এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ক্ষমা করো মহাজন, দুটি কবিতা লিখেছি ভুল করে 

    পাগলা গণেশ লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ অক্টোবর ২০২৫ | ৪৯ বার পঠিত
  • বিজ্ঞাপণ 
     
    হয়তো আর কয়েক দশক বাদে,
    চারিদিক ছেয়ে যাবে বিজ্ঞাপনে,
    এখনের থেকেও বেশি,অনেক অনেক বেশি,
    প্রতিটা ঘরের দেওয়াল, রাস্তার পিচ,কংক্রিট বা মাটি কেউ বাদ যাবে না,
    বইয়ের পাতায় ফাঁকা অংশ,
    টাঁকলার টাঁক, লোমহীন বুক হাত পা,
    জামার কাপড় বিজ্ঞাপনে ভর্তি হবে,
    সাদা জামার দাম হবে বেশি,
    আর বিক্রির জিনিস,সে তো ইজ্জত থেকে শুরু করে আলপিন-চিনির দানা,সওওব বিক্রি হবে,
    মানুষের বিবেক,দয়া, মায়া এসবের দাম সবচেয়ে কম হবে,
    মরার পরে লাশও বিক্রি করবে আত্মীয়,
    দুটো টাকা বেশি পেলে,না কেনা গ্যাজেটটা কিনে নেবে হয়তো,
    লাশ তো সেই পচেই যাবে! 
     
     
    বীর জাতির প্রতিনিধি
     
    আমার মৃত্যুর পরোয়ানা জারি হয়ে যাওয়ার পরেও,
    যখন আমি ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম প্রকাশ্য রাজপথে,
    ওদের কয়েকজন আমায় চিনতে পেরেছিল,
    কিন্তু বিশ্বাস করতে পারেনি।
    কি করে এমন দুর্বল জাতির এত বড়ো বুকের পাটা হতে পারে!
    কিন্তু ওরা আমাদের ইতিহাস জানে না।
    ওরা তো ক্লাস ফাঁকি দেয়।
    আমরাই যে কত সাম্রাজ্যের ভীত নড়িয়ে দিয়েছিলাম আগে,
    আমরাই যে সারা পৃথিবী দখল করেছিলাম,
    ওরা জানে না তাই।
    আর সেজন্যই ওরা আমাদের ফেলনা ভেবেছিল।
    আমি আবার ওদের চোখে আঙুল আর বুকে ভয় ধরিয়ে দিয়ে দেখাতে চাই,
    সেই বীরের রক্ত ঘুমিয়ে ছিল,
    শুকিয়ে যায়নি।
    আবার দখল নিতে পারি সব,
    এতদিন নিইনি, বিশ্বাস ছিল তোমাদের প্রতি।
    এবার আগুনের শিখা জ্বেলে সব শোধন করে নেব,
    চিন্তা নেই।
     
     
     
    ছোটলোকের অশ্লীল প্রশ্ন
     
    আমি আগে কোনোদিন পাকা রাস্তা দেখিনি,
    আজ যখন গ্রাম ছেড়ে এলাম,
    বর্ষার কাদায় আমার পা দুখানা হাঁটু পর্যন্ত বুট দিয়ে ঢাকা,
    রাস্তার ধারে লয়ানে পা ধুয়ে যখন রাস্তায় উঠলাম-
    মনে যে কি বিশাল স্বস্তি পেলাম সে বলে বোঝানোর নয়।
    আমি বুঝতে পারলাম আমি কত কষ্টে ছিলাম।
    আমার গ্রামে ইস্কুল ছিল না,
    প্রতিদিন চোদ্দ কিলোমিটার হেঁটে গেলে বন দিয়ে,
    তবে ইস্কুল ছিল একটা,
    তাও তাতে একটি মাত্র মাস্টার,
    সে সর্বহাটের কাঁঠালি কলা,
    জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সব করে।
     
    এখানে এসে দেখলাম ঘরের গাঙ দেয়ালে স্কুল,
    সকাল বেলা গাড়ি যায় আনতে ছেলেদের,
    আবার দিয়ে আসে পড়া হলে,
    আমি বুঝতে পেরেছিলাম,
    দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মানে কী।
    এখানে ঘরের গায়ে ঘর,
    সব পাকার।
    কত কামরা,
    লোকশূণ্য পড়ে আছে,
    কেউ থাকে না।
    ঘরের নীচে দোকান,তবু নাকি সব্জিও ঘরে দিয়ে যায়।
    খাবার রাঁধতেও হয় না।
    ঘরে কলের জল,
    রান্না হয়,হাঁড়ি কালি হয় না।
    এসব আমার কাছে স্বপ্ন।
     
    আমি মাধ্যমিক দেওয়ার আগে বাস দেখিনি,
    যখন দেখলাম পনের কিলোমিটার দশ মিনিটে যাওয়া যায়,
    বুঝতে পারলাম আমি কত সময় নষ্ট করেছি।
    বড় শহরের এসে দেখি,
    এখানে মিনিটে মিনিটে বাস,
    তবু লোকে ছটফট করে।
     
    যখন গ্রামে ছিলাম,
    বুঝতেও পারিনি কাকে সুবিধা বলে।
    সবই স্বাভাবিক মনে হত।
     
    ভোটের সময় বাবুরা এসে মদ মাংস দিয়ে বলে যেত,"ভোট আমাকেই দিবি কিন্তু!"
    বিশ্বস্ত কুকুরের মতো লেজ নেড়ে হাসিমুখে বলতাম,"হ্যাঁ বাবু।"
    তখন জানতাম না ভোটের বদলে-
    ঘরের কাছে ইস্কুল,
    চওড়া রাস্তা,
    ইস্কুলে মাস্টার
    সব পাওয়া যায়।
    ভাবতাম,"ভোটের সময় যদি বন ভেঙে গাড়ি আমার ঘরের উঠোনে আসতে পারে,
    তাহলে হাসপাতালে কেন বলে রাস্তা খারাপ তাই এম্বুলেন্স যাবে না?"
    আমি সব স্বাভাবিক ভাবতাম।
     
    ভাগ্যকে দোষ দিতাম রোজ,
    ভগবানকে শাপ,শাপান্ত করত আমার ঠাকুমা,
    আমার মা চুপচাপ গোরু-গাধার মতো খাটত।
     
    আমি বুঝতে পারতাম না,
    বাবুরা এসে বন সাফ করে দিলেও কেউ কিচ্ছু বলে না,
    কিন্তু আমি সেবারে কাঠ কুড়াতে গেলে কেন পুলিশ নিয়ে গিয়ে জেলে ভরে রেখেছিল,
    পিটিয়ে আমার পা ভেঙে দিয়েছিল?
    আমি এখনো ক্রাচ ছাড়া হাঁটতে পারি না।
     
    আমি ভেবেছি জিজ্ঞেস করব,
    আমারই কি তাহলে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক?
    সবার ভোটের যদি সমান মূল্য হয়,
    তাহলে সবাই সমান সুবিধা পাবে না কেন?
    কিন্তু বাবুরা ধমক দেয় যে!
    ভয় লাগে।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ismail Jabiulla | ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫০734640
  • পড়ে ভাল লাগলো, খুব সুন্দর কবিতা, বাস্তব। 
  • পাগলা গনেশজীকে বলছি | 108.16.***.*** | ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ১১:১৪734644
  • বেশ। 
     
    এবার থেকে এর নীচেই নীচেই দিতে থাকুন। এসে এসে পড়ে যাব। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন