এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ইতিহাস  খাই দাই ঘুরি ফিরি

  • বাংলার নবাবি কেল্লা ও কেল্লাবাসীর কিসসা - ১৪

    ফারুক আব্দুল্লাহ
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ১০ আগস্ট ২০২৩ | ১৬২৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)

  • ভদ্রলোকের বয়স প্রায় ৮৩ বছর। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ইনিই মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর পদের বৈধ উত্তরাধিকারী। মুর্শিদাবাদ শহরবাসী তাঁকে নবাব বাহাদুর হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করেন। ভদ্রলোকের নাম নবাব সৈয়দ মুহাম্মদ আব্বাস আলি মির্জা। তিনি থাকেন কেল্লা নিজামতের ভেতরে দক্ষিণ দরজার পাশে অবস্থিত একটি পুরনো বাড়িতে। তবে নবাব সাহেবের দেখা পাওয়া মুশকিল, অনেকেই তাঁর সাথে দেখা করতে চান কিন্তু তিনি খুব একটা দেখা দিতে চান না। এতে অবশ্য কোনো অস্বাভাবিকতা নেই, কারণ আজ যদি নবাবী আমল হতো আর উনি যদি নবাব হতেন তবে তো নবাব সাহেবের সাথে দেখা করা মোটেই সহজ সাধ্য হতো না। আজ হয়তো নবাবী আমল নেই ঠিকই কিন্তু নবাব সাহেবের শরীরের মধ্যে তো এখনও তাঁর পূর্ব পুরুষদের রাজকীয় রক্ত বইছে।ফলে তাঁর কিছুটা প্রভাব তাঁর আচরণে দেখা দেওয়া দোষের কিছু নয়।

    নবাব সাহেবের সাক্ষাৎ পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যেরই বটে, গর্ব করে বলতে পারি আমার সেই সৌভাগ্য হয়েছে একবার দুবার নয় অজস্রবার। তবে প্রথম দিকে আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টি মোটেই সহজ ছিলনা। তবে একবার পরিচয় হয়ে যাওয়ার পর আমি যতবারই নবাব সাহেবের সাক্ষাৎ প্রার্থী হয়েছি উনি আমাকে কখনও না করেননি। যতবারই আমাদের দেখা হয়েছে নবাব সাহেবের বাড়িতেই হয়েছে, নবাব সাহেবের নম্র ও মিশুকে ব্যবহার আমাকে আজও মুগ্ধ করে।




    এমন হয়েছে যে, নবাব সাহেবের কাছে হয়তো এক ঘণ্টা সময় চেয়ে তাঁর সাক্ষাৎ প্রার্থনা করেছি নবাবী আমলের কোনো তথ্য জানার প্রয়োজনে কিন্তু কথা বলা শুরু হওয়ার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেছে তবুও কোনো রকমের কোনো বিরক্তির ছাপ নবাব সাহেবের মুখে কোনো দিনই ফুটে উঠতে দেখিনি। এই সহজ, সরল, ভদ্র মার্জিত, নিরহংকারী, কিন্তু অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই মানুষটিকে আপনি মাঝে মধ্যেই থলে হাতে স্থানীয় বাজারে সবজী কিনতে দেখতে পাবেন।আবার কখনও তাঁকে দেখতে পাবেন কেল্লার মধ্যে তাঁর বাড়ি সংলগ্ন বাগান পরিষ্কার করতে।

    ভদ্রলোকের গায়ে যেমন নবাবী রক্ত বইছে ঠিক তেমনি তাঁর মেজাজ খানাও নবাবী। তিনি কোনো দিনই কোনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি, এর ফলে তাকে বহু কিছুই হারাতে হয়েছে, প্রায় সারা জীবন ধরেই লড়তে হয়েছে অসংখ্য মামলা। নবাব সাহেব পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক, চাকরী জীবনে একবার তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রীর কোনো এক অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করায় তাঁকে নবাব বাহাদুর স্কুল থেকে অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হয়, এমনকি তাঁর প্রমোশন, পেনশন সব কিছুই আটকে দেওয়া হয়, তবুও তিনি কোনো দিনই অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি বরং তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি কোর্টে গিয়ে তাঁর অধিকার আদায় করে নিয়েছেন, ঠিক তেমন ভাবেই মুর্শিদাবাদের নবাব পদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে তিনি জিতে নিয়েছেন নবাব বাহাদুর অফ মুর্শিদাবাদ পদের বৈধ উত্তরাধিকারীর সম্মান।




    নবাব সাহেবের সাথে আমার বহু স্মৃতি রয়েছে। নবাব সাহেব যে ঘরে বসে সাধারণত বাইরের মানুষদের সাথে সাক্ষাৎ করেন, সেই ঘরটিতে যেন সব সময় এক রাজকীয় পরিবেশ বিরাজ করে।লম্বা ঘরের একদিকে একটি পুরনো দিনের খাট রাখা আছে, অন্যদিকে রয়েছে পুরনো আমলের কাঠের আলমারি, ঘরের মধ্যেখানে আছে সোফা। ঘরের প্রধান দরজার দুই পাশে ঘরের শোভা বাড়াতে রাখা আছে বেশ কয়েকটি সোনালী রঙের কোরান্থিয়ান রীতির নকল স্তম্ভ। সোফার ঠিক পেছনে বেশ কয়েকজন নবাব সহ নবাব পরিবারের বহু দুষ্প্রাপ্য ছবি দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে। এই ঘরে গেলে মুহূর্তেই মন হারিয়ে যায় সেই অতীতে। ঘরের ভেতরে কখনও সোফায় আবার কখনও চেয়ারে বসে নবাব সাহেব কথা শুরু করেন। এমনিতেই নবাব সাহেবের দেখা পাওয়া মুশকিল কিন্তু দেখা হয়ে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিভাবে কেটে যায় বোঝাই দায় হয়ে যায়। নবাব সাহেবের স্মৃতি শক্তি আমাকে অবাক করে, তিনি আজও একনাগাড়ে বলে যেতে পারেন তাঁর জীবনের প্রতিটি মামলার কথা, কোন তারিখে কি হয়েছিল? কোন মামলায় কোন উকিল ছিলেন,কোন জজ ছিলেন আজও সেসবের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তিনি বলে যেতে পারেন।

    চলুন এবার নবাব সাহেব সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক। নবাব সাহেবের জন্ম হয়েছিল ১৯৪০সালের ১৫ই জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের কেল্লা নিজামতের মহলসেরায়। নবাব সাহেবের মা সাহেবজাদী হাসমত উন নিসা বেগম সাহেবা ছিলেন মুর্শিদাবাদের দ্বিতীয় নবাব বাহাদুর স্যার ওয়াসিফ আলি মির্জার কন্যা, তাঁর পিতা সৈয়দ সাদিক আলি মির্জা ছিলেন মুর্শিদাবাদের প্রথম নবাব বাহাদুর হাসান আলি মির্জার কন্যা খুরশিদ উন নিসা বেগম সাহেবার ছেলে ও নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জার ভাগ্নে। নবাব আব্বাস আলি মির্জা জানান তাঁরা তিন ভাই এবং তিন বোন, যার মধ্যে এক ভাই এবং এক বোনের মৃত্যু হয়েছে। মুর্শিদাবাদে আপাতত তাঁরা দুই ভাই এবং এক বোন রয়েছেন।

    নবাব সাহেবকে তাঁর ছোটো বেলার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান তাঁর ছোটবেলা কেটেছে কেল্লার মহলসেরা অঞ্চলে। তিনি জানান, "আমার ছোট বেলা অত্যন্ত রাজকীয় পরিবেশে খুব আরামেই কেটেছে। ছোট বেলায় অন্যকোন চিন্তা আমাদের ছিল না, আমরা সবসময় আমাদের ভৃত্যদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতাম। তারাই আমাদের স্কুল নিয়ে যেত, স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে আসত। তাঁরা প্রতিদিন বিকেলে আমাদেরকে ঘোরাতেও নিয়ে যেত। এখন ওই সময়ের কথা মনে করলে খুব কষ্ট হয়।ওই সময় আর এই সময়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য। কারণ ওই আমলে আমদের জীবনে কোন সংগ্রাম ছিলনা, কিন্তু এখন করতে হয়। তখন আমাদের বাইরে দূরে কোথাও যাওয়ার হলে আস্তাবলে খবর পাঠিয়ে দেওয়া হত। খবর পেয়ে কোচওয়ান ঘোড়ার গাড়ি সাজিয়ে চলে আসত আমাদের বাড়ির সামনে। এছাড়া মোটর গাড়ি তো ছিলই।যখন গাড়ি চলত গাড়ির পেছনে সৈন্যরা থাকত আমাদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য, তাছাড়াও কেল্লার ভেতরে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানেও আমরা যেতাম।বিশেষ করে ঈদের দিন যে জুলুস বেরত সেই জুলুসে ঘোড়ায় চড়ে ঈদ পড়তে যেতাম চক মসজিদে"




    নবাব সাহেবকে তাঁর শিক্ষা ও কর্মজীবনের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান প্রথম জীবনে তিনি নবাব বাহাদুর স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তারপর ১৯৬০ সালে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তিনি কলকাতার মৌলানা আজাদ কলেজে উর্দু অনার্স নিয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৬৪ সালে তিনি বি.এ পাস করেন। নবাব সাহেবের খুব ইচ্ছা ছিল এম.এ পড়ার, কিন্তু তিনি যখন বি.এ পাশ করে ছুটি কাটাতে মুর্শিদাবাদের বাড়িতে এসেছিলেন তখন নবাব বাহাদুর স্কুলের টিচার ইন-চার্জ অমূল্য ভট্টাচার্য বাবু নবাব সাহেবের বি.এ পাস করে বাড়ি ফেরার কথা শুনে তাঁকে স্কুলে ডেকে পাঠিয়ে শিক্ষক হিসেবে জয়েন করিয়ে নেন। নবাব সাহেব ১৯৬৫সালের ১৬ই জুলাই অফিসিয়াল ভাবে নবাব বাহাদুর স্কুলে উর্দুর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পর কৃষ্ণনগর গবর্মেন্ট স্কুল থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

    নানান কথা প্রসঙ্গে নবাব সাহেবকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, কলকাতার কলেজে পড়ার সুবাদে আপনাকে যখন কলকাতায় থাকতে হত, ঠিক তখন আপনার মামা মুর্শিদাবাদের তৃতীয় নবাব বাহাদুর ওয়ারিশ আলি মির্জাও কলকাতার পার্কস্ট্রিটের মুর্শিদাবাদ হাউসে বসবাস করতেন।আপনিও কি সেখানেই থেকে পড়াশোনা করতেন?

    আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান যে, "মামা আমাকে খুব ভালবাসতেন এবং তিনি আমাকে খুব মান্যও করতেন,তবে তিনি আমাকে বলতেন বাড়িতে থাকলে ভাল পড়াশোনা হবেনা, তুমি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করো তবে শর্ত ছিল প্রতিদিন একবার করে মামার সাথে দেখা করে আসতে হবে। আমার মনে আছে যেদিন আমি বি.এ পাস করেছিলাম সেদিন মামা ভীষণ খুশি হয়ে বাড়িতে একটি পার্টি দিয়েছিলেন এবং আমার হাতে বেশ কিছু টাকা দিয়ে বলেছিলেন ইচ্ছে মতো খরচ করতে"।

    আমি একবার নবাব সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলাম যে তিনি তাঁর নানা (দাদু) নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জাকে সরাসরি দেখেছেন কিনা সেই সম্পর্কে। তিনি আমার প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, " হ্যাঁ আমি ছোট বেলায় মুর্শিদাবাদেই থাকতাম। তাই নানাকে অবশ্যই দেখেছি,তবে তেমন কথা বলিনি। আসলে তখন আমার বয়সও খুব অল্প ছিল। আর নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা ছিলেন ভীষণ গুরু-গম্ভীর স্বভাবের মানুষ, নানার ব্যক্তিত্বই এমন ছিল যে কেউ তাঁর দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস টুকু পেতনা। যখনই আমরা তাঁকে দেখতাম ভয় পেয়ে যেতাম, আর বলতাম যে 'নানা আ রাহা হে, নানা আ রাহা হে'। উনি তখন নিজেই আমাদের বলতেন যে 'বাচ্চো মুঝসে ডারো মাত, মেরে পাস আও'। আমরা তখন তাঁর কাছে গেলে তিনি আমাদের চকলেট দিতেন, গল্প শোনাতেন।

    নবাব সাহেবের কাছে তাঁর পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান তাঁর বিয়ে হয়েছে মীরজাফরের বংশের (নাজাফি বংশ) মেয়ের সাথেই, পার্থক্য হল, নবাব সাহেবের পত্নী নাজমা বেগম হলেন মীরজাফরের প্রথম পত্নী শাহখানমের বংশধর অন্যদিকে তিনি হলেন মীরজাফরের তৃতীয় পত্নী বাব্বু বেগমের বংশধর। নবাব সাহেব জানান তাঁর বিয়েও সেই সময় অত্যন্ত ধুম ধামের সাথেই হয়েছিল। বিয়েতে হাতী, ঘোড়া সবই ছিল। সেই সাথে ছিল রাজকীয় খাওয়ায়- দাওয়ার দেদার আয়োজন। বর্তমানে নবাব সাহেবের এক ছেলে এবং দুই মেয়ে।




    আমার একটি বিষয়ে জানার খুব কৌতূহল ছিল, সেটা হল নবাবী আমলে দেখা যেত নবাব প্রাসাদে নবাবের খিদমত করার জন্য অসংখ্য ভৃত্য থাকতো যেমন নবাবের রান্নার জন্য, জল খাওয়ানোর জন্য, খাবার পরিবেশনের জন্য, নবাবকে পোশাক পরানোর জন্য, নবাবকে স্নান করিয়ে দেওয়ার জন্য,নবাবকে হাওয়া করার জন্য, নবাবের পান তৈরি করে দেওয়ার জন্য, পানের পিক ফেলার পাত্র ধরার জন্য,নবাব বাইরে গেলে তৈরি করা পান বহন করার জন্য, নবাবের হুকো তৈরির জন্য,নবাব বাইরে কোথাও গেলে হুকো বহন করার জন্য, নবাবের পালকি বহন করার জন্য এসব নানান কাজ সহ আরো অজস্র কাজ করার জন্য অসংখ্য ভৃত্য রাখা হতো। আমি নবাব সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলাম এত গুলি ভৃত্য পোষণ করা কি সেই সময় নবাবদের বিলাসিতা ছিলনা? তিনি সামান্য হেসে জবাব দিয়েছিলেন " না, বিলাসিতা ছিল না, বরং এতো গুলো ভৃত্য রাখার একটি মহৎ উদ্দেশ্য ছিল সেই উদ্দেশ্যটি হল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা"। আসলে নবাব নিজেও জানতেন এতগুলি ভৃত্য না রাখলেও তাঁর জীবন আরামেই চলবে, কিন্তু এই সব সাধারণ মানুষ গুলিকে যদি নবাব খিদমতে কিম্বা প্রাসাদের বিভিন্ন কাজে লাগানো যায় তবে তাদের অন্তত খাওয়া পরার কোনো অভাব হবেনা। তৎকালীন সময়ে এই ভাবেই বহু পরিবার বেঁচে ছিল। এই প্রসঙ্গে নবাব সাহেব একটি গল্প শুনিয়েছিলেন, নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জার সময় প্রাসাদের কাজে নিযুক্ত কোনো এক ভৃত্য চুরির দায়ে অভিযুক্ত হন এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর চুরির ঘটনা প্রমাণিত হলে নবাব তাকে কাজ থেকে বরখাস্ত করে প্রাসাদ থেকে তাড়িয়ে দেন। এই ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যে খবর আসে বরখাস্ত হওয়া সেই ভৃত্যটি এখন লোকের বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে জীবন চালাচ্ছে। একথা শুনে নবাব তাঁর ম্যানেজারকে ডেকে পাঠান এবং এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে বলেন। ম্যানেজার এসে নবাবকে জানান ঘটনা সত্যিই। তখন নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা ম্যানেজারকে আদেশ করেন সেই ভৃত্যকে পুনরায় কাজে নিযুক্ত করতে।নবাবের আদেশে ম্যানেজার সাহেব বেশ অবাক হন এবং নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জাকে তাঁর এমন আদেশের কারণ জিজ্ঞাসা করেন, তখন নবাব ম্যানেজার সাহেবকে বলেন যে, সেই ব্যক্তি নবাবের বাড়ি ভৃত্য ছিল, সে যদি এখন লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে করে খায় তবে সেই অপমান তো নবাবেরই। কারণ লোকে বলবে নবাবের বাড়ির ভৃত্য হয়েও সে আজ ভিক্ষে করছে।

    একবার নবাব সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি তো নবাবী আমলের একেবারের শেষের দিকের আভিজাত্য কিছুটা হলেও দেখেছেন, কিন্তু আজ যখন আপনি নবাব পদের বৈধ উত্তরাধিকারী বলে বিবেচিত হলেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তখন সেই পুরনো আভিজাত্যের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই, কেমন মনে হয় আপনার? আমার এই প্রশ্ন শুনে নবাব সাহেব যেন ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যান ভাবনার জগতে, তারপর তিনি জানালেন," সত্যিই এখন আর কিছুই নেই আমাদের।আজ নবাবী আমল থাকলে আপনি এত সহজে আমার দেখাও পেতেন না।আর আমার এতো সময়ও থাকতো না আপনার সাথে এতক্ষণ ধরে গল্প করার,তখন আপনাকে আগে থেকে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে তবেই আসতে হত। এখন তো আর সেই আমল নেই যে আমি নবাব বলে মুচে পাক দিয়ে ঘুরব, দশ জন চাকর বাকরকে সাথে নিয়ে ঘুরবো। আমাদেরও তাই বাস্তবকে মেনে নিতে হয়েছে। তবে মুর্শিদাবাদ শহরের মানুষ আমাকে চেনে এবং জানে যে আমি কে, কোন বংশের মানুষ সে কথা। তাঁরা প্রত্যেকেই আমাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে।




    ছবি - লেখক



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১০ আগস্ট ২০২৩ | ১৬২৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২১523132
  • অনেক দেরীতে আসে। একটু কম ব্যবধানে আসলে ভাল হত। অপেক্ষায় থাকি। 
  • ফারুক আব্দুল্লাহ | 106.214.***.*** | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:০৯523405
  • দ @দাদা আমি পরবর্তী পর্ব অর্থাৎ পর্ব নং ১৫ গত ৫ই আগস্ট পাঠিয়ে দিয়েছি গুরুর মেইল আই ডি তে।আমিও অপেক্ষাতেই রয়েছি।
  • | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৭523414
  • ফারুক আব্দুল্লাহ @দিদিভাই,
    আচ্ছা বুঝেছি। গুরুর রোবটদের ব্যটারি ফুরিয়ে গেছে মনে হয়, রিচার্জ হলে আপলোড করবে আর কি। 
  • ফারুক আব্দুল্লাহ | 103.175.***.*** | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:২৫523464
  • দ @ ভীষণ ভাবে দুঃখিত দিদি।এই ভুল নেক্সট আর হবেনা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন