তন্ময়ের পাঠানো মিম দেখতে দেখতে হাসছিল সনৎ। কনফিডেন্ট ছিল সে – পরীক্ষার আগের রাতে সারাবছর পড়াশোনা করা ছাত্র যেমন রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়ে নিশ্চিন্তে, সনতের মুডও আজ সেই রকম – রাগের বদলে মজা পাচ্ছিল। শেষ রাতে চন্দ্রযান লঞ্চিং - সনৎ দু’দিন ছুটি নিয়েছে; সারাদিন ঘুমিয়ে নেবে, তারপর অ্যালার্ম দিয়ে উঠে টিভি খুলবে। লঞ্চ হয়ে গেলে আবার ঘুমোবে বেলা অবধি। মন্টুর মাকে ছুটি দিয়ে দিল সনৎ - বিকেলে আর আসতে হবে না – মোড়ের মাথার দোকানে ফোন করে রুটি আনিয়ে নেবে। মন্টুর মাকে অখুশি দেখাচ্ছিল এই ব্যবস্থাপনায় – গজগজ করতে করতে চলে গেল। খালি বাড়িতে মহালয়ার আগের রাতের মত একটা ফিলিং হচ্ছিল সনতের – দুপুরে খেয়েদেয়ে ঘুমোতে যাচ্ছিল, যেন ‘যা চণ্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী’ শুনে ঘুম ভাঙবে, যেন সে শৈশবে ফিরে গেছে, ঘুম থেকে উঠে মহালয়া, আর তারপরই পুজোর ছুটি। মোবাইলে, টেবিলের ঘড়িতে, পাঁচ মিনিট পর পর অ্যালার্ম দিল। তারপর বালিশে মাথা দিয়ে মোবাইলে খুটখাট শুরু করল। তন্ময় মিম পাঠাচ্ছিল নানারকম – টুংটাং আওয়াজ হয়েই চলছিল। তন্ময়কে মিউট করে জল খেল সনৎ। আধখানা ঘুমের ওষুধ মুখে দিল সঙ্গে। জানালা দিয়ে দিনের আলো আসছিল ঘরে, পাল্লা বন্ধ করতে গিয়ে পুকুরের দিকে তাকাল সনৎ। হলুদ বাড়িটা, সবুজ রঙের জানালা, কতদিনের পুরোনো পুকুর – ঠাকুমা পুষ্করিণী বলত; লম্বা লম্বা ঘাসের মধ্যে একটা ডাহুক ঘুরে বেড়াচ্ছে একলা – কী যেন খুঁজছে। বর্ষার জল পড়তেই ঘাস যেন তলোয়ারের ফলা, আগাছায় আগাছায় ছেয়ে গেছে মাটি, আবার জঙ্গলের মত দেখাচ্ছে পুকুরের চারপাশ। মাথায় গামছা বেঁধে ঘাস ছাঁটছিল, আগাছা পরিষ্কার করছিল ক্ষিতীশ –
আজকাল সেতার শোনা যায় হলুদ বাড়ি থেকে – আজও বাজছিল। লয় বাড়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়ল সনৎ। ওর বোজা চোখের মণি দ্রুত নড়ছিল – এবড়োখেবড়ো জমিতে একটা বাচ্চাকে খেলতে দেখছিল সে; প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, এই বুঝি পড়ে যাবে – অথচ বারেবারেই টাল সামলে নিচ্ছিল বাচ্চাটা আর সনৎ হাত বাড়িয়ে ডাকছিল – প্রজ্ঞান, প্রজ্ঞান। বাচ্চাটা হোঁচট খেল, নাকি খিলখিলিয়ে হেসে উঠল! জেগে গেল সনৎ - দুটো অ্যালার্মই বাজছে। তড়াক করে উঠে টিভি চালাল। ডাইরেক্ট টেলিকাস্ট শুরু হয়ে যাওয়ার কথা, অথচ মীরার ভজন হয়ে চলেছে একের পরে এক। সনতের মাথা ঝিমঝিম করে উঠল – তবে কি লঞ্চ হয়ে গেছে? সে সময় ভুল করল? মিস করল? সনৎ চ্যানেল বদলাতে শুরু করল – কোথাও গান হচ্ছিল, কোথাও সিনেমা, কোনো চ্যানেলে স্ক্রিন সম্পূর্ণ কালো হয়ে থাকছিল, কোথাও দীর্ঘাঙ্গী মেয়েরা হাঁটছিল র্যাম্প-বরাবর। পুরোনো চ্যানেলে ফিরে এল সনৎ - যেখানে ভজন হচ্ছে। এবারে স্ক্রিনের তলায় নিউজ-টিকার খেয়াল করল সে – ফুয়েল লিকেজের কারণে বাহুবলী জিএসএলভি-থ্রি-র লঞ্চিং স্থগিত। সনৎ চেঁচিয়ে উঠে মোবাইল ছুঁড়ল টিভির স্ক্রিনে – মুখ ফাটিয়ে দিল গায়িকার।
সকালে মন্টুর মা গজগজ করতে করতে ঘরদোর পরিষ্কার করছিল আর সনৎ জিএসএলভি-থ্রি-র লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বারের ও রিং-এর কথা ভাবছিল। ফুয়েল লিকের সমস্যা বুঝতে রাত থেকেই ইসরোর সাইট তন্ন তন্ন করে পড়েছে, গুগল করেছে তেড়ে; এই মুহূর্তে সায়েন্স না পড়ার জন্য আপশোষ হচ্ছিল – যেন সায়েন্স নিয়ে পড়লেই সে দৌড়ে গিয়ে সারিয়ে দিতে পারত ও রিং, জিএসএলভি-র লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বারে বাষ্প তৈরি হত তখন, প্রেসার বাড়ত, শুরু হত কাউন্টডাউন – আর সনতের চোখের সামনে চোদ্দোতলা বাড়ির মত উঁচু বাহুবলী আকাশ ফুঁড়ে উঠে যেত। অফিসে কাল তন্ময় কী বলবে – ভাবতেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিল – অলরেডি মিম পাঠাতে শুরু করেছে। কার সঙ্গে ও রিং-এর ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করা যায় এখন? মিঠুর কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে একবার? সনৎ ছাদে গেল, দু’পাক হেঁটে নিচে নেমে এল, আবার ছাদে গেল, আবার নামল, ইসরোর সাইট রিফ্রেশ করল বারবার। হলুদ বাড়িতে আজও সেতার বাজছিল – জানালায় গিয়ে দাঁড়াল সনৎ। পুকুরপাড় তকতকে দেখাচ্ছে এখন – ঘুরে ঘুরে কার্বলিক অ্যাসিড ছড়াচ্ছে ক্ষিতীশ।
ঠিক আটদিন পরের এক দুপুরে, জিওসিনক্রোনাস স্যটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক থ্রি শ্রীহরিকোটা থেকে লঞ্চ করেছিল। একমাস পরে চন্দ্রযান লুনার অরবিটে ঢুকবে। নতুন টিভি কিনল সনৎ, রামকৃষ্ণ ইলেকট্রিকের বাপিকে ফোন করে টুনি বাল্বের অর্ডার দিল – সমস্ত বাড়ি আলো দিয়ে সাজাবে।
সাহেব-গলিতে ছাতা মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল স্মিতা। শেষ রাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টি। এখন টানা তিনদিন এ’রকম চলবে – ফোরকাস্ট রয়েছে। গত সপ্তাহের আবহাওয়া এ’রকমই ছিল – আলিপুর থেকে বলেছিল – নিম্নচাপ। এই বর্ষায় বাড়ির পুকুর জলে টইটম্বুর হয়ে আছে। কখনও পুকুর উপচে যেতে দেখেনি স্মিতা। কাল সারাদিন বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু ভোর রাতে এমন বৃষ্টি এল, যে ওর মনে হচ্ছিল, এইবারে পুকুর ভরে গিয়ে জল উপচে আসবে ঘাটের সিঁড়িতে; জল বাড়তে বাড়তে ঘাট পেরিয়ে বাগানে উঠবে, তারপর এ-বাড়ির দোরগোড়া ছুঁয়ে ফেলবে। পুকুরের জলের সঙ্গে কিছু শ্যাওলা, এমনকি মাছ-টাছও খলবল করে উঠে আসবে দরজার সামনে, হয়তো জলঢোঁড়াও। কিন্তু হেঁটমুণ্ড হয়ে যে শহর লুকিয়ে রয়েছে জলের তলায়, সে কি ভেসে আসবে স্মিতার বারান্দার সামনে? যা লুকিয়ে থাকতে চায়, আধার উপচে পড়লে, তা হয়তো আরো গভীরে সরে যায়, ক্রমশ অগম হয়ে যেতে থাকে। সমস্ত জল শুষে নিয়ে পুকুরকে একদম খটখটে শুকনো করে দিলেও, সে শহর মাটির তলায় সেঁধিয়ে যাবে নির্ঘাৎ - সটান পাতালে চলে যাবে হয়তো।
স্মিতা এই অঞ্চলের পথঘাট চেনে না। ধনঞ্জয়কে সঙ্গে নেবে ভেবেছিল একবার; পায়েলও বলছিল – “এই বৃষ্টিতে যেও না দিদি।” শেষ অবধি একলাই বেরোল – একটা ট্যাক্সি নিয়ে সটান সাহেব-গলি। ধনঞ্জয় বলেছিল, “গলির ভেতরে একটা পোস্টাপিস আছে, ভাই বলছিল – ওখানে জিজ্ঞেস করলে কিছু জানা যেতে পারে।” ক্লাস সেভেন-এইট অবধি পঙ্কজরা এ’পাড়ার ভাড়া বাড়িতে, তারপর শহর বদলেছিল – স্মিতা এইটুকুই জানে। আজ এই বৃষ্টিতে অচেনা গলিঘুঁজিতে এলোপাথাড়ি ঘুরে সে পঙ্কজের অতীতকে খুঁজে পাবে না – নিজেও বোঝে। তবু সে সাহেব-গলিতে আসার ডিসিশন নেয় গতরাতে।
রাতে খাওয়া সেরে স্মিতা দোতলায় উঠছিল; জেম্মার ঘর থেকে পায়েল ছুটে বেরোল – “দিদি, দেখে যাও একবারটি।” পায়েলের চোখমুখ আনন্দময় – যেন খুব সুন্দর স্বপ্ন দেখে সদ্য জেগে উঠেছে, যেন এখনও স্বপ্নের ঘোরে।
- কী রে?
- দেখই না এসে।
জেম্মার ঘরের দুটো জানালা খুলে দিয়েছিল পায়েল, “ঐ দেখো।”
স্মিতা আশ্চর্য হয়ে দেখল, ওদের গলি বদলে গেছে। দেখল, শিখাজেঠিদের বাড়ির বারান্দার রেলিং-জুড়ে টুনিবাল্ব রং বদলাচ্ছে – লাল থেকে নীল হয়ে সবুজ হয়ে যাচ্ছে, আবার লালে ফিরছে। বাড়ির ছাদ থেকে কার্নিশ অবধি উল্লম্ব আলোর মালা দোল খাচ্ছে। জেম্মার একতলার জানালা থেকে যতখানি দেখতে পাচ্ছিল স্মিতা, তাতে মনে হচ্ছিল, ছাদের ওপর লাল রঙের একটা ফাঁপা চোঙ, তার ওপর গম্বুজ গোছের কিছু – তার ভিতরে আলো জ্বলছে –
- ওটা কী রে পায়েল?
- রকেট দিদি রকেট – ঐ যে চাঁদে যাবে না!
সন্ধ্যে হলেই, বিশেষ করে এই বর্ষায় আলো মরে গেলেই, গলিতে ছ্যাতলা পড়ে যায়, অন্ধকার রাস্তায় প্লাস্টিকের ঘেরাটোপে রিক্সা, রুটের অটো চলে-ফেরে, রাস্তার আলোর তলায় তাদের একটানা চলন্ত ছায়া গলিকে আরো মলিন করে। আজ শিখাজেঠিদের বারান্দার লাল, নীল, সবুজ আলো নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নিবু নিবু হয়ে ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হচ্ছিল, ঝিকমিক করছিল তারপর – সেই কালক্রমের উজ্জ্বলতম মুহূর্তে গলিতে আলোর বান ডাকছিল; ভেজা হাওয়ায় আলোর মালা দোল খাচ্ছিল – যেন এক সহস্রবুটি শাড়ি – ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া – অনুকূল হাওয়া পেয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠে নৌকোর পাল হয়ে যাচ্ছে। স্মিতাদের চোখের সামনে শিখাজেঠিদের আদ্যিকালের বাড়ি একটা আলো দিয়ে সাজানো বজরা হয়ে গেল, এক বহমান আলোর নদী হয়ে গেল ওদের গলি। ধনঞ্জয় বলছিল – শিখাজেঠির ছেলে সমস্তদিন ধরে বাড়ি সাজিয়েছে – একমাস ধরে এই আলো জ্বলবে। পায়েল আর ধনঞ্জয় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আলো দেখছিল। স্বামী-স্ত্রীর মুগ্ধ চোখে আলোর নদীর প্রতিফলন দেখল স্মিতা। পায়েলও খেয়াল করছিল, দিদিকে অন্যরকম দেখাচ্ছে। বস্তুত, স্মিতা পঙ্কজকে পেতে চাইছিল সেই মুহূর্তে -উৎসবের রাতে আলো দেখতে বেরিয়ে মানুষ তার প্রিয়জনের হাত ধরে। স্মিতা পঙ্কজের হাত ধরতে চাইছিল খুব। মুহূর্তের আবেগ ওকে বিহ্বল করেছিল – চোখে জল আসছিল বারবার। রাতে জানালা খুলে শুয়েছিল স্মিতা। শিখাজেঠির বারান্দায় টুনিবাল্বের জ্বলা-নেভা দেখতে দেখতে সাহেব-গলি যাওয়ার ডিসিশন নিল তখনই।
সাহেব-গলিতে ঢোকার মুখে নীল রঙের টিনের পাতের ওপর রাস্তার নাম লেখা হয়েছিল সে কোনকালে – খুব খেয়াল করলে লেখাটুকু এখনও পড়া যায়। ট্যাক্সি ছেড়ে দিল স্মিতা। গলির মুখে সাধারণ দোকানপাট – মিষ্টির দোকান, মনিহারি স্টোর্স, ফার্মেসি, ডেকরেটারের অফিস; সামনের ওষুধের দোকানে জল কিনতে ঢুকল স্মিতা, ট্যাক্সিতে জলের বোতল ফেলে এসেছে; একবার ভাবল পোস্টাপিসের অবস্থান এখানে জিজ্ঞাসা করে নেয়। পরমুহূর্তেই মত বদলে সে তার প্রশ্ন গিলে ফেলে, জলের বোতল কিনে রাস্তায় নামে এবং মিনিট-দশের মধ্যেই বুঝতে পারে এ’গলির পেটে পেটে কত প্যাঁচ। দিক গুলিয়ে যাচ্ছিল স্মিতার; ল্যান্ডমার্ক ধরে এগোনোর চেষ্টা করছিল সে – বাঁয়ে ওষুধের দোকান রেখে, ডানদিকের শাখাগলিতে এক চক্কর ঘুরে বেরিয়ে এলে, ওষুধের দোকান তার ডাইনে থাকার কথা – অথচ ঠিক উল্টোটাই ঘটছিল। আবার গলির এক নম্বর বাঁকে যে পানের দোকান দেখেছিল, সেই একই দোকান দেখল তিন নম্বর বাঁকে – স্মিতা হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর একই দোকান – সরু গোঁফ-ওলা দোকানি যত্ন করে এক বর্ষাতি-পরা বাইক-আরোহীকে পান সেজে দিচ্ছিল। যে একটেরে বইখাতার দোকান চোখে পড়েছিল কিছুক্ষণ আগেই, তাকে আর এখন খুঁজে পাচ্ছে না স্মিতা। জমা জল ঠাহর করতেও অসুবিধে হচ্ছিল ওর। শুকনো জায়গা ভেবে ফুটপাথ থেকে গলিতে পা রাখতেই গোড়ালি অবধি ডুবে গেল বারদুয়েক, তারপর হাল ছেড়ে ছপছপ করে হাঁটতে শুরু করল। একটিই হুড-তোলা রিক্সা ওর গা-ঘেঁষে গেল কতবার গেল আর এল – যেন সওয়ারি নামিয়ে বড় রাস্তার মুখে যাচ্ছে, নতুন সওয়ারি নিয়ে আবার গলিতে ঢুকছে। স্মিতার মনে হল, একই রিক্সা, একই চালক – টেনে টেনে প্যাডেল করছে, হুডের পিছনে দুটো গোলাপ আর ভিদ্যা বালনের ছবি। স্মিতা ভাবল, সওয়ারি নামিয়ে রিক্সা ফিরে এলে, রিক্সাওলাকেই বলবে পোস্টাপিসে নিয়ে যেতে। স্মিতা দাঁড়িয়ে পড়ল। অথচ এবারে রিক্সার ফিরতে বিস্তর দেরি হচ্ছে।
বৃষ্টি বাড়ছিল। ছাঁটে ভিজে যাচ্ছিল স্মিতা। হাওয়ার এমন জোর, যে ছাতা ধরে রাখাই মুশকিল। আকাশ ঘোর কালো, আর একটাও মেঘের পুঁটলিকে রাখার জায়গা নেই যেন। এই বিকেলেই রাস্তার আলো জ্বলে উঠছিল। সেই সব কমজোরি আলো জমা জলে রিফ্লেক্ট করছিল। স্মিতা ভাবল, ওষুধের দোকানে ফিরে গিয়ে পোস্টাপিসের সুলুক সন্ধান নেয়। সে বাঁদিকে তাকাল, তারপর ডানদিকে – একটা ব্যায়াম-সমিতির বোর্ড চোখে পড়ল শুধু, আর এদিকে একটা শিরীষ আর একটা কদম। স্মিতার ভয় করে উঠল হঠাৎ - এ’গলি যেন একে একে সমস্ত অভিজ্ঞান গিলে নিচ্ছে। পঙ্কজের অতীতের কাছে পৌঁছনোর কোনো উপায়ই রাখছে না। এদিকে তীরের ফলার মত বৃষ্টি নামছিল আকাশ থেকে, সাহেব-গলির ইঁট, খোয়া, পাথরকুচিতে ঠোক্কর খেয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছিল প্রতিটি জলবিন্দু, স্মিতাকে ঘিরে ধরছিল – যেন প্রতিটি বিন্দুরই পঙ্কজকে নিয়ে স্মিতাকে কিছু বলার আছে, যেন স্মিতাকে ওরা পঙ্কজের অতীত না জেনে ফিরতে বাধা দিচ্ছে। স্মিতার মাথায় বৃষ্টি, কাঁধে বৃষ্টি, শরীরে বৃষ্টি, হাঁটু অবধি ঘিরে নিচ্ছে বৃষ্টি –
মানুষ এসব গূঢ় বার্তা কবেই বা বুঝেছে। স্মিতা ফোন করে উবের ডাকল – ফিরে যাবে। অসহায় লাগছিল। নিজেকে নির্বোধ মনে হচ্ছিল – পঁচিশ বছর ধরে যা তার কাছে গোপন, এক বিকেলে সে সবই জেনে যাবে – এই চিন্তা মূর্খামি মনে হচ্ছিল। আবার কখনও এই বৃষ্টিকে দায়ী করছিল সে, যেন এক বৃষ্টিরহিত দিনে এলেই সাহেব-গলির দু’ধারে পঙ্কজের অতীত শুকোতে দেওয়া দেখতে পেত –