সারদা সুইটসের সামনে রসগোল্লার রস দিয়ে কচুরি খাচ্ছিল প্রফুল্ল ; একটু আগে সুলভে গিয়ে হালকা হয়েছে, তারপর হাত মুখ ধুয়ে দোকানের সামনে এসে বসেছে ; সকালের এই সময় গলির বাতাসে টক গন্ধের একটা সর পড়ে থাকে। বাজার যাওয়ার সময় লোকজন নাকে রুমাল দেয়, থুতু ফেলে। তারপর সুনীল এসে দোকানের শাটার তোলে, গোপাল দু ' বালতি জল ঢালে রাস্তায়, হরি কচুরি ভাজার তেল গরম করে - তখন বাসি গন্ধের সর ছিঁড়ে যায়। সেই ফাঁক দিয়ে উনুনের ধোঁয়া ঢোকে, তার পিছনে সাইকেলে খবরের কাগজ, আর কাঁসি, বিলু, মোটকু সহ প্রফুল্ল। সুনীল একটা ভাঁড়ে বাসি রস আর কচুরি প্রফুল্লকে দিয়ে হাতজোড় করে রোজ, তারপর দোকানে ধূপ ঘুরিয়ে কাউন্টারে বসে।প্রফুল্ল প্রথম কচুরিটা চার টুকরো করে কাঁসি বিলু আর মোটকুকে দিয়ে রসে চুমুক দেয়। আস্তে আস্তে দেড়শো দুশো বছরের পুরোনো ঘরদোরের ফাঁক ফোকর দিয়ে তীক্ষ্ণ বর্শাফলকের মত রোদ ঢুকতে থাকে গলিতে। প্রফুল্ল পিঠ ফিরিয়ে বসে। তারপর বড়রাস্তার দিকে তাকায় - চায়ের দোকান ট্রাম লাইন পেরিয়ে কালীবাড়ি - চামর দুলিয়ে আরতি হচ্ছে ; কাঁসি, ঘন্টার আওয়াজ ট্রামলাইন পেরিয়ে এই গলিতে ঢুকে পড়ে। সকাল হয়ে যায়।
প্রফুল্ল কর্পোরেশনের কলে হাত ধুয়ে মন্দিরের দিকে হাঁটে - মা কালীকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করতে গেলে ইদানিং পেটের তলায় আলতো কাঁপন টের পায় প্রফুল্ল, শরীরের মধ্যে খুব একটা আরাম হয় তখন - ফুটপাথ ছেড়ে আর উঠতে ইচ্ছে করে না।
"কালীবাড়ির ডানকোণের বাঁ হাতি রাস্তার অন্তত একশ ফুট নিচে তখন মাটি কাটছে চন্ডী। অ্যাসেম্ব্লি শেষ - চন্ডীর সামনে ফ্রন্ট শিল্ড, মিডল শিল্ড, কাটার হেড ; পিছনের অংশে লম্বা ব্যাকাপ ইউনিটে ইরেকটর, স্ক্রু কনভেয়র । বিশাল ক্রেন চন্ডীকে স্টীল ক্রেডলের ওপর আস্তে আস্তে নামিয়ে দিয়েছিল। তারপর হাইড্রলিক সিলিন্ডার তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কালীমূর্তির পায়ের তলায় শিবের বদলে চন্ডীর উপস্থিতি একটু আজব। আসলে এই অতিকায় টিবিএমকে চন্ডী নাম দেওয়া হয়েছিল অন্য কারণে " লিখতে লিখতে এইখানে দম নিল সাহিল - এই সাইটের জুনিয়র এঞ্জিনিয়র ; চা খেতে খেতে মোবাইলে টাইপ করছিল ; একটা উপন্যাস লেখার কথা ভাবে আজকাল - নোটস রাখে।
" চন্ডীর নাম টিবিএম এস৬১৫। কাজ শুরুর আগে বোরিং মেশিনগুলোর একটা নাম দেওয়া হয় সাইটে - ট্র্যাডিশনল রিচুয়াল। গল্পে আছে, ভগবান নাকি বারবারা নামে একটি মেয়েকে লুকিয়ে রাখতে পৃথিবীর মুখ খুলে দিয়েছিলেন। ষোড়শ শতক থেকে তাই যে কোনো টানেলিং অপারেশনের আগে সেন্ট বারবারাকে স্মরণ করে কাজ শুরুর চল। বোরিং মেশিনের নাম রাখা হয় কোনো মহিলার নামে যিনি রক্ষা করবেন মাটির তলার কর্মকান্ড, মানুষজন। আমাদের এই চন্ডী কে দুর্গার অবতার ভাবাই যায় - কিন্তু গল্পটা অন্য। এই প্রজেক্টেই ছিলেন এক থাই এঞ্জিনিয়র - চান্ডী মুখন - মেশিনের নাম ওঁর নামে। মুখন এখন সন্ন্যাসী। "
চায়ের কাপ রেখে মোবাইল পকেটে ঢোকালো সাহিল। লাইন ভাবতে ভাবতেই হার্ড হ্যাট চাপালো মাথায়। সাহিলের কাজ আপাতত মাটির ওপরে। আর এ বিল এর কাজটা দেখে ও, স্কেডিউলিং, প্রগ্রেস ট্র্যাকিং করে তপনের সঙ্গে, আর অটোক্যাডে কিছু লে আউট ড্রয়িং । পারমিন্দার বলছিল, সম্ভবত একটা শাফলিং হবে - সাহিলকে এরপর সয়েল কোল্যাপসিংএর কিছু কাজ করতে হবে। সাহিল সাবস্ট্রাকচারে কাজ করতে চাইছে দীর্ঘদিন ; অন্যত্র সে এই কাজ করেছে - এই যে অর্ধসমাপ্ত সুড়ঙ্গর পেটের মধ্যে ঢুকে পড়া, চারদিকে যান্ত্রিক সব শব্দ, বিবিধ ব্যাসার্ধের অজস্র পাইপ, কেবল, ধাতব বস্তুর জটলা - তার মনে হত সে এক ভেঙে পড়া উড়োজাহাজের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, যেন আশেপাশে অনেক কিছু হয়ে চলেছে এবং হবে অথচ তার নিজের বেঁচে থাকা ব্যতীত আর কোনোদিকে খেয়াল নেই - সব আওয়াজ, সব আলো অন্ধকার পিন্ড পাকিয়ে যেন তার আপন হৃদয়ের ধুকপুকে এসে দাঁড়িয়েছে। মাটির ওপরে দাঁড়িয়ে এই অনুভূতি অসম্ভব অথচ সে চাইছিল, এই সব কথা তার লেখায় আসুক। পারমিন্দরের সঙ্গে সয়েল কোল্যাপসিংএর কাজটা নিয়ে কথা বলবে, ভাবছিল সাহিল।
এঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বেরোনোর পরে ক্যাম্পাস থেকেই তার চাকরি হয়ে গিয়েছিল কলকাতা থেকে দূরে। লেখালেখির উৎসাহ তাকে ফিরিয়ে এনেছিল কলকাতায়। সারাদিনের কাজের শেষে, নিজের ছোটো ঘরে লেখা হ ' ত না ; সাহিল ক্রমশ বুঝেছিল, নির্জনতায় সে লিখতে পারবে না, একটা শহর দরকার। চাকরি ছেড়ে আচমকা কলকাতায় ফিরে আসা তার মা বাবা আত্মীয়কুল পছন্দ করে নি। কিন্তু সে লেখাকে পেয়ে যায় এবং কঙ্কণাকে। আর এক বছরের মধ্যে এই চাকরি। কলকাতায় ফেরার পরে ছোটো গল্প, কবিতা লিখছিল সে অনায়াস। কঙ্কণার সঙ্গে তার প্রথম শরীর হয়েছিল এক দুপুরে এবং সে আবিষ্কার করেছিল তার প্রতিদিনের দেখা কঙ্কণার থেকে অন্য এক কঙ্কনা বেরিয়ে আসছে। সে উত্তেজিত হচ্ছিল, কামার্ত হচ্ছিল ; একই সঙ্গে কখনও মনে হচ্ছিল এই কঙ্কণা তার নিজের সৃষ্টি, পরক্ষণেই মনে হচ্ছিল কঙ্কণা তাকে তৈরি করছে নতুন করে - কামের পরেই যে বোধ তাকে ক্রমশ অধিকার করে নিচ্ছিল তাতে যুগপৎ মায়া আর বিস্ময় ছিল। বিস্ময় এই জন্য যে এই মেয়েটি যাকে সে চুমু খাচ্ছে, কোমর জড়িয়ে বিছানায় নিচ্ছে, যার শরীরের প্রতিটি ইঞ্চি আবিষ্কার করতে চাইছে সে, যাকে ঘিরে তার প্রবলতম কাম জাগছে সেই মেয়েটির প্রতি সেই মুহূর্তে তার অন্য একটি অনুভূতি হচ্ছে যার নাম সে জানে না। কখনও মনে হয়েছে, কঙ্কণা ফ্রক পরা খুকী হয়ে যাক ওর চোখের সামনে, সাহিল তাকে কোলে করে চাঁদ দেখাক, আবার মনে হয়েছিল এই মেয়েটির হাত ধরে সে হেঁটে চলুক বনপথ ধরে - কঙ্কণার হাতে তার হাত অথচ কোনো শারীরিক অনুভূতি নেই - শুধু কঙ্কণার কব্জির কাছে আলতো করে ছুঁয়ে থাকলে, নির্জন পথে মেয়েটির হৃদস্পন্দনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে আর ভয় হচ্ছে যেন এই শব্দ এক্ষুণি চাপা পড়ে যাবে অন্য শব্দে । অথচ সে মেয়েটির হাত ধরে কোনো লোকালয়ে যেতে চাইছিল। বস্তুত যেন সে একই সঙ্গে নির্জনতা আর কোলাহলকে যাচ্ঞা করেছে। তার হতভম্ব লাগছিল।কঙ্কণাকে জাপটে ধরে সাহিল শব্দ খুঁজেছিল তার নিজের এযাবৎ লেখা থেকে ; আতিপাঁতি করে খুঁজছিল সাহিল আর তার কবিতা, তার গল্প তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিল বারবার। কঙ্কণার শরীর থেকে নেমে যেতে যেতে সে বুঝেছিল তাকে শব্দ খুঁজে যেতে হবে।
মন্দিরের সামনের ফুটপাথে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত সেরে প্রফুল্ল দোকানে দোকানে খবরের কাগজ খুঁজছিল। রোদে বসে পড়বে। কচুরি, রসগোল্লার রসে পেট ভরে থাকে অনেকক্ষণ। দুপুরে আর কিছু জোটে না। তিনটে নাগাদ কাঁসি, বিলু খেতে যায় বড়রাস্তার দিকে। ওদের সঙ্গে গিয়ে বসে থাকলে এক গাল ভাত পেয়ে যায় প্রফুল্ল। কখনও বাসি রুটি। সন্ধ্যে হলে মন্দিরের সামনের ফুটপাথে পড়ে থাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাতের ভঙ্গিতে - ভক্তরা আসে, ঘন্টা বাজায়, মূর্তি প্রণাম করে দক্ষিণার বাক্সে আর প্রফুল্লকে দু ' পাঁচ টাকা দেয়। পেট পেতে পড়ে থাকতে থাকতে মনে হয় মাটির তলার ঐ কাঁপুনি ওর পেটে একটা বিরাট খোঁদল তৈরি করছে - যেন বিরাট এক হাঁ যেখানে সব ঢুকে যেতে পারে সব কিছু - এই দোকান বাজার, বাড়ি ঘর, কাঁসি, পটল, সুনীল, মা কালী - সব, সব। প্রফুল্ল ধড়মড় করে উঠে আলো জ্বলা বাড়ি খুঁজে বেড়ায় তখন। আগে, এ ' অঞ্চলে ব্যান্ডপার্টির চল ছিল - সে ' দলের পিছন পিছন চলে যেতে পারলেই টুনি বাল্বের জ্বলা নেবা আর লুচির গন্ধ। গেটের পাশে ঘাপটি মেরে থাকলেই মাংসের ঝোল ভাত একদম গ্যারান্টিড। সুনীলের দোকানের উল্টোদিকেই একটা ব্যান্ড ছিল - জয় মা ব্যান্ড। দোকানের ফুটপাথের ওপর লাল কোট রোদে দিলেই প্রফুল্ল বুঝে যেত আজ মাংস ভাতের দিন তারপর পিছু নিত। মেরে ইয়ার কে শাদি হ্যায় গুনগুন করতে করতে পাড়ায় ফিরত ভর পেটে।
আজ কাগজে একটা বিয়ের খবর খুঁটিয়ে পড়ছিল প্রফুল্ল। কী সুন্দর বর বৌ। ফিল্মস্টার। ইতালিতে নদীর ধারে বিয়ে করছে। সুন্দর একটা নৌকোয় চড়েছে বর বৌ। তারপর বর নামছে, বরের হাত ধরে লাল শাড়ি পরা বৌ। বরটা হাসছে হা হা করে। চাপ দাড়ি, শাদা শাদা দাঁত। টুপি মাথায় যে ছেলেটা চা খেতে আসে রোজ - তার কথা মনে হল প্রফুল্লর। চা খায়, ফোন নিয়ে খুটখাট করে ; সন্ধ্যার দিকে একটা মেয়ের সঙ্গে ওকে রোজ হাঁটতে দেখে প্রফুল্ল। মেয়েটা কি টুপিমাথায় ছেলেটার বৌ ?
এই ফিল্মস্টার বৌটা কী সুন্দর ঘোমটা দেওয়া। হাতে মেহন্দি। ওদের বিয়েতে কী খাইয়েছে - খুঁজছিল প্রফুল্ল।
" ধরা যাক, একগাদা তারা, ছায়াপথ, চাঁদ টাঁদ পরে আকাশ খুব সেজেছে আজ রাতে। ভ্যান গগের ছবির মত দেখাচ্ছে। আকাশের তলায় এই মুহূর্তে একটা রাস্তা, একটু আগে নদী ছিল। রাস্তা আপাতত সোজা চলেছে তারপর একটা মোড় থেকে দুটো আলাদা পথ হয়ে যাবে। রাস্তায় ঠিক দুজন - তারা ঐ মোড় পেরিয়ে এসেছে না মোড়ের দিকে চলেছে এতদূর থেকে বোঝা যাচ্ছে না - দুজনকে পিঁপড়ের মত দেখাচ্ছে। একজন লেখক। পাঠক অন্যজন। কথা বলছে -
- সব পাড়াতেই একজন ম্যাজিশিয়ান থাকে
- সব পাড়াতেই ?
- না কী জীবনে ? সবার জীবনে -
- সবার জীবনে ?
- একজন জাদুকর - জাস্ট জাদুকাঠি হাতে জাদুকর - থাকে না ?
- কী জানি! কী করে বুঝব!
- পাড়া বদলে যায় যখন -
- সে তো সময়
- জীবন বদলে যায় যখন -
- সে তো প্রেম
- না তুমি নিজেই যখন -
- মানে তুমিই জাদুকর ?
- জানি না।
লোকে বলে, চান্ডী মুখন জাদু জানত -
এসপ্ল্যানেড শিয়ালদা টানেল খোঁড়া চলছে - টিবিএম আটকে গিয়েছিল মাটির তলায় - কিছুতেই চালানো যায় না। এঞ্জিনিয়াররা প্রচুর চেষ্টা করল তারপর চান্ডী মুখন এল। মাটির নিচে ঠিক যেইখানে বোরিং মেশিন আটকে রয়েছে, চান্ডী এসে দাঁড়াল সেইখানে - টানেলের ওপর ; চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল প্রস্তরবৎ, হাত জোড় করে। কিছুক্ষণ পরে যেই বলল - নাউ স্টার্ট দ্য মেশিন, আবার চলতে শুরু করল টিবিএম।
দিল্লিতে লাজপতনগরের মেট্রো টানেল খোঁড়ার সময়ও তাই - আটকে গিয়েছিল মেশিন। একটা মুরগি ধরে গলা কাটল চান্ডী, রক্ত ছড়াল মাটিতে, বিড়বিড় করেছিল কী সব - অমনি আবার ঘুরতে শুরু করল কাটার হেড - এগোতে শুরু করল বোরিং মেশিন।
চান্ডী টীমে থাকবে না বেশিদিন - সবাই জানত। কোন ফকিরকে ওর কথা দেওয়া ছিল । চান্ডী র মা অসুস্থ যখন , কোনো এক দরবেশের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিল ; বলেছিল - মা কে ভালো করে দাও, আর কুড়ি বছর পরে সব ছেড়ে দেব। কথা রেখেছিল। প্রজেক্ট ম্যানেজারের চাকরি, স্ত্রী, কন্যা , সংসার ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়ে গেল। "
চায়ের দোকানে কঙ্কণার পাশে বসে একটানা পড়ে যাচ্ছিল সাহিল । থেমে গিয়ে লাজুক হাসল তারপর - " এডিট করে ব্লগে দেব। "
- চাকরি ছেড়ে দাও। লেখায় কনসেন্ট্রেট করো। সারাজীবন ব্লগ লিখবে নাকি?
- পুরোনো দিনের নায়িকার মত কথা বলছ। চাকরি ছেড়ে দিলে চলবে?
- লেখা নিয়ে সিরিয়াস হলে চাকরি ছাড়তে হবে। এই যেমন ধরো -
- থাক থাক - কী কী নাম নেবে জানি। ওঁদের সঙ্গে আমার তুলনা ?
- চান্ডী মুখনের নাম তো নিতে পারি।
- তা পারো। শোনো, একটা হেল্প লাগবে। তুমি কোনো জাদুকরকে চেনো ?
- এটা কী তোমার উপন্যাসের লাইন না কি সিরিয়াসলি বলছ ? কখন যে উপন্যাসে থাকছ আর কখন বাইরে বেরোচ্ছো -
- দূর, শুরুই হ'ল না উপন্যাস! আরে বাবা, সিরিয়াস কথা। একজন জাদুকরের ইন্টারভিউ নেব। লেখার জন্য লাগবে।
- এ তো সোজা ব্যাপার। পি সি সরকারকে ফোন করে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নাও
- সে ইন্টারভিউ তো পুরোনো ম্যাগাজিন, ইভন নেটেই পাবো ; ওরকম নয় ; বিখ্যাত কাউকে চাই না ঠিক - মানে ধরো, এই সব নিয়ে চর্চা করে, নিজস্ব হয়ত একটা দর্শন আছে - ম্যাজিকের দর্শন - শো করে কিন্তু বিখ্যাত হতে চায় না -
- সে তো কঠিন ব্যাপার। সেই রকম জাদুকর বা জাদুকরীর কথা কেই বা জানবে ?
- কেউ না কেউ জানবে শিওর, আমার কাজ তাকে খোঁজা -
- সেও কঠিন। দাঁড়াও দাঁড়াও -
- কী ?
- আছেন একজন। ম্যাজিকের ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন, কাগজে আর্টিকল দেখেছি। কাল ইউনি গিয়ে প্রণতিদিকে জিগ্যেস করব।
সেই সময় বড় রাস্তার শেষে সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। চোখে রোদ পড়ছিল প্রফুল্লর। রুটের বাস, অটো, ট্যাক্সি তে আলো রেফ্লেক্ট করছিল এত যে রোদে রোদে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল যাবতীয় যানবাহন, রাস্তাঘাট, ঘরদোর। যেন সূর্য গিলে খাচ্ছিল সব - এত খিদে রোদের। প্রফুল্ল মন্দিরের ফুটপাথে ইঁটের টুকরো দিয়ে কালীঠাকুর আঁকলো বড় করে - ইয়া লম্বা জিভ আঁকলো, টুপ টুপ করে জিভের জল পড়ছে - তাও আঁকল - তারপর কালীর জিভের কাছে প্রণিপাত করতে করতে মাটির তলার কাঁপুনি আবার টের পেল । এই পথ বেয়ে একদিন একটা জাহাজ আসবে গলিতে - প্রফুল্লর মনে হচ্ছিল।