এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বাঙালের রোমানিয়া গমন! 

    কিংবদন্তি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১২ জুন ২০২৩ | ১৪৭৫ বার পঠিত | রেটিং ১ (১ জন)
  • ০৯.০৬,২০২৩ 

    বন্ধু সোহাগ আর এলাকার ছোট ভাই শিশির বুখারেস্ট ঘুরে গেল। ওদেরকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করা যত আনন্দের ছিল তারচেয়ে সম্ভবত ঢের বেশি কষ্টের ছিল ওদেরকে বিদায় দেওয়া। আমার জগত সংসার যেন উলটপালট হয়ে গিয়ে ছিল ওদেরকে বিদায় দিতে গিয়ে। বিমানবন্দরে আর যাই নাই, ওদেরকে বিমানবন্দরে যাওয়ার সাঁটল ট্রেন আছে, ওইটাতে তুলে ওইখান থেকেই বিদায় নিয়েছিলা। চোখ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল,  কাঁচাপাকা চুলের একজন মানুষ কান্নাকাটি করছে এইটা নিশ্চয়ই সুখকর কিছু হবে না? রঙিন চশমায় চোখ ঢেকে বাসে উঠে ফিরে আসছি আপন ডেরায়। ওরা জার্মানি ফিরে ছোট্ট করে জানিয়েছিল, নামছি! 

    তিন চারটা দিন যেন নিমিষে চলে গিয়েছিল। আমার চাকরি বদলের কারণে আমি একটা ফাঁক পেয়েছিলাম। রোমানিয়ায় পাঁচ দিনের কিসের যেন ছুটি পড়েছিল। সব বন্ধ, তাই আমাকে কোথাও নতুন করে ঢুকাতে পারছিল না কাজে। আমি এই সুযোগে চক্কর দিলাম ওদের সাথে। 

    ওরা বিমানবন্দরে নেমেই একটা গাড়ি ভাড়া করে ফেলল তিনদিনের জন্য। আর জার্মানি থাকতেই ওরা এয়ারবিএনবির মাধ্যমে একটা বাড়ি ভাড়া করে ছিল। গাড়ি নিয়ে সোজা বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। এগুলা সবই আমার জন্য নতুন। ছোট্ট একটা বাড়ি, ঘরের ভিতরে প্যাঁচানো সিঁড়ি। নিচে বসার ঘর, রান্নাঘর আর বাথরুম। উপরে শোয়ার ঘর। ছোট্ট জায়গায় এমন কায়দা করে বাড়ি বানিয়েছে যে সব সুন্দর করে সুন্দর হয়ে গেছে। বাসা বুঝে নিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলাম। এবং আমি পড়লাম বিপদে! 

    ওরা কোন পরিকল্পনা করে আসে নাই। এইটা আমি জানি না। এদিকে বুখারেস্টে আমি নিজেই নতুন। সবে কেবল বাস নাম্বার আর রাস্তার হালকা পাতলা ধারণা হচ্ছে। এত বড় একটা শহরের সিকি ভাগের সিকি ভাগ হয়ত আমি এখনও ঘুরে দেখিনি। ওরা দেখি আমাকে জিজ্ঞাস করছে, কই যাব? কোন দিকে যাব? আমি খাবি খেতে থাকলাম। বললাম, আগে খাওয়া দাওয়া করতে হবে না? হ্যাঁ, এইটা জরুরি। চল মুসাফির! 

    আমার দৌড় যে দিকে সেদিকে গাড়ি নিতে বললাম। এক জায়গায় গাড়ি রেখে খাওয়ার জায়গা পছন্দ করে বসে পড়লাম। অবর মার্কেটের শুরুতেই একটা তুর্কি দোকান আছে, ওইখানেই খাওয়া হল। এবার? শিশির শুধু বলছে ভাই শহর ছেড়ে বাহিরে চলেন। আর সোহাগের কথা হচ্ছে বাহিরে যাওয়া যাবে না। ঘুরতে হবে বুখারেস্টেই! আর এই বানীর পরেই আমি বুঝে গেলাম দানিয়ুব বা কৃষ্ণ সাগর আর এবার দেখা হচ্ছে না। 

    অজানা দিকে গাড়ি ছুটল। ঘুরে ঘুরে তেল পুড়ল, আমরা ক্লান্ত হলাম। ফিরে গেলাম আমাদের অস্থায়ী ঠিকানায়, হাতমুখ ধুয়ে আবার বের হলাম রাতের খাওয়ার জন্য। আবার তুর্কি দোকান। শর্মা, মুরগি ভাজা ইত্যাদি। পরেরদিনের চিন্তায় আমার ঘুম হারাম। কই যাব? 

    গেলাম পুরান শহর, ওল্ড বুখারেস্ট। চমৎকার সব দালান, ভ্রমণ পিপাসুরা ভিড় করে হাঁটছে। কিন্তু এদিকে সমস্যা হল গাড়ি পার্কিং নিয়ে। সব জায়গায় টাকা লাগে এমন নোটিশ টাঙান। পরে অনলাইন পেমেন্ট করে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে ঘুরলাম। দুপুরে পিজ্জা পেপসি খেয়ে খাবারের কাজ সারলাম। আবার ঘুরা শুরু হল। 

    ওল্ড টাউনে একটা গির্জা দেখলাম। পুরাতন অনেক। নাম ধাম খুঁজে পেলাম না। এখানে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখলাম। ঠিক আমাদের দেশে মাজারের মত। সবাই মোমবাতি নিয়ে যাচ্ছে, জ্বালিয়ে দিয়ে প্রার্থনা করছে। গির্জায় মোমবাতি জ্বালায়, এমন সিনেমা দেখছি, বইপত্রে পড়ছি। কিন্তু এইটা গির্জার বাহিরে, ঠিক মাজারের মত,  একটা ঘর, তার দেওয়ালে মোমবাতি জ্বালাচ্ছে। বন্ধু সোহাগ ছবি তুলে ফেলল দাঁড়িয়ে, আমি ভাবলাম কে আবার কি ভাবে! দেখলাম তারাও ছবি তুলছে। 

    এরপর গাড়ি নিয়ে পার্লামেন্ট ভবন, বুখারেস্টের আইকনিক পয়েন্ট। আবার ছবি তুলা হল, বসে থাকা হল, তামশা দেখা হল। তামশা হচ্ছে একটু অপেক্ষা করলেই বাংলাদেশ, ভারত নেপালের নতুন আসা লোকজন সব ছুটে আসছে, ছবি তুলছে, সেলফি তুলছে। এইটা একটা দেখার মত দৃশ্য। আমরা যে কত ঢঙে ছবি তুলতে পারি! 

    যাওয়ার জায়গা শেষ। পার্কে বসে রইলাম। বিকালে ফিরলাম ঘরে। আসার আগে বাজার করে আসলাম। সোহাগ মাংস ছাড়া তেহারি রান্না করল, ডিম দিয়ে। বহুদিন পরে অমৃত খাইলাম মনে হল। সোহাগের রান্নার হাত অসাধারণ। 

    পরেরদিন আমি আর সোহাগ সারাদিন ঘুমালাম, শিশির অনলাইনে ওর চাকরি করল। বিকালে বের হলাম। আমাকে যেহেতু আবার আমার ক্যাম্পে ফিরতে হবে তাই আমি ভাবলাম ব্যাগ রেখে আসি, পরে খালি শরীরে ফিরে যাব। ওদের নিয়ে আসলাম ক্যাম্পের কাছে। ওরা বাহিরে গাড়ি পার্ক করে দাঁড়াল। আমি ঢুকলাম। ক্যাম্পের সবাই আমাকে দেখে আকাশ থেকে পড়ল। সবার প্রশ্ন, আপনে গেম মারেন নাই? আমার রুমে ঢুকে দেখি কে জানি আমার বিছানার চাদর, বালিশ নিয়ে চলে গেছে! মানে ওরা নিশ্চিত যে এই বান্দা নাই, উড়াল দিয়ে দিছে। 

    যারা জানত আমি কই গেছি তারা একটা কাণ্ড করল। ওরা সোহাগ শিশিরকে ধরে আমাদের রুমে নিয়ে আসল। কারণ? যত না আপ্যায়ন তার চেয়ে বেশি জানার আগ্রহ। কীভাবে কেমনে শেঙ্গেনে ঢুকা যায়! কোন সহজ তরিকা আছে কি না! শেঙ্গেন হলে সুবিধা কী পাবে? পাবে কি? ইত্যাদি হাজারও প্রশ্ন সবার। আমি ওদেরকে চিনি, ওরা দুইজন কেউই এই সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না। সোহাগ যদিও গম্ভীর ভঙ্গিতে নানা গল্প করল। যার বেশির ভাগ ও কত দারুণ আছে জার্মানিতে, জার্মানি কত উন্নত, রোমানিয়া কেমন হতচ্ছাড়া একটা দেশ ইত্যাদি! 

    সেদিন রাতেও থাকলাম ওদের সাথেই। সকালে প্রথম কাজ বাসাটা ছেড়ে দেওয়া, দ্বিতীয় কাজ গাড়ি ফেরত দেওয়া। দুইটাই খুব সুন্দর করে হয়ে গেল। কিন্তু এরপর? ওদের বিমান সন্ধ্যা আটটায়, আগে ঢুকলেও ছয়টায় হয়ত ঢুকবে। সারাদিন কী করা যায়? ট্রেনে করে গারা ডি নর্ডে আসলাম। ট্যাক্সি করে বড় একটা শপিং মলে ঢুকলাম। চক্কর খেলাম, লাঞ্চ করলাম তারপর আবার ট্রেন স্টেশনে। এখান থেকে শাটল ট্রেনে সোজা বিমানবন্দর যাওয়া যায়। আমি ওদের সাথে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাব ভাবছিলাম। পরে মনে হল, না আর মায়া বাড়িয়ে লাভ নাই। আমাকে এখনই শক্ত হয়ে ওদেরকে বিদায় দিতে হবে। আরও কিছুক্ষণ ওদের সাথে থাকা না থাকা সমান। দেরি করলে আমার জন্য আরও কষ্টকর হবে। এখন বিদায় দিলে তবুও মাথায় থাকবে ওরা এখনও আছে বুখারেস্টে। কিন্তু যখন ইমিগ্রেশনে ঢুকে যাবে তখন বিদায় দিলে আর কিছুই থাকবে না। গেল মানে গেল! আমি ঝট করে হাত মিলিয়ে বললাম, তাইলে যা, ফোন দিস, ভাল থাকিস, কথা হবে। 
    ওরাও বুঝতে পেরেছে। ওদেরও হয়ত খারাপ লাগছিল। ওরা কথা বাড়াল না। শেষ হলে তিনদিনের অদ্ভুত এক সফর। 

    যা আমাকে অবাক করেছে তা হচ্ছে সোহাগের আচারন। ও বারো বছর ধরে আছে জার্মানি। এখন ও জার্মানদের থেকেও বেশি জার্মান হয়ে গেছে। আর সমানে তুলনা! আমি বার্লিন, মিউনিখ দেখি নাই। ঢাকা কলকাতা দেখা চোখে বুখারেস্টকে বেশ উন্নত শহরই মনে হয়েছে। কিন্তু ওদের কাছে মনে হচ্ছে এ কাহা আ গায়ে হাম! পদে পদে দুইজন, বিশেষ করে সোহাগ বলে যাচ্ছে আরে এইটা জার্মানি হলে জীবনেও হতে পারত না। এমন করে গাড়ি চালালে এক্ষণ জরিমানা খেত, রাস্তা এমন কেন? শহরের দালানকোঠা এমন কেন? বড়, একটু আধুনিক ঢাকা শহর বলে দিয়ে রায় দিল দুইজনই। পুরাতন বুখারেস্ট ওদের কিঞ্চিৎ চাহিদা মেটাতে পারছে। বাকি সব বাতিল! 

    আমি বুঝাতে পারলাম না, সব শহরের আলাদা সৌন্দর্য আছে। একটার সাথে আরেকটার তুলনা হয় না। শেরপুর যে নগণ্য একটা জেলা শহর বাংলাদেশের তার সাথেও তো অন্য উন্নত শহরের তুলনা দিব না আমি। শেরপুরেরও আলাদা সৌন্দর্য আছে, যেমন আছে মিলানের,  রোমের, বুদাপেস্টের, কলকাতার, ঢাকার এবং বুখারেস্টের! 

    আমি ওদের সাথে তর্কে যাইনি। শুনলাম ওদের মন্তব্য আর মনে মনে হাসলাম। আমার ধারণা সোহাগ টিক চিহ্ন দিতে আসছিল বুখারেস্ট। আমার সাথে দেখা করা একটা কারণ। বড় কারণ হচ্ছে টিক চিহ্ন দেওয়া। রোমানিয়া ঘুরে আসছি, বুখারেস্ট দেখে আসছি, ভ্রমণ তালিকায় টিক দিয়ে গেল ও। ও সারাজীবন এখন বলতে পারবে রোমানিয়া ঘুরে আসছি, বুখারেস্ট দেখা আছে আমার। 

    সোহাগের আচারনের আরেকটা দিক হচ্ছে তুর্কি দোকান খোঁজা। জার্মান হয়ে গেছে কিন্তু এখনও তুর্কি দোকান খুঁজে! হালাল খাবারের জন্য মরিয়া। অথচ ও নিয়ম করে মদ খায় আমি জানি! ও কত বড় পীর সাহেব তাও আমি জানি! হুট করেই এখানে এসে হালালের জন্য কেন মরিয়া হয়ে গেল জানি না। শেষদিন একটা চাইনিজ দোকানে বসছিলাম লাঞ্চের জন্য। আমরা ধুমায়া গরু, মুরগি খেলাম।  ও গরুর ঝোল নিলো, মুরগি এক টুকটা মুখে দিল, চিংড়ি ভাজা ছিল তাই দিয়া খাইল! কেন? এগুলা হারাম! সঠিক উপায়ে জবাই করা হয়নি হয়ত তাই খাবে না! এদিকে সস্তায় লিডল থেকে মুরগি কিনে খাওয়া আমি চিন্তা করলাম এখন আমার কী করা উচিত? আগে যা করছি তাই করলাম, খাবারের আবার ধর্ম! এই চিন্তা নিয়ে আবার খাবারেই মনোযোগ দিয়ে ছিলাম। 

    শিশির আমাকে বলছে ভাই এরপরে আমি আবার আসব। আমি আর আপনে, সোজা বুখারেস্ট থেকে বাহিরে, কন্সটান্টা, দানিয়ুব যে দিকে ইচ্ছা! আমি বলছি আয়, এই দেশ, এদের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় না করে আমি এক পাও যাব না কোথাও। আসছি তিন মাস হয়নি, কাজেই কোন তাড়া নাই, দেখব সবই। 
      
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১২ জুন ২০২৩ | ১৪৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১২ জুন ২০২৩ ২২:২২520388
  • এই লেখাটি পড়ে আমি এত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি যা আমার কাছে অনেক দিন অচেনা হয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের জন্য। ভালো থাকবেন।
  • যোষিতা | ১৩ জুন ২০২৩ ০১:২৪520391
  • আপনার মনে গভীরতা আছে সাদেকভাই।
  • হুম | 51.159.***.*** | ১৩ জুন ২০২৩ ০২:০১520393
  • বাংলাদ্যাশের ত সব ইল্লিগ্যাল ইমিগ্রেন্ট, শেঙ্গেনে ঢুকতে চায়।
  • যোষিতা | ১৪ জুন ২০২৩ ০২:০১520409
  • লিগাল ও ইল্লিগালের তফাৎ টা আপেষিক।
  • যোষিতা | ১৪ জুন ২০২৩ ০২:০২520410
  • আপেক্ষিক
  • কিংবদন্তি | ১৪ জুন ২০২৩ ২৩:১৪520422
  • যোষিতা দি, আমি উনার কথাটাই বুঝি নাই। বাংলাদেশের সব ইল্লিগ্যাল মানে? হাজার হাজার পুলাপান স্টুডেন্ট ভিসায় ইউরোপ ঢুকছে। আমার পরিচিত অন্তত দশ জন, আমার বাড়ির আশেপাশে অন্তত চার পাঁচজন স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করছে। আরও কয়েকজন পাইপলাইনে আছে। সব ইল্লিগ্যাল মানে কী? আমি নিজেই ইল্লিগ্যাল না এবং শেঙ্গেনে ঢুকার জন্য ছটফটও করছি না। আর ইল্লিগ্যাল লিগ্যালের তফাৎ তো অবশ্যই আপেক্ষিক, আমি একমত। 
  • যোষিতা | ১৫ জুন ২০২৩ ০২:২৫520424
  • সেটাই। 
    আমার চিন্তাধারা একটু অন্যরকম।
    বিত্তশালী দেশে ভাল জীবিকার আশায় পাড়ি জমানো স্বাস্থ্যকর চিন্তা বলে আমার মনে হয়।
    সেই দেশগুলোও তেমন জানে। 
    তাদেরও ওয়ার্কফোর্স দরকার। সর্বস্তরেই দরকার তাদের।
    এবার তারা কিছু নিয়মাবলী স্থির করে নিয়েছে। সেই স্থির করা নিয়মাবলী মাঝে মধ্যেই পরিবর্তিত হয় শ্রমের জোগান কতটা কোন কোন শিল্পে বা অর্থনীতির উন্নতির জন্য প্রয়েজন সেই মতো।
    আরেকটা জিনিসও কাজ করে, সেটা হচ্ছে ইমিগ্রেশন আইন। প্রচুর দেশ মনে করে যে অন্য "জাতের" এবং "ধর্মের" মানুষের অনুপাত তাদের দেশে বেশি হয়ে গেলে সেই দেশটার জাতিগত পরিচয় ঘেঁটে যেতে পারে।
    সেজন্য ইয়েরোপের মধ্যে যতটুকু বুঝেছি অন্য ইয়েরেপীয় দেশ থেকে শ্রমের প্রয়োজনে লোক নিতে দ্বিধা নেই, ককেশিয়তা নষ্ট হবে না, দেশগুলো মোটা মুটি সাদা মানুষের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতেই থাকবে।
    সাদার সঙ্গে বিয়ে করে নিলে এরা আইনত ঠেকাতে পারে না নাগরিকত্বের অধিকার।
    এই নিয়মগুলো এরা নিজেদের সুবিধেমত সেট করে নিয়েছে।
    ইয়োরোপের বেশ কটি দেশ বিগত কয়েক শতাব্দীতে এশিয়া আফ্রিকা অ্যামেরিকার দেশগুলো যে পরিমানে তাণ্ডব চালিয়েছে, ডাকাতি করে ছিবড়ে করে দিয়েছে দেশগুলোকে — যেটাকে ভদ্রভাষায় কলোনিয়ালিজম বলে থাকি, সেই কলোনিয়ালিজমেরই ফল এখন পীড়িত দেশগুলো ভুগছে, এবং সেইসব দেশগুলো থেকেই বড়লোক দেশে যাবার জন্য এত আকাঙ্খা।
    যারা ডাকাতের মত লুঠপাট করেছে শতাব্দী ধরে ধরে, তাদের দেশে গিয়ে থাকতে গেলে এখন একশো আইন।
    তাই যদি কেউ সেই আইনের ফাঁকফোঁকর গলে সেসব দেশে যেতে চায়, আমি ব্যক্তিগতভাবে এতে দোষের কিচ্ছুটি দেখি না। স্পষ্ট কথা। 
     
  • aranya | 2601:84:4600:5410:71ef:c87d:3d39:***:*** | ১৫ জুন ২০২৩ ০৬:৫৯520427
  • সুন্দর 
  • কিংবদন্তি | ১৭ জুন ২০২৩ ০১:০৯520453
  • যোষিতা দি, এক্কেরে মনের মত কথা। আমারও কথা এইটাই। 
  • যোষিতা | ১৭ জুন ২০২৩ ০৪:১২520455
  • আরও কী জানেন সাদেকভাই, এখানেও কে বেশি যোগ্য কে কম যোগ্য, এই ফ্যাচাং কম নয়।
    মহাভারত নামের একটা মহাকাব্য আছে। বিরাট মোটা সাইজের বই। তাতে অসংখ্য গল্প ঘটনা যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের সবচেয়ে বড়োটার নাম কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। ম্যাক্সিমাম ভিলেন এবং বেশ কয়েকজন হিরো ঐ যুদ্ধে মারা যান। তা যুদ্ধটুদ্ধ শেষ হবার পরে, পাঁচজন হিরো ও তাঁদের একজন বৌ পাহাড়ি দুর্গম পথ ধরে স্বর্গের রুটে হাঁটতে শুরু করলেন। সাধারণত জ্যান্ত অবস্থায় স্বর্গে যাওয়া যায় না, কিন্তু প্রচণ্ড সৎ অনেস্ট হলে ঐ রুট বরাবর গেলেই স্বর্গে পৌঁছনো যেত তখনকার দিনে।
    পাঁচস্বামী ও এক স্ত্রীর মধ্যে এক এক করে পটাপট সব মরে যেতে লাগল, খুচখাচ পার করেছিল বলে। তা সবচেয়ে অনেস্ট লোকটি, যার নাম যুধিষ্টির, সেও স্লাইট পাপ করেছিল ( একবার প্রায় মিথ্যের কাছাকাছি কী একটা বলে ফেলেছিল) তাই তাকে নরক দর্শন করিয়ে স্বর্গে যাবার ব্যবস্থা হয়েছিল।
    যুধিষ্ঠির স্বর্গে পৌঁছে দেখে, সে পৌঁছানোর আগেই যাবতীয় ভিলেন পাপী তাপি লোকজন, এমন কি তার বৌ ভায়েরা সব স্বর্গে আগেই পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে সবচেয়ে পাজি শয়তান শত্রুগুলোও সেখানে বহু আগে থেকেই বসবাস করছে। যুধিষ্টিরের মনে সম্ভবত ধাক্কা লেগেছিল স্বর্গেও এরকম অবিচার দেখে। এত কষ্ট করে সারাটা জীবন সৎ হয়ে কাটালাম, মিথ্যেটুকু পর্যন্ত বলি নি, এত কৃচ্ছসাধনের ফল এই? সবকটা হারামি বজ্জাত পাজি শয়তানগুলো যুদ্ধে মরে গিয়েও স্বর্গে পৌঁছে দিব্যি মজা লুটছে?
    তা আমাদের মধ্যে যারা বড়লোক দেশে খেটেখুটে রাতদিন এক করে পড়া মুখস্ত করে করে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে, ভাল নম্বর পেয়ে বিদেশ যায়, কিংবা চাকরিতে বসকে তেল মেরে বা প্রাণান্ত পরিশ্রম করে শেষ পর্যন্ত বিলেত যাবার দরজা খুলতে পারে, যারা কত সুখ সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে, বোরিং ব্যাপারে সময় কাটিয়েছে কৃতিত্বের সঙ্গে বিলেত যাবে বলে— তারা যখন বিদেশে এসে দেখে তাদের আগেই অন্যরা এসে বসে রয়েছে, তখন তাদের মনের অবস্থা যুধিষ্টিরের মত হয়।
    বুঝলেন? তাদের জন্য বড়ই ফ্রাসট্রেটিং , বড়ই বেদনার।
  • যোষিতা | ১৭ জুন ২০২৩ ০৪:১৪520456
  • খুচখাচ পার পাপ করেছিল বলে
  • বিপ্লব রহমান | ১৭ জুন ২০২৩ ০৫:৫১520460
  • সাদিক, যখন অনেক ছবি তুলা হইছে দুই/চাইরখান লেখার মইধ্যে দিয়া ফালান। 
     
    গেম মারা চলবে না। 
     
    যোষিতা, আপনার  শেষ দুটি মন্তব্য ভাবাচ্ছে। এ নিয়ে আলাদা করে লেখার দাবি জানাই। 
     
     
  • কিংবদন্তি | ১৮ জুন ২০২৩ ১৯:০৫520480
  • যোষিতা দি, সোহাগ ঠিক এই আচারনই করেছে। আমাকে সরাসরি বলেনি, আমাদের এক কমন বন্ধুকে ফোনে বলেছে, এত এত বাংলাদেশী রোমানিয়ায়! মানে এত বাংলাদেশী কেন আসবে ইউরোপ! ও ইতালি নিয়েও একই মন্তব্য করেছিল আমার কাছে। ইতালি নষ্ট হয়ে গেছে কারণ ইতালিতে বাংলাদেশী এসে ভিড় করেছে! ওর সব কষ্ট যেন নষ্ট করে দিচ্ছে এরা সহজে ইউরোপ এসে। 
     
    বিপ্লব ভাই, ছবি শুরুর দিকে একটা লেখায় দিছিলাম। আর দেওয়া হচ্ছে না। ল্যাপটপে লেখি, ছবি থাকে মোবাইলে। সমন্বয় হচ্ছে না বলে দেওয়া হচ্ছে না। 
  • যোষিতা | ১৯ জুন ২০২৩ ০১:০৮520486
  • বিপ্লব ও সাদেক,
    লিখতে হবে বড়ো করে আমার পশ্চিমইয়োরোপবাসের চ্যাপ্টারখানা।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১৯ জুন ২০২৩ ১৪:১৩520527
  • @যোশিতা লিখুন
    আপনার আগের পর্বের সেই বাংলাদেশের কবি কে নিয়ে লেখাটা খুব ভালো হয়েছিল। অনেক গ্রে এরিয়াতে আলো ফেলেছেন।
     
    আমেরিকায় অভিবাসী ও শরণার্থীদের আসা ও বসবাস নিয়ে গুরুতে আগে একজন দারুন সিরিজ লিখতেন। অভিবাসনে সহায়তা করা এন জি ওর সাথে যুক্ত ছিলেন। ওনার লেখা আর পাইনা।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১৯ জুন ২০২৩ ১৪:১৯520528
  • @সাদেক ভাই, আপনার সিরিজটাও বেশ ভালো হচ্ছে। মাঝে মাঝে ছবি টবি গুঁজে দিলে আরো আকর্ষণীয় হবে বৈকি। আর যোশীতা যা বলেছেন যুধিষ্ঠির এর উপমা দিয়ে, তা সত্যিই অনেক মানুষের প্রকৃত মনোভাব অন্যভাবে বিদেশ আসা মানুষদের প্রতি। তারা দেশীয় মানুষদের বিশেষত স্বল্প শিক্ষিত গরিব মানুষদের একটু নিচু চোখে দেখেন আর মনে করেন দেশের বিভিন্ন সমস্যার জন্য এরাই দায়ী। এরা এখানে হাজির হলে দেশীয় সমস্যাগুলো আবার এখানে এসে জুটবে। তাদের প্রিয় ফুটফুটে বিদেশটা নোংরা হয়ে যাবে।
  • যোষিতা | ১৯ জুন ২০২৩ ২০:২১520536
  • রমিত,
    একদম।
    তার ওপর ইদানীং রিজার্ভেশন নামক একটা জিনিস নাকি চালু হয়েছে পিছিয়ে পড়া ভূমিসন্তানদের জন্য।
    এ ব্যাপারে একজনের মতামত কোট আনকোট নীচে দিয়ে দিচ্ছি।
     
    There is a similar situation in the US now. What started as "affirmative action" (providing some opportunities to underrepresented communities) has become DEI (Diversity, equity and inclusion) which aims to replace a large number of deserving candidates with certain community members who feel that their contribution to the society has been underrepresented. This is leading to a similar situation, where so-called good universities are not accepting hard-working, academically proficient students ("Asians"). Additionally, when we recruit people, we are forced to consider undeserving candidates based on race. US US going down the path of reservation and its not going to go down well.
    No wonder some people feel that DEI means divisivity, exclusivity, and indoctrination.
  • কালনিমে | 103.244.***.*** | ২৪ জুন ২০২৩ ০০:২৬520669
  • আজ দেখলাম cnn ও গ্রিসের কাছে মাইগ্র্যান্ট বোট ডোবা আর টাইটান সাবমার্সিবল এর সোশাল আর মিডিয়া ইমপ্যাক্ট তুলনা করছে। এটা ভারতীয় জনতা আর মিডিয়ার জন্যও ঠিক মনে হল- মানে ইমিগ্র্যান্ট লাইফ ডেফিনিটলি সস্তা বা মূল্যহীন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন