এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  দেখেছি পথে যেতে

  • মুম্বাই

    পাপাঙ্গুল লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | দেখেছি পথে যেতে | ০৭ জুলাই ২০২৪ | ৪৭২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • সমুদ্রে যাব ভেবেই ম্যাপ খুলে বসা। আরব সাগরের পারে গুজরাটের দ্বারকা, সোমনাথের সমুদ্র দেখতে কাছে হলেও সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। আমেদাবাদ ভেঙে যেতে হবে। দিউ ও তাই। বাকি রইল দমন আর মুম্বাই। দুটোই রাজধানী যায়। দমন যেতে গেলে অগস্ট ক্রান্তি তেজস। আর মুম্বাই যেতে গেলে নয়াদিল্লি তেজস। সাড়ে পনেরো ঘন্টা। মথুরা, কোটা, ভাদোদরা, সুরাট হয়ে যাবে। রাত তিনটের সময় ট্রেন একটা স্টেশনে থেমে ছিল, ম্যাপ খুলে দেখলাম গোধরা। এখানে কোনো স্টপ নেই, তাও থেমে ছিল পাঁচমিনিট। 
     
    বৈতরণী আর ভাসাই এই দুটো লম্বা নদী পেরোনোর পরেই বোরিভালি থেকে মুম্বাই শুরু। ক্রমে আন্ধেরি, বান্দ্রা, মাহিম, দাদার হয়ে মুম্বই সেন্ট্রাল। 
     

    বোরিভালি থেকেই সঙ্গে সঙ্গে মুম্বাই লোক্যালরা চলতে শুরু করে
     
    মুম্বাই সেন্ট্রাল থেকে বেরোতেই হলুদ কালো পদ্মিনী ট্যাক্সির ভিড়। মুম্বাইয়ের আকাশরেখা কলকাতা বা দিল্লির থেকে পুরো আলাদা। শহরের চরিত্রও আলাদা। কলকাতাকে গড়ে তোলা হয়েছিল প্রশাসনিক ও করণিক কেন্দ্র, নদীবন্দর হিসেবে। দিল্লি চিরকালই রাজনৈতিক ভরকেন্দ্র। মুম্বাই মূলত ঔপনিবেশিক সময়ে গড়ে ওঠা সমুদ্র বন্দর ও বাণিজ্যের কেন্দ্র, প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক কেন্দ্র নয়। এখানে থাকার জায়গা এত কম যে সরু আর উঁচু বহুতলদের ভিড় যত্র তত্র। 
     
    <
    যেমন মুম্বাই সেন্ট্রাল স্টেশনের পাশেই নাথানি হাইটস
     
    স্টেশন থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে গিরগাঁও চৌপট্টির দিকে যাওয়া। সকালবেলা ফুটপাথে গাড়িতে ঝোলানোর জন্য লঙ্কা লেবু একসঙ্গে গাঁথা বিক্রি হচ্ছে। গিরগাঁও চৌপট্টি মুম্বাইয়ের একটা ছোট সৈকত যেখানে জেলেদের নৌকা ভাসে। 
     

    গিরগাঁও চৌপট্টি থেকে ডানদিকে মালাবার পাহাড়
     

    বাঁদিকে মেরিন ড্রাইভ, আরো দূরে কোলাবা
     

    বাঁদিকে হাঁটতে শুরু করলে মেরিন ড্রাইভ শুরু। শহরের এই অংশে যাবতীয় এসি বাস ব্যাটারিতে চলছে। রাস্তার বাঁ পাশের পুরোনো বাড়িগুলি হেরিটেজ তকমাযুক্ত এবং প্রত্যেক বাড়ির আলাদা আলাদা নাম আছে। 
     

    ড্রাইভের গায়ে পাথর ফেলা। দূরে এয়ার ইন্ডিয়ার অফিস। 


    হাঁটতে হাঁটতে ওয়াঙখেড়ে স্টেডিয়াম পেরিয়ে ট্রাইডেন্ট হোটেল। 


    ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী। 


    রানীর গলার নেকলেস


    নরিম্যান বিন্দু থেকে। সামনে লাইভ স্কেচরত এক শিল্পী।


    উল্টোদিকে কোলাবা। জেটি বন্ধ এখন।
     
     
    তারপর ডানদিকে গলিতে ঢুকে শনিবারের হালকা অফিসপাড়া। ফুটপাথের স্টলে বড়া পাওয়ের স্টল। এখানেই বাসগুলো ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস থেকে এসে থামছে, নামছে অফিস যাত্রীরা।


    অফিসপাড়ার পিছন দিক
     
    বাসেরা যেখানে এসে থামছে সেখান থেকে একে তাকে জিজ্ঞেস করে এক ফাঁকা দোতলা ঠান্ডা বাসের ওপরে উঠে পড়া গেল। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস যেতে ছ টাকা ভাড়া। এই রাস্তায় সমস্ত ভিকটোরিয়ান গথিক স্থাপত্যের বাড়িগুলি দেখতে দেখতে যাওয়া যায়।
     

    মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘড়ি মিনার 


    মুম্বাই উচ্চ আদালত


    বৃষ্টি শুরু হল


    পুরোনো ভিকটোরিয়া টার্মিনাস [অধুনা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ ] টার্মিনাস এসে গেছে 


    রাস্তা পেরিয়ে টার্মিনাসে ঢোকা যায় না। রাস্তার নিচে আন্ডারপাসে যাবতীয় হকার এবং দোকান, যা পেরিয়ে সোজা উঠে যাওয়া যায় টার্মিনাসের ভেতর।


    বাঁদিকে মুম্বাই পুরসভার অফিস। সামনে স্যার ফিরোজ শাহ মেহতার মূর্তি। 
     
    টার্মিনাসের পিছন দিক থেকে কোলাবার বাস ছাড়ছে। এগুলোই গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া হয়ে যাবে। সে স্টপ আসার আগে বাঁদিকে নৌবাহিনীর এলাকা। বন্দরের দরজার দুপাশে তাদের রক্ষীরা দাঁড়িয়ে। কাগজ হাতে বন্দর শ্রমিকদের ঢোকার জন্য লম্বা লাইন। গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার আশেপাশে ড্রোন ওড়ানো বারণ। তাজ হোটেলের সামনে সারাদিনের মুম্বাই ট্রিপের গাড়ি ভাড়া নেবার লোক আর ছবি শিকারীদের ভিড়। তারা নানা পোজে তাজ হোটেল এবং গেটওয়েকে পিছনে রেখে জনতার ছবি তুলে দিচ্ছে। অনেকের সঙ্গে একটা ছোট পোর্টেবল প্রিন্টার। বৃষ্টিদিনের রঙিন মুম্বাই স্মৃতি বন্দী করে হাতে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। 
     
    গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া থেকেই এলিফ্যান্টা গুহা যাবার লঞ্চ গুলো ছাড়ে। আসা যাওয়া মাথা পিছু দুশো ষাট। ছেলেগুলোকে দশ টাকা দিলে ওপরের ছাদে উঠতে দেয়। লাইনে দাঁড়িয়ে যে কোনো স্টিমারে উঠে পড়লেই হল। জেটির পাশে সিঁড়ির ধাপগুলো নেমে গেছে সমুদ্রের জলে। স্টিমারগুলো জেটির কাছে এসে নোঙর বা দড়ি দিয়ে বাঁধছে না। ঢেউয়ের সঙ্গে ওপরে নিচে লাফাচ্ছে। তারই মধ্যে লাফিয়ে নীচের ডেকে চলে যেতে হবে। পাটাতন ফেলা নেই। বয়স্ক বা মেয়েদের জন্য স্টিমারের ছেলেরা হাত ধরে পার করে দেয়। 
     
    ওপরের ডেকে এসে আরাম করে ঠান্ডা হাওয়াতে বসা গেল। মাঝখানে একটা শামিয়ানা খাটানো। জোরে বৃষ্টি এলে ভেজা ছাড়া কোনো রাস্তা নেই। 
     

    মুম্বাই বন্দরে নৌবাহিনীর জাহাজেরা দাঁড়িয়ে


    ভাসতে ভাসতে
     
    আধঘন্টা যাবার পরেই জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। ওপরের ডেকে পনেরো কুড়িজনের বসার জায়গা। সবাই জড়ো হয়ে গেল মাঝের শামিয়ানার নীচে। কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ভিজল। কেউ দূরে দাঁড়িয়ে খুলে ফেলল ছাতা। বাজ পড়েনি, এই যা ভাগ্য। শামিয়ানার ছাদ থেকেও একটু বাদে বৃষ্টির ছাঁটে সবাই ভিজে একশা। অবশ্য অল্প সময়ে হাওয়াতে শুকিয়েও গেল জামাকাপড়। স্টিমার চালকের ছোট কেবিনে বাচ্চারা ঢুকে বসে ছিল, তারা একমাত্র ভেজায় ব্যতিক্রম। পিছনে বেশ দূরে আরো একটা স্টিমার আসছে এই পথই অনুসরণ করে। উল্টোদিকের ফিরতি পথের লঞ্চ থেকে হাত নাড়ছে লোকজন।
     

    বৃষ্টি ধরে এসেছে


    প্রায় দেড়ঘন্টা জলযাত্রার পর এলিফ্যান্টা দ্বীপ
     
    এই দ্বীপের স্থানীয় নাম ঘারাপুরি। এলিফ্যান্টায় আছে প্রায় চোদ্দোশো বছরের পুরোনো ঘারাপুরির পাহাড় কেটে বানানো শৈব ও বৌদ্ধ গুহা। এলিফ্যান্টা নাম পর্তুগীজদের দেওয়া , ~১৫০০ তে যারা এই দ্বীপে এসেছিল এবং দ্বীপের টিলার মাথায় এক হাতির মূর্তি দেখেছিল। হাতির মূর্তি এক জাদুঘরে রাখা এখন। দ্বীপে নামার পর পর্তুগীজরা মূর্তিগুলির ওপর টার্গেট প্র্যাকটিস করতে শুরু করে এবং অনেক মূর্তি আধখানা ভেঙে যায়। 
     
    দ্বীপে টাওয়ার , ইন্টারনেট নেই। একটা খেলনা মিটার গেজের ট্রেন বসিয়ে রেখেছে জেটি থেকে গ্রাম পর্যন্ত। গ্রামে ঢুকতে পঞ্চায়েত পাঁচ টাকা টিকিট। তার পরে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠা। খাড়াই সিঁড়ির দুদিকের দোকানের মাথায় নীল ত্রিপলের জন্য সিঁড়ির রাস্তাও নীল হয়ে আছে। বহু খাবার দোকান , বাড়িতে সাজানো জিনিসের পসরা পেরিয়ে এ এএসআইয়ের এলাকা শুরু। চল্লিশ টাকা টিকিট কিন্তু ইন্টারনেট নেই বলে খুচরো দিতে হল। 
     

    প্রথম গুহাটিই সবথেকে বড় 


    প্রথম গুহায় ঢুকলে প্রথমেই বাঁদিকে পদ্মাসনে মহাযোগী শিব। মূর্তিগুলিকে অসাধারণ বিকৃত করার জন্য পর্তুগিজদের বিশেষ পুরস্কার দেওয়া উচিত।
     

    এরপর রাবণ অনুগ্রহ মূর্তি। কৈলাস পর্বতের ওপর দিয়ে পুষ্পক রথে উড়ে যাবার সময় রাবণকে কার্তিক আটকান। রেগে রাবণ মাথায় তুলে নেন সমগ্র কৈলাস পর্বত। নিচের মূর্তিটি রাবণের , ওপরে শিব সহ অন্যন্যরা। 


    শিব -পার্বতীর মূর্তি 


    অর্ধ্বনারীশ্বর শিব [ফোনের 'নাইট লাইট' মোডে তোলা বলে সবুজাভ, নাহলে অন্ধকার আসত] 


    পঞ্চমুখ লিঙ্গের অনুসারে খোদাই করা ত্রিমূর্তি শিব। ডানদিকে অঘোর [হিংস্র রূপ], বাঁদিকে বামদেব [শান্ত রূপ] , মাঝে তৎপুরুষ[জ্ঞানী রূপ]। পিছনের দেওয়াল না থাকলে চতুর্থ মুখটি সদ্যজাত হবার কথা। দুদিকে দুই দ্বারপাল। 
     

    গদাধর মূর্তি। শিব মাথায় তিন মাথাওলা গঙ্গা [মন্দাকিনী, ভাগীরথী, ভগবতী ] নিয়ে দাঁড়িয়ে, গঙ্গার বোন পার্বতী কিছুটা রেগে বাঁদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। শিবের ডানদিকে হাত জোড় করা অবস্থায় রাজা ভগীরথ।
     
     
    শিব ও পার্বতীর বিয়ের কল্যাণসুন্দর মূর্তি। 
     
     
    শিবের অন্ধকাসুর বধ [এই গল্পটা সারনাথের পর্বে লিখেছিলাম]

    img src=" />
    নটরাজ শিব
     
    এছাড়াও গুহার মধ্যে চার দেওয়ালের মধ্যে একটি প্রকোষ্ঠ আছে। চার দেওয়ালের চার দরজার দুদিকে মোট আট খানা দ্বারপালের মূর্তি। 
     

     

     
    এই বড় প্রথম গুহার বাঁদিক এবং ডানদিকেও দুই ছোট গুহাতেও দেওয়ালে কিছু মূর্তি আছে।
     

    এরকম 
     

    গণেশ


    কার্তিক


    এই দ্বিতীয় গুহা তৈরী হয়েছিল আদৌ এখানে পাহাড় কেটে গুহা বানানো যায় কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য।


    তৃতীয় গুহা, মূলত থাকার/ধ্যান ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হত। ভেতরে মূর্তি নেই। 


    চতুর্থ গুহা।


    এই দ্বারপালদের অবশিষ্ট দেখে বিদিশার উদয়গিরির গুহাগুলির কথা মনে পড়ে যায়। 


    এলিফ্যান্টা জেটির পাশের ছবি। পঞ্চায়েত পাঁচ টাকা করে নিচ্ছে , কিন্তু এই দ্বীপের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে পারেনি। স্টিমারের ছেলেগুলো আবার দেখলাম এই জেটি থেকে জাল ফেলে প্লাস্টিক খাওয়া মৌরলা, ছোট পমফ্রেট ধরেছে।
     

    ফেরত আসার সময়। দ্বীপের পিছনে আছে জওহরলাল নেহেরু বন্দর। ছবির ডানদিকে ইন্দিরা ডকের সঙ্গে তার যোগ করতে বানানো ট্রান্স হারবার সি লিংক দেখা যাচ্ছে।
     
    ফেরত আসার সময় নিচের ডেকে বসলাম। তাতেও বৃষ্টি এল একসময়। মাথায় জল না লাগলেও গায়ে ছাঁট লাগে। গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ায় নেমে দেখা গেল বিকেল হয়ে আসছে বলে ভিড় কম এখন। ঠান্ডা বাসে ছ টাকার টিকিট কেটে চার্চ গেট স্টেশনের দিকে যাত্রা। লোক্যাল ট্রেনে জুহু যেতে হবে। 
     
    চার্চ গেট থেকে সান্টা ক্রুজ স্টেশন দশ টাকা টিকিট। পাশাপাশি চারখানা লাইনে পাঁচ মিনিট বাদে বাদে স্থানীয় ট্রেন আসছে, আবার ওটাই উল্টোপথে ছেড়ে যাচ্ছে স্টেশন। 
    প্রথম প্ল্যাটফর্মের ট্রেনটায় ওঠার সময় দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম - যাবে সান্টা ক্রুজ ?
    "এইটা ফাস্ট লোকাল। সব স্টেশনে থামবে না। মুম্বাই সেন্ট্রাল, বান্দ্রা এইসব গুলোতে থামবে। সান্তা ক্রুজের লোকাল ধরতে হলে ১ বা ২ নাম্বার প্ল্যাটফর্ম থেকে স্লো লোকাল ধরুন।"
     
    চার্চ গেট থেকে ছেড়ে মেরিন লাইন্স, চারনি রোড, গ্র্যান্ট রোড, মুম্বাই সেন্ট্রাল। থামতে থামতে যাচ্ছে। বান্দ্রা, খার রোড পেরিয়ে সান্তা ক্রুজে নেমে উবের অটো। জুহু তারা রাস্তা ধরে যাবার সময়েই বোঝা গেল এই এক দামি এলাকা। লোকজনের পোশাক, গাড়ি, দুপাশের খাবার জায়গা, হোটেল দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছে। অথচ জুহুর সৈকত এত নোংরা যে সন্ধ্যেবেলা কিছুক্ষন পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে প্লাস্টিক এসে ঠোকরাচ্ছে। কালো লম্বা প্লাস্টিক জড়িয়ে যাচ্ছে পায়ে। সেসব দেখে আর আরো উত্তরে ভারসোভা সৈকত যাবার প্রবৃত্তি হল না। কিছুক্ষণ বাদে বাদেই মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ উড়ে আরব সাগরের দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। 
     
    পরেরদিন সকালে আবার সান্তা ক্রুজ থেকে বান্দ্রার ট্রেন ধরা। বান্দ্রা স্টেশনের বাইরেই বাস স্ট্যান্ড। সবাই বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে বাসের দেখা নেই। শেয়ার অটো ওয়ালা হাঁকছিল - "আজাও বান্দ্রা। শারুখ সলমন। কুড়ি টাকা।"
     
    অটো বান্দ্রা ফোর্টের সামনে নামিয়ে দেয় কিন্তু পুরোনো আমলের কেল্লা বন্ধ এখন। সারাইয়ের কাজ চলছে। বান্দ্রা ওরলি সমুদ্র সেতুকে পিছনে রেখে ছবি তুলতে ব্যস্ত জনতা।
     

    এই ছবিটায় জুম করলে এক মজার দৃশ্য- 
     

    ছিপ ফেলে মাছ ধরতে ব্যস্ত 
     
    এই দিকের বাসগুলো সাধারণ, লড়ঝড়ে। ফেরার সময় বান্দ্রা ব্যান্ডস্ট্যান্ড থেকে পাঁচটাকা টিকিটে আবার পশ্চিম বান্দ্রা স্টেশনে ফেরা। বাস থেকেই মন্নতের সামনে ছবি তুলতে ব্যস্ত জনতাকে দেখা গেল। 
     

    বান্দ্রা ট্রেন স্টেশন
     
    আবার মুম্বাই সেন্ট্রালে নেমে মালাবার পাহাড়ে গিয়ে দক্ষিণী রেস্তোরাঁয় খাওয়া। কোনো খাবার জায়গাতেই হাত ধোবার বেসিন নেই। স্থান সংকুলান। ফিঙ্গার বোল দিয়ে যায়। মালাবার পাহাড় আর জুহু তারা রাস্তা দুজায়গাতেই একই জিনিস দেখলাম। 
     
    মালাবার পাহাড়ের শেষ পর্যন্ত হেঁটে গেলে রাজ্যপালের ভবন। সকাল ছটা থেকে আটটার মধ্যে এলে ঢোকা যায়। এখন এগারোটা বাজে। পাশে বহুতলগুলির গ্যারেজের দেওয়ালে সমুদ্রের নোনা হাওয়া আছড়ে পড়ছে। মালাবার পাহাড়ের প্রাচীন ওয়াকেশ্বর মন্দিরও পর্তুগিজরা ধ্বংস করেছিল। মালাবার পাহাড় থেকে ফের বাস পাল্টে পাল্টে মুম্বাইয়ের জাদুঘর ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ বাস্তু সংগ্রহালয়। একটু বেশি টিকিট, দেড়শো টাকা। ওই জাদুঘর নিয়ে পরে লিখব। 
     

    জাদুঘরের পিছন দিকেই কালো ঘোড়া চত্ত্বর। দালাল স্ট্রীট। 
     
    রবিবার ছুটির দিন বলে স্টক এক্সচেঞ্জের সমস্ত রাস্তায় হলুদ গেট ফেলা। নিরাপত্তারক্ষীরা বসে আছে। কেউ হেঁটেও ঢুকতে পারবে না। আশেপাশের বাড়িগুলি ভাড়া নিয়ে যাবতীয় দেশী এবং বিদেশী ব্যাংকের বাণিজ্য শাখা। জুহুর মত এখানেও অনেক দামি খাবার জায়গা ইত্যাদি। 
     

     

    কালো ঘোড়ার পাশের দিকে এশিয়াটিক সোসাইটি , রাজ্য পাঠাগার ইত্যাদি। পিছনে আর বি আইয়ের বাড়ি। 
     

    সুন্দর রক্ষণাবেক্ষণ 
     
    স্যার দিনশ ম্যাকেঞ্জি পেটিটের মূর্তি সমেত এই এলাকায় পার্সিদের প্রতিপত্তি। পেটিট, টাটা, গোদরেজ, মিস্ত্রি, ওয়াদিয়া, ইরানি, ভাবা, পুনাওয়ালার মত পার্সি [জরাথ্রুষ্ট] ধর্মাবলম্বীরা এই কালো ঘোড়ার বা মেরিন ড্রাইভের মত দক্ষিণ মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় অম্বানীর মত গুজরাতিদের ভিড়তে দেননি। তাদের রিলায়েন্স বা জিও সেন্টার গড়তে হয়েছে অনেক দূরে পূর্ব বান্দ্রায়। 
     

    গির্জার পিছনে এক্সচেঞ্জ 


    ১৮৬৪ সালে বানানো ফ্লোরা দেবীর ঝর্ণা 


    অন্য কোণ থেকে 
     
    এই ঝর্ণা থেকে হাঁটতে হাঁটতে গেলে আবার চার্চগেট। সেখান থেকে মুম্বাই সেন্ট্রাল ফিরতি রাজধানীর জন্য। 
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ০৭ জুলাই ২০২৪ | ৪৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.56.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২৪ ২০:০২534347
  • বাঃ, খুব সুন্দর। আমি অনেক বছর আগে গেছিলাম মুম্বই। তখন তার নাম বম্বে ছিলো। প্লাস্টিকের বোলবোলাও এত বেশি ছিলোনা। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো। মেঘলা ছবিগুলো চমৎকার।
  • Aditi Dasgupta | ০৭ জুলাই ২০২৪ ২১:০৮534353
  • এমন ছবি দেখিয়ে গল্প বলা ভ্রমণ কাহিনী মন ভরিয়ে দিল। ছোটবেলায় এরম পড়তাম খুব। এমন কেউ লেখেন এখনো জানতামনা। 
  • | ০৭ জুলাই ২০২৪ ২১:৪৮534357
  • বাহ বাহ।
    জাহাঙীর আর্ট গ্যালারি যাও নি? ব্রিটানিয়া এন্ড কোঙে খাও নি? 
  • | ০৭ জুলাই ২০২৪ ২১:৪৯534359
  • *জাহাঙীর 
  • পাপাঙ্গুল | ০৮ জুলাই ২০২৪ ১৬:১৯534380
  • ধন্যবাদ কেকে , অদিতি , দ দি , শুভ্রনীল। 
     
    @ দ দি , জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারি একবার উঁকিঝুঁকি মেরে বেরিয়ে এলাম। প্রদর্শনী কিছু চলছিল না। ব্রিটানিয়া , লিওপোল্ড ক্যাফে কোলাবার এইসব খাবার জায়গাগুলো মিস হয়ে গেছে laugh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন