চুল বড় করার সুবাদে আমাকে চুলে মায়ের ক্লিপ লাগাতে হয়। এবার চুলটা এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে চুল শুধুমাত্র ক্লাচ (খামচি ক্লিপ, যেটা কাঁটাদার হয়) দিয়ে আটকানো যায়। আর গরমের জন্য ঘাড়ের উপর চুলটাকে ফেলে রাখা যায় না তাই বেঁধে রাখতে হয়।
তো, কাল রাত্রে আমার হাত থেকে পড়ে মায়ের একটা ক্লিপ ভেঙে যায়, যেটা আমি ব্যবহার করতাম। আজ সকালে মা বাজারে গিয়েছিল এবং দেখি বাজারের ব্যাগে করে আমার জন্য প্রায় একরকম দেখতে একটা ক্লিপ নিয়ে এসেছে।
সত্যি অবাক হয়ে গেলাম, যে মা নিজে হাতে আমার জন্য ক্লিপ কিনে নিয়ে এসেছে। মায়ের যদিও আমার সাজগোজ সম্পর্কে কোনোদিন কোনো সমস্যা ছিল না। ছোটবেলায় যখন অতিরিক্ত মেয়েলি ছিলাম, তখনও আমার মা কোনোদিনও আমার মেয়েলি স্বভাব নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেনি। আজ হয়তো সেই মেয়েলি স্বভাবগুলো জীবনে আর নেই, কিন্তু আমি নিজে যে প্রচণ্ডভাবে কুইয়ার সেটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তা সত্ত্বেও আমার মায়ের থেকে টিপিক্যাল রাশভারী পুরুষ চরিত্র না হওয়ার জন্য কোনোদিন কথা শুনতে হয়নি। আমার মা কোনোদিন এই কথাটা উচ্চারণ করেনি – যেটা বাবা বলতো – কেন এমন মেয়ে-ছেলেদের মতন সাজিস? উপরন্তু আমার মা সবসময় এটা বলে এসেছে, যে আমাকে মেয়ে দেয়নি তো কী আছে, এই ছেলে সব মেয়েদের হার মানায়।
এই বিষয়টা আমার মায়ের থেকে শিখেছি, যে কী করে অপছন্দের জিনিসকে এড়িয়ে চলা যায় এবং অন্যের ভালোলাগাগুলোকে নিজের করে নেওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে দেখতে গেলে সামান্য ভ্রূ তোলা নিয়ে আমার বাবা টিপ্পনী কাটত। আমি বেশিরভাগ সময় এড়িয়ে যেতাম, কিন্তু ওই যে জিভে সরস্বতী নিয়ে বসবাস আমার। যেদিন মুখ খুলতাম, বাবা বাকরুদ্ধ হত। আমি যদি এখন নিজের পরার জন্য দুটো কানপাশা কিনে আনি, তাহলে আমার মা আপত্তি করবে না, যে এটা পরে তুই রাস্তায় বেরোবি, তোর লজ্জা করবে না? মায়ের একটা গুণ আমি দেখেছি, কাউকে হাতে ধরে, বলেকয়ে শেখানোর থেকে নিজের কার্যকলাপ দিয়ে অন্যকে শেখানোটা অনেক বেশি স্থায়ী এবং পাকাপোক্ত হয়।
আর আমার মা হাতে ধরে আমাকে যা না শিখিয়েছে, তার থেকে বেশি কিছু শিখিয়েছে মা নিজের চারিত্রিক গুণ দিয়ে।