ঘামতে ঘামতে আইলাইনার লাগাচ্ছিল মিঠু, লিপস্টিকের শেড বাছছিল। বড় টিপ - যেমন পরে। লম্বা ঝোলা দুল লাগাতে লাগাতে আয়নায় দেখল- নিজেকে খানিকটা ছিপছিপে মনে হচ্ছিল । বাঁ পাশ থেকে দেখল একবার, ডানদিক ফিরে দেখে নিল তারপর । এ’ভাবে নিজেকে দেখতে ভালো লাগছিল আজ। মৃন্ময়ীর নতুন বাড়িতে, বন্ধুরা আজ ওর শাড়ি দেখে জিগ্যেস করবে কোথা থেকে কিনলি, ঝোলা দুল আঙুল দিয়ে পরখ করবে, টোকা দিয়ে দুলিয়ে দেবে , ওর হাত ধরে বলবে-এখনও কী নরম রে তোর হাত, আমাদের হাত তো.. বলে ফোঁস করে শ্বাস ফেলবে- আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এই সব কল্পনা করছিল মিঠু । নিজে নিজে হাসছিল। অথচ শম্পার ছেলের অন্নপ্রাশনের সকাল এরকম ছিল না-টেনশনে অস্থির ছিল রাত থেকেই । আলমারি ছত্রখান করে খাটের ওপর সাজিয়েছিল শাড়ি, লং স্কার্ট, পালাজো -তারপর ভোর হতে না হতেই কোন্্ আবরণ যাবতীয় চর্বি টর্বি থলথলে ভাব আর সনতের সঙ্গে ওর সম্পর্কের সমস্ত কথা লুকিয়ে রাখতে পারবে পরখ করে দেখে নিচ্ছিল ; দরজা বন্ধ করে একের পর এক পোষাক গায়ে চড়াচ্ছিল, আয়নায় দেখছিল নিজেকে আর পরমুহূর্তেই খুলে ফেলে ছুঁড়ে ফেলছিল খাটের ওপর। নতুন জামাকাপড়ে নিজের শরীরের গন্ধ মিশলে, তা তখন নতুন থেকে নিজের হয়। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত কিছু ঘটছিল- মিঠুর শরীরের যাবতীয় রাগ বিরক্তির গন্ধ নিজেদের গায়ে মেখে সেই সব ছুঁড়ে ফেলা জামাকাপড় যেন কুঁকড়ে ছোটো হয়ে যাচ্ছিল- যেন সব সুদূর অতীতের পোষাক, এখন আর মিঠুকে ফিট করবে না। "কী রে আর কত দেরি করবি?" -ছন্দা চেঁচিয়ে ডেকেছিল। দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছিল মিঠু, সঙ্গে গুলগুলে, কুন্তী আর আগুনের হলকার মত রাগ।
-যাব না অন্নপ্রাশনে ।
-ওমা কী হল হঠাৎ? শরীর খারাপ লাগছে?
-কী পরে যাব? কিছুই মানায় না আমাকে। সবাই হাসাহাসি করবে।
ছন্দা আর বিপ্লব মুখ চাওয়াচাওয়ি করেছিল।
তারপর ছন্দাই বলেছিল-“আমার একটা শাড়ি পরে যাবি? পুরী থেকে যেটা কিনলাম গতবার? নাকিমঙ্গলগিরি টা ? হালকা হবে - যেটা তুই দিলি এবারে ।”
-কোনটা? বুঝতে পারছি না
-চল, দেখাচ্ছি।
ছন্দার শাড়ির থেকেই একটা বেছে নিয়েছিল মিঠু - মায়ের শাড়ির আঁচলের তলায় যেন সব লুকোনো গেল।
শম্পার বাড়ি পৌঁছতে দেরি হয়ে গিয়েছিল এই সব করে। নূপুর, বকুল, মৃন্ময়ী ওকে জড়িয়ে ধরে হই হই করে উঠেছিল- "কী সুন্দর হয়েছিস রে! বর কোথায়?" মিঠু সনতের ট্যুরের কথা বলেছিল। উৎসববাড়িতে এই সব কথা সবাই স্রেফ অজুহাত জেনেও মেনে নেয়, তারপর ব্যস্ততায় ভুলে যায়। মিঠুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। এর ওপর নূপুর আর মৃন্ময়ীও মিঠুর কথায় সায় দিয়ে ওদের বরদের ট্যুরের ঘনঘটার রোমহর্ষক বিবরণ পেশ করতে শুরু করে দেয়। মিঠুর হাসি পেয়েছিল; আড়ষ্টতা কেটে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। শম্পার ছেলেকে কোলে নিল, আদর করল, শম্পার শাশুড়ির সঙ্গে হাত লাগিয়ে আসন পাতল, ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালল। অনুষ্ঠানবাড়ি গমগম করে উঠছিল ক্রমশ, ক্যাটারারের ছেলেরা চা কফি দিচ্ছিল হাতে হাতে, দুপুরের খাওয়ার জায়গায় টেবিলে ছোটো ফুলদানিতে গোলাপ রাখছিল। এই সব কোলাহলে, আনন্দে, ভীড়ে মিঠু মিশে যাচ্ছিল যেন আলাদা করে ওর আর কোনো অস্তিত্বই নেই- এই উৎসব বাড়ি, ফিসফ্রাইয়ের গন্ধ, বাচ্চার কেঁদে ওঠা , শাঁখ , উলু, হাসির শব্দ সুতোর গুছির মত এ ওর গায়ে জড়িয়ে যাচ্ছিল। যেন চিকের আবরণ তৈরি করছিল মিঠুর সামনে। ও সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছিল , আবার কোথাও যেন ছিলই না। এই সব আবরণ চিরস্থায়ী হয় না- এ' তো জানাই। পর্দা ছিঁড়ল গার্গী; ওর হাত ধরে টানল-"ওমা তুই! কখন এসেছিস? তোর বর কে তো দেখলামই না বিয়ের পর। এখানে কী ভীড় রে, চল ঐ ঘরে বসি" ।
সনতের কথা জিগ্যেস করেছিল গার্গী- কী নাম, কী করে টরে এইসব মামুলি কথার পরে দুম করে সনতের ছবি দেখতে চাইতেই চিকের আবরণ ছিঁড়ে কুটিকুটি হয়ে উৎসব বাড়ির মেঝেয় লুটিয়েছিল। ছেঁড়া টিস্যু, কফির কাপ, গিফ্ট র্যাপারের সঙ্গে সেই সব টুকরো ঝেঁটিয়ে বাইরে ফেলে এসেছিল ডেকরেটরের লোক। গার্গীর মুখোমুখি হয়েছিল মিঠু।
-ছবি কি সঙ্গে নিয়ে ঘুরব নাকি?
- ব্যাগে রাখিস না? মোবাইলে নেই?
- দূর, আমার তো পুরোনো ফোন- ছবিটবি কী করে থাকবে?
-তুই যেন কী! ব্যাগে এক পিস ছবি ফেলে রাখতে কী হয়? আজ জানিস আমরা আসব, দেখতে চাইব ছবি- কী রে?
- ব্যাগে থাকে তো। আজ ব্যাগ বদলেছি এখানে আসব বলে। ছবি কলেজের ঝোলায় রয়ে গেছে-
-কেমন দেখতে রে? তোর মত সুন্দর? হ্যাঁরে গোঁফ আছে? দাড়ি? আজকাল আবার সব দাড়ি রাখা ফ্যাশন হয়েছে। আমার ভালো লাগে না। তপনকে বলে দিয়েছি ...
অক্লান্ত বকছিল মেয়েটা। গার্গীর এই মুণ্ডুহীন অবয়বহীন বকবক আবার একটা নতুন আবরণ তৈরি করছি এই ছোটো ঘরে যে পর্দার আড়ালে মিঠু এখন বলে বলে ছক্কা মারবে। ব্যাগে ছবি থাকার কথা বলে ফেলার পরেই মিঠুর হাত খুলে গিয়েছিল। প্রতিটি বল খেলছিল ব্যাটের মাঝখান দিয়ে- বাউন্ডারি পার হয়ে যাচ্ছিল বল আর তা কুড়িয়ে আনতে আনতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল গার্গী। মিঠুর কেমন নেশার মত হয়ে গিয়েছিল। সনতের সঙ্গে তার বিবাহিত জীবন একেবারে রূপকথার পাতা থেকে উঠে আসছিল, সনতের রূপগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে সে আর থামতে চাইছিল না। ফলে, সেদিন দুপুরের খাওয়া দাওয়া শুরুর আগেই সনৎ কার্তিক আরিয়ান, স্টিফেন হকিং আর রতন টাটার কম্বিনেশন হয়ে গিয়েছিল।
আজকের দিন সেদিনের চাইতে একদম আলাদা। অনর্গল মিথ্যে বলার যে একটা আনন্দ আছে- তা আবিষ্কার করে মিঠু হতবাক হয়ে যায় প্রথমটায়, তারপর নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ায় - ব্রাভো মিঠু ব্রাভো। বস্তুত, শম্পার বাড়িতে হাত খুলে খেলার পরে মিঠুর কনফিডেন্স এমনই বেড়ে যায়, যে সে রোদচশমা, চাদর ছাড়াই কলেজ যেতে শুরু করে। কলেজের বাইরেও আজকাল বেরোচ্ছিল মিঠু। অন্নপ্রাশনের দুপুরে পুরোনো সহপাঠীদের সঙ্গে আবার যোগাযোগে ঘন ঘনই বিবিধ আমন্ত্রণ পাচ্ছিল সে- সিনেমা থিয়েটার গানের জলসা সত্যনারায়ণ পুজো। বিয়ের দিনের একটা দুটো ছবি এবার সে সঙ্গে নিতে থাকে; সে ছবি বার বার দেখে আর সনতের দেশ বিদেশে ট্যুরের গল্প একনাগাড়ে শুনতে শুনতে, গার্গীসহ সবাই মিঠুর বরপ্রসঙ্গ আড্ডার অ্যাজেন্ডা থেকে একরকম বাদ দেয়। বস্তুত আজ মৃন্ময়ীর গৃহপ্রবেশে যাওয়ার আগে তার ব্যাগে বিয়ের ছবি, রোদ চশমা , কালো চাদর কিছুই ছিল না।
নির্ভার লাগছিল মিঠুর। ঝোলাদুল পরল, লিপস্টিক লাগাল, ব্যাগ নিয়ে বেরোতে যাবে, ছন্দা এসে দাঁড়ালঃ
-এই গরমে না বেরোলেই নয়? কালও বমি করলি। বাথরুমে গেলি। আয়নায় চেহারাটা দেখ। তোর রেস্ট দরকার। যাস না আজ। সেই তো হাবি জাবি খাবি। কথা শোন মিঠু।
- যাব বলেছি। এখন না গেলে হয়?
-কেন হবে না? শরীর খারাপ হয় না মানুষের?
-শুধু দুপুরটুকুই তো, সন্ধ্যার মুখে ফিরে আসব
- বললেই ফিরতে পারবি? রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখ। ভোটের আগে রোজ জ্যাম। এখানে গন্ডগোল, ওখানে মারামারি। কেন বাড়িতে বুঝি মন টেঁকে না? আমি আছি, মামু আছে - দুটো গল্প তো করতে পারিস ছুটির দিনে-
- এ আবার কী শুরু করলে? সর্বক্ষণই তো কথা হচ্ছে-
-বাড়িতে কতক্ষণ থাকিস ? সারাদিন কলেজ, খাতা দেখা; আগে ছুটির দিনে বাড়ি থাকতি, এখন .. যাস না মিঠু আজ
-সরো, বেরোবো
- একটা কথাও যদি শুনিস তুই-
- কথা শুনি না তোমার? কোন কথা শুনি না মা? কোন কথা? এই বয়সে কোন মেয়ে তার মার সব কথা শুনে চলে? কথা শুনেই তো বিয়ে করেছিলাম-
- অমনি বিয়ের কথা তুললি
-তুমিই বাধ্য করলে। চুপ করো এখন প্লীজ। বেরোবো।
হাত জোড় করল মিঠু। ছন্দা চোখে আঁচল দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে গেল।
মিঠুর স্মার্ট ফোন নেই। উবের ডাকা সম্ভব নয়। বড় রাস্তার মুখ থেকে ট্যাক্সি নেবে। এসি বাস পেলে উঠে পড়তে পারে। সকালেই চড়া রোদ। গলি দিয়ে বড় রাস্তার দিকে হাঁটছিল মিঠু। ছন্দার সঙ্গে চেঁচামেচি করে, বলাইকেই ফোন করা হয় নি। রিক্সা করে গলির মুখ অবধি যাওয়া যেত। রাগ হচ্ছিল খুব- প্রথমে ছন্দার, তারপর গোটা পৃথিবীর ওপর - ঘাড় মাথা দপদপ করছিল । রাগ সামান্য কমতে, ছন্দার অধিকারবোধ তাকে বিস্মিত করছিল, পীড়া দিচ্ছিল অসম্ভব; আচমকাই ঘন বনের মধ্যে একটা বড় গাছের কথা মনে হ'ল মিঠুর, যে গাছে বাচ্চাদের একটা সাইকেল আটকে আছে। মিঠু এই ছবিটা নেটে দেখেছিল- কেউ ফরোয়ার্ড করেছিল ওকে, বোধ হয় দিব্যেন্দু। ছবিটায় একটা মিথ্যে গল্প ছিল যেখানে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আগে তরুণ সৈনিকের ছোটোবেলার সাইকেল গাছে হেলান দিয়ে রেখে চলে যাওয়া এবং এই সব করুণ গল্পের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি অনুযায়ী সেই তরুণের আর ফিরে না আসার কথা ছিল। সেই থেকে সাইকেল ঐখানে এবং গাছ তাকে গ্রাস করে নিয়েছে ক্রমশ -এই রকম কথিত ছিল দিব্যেন্দুর ফরোয়ার্ড করা গল্পে; পরে দেখা যায় কাহিনী বেবাক আলাদাঃ এক স্থানীয় বালক উপহার পেয়েছিল সাইকেল, পছন্দ না হওয়ায়, জঙ্গলে ফেলে রেখে সে বাড়িতে বলেছিল- সাইকেল হারিয়ে গেছে।
নিজেকে গাছের গায়ে আটকে থাকা সাইকেল মনে হচ্ছিল মিঠুর- পরিত্যক্ত আর একলা। নিজেই যুক্তি সাজিয়ে তার এই মনে হওয়া খণ্ডন করার চেষ্টা করছিল। পারছিল না, ফলে বৈশাখের খটখটে আকাশের নিচে নিজের যে ছায়া পড়ছিল , তাকেই সব থেকে আপন মনে হচ্ছিল। রাগ দুঃখ ক্ষোভ মাথা থেকে গলায় নামছিল; প্রথমটায় গলায় বিঁধছিল কাঁটার মত, ঢোঁক গিলছিল সে, তারপর গিলে নিচ্ছিল। বড় রাস্তার মুখে পৌঁছতেই ট্যাক্সি পেয়ে গিয়েছিল মিঠু। গাড়ির জানলার কাচ তুলতে গিয়ে গলির দিকে চোখ গেল ওর । রোদে রোদে গলির রহস্যময় বাঁক উধাও এখন- বড়রাস্তার মুখ থেকে কৃষ্ণা স্টোর্স অবধি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে; মামু আর টুম্পাকে একসঙ্গে হাঁটতে দেখল ও । মামুর হাতে বাজারের ব্যাগ, হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছে টুম্পার সঙ্গে, মাথা নাড়ছে টুম্পা। এই দৃশ্যে অস্বাভাবিকত্ব কিছু নেই। অথচ অস্বস্তি হচ্ছিল যার কারণ তার জানা ছিল না। চোখ সরিয়ে নিল মিঠু। রাগের সঙ্গে অস্বস্তিটুকুও গিলে নিয়ে ,মৃন্ময়ীর নতুন বাড়ির ঠিকানা ঝালিয়ে নিল মনে মনে। ড্রাইভারকে বলল-"চলুন দাদা।"
বিপ্লব আর ছন্দা পায়চারি করছিল ছাদে। মিঠু বলেছিল সন্ধ্যে নাগাদ ফিরবে। টুম্পা রুটি করে চলে যেতে ন'টা বাজল। মিঠুর মোবাইল যথারীতি সুইচড অফ।
"অফই যদি করে রাখে, মোবাইল ফোন গলায় ঝুলিয়ে বেরোনোর কী অর্থ , বুঝি না" ছন্দা গজগজ করছিল।
-লাস্ট কখন কথা হয়েছে?
-সকালে যখন বেরিয়ে গেল। বাবা, কী মেজাজ! তারপর তো আর কথা হয় নি। অদ্ভূত মেয়ে। আমাদের কথা ভাবেই না।
- মনে হয়, ওখানে খেয়ে উঠতে দেরি হয়েছে। গল্প টল্প করে হয়ত সন্ধ্যা নাগাদ বেরিয়েছে। তারপর রাস্তায় আটকে গেছে। মৃন্ময়ীর নম্বর জানো?
-না। ফোনের খাতায় থাকতে পারে। তবে সে তো ওর বাপের বাড়ির নম্বর, এখনকার নম্বর জানি না। আচ্ছা, পথে সনৎ ধরল না তো? বলাইকে ফোন করো একটা।
-নটা বেজে গেছে, এখন আর বলাইকে পাবে না
- আরে বাবা, সবেতেই না। সবেতেই না। ফোন করে দেখবে তো- মনে হচ্ছে সনতের সঙ্গে দেখা হয়েছে-
- বলাইকে ফোন করে কী লাভ? ও ই বা কী জানবে? আর রাস্তাঘাটে তো লোক থাকে, সনৎ কী করবে?
-কী করবে? কী করতে পারে দেখো নি? তুমি এনেছিলে এই সম্বন্ধ- ভালো ছেলে, বিদ্বান, ভালো চাকরি, মিঠুর সঙ্গে মানাবে।
-কী করে বুঝব?
-সেই। বুঝবে কী করে। নিজের মেয়ে হলে ঠিক বুঝতে- বেছে বেছে নোংরা লোক ধরে আনতে না-
- তোমরাও তো দেখেছিলে, দেখো নি?
-দেখে কি এ'সব বোঝা যায়? খোঁজখবর কিছুই নাও নি। তুমি নিজে নোংরা, তোমার পছন্দও তাই- ছন্দার গলা চড়ায় উঠে থরথর করে কাঁপছিল। কথার পিঠে কথা উঠে আসছিল। বল্লমের ডগার মত তীক্ষ্ণ সব কথা বার্তা। একসময় ককিয়ে উঠেছিল বিপ্লব-" চলে যাব। আর এখানে থাকব না। মিঠু ফিরুক। আজই চলে যাব।"
-কোথায় যাবে? কেউ আছে তোমার? কে বসে আছে বাড়া ভাত সাজিয়ে, আমিও দেখব। চলে যাবে! মুরোদ কত!
ছন্দার গলা উত্তরোত্তর চড়ছিল। টিভিতে সিরিয়াল দেখা বন্ধ রেখে এক দুই তিন করে ছায়াপিণ্ডরা সব পাশের বাড়ির ছাদে উঠে আসছিল। অন্ধকারে লাল বিন্দু দেখতে পেল বিপ্লব- সিগারেট ধরিয়ে মজা দেখছে সুধীন। এই সময় বাড়ির সামনে বলাইএর রিক্সা এসে দাঁড়িয়েছিল।মিঠুকে নামিয়ে দিয়ে ফিরে যাচ্ছিল বলাই। টেনে টেনে প্যাডেল করছিল। কমজোরি আলোয় এ'পাড়ার প্যাঁচালো গলি আবার তার সমস্ত রহস্যময় বাঁক নিয়ে উপস্থিত। অসম্পূর্ণ এক্কাগাড়ির মত লাগছিল বলাইএর রিক্সাকে। ভৌ ভৌ করল কালু। রিক্সার পিছনে দৌড়োলো খানিকক্ষণ। ছন্দা দ্রুত নামছিল সিঁড়ি বেয়ে - দরজা খুলে দেবে। বিপ্লব ওর পিছনে। মিঠু ঘরে ঢুকে ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলল সোফায়- সকালের পারফিউমের গন্ধ উবে গিয়ে অদ্ভূত গন্ধ বেরোচ্ছে গা থেকে- অচেনা আর অস্বস্তিকর। শাড়ির পিছনদিকটা ভিজে দেখাচ্ছিল, গলার নিচ থেকে অনেকটা জায়গা খয়েরি হয়ে আছে- ঠোঁটের কোণে শুকনো দানা দানা - বমির দাগ মনে হচ্ছিল ছন্দার।
"এত দেরি হল। একটা ফোন তো করতে পারতি-" মেয়ের মুখ দেখে বাকি কথা গিলে নিল ছন্দা । ইতিমধ্যে,বাইরের ঘর থেকে বারান্দায় স্প্রিন্ট নিয়েছিল মিঠু। তারপর পেট চেপে বাথরুমের সামনে বসে পড়ল উবু হয়ে। মিঠুর শরীর কাঁপিয়ে বাতাস বেরিয়ে এল অনেকখানি। তারপর বর্জ্য। আলকাতরার মত কালো, দুর্গন্ধময়।