এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • চার রঙের উপপাদ্য - গ্রীষ্ম-৪

    ইন্দ্রাণী
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ | ২২৯০ বার পঠিত
  • ছবি - ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক


    গ্রীষ্ম-৪

    বারান্দা থেকে বাগান দেখছিল স্মিতা। ঘর থেকে মোড়া এনে বসেছে। মামুলি ছোট বাগান। ক্ষিতীশ এসে ঘাস কেটে দিয়ে যায়, মরসুমি ফুলের চারা বসায় টবে। এখন আগাছা তুলছে ধনঞ্জয়। জল দিচ্ছে। রোদ চড়ে যাওয়ার আগেই বাগানের কাজ সেরে ফেলবে। স্মিতা বুগেনভিলিয়া গাছের দিকে তাকিয়েছিল। বাগানের পুরোনো গাছ- রথের মেলা থেকে জেঠু আর জেম্মা এনেছিল। গাছ ভরে ফুল এসেছে এ'বছর। তার পাশে জবা, টগর , করবী আর শিউলি। আজ এই সব গাছ, এই ফুল স্মিতার স্মৃতির দরজা খুলে দিচ্ছিল একের পর এক- মুক্তি সিনেমার কথা মনে পড়ছিল । ছোটোবেলায় টিভিতে মুক্তি দেখেছিল স্মিতা- হাতীর মরে যাওয়া দেখে খুব কেঁদেছিল; সেই সিনেমায় প্রথম সীনে একটার পর একটা দরজা খুলে যাচ্ছিল এই রকম- ঠাকুমার কথা মনে হ'ল স্মিতার, মা'র কথা, বাবা জেঠু কীভাবে একবার ঝড়ের পরে ভাঙা শিউলিগাছকে খাড়া করেছিল- সেই সব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল সে - এই যেন সেদিন । দিন কীভাবে কেটে যায়- মানুষ সহজে একথা বলে। এবার স্মিতার এখানে পৌঁছোনোর দিন, গেট খুলে ঢুকতেই বাগানে পায়েলকে দেখেছিল- ভেজা জামা কাপড় দড়িতে মেলে দিচ্ছে ; জেম্মার শাড়ির পাশ দিয়ে ট্রলি ব্যাগ টেনে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে প্রথমে ডিটারজেন্টের হাল্কা গন্ধ তারপর শিউলির বাস পেয়েছিল সে। এই সব গন্ধ স্মৃতির অংশ হয়ে গেল। সময় যে কী দ্রুতগামী- ভাবতে মাথা টলটল করছিল স্মিতার।

    এর আগে স্মিতা যখন কলকাতায় এসেছে, মাসখানেকের বেশি থাকে নি- পঙ্কজ একা কী করে সব সামলাবে, বুল্টি, বনময়ূর, ওর সাজানো ঘরদোর …. এবারে এলো-পুজোর মুখে; এতদিন থেকে যেতে পারবে ভাবে নি। স্কুলের চাকরি ছেড়ে এসেছিল, ফিরে গিয়ে আবার কিছু একটা পেয়ে যাবে -এরকম ভেবেছিল। আসবার সময় বনময়ূরের মাথায় হাত বুলিয়ে, পঙ্কজ আর বুল্টিকে বিবিধ নির্দেশ দিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে আগামী অনিশ্চয়তার কথা ভেবে চোখ মুছেছিল। জেম্মা নেই- একমাস হয়ে গেছে; পায়েল আর ধনঞ্জয়ের দায়িত্বে এ' বাড়ি রেখে সে এখন ফিরে যেতেই পারে- অথচ আজ বিকেলে এই মুহূর্তে স্মিতা যেতে চাইছে না। সে যেন এখন দেখতে চাইছে, আপের গাড়ি তাকে কোথায় নিয়ে যায়। পুষ্করিণীর জলের তলায় যে শহর সে শৈশবে দেখেছিল, সে শহরকে কখনও তার গন্তব্য মনে হয়; কিন্তু সে শহরের অবস্থান আপের না ডাউনের লাইনের শেষে স্মিতা জানে না। চাকরি ছেড়ে, সংসার ছেড়ে এ যেন তার সন্ন্যাস নেওয়া- পঙ্কজের নিজস্ব গল্প খুঁজে পাওয়া কী সত্যিই এত জরুরী- জেম্মা চলে যাওয়ার পরে সে সংশয়ে ভোগে আজকাল। কখনও মনে হয়, ফিরে যায়। তারপর ভাবে, ফিরেই তো এসেছে। কাকে যাওয়া বলে? ফেরা বলে কাকে?

    -দিদি, ঘুগনি করেছি, খাবে?
    -অল্প দে-
    -কাঁচা লংকা, পেঁয়াজকুচি দেব তো?
    -দিস
    -দিদি, কাল রাতে ও সাহেবগলির দিকে গিয়েছিল। তুমি দোতলায় ফোনে কথা বলছিলে, তাই আর ডাকে নি -

    পঙ্কজের নিজস্ব গল্প খুঁজতে চাইছিল স্মিতা। অথচ কীভাবে শুরু করবে -জানা ছিল না। সাহেবগলির জীবন নিয়ে পঙ্কজের আড়ষ্টতাহেতু স্মিতা ঐ অঞ্চলকেই স্টার্টিং পয়েন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছিল। অথচ জেম্মার অসুস্থতা তাকে হাসপাতাল, আর বাড়ির চৌহদ্দিতে বেঁধে রেখেছিল দীর্ঘদিন। উপায়ান্তর না দেখে, সে ধনঞ্জয়কে পঙ্কজের বাবা, মা র নাম লিখে দিয়েছিল; বলেছিল, সাহেবগলি অঞ্চলে চেনা জানা কেউ থাকলে খোঁজ নিতে - যদি কোনো পুরোনো বাসিন্দা এঁদের মনে করতে পারেন। এইটুকুই বলেছিল স্মিতা। এই দুটি নামের সঙ্গে তার সম্পর্ক ধনঞ্জয়ের কাছে খুলে বলে নি। ধনঞ্জয়ের মামাতো ভাইয়ের দোকান ঐ অঞ্চলে - সেখানে খোঁজ নেবে বলেছিল ধনঞ্জয়। কিন্তু সাহেবগলির বিস্ফোরণ সে পথে বাধা হয়- ধনঞ্জয়ের ভাইয়ের দোকান বন্ধ ছিল বহুদিন। উপরন্তু গলির মুখে পুলিশের ব্যারিকেড। অবশেষে এই সপ্তাহে ধনঞ্জয় ঐ দিকে যেতে পেরেছে।

    ধনঞ্জয় হাতের মাটি ধুয়ে বারান্দার দিকে আসছিল। কোনো খবর আনতে পারে নি ধনঞ্জয়- হাঁটার ভঙ্গিতেই টের পেয়েছিল স্মিতা।
    -ভাই ঐ নামে কাউকে চেনে না। খদ্দেরদের মধ্যে যারা বুড়ো মানুষ, তাদেরও জিগ্যেস করেছিল । কেউ কিছু বলতে পরে নি। আর একদিন যাব দিদি?
    - না। লাভ নেই। দেখি, আমিই একদিন ঘুরে আসব-
    রোদের তাত বাড়ছে । স্মিতা বারান্দা থেকে ঘরে এল, দোতলায় উঠল সটান। রোদে রোদে ঘর ভ'রে আছে- তেতে উঠবে এবার। স্মিতা পর্দা টেনে দিল।





    বিক্রম চাঁদে পৌঁছে গেলে, মিঠু ফিরে আসবে - এ ধারণা সনতের মনে বদ্ধমূল হচ্ছিল দিন দিন। ধারণার গোড়ায় কোনো শিকড়বাকড় নেই- সনৎ সেদিকে চোখ ঠেরেছিল বরং আগায় ঝুলে থাকা ফুল ফলের সম্ভাবনাকে আঁকড়ে ধরছিল- যতই সে' সম্ভার তার দিকে নুয়ে আসছিল; তাদের স্বাদে গন্ধে ক্রমশ সে গোড়ার কথা বিস্মৃত হচ্ছিল, চন্দ্রযানের লঞ্চিংএর জন্য নিজেও প্রস্তুত হচ্ছিল - একটা বড় উৎসবের আগে যা করে মানুষ। লঞ্চিংএর ডেট জুলাই মাসের চোদ্দোই । সনৎ ঐ সময় দুদিন ছুটি নিয়ে নিল। নিজের বিয়ের কথা মনে হচ্ছিল সনতের। যেন বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে, কার্ড ছাপা হচ্ছে, সনৎ লজ্জা লজ্জা মুখে অফিসে ছুটির অ্যাপ্লিকেশন দিচ্ছে। সে ইদানিং সর্বত্র এই উৎসবের প্রস্তুতি দেখতে পাচ্ছিল যেন। সবাইকেই মনে হচ্ছিল, তৈরি হচ্ছে । এমনকি তন্ময়ের সঙ্গে ঝগড়াকেও সেই এই প্রস্তুতির অঙ্গ ভাবছিল। গত সপ্তাহেই সনতের তাড়ায় প্রদীপ ডেস্কটপ দিয়ে গেছে। সনৎ ডেস্কটপের সামনে বসল। মোবাইল রাখল টেবিলে। হোয়াটস্যাপ গ্রুপে জোর আলোচনা চলছে- সেখানে লিখবে।

    ইসরোর সাইটে এলকিউ কোয়াড্র্যাঙ্গলে দুটি ল্যান্ডিং সাইটের কথা বলা ছিল। সনৎ খুঁটিয়ে পড়ছিল সব। নোট নিচ্ছিল। ইসরোর সাইট দেখছে, নেট ঘাঁটছে, দু একটা বই কিনেছে সম্প্রতি- তার পাতা উল্টে দেখছিল, লাইনের পর লাইন হাইলাইট করছিল; কখনও পাতা মুড়ে রেখে নিজের খাতায় ডায়াগ্রাম আঁকছিল পর পর; এক ফাঁকে নেট ঘেঁটে ইউ এস জিওলজিকাল সার্ভের তিরিশটা লুনার কোয়াড্র্যাঙ্গলের লেআউট দেখে নিল টুক করে।

    ইসরোর সাইটে সফট ল্যান্ডিং এর খুঁটিনাটি লেখা - তিনটে ক্যামেরা - এলপিডিসি, এলএইচভিসি, এলএইচডিএসি; দুটো কারট্জ অ্যাবাভ ব্যান্ড অলটিমিটার , একটা লেজার অল্টিমিটার, পাঁচটা লিকুইড থার্স্টার, টাচডাউন সেনসর। বিড়বিড় করছিল সনৎ- শব্দগুলো জিভের ডগায় নিয়ে এমনভাবে উচ্চারণ করছিল, যেন সে নিজেই ওখানে উপস্থিত আর বিক্রমের নিরাপত্তার সব দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে চেকলিস্ট হাতে টিক মারছে- গলায় উত্তেজনা আর দায়িত্ববোধ। নতুন বাবাদের মত অনেকটা। চাঁদের পিঠ থেকে একশো কিলোমিটার ওপরে রাফ ব্রেকিং শুরু হবে , তখন বিক্রমের চারটে এঞ্জিন, দুটো অল্টিমিটার এলপিডিসি অন হয়ে যাবে। চারশো মিটার দূরত্বে হোভারিং, তারপরে রি-টারগেটিং স্টেজ; ঠিক দশ মিটার ওপর থেকে সেন্ট্রাল এঞ্জিন চালু হওয়ার কথা - প্যারাবোলিক ডিসেন্ট শুরু হবে। আরো দুটো ডায়াগ্রাম খচাখচ এঁকে নিল সনৎ। এবারে লম্বা পোস্ট করবে গ্রুপে । ফুরফুরে লাগছিল যেন নিজের বিয়ের কার্ডে লাল হলুদ ফোঁটা লাগিয়ে তন্ময়কে দিচ্ছে।

    জানলার পাল্লা খোলা ছিল- সনতের এই টেবিল থেকে হলুদ বাড়ির পুকুর দেখা যায়। আজ পুকুরের কাছে ক্ষিতীশ অনেকক্ষণ ধরে কাজ করছে, যেমন প্রায়ই করে- ছোটো দা দিয়ে ঝোপ ঝাড়, কচুগাছ সাফ করছিল, কার্বলিক অ্যাসিড ছড়াছিল - যেন এখানেও কোন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে; মঞ্চ তৈরি হবে- পুরস্কার বিতরণের অথবা ফাঁসির।





    মানুষ মারা যাওয়ার পরেও, এ জগৎ তাকে সহজে ছাড়ে না। মৃত্যুর প্রমাণপত্র তার নিকটজনকে হাতে করে পৌঁছে দিতে হয়, বেশ কিছু জায়গায় - নিয়মমতো। তারপর মুক্তি। স্মিতা আজ সেই সব কাজ নিয়ে বেরিয়েছে- মিউনিসিপালিটির, বাড়ির কাছের ব্যাঙ্কের সমস্ত ফরমালিটি আজই শেষ করবে। কাজ সেরে, ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়েছে, রোদের তেজে মনে হচ্ছে আবার ভেতরে ঢুকে যায় - এসির ঠান্ডায় বসে থাকে - এমন সময় কেউ ডাকল ওর নাম ধরে। স্মিতা প্রথমে ভাবল ওর সেই পুরোনো রোগ - 'কোন কোন দিন এমন হয়' মোডে চলে গেল স্বভাবতই। তারপর খেয়াল করল, নামের পরে দিদি জুড়ে কেউ ডাকছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল প্রণব। পাড়ার ছেলে। স্মিতার জুনিয়র । ভালো ফুটবল খেলত। ফার্স্ট ডিভিসন , স্টেট লেভেল। সন্তোষ ট্রফিতে মারাত্মক ইনজুরি হয়। খেলার সূত্রেই চাকরি পেয়েছিল। এখন প্রোমোটর। স্মিতা প্রস্তুত ছিল- আজ হোক, কাল হোক , প্রোমোটারকে ফেস করতে হবেই-
    -হ্যাঁ বলুন-
    -আমাকে তুমি বলুন দিদি। আমি তো পল্টনদের ব্যাচ। একটা কথা ছিল, ব্যস্ত থাকলে বাড়িতে যাব সন্ধ্যার দিকে-
    - না না এখানেই বলুন
    -প্লীজ, আপনি বলবেন না। দিদি, বাড়ির ব্যাপারে ভাবলেন কিছু? মাসিমা চলে গেলেন -শুনেছি। আপনারা কি আর এখানে এসে থাকবেন? এরপর বাড়ি তো ফাঁকাই থাকবে, বরং...
    -ভাবি নি কিছু। আমি তো আছি এখন-
    -কতদিন থাকবেন আর?
    - ঠিক নেই
    -কিছু ঠিক করলে জানাবেন আমাকে। সেদিন মা খুব বলছিল আপনার কথা- কী না করল জেঠিমার জন্য-ঘর বর ছেড়ে-
    স্মিতা আর শুনতে চাইছিল না। হাসল। হাত তুলে নমস্কার করে অটো নিল।

    বিকেলে সনৎকে খেয়াল করল স্মিতা। সাদা গেঞ্জি পাজামা, দীর্ঘদেহী মানুষ ছাদে পায়চারি করছে। শিখাজেঠির মৃতদেহের পাশে বালক সোনুর কথা মনে হল আবার। পায়েলকে ডাকল স্মিতা -" এই লোকটার কথাই বলছিলি?"
    - এই লোকটাই। অফিস যায় নি আজ। নইলে এই সময় বাড়ি থাকে না-
    -কোথায় টেলিস্কোপ লাগিয়েছে বলছিলি?
    -পুকুরের দিকটায়, এখান থেকে দেখতে পাবে না
    -দিদি, সেদিন ও লোকটাকে সাহেবগলিতে দেখেছে
    -যেদিন ধনঞ্জয় গিয়েছিল, সে দিন?
    -ও তিন চারদিন গিয়েছিল । রোজই গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে
    -সে তো হতেই পারে-
    -আমার দেওরের দোকান আছে ওখানে- স্বপন-
    -হ্যাঁ জানি
    - স্বপন বলেছে, লোকটার শ্বশুরবাড়ি ঐদিকেই কোথাও নাকী- আচ্ছা দিদি, বৌ তো ছেড়ে গেছে, তাও ওখানে ঘুরঘুর করা কি ঠিক? ও বলছিল...
    এই বিকেলে জগতের যাবতীয় পথঘাট যেন সাহেবগলির দিকে যাচ্ছে। অবাক লাগছিল স্মিতার। কৌতূহল হচ্ছিল সনতকে নিয়ে। পায়েলের সঙ্গে আলোচনা করতেও ইচ্ছা করছিল না অথচ।
    - লোকটা তোদের কখনও ডিস্টার্ব করেছে? পুলিশে একবার জানিয়ে রাখব নাকি?
    - না, কিছু করে নি। তাছাড়া আমরা তো জানলা দরজা সব বন্ধই করে রাখি। জানলা থেকে সরে এসো দিদি। লোকটা তাকাচ্ছে।





    সনতকে আলসেমিতে পেয়েছিল -সকালে জ্বর জ্বর লাগছিল, বেলা বাড়লে বুঝল -স্রেফ আলসেমি। সমস্ত দিন ঘুমিয়েই কাটালো আজ। অফিস মায়া, তন্ময় মায়া, ঝগড়া মায়া , চন্দ্রযান, বিক্রম সবই মায়া হয়ে গেল গভীর ঘুমে। নিশ্ছিদ্র ঘুম- সিকিখানা স্বপ্নও উঁকি মারে নি। ধড়মড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে দেখে বিকেল হয়ে গেছে। মন্টুর মা চাবি খুলে রান্নাঘরে ঢুকে রুটি করছে।

    -খুব ঘুমাচ্ছিলেন দাদা। অফিস বেরোন নি? চা খাবেন?
    সনৎ মাথা নেড়ে ছাদে এল। এতগুলো ঘন্টা সে যে স্রেফ ঘুমিয়ে কাটালো - অবিশ্বাস্য লাগল প্রথমে। তারপর ভয় করে উঠল- এরকম যদি হয় বাকি জীবন? চন্দ্রযান নেই। বিক্রম নেই। কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা নেই। শুধু ঘুম আছে- একবার শুধু চোখের ওপর এসে বসবে- প্রথমে আলতো করে বসবে, যেন পালকের মত হালকা , তারপর ভারি হবে আস্তে আস্তে- চোখের পাতা খুলে রাখা যাবে না, আরও ভারি হবে একসময়, তখন অনুভব লুপ্ত , বোধ লুপ্ত, সমস্ত চিন্তা অপনোদিত। মৃত্যু কী এইরকম? সনৎ বুকে হাত বোলালো, ডান হাত ভাঁজ করে বুকের বাঁ দিকে রাখল কিছুক্ষণ-

    সনতের চোখের সামনে বিকেল থেকে সন্ধ্যা হয়ে রাত্রি নামছিল। গোটা আকাশের রং বদলে যাচ্ছিল নীল থেকে কমলায়, হলুদে, তারপর ঘন নীলে- খানিকটা ধূসর নাছোড়ের মত লেগেছিল আকাশের মাথার দিকে। ও' বাড়ির জানলা থেকে আলো এসে পড়ছিল পুকুরপাড়ে। শঙ্খ বাজল কোথাও। আবছা কাঁসর ঘন্টা। কুকুর ডাকল। রিক্সার হর্ন বেজে উঠে চুপ করে গেল। খেয়াল করলে তারাদের একে একে ফুটে ওঠা দেখা যায় এই সময় - সনৎ তারা গুণছিল -এক দুই তিন চার পাঁচ …. একটা দলছুট পাখি ডানা ঝাপটে বাসায় ফিরল এইমাত্র। পুকুরের ঠিক ওপরে আকাশের একফালি অংশে কমলা হলুদ আর নীলের স্তর কিছুক্ষণ স্থির হয়ে রইল। তারপর কালো হয়ে গেল। কারমান লাইন যেন এখান থেকে শুরু হচ্ছে- ট্রোপোস্ফীয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফীয়ার, মেসোস্ফিয়ার শেষ হয়ে স্পেস শুরু হয়ে যাচ্ছে এই পুকুরের ঠিক ওপরের আকাশে কোথাও- সনতের মনে হচ্ছিল।



    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ | ২২৯০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য | 43.25.***.*** | ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:২৯502328
  • বহু পুরনো একটা সিনেমা, মুক্তি- র অনুপঙ্খে পর্বের কিছু অংশের চলন, স্মূতির দরজা খুলে যাওয়া, অনুরণন... ; অন্যদিকে চন্দ্রাভিযান.... অসাধারণ বুনন..... 
  • বিদিশা দাশ | 2401:4900:1047:c87c:0:6c:552:***:*** | ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:১৮502330
  • আপের ট্রেনএর ও তো শেষ স্টেশন আছে,তারপর ডাউনেই ফিরতে হয়।আর মহাকাশ ফুঁড়ে কি বেরনো যায়? তবু সাত রঙ মিলে রামধনুর উপপাদ্য 'মেলাবেন তিনি মেলাবেন'
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন