এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ইতিহাস  খাই দাই ঘুরি ফিরি

  • বাংলার নবাবি কেল্লা ও কেল্লাবাসীর কিসসা - ১০

    ফারুক আব্দুল্লাহ
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ০৭ জুলাই ২০২২ | ২৪৩৪ বার পঠিত

  • প্রতিবছর কেল্লা নিজামতের মধ্যে নানান উৎসব ও অনুষ্ঠান পালিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল পারসিক নববর্ষ বা নওরোজ। নবাবী আমল থেকেই মুর্শিদাবাদে রাজকীয় ভাবে নওরোজ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এইদিন কেল্লার প্রতিটি বাড়ি সেজে উঠত। নওরোজের দিন সকাল থেকেই ইমামবাড়া আনন্দ মুখর হয়ে উঠত এবং সেখানে একটি বিরাট বড় দস্তরখওয়ান পেতে তার উপর নানান রকমের খাবার ও ফলমূল সাজিয়ে হজরত আলীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হত। দস্তরখওয়ান সেদিন নানান রকম খাবার যেমন আন্ডে কা লৌজ, চুকান্দার কা লৌজ, গাজর কা লৌজ, পাপড়ি হালওয়া সোন, দুধিয়া হলওয়া সোন, জজি হালওয়া সোন সহ আরও নানান সুখাদ্যে সেজে উঠত। সেই সাথে থাকতো বাজারের সমস্ত ধরনের নতুন ফলমূল। শুধুমাত্র নিজামত ইমামবাড়াতেই নয় কেল্লার ভেতরে অবস্থিত প্রতিটি ইমামবাড়াতেই সেদিন দস্তরখওয়ান বিছিয়ে তাতে নানা ধরনের খাবার সাজিয়ে হজরত আলীকে উৎসর্গ করা হতো। নওরোজ উপলক্ষে কেল্লার বড়ো দেওড়ির ভেতরে অবস্থিত নবাব ফেরাদুন জার মেয়ে ওয়াহিদ উন নিসা বেগমের ইমামবাড়ায় পাতা দস্তরখওয়ান হতো দেখবার মত। নবাবী আমলে এই দিন নিজামত ইমামবাড়ার লঙ্গরখানা থেকে দরিদ্র জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হতো।তারপর নওরোজের আনন্দ উৎযাপন করতে কেল্লাবাসী রঙ খেলায় মেতে উঠত।




    পূর্বের ঐতিহ্য বজায় রেখে আজও প্রতিবছর কেল্লাবাসী নওরোজ পালন করে আসছেন।তবে আজ পূর্বের সেই আড়ম্বরতা আর নেই। তবুও আজও নিজামত ইমামবাড়াসহ কেল্লার বিভিন্ন ইমামবাড়াগুলিতে দস্তরখওয়ান বিছিয়ে তার উপর খাবার সাজিয়ে হজরত আলীকে উৎসর্গ করা হয়।তবে এখন অর্থাভাবের জন্য এই বিশেষ দিন জনসাধারণ কে খাওয়ানো সম্ভব হয় না। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক বাড়ি থেকেই সাধারণ মানুষকে এই দিন অর্থ ও খাবার দান করা হয়। এই নওরোজ উৎসবের দিন আমারও বেশ কয়েকবার কেল্লা তথা ইমামবাড়ায় যাওয়া এবং নিজামত পরিবারের বহু প্রবীণ মানুষের কাছে পুরনো দিনর নওরোজ উৎসব পালনের নানান গল্প শোনার সৌভাগ্যও হয়েছে।




    কেল্লায় নওরোজ এর মত আরো একটি বড় উৎসব হল বেরা বা খাজা খিজির উৎসব। ইংরেজি সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি ও বাংলা ভাদ্র মাসের শেষ বৃঽস্পতিবার রাত্রি ৯:৩০ থেকে ১০:৩০ এর মধ্যে এই উৎসব পালিত হয়।

    ‘বেরা’ একটি পারসি শব্দ, যার অর্থ ‘কোন মহৎ উদ্দেশ্যে দলবদ্ধ নৌ যাত্রা’। এই উৎসব প্রায় ৩০০ বছরের অধিক পুরানো।কথিত রয়েছে যে, মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে বাংলার তৎকালীন সুবাদার রাজধানী ঢাকায় বেরা উৎসবের সূচনা করেন। তবে প্রথম দিকে তা ছিল অনিয়মিত। ১৭০৪ সালে মুর্শিদকুলী খাঁনের সময় থেকে উৎসবটি নিয়মিত ভাবে পালিত হতে থাকে। প্রথমে এই উৎসব ঢাকাতে বুড়িগঙ্গা নদীতে পালিত হত। কিন্তু পরবর্তীতে নবাব মুর্শিদকুলী খাঁন বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব পদ লাভ করে বাংলা সুবার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করলে এই উৎসবটিও মুর্শিদাবাদের ভাগীরথী নদীতে পালিত হতে থাকে।




    বেরা উৎসবটি পালিত হয় মূলত জ্ঞানী ইলিয়াস এর প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করার উদ্দেশ্যে। ইলিয়াস ছিলেন একজন মুসলিম সাধক যিনি ‘খাজা খিজির’ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তাকে আবার অনেকে জলের পীর কিম্বা জলের দেবতা বলেও উপাসনা করত। বেরা উৎসবটি পূর্বে ‘খিজিরের উৎসব’ নামেই অধিক পরিচিত ছিল। তৎকালীন সময়ে জলপথের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম, নবাবরাও অধিকাংশ যাতায়াতের ক্ষেত্রে জলপথই ব্যবহার করতেন। কথিত রয়েছে, জলপথের অঘটন রুখতে এবং প্রায় প্রতি বছর বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করার জন্য নবাব খাজা খিজিরের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর মহাসমারোহে এই উৎসবটি পালন করতেন। উৎসব উপলক্ষে ভাগীরথী নদীতে প্রচুর ছোট, বড় নৌকা ভাসানো হত। এই সমস্ত নৌকা গুলি কে রঙিন কাগজে মুড়ে এবং তাতে নানান রঙের আলো সাজিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হত। ফলে নদী জুড়ে একটি মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি হত।

    নাসিরি, আফসার এবং নাজাফি, বাংলা সুবার এই তিন বংশের নবাবরা অতি আড়ম্বরতার সাথেই এই উৎসবটি পালন করে এসেছেন। এই বেরা উৎসব কে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদ শহরে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটত এবং ভাগীরথী নদীর উভয় পাড়েই বসত মেলা। নবাবী আমলে বেরা উৎসবের দিনে নবাবরা দেশের বহু গণ্য মান্য ব্যক্তিদের নিমন্ত্রণ জানাতেন এই উৎসবে অংশ গ্রহণ করার জন্য। এছাড়াও থাকতো বাংলা সুবার বিভিন্ন অঞ্চলের শাসনকর্তা সহ বহু উচ্চ পদস্থ কর্মচারী।বাংলায় ব্রিটিশদের আগমনের পর নবাবের আমন্ত্রিতদের তালিকা আরও বেড়ে গিয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। ব্রিটিশ আমলে গভর্নর জেনারেল, মুর্শিদাবাদের রেসিডেন্ট, ব্রিটিশ সেনা অধিকর্তা সহ বহু ব্রিটিশ অফিসার সপরিবারে নবাবের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতেন। বেরা উৎসবের সময় নবাব-নাজিম ঝলমলে পোশাক পরে মসনদে বসতেন এবং অতিথিদের কাছ থেকে নজরানা গ্রহণ করতেন। নবাব দরবারে সেদিন নাচ গানের আসর বসত, নবাবের অতিথি দের জন্য থাকতো শাহী খানাপিনার আয়োজন। বেরা ভাসানোর পর এই সব আমন্ত্রিত অতিথিরা নবাবী ভোজসভার এলাহি খানাপিনায় হাবু ডুবু খেতেন।

    নাজাফি বংশের নাবাবদের আমলে বেরার দিন সন্ধ্যা বেলায় একটি জাঁকজমকপূর্ণ জুলুস বা মিছিল মতিমহল থেকে বেরিয়ে জাফরাগঞ্জ অভিমুখে যাত্রা করত। এবং এই রাজকীয় যাত্রায় সামিল হতো নবাবী হাতি, ঘোড়া, উট, সাথে চলত নবাবী সেনাবাহিনী। এছাড়াও এই মিছিলের সাথে চলতো রাজকীয় পোশাক পরিহিত নবাব এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও নবাবের আমন্ত্রিত অতিথিরা। পুরো যাত্রা পথে বাজত সুমধুর নিজামত ব্যান্ড। এর পর জুলুসটি আবার ফিরে আসত বেরার কাছে এবং খাজা খিজিরের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা রুটি, ক্ষীর, পান বেরার উপর রেখে তার পাশে জ্বালানো হত সোনা ও রূপার প্রদীপ। তারপর তা খাজা খিজিরের উদ্দেশ্যে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে কামান থেকে ঘন ঘন তোপ দাগা হতো অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য বাড়াবার জন্য।




    বর্তমানেও বেরা উৎসব প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে, কিন্তু উৎসবে পূর্বের সেই আড়ম্বরতা আর নেই। তবে এখনও বেরা ভাসান উৎসব কে কেন্দ্র করে দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটকদের আগমন ঘটে কেল্লা নিজামতে। রাজ্য সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এখনও ছুটে আসে মুর্শিদাবাদ শহরে। বেরা উৎসবের প্রায় একমাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় নৌকা তৈরির কাজ। নৌকা তৈরি হয় মূলত বাঁশ দিয়ে তার পর সেগুলি রঙিন কাগজ, অভ্র, রাঙতা ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়। প্রস্তুতির পুরো প্রক্রিয়াটি চলে মুর্শিদাবাদের ইমামবাড়ার ভেতরে।




    অনুষ্ঠানের দিন সন্ধ্যাবেলা শোভাযাত্রা শুরু হয় ইমামবাড়া থেকে এবং তা ওয়াসিফ মঞ্জিল প্রাসাদে গিয়ে শেষ হয়। এই প্রাসাদে আসর বসে আমন্ত্রিত অথিতিদের। যাদের মধ্যে থাকেন জেলার বিভিন্ন উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ যাদের বরণ করেন মুর্শিদাবাদের বর্তমান নবাব বাহাদুর সহ নিজামত পরিবারের বিশিষ্ট সদস্যরা। ওয়াসিফ মঞ্জিল প্রাসাদেই বর্তমান নবাব সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এবং মুর্শিদাবাদ নিজামত পরিবারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বেরাতে ‘সেহরা’ বা ফুলের মালা পরিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। বেরা ভাসানো হয় রাত ১০টার পরে। বর্তমানে কলা গাছ দিয়ে বিরাট ভেলা তৈরি করে তার উপর বেরা চাপানো হয় এবং ভেলার চারিদিক আলোকিত করা হয় প্রদীপ দিয়ে। এবং অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের জন্য থাকে যৎসামান্য খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। পুরো অনুষ্ঠান চলে মুর্শিদাবাদ এস্টেটের তত্ত্বাবধানে।

    আমিও বেশ কয়েকবার বেরা উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলাম, সেদিন সকাল থেকেই কেল্লা চত্বরে জেলা ও জেলার বাইরের অসংখ্য মানুষের আনাগোনা শুরু হয়, তবে সন্ধ্যাবেলা থেকে কেল্লায় ভিড় আরও বাড়তে থাকে, হাঁটা দায় হয়ে পড়ে।কেল্লার ভেতরে লাটঘাটে বেরা ভাসানো হয়।

    এই উপলক্ষে ভাগীরথী নদীর উভয় পারেই মেলা বসে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ এই উৎসবে মেতে ওঠে। আজ মুর্শিদাবাদের নবাব থাকলেও পূর্বের সেই নবাবী আমল নেই। তবুও বেরার রাতে ভাগীরথীর বুকে ভেসে চলা আলোকময় জলযান গুলি নবাবী আমলকে মূর্ত করে তোলে।




    কেল্লার আরও একটি পুরোনো উৎসব 'নেওয়ারা' আজ বন্ধ হয়ে গেছে। নেওয়ারা ছিল নবাবী নৌ বাহিনীর একটি উৎসব, সেদিন সমস্ত নৌকা মেরামত ও রঙ করে ভাগীরথীর বুকে একটি নৌ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। সেদিনের নেওয়ারা উৎসবের ছোটো সংস্করণ হল আজকের বাইচ উৎসব। যদিও বাইচ উৎসবও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

    কেল্লা নিজামতে আরও একটি অনুষ্ঠান খুব গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয় সেটি হল 'মহরম'। অধিকাংশ মানুষ মহরমকে উৎসব ভাবলেও প্রকৃতপক্ষে মহরম হল একটি শোক পালনের অনুষ্ঠান। চলুন মহরম সম্পর্কে প্রথমে জেনে নেওয়া যাক।

    ইসলামি বর্ষপঞ্জীর প্রথম মাসের নাম মহরম। বিভিন্ন কারণেই এই মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। মহরম মাসের একটি অন্যতম ঘটনা হল কারবালার যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ইসলামিক বর্ষপঞ্জী অনুসারে ১০ মহরম ৬১ হিজরি এবং ইংরেজি ১০ই অক্টোবর ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান ইরাকের কারবালা নামক প্রান্তরে সংগঠিত হয়েছিল। এই দিন হজরত মহাম্মদ(সাঃ)এর নাতি ইমাম হোসেনকে হঠাৎই এক অসম যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয় এবং এই যুদ্ধে মরু প্রান্তরে অবরুদ্ধ অবস্থায় তৃষ্ণায় কাতর হয়ে বেশ কয়েকজন শিশু ও মহিলাসহ সপরিবারে, স্বপার্ষদে তিনি শক্র পক্ষের হাতে নির্মম ভাবে প্রাণ হারান।

    বিশ্বের সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায় এই বিশেষ দিনটি শোক পালনের মধ্যে দিয়ে কারবালা প্রান্তরের সেই নিষ্ঠুর এবং হৃদয় বিদারক ঘটনাকে স্মরণ করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মত বাংলাতেও নবাবী আমল থেকে নিয়মিত মহরম পালিত হয়ে আসছে। কথিত রয়েছে যে নবাব মুর্শিদকুলী খাঁন মহরম মাসের প্রথম দশ দিন সরকারী ছুটি ঘোষণা করতেন। আরও পরবর্তীকালে বাংলার মসনদে বসেন নাজাফি বংশের নবাবরা (নবাব মীরজাফর ও তার বংশধররা)। তারা ছিলেন হজরত মহাম্মদ(সাঃ)তথা ইমাম হোসেনের বংশধর। ফলে নাজাফি বংশীয় নবাবদের আমলে মহরম পালিত হত নবাবী পৃষ্ঠপোষকতায় অত্যন্ত জাঁকজমকতার সাথে।

    মহরম উপলক্ষে নিজামত পরিবার সহ মুর্শিদাবাদের শিয়া মুসলিম সম্প্রদায় দুই মাস আটদিন ব্যাপী শোক পালন করত।এই দুই মাসের প্রথম চল্লিশ দিন পূর্ণ হলে সেই দিনটিকে বলা হত ‘চল্লিশা’ এভাবে পঞ্চাশ দিনে ‘পঞ্চাশা’ ও ষাট দিন পূর্ণ হলে বলা হত ‘ষাটা’। মহরমের শোক পালনের শেষ দিনটিকে বলা হয় ‘আসগরিয়া’। আসগরিয়া পালনের মধ্যে দিয়েই শেষ হয় শোক পালন। মহরম উপলক্ষে নবাবী আমলে হাজারদুয়ারী সংলগ্ন ইমামবাড়া খুলে দেওয়া হত জনসাধারণের জন্য। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রচুর মানুষ মহরমে যোগ দেওয়ার জন্য মুর্শিদাবাদ শহরে আসত। মহরমে আগত সমস্ত অতিথিদের থাকবার ব্যবস্থা হতো ইমামবাড়াতে। কিছু যাযাবর শ্রেণীর মানুষ ইমামবাড়ার সামনেই তাঁবু খাটিয়ে থাকত। মহরম উপলক্ষে মুর্শিদাবাদে আগত এই সমস্ত মানুষদের ভরণপোষণের জন্য খোলা হতো ‘লঙ্গরখানা’, যেখান থেকে বিনামূল্যে পরিবেশিত হতো ‘শাহী নবাবী খাবার’।




    তৎকালীন সময়ে মহরম উপলক্ষে মুর্শিদাবাদের শিয়া মুসলিমরা সমস্ত রকমের বিলাসিতা থেকে দূরে থাকত। এমনকি দুই মাস শোক পালনের সময় তারা খালি পায়ে হাঁটাচলা করত, তেল মাখত না, এমন কি মহরম মাসের তেরো দিন তারা মাছ খাওয়াও বন্ধ রাখত। মহরম উপলক্ষে মুর্শিদাবাদ শহরের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরাও এই শোকে সামিল হয়ে এই তেরো দিন মাছ খেত না। শোকের প্রতীক হিসেবে এই সময় শিয়া সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষ কালো পোশাক পরিধান করত এবং প্রার্থনা ও উপবাসের মধ্যে দিয়ে এই দিন গুলি কাটাত। সমগ্র মহরম মাস জুড়েই কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার কথা স্মরণ করে শোক পালন করা হত। সমগ্র মাস জুড়েই চলত নিজামত ইমামবাড়ায় শোক সমাবেশ। সেখানে কারবালার ঘটনা নিয়ে নানান আলোচনা হত। সেই সাথে গাওয়া হত শোক গীত। ইমামবাড়ার নহবতখানা থেকে বাজানো হত করুণ সুর। শুধু নিজামত ইমামবাড়াই নয় শিয়া সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষের বাড়িতেই থাকত একটি করে ইমামবাড়া সেখানেও চলত আলোচনা সভা, সেই সাথে বিশেষ দিন গুলিতে বেরত শোক মিছিল।

    হিজরি মহরম মাসেই যেহেতু ইমাম হোসেন সহ তার আত্মীয়স্বজন ও পরিষদবর্গকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হয়েছিল।তাই সেদিনের কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসেন সহ বাকি ব্যক্তিদের ভোগ করা কষ্টের কিছুটা অনুভব করার জন্য মহরম মাসের বিশেষ দিন গুলিতে শিয়া মুসলিমরা বিভিন্ন মাতাম বা শোক পালন করত। এই মাতম বিভিন্ন রকমের হত যেমন ‘আগ-মাতম্’ বা উত্তপ্ত কাঠকয়লার আগুনের উপর দিয়ে হেঁটে চলা। ‘জঞ্জির(লোহার শিকল)-মাতম্’ বা শিকলের সামনে-পিছনে ছোরা বেঁধে নিজের শরীরে আঘাত করে রক্তপাত ঘটানো, ‘কামা মাতম’ বা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করা। এছাড়া ‘হাত-মাতম’ বা বুক চাপড়ানো। শুধুমাত্র মুসলিমরাই নয় মুর্শিদাবাদ শহরের বহু হিন্দুও মহরমের মাতমে বিশেষ করে আগ মাতাম এমনকি জঞ্জির মাতমেও অংশগ্রহণ করত। তাদের অনেকেই মুসলিমদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহরম উদযাপন করত।

    ১০ই মহরম বা আশুরার দিনটি হল মহরম মাসের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিন সকাল বেলায় নিজামত ইমামবাড়া থেকে বড় জুলুস বা মিছিল বেরত মুর্শিদাবাদের কারবালার উদ্দেশ্যে। জুলুসের প্রথমদিকে থাকত নবাবী বাদ্যকরের দল। তারা তাদের বাদ্যযন্ত্রে শোকের সুর তুলত।এছাড়াও মিছিলে ধ্বনিত হত ‘হায় হোসেন,হায় হোসেন’। মিছিল চলাকালীন সময়েই মাতম বা শোক পালনকারীরা লোহার চেনের মাথায় ছোরা বেঁধে তা দিয়ে নিজেদের পিঠে ক্রমাগত আঘাত করত। এ ভাবে আঘাতের পর আঘাতে কিছুক্ষণের মধ্যেই মাতম পালনকারীদের পিঠ রক্তে ভিজে লাল হয়ে উঠত। সেই সময় মাতমকারীদের রক্তাক্ত পিঠে ঢালা হত গোলাপজল। গোলাপজল ও রক্তের গন্ধ বাতাসে মিশে সমগ্র পরিবেশ বিষণ্ণতায় ভরে উঠত। এছাড়াও মিছিলে একদল মানুষ মিলিত ভাবে শোক গীত গায়তে গায়তে এগিয়ে চলত কারবালার দিকে।




    মহরম শোক পালনের মাস হলেও বর্তমানে মুর্শিদাবাদ শহরে মহরম উৎসবে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে মহরম উপলক্ষে লালবাগ বা মুর্শিদাবাদ শহরের কেল্লা নিজামত ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা গুলি নতুন সাজে সেজে ওঠে। হাজারদুয়ারী ও ইমামবাড়ার মধ্যবর্তী মাঠে মেলা বসে। নিজামত ইমামবাড়া রঙিন আলো দিয়ে সাজানো হয়।

    আজও মুর্শিদাবাদের মহরম উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ মুর্শিদাবাদে আসেন। আজও মহরম মাসের প্রথম দশ দিন ইমামবাড়া সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়।সেখানে মুসলিমদের সাথে হিন্দুরাও আসে এবং ধূপ ও মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করে। শুধু তাই নয় আজও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা মহরম পালনে তাদের মুসলিম ভাইদের সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করে।তারা জুলুসে এবং মাতমেও অংশগ্রহণ করে।

    ১০ই মহরম বা আশুরার দিন আমারও সৌভাগ্য হয়েছে মহরম পালনকারীদের সাথে জুলুসে অংশগ্রহণ করার। মনে আছে ২০১৯ সালের কথা, সেবারই আমার প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছিল মহরমে, ইমামবাড়ার আতাহার ভাই জানিয়েছিলেন ১০ই মহরমের দিন সকাল ৮ টায় ইমামবাড়া থেকে জুলুস বা মিছিল বেরোবে আমিও সেই মত সকাল সকাল পৌঁছে গেছিলাম, হাজারদুয়ারীর মাঠে সেদিন তিল ধারণের জায়গা ছিলনা, তবু এতো ভিড়েও মহরম পালনকারীদের খুব সহজেই চেনা যাচ্ছিল কারণ তাদের অধিকাংশরাই কালো রঙের পোশাক পরে ছিল, কিছুজন অবশ্য সাদা পোশাকেও ছিল। দেখলাম মিছিলে সবার আগে ‘দুলদুল’ নামের একটি সাদা ঘোড়া রয়েছে তাঁর গায়ে হাত দিয়ে রয়েছেন নিজামত পরিবারের কিছু প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ। তাদের পেছনে নানান বয়সের মানুষ মাতম করতে করতে এগিয়ে চলেছেন। সামনের দিকে অনেকের হাতেই বিরাট বড়ো বড়ো ধর্মীয় পতাকা ছিল যা হাওয়ায় উড়ছিল। এভাবেই ধীরে ধীরে তাঁরা এগিয়ে চলেছেন, শুধু নিজামত পরিবারের মানুষ নয় সেই সাথে শহরের স্থানীয় হিন্দু-মুসলিম ও ইরানি সম্প্রদায়ের মানুষও এই মিছিলে যোগদান করে। মিছিল এতোই বড়ো ছিল যে তা কেল্লার প্রধান গেট দক্ষিণ দরওয়াজার কাছে চলে এলেও মিছিলের শেষ প্রান্ত তখনও হাজারদুয়ারীর কাছেই ছিল। কেল্লা থেকে কারবালা প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারের দূরত্ব মাত্র, অথচ এই সামান্য রাস্তাটুকু সেদিন জুলুস সহযোগে যেতে প্রায় সারাদিন লেগে গেলো।




    মিছিল কারবালা যাওয়ার পথে রাস্তার মাঝেই মাতম করা শুরু হল, দেখলাম একটি চেনের মাথায় ৪-৬ টি ছোটো ছোটো ধারালো ছুরি বাঁধা আছে তা দিয়েই মাতম পালনকারীরা সমানে জোরে জোরে নিজের পিঠে আঘাত করছে। প্রথমে দেখলাম তেমন কিছুই হল না কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো পিঠ ছুরির আঘাতে গভীর ভাবে কেটে গেছে, সেই স্থান থেকে সমানে রক্ত পড়ে পিচ রাস্তা ভিজে যাচ্ছে, অবস্থা এমনই হল যে মাতম পালনকারীর কয়েক ফোঁটা রক্ত ছুটে এসে আমার গায়েও পড়লো, এর মধ্যেই কিছু মানুষকে দেখলাম যারা সেই কেটে যাওয়া স্থানে গোলাপ জল স্প্রে করছে, এর মধ্যেই কানে ভেসে এলো শোক গীত, সাথে হাত দিয়ে বুক চাপড়ানোর গম গমে আওয়াজ। এভাবেই মিছিল আরও কিছুটা এগিয়ে গেলো এবং দেখলাম পৌরসভার জলের গাড়ি এসে রাস্তায় পড়ে থাকা রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করে মিছিলের সাথে সাথে সেও এগিয়ে চলেছে। মিছিল কিছুটা এগিয়ে আবার থেমে গিয়ে মাতম পালন করছে, এবং নোহা বা শোক গীত গাইছে। রাস্তার দুই পাশে অজস্র ভিড়, কেও জানালায়, কেউ আবার ছাদ থেকেও এই মিছিল দেখতে ব্যস্ত।এখানে হিন্দু মুসলিমের কোনো ব্যাপার নেই, এ যেন সত্যিই এক মিলন মেলা। মিছিলে কে হিন্দু আর কে মুসলিম তা বোঝা দায়, এটাই নবাবের শহরের বিশেষত্ব।

    কেল্লার ভেতরে রমজানও বেশ জাকজমকতার সাথেই পালিত হয়।এই সময় পুরো মাস জুড়ে কেল্লাবাসী বেশি বেশি ধর্মীয় উপাসনায় মেতে থাকে। সেই শেষ রাত্রে সেহরির খেয়ে সারাদিন উপবাস করে সন্ধ্যা বেলায় ইফতার করে থাকে, নবাবী আমলে সেহরির সময় ও ইফতারের সময় কেল্লাবাসীকে সজাগ করতে তোপ দাগা হতো, তোপের সেই আওয়াজ কেল্লা চত্বর পার করে বহু দূরে ছড়িয়ে পড়তো। নবাবী আমলে কেল্লা সহ মুর্শিদাবাদ শহরের বিভিন্ন মসজিদে সন্ধ্যা বেলায় ইফতারের আয়োজন করা হতো। সেই ইফতারে থাকতো নানান শাহী খাবার, যা শুরু হতো নানান সরবৎ দিয়ে তারপর নানান রুটি ফলমূল ও মিষ্টি খাবার যেমন ফালুদা, ক্ষীর, সিমাই সহ বিভিন্ন কাবাব। সেহরীর জন্যেও দেওয়া হতো পোলাও কিম্বা রুটি ও মাংসের তরকারি। সব রান্না হতো নিজামত ইমামবাড়ায়। এছাড়া রাতের নামাজের পরে দেওয়া হতো পোলাও।

    এখন অবশ্য সেই সোনালী দিন আর নেই, কিন্তু তবুও আজও ইমামবাড়ায় রোজাদারদের জন্য পুরো রমজান মাস জুড়েই ইফতার ও সেহরীর আয়োজন করা হয়, তারপর সেই খাবার চক শাহী মসজিদে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই রোজাদারদের পরিবেশন করা হয়।

    এখন আর্থিক সমস্যার কারণে আগের মতো রাজকীয় ইফতার ও সেহরির আয়োজন করা সম্ভব হয়না, এখন ইফতারে শরবৎ, মুড়ি, কাঁচা ছোলা, বাদাম ভেজা, মটর ভেজা, ঘুগনি, খেজুর সহ বিভিন্ন ফলমূল ও নানান রকম তেলে ভাজা থাকে, এগুলির সাথে থাকে একটি বিশেষ মুখরোচক পদ ‘কাচালু’। যারা মসজিদে ইফতার করেন তাদের সেহরি করার জন্য প্রতিদিন তন্দুরি রুটি ও আলু কোর্মা দেওয়া হয়। এখন বিশেষ দিনগুলিতে রুটির বদলে বিরিয়ানি দেওয়া হয়। আমার চক শাহী মসজিদে ইফতার করার সৌভাগ্য হলেও রমজান মাসে দেওয়া বিরিয়ানি খাওয়ার সখ এখনও পূরণ হয়নি। হয়তো একদিন সেই ইচ্ছেও পূরণ হয়ে যাবে।

    রমজানের পর আসে ঈদ উল ফিতর। নবাবী আমলে অত্যন্ত জাঁকজমকতার সাথে ঈদ উল ফিতর পালন করা হতো। নবাব এইদিন জুলুশ বা মিছিল সহকারে হাতীর পিঠে করে ঈদের নামাজ পড়তে যেতেন শাহী চক মসজিদে। কথিত রয়েছে নবাব নাকি ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে দাড়িয়ে থাকা তাঁর দরিদ্র প্রজাদের উদ্দেশ্যে মুদ্রা ছড়াতেন। ঈদ উপলক্ষ্যে নিজামত ইমামবাড়ার লঙ্গরখানা থেকে সাধারণ মানুষদের পোলাও বিতরণ করা হতো। বিকেলে নবাব দরবারে বসতেন এবং নবাবের শুভাকাঙ্ক্ষীরা নবাবকে নজরানা বা উপহার প্রদান করতেন, নবাব অবশ্য উপহার প্রদানকারীদের তাঁদের দেওয়া উপহারের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি মূল্যের ‘খেলাত’ প্রদান করতেন। যাইহোক, আজ সেই সব সোনালী দিনের অবসান ঘটেছে, তবু আজও কেল্লা নিজামতে ঈদ উল ফিতর পালিত হয়।

    ঈদের আগের রাত চাঁদ রাত হিসেবেই পরিচিত। এই রাতে আনন্দের মাত্রা যেন ঈদের দিনের চেয়েও কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। চাঁদ রাতে কেল্লার সমস্ত বাড়ি নানান রঙের আলোতে সেজে ওঠে। নিজামত পরিবারের মেয়েরা সেদিন হাতে মেহেন্দি পরে, সারারাত ধরে চলে নানান গল্প গুজব ও পরের দিনের জন্য রান্না বান্নার প্রস্তুতি। পরের দিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসব। বাড়ির সদস্যরা স্নান সেরে নতুন পোশাক পরে তাতে আতর লাগিয়ে সকাল সকাল চক শাহী মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে চলে যান। সেদিন মসজিদ চত্বর বিভিন্ন শাহী আতরের সুবাসে ভরে ওঠে। মেয়েরাও সেদিন সমবেত হয়ে তাদের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে নামাজ পড়েন। ঈদের দিন প্রতিটি নিজামত পরিবারেই শাহী খাবারের আয়োজন হয়, সকালে পরোটা, পুরি কিম্বা রুটি সাথে হালুয়া, মাংসের কাবাব, কোর্মা, রেজালা, থাকে কয়েক রকমের সিমাই, ক্ষীর প্রভৃতি। দুপুরে অধিকাংশ বাড়িতেই পোলাও, বিরিয়ানি রান্না হয়ে থাকে শেষ পাতে মুখ মিষ্টি করতে থাকে জর্দা।




    ঈদ উপলক্ষে এই দিন বিকেল বেলায় নিজামত পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের বাড়ি যায়, এছাড়াও সেদিন বাড়িতে নানান আত্মীয় স্বজনদেরও আগমন ঘটে, এতে করে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।

    ঈদ উল ফিতরের পর আসে ঈদ উল আযহা।এই ঈদের সব কিছুই ঈদ উল ফিতরের মতোই, তবে এই ঈদের বিশেষত্ব হল পশু কোরবানি। নবাবী আমলে ইমামবাড়ার ভেতরে পশু কোরবানি করা হতো এবং মাংস ভাগ করে সরকারি তত্ত্বাবধানে কেল্লার ভেতরে অবস্থিত নিজামত পরিবার গুলিতে বণ্টন করে দেওয়া হতো। আজও সেই ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ব্যক্তিগত ভাবে নিজামত পরিবারের সদস্যরা কোরবানি করলেও নিজামত ইমামবাড়ায় আজও সরকারী ভাবেও কোরবানি করা হয়ে থাকে এবং সেই মাংস নিজামত পরিবারে বণ্টন করে দেওয়া হয়।

    তবে ঈদ উল ফিতরের চেয়ে ঈদ উল আযহাতে মানুষের ব্যস্ততা অনেক বেশি থাকে। এই ঈদে খাওয়া দাওয়ার আয়োজনও অনেক বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে মাংসের নানান পদ রান্না হয়,কয়েক রকমের কাবাব, ভুনা, কোর্মা, রেজালা, মাংসের সালান প্রভৃতি। তবে দুই ঈদেই সিমাই আবশ্যিক।

    উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান ছাড়াও কেল্লা নিজামতে বছরের বিভিন্ন সময় ছোট খাটো আরও নানান উৎসব অনুষ্ঠান পালিত হয়। নিজামত ইমামবাড়াতেই প্রায় ২০টিরও বেশি অনুষ্ঠান পালন করা হলেও তাতে পূর্বের সেই আমেজ নেই। সবচেয়ে বড় কথা, কেল্লাবাসীরা বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে তাদের পুরনো ঐতিহ্যকেই আজও বজায় রেখেছেন।




    ছবি - লেখক



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৭ জুলাই ২০২২ | ২৪৩৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০৮ জুলাই ২০২২ ১০:৫০509699
  • আহা আহা এত্ত ছবি দেখে বর্ণনা পড়ে  জিভে জল এসে গেল। 
     
    'আড়ম্বরতা' আবার কী? সেই আড়ম্বর আর নেই বললেই যথেষ্ট হয় তো। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:ad9e:49a8:90bd:***:*** | ০৯ জুলাই ২০২২ ০১:৪১509710
  • ভাল লাগে এই সিরিজ-এর লেখাগুলো , জানতে ​​​​​​​পারি ​​​​​​​অনেক ​​​​​​​অজানা ​​​​​​​তথ্য 
     
    'শুধু তাই নয় আজও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা মহরম পালনে তাদের মুসলিম ভাইদের সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করে।তারা জুলুসে এবং মাতমেও অংশগ্রহণ করে'
    - খুবই খুশীর কথা 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন