জীবনের সব কথা লেখা যায় না। কত মান অপমান, কত আনন্দ বিষাদ… তালিকা করতে গেলে অফুরন্ত হয়ে যাবে। মানুষ নিজের কেরিয়ার গড়ার জন্য অনেক কিছুই করে। আমার জীবনে কেরিয়ার বলে কিছু ছিল না। লেখাই ছিল পাখির চোখ। দুইটি প্রমোশন পেয়েছি ৩৯ বছরের চাকরি জীবনে। ডব্লিউবিসিএস পদোন্নতি ঘটেছিল। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, তখনও বছর চোদ্দো চাকরি বাকি। অনেকেই বলেছিলেন নিয়ে নিতে। নিদেনপক্ষে মহকুমা শাসক তো হওয়া যেত। তখন আমার কাছে লেখা ব্যতীত আর কোনো লক্ষ্য ছিল না। যে কাজ করলে লেখায় ক্ষতি হবে। সময় কম দিতে পারব, সেই কাজ করব না, হোক না ক্ষমতা এবং বেতন বেশি। নিজের ডিপার্টমেন্ট আমাকে সম্মান করত। অন্তত বেশিরভাগ উপরওয়ালারা। সে কথা যাক। একটা কথাও বলতে হয় বড়ো চাকরি করা আমার সাধ্য ছিল না। মেধাবী তো ছিলাম না। রেজাল্ট খারাপ। কেমিস্ট্রির ময়লার, ফিনার-এর বই না পড়ে বিভূতিভূষণ পড়েছি। সুতরাং হবে কী? চেষ্টাচরিত্র করলে কীই বা হত। কম বেতনের চাকরি, আমার পরিবারের সকলে কৃচ্ছসাধন করেছে সমস্ত জীবন। স্ত্রী মিতালি হাসিমুখে সব মেনে নিয়েছে। বুঝেছে যদি সম্মান আসে এতেই আসবে। যার যেটা পথ, সেই পথেই তিনি যান। সে নিজেও ভরতনাট্যম নৃত্য করত। কিছু ভালো প্রোগ্রামও করেছে। কিন্তু বেশিদূর যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমার জন্যই হয়তো। আমি তো সেই সময়টায় গঞ্জে গঞ্জে ঘুরি। সংসার করতেই সব ছাড়ল। তবে ধ্রুবপুত্র লেখার সময় তার কাছে ভরতনাট্যম নৃত্যকলা এবং ভরতের নাট্যশাস্ত্র সম্পর্কে পাঠ নিয়েছি। নৃত্যের বিভিন্ন মুদ্রা জেনেছি তার কাছ থেকে। লিখতে সুবিধে হয়েছিল। সে যাই হোক, সাহিত্য করি, শিল্প করি সফলতা না পেলে আত্মীয়স্বজন থেকে সহকর্মী প্রতিবেশি সকলের উপহাসই শুনতে হয়। আত্মীয়স্বজনের ভিতর কতজন কত উচ্চ চাকুরিয়া, বিশেষত শ্বশুরকুলে। তাঁরা একটু করুণার দৃষ্টিতেই দেখতেন। একজন তো আমার শ্বশুরমশায়কে বলেছিলেন, যে ডিপার্টমেন্টে চাকরি করে দু-হাত ভরে টাকা আনবে, ক-বছরেই বড়ো বাড়ি হাঁকাবে। শুনে আমার শ্বশুরমশায়ের খুব খারাপ লেগেছিল। তিনি তো চাকরি-বাকরির সবটা জেনেই আত্মীয়তা করেছিলেন।
এই যে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য তা সাহিত্যের মানুষের ভিতরেও আছে। জীবনের সফলতা হল আপনার পদমর্যাদা, ক্ষমতা এবং আর্থিক প্রতিপত্তি। আপনি কি পারবেন আপনার অতিথির জন্য সরকারি বাংলো বুক করে রাখতে, আপনি কি পারবেন আপনার অতিথিকে সরকারি গাড়িতে সফর করাতে। না পারলে আপনার ক্ষমতা কী? পূর্ণেন্দু পত্রীর সঙ্গে কলকাতায় দেখা, বললেন, তুই কোথায় থাকিস রে? বললাম জেলার নাম। তিনি বললেন অমুকে তো ডিএম। ডিএম মানে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট নন, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু আমি তা খোলসা করলাম না। পূর্ণেন্দুদা বললেন, আগে জানলে তোকে খবর দিতাম। বললাম না সেই ডেপুটি লেখক ভালো করেই জানেন আমি কোথায় আছি। তিনিই না বললে পূর্ণেন্দুদা জানবেন কী ভাবে। শহর থেকে ঘণ্টাখানেকের দূরত্বেই থাকি। আসলে পদমর্যাদা একটা বড়ো ব্যাপার। কিন্তু এমনটি আমার অন্য সহযাত্রী বন্ধুদের ভিতর দেখিনি। কেউ কেউ এমন, অধিকাংশ ভালো। অনিতা অগ্নিহোত্রীর মতো ভালো বন্ধু পেয়েছি। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সজ্জন সাহিত্য অনুরাগীকে পেয়েছি। ধ্রুবপুত্র লেখার সময় আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌতূহল, সাহায্যের কথা তো আগেই বলেছি।
সাহিত্য অকাদেমি পেয়েছি শুনে হাওড়ার জেলাশাসক জাঁদরেল আইএএস ভদ্রলোক বিদ্রুপের সুরে বলেছিলেন, তাহলে আর কী, ওঁর সিট আমার পাশে হবে। কী ভয়ানক ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালের জুলাই অবধি আমাকে নানাভাবে বিব্রত করতেন। রবিবারে মিটিং ডাকতেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর মিটিং ডাকতেন। আমাকে বিদ্রুপ করতেন ক্রমাগত। আমি নিজে উঠে প্রতিবাদ করেছি। হা হা হা, আপনি তো লেখক আছেন না। কিন্তু হাওড়ারই এডিএম মহিলা অর্চনা মীনা অকাদেমির খবর শুনে একশো টাকার রসগোল্লা আনিয়ে আমাকে বলেছিলেন, সব আপনাকে খেতে হবে। বড়ো ভালো লেগেছিল তাঁর প্রতিক্রিয়া। তিনি এরপর আমার অফিসে এসে বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। মহাশ্বেতা দেবী, আশাপূর্ণা দেবী নিয়ে কথার শেষ ছিল না। অমৃতা প্রীতম, কৃষ্ণা সোবতী নিয়ে আলাপ করতেন। তাঁর একটা জানালা আমার সামনে এসে খুলে যেত। আগে বুঝিনি ছ-ফুট লম্বা সেই খামখেয়ালি তরুণী সাহিত্য শিল্পে কত মুগ্ধ। ধ্রুবপুত্র কিনে রেখেছিলেন। বাংলা অত পড়তে পারেন না, কিন্তু স্মৃতি হিসেবে রাখবেন। অথচ সদ্য আসা জেলাশাসক মানুষটির ভয়ংকর ঈর্ষার মুখোমুখি অনেকদিন হয়েছিলাম। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বদলি হয়ে আসি ২০০৭-এর জুলাইয়ে। তিনি ২০০৯-এ এলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক হয়ে। এসে জেলার অফিসারদের সঙ্গে প্রথম মিটিঙে উপস্থিত আমাকে উদ্দেশ্য করে অন্যদের বলেছিলেন, উনাকে চিনেন, বহুত বড়া রাইটার আছে।
খুঁত খুঁজে পেলে তিনি আমার সব্বোনাশ করে দিতেন। তাঁর সেই ক্রোধ আর ঈর্ষা এখনও আমাকে ভাবায়। এইসব মানুষ আমলা হলে মানুষের ভালো হয় না। ‘ডানা নেই উড়ে যায়’ নামে একটি উপন্যাসে সেই হিংস্র লোকটি আছেন। এক-একজন এমন হন। ২০০৭ ফেব্রুয়ারি মাসে অকাদেমি আনতে দিল্লি যাব, সেখানে বাগড়া দিতে চেয়েছিলেন হাওড়ার এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাচনের কাজে ছুটি নেই। নির্বাচনের কাজ মানে নির্বাচকের তালিকা সংশোধনের কাজ। তিনি তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমাকে আটকাতে চেয়েছিলেন। আরে তাঁর চেয়ে নীচু পদে চাকরি করে যে সে সাহিত্য অকাদেমি নিতে দিল্লি যাবে, কী করে হয়? সেই সময়ে (ফেব্রুয়ারি ২০০৭) জেলাশাসক ছিলেন নন্দিনী চক্রবর্তী। তিনি ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন। হ্যাঁ, ভালো মানুষ, রুচিমান মানুষ বেশি দেখেছি এও সত্য। যাকগে। একটা কথা বলি। ২০০৭-এ সাহিত্য অকাদেমি পেলাম ধ্রুবপুত্র উপন্যাসের জন্য। যে তরুণ লেখকরা আমাকে ভালোবাসতেন, যাঁদের সঙ্গে আমি মিশতাম, যাঁরা আমার বাড়িতে আসতেন, তাঁদের কতিপয় আমার সঙ্গে মেশা বন্ধ করে দিলেন কারণ এক ক্ষমতাবান সাহিত্যসেবী এবং সাহিত্য প্রতিষ্ঠানের এক আমলা মানসিক ভাবে আহত হয়েছিলেন ধ্রুবপুত্র উপন্যাসের পুরস্কারে। তিনি অখুশি হবেন বলে আমার সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দিলেন তাঁরা। কারণ তিনি তাঁদের গোয়ায় পাঠাবেন, আসাম নিয়ে যাবেন, ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দেবেন, কত কিছু করে দেবেন। তরুণ লেখক মোবাইলে মেসেজ করত, কিন্তু মুখোমুখি হত না। সেবার বইমেলায় (সল্টলেক স্টেডিয়ামের ধারে হয়েছিল ময়দান থেকে উচ্ছিন্ন বইমেলা) তাঁরা অন্যত্র তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। অমরদা যেখানে, সেখানে নেই। আমরা বন্ধুরা ছিলাম। নলিনী, আমি, জয়ন্ত দে-রা আমার সঙ্গে ছিল। আর সেই তাঁদের আচরণে ব্যথিত হয়েছিলাম। বনগাঁর ভবানী ঘটক ফোন করলে তাঁকে বলেছিলাম অকাদেমি না পেলে এতটা একা হতাম না। পাওয়াই ঠিক হয়নি। কিন্তু আমি তো পাইনি, আমার বই পেয়েছে। সে চুপ করে ছিল। কিন্তু পরে সেই তরুণের কয়েকজন আমার সঙ্গে আবার বন্ধুতা করেছিল। লজ্জিত হয়েছিল তারা। অনেক বছর বাদে গৌহাটিতে এক সাহিত্য অনুষ্ঠানে গিয়েছি অনেকে। আমলার নেতৃত্বে যাওয়া। কেন না তিনি সাহিত্য প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করছেন, তাই। ছ’মাস বাদে অন্য রূপে ফেরতও এসেছিলেন পরিকল্পনা করে। সে কথা আলাদা। কিন্তু আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে রাতে পান ভোজনের সময় আমাকে অপমান করতে লাগলেন। কেউ কোনো কথা বলেননি , চুপ। তিনি যে ক্ষমতাবান। কর্তা। ভগীরথ মিশ্র প্রতিবাদ করেছিলেন। তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। আমি আসর ত্যাগ করে এসেছিলাম। হ্যাঁ, আমার ঘনিষ্ঠ হওয়ার অপরাধে এক শক্তিমান ত্রুণ লেখক একটিবারও ডাক পাননি সেই প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুষ্ঠানে, কলকাতায়, এই রাজ্যে বা রাজ্যের বাইরে।
সেই বছর ২০০৭-এর জানুয়ারির ১৪ তারিখে করুণা প্রকাশনী বাংলা অকাদেমি সভাঘরে এক সভার আয়োজন করেছিল ধ্রুবপুত্র উপন্যাসের অকাদেমি পাওয়া উপলক্ষে। সভায় অশোক মিত্র ছিলেন। ছিলেন অধ্যাপক অলোক রায় ও অধ্যাপক উজ্জ্বলকুমার মজুমদার। হলে ছিল উপচে পড়া ভিড়। দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকে। ফেসবুক, বিজ্ঞাপন কিছুই ছিল না কিন্তু কানে কানে রটে গিয়েছিল। সেই সভায় অশোক মিত্র এক ঘন্টা বলেছিলেন আমার গল্প নিয়ে। অভিভূত হয়েছিলাম। ধ্রুবপুত্রর পুরস্কার প্রাপ্তিতে আমাদের সহযাত্রী লেখকরা সকলে খুব আনন্দ করেছিলেন। স্বপ্নময় টেলিফোনে শঙ্খধ্বনি করেছিল তা চিরকাল মনে থাকবে। দিল্লিতে বঙ্গভবনে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। শচীন দাশ একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তখন সাহিত্য অকাদেমির ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি সেই সময় পিয়ারলেস হাসপাতালে ভরতি ছিলেন। শচীন বলল, সুনীলদার সঙ্গে তোর দেখা করা উচিত। শচীন নিয়ে গেল। সুনীলদার হাঁটু অপারেশন হয়েছিল তখন। আমাকে দেখেই বললেন, তোমার বইটা সম্বন্ধে শুনেছি, এক কপি দেবে? নিয়েই গিয়েছিলাম। শচীন অবাক হয়েছিল, ফিরতে ফিরতে বলেছিল, সুনীলদাকে বই দিসনি আগে? দেওয়া হয়নি। কিন্তু তিনি ছিলেন উদার প্রকৃতির মানুষ। সময়েই চেয়ে নিয়েছিলেন। পরে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, খুব ভালো বইকে দেওয়া হয়েছে পুরস্কার। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে গেলাম বরাক উপত্যকার হাইলাকান্দি শহরে বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে। সেখানে এসেছিলেন খ্যাতনামা অসমীয়া লেখিকা নিরূপমা বরগোহাঞি। তিনি হাইলাকান্দি এসে আমাকে খোঁজ করলেন, দেখি কোন্ লিটিল ম্যাগাজিনের লেখক এবার অকাদেমি পেয়েছে। সদ্য অকাদেমি পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে, তিনি বললেন, সবাই বলছে আপনি লিটিল ম্যাগাজিনের লেখক, খুব ভালো উপন্যাস পুরস্কার পেয়েছে, গুয়াহাটিতে কখনও এসেছেন?
না যাইনি। বললাম, আসামেই প্রথম আসা। প্রথম বিমানে চাপা... হা হা হা।
আপনার বই আমি আনতে দিয়েছি, আপনার উপন্যাস তো অমুক পত্রিকায় বেরোয়নি, সেখানে আপনি লেখেন না?
না লিখি না, চায় না, আর উপন্যাস সেখানে বেরোয়নি, দিলে প্রত্যাখ্যাত হত।
তিনি বললেন, গুয়াহাটির লেখকরা আপনাকে জানে, কয়েকজন খুব খুশি, আপনার গল্প এবং বই পড়েছে।
বয়সে অনেক বড়ো নিরূপমা দিদি তাঁর গলার গামোছা আমাকে পরিয়ে দিয়েছিলেন। আশীর্বাদ করেছিলেন। বলেছিলেন, আপনি থামবেন না, আরও ভালো লিখবেন নিশ্চয়। অনেকদিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। সাহিত্য অকাদেমি পাওয়ার পর ধ্রুবপুত্র অনুবাদের যত প্রস্তাব এসেছিল উত্তর পূর্বাঞ্চলে, কর্তৃপক্ষ তা বাতিল করেছেন কেন জানি না। তবে কর্তৃপক্ষ মানে সেই অখুশি ব্যক্তি, তিনিই বড়ো ক্ষমতায় ছিলেন। যাঁরা প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন, তাঁরাই প্রত্যাখ্যানের কথা জানিয়েছিলেন আমাকে।
একটু পিছিয়ে আসি। আমার সম্পাদনা বৃত্তান্ত না বললেই নয়। ১৯৮১ নাগাদ আমরা একটি পত্রিকা বের করেছিলাম, ভিন্ন গল্প। সেখানে ছিলেন শৈবাল মিত্র, তরুণ রবিশংকর বল, স্বপন সেন, সমর মুখোপাধ্যায় এমনি সব গদ্য লিখিয়েরা। পরামর্শদাতা ছিলেন কয়েকজন অগ্রজ। থার্ড লিটারেচর হল সেই আন্দোলনের নাম। তথাকথিত বামপন্থী লেখালেখি নয়, আবার পপুলার দক্ষিণপন্থী লেখাও নয়। ‘ভিন্ন গল্প’ পত্রিকার সম্পাদক আমি। দুটি সংখ্যা বেরল। ইস্তাহার দেওয়া হল। এক অগ্রজ আমাকে বললেন, হচ্ছে না। আরও তীব্র হতে হবে। সম্পাদকের কলম তীক্ষ্ণ হতে হবে। কী লিখব, না কিছু বিখ্যাত লেখকের নাম করে (বিমল কর, রমাপদ চৌধুরী... এমনি) লিখতে হবে তাঁরা কেন অবসর নেবেন না। লেখা তাঁদের শেষ হয়ে গেছে। আমি অবাক। বন্ধু সমীর বলল, তোর ঘাড়ে বন্দুক রেখে এইসব ব্যক্তিগত ক্রোধের প্রকাশ কুৎসিত। তুই কি তাই মনে করিস, কেউ অবসর নেয়? নতুন প্রজন্ম এসে আগের প্রজন্মকে সরিয়ে দেয় তার নতুন লেখা দিয়ে। তুই লিখতে এসেছিস না রাজনীতি করতে এসেছিস? আমি ভিন্ন গল্প থেকে সরে এলাম। প্রথম সম্পাদনার ইতিবৃত্ত এই। পরে বিমল করের সঙ্গে পরিচয় গাঢ় হয়েছিল তাঁর সম্পাদনায় গল্পপত্র পত্রিকায় লেখার সময়ে। তাঁকে বলতে হা হা হাসি।
আমার দ্বিতীয় সম্পাদনা ১৯৯৭ সালে। ফেব্রুয়ারি নাগাদ বন্ধু (!) সাহিত্যের আমলা বললেন একটি সমালোচনার পত্রিকা বের করলে কেমন হয়। ভালো হয়। তিনি বললেন, প্রতি সংখ্যায় একটি বিশিষ্ট উপন্যাস নিয়ে আলোচনা থাকবে। বাহ দারুণ। সোল্লাসে সমর্থন জানালাম। তারপর যা হয়েছিল তা নিয়ে আমার কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল না। পত্রিকার খরচ চাঁদা দিয়ে মেটানো হল। মানে আমরাই টাকা দিলাম পত্রিকা বের করতে। প্রুফ দেখা, বাঁধাইখানা থেকে পত্রিকার প্যাকেট প্রায় কাঁধে করে আমার বাড়ি এনে রাখা, সব আমি। প্রেসের বকেয়া টাকাও পরে আমি। সম্পাদক তো। এর পরের ছমাসে উপন্যাসটি তিনটি বড় পুরস্কার পায়। থাক। আমার কিন্তু পক্ষপাতিত্ব ছিল সেই উপন্যাসে। পরে পড়ে ভালো লেগেছিল। কিন্তু এখন মনে সেই পদ্ধতি ঠিক ছিল না। এত সবে সেই বন্ধুর পদোন্নতি হলো। কফিহাউসে এক অগ্রজ আমাকে নির্বোধ বলে অভিহিত করলেন। আমি তো নিজের জন্য কিছু করিনি। গ্লানি ছিল না। আনন্দ ছিল। এরপরে পত্রিকার আর একটি সংখ্যা বেরিয়েছিল অন্য লেখকের উপন্যাস নিয়ে। কিন্তু সেই সংখ্যা হালে পানি পেল না। বের করে তেমন প্রতিক্রিয়া পাইনি। ব্যাপারটি আগের মতো জমেনি। এরপর তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম প্রস্তাবকেরও আর সক্রিয়তা ছিল না। তাঁর সব কাজ মিটেছিল। যাই হোক এই সম্পাদনার কথা ভুলব না। আমি অনেকের কাছে উপহাসের পাত্র হয়েছিলাম। আবার কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করতেন, পত্রিকা কেন বেরোল না। যদি করা যেত। নিরীহ সম্পাদক। এর ঘাড়ে বন্দুক রেখে সব কিছু করা যায়।
পরে শুনেছি আমার সম্পর্কে এবং আমাদের এক লেখক বন্ধুর সম্পর্কে সেই উপন্যাসের লেখকের মন্তব্য দুই তরুণ লেখকের কাছে, ‘ওই বাঞ্চোত দুটির সঙ্গে মিশিস কেন?’
প্রতিষ্ঠান বিরোধী অথচ লেখক প্রতিষ্ঠানের আগা থেকে গোড়া, সব সুবিধেই নিয়েছেন এমন লেখক দেখেছি তো। পুরস্কার থেকে বিদেশ ভ্রমণ। সুবিমল মিশ্র ব্যতীত বাংলা সাহিত্যে সত্যিকারের প্রতিষ্ঠান বিরোধী কোনো লেখক নেই। ছিলেনও না। এই দেশে প্রতিষ্ঠান যে কী তা আমার বোধগম্য হয় না। আমার বড় প্রতিষ্ঠান আমার প্রকাশকরা। তাঁরা পাণ্ডুলিপি থেকে বই না ছাপলে কী করে বড় উপন্যাস লিখতাম। সাহিত্য শিল্পে সিরিয়াস মননশীল লেখার চেয়ে চুটকির দাম বেশি। সহজ পাচ্য। মজা আসে। তার ভিতর থেকে নানা সাহিত্য তত্ব বেরও করা যায়। আমি নিজে রুশ উপন্যাসের অনুরাগী। রুশ উপন্যাসই আমাকে উপন্যাস লিখতে শিখিয়েছে সত্য।
অশ্বচরিত প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। ধ্রুবপুত্র ২০০২ সালে। ১৯৯৮ সালে স্বদেশযাত্রা গল্পের জন্য দিল্লির কথা পুরস্কার পেয়েছিলাম। আজাদ হিন্দ ফৌজে নেতাজির সেক্রেটারি আবিদ হোসেন মশায় পুরস্কার দিয়েছিলেন। এর বছর খানেক বাদে এক মার্কিন-ফরাসি নাগরিক, ফোটোগ্রাফার ও কবি জেন হিলারি আমার বাড়ি আসেন। তিনি স্বদেশযাত্রা গল্পের ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করে দিল্লিতে ‘কথা’ প্রকাশন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে ঠিকানা নিয়ে কলকাতা এসে আমার বাড়ি মানে আধো-অন্ধকার ফ্ল্যাটে হাজির। গল্পের সঙ্গে আমার ফ্ল্যাট, জানালা সব মিলিয়ে নিলেন। ছবি তুললেন কত। সারাদিন ছিলেন। আমাদের সঙ্গে লাঞ্চ করেছিলেন। বলেছিলেন, গল্পটি তাঁকে ভারতবর্ষ চিনিয়েছে। জেন হিলারি দীর্ঘকায় এক নারী। সারাদিন বসে সমগ্র বিশ্বে সিরিয়াস সাহিত্যের স্থান কোথায়, সেই আলোচনা করেছিলেন। স্বদেশযাত্রা অনুবাদ করেছিলেন দিল্লিবাসী দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায়। এই গল্পের সূত্রেই আলাপ হল ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে। তাঁকে শর্মিলা ঠাকুর গল্পটি পড়তে বলেছিলেন। তিনি কথা সংকলনে ইংরেজি অনুবাদ পড়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছিলেন নাকি। ঋতুপর্ণকে ফ্যাক্স করে অনুবাদটি পাঠিয়েছিলেন। এসব শোনা কথা। ঋতুপর্ণ বলেছিলেন। তবে স্বদেশযাত্রা কথার বেস্ট অফ নাইনটিজ সংকলনে গত শতকের ৯০ দশকের সেরা গল্প হিসেবে স্থান পেয়েছিল। সেই নির্বাচন বাংলার ক্ষেত্রে করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। অন্যান্য ভাষার নির্বাচক ছিলেন গুলজার, শর্মিলা ঠাকুর প্রমুখ।
২০০০ সালে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় অসুস্থ হন। অসুস্থ শ্যামলদার পাশে আমরা, অনুজ বলি, সন্তান বলি... সকলে দাঁড়িয়েছিলাম। মনে হয়েছিল আমাদের অতি নিকটজন অসুস্থ। একটা বছর খুব উদ্বেগে গিয়েছিল। ২০০১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর প্রয়াণ হয়। আমরা ছিলাম। সকলে ছিলাম সেই অনন্তযাত্রায় তাঁকে রওনা করে দিতে। সেই সময়ই আমি বঙ্কিম পুরস্কার পাই অশ্বচরিত উপন্যাসের জন্য। কিন্তু শ্যামলদার মৃত্যু সব আনন্দ মুছে দিয়েছিল। পরে অনেক বছর বাদে তাঁর ওই সময় নিয়ে একটি গল্প লিখেছিলাম, ‘মোরেলগঞ্জের পিসেমশায়’।
আমার তৃতীয় একটি সম্পাদনা ছিল। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ থেকে দেবেশ রায়ের দীর্ঘ লেখার প্রুফ দেখেছি শারদীয় সংখ্যায়। কিন্তু ছেড়ে আসতে বাধ্য হলাম প্রকাশকের আচরণে অপমানিত বোধ করে। নিজের লেখা কথা ছেপেছি কি সেই পত্রিকায়? না। নিজের বইয়ের আলোচনাও না। তরুণ লেখক এবং আমার সমকালীন লেখকদের লেখা প্রার্থনা করে ছেপেছি। একদিনেই পরিত্যাগ করে এলাম। প্রকাশক একটি প্রশ্নও করেননি, কেন ছাড়লাম। তিনি খুশি হয়েছিলেন আমি চলে আসায়। আর কে কে খুশি হয়েছিলেন, জানি না। হয়েছিলেন মনে হয়। যাঁদের লেখা নিয়ে পত্রিকাটি করতাম তাঁরা কেউ জিজ্ঞেস করেননি কেন ছাড়লাম। শুধু দেবেশদা বলেছিলেন, যাক বাঁচালে, আমাকে আর লিখতে হবে না এই বছর। তারপরের বছর ২০২০, দেবেশদা চলে গেছেন। দুই পত্রিকার কথা আলাদা করে বলি।
সৌমিত্র লাহিড়ী যুবমানস পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। আমার উপন্যাস লেখার জায়গা নেই। সৌমিত্র আমাকে দিয়ে উপন্যাস লিখিয়েছেন। ধ্রুবপুত্রর অংশ, কাঁটাতার এবং আর-একটি উপন্যাস লিখেছি সেই সময় যুবমানস পত্রিকায়। বামফ্রন্ট আমলে সত্যযুগ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেল আচমকা। এই পত্রিকার সম্পাদক একসময় ছিলেন বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়। বামপন্থী পত্রিকা। বামপন্থার উত্থানে এই দৈনিক পত্রিকার ভূমিকা ছিল বড়ো। বন্ধ হল পত্রিকা। তার কর্মচারীরা কাজ হারালেন মধ্যবয়সে। তাঁরা একটি সমবায় করে সান্ধ্য ট্যাবলয়েড প্রকাশ করতেন। সেই সান্ধ্য দৈনিকেও লিখেছি। তাঁরা শারদীয় সংখ্যা প্রকাশ করবেন বললেন, আমার বাড়িতে এসে উপন্যাস নিয়ে গেলেন। অত কঠোর সংগ্রামের ভিতর দিয়ে টিকে থাকা সেই সাংবাদিক বন্ধুরা প্রতিটি লেখার জন্য সাম্মানিক দিতেন। সত্যযুগ পত্রিকার কথা লিখলাম এই কারণে যে পারলেও লেখককে বাদ দিয়ে সকলকে তার প্রাপ্য দেন অনেক পত্রিকা। লেখক পান না। সত্যযুগ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। আমি সেই সাংবাদিক বন্ধু, মেসিনম্যান, প্রুফ রিডার, সকলকে আমার অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম এই সুযোগে। আমি গিয়েছি সেই সমবায় করে টিকিয়ে রাখা সত্যযুগ পত্রিকায়। ছাপার বড়ো বড়ো মেসিন পড়ে আছে। পড়ে আছে নিঝুম সংবাদপত্রের অফিস। ট্যাবলয়েড ছাপিয়ে যা আসত সকলে ভাগ করে নিতেন। সংবাদপত্রের কর্মচারীদের জীবন অনিশ্চিত অনেক সময়।
সাহিত্যে অনেক কিছু ঘটে থাকে। ভালো এবং মন্দ। স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট। সব কথা বলা যায় না, লেখা যায় না। যিনি যতটুকু লিখবেন, তিনি ততটুকু পাবেন। গত শতকের আট-নয়ের দশকে কত দাপুটে লেখক দেখেছি বড়ো পত্রিকায়। সময়ের স্রোতে ভেসে গেছেন। কোনো চিহ্নই আর নেই। সাহিত্যযাত্রায় অনেকজনের সংসর্গে এসেছি। কয়েকজনের কথা বলতে হয়। অধ্যাপক বিজিতকুমার দত্ত। তিনি ছিলেন আচার্য সুকুমার সেনের জামাতা। উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতেন। গমগম করত সেই কণ্ঠস্বর। বিজিতবাবু অশ্বচরিত পড়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। লিখেও ছিলেন। তাঁকে ধ্রুবপুত্র দেওয়া হয়নি। আচমকা সন্ন্যাস রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। বিজিতবাবু আমার গল্পও পছন্দ করতেন। লিখেছিলেন গল্প নিয়ে। পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতেন নৈহাটি অরবিন্দ রোডে। সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুজ। একবার তাঁর বাড়ি নৈহাটি গেলে সরোজবাবুকে দেখেছিলাম। পার্থপ্রতিম ছিলেন ধ্রুবপুত্র উপন্যাসের প্রথম পাঠক। বই বেরোনোর পর এক সন্ধ্যায় তিনি ফোন করলেন ল্যান্ড লাইনে। তখন মোবাইল যুগ শুরু হয়নি। পড়েছেন। আমি দম বন্ধ করে আছি। কী হবে তাঁর প্রতিক্রিয়া। অশ্বচরিত নিয়ে তিনি লিখেছিলেন দীর্ঘ লেখা। পার্থপ্রতিম বললেন, এই উপন্যাসে (ধ্রুবপুত্র) সমকালীন ভারত প্রবেশ করেছে। অভিনন্দিত করলেন। পার্থপ্রতিমের মতো সমালোচক লিখেছেন, পাঠক কৌতূহলী হয়েছে বই নিয়ে। তৃতীয়জন, অশ্রুকুমার সিকদার থাকতেন শিলিগুড়ি। তাঁকে বই পাঠিয়েছি ডাকযোগে। প্রথম ‘সমাবেশ’। দীর্ঘ চিঠি দিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কয়েকটি। পরে হাঁসপাহাড়ি পড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। এরপর অশ্রুবাবু আমার লেখার নিয়মিত পাঠক হলেন। ধ্রুবপুত্র উপন্যাস নিয়ে প্রথম সমালোচনা তিনিই লেখেন বাংলা একাডেমির সমালোচনাপত্র বাংলা বইয়ে। তিনি কলকাতায় এলে দেখা করতাম। অত্যন্ত স্নেহময় মানুষ ছিলেন। ভালোবাসতেন। ২০০৭ সালে প্রকাশিত ‘ধনপতির চর’ ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস। আমাকে বলেছিলেন, তোমার এখন অবধি সেরা লেখা এইটি। চতুর্থজন আমাদের বন্ধু, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য। একজন মানুষ যিনি আমার সব লেখাই পড়েছেন। কিনে পড়েছেন আবার আমি উপহার দিয়েছি। তপোধীর এবং স্বপ্না ভট্টাচার্য শিলচর শহরে থাকেন। অসামান্য দম্পতি। বিদ্যাচর্চায় তাঁরা অগ্রগণ্য। আমি একবার তপোধীরের বাড়ি, শিলচর শহরে ছিলাম দিন পাঁচ। তাঁর দ্বিরালাপ পত্রিকার অনুষ্ঠান ছিল। দ্বিরালাপ মূলত প্রবন্ধের পত্রিকা। সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধেই তার খ্যাতি। তপোধীর ভট্টাচার্যর পুস্তক সংগ্রহ অসামান্য। কথাসাহিত্যের অন্তঃস্থলে প্রবেশ করতে পারেন তিনি। স্বপ্ন গল্প লেখেন। তপোধীর কবি হিসেবেও উঁচু মানের। এসবের বাইরে তাঁর অন্য পরিচয় আছে। বাঙালির আত্মপরিচয় নিয়ে তপোধীর নিরন্তর ভাবিত। আসামের নাগরিক পঞ্জির সময় তাঁর ভূমিকা বহুকাল মনে রাখবে আসামের বিপণ্ণ বাঙালিসমাজ। এখনও নাগরিক পঞ্জির বিপক্ষে তিনি তাঁর কলম সক্রিয় রেখেছেন। এই বিষয়ে তাঁর বক্তৃতা শুনেছি আমি। তাঁর বক্তব্যে তথ্য যুক্তি এবং আবেগ মিশে যায়। তপোধীরের পাণ্ডিত্য নিয়ে কোনো কথাই থাকে না। এমনি অনেক ভালো বন্ধু, মেধাবী বন্ধুর কথা ভুলব না।
দীর্ঘ সংগ্রামের কাহিনী ! এই অকপট উচ্চারণ শ্রদ্ধার উদ্রেক করে।
এই পর্বে নতুন কিছু নেই, রবীন্দ্রনাথের সময় থেকে এই কুৎসিত রাজনীতি সাহিত্যজগতে চলছে...কেন এই গ্রাম্যরাজনীতি তথাকথিত এলিট সমাজে!!! এর কারণ হয়তো অস্তিত্ব সংকট! অথচ এরা জানেনা যে সাহিত্যে অস্তিত্ব রক্ষা করার অধিকার একমাত্র মহাকালের...আর পুরস্কার! এই পুরস্কার আজ হাস্যকর, যে দেয় সে নেয়, পর্দার আড়ালে নড়ে কলকাঠি। তাই ঈশ্বরকে বলি, প্রভু তুমি যদি পুরস্কার দাও তবে তা যেন নোবেল পুরস্কার হয়। একসাথে বিশ্বখ্যাত এবং কোটিপতি হতে পারি, অন্যথা অন্য আর কিছু চাইনা।
আপনার লেখা আমি পড়েছি। অপূর্ব! বিভূতিভূষণের পরে কথাসাহিত্যকে এমন উচ্চস্তরে আর কেউ নিয়ে গেছেন কিনা আমার জানা নেই! লাটুরে ভূমিকম্পপীড়িত মানুষদের নিয়ে আপনার দৃশ্য নির্মান আমায় চমকে দিয়েছিল। তাই এইসব পুরস্কার আপনার সৃষ্টির কাছে অতিতুচ্ছ। আপনি এবং সুধীর চক্রবর্তীকে গদ্য সাহিত্যের 'কবি' বলে আমি মনে করি। আমি সেইসব পুরস্কার প্রাপকদের ব্যঙ্গ করেছি যারা আপনার শ্রেষ্ঠত্বকে সহ্য করতে পারছিলনা। যাইহোক আপনার জীবন চরিতে এই কুৎসিত মনের মানুষদের কোন জায়গা হওয়া উচিৎ নয়, ইতিহাসে এদের কোন স্থান নেই। আপনার লেখায় স্থান হোক সেইসব মানুষদের, যাদের জন্য একজন সাধারণ মানুষ হাতে কলম তুলে নেয়। উনাদের কথা আমরা শুনতে চাই, যেকথা আলোকিত করে মনের অন্ধকার....প্রণাম নেবেন।
সন্দীপ গোস্বামীঃঃ আপনার কথা আমাকে বিদ্ধ করেছে। এই পরিচ্ছেদ বই হওয়ার সময় সংশোধন করতে হবে। আসলে আমি হয়ত মগ্নতা থেকে বিচ্যুত হয়েছিলাম। সব কথা লেখার নয়। সব সত্যকে সত্য বলে ভাবতে নে।
এই সিরিজের অন্যান্য পর্বে প্রান্ত-প্রান্তরের যে অসংখ্য ভালোবাসার মানুষের কথা আপনি লিখেছেন তার থেকে এই পর্বটি ভিন্ন। তবু পাঠক যখন কোনও লেখকের জীবনী পাঠ করেন তখন এসব অভিজ্ঞতার কথা শুনতেও তিনি যথেষ্ট আগ্রহ বোধ করেন বৈকি! প্রসঙ্গত গঁকুর ভাতৃদ্বয়ের ‘দিনলিপি’-র কথা তো আমরা মনে করতেই পারি।
এই লেখাটির জন্যে অপেক্ষায় থাকি এবং একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যাই । এক জীবনে মানুষকে কতরকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় , সাধক সেসব অন্যমনে অতিক্রম করে যান , এই পাঠ সেই শিক্ষা দেয় । পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
কিছু কথা হয়তো বলা যায় না , কিন্তু না বলেও তো থাকা যায় না ! ভালই তো হল , ইতিহাসে সবটুকুই থাক ৷
অপূর্ব সাবলীল লিখেছেন। খুব ভালো লাগছে। লেখকের জীবন কত ভাবেই না জানছি।
২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কর্মসূত্রে নানা মিটিংয়ে আপনার উল্লেখিত হাওড়া জেলার সর্বময় কর্তা আমলা ব্যক্তিটির ডাকা মিটিংয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় হাজিরা দিতে হতো। সেখানে ড : অর্চনা কেও দেখতাম - খানিক বিষণ্ণ, অন্তর্মুখী। আমলাটির অসৌজন্য ও ক্রমে অফিসের কাজের ব্যাপারে রীতি বহির্ভূত আবদারে বিরক্ত হয়ে পরের দিকে এই মিটিং গুলিতে আমার অধস্তন অফিসার কে পাঠাতাম - তাঁর শিষ্টাচার ও সম্মান দেওয়াতে একান্ত অনীহা দেখে।
Koushik Banerjee: আমি ২০০৭ এর ১৯ শে জুলাই হাওড়া ত্যাগ করে আসি। লোকটি বিরলতম খারাপ মানুষ । আমার অবশ্য ওই অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছিল। আমি ২০০৭ এর পুজোয় একটি উপন্যাস লিখেছিলাম আজকাল শারদীয়তে। সেখানে তিনি আছেন। ওঁকে না দেখলে ওই চরিত্রটি মাথায় আসত না। উপন্যাসের নাম ডানা নেই উড়ে যায়। করুণা প্রকাশনীর বই।