জীবন এক মহাসমুদ্র। জীবনের সঞ্চয় ফুরোয় না। এই কথাটি লিখে মনে হয় ওই কথাটি লিখলাম না। ভুলে গেলাম কী করে? পূর্ববঙ্গ থেকে আসা পরিবারের সংগ্রাম কম দেখিনি। দেখেছি ব্রজেনবাবু বাজারে চা-দোকান করে ছেলেমেয়ে মানুষ করছেন। তাঁর পুত্রদের কেউ দাঁড়িয়েছে কেউ দাঁড়ায়নি। অসম্ভব সুভদ্র মানুষ। বোঝাই যায় উচ্ছিন্ন হয়ে এসে বড়ো আতান্তরে পড়েছেন। বাজারের পাশের মস্ত ফ্ল্যাট বাড়ির দু-কামরার aএকটি ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন। নীচে দোকান। জল ফোটানোর মস্ত ড্রাম। চায়ের গেলাস পরপর সাজানো। দুধ ফুটছে আর-এক উনুনে। দুধ চা ব্যতীত আমাদের বাল্যকালে চা হত না। লিকার চা খাওয়ার চল কবে থেকে এল, মনে নেই। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে হয়তো। তো ব্রজেনবাবু ছিলেন ফিটফাট মানুষ। লুঙ্গির উপরে পরিষ্কার নীচু ঝুলের শার্ট, সে আমলে যা পরার চল ছিল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যা পরতেন, বড়ো এনামেলের থালায় চায়ের গ্লাস সাজিয়ে সবজিওয়ালাদের কাছে, মাছওয়ালাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে কোয়ার্টার পাউন্ড পাউরুটির অর্ধেক। তখন কি স্লাইস রুটি এসেছিল, মনে হয় না। স্লাইস রুটি আমাকে অবাক করেছিল মনে আছে। মাখন এবং রুটির একটি দোকান ছিল বেলগাছিয়া বাজারের মুখে। সেই সময় রুটি কোয়ার্টার, হাফ এবং ফুল পাউন্ড ওজনের পাওয়া যেত। মাখন কলাপাতায় মুড়ে দিত। তখন আমুলের জন্ম হয়নি। ইংরেজ চলে গেছে, কিন্তু রুটি, কেক ওজনের পাউন্ড, আউন্সের ধারণা বহুদিন রয়ে গেছিল। গজ ফুটের মাপ তো অবলুপ্ত হয়নি এদেশে। যদিও মেট্রিক সিস্টেম চালু হয়েছে বহুদিন। কেক রুটিতে এখন মেট্রিক সিস্টেমের ওজন ব্যবহার হয়। মনে আছে ক্লাস থ্রি ফোরে অঙ্কের বইয়ে পাউন্ড সিলিং, পেনি ইত্যাদি ছিল। পরে তা ধাপে ধাপে উঠে যায়। বাল্যকালে এক আনা, দু-আনা, এক সিকি, আধুলি এসব দেখেছি। হলুদ রঙের চৌকো দু-আনিকে লাল দু-আনি বলতাম। লাল দু-আনি আবার স্টাইলবাজ যুবককে ব্যঙ্গার্থে বলা হত। তামার পয়সা ছিল এক পয়সা। ফুটো পয়সাও। শিশুদের কোমরে লাল সুতোয় ফুটো পয়সা বেঁধে দেওয়া হত। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে নয়া পয়সা চালু হয়। পুরোনো টাকাপয়সা বাতিল হতে থাকে। ষোলো আনায় এক টাকার বদলে ১০০ পয়সায় এক টাকা হল। মেট্রিক সিস্টেম এল। তো আমাদের বাবা কেন্দ্রীয় সরকারের হাইকমিশনে ঢাকায় ছিলেন লিয়াজঁ অফিসার, তার আগে ৪৭-এ দেশভাগের পর বহরমপুরে ছিলেন, রিফিউজি ইমিগ্রেশনে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারে নীচু পদে অপশন দিয়ে ঢাকা থেকে চলে আসেন কলকাতায়। না হলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি কিংবা অন্য কোনো দেশের হাই কমিশনে চলে যেতে হত বদলি হয়ে। পিতামহর মত ছিল না। বসিরহাটের সন্নিকটের গ্রামে প্রথমে ভাড়ায় থাকতাম কাদের বাড়ি, জমি কিনে ইট কেটে বাড়ি হচ্ছে সেখানে। একান্নবর্তী পরিবারের বাড়ি। আমি শুনেছিলাম বাবা সেই সময় শিয়ালদার তরুণ হোটেলে থাকতেন। তারপর বেলেঘাটায় ভাড়াবাড়ি। আমার তার কোনো স্মৃতি নেই। আমার উপরে একটি দিদি ছিল। তার নাম ছিল ডিলডিল। সে মারা যায় টাইফয়েডে বেলেঘাটার বাসায়। আমার বড়দার জন্ম ১৯৩৮ সালে। তিনি আমার মায়ের প্রথম সন্তান। বড়দার পর আর-এক দাদা ছিল। সায়েব। ১৯৪২-৪৩-এ জন্ম হয়তো। সে নাকি পরম রূপবান ছিল। বাবা তাঁর চাকরিতে বাইরে। সন্তানটি চলে গেল। ধূলিহরে সেই দেবদূত শিশুর মৃত্যু হয় অজ্ঞাত কারণে। মা তাকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। স্বাভাবিক শিশু, কয়েক মাস বয়স। সকালে আর ওঠে না। ঘুমের ভিতরে শেষ নিশ্বাস পড়েছে। মাকে সায়েব আর ডিলডিলের জন্য কাঁদতে দেখেছি কত বছর পর্যন্ত। সায়েবকে নাকি কলার ভেলায় বেতনা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মা বিশ্বাস করতেন না, সায়েব বেঁচে নেই। হয়তো কলার ভেলায় ভেসে ভেসে বেঁচে উঠে রয়েছে নদীর কূলের কোনো গ্রামে, কোনো গৃহস্তের বাড়িতে। হায় সায়েব। মায়েদের সন্তানবিয়োগের শোক পরজন্মেও থেকে যায়।
বেলেঘাটায় খুব জলকষ্ট ছিল, তা থেকে বাঁচতে চুয়ান্ন-পঞ্চান্ন সালে বেলগাছিয়ায় চলে এলাম আমরা। টালা জলাধার সমুখে। ২৪ ঘণ্টা জল। জলের অভাব এখানে নেই। আর তাই বোধহয় আমি খরা আর জলের অভাবের কথাই সারাজীবন লিখেছি। বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের ভয়াবহ জলাভাব আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল জলই জীবন। বেলগাছিয়ার বাসা ছিল সর্বার্থে মেসবাড়ি। অনেকে এসে থাকতেন, ওপারের হোক বা বসিরহাটের কেউ হোক। বাবার মাসতুতো ভাইয়ের বন্ধু অনিল দে থাকতেন আমাদের বাসাবাড়িতে। তিনি ভোরে রেওয়াজ করতেন। তাঁর একটি রেকর্ড বেরিয়েছিল, ৭৮ আরপিএম। আমাদের বাড়িতে রেকর্ড প্লেয়ার ছিল না, পাশের বাড়িওয়ালা বাড়ির প্লেয়ারে তা বাজানো হয়েছিল। আমরা জানলায় বসে শুনেছিলাম। সেই স্মৃতিই ‘পাসিং শো’ গল্পের জন্ম দিয়েছে। আমাদের বাসা যে মেসবাড়ি হয়েছিল, তা কেন? বাবার তো মোটামুটি ভালো চাকরি ছিল, তাহলে? মামারাও পরিবার সমেত তিন ঘরের দাদুর দস্তানায়। বাবার উপর ভার ছিল অনেক, তাই এমন হত। সকলে চলে গেলে আমাদের তিন ঘরের একটিতে এক পরিবার এসে উঠেছিলেন। তাঁরা চট্টগ্রামের মানুষ। সূর্য সেনের সঙ্গে লতায়পাতায় সম্পর্ক ছিল। সেই মাসিমা আর মেসোর মুখেই চাটগাঁইয়া কথা, ন খাই, ন যাই শুনে মজা লাগত। তাঁরা শুটকি খেতেন, নোনা ইলিশ খেতেন। আমাদের দিতেন। চিকিৎসার জন্য ঠাকুরদা বেলগাছিয়ার বাসায় এলে, আমার বড়দা স্কটিশচার্চ কলেজের হোস্টেলে থাকতেন। ঠাকুরদার চিকিৎসার জন্য অনেক খরচ হত। পিতামহকে ঈশ্বরতুল্য দেখতেন বাবা। তেমনি বাবাকে ঈশ্বরতুল্য দেখতেন আমার দাদারা। তো সেই ভাড়াটে সেন পরিবারের সঙ্গে এখনও আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। কয়েক বছরে তাঁরা আমাদের আত্মীয়র মতো হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের পরিবারের একজন, বাচ্চু নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে জেল খেটেছিল বহুদিন। সূর্য সেনের বংশধর। রঞ্জন সেন আজকাল পত্রিকার সাংবাদিক ছিল। এখন অন্যত্র আছে। আমাদের এক প্রতিবেশী ছিলেন বিখ্যাত ধ্রুপদি সংগীত পরিবার ডাগর পরিবারের এক শাখা। নাসিরুদ্দিন ডাগর। তিনতলার ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকতেন ষাটের দশকের মধ্যভাগে। ডাগর পরিবার ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতে কিংবদন্তি প্রতিম। তাঁদের পরিবারের উস্তাদ রহিমুদ্দিন খান ডাগর ভারত সরকারের পদ্মভূষণ উপাধিতে সম্মানিত হয়েছিলেন। রাজস্থান ছিল তাঁর জন্মভূমি। আমি কয়েকবার তাঁদের ফ্ল্যাটে গিয়েছি। মা হয়তো মোচার ঘণ্ট কিংবা লাউ চিংড়ি পাঠিয়েছেন উপরের ভাবিকে। ঘরে গিয়ে বাদ্যযন্ত্র দেখে বিস্মিত হতাম। সরোদ, সেতার, বীণা সবই ছিল। বাড়ির সকলে বাজাতে জানত। বীণা নিয়ে নাসিরুদ্দিন ডাগরের বোন বেবি বসে আছে। মা সরস্বতীর মতোই ছিল সুন্দর ছিল সে। আমারই বয়সী হবে। তখন কলকাতার বাতাস শুদ্ধ ছিল। অন্তর শুদ্ধ ছিল। হিন্দু-মুসলমান এক বাড়িতেই ভাড়া থাকতে পারত। তারপর ধীরে ধীরে বদলে গেল। গুজরাত দাঙ্গার সময় যে ব্যক্তিকে কলকাতায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল ২০০২ সালে, তাঁর স্থান শ্যামবাজার বেলগাছিয়ায় হয়নি, হয়েছিল পার্ক সার্কাসে। তবে ইদানীং সেই অবস্থা বদল হয়ে যাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি নিজ এলাকায়। হিন্দু এলাকায় মুসলমান ফ্ল্যাট কিনছে। এই ঘটনা গত ন-দশ বছরের। সেকথা যাক, সেই নাসিরুদ্দিন খান ডাগরের সকালবেলার রেওয়াজে আমাদের জীবন মধুর হত সেই সময়। ভাবিজি আমাদের বাড়িতে খুব আসতেন। তিনি ছিলেন খুব সুন্দর। তাঁর ননদ বেবিও খুব সুন্দর। বাল্যকালে অমন সুন্দর যেন দেখিনি। গুড্ডি বলে একটি শিশুকন্যা ছিল তাঁদের। সে আমাদের কোলে কোলে ঘুরত। ইদে, বকরি ইদে আমাদের বাড়িতে ডালায় সাজিয়ে খাদ্য আসত। সেই খাদ্যের সুগন্ধ এখনও পাই। বোধহয় কাশ্মীরের হজরতবাল নিয়ে ষাটের দশকের মধ্যভাগের দাঙ্গার পর তাঁরা এখান থেকে চলে যান। এক কলকাতা দুই কলকাতা হতে লাগল। পুরোনো কলকাতা আর পুনরুদ্ধার হল না।
দিঘায় এক বছর কাটিয়ে অশ্বচরিত উপন্যাসের বীজ নিয়ে ১৯৮১ সালে ছ-মাসের জন্য তমলুক চলে আসি। ছ-মাস কাটিয়ে দেওয়ার পর জুন মাসে আমি বদলি হই ২৪ পরগনা জেলায়, বারাসত মহকুমায়। তখন জেলা ভাগ হয়নি। বাড়ির ভাত খেয়ে চাকরি করা আরম্ভ হল। মেদিনীপুর আমাকে অনেক দিয়েছে। জীবনের পথ খুঁজে দিয়েছে। ভালোবাসি ওই জেলাকে। ১৯৮১ সালের আগস্ট মাসে গ্রন্থাকারে আমার প্রথম উপন্যাস বেরোয়, ‘আলোকবর্ষ’। ‘ভয়’ নামে এই উপন্যাস ১৯৮০ সালে অমৃত নববর্ষ সংখ্যায় লিখেছিলাম। এই সময়ই এক ভোরবেলায় আমি দিঘার ভানু দাসের হারানো ঘোড়ার রহস্য উদ্ধার করে ফেলি। আমি তো ঘোড়া উদ্ধার করে ফিরিনি। ঘোড়া হারিয়ে গিয়েছিল। শ্রীনাথ জানা বাবু দশ-বিশ টাকা দিয়ে ভানুকে তা উদ্ধারে পাঠাতেন। আমিও গিয়েছি ক-বার ভানুর সঙ্গে ঘোড়া খুঁজতে। একবার গেলাম সি-ডাইক ধরে অনেক দূর। তারপর বাঁধ থেকে নেমে গেলাম বিস্তীর্ণ বালুচরে। সেখানে নুনের খালারি। গরিব মানুষ নুন তৈরি করছিল। পূর্ণিমার গোণে জল এসেছিল সমুদ্র থেকে। সেই জল জমা হয়েছিল বড়ো বড়ো গহ্বরে। খালারি হল তা। সূর্যের তাপে জল উবে গেলে নুন পড়ে থাকে। তারা সেই নুন সংগ্রহ করত। বাজারে বেচত। এই ছিল জীবিকা। সঠিক পদ্ধতি এখন ভুলে গেছি। কিন্তু এইরকম। আমি যখন দিঘায় থাকি প্রায়ই কলকাতার মানুষের সঙ্গে দেখা হত। শৈবালদা একবার গেলেন। ট্যুরিস্ট লজে উঠলেন। আমার বাসস্থান এবং শ্রীনাথ জানা ও ভানুচরণকে দেখে অবাক। বললেন, ভানু তার মনিবকে ঠকিয়েই যাচ্ছে। ঘোড়ার নাম করে টাকা নিচ্ছে। সত্যিই তো। মহাশ্বেতাদি গিয়েছিলেন নির্মল ঘোষ এবং তাঁর পুত্র খোকনকে নিয়ে। নির্মল ঘোষ স্টেটসম্যান পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন। মহাশ্বেতাদির সঙ্গে ভারতের বন্ডেড লেবার নিয়ে একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছিলেন। সুপুরুষ ছিলেন। বনগাঁয়ের লোক। তিনি বালিগঞ্জ ষ্টেশন রোডে মহাশ্বেতাদির সঙ্গেই থাকতেন। আমাকে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু তাঁর সাহিত্যতত্ত্বের সঙ্গে আমি অনেক সময়ই একমত হতাম না। খুব পড়ুয়া মানুষ ছিলেন। নির্মলদা কবিপত্র পত্রিকায় ১৯৭৬ সালে পিকাসোর লেখা একমাত্র নাটক অনুবাদ করেছিলেন। ১৯৪১ সালের শীতে নাৎসি জার্মান সেনাবাহিনী প্যারিস দখল করলে ‘Desire caught by the Tail’ নামের এই পরাবাস্তব নাটক লেখেন পিকাশো। মাত্র তিনদিনে লেখা হয়েছিল এই নাটক। তিন বছর বাদে ১৯৪৪ সালে প্যারিসে এই নাটকের প্রথম পাঠ হয়। সিমন দ্য বিভোয়ার, জাঁ পল সাঁত্রে, ভ্যালেন্টাইন উগো, পিকাসো নিজে উপস্থিত ছিলেন সেই পাঠাভিনয়ে। আলব্যের কামুর নির্দেশনায় তা পাঠ হয়েছিল। এই নাটক বাংলায় অনুবাদ করে নির্মল ঘোষ খুব বড়ো কাজ করেছিলেন।
তো মহাশ্বেতাদি ও নির্মলদাদের আমার হোটেল মালিক শ্রীনাথ জানা নেমন্তন্ন করে খাইয়েছিলেন। যুগান্তর পত্রিকায় তখন তিনি ‘অজানা ভারত’ নামে একটি কলম লিখতেন। সেই কলমে অমর এবং তার হারানো ঘোড়া নিয়ে লিখেছিলেন দিঘা থেকে ফেরত এসে। আমরা মেদিনীপুর থাকতে একটি সার্ভে করেছিলাম বর্গাদার নিয়ে। অতি মূল্যবান সার্ভে রিপোর্ট। আমি মহাশ্বেতাদিকে দিয়েছিলাম তা। তাঁর অক্লান্ত কৌরব উপন্যাসে আমি চিত্রিত হয়েছিলাম সেটেলমেন্ট কানুনগো হিসেবে। আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা তাঁকে বলতে তিনি উপন্যাসে লিখে দিলেন। খুব ভালো লেগেছিল তা। ১৯৭৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর বহরমপুরে প্রয়াত হন মহাশ্বেতাদির পিতা লেখক মনীশ ঘটক। পটলডাঙার পাঁচালি লিখে তিনি সুখ্যাত। একেবারে মরে হেজে যাওয়াপ্রায় মানুষ ছিল তাঁর লেখার চরিত্ররা। তাদের দীপ্তি, অপরাজেয় জীবন চিত্রিত করেছিলেন তিনি। তা ব্যতীত তাঁর আত্মজীবনী ‘মান্ধাতার বাবার আমল’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। বাবাকে মহাশ্বেতাদি বোধহয় বলতেন তুতুল, তাঁর মৃত্যুর পর আমরা সকলে মানে, মহাশ্বেতাদি, নির্মলদা, খোকন, আমি ও আমাদের বন্ধু লেখক অসীম চক্রবর্তী চললাম বহরমপুর। অসীম হলেন সেই লেখক, যিনি ‘মৌলিক স্বপ্নের উদ্যানে’ গল্পগ্রন্থ লিখে সাড়া ফেলেছিলেন। কলম ছিল শাণিত। ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। তিনি ছিলেন রসিক মানুষ। আমাদের সকলের প্রিয়জন। আগেই অসীমের কথা বলেছি, আবার বললাম। লালগোলা প্যাসেঞ্জারে করে সারারাত জেগে ভোরবেলা বহরমপুর পৌঁছলাম। অসীমই মাতিয়ে রেখেছিলেন সারারাত।
মহাশ্বেতাদির মা ধরিত্রী দেবীকে প্রণাম করলাম। তিনি তাঁর কন্যাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, অমর মিত্র কি সাঁওতাল? কেন বলেছিলেন কে জানে? তিনি তখন অতি বৃদ্ধা। আমি কোথায় থাকি, কোন্ গ্রামে, এসব জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমার খোলতাই চেহারা দেখেই হয়তো সাঁওতাল মনে করেছিলেন। আমি গর্বিত বোধ করেছিলাম। গ্রামের ধুলো আমার চেহারায় পড়তে আরম্ভ করেছে তাহলে। তখনও ফারাক্কা ব্যারেজ হয়নি। নির্মাণ কাজ চলছে যে তা দেখে এসেছিলাম। দেখে এসেছিলাম মুর্শিদাবাদ। খুব ভালো কেটেছিল ক-দিন। নির্মলদা নিয়ে একটি স্মৃতির কথা বলে এই কথা শেষ করি। শ্যামল রায় বলে এক লেখক ছিলেন, যিনি আসলে চিত্রকর, নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে মিসায় জেল খেটেছিলেন বেশ কয়েক বছর। শ্যামল রায়ই আমাকে মহাশ্বেতাদির কাছে নিয়ে যান গাঁও বুড়ো গল্প প্রকাশিত হলে। শ্যামল রায়কে দিয়ে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় মিসা-৭১ (মেইন্টেন্যান্স অফ ইন্টারনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-১৯৭১) নামে তাঁর জেলজীবনের কাহিনি লিখিয়েছিলেন। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিপজ্জনক উদার মানুষ আমি কম দেখেছি। অমৃত পত্রিকা তারুণ্যে ভরে দিয়েছিলেন। নে লেখ। যদি পারিস তবে আসবি, না হলে সামনে এলে বিপদ হবে তোর। তো সেই শ্যামল রায় আমাকে অনেক বছর বাদে ফোন করলেন, নির্মলদা মারা গেছেন, জান? না, জানি না। সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন বহুদিন। খোকন চাকরি করে। বাবাকে নিয়ে আলাদা ফ্ল্যাটে উঠেছিল। খোকন ক-দিন বাদে ফোন করল। মহাশ্বেতাদি বললেন, আয়, সকলের দেখা হবে। নির্মল খুব কষ্ট পেয়ে চলে গেছে। আমি গিয়েছিলাম। শ্যামল রায় ছিলেন। মহাশ্বেতাদি ছিলেন। শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। মালায় ঢেকে গেছে নির্মলদার মুখ। দিদি উঠে গিয়ে মালা সরিয়ে দিলেন। আমাকে বলছেন, দ্যাখ, নির্মলকে কী সুন্দর লাগছে, নির্মল কী সুন্দর। চিকচিক করে উঠেছিল তাঁর দুই চোখ। মহাশ্বেতাদি আপনাকে প্রণাম। নির্মলদা আপনাকেও প্রণাম। আর-একটি কথা ফোনে মহাশ্বেতাদি আমাকে বললেন, অমর, নির্মল চলে গেল, কোনো সংবাদপত্রে খবর হল না, তুই তো একটা কলম লিখিস সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায়। সেখানে লেখ না। অতিথি কলম ছিল তখন সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায়। পঞ্চম পাতার ডান সীমান্তে লম্বা করে উপর থেকে নীচ অবধি বেরত অর্ধেক কলম বিস্তারে। নির্মলদাকে নিয়ে আমি লিখেছিলাম।
ভানু ঘোড়া খুঁজে পায়নি। যে পালাত আশ্বিন মাসে, সে কেন বৈশাখে পালাল? সেই রহস্য আমি উদ্ধার করেছিলাম এক বছর বাদে এক ভোরে, কলকাতায়। ‘বিভ্রম’ নামে একটি নভেলেট লিখলাম। দুরুদুরু বুকে দিয়ে এলাম শিলাদিত্য পত্রিকায়। সম্পাদক সুধীর চক্রবর্তীর হাতে। তখন খুব সম্ভত অমৃত বন্ধ হয়ে গেছে। সুধীরবাবু আমাকে চিনতেন না। তবু নিলেন হাত বাড়িয়ে। বললেন, নির্বাচিত হলে চিঠি যাবে। চিঠি পেয়েছিলাম। ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে বিভ্রম শিলাদিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর আগে ১৯৮১-র ডিসেম্বরের ৫ তারিখে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের সময়ই বিভ্রম নভেলেটের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল শিলাদিত্য পত্রিকায়। আগের সংখ্যায় পরের সংখ্যার সূচিপত্র দেওয়া হত তখন। বিয়ে জীবনের এক বড়ো ঘটনা। মিতালির সঙ্গে বিয়ের পর আমি জানতে পারি কালিদাসের মেঘদূতম কাব্যের সেই অবন্তী দেশ উজ্জয়িনী নগর বেঁচে আছে। কল্পিত নয়। আমার শাশুড়ি মাতা বহিরবঙ্গের মানুষ। তাঁর পিতামহ রেওয়ার রাজার অধীনস্থ একজন প্রযুক্তিবিদ ছিলেন। তাঁর বাল্যকাল কেটেছে মধ্যপ্রদেশের রেওয়া শহরে। আমার স্ত্রী মিতালির জন্মও রেওয়ায়। বিয়ে আমার সঙ্গে ভারতবর্ষকে যুক্ত করে দিয়েছিল। মিতালিদের আত্মীয়রা সকলেই ভিন রাজ্যে বাস করেন। কেউ উজ্জয়িনী, কেউ গোয়ালিয়র, কেউ আগ্রা, কেউ রেওয়া, ভোপাল, ভুসোয়াল। আমার মা তাদের একজনের ভিতরে যশোরের সূত্র খুঁজে পেয়েছিলেন। শিলাদিত্যয় ‘বিভ্রম’ প্রকাশিত হলে ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভালো লেগেছিল। মহাশ্বেতাদির ভালো লেগেছিল। আমি চারশো টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকায় আমরা দুজনে দিঘা ঘুরতে গিয়েছিলাম। ছিলাম সমুদ্রের সামনে সরকারি লজে। বাস থেকে নামতেই দেখি ঠাকুর মশায়। যিনি শ্রীনাথ জানার হোটেলের ঠাকুর। আমার সুটকেস মাথায় নিয়ে তিনি পৌঁছে দিলেন সেই লজে। ভানুর ঘোড়া তখনও পাওয়া যায়নি। আর ফ্রেদরিক ফিরে আসেনি বইয়ের জন্য। আমি বলিনি যে আমি খুঁজে পেয়েছি, কেন পালিয়েছিল সে।
১৯৮০ সালে আমি ‘দানপত্র’ গল্পটি লিখি। সেই গল্প মহাশ্বেতাদি দিয়েছিলেন অনীক সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তীকে। ‘দানপত্র’ লেখার পর দীর্ঘ তিরিশ বছর আমি অনীক-এ বছরে একটি করে গল্প লিখেছি। ২০০১ সালে অনীক শারদীয়তে লিখেছিলাম ‘নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান’ উপন্যাস। লিখতে লিখতেই লেখক হয়। যত লেখা লিখে পারিশ্রমিক পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি লেখা বিনা পারিশ্রমিকে লিখেছি। সাহিত্য এবং শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতায় লিখেছি। কিন্তু মনে হয়, লেখককে পারিশ্রমিক দেওয়া উচিত। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখকের কথা গ্রন্থে বলছেন, লেখক এক কলম-পেষা মজুর। সে কথা থাক। লিখেছি অবশ্য আনন্দে। ১৯৮২ সালের অক্টোবর মাসে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথম গল্প লিখি আগুনের দিন। তখন আমি বারাসতের নিকটে টাকি রোডে গোলাবাড়ি নামে এক গঞ্জে। বারাসত মহকুমায় গোলাবাড়ি এবং বেড়াচাঁপা দুই অঞ্চলে চাকরি করেছি। এতদিন যে জীবন দেখেছি, তা বদলে গিয়েছিল ওই অঞ্চলে এসে। পরিশ্রমী চাষা, সংখ্যালঘু জীবন দেখিনি আগে। দেখিনি এক টুকরো জমি নিয়ে আকচা-আকচি। বিস্ময়ে হতবাক। কে জানত হাঁটানো মেয়ের কথা। কে জানত আলোকলতার রস খাইয়ে মানুষকে পাগল করে দেওয়া যায়। মাছের ভেড়ি, কাঁচা টাকা, মস্তানি… এসব দেখা ছিল না তেমন। ‘আগুনের দিন’ লেখার পর সাগরময় ঘোষ এবং সন্তোষকুমার ঘোষ ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সন্তোষকুমার ঘোষের সঙ্গে সেই দেখা হওয়া আমার জীবনের বিরল এক অভিজ্ঞতা। মুসলমান জীবন নিয়ে লেখা গল্প ছিল আগুনের দিন। যে নারী আগের পক্ষের সন্তান নিয়ে আবার নিকে করে, সেই সন্তানের সঙ্গে সৎ পিতার সম্পর্ক ‘হাঁটানো ছেলে বা মেয়ে’। এইটি গোলাবাড়ি দেগঙ্গা অঞ্চলে প্রচলিত। সন্তোষবাবুর প্রখর জ্ঞান ছিল ইসলাম এবং মুসলমান জীবন নিয়ে। তিনি ঘণ্টা দুই ব্যয় করেছিলেন আমার সঙ্গে তাঁর বার্তা সাংবাদিকের ঘরে। মস্ত ঘরে আমি আর তিনি মুখোমুখি। সিল্কের পাঞ্জাবি, ধুতি এবং জর্দা, তিনি যে কত মূল্যবান কথা বলেছিলেন তাঁর সন্তানপ্রতিম তরুণ লেখককে। সন্তোষকুমারের একশো বছর হল। বাংলা সাংবাদিকতায় তিনি বড়ো এক পরিবর্তন এনেছিলেন। লেখক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। জল দাও, কিনু গোয়ালার গলি, শেষ নমস্কার, শ্রীচরণেষু মাকে—বাংলা ভাষায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর গল্পে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতকে চেনা যায়। মধ্যবিত্তের স্খলন, অর্থনীতিতে মন্দা—সবই সন্তোষকুমারের লেখার বিষয় ছিল।
মনে পড়ে গেল পরের কথা। বলেই নিই। এখন ফেব্রুয়ারি চলছে। ২১ আসছে। আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা দিবস। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীনতার আগে যত না বাংলাচর্চা ছিল, এখন তা কমেছে। ক্রমশ কমেছে। বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ব কম আমাদের এখানে যত সরকার এসেছে, সকলের। কংগ্রেস, বামফ্রন্ট, বা বর্তমান সরকার কেউ বাংলা ভাষাকে আলাদা ভাবে মর্যাদা দেয়নি। ১৯৯৩ সাল ছিল বাংলা ১৪০০ সালের আরম্ভ। নতুন শতাব্দী। আমরা একটি আন্দোলন করেছিলাম, সরকারি কাজে বাংলা ব্যবহার, কলকাতা সহ সমস্ত পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা স্কুলশিক্ষায় আবশ্যিক করা, বাংলা ভাষাকে দূরদর্শনে হিন্দি ও অন্য ভাষার সম-মর্যাদা দেওয়া। তখন কেবল টিভি আসেনি। দূরদর্শন ভরসা। দূ্রদর্শনে বাংলার সময় কমিয়ে দিয়ে হিন্দির আধিপত্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই আন্দোলনের কথা লিখিত থাকা উচিত। আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক আশিস ঘোষ, এবং সমাজকর্মী রতন বসু মজুমদার ছিলেন আন্দোলনের নেতৃত্বে। আমি ছিলাম, আফসার আমেদ ছিলেন, প্রবুদ্ধ মিত্র, কবি গৌতম চৌধুরী, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সব নাম এখন আর মনে নেই। ভাষা শহিদ স্মারক সমিতির উদ্যোগে এই আন্দোলন। আমরা দূরদর্শনের সামনে ধর্না দিয়েছিলাম মঞ্চ বেঁধে। স্মারকলিপি প্রদান করেছিলাম। দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে একটি অপূর্ব অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেখানে আমজাদ আলি সরোদে ‘আজি বাংলা দেশের হৃদয় হতে কখন আপনি…’ বাজিয়ে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন। এই আন্দোলন সমস্ত কলকাতায় ছড়িয়ে গিয়েছিল। আমি শিয়ালদা স্টেশনে পথসভায় বক্তৃতা করেছিলাম। আমাদের আন্দোলনের চাপে সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের এক উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তখন আমি আলিপুরে চাকরি করি সদর মহকুমা ভূমিসংস্কার আধিকারিকের দপ্তরে। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (বর্তমান মুখ্যসচিব) ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক, অতিরিক্ত জেলা শাসক ( ভূমি সংস্কার )। তাঁর একটি অসামান্য গুণ, এক ঘণ্টা বক্তৃতা দিলেও একটিও ইংরেজি বা অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহার করবেন না। তাঁকে দেওয়া হয়েছিল এই কাজের দায়িত্ব। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি তাঁর সঙ্গে এই কাজে যুক্ত হতে চাই কি না। যুক্ত হয়েছিলাম। আমাদের প্রথম কাজ ছিল পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত ব্লক অফিসে কত বাংলা টাইপ রাইটার লাগতে পারে এই কাজের জন্য, তা হিসেব করা। কম্পিউটার আসেনি তখন। তারপর পরিভাষা তৈরি। বাংলাদেশে পরিভাষা তৈরি আছে, তার সাহায্য আমরা নিতে পারি। কত মিটিং করেছি আমরা। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরেও গিয়েছি। তারাপদ রায় তখন ডিরেকটর অফ কালচার। তিনিও পরামর্শ দিতেন। কাজ অনেকটা এগিয়েছিল। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এই কাজে আমাকে যুক্ত করে রাইটার্স বিল্ডিং থেকে আদেশনামা বের করতে উদ্যোগী হলেন। এক সকালে অফিসে গিয়ে শুনি এডিএম (এলআর) আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে এডিএম (জেলা পরিষদ) করে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কাজ বন্ধ হল। বিমর্ষ তিনি বললেন ফাইলগুলি ফেরত দিতে। লাল ফিতে দিয়ে বেঁধে তা বুঝি মহাফেজখানায় রেখে দেওয়া হল। সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের সরকারি উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেল তখন। কেন হল জানি না। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কী লিখছি আমি তা নিয়ে অনেক কথা হত। তখন ধ্রুবপুত্র লেখার পরিকল্পনা করছি কিংবা লিখতে শুরু করেছি শুনে ভারতীয় মিথোলজির উপরে দুটি বই নিজের সংগ্রহ থেকে আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। আমরা ২১ পালন করি। কিন্তু তা নিয়মরক্ষা মাত্র। পশিমবঙ্গের কোনো সরকারই এ নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না। বামফ্রন্ট ও না। কিন্তু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য করতে চেয়েছিলেন। তাঁকে নমস্কার। আবার এও সত্য, শিলচরের ১৯ মে সম্পর্কে পার্টির খুব বড়ো নেতার বিরূপ মন্তব্য আমি শুনেছি ২১-এর অনুষ্ঠানে। এ জীবনের বিস্ময় যাবে না। পার্টি রাজনীতি অন্ধ করে দেয় প্রবীণ ত্যাগী মানুষকেও।
ধন্য হই পড়ে
খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। প্রত্যেকটিতেই মনে রেখে দেবার মতো কিছু পাই। এবারে - সন্তানশোক মায়েদের পরজন্মেও থেকে যায়। অমোঘ।
নির্মলবাবু আপনার কথা লিখেছিলেন খবরের কাগজে, আপনিও লিখলেন ওঁর কথা সেই খবরের কাগজেই। চমৎকার লাগলো জেনে। সময় সম্ভবত এভাবেই যোগসূত্র টেনে দেয়।
অলোক গোস্বামী- মহাশ্বেতাদি যুগান্তরে লিখেছিলেন। নির্মল ঘোষ নন।
অলোক গোস্বামী- মহাশ্বেতাদি যুগান্তরে লিখেছিলেন। নির্মল ঘোষ নন।
খুবই সুন্দর লেখা, অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শেষ করলাম।ধন্যবাদ অমর মিত্র দাদাকে
একুশের প্রায় অজানা অধ্যায় মনে করিয়ে দেওয়ায় লেকককে সবিশেষ সাধুবাদ। এই ধারাবাহিকটির জন্য মনে মনে অপেক্ষা করি।
প্রতিটি পর্বই জীবনের এক একটি অধ্যায়কে নিপুন ভাবে তুলে ধরেছে |
ওই রেল লাইনের পাশের মাঠটার মতই কি উদার, বিস্তৃৃৃত, লেখকের জীবন ৷ যাপন ৷
প্রণাম করে যাই !
অমর বাবু, খুব মূল্যবান সময়ের দলিল আপনার হাতে নথিভূক হচ্ছে নিজ ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা বুঝি। মাননীয় বুদ্ধ বাবু সম্বন্ধে একান্তে একদিকে প্রশাসনের উচ্চতম পদের আমলার মুখে, অন্যদিকে কাচের মানুষ প্রবীণ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী দেবাশিস ভট্টাচার্য দার মুখে তাঁর উদারতা ও মানুষ হিসাবে তাঁর পরিচয় নানা ঘটনার বিবরণে জানবার সুযোগ পেয়েছি। আপনার সঙ্গে একটি মিল হলো কর্ম জীবনে সরকারী আধিকারিক হিসাবে যোগ দেবার ৭ বছরের মাথায় আমার বিয়ে হয় যাঁর সঙ্গে তিনিও উজ্জয়িনী র দেশে ভোপালের বাসিন্দা জন্মসূত্রে। কারণ আমার শ্বশুর মশাইয়ের কর্মজীবনের গোড়ার অল্প কয়েক বছর বাদে অবসর জীবন সহ পুরোটাই মধুপ্রদেশের ঐ রাজধানী শহরে।