এত খেয়ে তবু যদি নাহি ওঠে মনটা - পর্ব এক : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | টুকরো খাবার | ১১ জুন ২০১৩ | ১৫০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
খাবার হবে পরিমাণ মত - তবে হ্যাঁ, পরিমাণ কেমন হবে সেটাকে সরলীকরণেরও বিপদ আছে। যারা আমেরিকান খাদ্য সংস্কৃতির সাথে পরিচিত তাঁরা কথাটির অর্থ আশা করি বুঝতে পারবেন। আমেরিকান রেষ্টুরান্টে ৩-কোর্স ডিনার আমার মত খানেবালার কাছে প্রহসনের মত। স্টার্টার শেষ করেই আমার পেট ভরে যায়, বাকি দুই পদ তো দূর অস্ত। এই প্রসঙ্গে আমার আর এক জ্যেঠতুতো ভাই পিকুলের লাইফের ট্রাজেডির কথাটা বলে নিই। ও তরকারি খেতে এত ভালোবাসে যে আজ পর্যন্ত কোন নিমন্ত্রণ বাড়িতে মাছ-মাংসের পদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারলনা। শাক, ডাল, চচ্চড়ি দিয়েই তার খাবার শেষ। রান্নাঘরে তরকারি হাতড়াতে গিয়ে ও বহুবার ধরা পড়েছে। ওই জন্যই বলে আপ্ রুচি খানা।
মরফিন : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ জানুয়ারি ২০২০ | ২১২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
সকাল আরো কাছ এগিয়ে আসে, বিছানায় যাওয়া জরুরী, কাল সকালে মিটিং আছে। ঘড়িটা ড্রয়ার থেকে টেনে বের করতে গিয়ে চোখ পড়ে যায় সেই মরফিন প্যাচ্-গুলোর প্যাকেটে। এখনো রয়ে গ্যাছে এরা? বেশ কয়েকটা প্যাচের প্যাক দেখলাম, হাত দিয়ে সরিয়ে আরো পেলাম মরফিন ট্যাবলেটও। মনে পড়ে গেল সেই ক্যানাল রোডের দোকান থেকে কেনা – সাথের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনটা এগিয়ে দিয়েছিলাম, সেটা শুধু মরফিনেরই জন্য। ওরা আবেগহীন আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দেয় যন্ত্রণা – এই ডাক্তারের হাতের লেখা খুব সুন্দর, কালি পেনে লিখেছে। আমিও পড়ে নিতে পারি, ডাক্তার লিখে দিয়েছে চাইলে মাস দুয়েকের জন্য স্টক করে নিতে পারি মরফিন প্যাচ এবং ট্যাবলেট। ওরা প্যাচ এনে দেখায়, আমার চোখ চলে যায় ছোট ছোট ট্যাবলেটে। কেমন প্রশান্তি এনে দেবে এরা?
এক গঞ্জের ইতিবৃত্ত এবং কিছুটা স্মৃতিমেদুরতা - ১২ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৯৪৪ বার পঠিত
নিখিলদার ব্যাগ থেকে সেই বোতলের উপস্থিতি টের পেলাম – সেখান থেকে মদ সরিয়ে আমি কার্তিকদাকে প্রথম চাখতে দিই। সেই সময়ের স্কুল অব থটস ছিল এই যে থ্রি এক্স রাম খেতে হয় হয় কষা মাংসের চাট দিয়ে। যথারীতি মাংস রান্নার ভার পড়ে কার্তিকদার উপরে – সেই বয়সে মদের ভাগ না-এলেও আমার প্রতি কার্তিকদার ভালোবাসার জন্য কষা মাংস আমি চেখে ছিলাম। দুর্গাপূজার ভাসানের সময় বাড়িতে মদের অনুপ্রবেশ নিমো গ্রামের সীমানায় বাঙাল অনুপ্রবেশের মতই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ঘটনা বলে পরে প্রমাণিত হয়েছে। আরো হালকা বয়েস বাড়লে প্রথম সময় এল মদ নিজের জিভে চাখার। আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার ও গাইড ছিল গদাকাকু। এত দিন পর্যন্ত কেবল মদ সাপ্লাইয়ে সাহায্য করেছি – যখন খাওয়া হত তখন আমার বয়সীদের উপস্থিতি এ্যলাও ছিল না। ফলে পরিমাপে গোলমাল করে ফেললাম – প্রথমে নিখিলদার ব্যাগ থেকে হাতানো থ্রি-এক্স রাম ও পরে গদাকাকুর সামনে বসে তার গাইডেন্সে অক্টোবরের শেষের বিকেলে ছাদে জিন পান। সন্ধ্যা বাড়ছে, আমার বাড়ছে কনফিউশন – তখনও বাড়ির ঠাকুরকে প্রণাম করে বিজয়া দশমী করতাম সবাইকে – সেই প্রথম বার স্কিপ হল, বড় কারো কাছে যেতে পারছি না মুখে গন্ধের ভয়ে – মাথা ঘুরছে, পায়ের নিচে বসানো আছে আলি চাচার বানানো তুবড়ির বস্তা, নিজেদের বানানো রঙমশাল, আর অগুনতি বুড়িমার চকোলেট বোম্বের বাক্স। পরের স্মৃতি আবছা – নদুকাকুর ঘরে খাটের ধারে আমি বমি করছি মেঝেতে, আমার বাম পাশে শুয়ে আমার উপর দিয়ে উঠে মেঝেতে বমির চেষ্টা করছে আমার গাইড গদাকাকু। ফুলমা আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে আর বলছে এই গদাটার জন্য – ফলত গদাকাকু কোন জলপট্টি পাচ্ছে না, না পাচ্ছে বমি করার জন্য কোন হেল্প। সে নিশা আমাদের সহজে ছোটে নি – এবং পলকে পলকে তারে মনে উঠেছে। গাঁজা আমাদের ঘোষ বাড়িতে কোন দিন ট্রাই হয় নি। সেই দিন নিশা করে আমার এবং গদা কাকুর ঘৃণা লজ্জা ইত্যাদি ভয় প্রায় হাটে বিকিয়েছিল।
বিভ্রম – আমি যেমন ভাবি : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১৪৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
অনেক বই একসাথে পড়ার মূল সুবিধা হল - অনেক বই একসাথে পড়া যায়। আর প্রধান অসুবিধা খুব মন দিয়ে পড়তে হয় - তা না হলে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা। উপরের বইয়ের নামগুলি দেবার একটা কারণ আছে যেটা পরে বলব, কিন্তু আদতে যেটা চাইছি সেটা হল একটা বিভ্রান্তিমূলক বা সূচক পরিবেশের সৃষ্টি করতে। এটা সহজ কাজ নয়, আমি শত চেষ্টাতেও আপাতত পারছিনা কারণ যেদিন পারব সেদিন আমি বিখ্যাত লেখক হবার প্রথম সোপানে পা দিয়ে ফেলব। বিখ্যাত লেখক বা কবি হবার প্রাথমিক শর্তই হল বিভ্রান্তি তৈরী করার ক্ষমতা অর্জন করা। এখন প্রশ্ন হল বিখ্যাত কি জিনিস এবং কারাই বা লেখক আর কারাই বা কবি। হুমায়ুন আহমেদকে নাকি একবার একুশে বই মেলায় একজন ধরেছিল এবং নাছোড়বান্দা হয়ে স্বীকার করিয়েছিল, তিনি কবিতা লাইনে দাগ না কাটতে পেরে গদ্য লাইনে শিফট করে গ্যাছেন! বেশীর ভাগ কবিই নাকি এই লাইন শিফটের ফসল। খুবই সত্যি কথা, শুধু তাই নয় – বড় বড় (বিখ্যাত) গদ্য সাহিত্যিকও এই শিফটের ফসল বলেই আমার মনে হয়। তবে অনেকে আছেন শিফট না করেও কোনদিকেই দাগ কাটতে পারেননা এবং vice versa।
নষ্ট হয়ে যাই : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ এপ্রিল ২০২০ | ৪৮২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
হাজারে হাজারে লোক যাচ্ছে নিমোর উপর দিয়ে দল বেঁধে হেঁটে – ঘরে ফিরছে চাইছে তারা, জি টি রোড বরাবর, রেললাইন বরাবর হেঁটে যাচ্ছে তারা কলকাতার দিক থেকে ঝাড়খন্ড, বিহারের দিকে। পিঠে, কোলে বাচ্ছা – বড় বড় বাক্স-ব্যাগ নিয়ে ফিরছে। নিমোর রাস্তার ধারে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন লোক খাচ্ছে – চাল, আলু ইত্যাদি জোগাড় হয়েছে। কিন্তু শেল্টার? ইচ্ছা করলেই আপনি ২৫-৫০ জনকে নিয়ে ভাবলেন গ্রামের কোথাও রেখে দেবেন, খাওয়াবেন – সেসব অত সোজা নয়। প্রশাসনের অনুমতিই মোষ্ট লাইকলি আপনি পাবেন না। যে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে, তাকে যেতে দাও – শ্রমিক-মজুর এদের কষ্ট-মৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামাবার মতন সময় নেই বড়কর্তাদের।
সুকিয়ানা - বাড়ির পুজো – পুজোর বাড়ি - ৩ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৫ অক্টোবর ২০২০ | ৩৫৪১ বার পঠিত
পাঁঠার বদলে শসা বলি হলেও, সেই শসার জন্য তো আর আলাদা করে খাঁড়া কেউ বানাতো না! ফলে পাঁঠা কাটার খাঁড়া দিয়েই শসা বলি – মশা মারতে কামান দাগার মত! কামারের কাজ খুব সিম্পল ছিল – চোখ-টোখ লাল করে একটু হালকা টলতে টলতে নাকি কে জানে, সাইকেল নিয়ে হাজির হত। সে মদ খেয়ে এসেছে কি খায় নি, তা এক বড় গবেষণার ব্যাপার। তবে তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাত না। এই কামার এসে সামনের পুকুরে ডুব দিয়ে আমাদের দেওয়া নতুন কাপড়টা পরে আর হাতের খাঁড়াটা ধুয়ে নিয়ে এসে মা-দুর্গার সামনে বামুন ঠাকুরের পাশে রাখত। বামুন দাদু নানা বিধ মন্ত্র বলে সেই খাঁড়াকে পুজো করে দিত এবং তার পর উঠে এসে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা কামারের মাথায় মন্ত্রপুত জল ছিটিয়ে দিত। ব্যাস এবার রেডি বলির জন্য।
সুকিয়ানা - বাড়ির পুজো – পুজোর বাড়ি - ৪ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৫ অক্টোবর ২০২০ | ৪৫৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আরও অনেক কিছুর সাথে দুর্গা পুজো মনে করিয়ে দেয় আমার রিসার্চ বিষয়ক প্রথম ব্যর্থতার কথা। বাড়িতে বাজি বানাতে গিয়ে—না, বাজি বানাতে ব্যর্থ হইনি, ব্যর্থ হয়েছিলাম হাতে বানানো রংমশাল আর তুবড়ির ধোঁয়া কমাতে। বানাতাম সেসব মাল জবরদস্ত, কিন্তু বড়ো বেশি ধোঁয়া হত। সে অনেক দিন আগেকার কথা।
একসময় আমাদের দাদারা লায়েক বয়েসে পৌঁছে ঠিক করল বাড়িতেই বোম-বাজি ইত্যাদি বানাতে হবে। আমরা তখন খুবই ছোটো। কানেকশন এল নেপালদার বন্ধু অদয়দার চেনা সূত্র ধরে—সেই মাস্টার-এর সাথে। মাস্টার নাকি কংগ্রেস জামানায় পেটো বানাত দুরদার—সিপিএম আমলেও বানাত, তবে খুব খাতির থাকলে তবেই। আমাদের পুরানো বাড়ির ছাদেই সেই বোম-বাজি বানানোর শুরু। তুবড়ির খোল কেনা আসত কুমোর বাড়ির থেকে—বাকি বোম বানানোর মালমশলা মেমারি বাজারের এদিক ওদিক হতে। সোরা, গন্ধক, অ্যালুমিনিয়াম/লোহাচুর, স্পাইরো পাউডার ইত্যাদি। তখন অত রেগুলেশন ছিল না সোরা (পটাশিয়াম নাইট্রেট) বিক্রি নিয়ে। পরে খুব কড়াকড়ি শুরু হয়, লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করা যাবে না এবং বিক্রি করলেও কতটা পরিমাণে ইত্যাদি। তবে সত্যি কথা বলতে কী সবই চেনাশোনা সার্কেলের জন্য জিনিস মার্কেটে থাকলে এবং বেআইনি না হলে মালমশালা পেতে কোনোদিন আসুবিধা হয়নি। তবে জমাটি কেস ছিল কাঠকয়লার বেলায়। সঠিক কাঠকয়লা বাজি বানানোর ক্ষেত্রে খুবই জরুরি যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা জানবেন। আর কোন্ পাগলা নাকি বলেছিল সবচেয়ে ভালো কাঠকয়লা হয় আকন্দ গাছের গুঁড়ি পুড়িয়ে!
বাজার আগুন—৩০ হাজার কিসিমের ফুলের রঙে! : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : দেখেছি পথে যেতে | ১২ নভেম্বর ২০২০ | ৩৪২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
তামাশা-এ-গুলশন, তমন্না-এ-চিদন/বাহার-আফরিনা গুনাহগার হ্যায়ঁ হম! বাগান অবলোকন, বাসনায় চয়ন/বাসন্তী দেবী, পাপী যে এ মন! হায় মির্জা গালিব, বাগান থেকে ফুল ছেঁড়ার অনুশোচনায় এমন কবিতা, ফুল চয়নের এই বহর দেখলে না-জানি কী লিখতেন জনাব! এক ছাদের তলায় ২২০০ বিঘার বাজার—শুধু ফুল আর ফুল। বছরে বিকিয়ে যায় ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি পিস্ ফুল! হল্যান্ডের আল্সমীর। সুকান্ত ঘোষ
হাট বসেছে শুক্রবারে ব্রুনাই দেশের এক শহরে : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : দেখেছি পথে যেতে | ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ | ৩৫৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
স্থানীয় ভাষায় বলে ‘তামু’। আলু, পটল, ঢ্যাঁড়শ, কুমড়ো। লকলকে সবুজ শাক। পুঁটি, মৌরলা, পাবদা। মায় কাছিম পর্যন্ত। এক্কেবারে যেন বাংলার হাট। থলি হাতে ঘুরলেন সুকান্ত ঘোষ
সুকিয়ানা – ১৮ পর্ব (গাজন) : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১০ এপ্রিল ২০২১ | ৩৬৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
গতবারে করোনার কারণে গাজন হয় নি, সব লকডাউন ছিল। কেবল মাত্র টিম টিম করে দুজন সন্ন্যাসী হতে হয় বলে হয়েছিল – এটা নাকি নিয়ম, যাদের বলা হল নীলে আর মূলে। তো গতবার গাজনের চারদিনের দুদিন রাতে বিশাল ঝড়ে কারেন্ট ইত্যাদি ছিল না, আর এদিকে জমকালো উৎসব হচ্ছে না বলে জেনারেটর ভাড়া করা হয় নি। ফলে ওই দুই সন্ন্যাসী, বিটু আর উদয় ঘুটঘুটি অন্ধকারে শিবতলায় শুয়ে ছিল প্রবল গরমে আর বিশাল মশার কামড় খেয়ে। মশার কামড় খেয়ে এত খিস্তি দিচ্ছিল দুজনে শিবদুয়ারে যে সেই খিস্তি রাতের বেলায় নিঃস্তব্ধতার জন্য বহুদূর শোনা যাচ্ছিল। কোন এক গুরুজন থাকতে না পেরে নাকি বলতে এসেছিল, “এই তোরা সন্ন্যাসী হয়ে ঠাকুর দুয়ারে বসে এত মুখ খারাপ করছিস, এই চারটে দিন মুখ খারাপ না করলেই কি নয়!
সুকিয়ানা – ১৯ পর্ব (দুই প্যালেস মিউজিয়ামের গল্প) : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ১৭ এপ্রিল ২০২১ | ২৭৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
“দরকার হলে এক দেশ আবার পুনর্জন্ম নিতে পারে, কিন্তু দেশের সংস্কৃতি একবার ধ্বংস হয়ে গেলে তাকে পুনরায় উদ্ধার করা অসম্ভব”! তখনকার দিনের এক খুব প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ টি ভি সুং পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন এই কথা। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে ২০,০০০ ক্রেট (বড় বাক্স) ভরা দুষ্প্রাপ্য চীনের অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হবে প্যালেস মিউজিয়াম থেকে। সব কিছু প্যাকিং হয়ে যাবার পরে এবার অপেক্ষা – ঠিক কবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া চালু করা হবে সেই নিয়ে নির্দেশ আসার জন্য মিউজিয়ামের স্টাফেরা অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৩ সালে নির্দেশ এল পরিবহন চালু করার। সকাল বেলা গোটা বারো চোদ্দ মোটর গাড়ী এবং ৩০০ মত রিক্স ঢুকলো ফরবিডেন সিটিতে। ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল চরম – সবাইকে ব্যাজ দেওয়া, গাড়িতে স্পেশাল নাম্বারিং করা – এই করতে করতে রাত হয়ে গেল। রাত আটটার সময় তিয়েনমেন স্কোয়ারের সামনের রাস্তা, যেটা সেখান থেকে জেনগ্যায়াংমেন ট্রেন স্টেশনের দিকে গেছে সেখানে কার্ফু-র মত জারি করে দেওয়া হল। একমাত্র পারমিশন নিয়ে এবং স্পেশাল ব্যাজের লোকেরাই এই এলাকায় ঢুকতে পারত সেই রাতের বেলা। রাত নটার সময় সারি দিয়ে গাড়ি গুলি প্যালেস মিউজিয়াম থেকে রওয়ানা দিল স্টেশনের উদ্দেশ্যে, সেই গাড়ির সাথে যোগ দিল আশে পাশের একজিবিশন হল থেকে বোঝাই গাড়িগুলিও। ট্রেন স্টেশনে গিয়ে সব কাঠের ক্রেট বোঝাই হল ২১টা ট্রেনের বগিতে।
পান আর গুটকার পিক ফেলে আমরা হাওড়া ব্রিজকে ক্ষইয়ে ফেলছি : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ৩১ মে ২০২১ | ৫০৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
পাখিদের তো আর শেখানো যায় না যে তোরা হাওড়া ব্রিজে আর মল ত্যাগ করিস না বাপু! এত তো জায়গা রয়েছে! কিন্তু দেখা গেল শুধু পাখি নয়, মানুষদের শেখানোও খুব চাপ – এত পোস্টার, অনেক সচেতনতা ক্যাম্পেনের পরেও পাবলিক পানের আর গুটকার পিক হাওড়া ব্রিজের পিলার গোড়ায় ফেলা বন্ধ করল না। পিলারের গোড়ার ঠাকুর দেবতার ছবি আটকেও তেমন সাফল্য এল না। আগে যেমন লিখেছি, পানের/গুটখার থুতু বেশ বেশ অম্ল এবং তাই লোহার জন্য ক্ষতিকারক। প্রথমে পিলারের গোড়া গুলি বার বার রঙ করা হচ্ছিল এবং পরিষ্কার করা হচ্ছিল – কিন্তুতেই কিছু হল না। বরং দেখা গেল মাত্র চার বছরে, ২০০৭ থেকে ২০১১ এর মধ্যে পান/গুটখার পিক পিলার ক্ষইয়ে দিয়েছে ৩ মিলিমিটার! দৈনিক হাওড়া ব্রিজের ফুটপাথ ব্যবহার করেন প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ (১-৫ লক্ষের মধ্যে)। এর মধ্যে শতকরা এক ভাগও যদি থুতু ফেলেন, তাহলে দৈনিক পিলারে থুতু ফেলছেন কয়েক হাজারের মত লোক! সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়!
চাষার ভোজন দর্শন – দ্বিতীয় পর্ব : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০১ জুলাই ২০২১ | ৪২৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
এটা রিসোত্তোর রেসিপির বা ইতিহাস লেখার রচনা নয়, তাই সেই সব বিষয়ে ঢুকছি না। তবে যেটা বলার, রান্নার টেকনিক ছাড়াও আর যেটা প্রধান পার্থক্য করে দেয় রিসোত্তো কোয়ালিটির তা হল যে চাল ব্যবহার করা হয় তা। রিসোত্তোর ছবি দেখেই ‘আমাদের গোবিন্দভোগ চাল দিয়ে এই জিনিস আরো ভালো হত’ এমন হল্লা মাচাবেন না প্লিজ। সব জিনিসের একটা স্থান-কাল-পাত্র আছে! অবশ্য আপনি নিজের নিজের সিগনেচার ডিস “রিসোত্তো উইথ এ গোবিন্দভোগ টুইস্ট” বানাতে চাইলে কিছু বলার নেই! যদি পারফেকশন আনতে পারেন, কে জানে হয়ত পায়েস ছেড়ে গোবিন্দভোগ গ্লোবাল স্কেলে পৌঁছে যাবে পাতে পাতে! এখানে জাস্ট এটুকু বলে রাখি এই মুহূর্তে রিসোত্তো বানাবার সবচেয়ে জনপ্রিয় চালু চাল তিনটি – কারনারোলি, আরবোরিও এবং ভিয়ালোনে ন্যানো। আর একটা ছোট্ট টিপস -এই চাল দিয়ে রিসোত্তো রান্নার আগে প্লিজ চাল ধোবেন না বারে বারে! একবারে না ধুলেই ভালো হয়।
চাষার ভোজন দর্শন – ৪র্থ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১৫ জুলাই ২০২১ | ৪১৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
সেবারে কুয়ালালামপুরের বুকিং বিনতাং এলাকার বিখ্যাত শপিং মলে ঘুরে বেড়াচ্ছি, ঘুরতে ঘুরতে বেশ ক্লান্ত – ভাবছি কোন একটা স্টলে বসে একটু কফি/জুস/শেক কিছু একটা খেয়ে নিলে বেশ হয়। তাই আশে পাশে চোখ রাখছি – হঠাৎ করে চোখে পড়ে গেল একটা দোকানের খাবারের অ্যাডে আমের ছবি দেওয়া! মানে রসে ভরে উঠেছে, একটা পাত্রে টুপটাপ করছে কাঁচা হলুদ বা কমলা যাই বলেন তেমন রঙের আম! ব্যাস আর কী ভাবতে হয়! টুক করে ঢুকে পড়লাম সেইখানে – চারদিক খোলা বসার অ্যারেঞ্জমেন্ট, শপিং মলের ভিতরে।
চাষার ভোজন দর্শন – ৫ম : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২২ জুলাই ২০২১ | ৪০৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
খাবার গল্প করতে গিয়ে সৌন্দর্য্য বোধের কথা উঠছে কেন? এটাই মূল কারণ – যদি নামী কোন ফ্রেঞ্চ রেষ্টুরান্টে খেতে যান, তাহলে সেটা নিজেই টের পাবেন। ধরুণ – একটা বিশাল স্টাইলের সাদা প্লেট দেবে – কিন্তু মাঝখানে ১০ গ্রাম মাংস, দুটো বীনসের দানা, এককাছি সবুজ পাতা চেরা। আর সেই মাংসের অর্ডার নেবার সময় আপনাকে ওয়েটার/ওয়ের্টেস সেই চিকেনের (যদি চিকেন অর্ডার করেন) বাল্যকাহিনী শোনাবে! চিকেন এই খেত, বনেবাদাড়ে খেলে বেড়াতো, তার মামারবাড়ি ওখানে, জবাই করার আগে সে এই এই জায়গা ভ্রমণ করেছে ইত্যাদি। প্রথম দিকে ঘাবড়ে যেতাম – এখন আলতো করে বলে দিই, চিকেনের জীবনগাথা শোনায় আমার ইন্টারেষ্ট নেই!
চাষার ভোজন দর্শন – ৭ম : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১২ আগস্ট ২০২১ | ৩০৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
মাথা বিশাল গরম – ব্রেড কোথায়, পাগলের মত খুঁজছি, ক্রসো দেয়নি? সেই খেয়েই পেট ভরাতে হবে। শেষে দেখি হাসপাতালে সদ্যোজাত বাচ্চাকে যেমন কাপড়ে জড়িয়ে রাখে তেমন ভাবে তিন-চার পিস ব্রেড রাখা। সেই খেয়ে পেট ভরাচ্ছি এমন সময় ট্রলি ফিরিয়ে নেবার জন্য মাসুদ এল – তাকে দেখে আরো মাথা খারাপ হয়ে গেল – বেশ রাগি মুখে বললাম,
“বাঙালি হয়ে আরেক বাঙালির মুখের খাবার কেড়ে নিতে লজ্জা করে না?”
চাষার ভোজন দর্শন – ৮ম : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১৯ আগস্ট ২০২১ | ২৯৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ছেলেটা অর্ডার নিতে এলে – পিৎজা এদের স্পেশালিটি কিনা জিজ্ঞেস করলে, হ্যাঁ বলল। আমার কি মনে হল - এও না সেই অন্য রেষ্টুরান্টের মত পিৎজার ইতিহাস ব্যাখ্যা করা শুরু করে! তাই সে-ই কিছু বলার আগেই আমি বললাম –
আমি জানি পিৎজা বলে আধুনিক কালে আমরা যে জিনিসটিকে চিনি তার জন্ম হয় ১৮৮৯ সালে ইতালির নেপলস্-এ। একসময়ে নেপলস্-এর বাজারে যা পরিচিত ছিল ‘পিৎজা আলা মোজারেল্লা’ নামে, সেই পিৎজা খেয়েই রাণী মার্গারিটা কুপোকাত – বিশাল ভালোবেসে ফেলে ডিক্লেয়ার করে দিলেন, যে এটাই তাঁর সবথেকে প্রিয় পিৎজা। ব্যাস, সেই থেকে এই পিৎজার নাম হয়ে গেল ‘পিৎজা মার্গারিটা’
সেই ওয়েটার দেখি আমার কান্ড দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে –
চাষার ভোজন দর্শন – ৯ম : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৬ আগস্ট ২০২১ | ৪৭৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
আজকাল আমি পারতপক্ষে ব্যুফে (বা বাফে, যেমন বলবেন)–তে খাওয়া দাওয়া এড়িয়ে চলি। এর প্রধান কারণ নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারা। ভাবুন একবার, কেউ বলল - যাই খাও বা যতটা পরিমাণেই খাও না কেন, বিলের পরিমাণ একই! এই প্রলোভন জয় করা – আমি তো ক্ষুদ্র মনুষ্য, বড় বড় মহাপুরুষের মানসিক জোরে কুলায় না। বহু সচেতন পাবলিক দেখেছি, যারা, এমনিতে যাকে বলে পুষ্টি এবং ক্যালোরি, হিসেব করে খায় – কিন্তু ব্যুফে-তে গিয়ে অন্য মানুষ হয়ে ওঠে। আমারও প্রায় অনুরূপ অবস্থা, ভিতর থেকে একটা কম্পিটিটেটিভ মনোভাব চাড়া দিয়ে ওঠে। ও খাচ্ছে আর আমি পারব না! বা পয়সা যখন দিয়েছি, তখন খেয়ে শোধ তুলতে হবে – এই চক্করে পড়ে মাঝে মাঝে এত খেয়ে ফেলেছি যে শেষে টেবিল থেকে ওঠার অবস্থা থাকে না!
চাষার ভোজন দর্শন – ১০ম : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩২৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আমাদের বাঙলার রাজা লক্ষণ সেনের (শুনেছি বখতিয়ার খিলজি যখন বাঙলা আক্রমণ করেন, তখন লক্ষণ সেন নাকি বসে ভাত খাচ্ছিলেন – আক্রমণের খবর শুনে হাত না আঁচিয়েই ঘোড়ায় চড়ে পিছনের দরজা দিয়ে হাওয়া!) মত এই খেমাই রাজাদেরও প্রধান এবং প্রিয় খাদ্য ছিল ভাত – সাথে মেকং এবং টোনলে-স্যাপ নদীর মাছ, গেঁড়ি-গুগলি-শামুক-ঝিনুক, একদম টাটকা ধরা। ট্রাডিশ্যানাল খেমাই ক্যুজিনের প্রধান ডিশগুলি ছিল – স্যুপ, স্যালাড, একটা মাছের কোর্স, একটা মাংসের ডিশ, শাকসবজি এবং ভাত। মুখে জল আনা নানা রকমের সস বানাতে ছিল এরা প্রসিদ্ধ – আর খাবারে নানাবিধ মশলা এবং সুগন্ধি ইনফিউজ করার চেষ্টা করত। আর একটা কথা, কাম্বোডিয়ার রান্না বান্নায় রসুন কিন্তু বেশ দিল খুলে ব্যবহার করা হয়। শেষ পাতের মিষ্টি বলতে তা ছিল ফলমূল এবং নারকেল থেকে বানানো। সব মিলিয়ে বেশ জমকালো ব্যাপার।
চাষার ভোজন দর্শন – ১১শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩২৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
আমার পাশে যে বসে ছিল তাকে বললাম, “এ তো গামা গাছের ডগাগুলো কেটে দিয়ে গেছে মনে হচ্ছে! সাদা প্লেটে চিজ ছড়িয়ে দিলেই কি গরুর খাবার মানুষের হয়ে যায় নাকি!”
পাশের জন বলল “হোয়াট ইজ গামা?”
তাকে অনেক কষ্টে আমার বিখ্যাত ইংরাজিতে বোঝালাম, যে এর সাথে ভাস্কো-দা-গামা-র কোন সম্পর্ক নেই। বাড়ির গরুতে খাওয়ার জন্য আমরা জমিতে গামা (বাংলায় অনেক জায়গায় একে গমা বা গ্যামা বলা হয়) চাষ করতাম। এমনি সবুজ লকলকে ডাঁটির মত গাছ জমি থেকে কেটে এনে বাড়িতে খড় কাটার বঁটিতে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কুচাও।
আমাকে বলা হল এগুলোকে নাকি ‘অ্যাসপারাগস’ বলে! গামা গাছের ডাঁটির বিজ্ঞান সম্মত নাম যে অ্যাসপারাগস, সেটা কে আর জানত!
চাষার ভোজন দর্শন – ১২শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩৩৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
আচ্ছা এটা মনে রাখবেন, যে হট পটের সাথে ওই ফন্ডু বলে যে জিনিসটা আছে – তার একটা বেসিক পার্থক্য আছে। হট পটে আপনি খাবার বানাবেন বা ফোটাবেন একটা জলীয় স্যুপে – আর ফন্ডুতে রান্নার তেল ব্যবহার করা হয়। হট পটের স্ট্যান্ডার্ড রান্নার উপাদানগুলি হল – খুব পাতলা করে কাটা মাংসের টুকরো, সবুজ পাতার সবজি, মাশরুম, নানা প্রকারের ন্যুডল্স্, কাটা আলু, টফু, নানাবিধ বিনস্, মাছ বা সি-ফুড। এই সব উপাদানই সরু সরু করে কাটা থাকে – তা না হলে ওই মৃদু আঁচে ফুটতে থাকা স্যুপে সিদ্ধ হয়ে খাওয়ার মত হতে রাত হয়ে যাবে! তা ছাড়া এক্সট্রা সস রাখা থাকে পাশে – আপনি নিজের ইচ্ছেমতন খাবার স্পাইসি বানিয়ে নিতে পারবেন সিদ্ধ হয়ে যাবার পর।
চাষার ভোজন দর্শন – ১৪শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৮৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
মালয়েশিয়ার সমুদ্র তীরবর্তী সব শহরেরই সমুদ্রের ধারে পেয়ে যাবেন আপনি স্ট্রিট-ফুড বা হকার-ফুড, যা সত্যিকারের প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে সন্ধ্যে নামার পর। প্রায় সারি দিয়ে বিচের ধার ঘেঁসে আপনি অসংখ্য ফুড-স্টল পেয়ে যাবেন। অনেকে লাইভ বারবিকিউ করছে দেখতে পাবেন। খুবই সিম্পল ব্যাপার – সাধারণ টেবিল একদম সার দিয়ে বসানো, তাতে প্লাস্টিকের টেবিল ক্লথ দেওয়া। যাতে তাড়াতাড়ি টেবিলের টার্ন-ওভার হয় – আপনার খাওয়া শেষ হল, টেবিল ক্লথ পাল্টাবার কোন চাপ নেই। কেউ এসে প্লেট উঠিয়ে নিয়ে ঝটপট করে মুছে দিল টেবিল – আপনি বসে পড়লেন। প্লেট-ও খুব সিম্পল। আপনাকে একটা প্লেট দিয়ে যাবে – বেশির ভাগ সময়েই এগুলো প্লাস্টিকের – আর সাথে দেবে ন্যাপকিনে জড়ানো একটা চামচ এবং কাঁটাচামচ।
চাষার ভোজন দর্শন – ১৩শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩০৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
কনফারেন্সে এমন জবরদস্ত লাঞ্চ হলে, তার নেগেটিভ দিক হচ্ছে, লাঞ্চের পরের টকগুলোতে খুব কম লোক হাজির হবে। যারা হাজির হবে, তারাও অনেকে ঢুলবে! আমাকে দু’একবার কোন কোন সেশনের চেয়ারম্যান হতে হয়েছিল, তাই স্টেজ থেকে একদম সামনা-সামনি দেখি অডিয়েন্স কেমন ঢুলছে! আর যদি কোনো সরকারি কোম্পানির বড় কর্তা টক দেয়, তো রুম ভরে যাবে – সেই ভরা রুমে লোকে ঢেকুর তুলছে, কেউ নিঃশব্দে বাতকর্ম করে দিল ধরুন – মাটন রোগান জুসের ঢেকুর বা পাদের গন্ধ কি আর রুম ফ্রেশনার দিয়ে আটকানো যায়!
চাষার ভোজন দর্শন – ১৬শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২১ অক্টোবর ২০২১ | ২৬৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
যদি আপনি খাবার এবং বাজার ভালোবাসেন, তাহলে এখানে ঘুরতে ঘুরতে আপনি আচ্ছন্ন হয়ে যাবেন। অনেক দোকানের সামনে দেখবেন, চাখার জন্য স্যাম্পেল রাখা আছে – ইচ্ছেমত ট্রাই করে যেতে পারেন। খুব ছোট ছোট কিছু রেস্টুরান্ট আছে, যারা দুই-একটা টেবিল বা বসার টুল নিয়ে স্পেশালিটি কিছু খাবার বিক্রি করছে। এখানে খাবার পাওয়ার জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। ইচ্ছে হলে চট করে খেয়ে নিন – কিন্তু একটা ব্যাপার মনে রাখবেন – জাপানে খেতে খেতে হাঁটা-কে ব্যাড ম্যানারস্ হিসাবে ধরা হয়।
কেমন আছে ওরা? - দুর্গাপুজোয় কাপড়ের ব্যবসা এবং কোভিডের প্রভাব : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১২ অক্টোবর ২০২১ | ২২৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
অর-দা আমাকে মাঝে মাঝেই বলে, “সুকান, তুই তো সবাইকে নিয়েই লিখিস – আমার ব্যবসাটা নিয়ে লেখ না একদিন”। মজা করেই বলে – আমি চেষ্টা করলেও কিই বা আর করতে পারব! আমার আর পরিচিতি কতটুকু। কোভিডের জন্য দাদার ব্যবসা বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত – আরো অনেক ক্ষুদ্র এবং ছোট ব্যবসায়ীদের মত। তা গুরুচণ্ডা৯ কর্তৃপক্ষ যখন বলল, পুজো সংখ্যায় ‘ওরা কেমন আছে’ – এইভাবে কোভিডকালের ব্যবসায়ীদের কথা ছাপাতে ইচ্ছুক – তখন মনে এল দাদার ব্যবসার কথা।
এই লেখায় আমি ফার্স্ট-হ্যান্ড অভিজ্ঞতাতেই জোর দিয়েছি – তাই একদিন এক প্রশ্নমালা তৈরি করে দাদার ইন্টারভিউ নিলাম। তবে এ শুধু আমার দাদার একার কাপড়ের ব্যবসার গল্প নয় – ওর কথা, ওই অঞ্চলের বাকি ক্ষুদ্র এবং ছোট কাপড়ের ব্যবসায়ীদের জীবন কথা – এই ভাবেই এখন আছে তারা।
চাষার ভোজন দর্শন – ১৭শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৮ অক্টোবর ২০২১ | ২৫০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
কাছে এগিয়ে আমার কেমন যেন সন্দেহ হল – বিশাল কিছু আলো জ্বলছিল না বলে ঠিক ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু তবুও, মেক্সিকান এদের তো মনে হচ্ছে না! একদম কাছে গিয়ে খাবারের লিষ্টে চোখ বোলাচ্ছি, মনে হল যে বাংলা ভাষা শুনলাম! আরো ভালো করে বলতে গেলে, আমাদের কলকাতার উচ্চারণে বাংলা নয়, বাংলাদেশের বাংলা। লন্ডনে বাংলাদেশী বাংলা শুনতে পাওয়া কোনো অবাস্তব ব্যাপার নয়, কিন্তু টুপি পরে মেক্সিকান স্টলে খাবার বিক্রি করছে – এমনটাও চট করে দেখা যায় না! আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই, বাঙালি নাকি”? একগাল হেসে উত্তর এল, “জি দাদা, আপনে কোথাকার?”
চাষার ভোজন দর্শন – ১৮শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০৪ নভেম্বর ২০২১ | ২৪৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
ইসকান্দর কাবাব-এর নামকরণ হয় – এটা যিনি আবিষ্কার করেন, সেই শেফ ইসকান্দর এফেন্দি এর নামে – যিনি উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অটোমান সাম্রাজ্যের বুরশা বলে একটি জায়গায় বসবাস করতেন। এই ডিশটি বানানো হয় ডোনার কাবাপ এবং গ্রিলড ল্যাম্বের টুকরো দিয়ে, যা বেছানো থাকবে গরম ট্যামেটো সসের মধ্যে, সাথে পিটা ব্রেড – এবং এই সবের উপর ছড়ানো থাকবে দই এবং কোনো কোনো সময় ভেড়ার দুধের থেকে বানানো বাটার।
চাষার ভোজন দর্শন – ১৯শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১১ নভেম্বর ২০২১ | ২৪৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
আমরা যারা সেই ছুটিতে বাড়ি যেতে পারতাম না, তাদের জন্য গ্রেস হাউসে ক্রিসমাস-ইভে ডিনারের আয়োজন করা হত। আসলে আমরা একটা পরিবারের মতই ছিলাম – তাই আমাদের ওয়ার্ডেন ক্রিস এবং অফিস-কর্মী অ্যালেন-ক্যাথি তাদের পরিবার নিয়ে আমাদের সাথেই ওইদিন ডিনার করত, ক্রিসমাস ট্র্যাডিশনাল ডিনার। ডিনার করে রাতের দিকে আমি যোগ দিতাম জেন আর যোসেফের সাথে, মধ্যরাতের চার্চ সার্ভিসে। রাত বারোটায় চার্চে ওই দিন এক স্পেশাল প্রার্থনার আয়োজন করা হত – আমরা বাড়ি থেকে হেঁটে যেতাম হারবোর্ন চার্চে। সেই রাতের প্রার্থনা আমাকে বারে বারে মনে করিয়ে দিয়েছে মানুষের ধর্ম নয়, নিজেদের মধ্যে ভালোবাসাটাই বড় ব্যাপার – আর সমস্ত ধর্মের মূল কথা তাই। একই ভাবে আমার প্রিয় বন্ধু আহসানের সাথে রমজানের মাসের সময় ইফতার করতে যেতাম স্টুডেন্ট গিল্ডে – সেও সেই ভালোবাসার গল্প, ধর্মের ভেদাভেদের উর্দ্ধে। তবে সেই সব নিয়ে অন্য একদিন লিখব।
চাষার ভোজন দর্শন – ২০শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১৮ নভেম্বর ২০২১ | ২৪৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
প্রচুর প্রচুর রেস্টুরান্ট পাবেন লিসবনে, যারা এই ফাদু মিউজিকের সাথে ডিনার অফার করে। তবে কিনা, সব ট্যুরিস্টিক জায়গার মতই, লিসবনেও ফাদু মিউজিক নিয়ে ব্যবসা চালু হয়ে গেছে পুরোদস্তুর। খুব বেশি ট্যুরিস্টের ভিড় হলে যা হয় – অনেক স্ক্যাম টাইপের আছে। মানে ফাদু মিউজিকের নামে আলতু ফালতু গান গেয়ে এবং একদম ফালতু খাবার দিয়ে প্রচুর চার্জ করবে। .... আমার মতে, ভালো জায়গাতে টার্গেট করাই ভালো – খরচ হবে ঠিক আছে, কিন্তু অথেন্টিক জিনিস পাবেন, ঠকার চান্স কম। আর সস্তায় বাজিমাত করতে গেলে সেই তেমন অভিজ্ঞতা হবে, যা আমার একবার হয়েছিল অন্য পাবলিকের অ্যারেঞ্জ করা ডিনার উইথ বেলি ড্যান্সিং-এ গিয়ে। পাশের ছেলে সেই নাচ দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁরে, বেলি ড্যান্সিং-এ কি বেলি নড়বে?” আমি বললাম, “তেমনই তো কথা!”। সে ছেলে হতাশ হয়ে বলল, “অনেকক্ষণ তো নাচ হয়ে গেল, কিন্তু বেলি তো দূরের কথা, শরীরের কোন অঙ্গ নড়ছে সেটাই বুঝতে পারলাম না!”
এক সম্ভাবনার অপমৃত্যু : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ০৯ নভেম্বর ২০২১ | ২০৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এরপরে কৃষ্ণ যখন তার বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে বা এমনি কথা বলছে, সেই ভাষ্যও খুব কনভিন্সিং – কেমন অবলীলায় তথাকথিত বাংলা স্ল্যাঙ ব্যবহার হচ্ছে, ঠিক এমনটা করেই তো আমরাও কথা বলেছি বা বলি! এতো আমাদের নিজেদেরই গল্প - নড়েচড়ে বসি! তারপর চাকুরীর ট্রান্সফার নিয়ে টাকা-পয়সা খাবার ব্যাপারটা গল্পে দেখা দিয়ে যায় – ওদিকে দেখি প্রাইভেট মাষ্টার-দের সাথে কেমন ব্যবহার করা হয়। এ সবই জীবনের বড় কাছাকাছি, বাস্তবেরও – ব্যাকগ্রাউন্ডে প্যানপ্যানে চেনা মেলোড্রামাটিক মিউজিক বা হিন্দী গান বাজে না। বরং শুরু হয় কীর্তন – সাত্যকির গলায়। এ জিনিস আগে দেখি নি, শুনি নি বাংলা সিরিজ বা সিরিয়ালে গানের এমন প্রয়োগও - প্রত্যাশা বাড়তে থাকে।
চাষার ভোজন দর্শন – ২১শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৫ নভেম্বর ২০২১ | ২১৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আপেল পাই জিনিসটার সাথে যদি আগে পরিচিত না থাকেন, এবং আমস্টারডামে গিয়ে প্রথমবার ট্রাই করেন, তাহলে হয়তো আপনার মনে এটা হালকা ভাবে ভেসে উঠতে পারে, যে – এটা কি আর এমন ব্যাপার, যার জন্য এত নামডাক? খুব বেশি কারিকুরি তো দেখতে পাচ্ছি না এই আপেল পাই-এ! এই ভাবনাটা মনের মধ্যে এলেই নিজেকে একটু ক্যালিব্রেট করে নেবেন – ভেবে নিন আপনাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করছে প্যারামাউন্ট-এর সরবত, নকুড়ের সন্দেশ বা আমিনিয়ার বিরিয়ানি নিয়ে! এইসব খাদ্য এমন সুউচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে, যে পার্থিব তর্ক করে কিছু হবে না – যার হয়, তার হয় টাইপের কেস।
চাষার ভোজন দর্শন – ২২শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০২ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৬২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
যজ্ঞবাহারের নামে শুনে, আমার পেটের ভিতরে টিম টিম করে জ্বলতে থাকা খিদের আগুনটা যজ্ঞের আগুনের মত দপ করে উঠল। ঘনঘন হাতের ঘড়ি দেখছি। বউয়ের নজরে সেটা চলে আসতে জেরা শুরু হল:
- এত ঘন ঘন ঘড়ি দেখার কি আছে? কিসের এত তাড়া তোমার?
- না, মানে চারে চারটের মধ্যে হোটেলে ফিরতে হবে।
- হোটেলে ফিরতে হবে? কেন?
- তোমার মনে নেই, চেক ইন করার সময় বলে দিল যে বিকেল চারটে থেকে ছ’টার মধ্যে টেরাস রেস্টুরান্টে ফ্রি-তে স্ন্যাকস্ এবং ড্রিঙ্কস্ দেবে?
- হ্যাঁ, শুনেছিলাম তো। কিন্তু এত সুন্দর মন্দিরের সামনে তোমার এখন খাওয়ার কথা মনে এল? এই তো খানিক আগে গন্ডেপিন্ডে লাঞ্চ করলে। এর মধ্যেই আবার এক্ষুনি বিকেলের স্ন্যাকসের দিকে নজর? আর তা ছাড়া মন্দির-স্থাপত্য দেখার থেকে তোমার বিকেলের স্ন্যাকস কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
চাষার ভোজন দর্শন – ২৩শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৬০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
আমার যেমন হয় – সন্ধেবেলা হলেই খিদে পেয়ে যায়! গেস্ট-হাউসে ঢুকেই খাবার টেবিলে বসে পড়ার ধান্ধা করছিলাম, যে কোনো একটা চেয়ারে। পিছন থেকে টান দিল এক কলিগ – সেই প্রথম জাপানে বসার এটিকেটের সাথে পরিচয়। এই নিয়ে আলাদা করে একটা লেখা হয়ে যাবে – পদমর্যাদা অনু্যায়ী বসার ব্যবস্থা করা হয়। যারা সর্বোচ্চ পদমর্যাদার লোকজন – তাদের বসার ব্যবস্থা প্রথমে এবং তারা যেখানে বসবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘কামিজা’। কম পদমর্যাদার লোকেরা যে স্থানে বসবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘সিমোজা’ .... আমাদের বসতে বলল সেই ঘরে ঢোকার দরজার থেকে দূরের চেয়ার গুলোতে। এটাও একটা রীতি – অতিথিদের বসতে দেওয়া হয় দরজার থেকে দূরে, আর দরজার কাছে থাকবে হোস্ট। এর কারণটাও বেশ ইন্টারেস্টিং – এই রীতি চালু হয় বহু বহু আগে, জাপানের ফিউডাল পিরিওডে – যেখানে দুমদাম শত্রুর আক্রমণের বেশ চল ছিল। আমাদের মত জাপানীদেরও বিশ্বাস অতিথি নারায়ণ – তাই অতিথিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রবেশদ্বারের থেকে সবচেয়ে দূরে বসতে দেওয়া হত।
চাষার ভোজন দর্শন – ২৪শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৪৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
আমিও সেদিন তাই করলাম। পাশ দিয়ে ওয়েটার যাচ্ছিল, তাকে বললাম, “আচ্ছা ওমলেট পাব কোথায়”? সে বলল ওমলেট স্টেশনে চলে যান! ওমলেটের যে আবার স্টেশন হয়, তা কে জানত! তো যাই হোক, যেন বেমানান না লাগে – এমনভাবে দুলকি চালে ওমলেট স্টেশন খুঁজতে বেরুলাম। সেই প্রকাণ্ড জায়গা পাক দিয়ে, প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার সময় দেখতে পেলাম, এক শেফ এক গাদা ডাঁই করে রাখা ডিমের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। বুঝতে পারলাম এই সেই মোক্ষ স্থান! গিয়ে চাইলাম ওমলেট – ব্যস, প্রশ্নবাণে গেলাম ফেঁসে! প্রায় ৫ মিনিটের ইন্টারভিউ দিয়ে, ১০ মিনিট বাদে ওমলেট নিয়ে টেবিলে ফিরলাম।
মাঝ সমুদ্র যাত্রা ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : ঘুমক্কড় | ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৮৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৯
প্রথমবার অফশোর সারভাইভ্যাল ট্রেনিং করতে যাচ্ছি – আমাকে ঠিকানা দিয়ে দেওয়া হল ট্রেনিং সেন্টারের – ম্যাপ দেখে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। শেষে গিয়ে পোঁছলাম – এখানে আমাদের কোম্পানির হাজারো কিসিমের ট্রেনিং হয় – জঙ্গলের মধ্যে একটা নদীর পাশে। এই ট্রেনিং নিয়েই আলাদা করে লেখা যায় – তবে আজকের লেখা প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি অফশোর সারভাইভ্যাল ট্রেনিং এক সপ্তাহের হয়। থিওরি থেকে শুরু করে প্রচুর প্র্যাক্টিক্যাল – পাশ করলে তবেই সার্টিফিকেট। অনেক কিছু শিখতে হত – আগুন কেমন করে নেভাবেন, ফার্স্ট-এড, এক বোট থেকে অন্য বোটে কি ভাবে দড়ি দিয়ে ঝুলে ট্রান্সফার করবেন নিজেকে, প্ল্যাটফর্মে বিপদ হলে জলে কেমনভাবে ঝাঁপ মারবেন, লাইফ-বোট কি ভাবে অপারেট করবেন – ইত্যাদি। পাঁচ দিনের মধ্যে দুই দিন প্রায় জলেই কাটাতে হত – বিশাল সুইমিং পুলের মত ব্যবস্থা আছে, যদিও গভীরতা সাধারণ সুইমিং পুলের থেকে অনেক বেশি। সেখানে শেখানো হত জলে বেঁচে থাকার পদ্ধতি – লাইফবোট না থাকলে কতক্ষণ জলে ভেসে থাকা যায় গ্রুপ করে ইত্যাদি।
চাষার ভোজন দর্শন – ২৫শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ | ২১১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সে ছেলে দাবি করেছিল, যে তারা নাকি পরিবেশপন্থী, খুব সন্তর্পণে সব কিছু বাছাই করে। খুব ভালো লাগল শুনে – অর্ডার করেছিলাম। কিন্তু যে ডিশ নামাল সামনে, তাই দেখে আমি সেই ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম – “এই তোমাদের পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা?” বাঁধাকপিগুলোকে বাড়তে দেয়নি পর্যন্ত! কুঁড়ি ছিঁড়ে নিয়ে প্লেটে সাজিয়ে দিয়েছে!
আর সিদ্ধ বাঁধাকপি – সে কেমন খেতে? তা আর নাই বা বললাম! আমাদের কালো জার্সি গরুটা পর্যন্ত শেষ বয়েসে মুখ ঘুরিয়ে নিত এ জিনিস দেখে!
ডিসক্লেমার: অনেকে আবার দাবি করেন, এগুলোকে বাঁধাকপির কুঁড়ি না, ব্রাসেলস্ স্প্রাউট বলে! চাষার ছেলে তো, অত কি আর বুঝি!
চাষার ভোজন দর্শন – ২৬শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০৬ জানুয়ারি ২০২২ | ২২২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সেদিন আমরা সকাল থেকে আরবিক/মিডল-ইস্টার্ন খেয়ে যাচ্ছিলাম বলে আমাদের হোস্ট বাছল ইতালিয়ান রেস্টুরান্ট। আমাকে আর মুখ খোলার অবকাশই দিল না – কারণ ইতালিয়ান ক্যুজিন আমার সবসময়ই ফেভারিট, অবশ্য যদি ভালো করে বানাতে পারে তবেই! রেস্টুরান্টে গিয়ে দেখা গেল, দুটো অপশন আছে – ভিতরে বসে খাওয়া এবং আউটডোর ডাইনিং। অবশ্যই আউটডোর ডাইনিং বেশি আকর্ষণীয়, বাইরে ১২ ডিগ্রি ঠান্ডা এবং হালকা বাতাস বইছে। এই অবস্থায় আউটডোর ডাইনিং করার কী মানে কে জানে! আমি মৃদুভাবে ভাবপ্রকাশ করলাম, দাদা, বাইরে কি খেতেই হবে? এদিকে আমার হোস্টের সেই রেস্টুরান্ট খুব ভালো লেগেছে আগের বার খেয়ে, তাই এইবারেও অতিথিসৎকার করতে বাইরেই বসা ঠিক হল। আমাকে আশ্বস্ত করা হল এই বলে, যে দেশে প্রচুর গ্যাস – তাই নাকি খেতে বসে ঠান্ডা লাগলে আমার পিছনে গ্যাসবাতি জ্বেলে দেবে! তাহলে আর ঠান্ডা লাগার চান্স নেই।
চাষার ভোজন দর্শন – ২৭শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১৩ জানুয়ারি ২০২২ | ২৫৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সেদিনের আগে জানতাম না, যে এই রুটির মত জিনিসটাকে ওরা বলে ‘ইনজেরা’। এটা বেস করেই ওদের নানা খাবার গড়ে উঠেছে – আপনি নিরামিষ, আমিষ, ভাজাভুজি – যা-ই চান, এই রুটির উপর পরিবেশিত হবে। আর আমাদের ভারতীয় ক্যুজিন-এর মত ইথোপিয়ান ক্যুজিনেও ‘কারি’-র ব্যবহার প্রচুর, বেশ মশালাদার খাবার বানায় এরা। আমাদের মত এরাও ব্যবহার করে লঙ্কা, আদা, রসুন, দারুচিনি, লবঙ্গ এবং জিরা।
চাষার ভোজন দর্শন – ২৮শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৩১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
বাড়ি সাজানো ছাড়াও চাইনিজ নিউ ইয়ারের আরো দুই আবশ্যিক অঙ্গ ছিল ফায়ার-ক্র্যাকার এবং লাল রঙের এনভেলপ। এই নিউ ইয়ার সাধারণত জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাসেই আসত বলে, আমাদের অনেক চাইনিজ বন্ধু ইংরাজি নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের সময় যে আতসবাজি বিক্রি হত, সেগুলি কিনে স্টক করে রেখে দিত। তবে চাইনিজ নিউ ইয়ারে চাইনিজ দোকানগুলিতে ফায়ার-ক্র্যাকার পাওয়া যেত কিনতে – সেখান থেকেও আমরা কিনে নিয়ে আসতাম। আর সেই লাল রঙের খামে থাকত ‘টাকা’ – এটা একটা ট্র্যাডিশন ওদের, যেখানে বাড়ির বড়রা ছোটদের এই টাকা গিফট করে, তবে ছোটদের ছাড়াও প্রিয়দের এই খাম দেওয়ারও ট্র্যাডিশন আছে। সেইমত আমরা আমাদের চাইনিজ বন্ধুদের থেকে পেতাম খুব সুন্দর হাতে নাম লেখা, চাইনিজ লিপিতে।
চাষার ভোজন দর্শন – ৩০শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২১ জুলাই ২০২২ | ১৫০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সেই কুকিং ইভেন্টের আয়োজন হয়েছিল আমস্টারডাম শহরের একপ্রান্তে, মানে মূল শহর কেন্দ্র থেকে কিছু দূরে ‘দি কুকফ্যাব্রিক’ (বাই ফার্ম কিচেন) নামে সেই কুকিং ওয়ার্কশপ। আইডিয়া বেশ সিম্পল – সব অংশগ্রহণকারী একসাথে রান্নাবান্না করবে। নিজেদের মধ্যে টিম বানিয়ে কম্পিটিশন করবে, পুরো কোর্স মিল বানিয়ে বা বেশি সময় হাতে না থাকলে এক একটা টিম ডিনার/লাঞ্চ-এর এক একটা পদ বানিয়ে। আমার যেখানে গিয়েছিলাম, কুকফ্যাব্রিক-এর সেই ওয়ার্কশপটা বেশ বড়সড় জায়গা জুড়ে আছে – প্রায় ১২০০ বর্গমিটার। বিখ্যাত ডাচ টিভি শেফ জুলিয়াস জেসপার এই মুহুর্তে জড়িয়ে আছেন এই সংস্থার সঙ্গে। তাঁর তৈরি মেনুই এখানে রান্না করা হয়। মোটমাট ১৮টি কুকিং স্টেশন আছে, আর আছে ৩টি ডেমোনস্ট্রেশন কিচেন। সব মিলিয়ে ২৭০ জন মত পাবলিক এখানে বসে খেতে পারে। আর মর্ডান কিচেনে যা যা থাকে, সবই পর্যাপ্ত সাপ্লাই দেওয়া হয় – তাই ছানা কেটে গেলে বলতে পারবেন না, যে হাতের কাছে নাড়ার কিছু ছিল না বলে এমন হল!
চাষার ভোজন দর্শন – ৩১শ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০৪ আগস্ট ২০২২ | ২০৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
- ফুটবল মাঠের মত বড় জায়গায় খাবার সাজানো আছে কাউন্টার জুড়ে, আর তুমি খুঁজে খুঁজে নিয়ে এলে ভাত! এত সকালে কেউ ভাত খায়!
কী আর বলি! বউয়ের তখনো মালয় থেকে শুরু করে ওদিকে ফিলিপিন্স – এদের খাদ্যসংস্কৃতি নিয়ে তেমন পরিচয় হয়নি। আমিও প্রথমদিকে অফিসে প্রচণ্ড অবাক হতাম – ওদিকে অফিস খুব সকালে শুরু হয়, যেমন আমাদের অফিস ৭.৩০ থেকে শুরু হত। স্থানীয় লোকেরা কম্পিউটার সুইচ অন করে ক্যান্টিনে চলল – আর সেখানে গিয়ে দেদার ‘নাসি লেমাক’ সাঁটাচ্ছে! এই যে সকাল থেকে শুরু হল ‘নাসি লেমাক’ খাওয়া – এটা কিন্তু সারাদিনই পাওয়া যায়, আপনি চাইলেই এবং এরা সারাদিনই সেই নাসি লেমাক বারে বারেই খেয়ে যেত!