এইবারে একটু ‘ঐতিহ্য’ নিয়ে ক্যালোর-ব্যালোর করি।
খাবারের বা রান্নার ইতিহাস। এই প্রচেষ্টাটি খুবই প্রফুল্লকর।
ভাবুন তো একবার, কোনো প্রাচীন গুহায় এক আদিমানুষ খোদাই করে গেছেন ম্যামথের রন্ধনপ্রণালী (আরে, যদি আগুন জ্বলে তো একটু ইদিক-উদিক ঝলসে নেও, ব্যস। আর তাও না থাকলে কাঁচাই স্রেফ কামড়ে কামড়ে খেয়ে নিন)।
সে তো পণ্ডিতেরা বলেন প্রথম রেসিপিবই, মানে এখনও যার হদিশ পাওয়া যায়, সেটি চতুর্থ শতাব্দীর। এক রোমান সাহেব, নাম মার্কাস গাভিয়াস এপিসিয়াস, যিনি নাকি সাধারণাব্দ (Common Era) প্রথম শতকের রোম সাম্রাজ্যের এক মহা ভোজনরসিক ছিলেন, তার নামেই নামাঙ্কিত এই রেসিপিবই, যা আসলে চতুর্থ শতকের আগে লেখা হয়নি, তাতে রয়েছে প্রায় পাঁচশো রেসিপি।
তা ধরুন, তারও সাতশো বছর আগেই কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে বেশ কয়েকটি মদের কিছু কিছু উপাদানের কথা লিখে গেছেন, সেই অর্থে ঠিক রেসিপি নয়। কিন্তু রান্নাবান্নাও যে একটা চর্চার বিষয়, সেটা তখনই টের পাওয়া যাচ্ছিল। তারও আগে, মেসোপটেমিয়ায় যেসব ক্লে ট্যাবলেট পাওয়া গেছে—মানে প্রায় ১৭০০ পূর্ব সাধারণাব্দ (Before Common Era) কালে—তাতেও নাকি কতকগুলো মাংসের ঝোলের বিবরণী রয়েছে।
না, আমি আর ইতিহাস ঘাঁটব না। জাম্পকাট করে চলে আসুন এখনকার দিনে।
গত দেড় বা দুই দশকে, খাওয়াদাওয়ার চর্চা খুবই জনপ্রিয়, বই, ম্যাগাজিন, টিভি চ্যানেল, ইউটিউব... বাপরে বাপ, রান্নাবান্না কোথায় নেই? ক্রিকেট খেলুড়ে আর ফিলিমস্টারের সাথে পাল্লা দেয় দেশি বিদেশি রাঁধুনিরা। খাওয়াদাওয়ার এমনি দাপট জাস্ট দুই দশক আগেও ভাবা যেত না। আর সেই সাথে দেশবিদেশের নানান জিনিসও সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। সারা দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়। মানে মলের শেলফে। জাঁক করে কাউকে টেরিয়াকি সসের কথা সবিস্তারে বলতে গেলে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি নাক কুচকোঁন, ‘ও বাবা, কিকোমান কোম্পানির ছাড়া অন্য টেরিয়াকি আমি ছুঁইনে।’ ব্যস, আপনার প্রেস্টিজে গ্যামাক্সিন।
আর দেশের মধ্যেও যেসব সবজি শুধু এক-আধ মাস পাওয়া যেত এখন পাওয়া যাচ্ছে বছরভর। অন্তত অনেক দিন।
জাস্ট দুটো উদাহরণ দিই।
এক ধরুন মাশরুম। খুব পিছোতে হবে না, কুল্লে এই বছর কুড়ি আগেও খুব কমই পাওয়া যেত। শহরের বাজারে কখনও চোখে পড়েনি। রাঢ় অঞ্চলে দিশি মাশরুম যা কিনা ছাতু নামে বিক্রি হত, সেগুলি ছিল ‘কুড়িয়ে’ আনা। তবে সেসবই ছিল নিতান্ত সিজনাল। বাংলা রান্নার কোনো বইতে—একটু পুরোনো মানে ধরুন এই তিরিশ চল্লিশ বছর আগেও—কখনও কি মাশরুমের কোনো রান্না দেখেছেন? ছাতুর কারুকারি বা অন্য কোনো পদ? অ্যাকচুয়ালি মাশরুমের কোনো শুদ্ধ বাংলাও আছে (ব্যাঙের ছাতা বলবেন না প্লিজ)? বনবাদাড়ে হত। দেশের মধ্যে চাষ বিশেষ হত না। আর এখন তো দেখুন, সর্বত্রই অঢেল পাওয়া যায়। যাকে বলে, ব্যাঙের ছাতার মতন চারিদিকে গজিয়ে উঠেছে মাশরুম (হাহাহাহা)। দেশি হেঁসেলেও ঢুকে গেছে দুদ্দাড় করে।
আর-একটা উদাহরণ দিই। আচ্ছা আপনারা আলু-পটোল খেয়েছেন তো অব্শ্যই, আলু-কপিও। কিন্তু পটোল-ফুলকপির যুগলবন্দি? খেয়েছেন? শুনেওছেন?
না থাকবার একটা কারণ—একদা দুটোই ছিল মরসুমি সবজি। আমার ছোটোবেলায়—মানে ৫০+ বছর আগে—ফুলকপি বাজারে ‘উঠতো’ শুধু শীতকালে। মাস খানেক কি মাস দেড়েক। সারা বছর আর দেখা পাওয়া যেত না। পটোলেরও মরসুম ছিল, বেসিক্যালি বর্ষাকালে। ফলে এই দুই সবজির মুখ দেখাদেখি হত না কখনোই।
আর এখন প্রায় সম্বচ্ছর ফুলকপি পাবেন, পটোলও, সারা বছর না হলেও মিলবে প্রায় মাস ছয়-সাত ধরে নাগাড়ে। তাই অদূর ভবিষ্যতেই উদ্যোগী এবং নির্ভীক কেউ হয়তো পটোল ফুলকপি মিলিয়ে একটা নতুন ডিশ হাজির করতে পারবেন (কে আছো জোয়ান?)। দুই দশক আগেও এটা একেবারে অসম্ভব ছিল।
বাংলা রন্ধনপ্রণালীর সব থেকে পুরোনো বই ‘পাকরাজেশ্বর’-এ (১৮৩১) মাংসের পদের কমতি নেই, কিন্তু সেগুলিতে পেঁয়াজ আর রসুন প্রায় নেইই। এর প্রায় সাতাশ বছর পরের এক রেসিপিবই, ‘পাকপ্রবন্ধ’-তে কিন্তু অল্পবিস্তর পেঁয়াজ আর রসুনের কথা আছে। এমনকি এরপরের (১৮৮৫-১৯০২) ছয় ভল্যুমে লেখা ‘পাকপ্রণালী’-তেও কালিয়া কোপ্তা এইসব দিশি রান্নাতেও রসুন নেই, আর পেঁয়াজবাটা আছে একসের মাংসে আধপোয়া মানে মাংসের পরিমাণের আটভাগের একভাগ। বোঝা যায় তখনও হেঁশেলে ‘ধীরে, পেঁয়াজ ধীরে’ রীতিই চলত। অথচ তার আগেই কিন্তু তামাম হিন্দুস্তানে পেঁয়াজ রসুনের হুলিয়ে ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে—সেও অনেকদিন, কিন্তু বাংলাদেশে জাঁকিয়ে বসতে বোধহয় সময় নিয়েছে। পেঁয়াজ, রসুন নিয়ে একটা হিন্দু-মুসলিম বিভাজন ছিলই। কাশ্মীরেও। একই আমিষ রান্নায় হিন্দুরা পেঁয়াজ রসুন ব্যবহার করতেন না, এখনও নয়। তো সে আমাদের কালীপূজার পাঁঠার মহাপ্রসাদও হয় ‘নিরামিষ’। বিনা পেঁয়াজে মাংস। আশ্চর্য তো বটেই, মাছ, ডিম, মাংস টপাটপ হিন্দু হেঁশেলে ঢুকলেও কেস খেয়ে গেল পেঁয়াজ, রসুন!!
মুরগিও ছিল ‘মুসলমানি’ খাদ্য—হিন্দুবাড়িতে ঢুকতে অনেক সময় লেগেছে। তা সে যদি বলেন অনেক আচারী হিন্দু (বিধবারাই বেশি) টম্যাটো খেতেন না, গাজরও না। ওগুলো নাকি ‘বিলিতি’ আনাজ। বিশ্বজিৎ পাণ্ডার একটি লেখা নেটে পড়ে অবাক হয়েছিলাম—অভিজাত মুসলমানেরা বিরিয়ানি খেতেন না। তাঁদের জন্য তৈরি হত বাদশাহি পোলাউ। কি না বিরিয়ানি বড্ড আমআদমির খাবার—প্রায় স্ট্রিট ফুড।
তারপর ধরুন আলু। লোকে বাঙালিকে মেছো বলে কিন্তু বাঙালিকে আলুয়া বা আলুভোলা বললেও ভুল হয় না। ঝালে, ঝোলে, অম্বলে আলু ছাড়া টেঁকা মুশকিল। প্রচলিত ধারণা ও মিথকথা আছে অমন যে, অভিজাত লখনউইয়ি বিরিয়ানি, সেও মেটেবুরুজে এসে নব্য অবতারে বেশ একটা হৃষ্টপুষ্ট আলুও জুড়ে দিল। তা হোক না মিথকথা, ‘আমরা বাঙালিরাই বিরিয়ানিতে এনেছি গোল আলু, দিয়েছি নতুন প্রাণ’, এটা ভাবতেও বেশ রোমাঞ্চ হয়। গোখেলের না বলা বাণীর মতন, এই বিরিয়ানির আলুআয়ন এটা না হয় প্রিয় রূপকথা হয়েই থাকুক। মঙ্গলকাব্য ইত্যাদিতে বাঙালি রান্নাতে আলুর উল্লেখ আছে। কিন্তু সে আলু এ আলু নয়। সে বোধহয় কচু। আমাদের ছোটোবেলাতেও কচুকে ‘মেটে আলু’ বলা হত।
বেশিদিন আগের কথা নয়, আঠেরো শতাব্দীর শেষের দিকেই ভারতে আলু আসত (বোধ হয়) ইউরোপ হয়ে। কাঠের জাহাজে করে বোম্বাই ঘুরে সেই আলু আসত কলকেতায়। নাম ছিল ‘বোম্বাইয়া আলু’। কিন্তু তার এমনই দাপট যে আলু নামটাই জবরদখল করে নিল আর কচু রয়ে গেল কচুতেই। আলুও কিন্তু প্রথমে মুসলমানি খাবার ছিল, হিন্দু হেঁশেলে ঢুকতে তার কিছুটা সময় লেগেছে।
আচ্ছা, আর-একটা গল্প বলেই ফেলি।
রাজনারায়ণ বসুর লেখা— ‘সেকাল আর একাল’ (১৮৭৪)। বুঝলেন, তখন বিস্কুটও ছিল মুসলমানি খাবার। ডিরোজিওর হিন্দু শিষ্যরা তখন প্রথা ভাঙতে একবার খুব সাহস করে মুসলমানের দোকান থেকে বিস্কুট কিনে সর্বসমক্ষে খেয়েছিল, সমবেত হিপ হিপ হুররে ধ্বনির মধ্য দিয়ে।
আসলে লিখতে শুরু করেছিলাম যে রান্নাবান্নার যে প্রবাহ সেটায় ইনগ্রেডিয়েন্টের প্রভাব। আমরা যেটাকে আজকে ঐতিহ্য ভাবছি সেটা গতদিন ছিল প্রথাভঙ্গ। ঐতিহ্য বলে এই চলমান শিল্পে কোনো কিছুকে থমকে দেওয়া যায় না।
এই যেমন ‘কচি পাঁটার ঝোল’। এটা ছিল ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট’। পুরুষ ছাগল। একটু বয়স হলেই হরমোনের জন্য একটা বিশ্রী বোঁটকা গন্ধ হয়। তাই কচি অবস্থাতেই পেটে চালান করে দিতে হয়। নিতান্ত হাবলা দুবলা চেহারা, গায়ে গত্তি নেই। কসাই মাংস কেটে শালপাতায় মুড়ে দিত। সাবধান করে দিত, চিলের ছোঁ-র থেকে। তো সেই চিলেরাও নেই, কচিপাঁঠাও এখন রীতিমতন দুষ্প্রাপ্য। লোকে রেওয়াজি খাসি অর্থাৎ খোজা করা বিহারি পাঁঠা খায়। ওজনও বেশি, মাংসও নরম, গন্ধও নেই। ভালো বিকল্প পাওয়া গেছে। লোকে আর চায় না, তাই ঐতিহ্যশালী ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটও বাজার থেকে বিলুপ্ত প্রায়।
আহা এমন তো নয় যে এদের স্বাভাবিক বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, থাবা বসাচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা চিন থেকে সস্তা দামের পাঁটা বাঙালি পাঁঠার বাজার দখল করে নিচ্ছে। জাস্ট ডিমান্ড আর সাপ্লাই। লোকে আর চাইছে না তাই বিরল হয়ে যাচ্ছে। এক বন্ধুর বাড়িতে খেলাম বছর দুয়েক আগে। বন্ধুর ট্যাঁকের জোর সুপ্রচুর, তাই ব্যাংগালোরে বসেই কলকাতার থেকে অনেক কসরৎ করে উড়িয়ে এনেছেন কুলীনকুলসর্বস্ব ওই কচি পাঁঠা। একেবারে হাড়সর্বস্ব। ওই কচিপাঁঠা খেতে হলে খাদককেও কচি হতে হবে। দামাল দাঁত চাই, কত হর্সপাওয়ারের কে জানে? বনেদিয়ানা, নস্টালজিয়ায় ও বয়সে আপ্লুত আমি, কিছুক্ষণ লড়াই করেই ক্ষান্ত দিলাম। বললেহ বে? খর্চা আছে।
হ্যাঁ, ঐতিহ্য হতে পারে কিন্তু পাবলিকে আর চায় না। তাকে কোন্ ইতিহাসের দোহাই দিয়ে ওই কটকটে ঐতিহ্য খাওয়াবেন?
তবে এর ফলে হারিয়ে যাওয়া পদ বা খাবার আবার করে নতুন জীবন পাচ্ছে। এই যেমন, উত্তরবঙ্গের খরস্রোতা নদীর বোরোলি মাছ। প্রায় বিলুপ্তির পথেই ছিল। কিন্তু এখন দক্ষিণবঙ্গেও পুকুরে চাষ হচ্ছে বোরোলি মাছের। যন্ত্রের সাহায্যে আর্টিফিসিয়াল ‘স্রোত’ বানানো হচ্ছে সেই পুকুরে আর শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেইসব মাছেরা তাহারা এখন সুখে জলক্রীড়া করছে। শিগগিরই বাজারেও এসে যাবে। কাকুলিয়ায় বসে খাবেন কুচবিহারের মাছ।
ষাট দশকের মাঝামাঝি ভারতে খাদ্যসংকট চরমে উঠেছিল, প্রায় এক মন্বন্তরের মুখোমুখি অবস্থা। ওদিকে কোশাগারও ঠনঠনে। বিদেশি মুদ্রা প্রায় নেই। এমত অবস্থায় আমেরিকান পিএল ৪৮০-র অনুদানের গমই ভরসা।
বাঙালির থালায় ভাত নেই। রেশনে যা চাল মিলত, তা খুবই কম। এবং প্রায়শই একেবারে দুর্গন্ধী, পচা। বাধ্য হয়ে বাঙালিকে রুটি, অন্তত একবেলা, খেতে হল। বাধ্য হয়ে, উপায় নেই। সেসময়ে প্রচুর গান ও পদ্যও বেরিয়েছিল। পেটরোগা বাঙালি কী আর রুটি হজম করতে পারবে? সেইসব নিয়ে প্যারোডি। বহু লোকেই ওই রুটি খাওয়াকে এক অত্যাচার বলেই মনে করতেন। চোখের জলে ভেসে যেত অপটু হাতের ত্যাড়া-ব্যাঁকা আধা সেঁকা রুটি। কিন্তু উপায় কী?
আস্তে আস্তে আর চালের সংকট অত রইল না। কন্ট্রোলের বাজার ছিল তখনও, কিন্তু একটু বেশি পয়সা খরচা করলে দুবেলাই ভাত খাওয়া যেত।
কিন্তু কিমাশ্চর্যম। ততদিনে রাতের বেলায় রুটি অভ্যাস হয়ে গেছে বাঙালি জীবনে। রীতিমতন গোল, ফুলকো ও নরম হাতরুটি। নরম হাতে গরম রুটি, কে কার অলংকার? খান, ভালোবেসে খান।
একপ্রজন্মও লাগল না, এক দশকের মধ্যেই বাঙালির মেনুতে একেবারে বিপ্লব ঘটে গেল।
হয়তো এক প্রজন্ম পরেই কিছু লোক রোমে বসে পিৎজা খেতে খেতে বলবেন, টালিগঞ্জে আমার পিসির হাতের পিৎজা যদি খেতেন... আহা, আলুপোস্তোর উপর পার্মেসিয়ান চিজ দিয়ে... ওহ, একেবারে অমৃত!
সমঝদার আর-একজন বলবেন, ‘আমার মা পিৎজা বানাতেন মাছের ডিমের বড়া দিয়ে। খেয়েছেন? ফাটাফাটি হয়।’
সবই হতে পারে। পিওরিস্টদের ভাবাবেগে আঘাত লাগবে, তো কী আর করা?
আচ্ছা, কোনো রান্নার রেসিপি তো চাই? নাকি?
এইবারে খান পটোলের রসা। পটোল পাচ্ছেন না? বা যেদেশে থাকেন সেখানে এই বস্তুটি মেলে না। তো ঠিক আছে। এই রেসিপিটা সেভ করে রাখুন, যেদিন আপনি আর পটোল আবার মুখোমুখি হবেন সেদিনই আনন্দ অশ্রুজলে এক মধুর সমাপ্তি ঘটবে।
রসা মানে গোদা বাংলায় কারির মতন উদুম ঝোল নয়, একটু মাখামাখা। আর শুনুন, রান্নাটা সরষের তেলেই করবেন। আপনার দেশে সরষের তেল পাওয়া যায় না তো আমি কী করব?
সমাজ কো বদল ডালো।
১. হলুদ আর নুন দিয়ে আলু আর পটোল ভেজে নিন। মন দিয়ে ভাজুন। সরিয়ে নিন।
২. এইবারে ওই তেলে বা নতুন তেলে ফোড়োন দিন লাল লংকা + গোটা জিরা
৩. বাটা পেঁয়াজ দিন। নুন। (ঘটি হলে চিনিও দেবেন)।
৪. ধনেগুঁড়ো, কাশ্মিরী লঙ্কা, রসুন, আদা—দিন। টম্যাটোর পিউরি দিন। মেশান।
৫. এইবারে ওই ভেজে রাখা আলু আর পটোল দিন।
৬. অল্প জল দিন। এইবারে কড়াইতে ঢাকা দিন। শুনুন, ওই ননস্টিক কড়াইতে সেই ডোমের মতন ঢাকনা তো? সেটা হলেই জমবে।
ব্যস। কিছু পরে চেখে-টেখে দেখুন সিদ্ধ হল কি না, গরম মশলা দিয়ে নেড়েচেড়ে—গিলুন।
" কুলীনকুলসর্বস্ব ওই কচি পাঁঠা। একেবারে হাড়সর্বস্ব। ওই কচিপাঁঠা খেতে হলে খাদককেও কচি হতে হবে। দামাল দাঁত চাই, কত হর্সপাওয়ারের কে জানে? "
:-))))
ডিডি যদি এদিকে পদধূলি দেন, তবে পাঁটা খাওয়াতে পারি। এখন ৭০০ টাকা কেজি। খাসি নয়, ওটাই ডিফল্ট। হাড়সর্বস্ব নয়, নরম তুলতুলে মাংস।
সেরা সেরা ।
শিবরামি হাসি আর সুকুমারী পদ্য
দিয়ে মেখে প্রণালীটা চেখে নিন সদ্য
তিন সের ঠাট্টায় জানকারি একশো
শেয়ার করলে তাতে লাগবে না ট্যাকসো !
এতো হেবি লেখা। শুরুর পালাগানটা দূর্দান্ত
ডিডি জিন্দাবাদ ...
অনবদ্য।
প্রথমটা ট্রায়াল বল ছিল। এবার জমেছে।
সত্যি তো! কোনো গুহাচিত্রে রান্নাবান্নার কিছু ছবি পাওয়া অসম্ভব নয়! শিকারের অনেক ছবি পাওয়া যায় যখন। শিকার করা পশুদের কীভাবে খাওয়া হত, সেইসব ছবিও থাকার সম্ভাবনা আছেই। ঃ)
এই পোস্ট থেকে জানলাম ডিডি আর আমার বয়স কাছাকাছি। আমি ওনার থেকে এট্টুস আগে দুনিয়া দেখতে শুরু করি। নিজের সময়ের লোক পেয়ে মনটা খুশী খুশী হয়ে ওঠে। তারপর ডিডি এনে ফেলললেন বোরোলি মাছ, কুচবিহার! ও হো, হো, কে কোথায় আছো গো, আমায় একটু ধরে থাকো, খুশীতে এবার হাত-পা-ছিটকে উল্টে পড়বো। ছুট্টে গিয়ে প্রথম পর্ব পড়ে এলাম।
ডিডি, প্রথম পর্বের ঐ ফুলকপির হাইকুটা লঙ্কা বাদ দিয়ে আমার গিন্নী নিয়মিতই করে থাকেন। ঝাল-নিয়ে ঝামেলা আছে, তাই আমাদের বাড়িতে পদগুলি লঙ্কাদহন বিবর্জিত। আমি যদিও লঙ্কার ম্যাসোকিস্টিক মহিমায় শিহরিত হই, ঝাল ছাড়াও ঐ হাইকু জিভে জল এনে ফেলে।
এবার পরের পর্বের জন্য পাত পেড়ে বসে রইলাম।
ডিডিদার কলম আর সুস্বাদু পদাবলী - দুটোই মাস্টারপিস। এক্কেরে সচিন -শেহবাগ এর মাস্টার ব্লাস্টার ওপেনিং জোড়ি যাকে বলে.
বহু বছর পর এদিকে এসে গুরুদেবের লেখাটিই পেথ্থম পল্ল্ুম। পেন্নাম নেবেন ডিডিদা। অধমকে আপনি স্যার টিকেন/তেকেনা নামে ডাকতেন
ওহ। স্যার তেকোনা।কী সৌভাগ্য।
আসুন বসুন লিখুন
হরিণঘাটার দোকান, থুড়ি, আউটলেটে নাকি ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট পাওয়া যায়। যাই হোক, আলু নিয়ে আলুচনায় মনে পড়ল সুনীল গাঙ্গুলির লেখায় পড়েছিলাম, যে কোনও কারণেই হোক, পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময়ে আলুর দাম বাড়েনি। ফলে ঢালাও আলু রান্না হত, মানে সিদ্ধ করা হত। যে যার সময় মত নুন সহযোগে ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ওই দিয়েই সেরে নিতেন, স্কুলে টিফিন খাওয়াও হত। আর যেগুলো ভাল সিদ্ধ হত না, সেগুলো দিয়ে ছেলেরা ছোঁড়াছুড়ি করে খেলত। আর হ্যাঁ, বীরভূম জেলায় এই সেদিনও (মানে বছর পঞ্চাশ আগে আর কি) টমেটোকে বিলিতি বেগুন বলা হত।
এখানে আলু সম্পর্কে একটি কথা বলা যেতে পারে। আলু ফার্সি সব্দ যার সাধারণ অর্থ ফল, বিশেষার্থে plum জাতীয় ফল। যথা আলু + বুখারা == আলুবুখারা ==বুখারার ফল, বিশেষার্থে বুখারার plum | উর্দু এবং হিন্দিতে মাটির নীচে উৎপন্ন হয় এমন নানা কন্দাদিকে আলু বলা হয়, যেমন रतालू (yam বা cassava), कचालू (মুখী কচু ) ইত্যাদি। অতএব মঙ্গলকাব্যের আলু বোধকরি মুখী কচু অথবা আপনার বর্ণিত মেটে আলু, যা দিয়ে অপু, দুগ্গাদিদি ও বিনি চড়ুইভাতি করে।
Mushroom কে উর্দু ও হিন্দিতে کهمبی / खुम्बी বলা হয়। বাংলায় প্রতিশব্দ নেই ভেবে একটু অবাকই লাগছে।
ছি ছি ! শেষে কিনা পটল!! ছ্যা ছ্যা!