লিবারেশন কটি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে? যেখানে নিজেদের প্রার্থী নেই, সেইসব কেন্দ্রে কাকে ভোট দিতে বলছে? মানে লিবারেশনের এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ওভারঅল স্ট্যান্ড কী?
রাজ্যের বারোটি আসনে আমাদের প্রার্থী থাকছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে বামফ্রন্টের দখলে থাকা আসনে সাধারণভাবে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের আমরা সমর্থন দিচ্ছি। এর বাইরেও গাইঘাটা আসনে আমরা সমান নাগরিকত্ব আন্দোলনের নেতা ও লেখক কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে সমর্থন জানাচ্ছি। অন্যান্য আসনে বিজেপিকে হারাতে সক্ষমতম প্রার্থীকে ভোট দেবার আবেদন জানাচ্ছি।
কিছু কেন্দ্রে লিবারেশন সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের ভোট দিতে বলছে। যেমন যাদবপুরে সুজন চক্রবর্তী। এরকম প্রার্থী কজন এবং কেবল বেছে বেছে তাঁদেরই দিতে বলার কারণ কী? এই বাছাবাছিটা কীসের ভিত্তিতে হচ্ছে?
সংযুক্ত মোর্চা বলে নয়, রাজ্যে বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ২০১৬তে জেতা আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছি। বামফ্রন্ট জিতেছিল ৩২টি আসনে। পরে আটজন দলবদল করে তৃণমূল বা বিজেপিতে চলে যান। ঐ আটটি আসন বাদে বাকি চব্বিশটি আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছি। ব্যতিক্রম শুধু পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর আসন যেখানে লিবারেশনের নিজস্ব প্রার্থী রয়েছে।
বিহারে বাম জোট একসঙ্গে ভোটে লড়লেও বাংলায় লিবারেশন বাম জোট থেকে বেরিয়ে এসে লড়ছে। এর কারণ কী?
বিহারে শুধু বাম নয়, বৃহত্তর বিরোধী জোট হয়েছিল, তাতে আমরা ছিলাম। পশ্চিমবঙ্গে আমরা বাম জোটে আগেও থাকিনি, এবারও নেই। এর মূল কারণ রাজনৈতিক মতপার্থক্য। আমরা পশ্চিমবঙ্গেও বিহার বা গোটা দেশের মতোই বিজেপিকে প্রধান বিপদ বলে মনে করি।
বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস নিয়ে লিবারেশনের মূল্যায়ন কী? এই মূল্যায়নটা সিপিএমের তৃণমূল কংগ্রেসের মূল্যায়নের থেকে কোথায় আলাদা?
তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস ভেঙে গড়ে ওঠা একটি আঞ্চলিক দল। সেই অর্থে মূলত কংগ্রেস ঘরানার দল। গত দশ বছরের তৃণমূল শাসনে জনগণের বিভিন্ন অংশকে কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদানের কর্মসূচির পাশাপাশি ব্যাপক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের উদাহরণ দেখা গেছে। আলাদা করে তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে মূল্যায়নে বিরাট পার্থক্য না থাকলেও সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যায়নে এক বড় পার্থক্য রয়েছে। আজ বিজেপি শাসনে সংবিধান, গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রণালী আক্রান্ত। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি বড় রাজ্যে তৃণমূল একটি বিরোধী শাসক দল। বিজেপি সরকারের বিভিন্ন সর্বনাশা নীতি ও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের একটা ধারাবাহিক অবস্থান চোখে পড়ে। আমরা তাই আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিজেপি বিরোধী এক শক্তি হিসেবে দেখি। সিপিএম যেভাবে তৃণমূল ও বিজেপিকে একাকার করে বিজেমূল নামে একটি কাল্পনিক দল তৈরি করে ফেলেছে বা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে আগে তৃণমূলকে হারাতে হবে এমন এক অদ্ভুত রাজনৈতিক উপসংহার টেনেছে আমরা তাকে ভ্রান্ত মনে করি।
আইএসএফ দলটি সম্বন্ধে এবং সিপিএমের সাথে এই দলের জোট সম্বন্ধে লিবারেশনের মূল্যায়ন কী?
আইএসএফ সম্পূর্ণ নতুন একটি দল। এর রাজনৈতিক অবস্থান, নীতি ও ভূমিকা সম্পর্কে মন্তব্য করার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞতা এখনও আমাদের নেই।
বিজেপিকে আটকানো মূল উদ্দেশ্য হলে লিবারেশন অন্য সব আসনে তৃণমূলকে দিতে বলছে না কেন?
নির্বাচনে অনেক স্থানীয় পরিস্থিতিজনিত উপাদান ও প্রবণতাও কাজ করে। তাই বিজেপিকে পরাজিত করার জন্য সক্ষমতম প্রার্থী চিহ্নিত করার ব্যাপারটা আমরা স্থানীয় পরিস্থিতি ও জনগণের বিবেচনার উপর ছেড়ে দিয়েছি।
বিজেপির বিরুদ্ধে যে যেখানে শক্তিশালী তাকে জেতান - আপনাদের বা অন্য ছোট বিপ্লবী বাম শক্তির ভোটে দাঁড়ানোটা কি এই লাইনের সাথে কনট্রাডিক্টরি নয়? আপনারা যদি হাজার ভোটও পান, সেটা তো বিজেপিকে জিততে সাহায্য করতে পারে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
নির্বাচনে আমরা খুব কম আসনে লড়ছি। চলমান কিছু আন্দোলন ও জ্বলন্ত প্রশ্নকে জোরের সঙ্গে তুলে ধরতেই নির্বাচনে আমাদের অংশগ্রহণ। আমাদের প্রচার অভিযানের মূল দিশা বিজেপি বিরোধী। আমরা মনে করি আমাদের সীমিত কিন্তু জোরালো অংশগ্রহণ সংশ্লিষ্ট আসনগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও জনগণের আন্দোলনকারী শক্তি ও ভূমিকাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
নির্বাচনের প্রচার করতে গিয়ে আপনাদের কী অভিজ্ঞতা? মানুষ কি আপনাদের মত ‘তৃতীয় বা চতুর্থ শক্তি’র কথা আদৌ শোনার মত জায়গায় রয়েছেন? নাকি ইতিমধ্যেই অবস্থান নিয়ে ফেলেছেন?
অবশ্যই জনগণের এক বড় অংশের কাছে উৎসাহজনক সাড়া আমরা পাচ্ছি। গণতন্ত্রে ভোটের জয় পরাজয়ের বাইরেও একটা বড় রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত থাকে। নির্বাচনের সময় সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া, তাঁদের দাবি তুলে ধরা ও আন্দোলনের শক্তিকে সম্প্রসারিত ও সংহত করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এই গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ থেকে আপনারা ঠিক কী কী পেতে চাইছেন? আপনাদের এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাফল্য কি ভোটসংখ্যা দিয়ে মাপবেন, নাকি অন্যকিছু দিয়ে?
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে পরাজিত করার সঙ্গে সঙ্গে চাই নতুন প্রেক্ষাপটে বামপন্থী নবজাগরণ। আমাদের নির্বাচনী অভিযান সেই প্রস্তুতিরই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
ভালো লাগলো।
একটাই কি উদ্দেশ্য হওয়ার কথা ছিল না ? যে , সর্ব শক্তি দিয়ে বিজেপি নামক ভয়ঙ্কর , ভয়ানক এবং বিধ্বংসী ওই দল টাকে মূল শুদ্ধ উপড়ে ফেলতে এই ভূমি থেকে ???এটাই কি নীতি এবং কৌশল হওয়া উচিত ছিল না যে ..ফ্যাসিস্ট শক্তি একবার এই রাজ্যে ঘাঁটি গেঁড়ে বসলে কেউ বাঁচবেন না এই আশঙ্কায় সবাই একজোট হন ???? এই টুকু সমন্বয় হতে কি অসুবিধা ছিল ??ইতিহাস কি আরেক বার ক্ষমা কোরবে আপনাদের ???একাত্তরে ডাক দিয়েছিলো যাই নি !!অনেক রক্ত , ঘাম , নির্যাতন , শোষণ হলো ।..হচ্ছে ।..আরো হবে ।.ক্ষমতার অলিন্দে যাবার জন্য যারা হিংস্র হায়নার মতো জিব লকলকিয়ে অপেক্ষা করছে ।..তাদের সাথে মিলে রাজনীতি ????