অলিক নিজে ভোটে দাঁড়ালেন না কেন? অন্তত ভাঙড়ে? মুসলিম এলাকায় মুসলিম প্রার্থী - এরকম কোনো ব্যাপার আছে?
আমাদের দলে সাধারণত রাজ্য সম্পাদক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন না। রাজ্য সম্পাদক হিসাবে তাকে যেহেতু বিভিন্ন কেন্দ্রের কাজের দিকেই লক্ষ্য রাখতে হয়, তাই কোনো বিশেষ কেন্দ্রে তিনি নিজেই প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে গেলে সম্পাদক হিসাবে তার কাজ করা সম্ভব নয়। কমরেড অলিক যেহেতু পার্টির রাজ্য সম্পাদক তাই তার প্রার্থী হবার প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু আমরা অবশ্যই মাথায় রাখতে চেয়েছি এবং চাই এলাকার প্রশ্নটি। মুসলিম প্রার্থী নয়, এলাকা থেকে যদি ভালো প্রার্থী উঠে আসেন তবে সেটা নানা কারণেই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রেড স্টার এবং জমি কমিটির যৌথ কর্মীসভায় প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন কমরেড মির্জা। অন্য নামও আলোচনায় ছিল, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ কমরেডই মনে করেছেন কমরেড মির্জা ভাঙড় বিধানসভার প্রার্থী হিসাবে উপযুক্ত হবেন।
রেড স্টার ভাঙড় ছাড়া অন্য কোথাও প্রার্থী দিচ্ছে কি? না দিলে সেইসব কেন্দ্রে কাকে ভোট দিতে বলছে? মানে রেডস্টারের এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ওভারঅল স্ট্যান্ড কী?
রেড স্টার ভাঙড় ছাড়াও আরও তিনটি কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বাঁকুড়ার দুটি কেন্দ্র, ওন্দা এবং রাইপুর। দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি কেন্দ্র, গঙ্গারামপুর। বাকি কেন্দ্রগুলিতে আমরা কমিউনিস্ট বিপ্লবী প্রার্থীদের সমর্থন করছি। যে কেন্দ্রে কমিউনিস্ট বিপ্লবী প্রার্থী নেই (সেটাই অবশ্য বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ) সেখানে যে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি বিজেপিকে হারাতে পারে আমরা তাকেই ভোট দিতে বলেছি।
সাধারণ ভাবে অন্য সব আসনে তৃণমূলকে দিতে বলছে না কেন? তৃণমূলকে যদি সমর্থনযোগ্য মনে না হয়, মোর্চাকে নয় কেন? বা কংগ্রেস-আব্বাস যদি নাও হয়, বামফ্রন্টের প্রার্থীদের নয় কেন? আপনারা তো বাম দল, সেক্ষেত্রে অন্য বাম দলের ওপর আপনাদের বেশি আস্থা থাকার কথা!
আমরা বলেছি বিজেপিকে হারাতে হবে। যে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি হারাতে পারবে তাদেরই ভোট দেবার আবেদন রেখেছি। কোনো শক্তিকেই আলাদা করে চিহ্নিত করিনি যাদের কমিউনিস্ট বিপ্লবী শক্তির অনুপস্থিতিতে সমস্ত কেন্দ্রেই সমর্থন করা যায়। তার কারণ এমন কোনো শক্তির উপস্থিতি নেই। আর সিপিএম এবং অন্যান্য বামফ্রন্টীয় দলগুলিকে আমরা বামপন্থী বলে মনে করি না। তাই কমিউনিস্ট বিপ্লবী শক্তির বাইরে কারোর উপর আমাদের রাজনৈতিক দুর্বলতাও নেই।
বিজেপির বিরুদ্ধে যে যেখানে শক্তিশালী তাকে জেতান - আপনাদের বা অন্য ছোট বিপ্লবী বাম শক্তির ভোটে দাঁড়ানোটা কি এই লাইনের সঙ্গে পরস্পরবিরোধী নয়? আপনারা যদি হাজার ভোটও পান, সেটা তো বিজেপিকে জিততে সাহায্য করতে পারে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
সাধারণভাবে বিজেপিকে হারানোর আহবান এবং নিজেদের প্রার্থী বা অন্য কমিউনিস্ট দলগুলিকে ভোট দেওয়ার আহবান আমাদের বিচারে স্ববিরোধী নয়। কারণ বিজেপিকে হারানোর পাশাপাশি আমাদের কমিউনিস্ট বিপ্লবী শক্তিকে নির্বাচনী সংগ্রামেও টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব রয়েছে। কারণ শেষ বিচারে ফ্যাসিবাদী বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে হারানোর ক্ষমতা কমিউনিস্ট বিপ্লবীদেরই রয়েছে। অন্যান্য মূলধারার দলগুলিকে ব্যবহার করে বিজেপিকে সাময়িকভাবে ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে মাত্র, কিন্তু চূড়ান্ত অর্থে পরাজিত করা সম্ভব নয়। কারণ, আজকের ফ্যাসিবাদের ভিত্তি হল নয়া উদারবাদ, যা এই মূলধারার দলগুলি সকলেই কমবেশি মেনে চলে, যদিও তারা ফ্যাসিবাদের স্তরে পৌঁছয় নি। তাই এই দলগুলিকে ব্যবহার করে বিজেপিকে ঠেকিয়ে রাখা আসলে কিছু সময় কেনা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সেই সময়কে ব্যবহার করে কমিউনিস্ট বিপ্লবী শক্তির উত্থান ঘটানো না গেলে আমরা আবার একই জায়গায় ফেরত যাব। যেহেতু, এই অন্য মূলধারার দলগুলির অতীত ব্যর্থতাই ফ্যাসিবাদী বিজেপিকে শক্তিশালী করেছে। সুতরাং, একই নিয়মে তাদের ভবিষ্যত ব্যর্থতা আবার বড় আকারে ফ্যাসিবাদের বিপদকে ডেকে আনতে বাধ্য। তাই নির্বাচনী সংগ্রামে কমিউনিস্ট বিপ্লবী শক্তির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রক্ষা করা বিজেপিকে ঠেকাবার পাশাপাশি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
ভাঙড়ে রাজনৈতিক আবহাওয়া কীরকম? কোন দল কোন ইস্যুকে সামনে রেখে লড়ছে? আপনারা তাদের থেকে নিজেদের প্রচারকে কোথায় আলাদা করছেন?
ভাঙড় বরাবরই রাজনৈতিক কেন্দ্র। এখানকার মানুষ রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকা। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদীদের উত্থান এখানকার সংখ্যালঘু মুসলমান জনসাধারণকে চিন্তায় ফেলেছে। পাশাপাশি, তৃণমূলের স্বৈরাচার এবং দুর্নীতি মানুষকে সহ্যের সীমায় নিয়ে গিয়েছে। ফলে তৃণমূল রাজনৈতিকভাবে বেশ কিছুটা হীনবল। অতীতে তারা বলপ্রয়োগ করে নিজেদের দিকে নির্বাচনী সাফল্য নিয়ে আসতে পেরেছিল। তার সঙ্গে যুক্ত ছিল বিকল্পহীনতা। কিন্তু সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজের বিপন্নতা এবার আব্বাসের নেতৃত্বে আই এস এফের একটা উত্থান ঘটিয়েছে। একে অনেকে বিকল্প হিসাবে দেখছেন। কিন্তু এর বিপদ হল, এর পালটা ধাক্কায় ভাঙড়ের হিন্দু প্রধান এলাকায় বিজেপির পতাকা উড়ছে যা আগে কখনই দেখা যায় নি।
এমতাবস্থায় জমি কমিটি এবং রেড স্টার মানুষের কাছে অন্য একটি বিকল্পকে হাজির করেছে। গত তিন বছরের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েত চালানোর সাফল্যও এক্ষেত্রে কাজে লাগছে।
সব মিলিয়ে দুর্বল বিজেপিকে বাদ দিলে ভাঙড়ে কিন্তু ত্রিমুখী লড়াই।
আব্বাসের দল আইএসএফের প্রচার নিয়ে আপনাদের কী অভিজ্ঞতা? শোনা যাচ্ছে আব্বাস বামেদের সঙ্গে জোটের পর সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা নাকি ত্যাগ করেছেন। মানুষের রুটি রুজির সমস্যা নিয়ে কথা বলছেন। ভাঙড়ে আপনারা কী দেখছেন?
আব্বাসের দল আই এস এফ উঠে এসেছে মূলত ভাঙড় থেকে। একের পর এক জলসায় রাজনৈতিক বক্তব্য হাজির করে। পোলেরহাটের বাইরের ভাঙড়ে এই জলসাগুলিই আব্বাসকে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে দেয়। বামফ্রন্টের আগে আব্বাস গিয়েছিলেন তৃণমূলের কাছে, আসন নিয়ে দর কষাকষি করতে। কিন্তু সেখানে সুবিধা না হতে বাম-কং জোটে শামিল হন। তখন তাঁকে শিখিয়ে দেওয়া হয় কর্মসংস্থান ইত্যাদি বলতে, তিনিও তোতা পাখির মত সেগুলো আউড়ে চলেন। কিন্তু এ কথা পরিষ্কার যে, অমুসলমান এলাকায় তার কোনো জনপ্রিয়তা বা আবেদন নেই। দলিত, আদিবাসীদের কথা মুখে বললেও তা তার বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও নয়। তিনি বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিতও নন। তিনি মূলত মুসলমান বিপন্নতাকে পুঁজি করে লড়ছেন, এবং এটা ঠিক যে, তার একটা বাজারও উগ্র রাজনৈতিক হিন্দুত্বের পরিমণ্ডলে তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার বিপদ হল যে তা অন্য দিকে হিন্দু সংহতিতে সাহায্য করছে, যা বিজেপির পক্ষে লাভজনক।
ভাঙড় আন্দোলনের সময় আপনারা এলাকায় বিপুল জনসমর্থন পেয়েছিলেন। এখন নির্বাচনে কি সেরকম সমর্থন পাচ্ছেন? যদি না হয়, সেটার কারণ কী বলে মনে হয়?
একটা আদায়যোগ্য দাবি নিয়ে গণ-আন্দোলন আর একটা রাজনৈতিক সংগ্রাম বিষয় দুটো আলাদা। কিন্তু ভাঙড় আন্দোলন চলতে চলতেই আমরা খেয়াল করেছিলাম যে, জমিতে বিরাট রাজনৈতিক শূন্যতা রয়েছে। ফলে এমন বহু মানুষ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন যাঁদের সরাসরি স্বার্থ আন্দোলনে ছিল না। কিন্তু আরাবুল বাহিনীর অত্যাচার, সিপিএমের অতীত অত্যাচার এবং বর্তমান নিষ্ক্রিয়তা এসবের বিপরীতে জমি কমিটিকে অনেকে রাজনৈতিক বিকল্প হিসাবে দেখতে শুরু করেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের সাফল্যের পেছনে এটা একটা কারণ ছিল। সুতরাং, রাজনৈতিক সংগ্রামে তার একটা সুফল আমরা পেয়ে থাকি।
কিন্তু আবার রাজনৈতিক সংগ্রাম বিষয়টা যেহেতু আলাদা তাই সামগ্রিক রাজনৈতিক বাতাবরণ, ভাঙড়ের বাইরে আমাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি, সামগ্রিকভাবে গোটা রাজ্যে একটা রাজনৈতিক বিকল্প হয়ে উঠতে পারার ক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাবনা এসবই এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। একথা তো ঠিক যে এই ক্ষেত্রগুলিতে আমরা, নকশালপন্থীরা বেশ কিছুটা পেছনে রয়েছি। সুতরাং, যে রাজনৈতিক সুবিধা আমরা পাচ্ছি তার অনেকটাই এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার ফলে কাটাকাটি হয়ে যাচ্ছে, মানে নিউট্রালাইজড হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের এখানকার জনগণকে অনেকটা এগিয়ে ভাবতে অনুপ্রাণিত করতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে যা বিদ্যমান নয় তাকে চোখে দেখাতে চেষ্টা করতে হচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক সংগ্রাম অনেক উচ্চস্তরে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হচ্ছে। এটি কঠিন কাজ, কিন্তু ভাঙড়ের জনগণ যেহেতু রাজনৈতিকভাবে বেশ কিছুটা এগিয়ে তাই এই লড়াইটা আমরা লড়তেও পারছি।
জয়ের ব্যাপারে আপনারা কতটা আশাবাদী? প্রশ্নটা অন্যভাবেও করা যায়। আপনাদের এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাফল্য কি ভোটসংখ্যা দিয়ে মাপবেন, নাকি অন্য কিছু দিয়ে?
ভাঙড়ে জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। ভোটসংখ্যা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে সকল কমিউনিস্ট পার্টিই তার প্রাপ্ত ভোটসংখ্যাকে তার রাজনৈতিক শক্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হিসাবেই দেখেছে। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই।
যদিও ভোট সংখ্যাই একমাত্র বিষয় নয়। যেমন ধরা যাক, অন্য যে তিনটি কেন্দ্রে আমরা লড়ছি সেখানে তো আর জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী নই। কিন্তু লড়ছি কেন? লড়ছি নির্বাচনী সংগ্রামে কমিউনিস্ট বিপ্লবী পতাকাটা বজায় রাখার জন্য। সেটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভাঙড়ে আমরা এই স্তর পেরিয়ে এসেছি। এখানে আমরা ভোট অন্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি পাব কারণ এখানে আমাদের কাজ অনেক বেশি, সংগঠনও অনেক মজবুত এবং সক্রিয়, ফলে আমাদের প্রচারও অনেক বেশি, প্রভাবও বেশি। এখানে আমরা জিততেও পারি। এখানে শুধু ঝান্ডা ধরে রাখার ব্যাপার নেই, তাকে প্রতিষ্ঠিত করার চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। জিতলে সে কাজে বেশ কিছুটা এগিয়ে যাওয়া যাবে। না জিতলেও যতটা এগোনো গেল তাকে পাথেয় করে ভবিষ্যতে আরও এগোনো যাবে।
ভোট বাক্সে সমাজতন্ত্র আসবে ??? এখনো এই দুরাশা ???এই দেশে ??স্বাধীনতার এতো বছর পরেও ??এতো ধাক্কা খেয়েও ??? সংসদীয় গণতন্ত্রের চোরাবালি তে পা দিয়ে স্বপ্ন দেখা কমুনিজমের ???
ওন্দা কেন্দ্রে সি পি আই এম এল লিবারেশন এর প্রার্থী রয়েছে!