১৩ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টেয় কলকাতা প্রেস ক্লাব লনে গ্রন্থপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ফেসবুক : মুখ ও মুখোশ বইটি জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশ করল। লেখক অর্ক দেব, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা এবং সিরিল স্যাম। স্বাধীন সাংবাদিকতা জগতের দুই নক্ষত্র পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা এবং সিরিল স্যামের ইংরেজি বই 'দ্য রিয়েল ফেস অব ফেসবুক'-এর সঙ্গে আরো নতুন দশটি অধ্যায় জুড়ে এই বইটি, যার আনুষ্ঠানিক প্রকাশে মুখ্য অতিথি হিসেবে এসেছিলেন জহর সরকার। অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত, অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ও সমাজবিজ্ঞানী কুমার রাণা। সভায় উপস্থিত ছিলেন পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা ও অর্ক দেব।
জহর সরকার শুরুতেই ট্রাম্প অনুপ্রাণিত ক্যাপিটল- কাণ্ড ও তাতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দেন। মিথ্যা প্রচারের হাতিয়ার হয়ে ওঠার প্রসঙ্গে ধুলাগড়, তেলেনিপাড়ার দাঙ্গার কথাও আসে। টুইটারে সরকারি নজরদারি, নিয়ন্ত্রিত ট্রোল, মগজধোলাই সমস্ত বিষয়গুলিকে আলোচনায় এনে তাঁর হুঁশিয়ারি, রাষ্ট্রযন্ত্রের এই খেলা থেকে প্রত্যেকে যেন সাবধান থাকেন।
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, সামাজিক মাধ্যম ব্যক্তিস্বাধীনতার চূড়ান্ত রূপ, নাকি বৃহত্তর একটি ছলনাজাল, যেখানে আন্তরিক গোষ্ঠীবদ্ধতার পরিবর্তে মেলে কেবল একাকীত্ব। সত্যিই কি বিশুদ্ধ টেকনোলোজি বলে কিছু হয়?
সুদীপ্ত সেনগুপ্তের মতে ফেসবুক একটি নৈতিকতা-নিরপেক্ষ "টুল"বা হাতিয়ারবিশেষ। অর্থ চিন্তাই এখানে চমৎকার যা প্রত্যেক ব্যবহারকারীকেই শেষকালে পণ্যে রূপান্তরিত করে। বহুত্ববাদী ভারতে সুস্থ চিন্তাতর্কের খাতিরে একে ব্যবহার করতে হবে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে।
কুমার রাণা জোর দেন ভাষাসাম্যের ওপর। সমাজমাধ্যমে হামেশা যে তীব্র আক্রমণাত্মক এবং সহিংস ভাষাদূষণ চোখে পড়ে, তার মূল অনেক গভীরে প্রোথিত। সত্তার আমরা-ওরা বিভাজন কাটাতে হলে ভাষাসংস্কারকে শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ করে তুলতে হবে, তবেই সামাজিক মাধ্যমে বিষাক্ত হিংসার চর্চা কিছুটা হলেও কমতে পারে।
অর্ক দেব সামাজিক মাধ্যম কাভাবে ভুয়ো খবরকে যাথার্থ্য দেয় তা তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দেখান। গুজব এবং ভুয়ো খবর আর তাকে গণমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া, এই নীল নকশাই রয়েছে ইদানিংকালের সমস্ত দাঙ্গার পেছনে।
পরঞ্জয় গুহঠাকুরতার বক্তব্যেও প্রাধান্য পায় এই দাঙ্গা এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা। এই দেশের রাজনৈতিক সামাজিক প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের সচেতন ব্যবহার যে কতটা জরুরি এবং সেই সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সৎ স্বাধীন সাংবাদিকতাকে কতটা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় সে প্রসঙ্গও উঠে আসে।
গুরুচণ্ডা৯-র পক্ষ থেকে বইটি এবং প্রকাশন সংস্থার কাজকর্ম নিয়ে বিশদ বক্তব্য রাখেন কল্লোল ও অয়ন।
অনুষ্ঠান শেষ হয় ধন্যবাদজ্ঞাপনের মাধ্যমে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রতিভা সরকার। প্রশ্নোত্তর পর্বে ছিল দর্শক-শ্রোতাদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মত।
অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা সকলের প্রতি।