপুল। কিন্তু আমি যখন এখানে প্রথম আমার  বান্ধবীর হাত ধরে আসি তখনই কিন্তু তাঁদের মেনুতে ঢুকে পড়েছে ধোসা বা বড়ার মতো দক্ষিণ ভারতীয় পদ। অবশ্য এরও প্রায় এক দশক পরে খেয়াল না-করে উপায় ছিল না, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের আয়োজিত সরকারি সভায় এঁরা কচুরি, আলুর দম ও মিষ্টির প্যাকেট পরিবেশনার ভার পেতেন। শুনতাম, সমাজকল্যাণ দফতরের তৎকালীন যুগ্মসচিব নিজে নাকি এই ‘পুটিরাম’ এর ভক্ত তাই তাঁর দফতরের মিটিঙে খাবার সরবরাহের বরাত পেতেন এঁরাই। তাঁদের সেই প্যাকেট-বাহিত হয়েই আমার কাছে পৌঁছেছে তাঁদের ‘ক্ল্যাসিক’ আইটেমের স্বাদ। তবে একুশ শতকের গোড়ায় পৌঁছে যেভাবে তাঁদের দোকানের একাংশ ঘিরে নিয়ে ফটোকপি ও প্রিন্টিং এর দোকান করা হল তাতে মনে হয় সাবেকি এই ব্যবসায় সম্ভবত ছিল কিছু ভাঁটার টান। তাছাড়া ইদানিংকালে সরকারি সভায় খাবার হিসেবে প্রধানত পরিবেশিত হয় কেক-প্যাস্ট্রি-প্যাটিজ জাতীয় পদ যা সরবরাহ করেন ‘মনজিনিস’ বা ‘মিও অ্যামোরে’ জাতীয় ফুড-চেন। আসলে বাঙালির খাবারের অভিমুখে বদল তো ঘটেইছে। অনেক অবাঙালি কোম্পানি শুকনো মিষ্টি বা নোনতা খাবারের দোকানে ছেয়ে দিয়েছেন শহর ও শহরতলি —- বিপণন বা প্যাকেজিং সব কিছুতেই তাঁরা এগিয়ে গেছেন । তাদেরই তালে তাল দিয়ে আজকের বাঙালি প্রবাদপ্রতিম ‘সিঙ্গাড়া’-কে বানিয়ে দিয়েছেন ‘সামোসা’, রসগোল্লা-সন্দেশের জায়গা নিয়েছে ‘লাড্ডু’ বা ‘প্যাঁড়া’ কালচার। তবে সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।

    খাবারের বাঙালিয়ানার কথা যখন এসেই পড়ল তখন মনে করে নিতে হবে সাবেক বাঙালি খাবারের বাইরে ভেজিটেবল বা চিকেন সুপ এবং তার সঙ্গে টোস্ট পাউরুটি যে দোকানে পাওয়া যায় তা হল ওয়াই এম সি এ ক্যান্টিন, যার অবস্থান মোটামুটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে গোলদিঘী বা কলেজ স্কোয়ারের কোণ-ঘেঁষা নিচু গেটের পাশে। এক সময় তাঁদের প্রাচীর এতটাই উঁচু ছিল যে নিচের একটা গোল ফোঁকর দিয়ে খাবারের অর্ডার দিলে তা পরিবেশিত হত প্রাচীরের ওপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে। ফলে খাবারের প্লেট চোখে দেখলেও তার পরিবেশনকারীকে চোখে দেখা যেত না। তবে খাবারের গুণমানের তুলনায় দাম বেশ সস্তা। দুপুরের দিকে এখানে লাইন দিয়ে লোকে সুপ আর টোস্ট খাওয়ার জন্য বসে আছেন, এই দৃশ্য এখনও বিরল নয়।  এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি সংগ্রহ করা দুটো খবর জানিয়ে রাখি । ‘পুটিরাম’ এর কচুরি নিয়ে ইউ টিউবে বেশ কিছু ভিডিও আপলোড করা হয়েছে দেখা যাচ্ছে। আর ইদানিং যেসব অ্যাপ-নির্ভর খাদ্য সরবরাহ কোম্পানি হয়েছে —- ‘সুইগি’, ‘জোম্যাটো’ ইত্যাদি —- তাঁদের মাধ্যমে এই ওয়াই এম সি এ ক্যান্টিনের খাবার বাড়ি আনিয়ে খাওয়া যাচ্ছে। তবে এই পর্ব সম্পূর্ণ হবে না যদি কলেজ স্ট্রিট এলাকার সুবিখ্যাত তেলেভাজার দোকান ‘কালিকা’ র উল্লেখ না করি। সূর্য সেন স্ট্রিটের ওপরে ফুটপাথ সংলগ্ন এই দোকান চালু হয়েছিল ১৯৬৫ সালের কালিপুজোর দিন, প্রতিষ্ঠাতা সুকুমার দত্ত — দোকানের নাম ‘কালিকা’ হওয়ার কারণ সেটাই। যতদূর জানি সুকুমারবাবুর কনিষ্ঠ পুত্র বাবলু দত্ত এখন এই দোকান চালান একইরকম সুনামের সঙ্গে। এঁদের দোকানে বিভিন্ন রকমের চপ পাওয়া যায় ন্যায্য দামে, সন্ধ্যে বেলা এখনও এখানে গেলে চপ নেওয়ার জন্য লাইন দিতে হয়। এঁদের মূল ‘গুডউইল’ হল এঁরা প্রতিদিন নতুন তেলে রান্না করেন তাই পোড়া তেলে ভাজা চপ খেয়ে পরিপাক বিভ্রাট হওয়ার সম্ভাবনা নেহাতই কম। বাঙালি মালিকের দোকান যে এতদিন ধরে নিজেদের ব্যবসা ধরে রেখেছেন, এটা নিশ্চয়ই বলার মতো কথা। আর সরবতের দোকান ‘প্যারামাউন্ট’ এর কথা অনেকেই জানেন যার সূচনা হয়েছিল ১৯১৮তে, নীহাররঞ্জন মজুমদারের হাতে। তবে তখন তার নাম ছিল ‘প্যারাডাইস’। নামে সরবতের দোকান হলেও আসলে এটি ছিল স্বদেশী বিপ্লবীদের আস্তানা —- বিপ্লবী সতীন সেনের ‘স্বদেশী অনুশীলন কেন্দ্র’ পরিচালিত হত এখান থেকেই। বাঘা যতীনের মতো বিপ্লবীরা এখানে নিয়মিত আসতেন। একগ্লাস সরবতকে সামনে রেখে চলত নানা শলা পরামর্শ। নেতাজি সুভাষচন্দ্রও এখানে আসতেন, আসতেন শরবতের ভক্ত কাজি সাহেব, নজরুল ইসলাম। তবে ব্রিটিশ পুলিশ অচিরেই এই ডেরার সন্ধান পেয়ে হানা দেন ও পুলিশি  সন্ত্রাসে দোকান বন্ধ হয়ে যায় । ১৯৩৭-এ নতুন করে দোকান চালু হলে তখন তার নাম পাল্টে রাখা হয় ‘প্যারামাউন্ট’। এই দোকানের নিয়মিত ক্রেতা ছিলেন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন, এসেছেন সত্যজিৎ রায়ও। কিন্তু অনেকেই এই খবরটা জানেন না এই দোকানের ‘স্পেশাল আইটেম’ ডাবের শরবতের রেসিপি বানিয়ে দিয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। 

    সব গুরুপাক খাওয়ার শেষে এক খিলি পান মুখে দেওয়া বাঙালির চিরকেলে অভ্যাস। আর কলেজ স্ট্রিটের চৌহদ্দির মধ্যে সেই আয়োজন সম্পূর্ণ করে রেখেছে ‘কল্পতরু’ পানের দোকান, আসলে যার নাম ‘কল্পতরু পান সেন্টার’ — যেখানে  এক খিলি পানের দামই নাকি ১০০১ টাকা! ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট-এর গেটের দক্ষিণ পাশে (৬/১ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট) অবস্থিত এই ছোট দোকানটি —- খোদ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী থেকে রাষ্ট্রপতি রাধাকৃষ্ণন, মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে সংগীত স্ম্রাট মান্না দে, বহু গুণিজনই এই দোকানের পান খেয়েছেন। কথিত আছে, সেই সময়ে এই দোকানের বাদশাহী পান মুখে দিয়ে কেউ পাড়ায় ঢুকলে পুরো পাড়া তার গন্ধ টের পেয়ে যেত। এই দোকানের জন্ম স্বাধীনতারও দশ বছর আগে (১৯৩৭), প্রতিষ্ঠাতা রাধাবিনোদ দত্ত আর সনাতন দত্ত,  বংশ-পরম্পরায় এখন মালিকানা শ্যামল দত্তের হাতে।  এদের পান খেয়ে গুনগান করেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রশাসকরাও। দোকানে টাঙানো থাকতো বিশিষ্ট কিছু মানুষের দেওয়া কল্পতরুর পানের সার্টিফিকেট যার মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন রাজ‍্যপাল পদ্মজা নাইডু থেকে শুরু করে পিসি সরকার (সিনিয়র) বা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। দোকানের গায়ে একটা ছবি সাঁটা থাকত, নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে পা রেখেই কল্পতরুর পান মুখে পুরছেন! আজও এই দোকানের সর্বাধিক চাহিদা ১০০১ টাকা দামের পান ‘কল্পতরু স্পেশ্যাল। এলাহাবাদ, লখনউ, চেন্নাইয়ের মতো বিভিন্ন জায়গা থেকে পান সাজার জন্য বাছাই করা সেরা উপকরণগুলি আনা হয়। তাই দিয়ে বানানো হয় এই ‘কল্পতরু স্পেশাল’। তবে আধুনিক বাঙালি আর তেমন পানের ভক্ত নন, তাঁদের অনেকেই হয় এখন ‘গুটখা’ মুখে রাখেন অথবা সরাসরি ‘পানাসক্ত’ — তাই সাবেক বাঙালির এই দোকানেও এখন ভাটার টান। আমি অবশ্য একবারই একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে এই দোকানের পানের আস্বাদ পেয়েছি। ঘটনাচক্রে সেই বাড়িতে উৎসবের দিনে এই দোকান থেকে পানের অর্ডার নিয়ে আসার দায়িত্ব পড়েছিল আমার ওপর, সেই সূত্রে সুযোগ হয়েছিল দোকানটি দেখার। নতুবা বইপত্রের সঙ্গে কলেজ স্ট্রিট এলাকায় ঘোরাফেরা করার যে ইতিবৃত্ত তার মধ্যে পান নেই —- একটু কৌতুক করে বললে ‘পান ইজ নট মাই কাপ অফ টি’ —- তবু ‘কলেজ স্ট্রিটের পাঁচালি’ লিখতে বসে এই দোকানকে ব্রাত্য করে রাখার কোনো কারণ দেখি না। 
     
    আসলে এইসব তথ্যগুলোকে আলাদা করে জড়ো করলে বুঝতে অসুবিধে হয় না, কলেজ স্ট্রিট মানে সাহিত্য সংস্কৃতি শুধু নয়, বাঙালির সামাজিক সংস্কৃতিরও নানা ঐতিহ্য ছড়িয়ে আছে এইখানে। খাদ্যাভ্যাস একটি জাতির সেই সামাজিক সংস্কৃতির প্রত্যঙ্গ, তারও একটা সুস্নিগ্ধ ইতিহাস আছে। একটা জনপদে ছড়িয়ে থাকে সেই ইতিহাসের উপাদান।  কেবল ‘কফি হাউস’-এর গান দিয়ে সেই ইতিহাসকে ছোঁয়ার প্রয়াসে কোথাও একটা স্থুলে ভুল হয়ে যায়।
    ( ক্রমশ) 
     
    পরের পর্ব প্রকাশিত হবে ২৩ এপ্রিল 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • স্মৃতিচারণ | ০৯ এপ্রিল ২০২৩ | ৯০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ২০:০৪518630
  • পড়ছি
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন