ইংল্যান্ডের কর্ণওয়েল এর কাছে একটা গ্রাম – সেই ১৭৯০ সালের কথা। উইলিয়াম গ্রেগর অভ্যাসমত ভোরবেলা হাঁটতে বেড়িয়ে সেদিন গ্রামের থেকে একটু দূরেই চলে এসেছেন – আগে এদিকটাই তেমন আসা হয় নি। একটা কর্ণ মিলের পাশে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ এক অদ্ভূত ধরণের কালো রঙের বালি চোখে পড়ল। এমন নয় যে আগে কোনদিন কালো বালি দেখেননি গ্রেগর, কিন্তু সেই সব ক্ষেত্রে কালো বালি মিশে থাকে এমনি বালির সাথে – আর এই বালির টেক্সচারটাও কেমন যে আলাদা মনে হল একটু। গ্রেগর খুব একটা হেলাফেলা ব্যক্তি ছিলেন না – ছিলেন খুব অনিসন্ধিৎসু – ন্যাচারেলিষ্ট বলা হত পরে তাঁদের মত ব্যক্তি দের। ১৭৮৪ সালে কেমব্রীজ থেকে অঙ্ক নিয়ে M.A. পাশ করেছিলেন – বিখ্যাত বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন স্যার হামফ্রী ডেভি। তখন ইংল্যান্ডে ব্যাপার স্যাপার একটু অন্য ধরনের ছিল – গ্রেগর এর মত অনেকেই শহরের বাইরে এসে প্রকৃতির মধ্যে সময় ব্যয় করত।
বেড়াতে বেরিয়ে এটা ওটা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার অভ্যাস গ্রেগরের অনেক দিনের। তাই সাথে করে একটা ব্যাগ নিয়েই বেরোন। সেদিন কাঁধের ব্যাগে ভরে নিলেন কিছু বালি বাড়িতে ফিরে নিজের গবেষণাগারে আরো ভালো করে পরীক্ষা করবেন। বাড়ির গবেষণাগারে দেখতে পেলেন সেই বালিতে আবার চৌম্বক শক্তি রয়েছে। ইন্টারেষ্ট বেড়ে গেল গ্রেগরের। রোজ বেড়াতে বেরিয়ে সেই কালো বালি নিয়ে এসে আরো ভালো করে বিশ্লেষণ করা শুরু করলেন। এইভাবেই তিনি বের করে ফেললেন যে সেই কালো বালিতে সিলিকা, আয়রন ছাড়াও আদপে মিশে আছে এক অজানা পদার্থ – যার নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘মানাকানাইট’। কিন্তু তখনো গ্রেগর জানতেন না তিনি তখন যা আবিষ্কার করছেন ১৫০ বছর পর সেই জিনিস পৃথিবীর ইতিহাস অনেকটা বদলে দেবে!
গ্রেগর প্রথম ‘মানাকানাইট’ এর আবিষ্কার রিপোর্ট করার প্রায় চার বছর পরে এক জার্মান কেমিষ্ট মার্টিন ক্ল্যাপরথ টাইটেনিয়ামের আকরিক রুটাইল থেকে নিষ্কাশন করলেন টাইটেনিয়াম অক্সাইড এবং তিনিই প্রথম এই নতুন পদার্থটির নাম দিলেন ‘টাইটেনিয়াম’ – যে নামটি তিনি ধার নিয়েছিলেন গ্রীক ভগবান ‘টাইটান’ থেকে যাকে এই পৃথিবীতে বন্দী করে রেখেছিল তার বাবা ইউরেনাস। আর এই মার্টিনই কিন্তু আবিষ্কার করেছিলেন ইউরেনিয়াম পদার্থটিরও। দু ক্ষেত্রেই তিনি এমন নাম রেখেছিলেন কারণ ঐ পদার্থ দুটির সব কিছু গুণাগুণ তখনো পর্যন্ত জানা হয়ে ওঠে নি।
এবার প্রশ্ন উঠতে পারে এত কিছু থাকতে হঠাৎ করে টাইটেনিয়াম নিয়ে মেতে উঠলাম কেন আজ? আসলে ওই যে মাঝে মাঝে প্রশ্ন হয় না, কি কি জিনিস কি কি বদলে দিয়েছে – এমন ভাবনার চক্করে পড়ে যাই কখনো কখনো। পদার্থ – ধাতু এই সব নিয়ে কাজ কর্ম করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, ভাই তোমার মতে কোন কোন পদার্থর ব্যবহার পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দিয়েছে – তাহলে আমি কি বলব? এমনিতে দিনের বেশীর ভাগ সময় লোহা-লক্কর নিয়ে কাটাতে হয়। কারণ আমরা যাকে কন্সস্ট্রাকশন মেটিরিয়াল বলি, পৃথিবীতে আজও প্রায় ৯০% এর বেশী ব্যবহার হয় এই লোহা (আসলে ব্যবহৃত হয় ইস্পাত, যা লোহার সাথে কার্বন মিশিয়ে বানানো)। আলমারী ইত্যাদি গোছাতে গিয়ে অমৃতার জিনিস পত্রে হাত দিয়ে সোনা, রূপোও চলে আসে সামনে। এগুলোর বাইরে তাহলে আর কি রয়েছে? লোহা লিষ্টে ঢুকবে কোন সন্দেহ নেই – কিন্তু সোনা/রূপো ঢুকবে কি?
আরো সমস্যা হচ্ছে কয়টা পদার্থের নাম আপনি লিষ্টে তুলবেন, এবং কিসের ভিত্তিতে? তিনটে, পাঁচটা, সাতটা, নয়টা? বেশী নাম বললে আবার লিষ্টি করার কোন অর্থ থাকবে না। তো একদিন ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম নামক তেল কোম্পানীর বহুদিন সিইও থাকা জন ব্রাউনি দেখলাম তাঁর মতের টপ সাতটি পদার্থকে চিহ্নিত করেছেন। খুব ইন্টারেষ্টিং লাগলো – এই সব বড় বড় লোকেরা সাধারণত লিডারশিপ এবং ম্যানেজমেন্ট জাতীয় বই লেখেন যেগুলোতে আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব একটা আগ্রহ নেই। কিন্তু এই সিইও লেখা পড়ে গিয়ে তাঁর পছন্দের ব্যাখ্যায় যুক্তি পেলাম। তিনি যে সাতটি পদার্থ বলেছেন সেগুলি হল – লোহা, কার্বন, সোনা, রূপো, ইউরেনিয়াম, টাইটেনিয়াম এবং সিলিকন।
প্রথমে এমন লিষ্টি দেখলে যা হয় আমারও তাই হল – হেই এটা নেই কেন, সে নেই কেন, তার উল্লেখ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। মাথা ঠান্ডা হলে ভেবে দেখলাম আমার লিষ্টেও খুব সম্ভবত ছটা পদার্থ কমন থাকত – কিন্তু টেনশন হল টাইটেনিয়াম-এর ব্যাপারে। এই পদার্থটির অবদান ঠিক কতটা সেটা একটু খতিয়ে দেখতে ইচ্ছে করল। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম বাকি ছয়টা পদার্থের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আমি সহমত, কেবল টাইটেনিয়াম নিয়ে হালকা ডাউবট আছে।
সেদিক থেকে দেখতে গেলে টাইটেনিয়ামের ব্যপক ব্যবহার আমাদের সমাজে শুরু হয়েছে হালফিলেই একদম। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। তার আগে কেবল মাত্র ল্যাবরেটরীতে এই ধাতুর প্রবল সম্ভাবনা নিয়ে ধাতুবিদরা নিজের মধ্যে গুজগুজ ফুসফুস করত, নিজেদের মধ্যেই রিসার্চ প্রপোজাল লিখত এবং এক ‘বিষ্ময় ধাতু’ পৃথিবীর বুকে ল্যান্ড করাবে বলে খোয়াব দেখত। টাইটেনিয়ামের যা ব্যবহার ছিল তখনো পর্যন্ত তা ওই রঙের ব্যবসায়। শুধু রঙের চক্কর থেকে টাইটেনিয়ামকে টেনে বের করে এনে আজকের দিনে নানাবিধ বাণিজ্যিক ব্যবহারে ঢোকানোর জন্য আমেরিকা এবং তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ানের মধ্যেকার ঠান্ডা যুদ্ধ বিশাল ভূমিকা পালন করেছিল। টাইটেনিয়ামকে এরা প্রথমে মিলিটারী কাজে ব্যবহারের জন্য প্রচুর পয়সা ঢালে রিসার্চে – সেই সব রিসার্চের ফল আমরা আজকে ভোগ করছি মিলিটারীর বাইরের জিনিসেরও।
১৯৯০ এর মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এই শতাব্দীর শুরু কিছু বছর পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে ‘ন্যানো মেটিরিয়াল’ নিয়ে যেমন হাইপ তৈরী হয়েছিল, তেমনি এক জিনিস হয়েছিল টাইটেনিয়াম-কে কেন্দ্র করে। যা কিছু প্রবলেম সব সমস্যার সমাধান নাকি করে দিতে পারবে এই পদার্থ! এই টাইটেনিয়াম প্রীতি প্রায় এক অসুখের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল ধাতুবিদ-দের মাঝে ১৯৮০ দশকে। এই রোগের চালু নাম ছিল “টাইটেনিয়াম অসুখ” – এই রোগের প্রসার বেশ বেড়ে গিয়ে খুব চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
লক্ষণঃ রোগীর মন জুড়ে শুধুই থাকে টাইটেনিয়াম ধাতু। এই রোগে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির খাওয়া থেকে ঘুম সব জুড়ে থাকে টাইটেনিয়াম – এবং অন্য সব ধাতু চিন্তার আশে পাশেই আসে না। ঘন্টার পর ঘন্টা রুগী টাইটেনিয়ামের গুণাগুণ বর্ণণায় ব্যস্ত থাকবেন। টাইটেনিয়ামের বিপক্ষে কেউ কিছু বললে রুগী বিশাল খাপ্পা হয়ে গিয়ে সব বিরুদ্ধ মত উড়িয়ে দেবে ভ্রান্ত বলে।
প্রথম জানা এই রোগের কেসঃ সেই ১৯৫০ সালে প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় পৃথিবীতে। তখনও বেশ কিছু লোকের মধ্যে এই টাইটেনিয়াম রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁরা সবাই টাইটেনিয়ামকে ভাবতে শুরু করেন “বিষ্ময় ধাতু” – মানে এই ধাতু দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং জগতে সমাধান করা যাবে না এমন সমস্যা থাকতেই পারে না বলে তাঁরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন। বেশ কয়েক দশক লেগে গিয়েছিল এই রোগের প্রকোপ কমতে।
আরোগ্যের উপায়ঃ জানা নেই।
মিলিটারী ব্যবহার – বিশেষ করে এরোস্পেস এবং সাবমেরিন দিয়ে শুরু হলেও আজকের দিনে টাইটেনিয়ামের ব্যবহার ছড়িয়ে আছে –
• গাড়ী ও অন্য যানবাহন তৈরীতে
• খেলার সামগ্রী
• স্থাপত্য
• আগ্নেয়াস্ত্র এবং ল্যাপটপ কম্পিউটার
• যন্ত্রপাতি এবং কিচেনের জিনিসপত্র
• জুয়েলারী – ঘড়ি এবং চশমার ফ্রেম সহ
• মেডিক্যাল ইমপ্ল্যান্ট
• সাদা রঙের পিগমেন্ট হিসাবে
তো দেখা যাচ্ছে সাইকেল, যানবাহন, টেনিস র্যাকেট, গলফ খেলার স্টিক থেকে শুরু করে কৃত্রিম হিপ্ এবং হাঁটু প্রতিস্থাপন – এমনকি জুয়েলারীতে ও ঘড়িতেও ঢুকে গেছে টাইটেনিয়াম। একজন ধাতুবিদের কাছে এর থেকে চার্মিং আর কি হতে পারে! টাইটেনিয়াম-এর আঙটি দিয়ে আজকাল বাগদান এবং বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। সামাজিক স্বীকৃতি এই ভাবেই পেয়ে গেছে টাইটেনিয়াম।
ধাতব টাইটেনিয়ামের ব্যবহারের আগে থেকেই টাইটেনিয়াম অক্সাইডকে পিগমেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হত পেন্ট ইন্ডাষ্ট্রিতে সাদা রঙেতে – আর এখনো আরো বেশী করে হয়। ব্যবসার এই দিকটা, আজকের দিনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের দাঁড়িয়েছে। তবে জাষ্ট মনে রাখবেন, আপনার সামনে পিছনে চারিদিকে – যদি সাদা রঙ দেখতে পান, তাহলে জানবেন আপনি অজান্তেই টাইটেনিয়ামের চক্করে ঢুকে পড়েছেন। যেখানে সাদা সেখানেই টাইটেনিয়াম অক্সাইড – সে পেপার, প্লাষ্টিক, খাবার, কসমেটিক্স, সানস্ক্রিন ক্রিম/লোশন, এমনকি আমাদের টুথপেষ্টেও। আজকাল তো ‘টাইটেনিয়াম হোয়াইট’ একটা কালার শেডের নাম বলেই অনেকে বিজ্ঞাপন দেয়। আমার হিতাচি-র ফ্রীজটা মনে হয় এরই দলভুক্ত।
আচ্ছা, গলফ খেলার স্টিক (গলফ ক্লাব যাকে বলে আর কি) এর প্রসঙ্গে কিছু কথা মনে পড়ল। এমনিতে আমার কাছে গলফ প্রচন্ড বোরিং খেলা লাগে – কিন্তু এ জিনিস বড়লোকের খেলা এবং জটিল সেই ব্যাপারে আমার মনে কোন সন্দেহ ছিল না। গলফের ক্লাব ডিজাইন করা খুব গবেষণামূলক কাজ সেটা টের পেলাম পি এইচ ডি করতে গিয়ে। আমরা যেখানে অ্যালুমিনিয়াম, বোয়িং এয়ারক্রাফটের বডি ইত্যাদি নিয়ে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি – তখনই আমাদের পাশের ল্যাবের কিছু ছেলে মাথা ঘামাচ্ছে গলফ ক্লাব নিয়ে। প্রায় গোটা আটেক পিএইচ ডি তখন স্পনসর করছিল রয়েল গলফ ক্লাব এবং আরো কারা যেন। টাইটেনিয়ামের গলফ ক্লাব বানাচ্ছে আর তার এরোডায়নামিক্স টেষ্ট করতে গলফ কোর্স ছুটছে! সে এক মজার পিএইচডি লাইফ ছিল কিছু বন্ধুর। তাই বলছি পরে যদি কোনদিন গলফ ক্লাব দেখেন, ভাববেন না যেন নিমোর নেউল কামারের মত কেউ তাড়াহুড়ো করে অমন শেপে বানিয়েছে তাদের। এর পিছনে অনেক ছাত্রের প্রাণান্তকর বিয়ার পান করার পরিশ্রম লুকিয়ে আছে।
টাইটেনিয়াম এত জনপ্রিয় কেন? দাম তো কম নয়! অনেক কিছু জিনিস আছে যেখানে দামের পরোয়া নেই – কোল্ড ওয়ার সময়ের ব্যাপারটা ছিল তেমন। কিন্তু এখনকার দিনে টাইটেনিয়াম ব্যবহার করতে হলে তার এক সঙ্গত কারণ থাকতে হবে। অনেকক্ষেত্রে টাইটেনিয়াম ব্যবহার করা হয়, কারণ অন্য ধাতু দিয়ে সেই কাজ সারা যাবে না – আর অনেক ক্ষেত্রে টাইটেনিয়াম ব্যবহার করা হয় কারণ এ ধাতু চট করে ক্ষয় না। ক্ষয়ের ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ – আমাদের শরীরে আজকাল যে ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করা হয় তার অনেক কিছুই টাইটেনিয়াম দিয়ে তৈরী। টাইটেনিয়াম আমাদের শরীরের তরল পদার্থের থাকে বিক্রিয়া করে না। ফলে একবার অপারেশন করে ঢুকিয়ে দিলে পাল্টাতে হবে না কোনদিন। তার থেকেও বড় কথা অনেক সময় অন্য ধাতু শরীরের তরলের সাথে বিক্রিয়া করে এমন কিছু বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন করে যারা শরীরের বিষক্রিয়া নিয়ে চলে আসবে। সেই দিক দিয়ে টাইটেনিয়াম সুরিক্ষিত চয়েস।
আর একটা কারণ, যেই কারণের জন্য মিলিটারী প্লেন এবং সাবমেরিনে টাইটেনিয়ামের ব্যবহার চালু হয়েছিল তা হল এই ধাতুর শক্তি বেশী কিন্তু ওজন কম। সব শক্তির লোহার থেকে এই টাইটেনিয়ামের ওজন প্রায় অর্ধেক। ফলে হয় কি এই ধাতুর ‘শক্তি/ওজনের’ যে অনুপাত, তা অনেক বেশী হয় বাকি ধাতু গুলির থেকে। বুঝতেই পারছেন ছিপছিপে চেহারার, কিন্তু প্রচুর শক্তির অধিকারী টাইটেনিয়ামের ডিম্যান্ড কেমন হতে পারে!
স্থাপত্যের ক্ষেত্রেও আজকাল টাইটেনিয়াম খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। নীচের ছবিটি স্পেনের বিলবাও শহরের ‘গুগেনহেয়িম’ মিউজিয়ামের, যেখানে গোটা বাড়িটাই টাইটেনিয়ামের চাদরে মোড়া।
পৃথিবীর বুকে খুব সহজে কি কি পদার্থ পাওয়া যায় তার লিষ্ট বানালে দেখা যাবে টাইটেনিয়ামের স্থান নবম। আর লোহা, অ্যালুমিনিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম ধাতু গুলির পরেই এই টাইটেনিয়াম সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় কোন কিছু বানাতে, মানে স্ট্রাকচারাল কাজে আর কি। ইনফ্যাক্ট আমার মনে হয় টাইটেনিয়াম (আসলে তার যৌগ) আপনারা সবাই দেখেছেন – বীচে বেড়াতে গিয়ে কি কোন কোন সময় বালি তোলার পর সেই বালিতে কিছু কিছু কণার রঙ কালো দেখেছেন? দেখে থাকলে খুব সম্ভবত সেই ‘ব্ল্যাক স্যান্ড’ ছিল টাইটেনিয়ামের এক যৌগ। এবার তাহলে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, বাপু সমুদ্রের বীচে বেড়াতে গিয়ে যে জিনিস কুড়িয়ে পাচ্ছি, সেটা কেমন করে এত মহার্ঘ হতে পারে?
প্রশ্ন ঠিকই করেছেন – কিন্তু একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, বালিতে তো আর আপনি শুদ্ধ টাইটেনিয়াম কুড়িয়ে পান নি! টাইটেনিয়াম প্রচুর লভ্ করে অক্সিজেনকে – কাছে পেলেই জড়িয়ে ধরে এমন টাইট করে যে তা ছাড়ানো খুব চাপের ব্যাপার। টাইটেনিয়াম অক্সাই্ড (যাকে বলে ‘রুটাইল) এবং টাইটেনিয়াম-আয়রন-অক্সাইড (ইলমেনাইট) থেকে শুদ্ধ টাইটেনিয়াম নিষ্কাষন এতই জটিল যে এর জন্য প্রায় ১৫০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল! পদার্থ হিসাবে টাইটেনিয়াম আবিষ্কৃত হয় ১৭৯০ সালে, কিন্তু মাত্র এই সেদিন ১৯৩৮ সালে উইলিয়াম ক্রোল নামে একজন ধাতুবিদের অক্লান্ত প্রেচেষ্টায় বেরোয় সেই টাইটেনিয়াম অক্সাইড থেকে বাণিজ্যিক ভাবে শুদ্ধ টাইটেনিয়াম নিষ্কাষণের উপায়। লুক্সেকবার্গে তাঁর গবেষণাগারটা ১৯৪০ সালে নাৎজিরা দখল করে নিলে ক্রোল আমেরিকা চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। ইমিগ্রেশন ভিসা নিয়ে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ক্রোল এসে উপস্থিত হলেন –শুধু মাত্র কয়েকটা স্যুটকেস এবং নিজের নামের সাথে ৩২ পেটেন্ট নিয়ে। তখন তাঁর বয়স প্রায় ৫০, বিয়ে থা করেন নি – আমেরিকাতে এসে নিজের রিসার্চ চালাতে তিনি বদ্ধপরিকর। ততদিনে তাঁর রিসার্চের কথা আমেরিকাতে ছড়িয়ে পড়েছিল – কনসালটেন্ট হিসাবে কাজ পেতে খুব একটা অসুবিধা হল না। তার পরে অনেক কিছু ঘটে যাবে ক্রোলের সাথে – সংক্ষেপে বলতে গেলে তাঁর সাহায্যে অ্যালবেনিতে ব্যুরো অফ মাইনসে দু-বছরের মধ্যে উৎপাদিত হল প্রায় দু-টন মত টাইটেনিয়াম, যা তখনকার হিসেব মত বিরাট পরিমাণের ছিল।
অনেকে বলেন যে ক্রোল যদি এই টাইটেনিয়াম নিষ্কাষণের পদ্ধতি আবিষ্কার না করতেন তাহলে হয়ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেই কোল্ড-ওয়ার এত তেড়ে ফুঁড়ে উঠত না কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে – যেমন আকাশে (স্পেস) রাজ করার আকাঙ্খা এবং একই ভাবে সমুদ্রে রাজ করার প্রচেষ্টা। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ লড়া হয়েছিল লোহা এবং কার্বন (লোহা আর কার্বন মিলে হয় ইস্পাত বা স্টিল) দিয়ে – ভেবে নেওয়া হল যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে নামতে হলে এবার লড়তে হবে টাইটেনিয়াম এবং ইউরেনিয়ামের সাহায্যে।
টাইটেনিয়ামের ধাতব সম্ভাবনা এমনি টং টং করে উঠেছিল রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের মাথায় যে ১৯৫০ দশকে এরা বিশাল টাকা ঢালতে লাগলেন ক্রোলের নিষ্কাশন পদ্ধতিকে বাণিজ্যিক ভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য। আমেরিকার সিক্রেট সার্ভিসরা নানা বিধ এটা ওটা করে সিদ্ধান্তে পোঁছালো যে আমেরিকা যদি টেক্কা দিয়ে চায় সোভিয়েত ইউনিয়ানকে তাহলে তাদের আকাশের দখল নিতে হবে। এবং সেটা একমাত্র সম্ভব হবে যদি আমেরিকা এমন কিছু প্লেন বানাতে পারে যারা খুব দ্রুত উড়বে এবং অনেক উঁচুতে উঠবে।
হইহই করে নানা কোম্পানী মার্কেটে নেমে পড়ল – ডাও কেমিক্যালস, ডুপন্ট, ইউনিয়ান কার্বাইড, নানা স্টিল বানানোর কোম্পানী ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সব কোম্পানী বেশীর ভাগই ব্যর্থ হল – অনেকে হাল ছেড়ে দেবার যোগাড় করল, অনেকে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করল যে টাইটেনিয়ামের মাধুরী ধরাই থেকে যাবে। এমন সময় সাফল্য এল একটা বিশাল গোপনীয় প্রোজেক্টে – স্পাই প্লেন ব্ল্যাকবার্ড বানাতে সক্ষম হল লকহিড এরোস্পেস কোম্পানি – এই প্লেনে ৯০% এর বেশী টাইটেনিয়াম ব্যবহার হল। সে এক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষ্ময় - এই সুপারসনিক স্পাই প্লেনটির গতিবেগ ছিল শব্দের গতিবেগের থেকে তিন গুণ বেশী – যে কোন সোভিয়েত মিশাইলকে দৌড়ের লড়াইয়ে হেলায় হারিয়ে দেবে – সোভিয়েত থেকে আমেরিকায় খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে চলে আসতে পারবে কয়েক ঘন্টায়। এই বর্তমান সময় ধরলেও ব্ল্যাকবার্ড এর থেকে বেশী জোরে আকাশ পথে চলাচল করা মানুষ বাহিত বাহিত যান আর বানানো হয় নি।
১৯৫০ সাল নাগাদ তখন কোল্ড ওয়ার তুঙ্গে উঠছে ক্রমশ এই দুই দেশের মধ্যে – লকহিড এরোস্পেস কোম্পানী আমেরিকার দিক থেকে ফোরফ্রন্টে – সরকারের থেকে বরাত পেয়েছে এমন প্লেন বানানোর জন্য যা দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করা যাবে সোভিয়েত দেশের উপর। সোভিয়েত ইউনিয়ান যে ঠিক কি করছে মিলিটারী স্ট্র্যাটিজিতে তা জানতে যাকে বলে একদম পাগল পাগল হয়ে যাচ্ছিল আমেরিকা। এবার বলতে পারেন যে স্যাটেলাইট দিয়ে সেই গুপ্তচর বৃত্তি করলে কি অসুবিধা ছিল? প্রথম কথা একটা স্থির অরবিটে স্যাটেলাইট থেকে গুপ্তচরবৃত্তি করলে সেটা টের পেতে বেশী দিন সময় লাগবে না – আর দ্বিতীয়ত তখনকার দিনে স্যাটেলাইটের পাঠানো ছবি গুলো খুক একটা স্পষ্ট হত না মাটিতে জিনিসপত্র চলাফেরা বোঝার জন্য।
লকহিড এরোস্পেস কোম্পানী-র তখনকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেলি জনসন কোম্পানীর সব ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে বললেন, “আমাদের এমন একটা প্লেন বানাতে হবে যা প্রায় ২৭০০০ মিটার উপর দিয়ে যেতে পারে – শব্দের গতিবেগের থেকে তিনগুণ গতিবেগে – ব্যাস তাহলে আমাদের প্লেনের গতিবিধি টের পাবে না ওরা, আর পেলেও আমাদের তাড়া করে ধরতে পারবে না”। ইঞ্জিনিয়াররা গজগজ করতে করতে মিটিং থেকে বেরুলো – ইনি তো বলেই খালাস! এমন প্লেন বানানো যেন মুড়ি-মুড়কি!
একটু ভেবে দেখলে দেখা যাবে জনসনের খুব একটা আলাদা করার কিছু ছিল না – কারণ তখন আমেরিকা যে স্পাই প্লেনগুলো ব্যবহার করত সেগুলো আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল বোম্বার হিসাবে। বলাই বাহুল্য সেগুলো খুব একটা খুব জোরে বা খুব উঁচুতে যেতে পারত না। তাই লকহিড ততদিনে তৈরী করে ফেলেছিল U-2 স্পাই প্লেন যা মাটি থেকে ২১ কিলোমিটার উঁচুতে উড়তে পারবে এবং ঘন্টায় প্রায় ৮০০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারবে। কিন্তু ওদিকে সোভিয়েত বসে নেই – তারাও অ্যান্টি স্পাই-প্লেন টেকনোলজি তৈরী করে ফেলেছিল যা U-2 কে স্পট এবং শ্যুট করতে পারে।
এইসব কারণেই ১৯৬০ সালের গোড়ার দিকে লকহিড নতুন প্রোজেক্টে হাত দিতে বাধ্য হয়েছিল। কাজ শুরু হল প্রোজেক্টের – নাম “সুঙ্ক ওয়ার্কস” [আশে পাশের প্লাষ্টিক ফ্যাক্টরি থেকে এত বাজে গন্ধ আসত লকহিডের অফিসে যে সেই থেকেই এই নাম দেওয়া]। এমন প্লেন বানাতে হলে যে যে ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ ছিল সেই সবের গলপ করতে গেলে লেখা অনেক বড় এবং বোরিং হয়ে যাবে। সংক্ষেপে বলতে গেলে সেই প্লেন বানানোর জন্য যে ধাতু ব্যবহার করা হবে তার এমন সব ধর্ম থাকার প্রয়োজন গণনা করে বের করা হল যা সেই সময়ে একমাত্র টাইটেনিয়াম-এই দিতে পারত! কি কি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে সেই ধাতু? একটু হালকা করে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক – ২৭ কিলোমিটার উচ্চতায় বাতাসের ঘনত্ব এতই কম যে তা প্রায় ভ্যাকুয়ামের কাছাকাছি ধরা যেতে পারে। তাপামাত্রা শূন্যের থেকে ৫৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড নীচে – কিন্তু এত কম তাপমাত্রাতেও প্লেনের সামনের ছুঁচালো মুখটা প্রায় চারশো ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পোঁছে যাবে বাতাসের সাথে ঘর্ষণের ফলে, কারণ ব্ল্যাকবার্ড ছুটবে রাইফেলের বুলেটের গতিবেগের প্রায় সমান সমান। প্লেনকে কালো রঙ না করলে এই সব তাপামাত্রা আরো অনেক বেশী হত। আর এত বেশী তাপমাত্রায় বিমানের অঙ্গপ্রতঙ্গের ধাতু বেশ কয়েক ইঞ্চি প্রসারিত হত দৈর্ঘ্যে একবার উড়তে শুরু করলে। সে এক এমন জটিল কেস ছিল যে প্লেন ওড়ার আগে রানওয়েতে নাকি ফুয়েল লিক করত – একবার উড়তে শুরু করলে ট্যাঙ্কের সেই গ্যাপ বন্ধ হত।
ব্ল্যাকবার্ডের ওজনের প্রায় ৯০% আসবে টাইটেনিয়াম থেকে – কিন্তু এই হারে টাইটানিয়াম এত কঠিন কাজের জন্য আগে কোনদিন বানানো উৎপন্ন করা হয় নি। ফলে অনেক কিছু রিসার্চ ইত্যাদি হল। CIA অনেক খুঁজে পেতে দেখল যে এত টাইটেনিয়াম বানাতে যা আকরিক লাগবে তা একমাত্র জোগান দিতে পারে সোভিয়েত ইউনিয়ান।
আমেরিকার স্পাই এবং ইন্টিলিজেন্স আপারেটিভদের বিষ্ময়কর কীর্তি যে ভাবে মাঝে মাঝে বাজারে ছাড়া হয় তাই নিয়ে আমার নিজের বেশ সন্দেহ থাকলেও, ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে প্রমাণ পাওয়া যায় যে এরা কাজ কিছু করত বৈকী চুপিচুপি। যেমন ধরুণ, টাইটেনিয়াম দিয়ে স্পাই প্লেন এবং আরো সাপ ব্যাঙ বানাবো সে থিক আছে, কিন্তু টাইটেনিয়ামের আকরিক পাব কোথায়? ক্রোল না হয় আমেরিকাকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন কেমন করে আকরিক থেকে শুদ্ধ টাইটেনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করতে হয় – কিন্তু আমেরিকাতে তো টাইটেনিয়ামের আকরিক বেশী নেই! কাঁচামালই যদি না থাকবে, তাহলে কি করে বানানো হবে যুদ্ধু বিমান? ইত্তেফাক কি বাত দেখুন সবচেয়ে বেশী টাইটেনিয়ামের আকরিকের স্তূপ কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ানে। সেই সোভিয়েত রাশিয়ার ভারখনায়া সালডা-র খনি থেকে আকরিক এল কি করে আমেরিকায়? অথচ সিম্পল হিসেব করেই দেখা গেছে যেহারে টাইটানিয়ামের জিনিসপত্র বানিয়েছে আমেরিকা সেই কোল্ড ওয়ারের সময়, তাত করে নিশ্চিত ভাবে আকরিক এনেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ান থেকে। আর সোভিয়েত যদি আকরিক বেচেও থাকে আমেরিকাকে সরল পথে, তাহলেও তারা নিশ্চিত জানত না সেই টাইটেনিয়াম দিয়ে কি হচ্ছে! আর চুক্তি পত্রে, যেখানে জানতে চাওয়া হয় উক্ত জিনিস কি কারণে ব্যবহৃত হবে, সেখানে নিশ্চয়ই আমেরিকা লেখে নি “এই থেকে টাইটেনিয়াম নিষ্কাশন করে আমরা তোমাদের পিছনে বাঁশ দেবার যন্ত্র বানাচ্ছি!” যেটা জানা যায় তা হল, আমেরিকা টাইটেনিয়ামকে ‘স্ট্র্যাটেজিক মেটাল’ বলে চিহ্নিত করেছিল তখন এবং সব কিছুই ছিল “নিড টু নো বেসিস”-এ। এমনকি যারা লকহিড এরোস্পেস কোম্পানীতে কাজ করেছিল প্লেন বানানোর প্রোজেক্টে – তাদেরও কোন ধারণা ছিল না কোথা থেকে আসছে টাইটেনিয়াম!
টাইটেনিয়ামের একদম সাধারণ জিনিসপত্র ভালো করে কেমন করে বানাতে হয় সেই টেকনলজিই যখন জানা ছিল না, তখন সেই অবস্থা থেকে শুরু করে এমন এক প্লেন বানানো খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। ট্রায়াল-অ্যান্ড-এরর চলতে থাকল – প্রায় এক কোটি তেরো লক্ষ পার্টস বানানো হয়েছিল এমন সব ট্রায়ালের জন্য। সব কিছুরই সমাধান বেরুলো আস্তে আস্তে – কিন্তু খুব খরচা সাপেক্ষ হল ব্যাপার স্যাপার। অবশেষে ২২শে ডিসেম্বর ১৯৬৪ সালে প্রথম আকাশে উড়ল ‘ব্ল্যাকবার্ড’। পয়সা জলের মত খরচ হল ঠিক আছে, কিন্তু মিলিটারী ব্যবহারে গুপ্তচরবৃত্তি করতে দেখা গেল এর জুড়ি নেই – ভিয়েতনাম যুদ্ধে একাধিক বার ব্যবহৃত হল ব্ল্যাকবার্ড – ১৯৬৮ সালে উত্তর এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামের মাঝে এমন সব ছবি তুলে পাঠালো ব্ল্যাকবার্ড যে আমেরিকা আকাশপথে আক্রমণ করল সেই সূত্র ধরে এবং পেল খুব সাফল্য। ১৯৭৩ সালে আবার মিশর-ইজরায়েল যুদ্ধে ব্ল্যাকবার্ড বিশাল কাজ দিল। নিউইয়র্ক থেকে আরব-ইজরায়েল বর্ডারের দূরত্ব ৯০০০ কিলোমিটার ব্ল্যাকবার্ড উড়ে গেল মাত্র পাঁচ ঘন্টায় – মাত্র ২৫ মিনিট চক্কর মেরে যা ছবি তোলার তুলে নিতে পেরেছিল।
ব্ল্যাকবার্ডের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩৫৪০ কিলোমিটার, ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৯৮ এর মধ্যে ৩২টি ব্ল্যাকবার্ড বানিয়েছিল লকহিড এরোস্পেস কোম্পানী যার মধ্যে ১২টা এমনি টেষ্ট ইত্যাদি করতে গিয়ে ভেঙে পড়েছিল। আর মিলিটারীর হিসাব অনুযায়ী এই প্লেন অপারেট করতে নাকি প্রতি ঘন্টায় ঘরচ হত প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। গল্প অনেক আছে – এই নিয়ে বেশ কিছু বইও আছে। মোদ্দা কথা হল টাইটেনিয়ামের সাহায্যে আমেরিকা কোল্ড ওয়ারের সময় আকাশে রাজত্ব করেছিল। পরের দিকে অ্যাপোলো এবং মার্কারী মহাকাশ প্রোজেক্ট গুলিতেও টাইটেনিয়াম ব্যবহৃত হয়েছিল ব্যাপক ভাবে।
আমেরিকা যেমন আকাশের ব্যাপারে ফোকাস দিল তাদের সিক্রেট সার্ভিসের মতামত অনুযায়ী, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ান ফোকাস দিল সমুদ্রের দিকে তাদের সিক্রেট ডাটা অন্যালিসিস করে। এরা বানাতে শুরু করল সাবমেরিন যাতে ব্যবহৃত হবে টাইটেনিয়াম – সেই সাবমেরিনের নাম ছিল K-162। আর ব্ল্যাকবার্ডের ক্ষেত্রে যা হয়েছিল, এই সাবমেরিন বানাতেও গিয়েও তাই দেখ গেল – টাইটেনিয়ামের থেকে ভালো ধাতু আর বাজারে নেই! সাবমেরিনের ক্ষেত্রে ধাতু এমন হতে হবে তা যেন হালকা হয় জলে ভেসে থাকার সুবিধার জন্য – কিন্তু আবার জলের গভীরে সেই প্রবল চাপ সহ্য করার জন্য তার শক্তিও অনেক বেশী হতে হবে। এই ক্ষেত্রে দেখা গেল টাইটেনিয়াম এত শক্ত যে আরো অনেক বেশী জলের গভীরে সাবমেরিন পোঁছাতে পারে যা অন্য কোন সাবমেরিন আগে কোনদিন পারে নি। আর তাছাড়া সাগরের/জলের ধাতুক্ষয়ের ক্ষমতা অনেক বেশী – সেই ক্ষয় রোধেও টাইটেনিয়ামের জুড়ি মেলা ভার। মানে টাইটেনিয়াম প্রায় ক্ষয়ই না সেই মেরিন আবহাওয়ায় কাজ করলেও। ফলে মেনটেন করা অনেক সুবিধা – শত্রু আক্রমণের সময় যন্ত্রপাতি জ্যাম হয়ে যাচ্ছে মরচে পড়ে, এমন সম্ভাবনা নেই!
কিন্তু খরচ? আমেরিকার ব্ল্যাকবার্ড প্লেনের মতন এই সাবমেরিন বানাতে গিয়েও খরচের কোন মা-বাপ রইল না। হিসেব করে দেখা গেল যে টাইটেনিয়াম দিয়ে সাবমেরিন বানাতে গিয়ে যা খরচ হল, গোটা সাবমেরিন সোনা দিয়ে বানালেও তার থেকে খুব বেশী খরচা হত না! এই কারণেই এই সাবমেরিনকে আদর করে ডাকা হতে লাগল “সোনার মাছ” (গোল্ডেন ফিস)। K-162 ছাড়াও টাইটেনিয়াম দিয়ে সোভিয়েত ১৯৮৩ সালে বানিয়েছিল পৃথিবীর সবথেকে বেশী গভীরতায় পোঁছানোর ক্ষমতাধারী ৪০০ ফুট লম্বা ‘কমসোমোলেটস’ সাবমেরিন। আগুন লেগে এই সাবমেরিন ১৯৮৯ সালে নরওয়েজিয়ান সমুদ্রে ডুবে যায় – টাইটানিয়ামের বডি, দুটো নিউক্লিয়ার রিয়েক্টার, এবং কমপক্ষে দুটো পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে তিনি এখন এক কংক্রীটের আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে সমুদ্রে তলদেশে অবস্থান করছেন।
সোভিয়েত ব্ল্যাকবার্ড সম্পর্কে ঠিক কতটা জানত তা পুরোপুরি জানা যায় নি – আর মনে হয় যাবেও না। কিন্তু আমেরিকা সেই ১৯৬০ এর দশক থেকে কান-ঘুঁষো শুনছিল যে সোভিয়েত দেশ টাইটেনিয়াম দিয়ে সাবমেরিন বানাচ্ছে। কিন্তু কেউ পুরোপুরি বিশ্বাস করতে চায় নি – কারণ টাইটেনিয়াম দিয়ে সেই বিশাল সাবমেরিন বানানো প্রায় দুঃসাধ্য ছিল। অবশেষে ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি টাইটেনিয়াম স্ক্র্যাপ মেটাল যা আমেরিকা কিনছিল সোভিয়েত থেকে, সেই স্ক্র্যাপ মেটালের মাঝে আমেরিকার ইন্টিলিজেন্স অফিসারেরা খুঁজে পেলেন ৭০৫ নাম্বার লেখা একটা টাইটেনিয়ামের প্লেট। সেই ৭০৫ নাম্বার ছিল সোভিয়েত সাবমেরিন প্রোজেক্টের সিরিয়াল নাম্বার – সেই দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল যে টাইটেনিয়াম দিয়ে সত্যি করেই সাবমেরিন বানানো হয়েছে।
ঠান্ডা যুদ্ধ শেষ হলে টাইটেনিয়ামের ব্ল্যাকবার্ড বা K-162 সাবমেরিন কারোরই আর তেমন দরকার রইল না – ১৯৯০ দশকের প্রথম দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ানের পতনের পর মিলিটারী খরচ উভয় দিকেই অনেক কমে গেল। ব্ল্যাকবার্ড প্লেন এবং K-162 সাবমেরিন দুই প্রোজেক্টেরই ফান্ডিং কেটে দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হল। তবে ব্ল্যাকবার্ড বসর নেবার আগে একটা রেকর্ড রেখে গেল – এটাই একমাত্র মিলিটারী প্লেন যাকে কোনদিন শত্রুপক্ষ গুলি করে ধ্বংস করতে পারে নি বা পাইলটের কোন ক্ষতি হয় নি!
তাহলে আজকের দিনে ধাতব টাইটেনিয়ামের গুরুত্ব কতখানি? সর্বাঙ্গিণ ভাবে আগের থেকে বেশ অনেকটা কমে গেছে – কারণ অ্যালুমিনিয়ামের অনেক প্রকার সংকর ধাতু আবিষ্কার হয়েছে যারা টাইটেনিয়ামের মত হালকা এবং হুব শক্ত পোক্তও। কনকর্ড প্লেন বানানো হয়েছিল প্রায় পুরো টাই অ্যালুমিনিয়ামের ধাতু দিয়ে। আর আজকের দিনে তো অনেক বেশী কম্পোজিট মেটেরিয়াল ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে প্লেন বানানোর ক্ষেত্রে মনে হয় না আবার টাইটেনিয়াম নিয়ে আদিখ্যেতা হবে – যদি না আবার এক কোল্ড ওয়ার শুরু হয়। তবে টাইটেনিয়ামের অন্য ব্যবহার কিন্তু বাড়তেই থাকবে –
আগেই বলেছি সাদা রঙে ব্যবহার করা হয় টাইটেনিয়াম অক্সাইডকে পিগমেন্ট হিসাবে। যেখানেই সাদা সেখানেই এই টাইটেনিয়াম অ্যাডিটিভ E171 যা একদম নিরীহ, আমাদের কোন ক্ষতি করে না। আজকের দিনে বছরে প্রায় ১৫ লক্ষ টন টাইটেনিয়াম অক্সাইড আমরা ব্যবহার করছি – প্রায় বেশীর ভাগটাই আমাদের চোখে সাদা রঙ-কে আরো বেশী করে পরিস্ফুট করার জন্য।
তবে শুধু সাদা রঙ দেওয়াই নয় – এই টাইটেনিয়াম অক্সাইডের ন্যানো পার্টিক্যাল গুলি রাসায়নিক ভাবেও খুব শুদ্ধ যাকে বলে। কারণ এরা সূর্যালোক থেকে UV এনার্জি শুষে নিয়ে ছড়িয়ে দিতে পারে। ফলে টাইটেনিয়াম অক্সাইড দিয়ে রাঙানো করা কোন বস্তু থেকে এই UV এনার্জি বিচ্ছুরিত হয়ে ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদিকে মেরে ফেলতে পারে। আপনি হয়ত অনেক বিজ্ঞাপনে এটা দেখেছেন। সেমিকন্ডাক্টর তৈরীতেই টাইটেনিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক আজকাল।
পরিশেষ এটাই বলার, জন ব্রাউনির সাথে একমত হয়ে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে ইউরেনিয়াম এবং সিলিকনের সাথে একই সারিতে উচ্চারিত হয় টাইটেনিয়াম ‘ওয়ান্ডার মেটিরিয়াল’ হিসাবে। আমাদের দৃষ্টীভঙ্গির পরিবর্তন হয়, প্রথম দিকের প্রয়োজন অনেক বদলে যায় – পদার্থের সাথে পরিচিত হতে হতে অনেক কিছু খারাপ দিক বেরিয়ে আসে সেই পদার্থের। ইউরেনিয়াম যখন প্রথম ব্যবহৃত হতে শুরু করল অনেক আশা ছিল মানব সামজে – চিকিৎসা বিজ্ঞানে ক্যানসার সারিয়ে তোলা থেকে শুরু করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ তৈরী করে বিশ্বের শক্তির চাহিদার সমস্যা সমাধান। কিন্তু আজকের দিনে ইউরেনিয়াম-কে সেই একই ভাবে দেখা হয় না – বরং বেশ ভয়ের নজরে বিশ্লেষণ করা হয়। এই তিন পদার্থের মধ্যে সিলিকনের প্রভাব সব থেকে বেশী রয়েছে গেছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে। এবং আজকের দিনে ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিউটারের আগ্রগতির দিএ নজর রেখে বলা যায় এই প্রভাব আরো বাড়বে বৈ কমবে না। টাইটেনিয়ামের অবস্থান ইউরেনিয়াম এবং সিলিকনের মাঝখানে – টাইটেনিয়ামের তেমন কোন খারাপ দিক আবিষ্কৃত হয় নি ইউরেনিয়ামের মত। স্ট্রাকচারাল এলিমেন্ট হিসাবে টাইটেনিয়াম তার গুরুত্ব অনেকখানি হারিয়েছে। কিন্তু তাবলে যুদ্ধোত্তর কালে তার প্রভাব অস্বীকার করা যায় না! আজকের দিনে টাইটেনিয়ামের ব্যহবার তে থাকবে নির্দিষ্ট কিছু স্পেশালাইজড কাজে যেমন গলফ ক্লাব, মেডিক্যাল ইমপ্ল্যান্ট, বাইসাইকেল ফ্রেম, জুয়েলারি ইত্যাদি। আর সব চেয়ে বেশী ঘিরে থাকবে আমাদের সাথে টাইটেনিয়াম এক ধাতু হিসাবে নয়, বরং এক অক্সাইড যৌগ হিসাবে আমাদের চারিদিকে প্রায় সব সাদা রঙের সাথে –
আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে ইতিমধ্যেই অনেকবার টাইটেনিয়ামের স্পর্শ পেয়েছেন - এমনকি খেয়েও ফেলেছেন – আপনার অজান্তেই!
খুব ভালো লাগল
খুব ভালো লেখা। মেটালার্জি নিয়ে আরো লিখো সুকি।
টাইটেনিয়াম লেজার টেকনোলজি তে খুবই উল্লেখযো গ্য । বিশেষ করে লাস্ট কুড়ি বছরের গবেষণায় দারুণ দারুণ কাজ হয়েছে। প্রচণ্ড দ্রুত ঘটতে থাকা ঘটনা, পদার্থের ধর্ম যা নিয়ন্ত্রণ করে, অন্যথায় জানা যেত না।
বি-দা, একক, কৌশিকদা, ছোটাই-দি, দমু-দি, টিম সবাইকে ধন্যবাদ। আর বাকি যাঁরা পড়লেন তাঁদেরকেও।
বি-দা দেখছি লৌহস্তম্ভের কথা আর ভুলবে না :) সিরিয়াসলি ওটা শেষ করতে হবে আমাকে।
ছোটাই-দি, হ্যাঁ বেশীর ভাগ সানস্ক্রীণ লোশন/ক্রীমেই আজকাল টাইটেনিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হয় - সেটার উল্লেখ ছোট করে করেছি এই লেখা টায়। প্রোজেক্টের নাম খুব ভালো লাগলো - স্নো স্টর্ম!
টিম, লেজার টেকনলজির সাথে টাইটেনিয়ামের সম্পর্ক নিয়ে খুব বেশী কিছু জানা নেই আমার। একটু পড়াশুনা করতে হবে তাহলে এই নিয়ে।
আসলে এই লেখাটা লিখতে বেশ একটু পরিশ্রম করতে হয়েছে (টাইপিং এর কষ্ট বাদ দিয়েও)। অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম ঠিক কি ভাবে ইন্টারেষ্টিং করে প্রেজেন্ট করা যায় জিনিসটা। এর ভিতরে অনেক বড় বড় গল্প ঢুকে আছে - সে সবের ভিতরে না গিয়ে নন-মেটালার্জিষ্টদের এই বড় লেখাটা পড়তে কি ভাবে উৎসুক করা যায়, সেই ভাবনাটা মনের মধ্যে ছিল। মনে হচ্ছে কিছুটা হলেও সফল হয়েছি সেই কাজে - মেটালার্জিষ্ট হিসাবে তাই বাড়তি ভালো লাগা :)
ছোটাই-দি, দুঃখিত এই সব বলে লজ্জা দেবেন না প্লীজ আপনি খুঁটিয়ে পড়ছেন এবং ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম।
এই সিরজটায় একটু হলেও ব্যক্তিগত ছোঁয়া রাখতে চাইছি, দেখা যাক কতদূর এগুয়
সুকি, আপনার লেখা খুবই ভালো লাগে। মূল কারণ খুব গুরুগম্ভীর ব্যাপারও প্রাঞ্জল করে লেখা। তবে এই লেখাটায় প্রচুর খাটুনি লুকিয়ে আছে সেটা পরিষ্কার। লিখতে থাকুন।
লৌহ স্তম্ভের ব্যাপারটাও একটু দেখবেন ☺️
চারটে অস্কাইড আছে অক্সাইডের জায়গায়। এডিট করা যায়?
ডুবে গিয়েছিল, তুললাম।
.
দারুণ লেখা।এতদিন কেন পড়ি নি। সমরাস্ত্র সংক্রান্ত তথ্য দেখে পুরনো কৌতূহল জেগে উঠলো।ইরাক-কুয়েত- সৌদি আরবের গণ্ডগোলে আমেরিকা ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম দিয়ে তৈরি দু ধরণের গোলার উপযোগিতা পরীক্ষা করেছিল । প্রথমটি,৩০ মিমি-র ট্যাঙ্ক বিদ্ধংসী যুদ্ধবিমান এ-১০ থাণ্ডারবোলটের জন্য।আরেকটি ১২০ মিমির এম-ওয়ান-এ-ওয়ান আব্রাম ট্যাঙ্কের জন্য।এই ডি ইউ ধাতুটির ঘনত্ব সম আয়তনের জল অপেক্ষা ১৮ গুণ বেশী এবং ইস্পাত অপেক্ষা তিনগুণ বেশী।এই পরিমাণ ঘনত্বের জন্য এই ডি ইউ দিয়ে তৈরি গোলা শবদের চেয়ে চারগুণ বেশী গতিবেগে ছোটে। থাণ্ডারবোলট ইরাকের টি-৭২ ট্যাঙ্ক ধ্বংস করতে ছুঁড়েছিল ৯ লক্ষ ৪০ ।আর আব্রাম ছুঁড়েছিল ১০০০০ গোলা ।ইরাকের মাটিতে ছড়িয়ে থাকা এইসব গোলার অবশেষ তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে বিটিশ এনার্জি কমিশনের তদন্তকারী দল ইরাক ঘুরে এসে যে রিপোর্ট দিয়েছিল,তা লন্ডনের দি ইন্ডিপেনডেন্ট কাগজে ফাঁস হয়েছিল ১৯৯১ সালের নভেমবর মাসে।তাতে বলা হয়েছিল এই ডি ইউ র প্রতিক্রিয়ায়তে অদূর ভবিষ্যতে পাঁচ লক্ষ মানুষ মারা যাবেন।উন্নততর দেশগুলিতে জমে থাকা কোটি কোটি টন তেজস্ক্রিয় পারমানবিক বর্জ্য পদার্থ মানে ডি ইউ সামরিক কাজে ,যেমন ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্রে ,হেলিকপ্টাররের পাখা তৈরিতে খুব উপযোগী।জাহাজ ও জিপের বডিও তৈরি হয়েছে,শুনেছিলাম তখন। .১৯৯৬ তে কলকাতায় বসে,মানে সীমিত ক্ষমতায় এটুকু তথ্য জোগাড় করতে পেরেছিলাম।তারপর চেষ্টা করেছিলাম সাদ্দাম হুসেন উৎখাত হওয়ার পর এই ধরনের কোন তথ্য যদি সংগ্রহ করা যায়।পারি নি। টাইটেনিয়াম-র জন্ম কথা পড়ে ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়ামের সাতকাহন, নেহাতই স্মৃতিচারণ।এই বিষয়ে কোনও লেখা,পড়ার কৌতূহল এখনো টিকে আছে ভেবে নিজেই অবাক হলাম, আরো একবার,করোনাকালে । সুকিয়ানার লেখক-কে আরো একবার ধন্যবাদ।