এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বাঙালের রোমানিয়া গমন! 

    কিংবদন্তি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৯ জুন ২০২৩ | ১০৮৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ২৮/০৬/২০২৩ 

    ঈদ গেল আজকে। বড় ঈদ, কুরবানির ঈদ। রোজার ঈদটা নতুন এসেছি বলে কিছু বুঝে উঠার আগেই শেষ হয়ে গেছিল। এবার কিন্তু তেমন হতে দেইনি। সকালে মানে ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ফেলছি। আমাদের পোড়া ক্যাম্পে কোন গরম পানি নাই। ঠাণ্ডা পানি দিয়েই গোসল সারছি। ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে গিয়ে ছোট বেলার কথা মনে হয়েছে। যখন শীতে দিন ঈদ ছিল। কাঁপতে কাঁপতে গোসল করে নামাজের জন্য দৌড়। এবারও তাই হল। কাঁপা কাঁপি শেষ করে বাসের জন্য দৌড়। যখন মসজিদে পৌঁছালাম তখন নামাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। কোন মতে ধরলাম নামাজ। 

    নামাজ শেষ করে দেশের অনুভূতির কিছুই পেলাম না। পাশে ভাই ভাইস্তা, ভাইগ্না কেউই নাই। আর এখানে কোলাকুলিরও তেমন কোন নজির চোখে পড়ল না। এই মসজিদে জুম্মায় খাবার দেয় আর ঈদে দিবে না। কিন্তু কোন আয়োজন চোখে পড়ল না। কুরবানির জন্য কি? হবে হয়ত... এমন যখন ভাবছি তখন একটা গাড়ি আসল, ডালের মত কিসের জানি সুপ আর শক্ত এক ধরণের পাউরুটি। সাথে মিষ্টি চকলেট! নাস্তাটা পোক্তা হল বলা চলে। 

    ফিরলাম ঘরে। আগের দিন ঈদের জন্য বাজার করেছিলাম। মাংস, পোলাওয়ের চাল ইত্যাদি। কিন্তু রাঁধবে কে? যিনি রাঁধবেন তিনি চলে গেছেন ডিউটিতে। আমি পাকা নিয়ত করে বসে আছি, আজকে ডিউটিতে যাব না। কিন্তু আমি থাকলেও লাভ নাই, পোলাও গরুর মাংস রান্না আমার কম্ম না। এর ভিতরে শেরপুরের এক ভাই থাকেন বুখারেস্ট, তিনি ফোন দিলেন। বললেন চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসছি, পারলে চলে আসেন। আমার আর কী! চললাম। 

    আমি যতক্ষণে গেছি ততক্ষণে তারা বের হয়ে গেছে। ফোন দিতেই বলল আশেপাশে আছি, আপনে থাকেন সামনে। আমি আহাম্মকের মত দাঁড়িয়ে না থেকে চিড়িয়াখানায় ঢুকে গেলাম, টিকেটের দাম রাখল ১৫ রোন। এবং ঢুকে একটু ঘুরেই বুঝলাম গেছে১৫ টা টাকা এক্কেরে জলে গেছে! হুদ্দাই একটা ভাব নিয়া বসে আছে, ভিতরে কিসসু নাই। 
     



     
    এরপরে বের হয়ে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ। উনারা আসলেন, বললেন সামনে যে বনটা দেখা যাচ্ছে, ওই বনের ভিতর দিয়ে হাঁটব। চলেন! দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হল। আমি যেমন বন জঙ্গল দেখে অভ্যস্ত তেমন না এখানে। লম্বা লম্বা প্রাচীন সব গাছ। পায়ে হাঁটার রাস্তা আছে। মানুষজন চলে এই দিক দিয়ে তা বুঝা যায়। কিন্তু কোন মানুষ নেই, নীরব নিস্তব্ধ সবুজ! বেরসিকের মত নামল বৃষ্টি! এত ঘন গাছের পাতা যে কিচ্ছু বুঝা যাচ্ছিল না যে কত জোরে বৃষ্টি নেমেছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে দাঁড়াতে বাধ্য হলাম। আমাদের ততক্ষণে বন পাড়ি দেওয়াও শেষ। রাস্তা ভুলে, গুলে এক সময় বৃষ্টিতে ভিজে বাসে উঠলাম। এখান থেকে ঈদের অন্য গল্প শুরু। 


    আমি রুমে ফিরে যাব। কারণ এই ভেজা শরীরে অন্য কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু এমন একটা প্রস্তাব আসল যে আমি বললাম চলুন, যাওয়া যাক। 
    আমাদের মানে আমরা পাঁচজন ছিলাম তখন। আমাদের এই পাঁচজনের মধ্যে একজন একটু সিনিয়র। তিনি বেশ দুনিয়া ভেজে খাওয়া লোক। দুবাই থেকে এসেছেন কত বছর। এখন এখানেও হয়ে গেছে কয়েক বছর। তিনি বললেন তিনি ক্যাসিনতে যাবেন। এই জায়গাটা কেমন তা আমার দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। এর আগের অভিজ্ঞতা তো সব বইপত্র আর পর্দায় যা দেখছি তা। তবুও আমি হয়ত রাজিই হতাম না। আমাকে বলা হল ৫০ রোন দিয়ে ঢুকতে হবে। এরপরে সারারাত থাকা যাবে। এতে লাভ? লাভ হচ্ছে সারা রাতই খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে! আপনি যত খুশি যা ইচ্ছা খান! আমি জানি না, সত্য মিথ্যা। হয়ত একটা মাত্রা আছে, এর বেশি গেলে হয়ত কেউ এসে না করবে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে তার আগ পর্যন্ত আমাকে ফেরায় কে? আমি বললাম রাজি। 

    হোটেলের নাম হচ্ছে জে ডাব্লিউ ম্যারিওট গ্র্যান্ড হোটেল। আমরা সদলবলে ঢুকে গেলাম। আমাদের ঝানু অভিভাবক নিজের জন্য চারশ টাকার চিপস কিনলেন। নানা বোর্ডে নানা খেলা। আমি ততক্ষণে হা করে মানুষ দেখা শুরু করে দিয়েছি। এইখানে যা হচ্ছে তা বাস্তব! সিনেমা না, সবাই হারছে সত্যিকারের টাকা! ফুড়ুৎ করে উড়ে  যাচ্ছে শত শত, হাজার হাজার টাকা, লাখ টাকা! অথচ কত নিশ্চিন্তে বসে খেলছে সবাই। আর এই খেলোয়াড়দের সেবায় নানা আয়োজন। শক্ত নরম সব রকমের পানীয়র ব্যবস্থা। পেট পূর্ণ করে খাওয়ার আয়োজন। আমাদের ওই ভাই নিমিষে জিতে গেলেন দুই হাজার টাকা। বললেন, এখন চলে গেলেই ভাল! আমি বললাম, ৫০ টাকা দিয়ে এসে এখনই চলে যাব? একটুও তামশা দেখব না? বসে গেলাম খাওয়ার টেবিলে। 

    নানা পদ। মাছ খেলাম অনেকদিন পর, সুস্বাদু রান্না করা মাছ। পাস্তা ছিল, পোলাও ছিল, মুরগি ছিল। আমি একে একে সব চেখে দেখলাম। ডেজার্ট খেলাম, কোক খেলাম। বড় ভাই আবার গেলেন খেলতে। হারলেন সমানে। আমাকে দুইটা চিপস দিয়ে বললেন একটা শূন্যের ঘরে রাখবেন অন্যটা যেখানে খুশি। আমি পাকনামি করে দুইটাই একটা ঘরে রেখে দিলাম, শূন্যতে একটাও রাখলাম না। এবং সেবার শূন্যতেই বলটা ঘুরতে ঘুরতে এসে থেমে গেল। বড় ভাই দূর থেকে দেখেছেন শূন্যতে বাজি জিতেছে, তিনিই এগিয়ে আসলেন, দেখলেন আমার পাকনামি, চলে গেলেন! বাপরে! 

    এরপরে আমি আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। আরও নানা কিছু নিয়ে বসে টপাটপ চালান করতে থাকলাম মধ্য প্রদেশে। সব সুস্বাদু খাবার তা বলার উপায় নাই। কিন্তু বেশ কিছু জিনিস যে বেশ দারুণ ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার খাওয়া চলমান থাকতেই সবাই চলে আসলেন। ভাই জিতছে মোট ২৯০০ টাকা! ছয়শ টাকা নিয়ে শুরু করে ছিলেন আজকে! পুরাই ছয় ছক্কা পাঞ্জা! 

    এরপরে চলে আসছি। কিন্তু দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হয়ে গেল আমার। কত সিরিয়াস ভাবে জুয়া খেলে মানুষ তা আমি জানতাম না। মানে বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল না। একজন বয়স্ক মানুষ নিমিষে এক লাখ টাকা হেরে গেলেন! একটা বাচ্চা ছেলে, দুম করে হারলেন কয়েক হাজার টাকা। আমি আমার ৫০ টাকা খেয়ে উসুল হল কি না সেই চিন্তা করতে করতে রুমে ফিরছিলাম। তখন মনে হল আসলে আমি যতই খাই না কেন ওদের লস নাই। সারা রাত ক্রমাগত খাইলেও ওদের লস হবে না। প্রতিটা দানের শেষে যখন সব চিপস গুলো টান দিয়ে নিয়ে যায় তখনই বুঝা যায় এদের কোনদিন লস হবে না। কী অদ্ভুত মানুষের জীবন, কষ্ট করে উপার্জন করে এখানে কিসের এক নেশায় সব উড়িয়ে দিচ্ছে! অবশ্য আমার এই দার্শনিক চিন্তা ভাবনা বেশিক্ষণ টিকেনি। হুট করেই মনে হল এক কোনায় একটা সুপের ডিস দেখেছিলাম, ওইটা না খেয়েই চলে আসছি… মনটাই খারাপ হয়ে গেল! এমন লস এই দুর্দিনে আমার পোষায়? ধুর… 

    ঈদ মুবারক সকলকে। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৯ জুন ২০২৩ | ১০৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2601:14a:502:e060:6e1b:5688:ffdf:***:*** | ২৯ জুন ২০২৩ ০৭:২৯520807
  • আপনাকেও ঈদ মুবারক! সুপ না খেয়েই চলে আসার মনখারাপ হওয়াটা আমার মানসিকতার সাথে খুব মিলে গেলো! কিন্তু ছবিগুলো দেখতে পাচ্ছিনা তো?
  • Joshita | 194.56.***.*** | ২৯ জুন ২০২৩ ১৩:৩৮520810
  • ঈদের শুভেচ্ছা।
  • বিপ্লব রহমান | ০৪ জুলাই ২০২৩ ০৯:৩৯520977
  • স্যুপের দুঃখে বুক্টা ফাইট্টা যায়! 
    বাসি ঈদ মোবারক heart
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন