মুগ ডালের ধোঁয়া ওঠা গরম খিচুড়ি, যেটা কলার পাতায় পড়ে একটু গড়িয়ে যাবে। পাতার রংটা একটু ফ্যাকাসে হয়ে উঠবে ঠিকই, কিন্থু খিচুড়ির গন্ধ মাত করে দেবে আর সব কিছু। খিচুড়িতে থাকবে আলু, ফুলকপি আর মটরশুঁটি। আর মাঝে মাঝে ভেসে উঠবে লাল টমেটোর টুকরো।
বাড়ির নয়, স্কুলের খিচুড়ির কথা হচ্ছে। সরস্বতী পুজোর দিন স্কুলের খিচুড়ি। এর কোন তুলনা আছে কি? না, একটা এমফ্যাটিক না।
ছোট মাঠটায় রান্না হচ্ছে। পাশেই একতলার কয়েকটা ক্লাস রুমে খাওয়ার ব্যবস্থা। লম্বা লম্বা বেঞ্চ আর টেবিলের ওপর রাখা কলা পাতা আর মাটির ভাঁড়, যাকে আমরা বলতাম খুড়ি। শুধু কলাপাতার গন্ধ নয়, সে খুড়িতেও এক রকম সোঁদা গন্ধ পাওয়া যেত জল খেতে গেলেই।
সবাই এক সংগে ফুঁ দিয়ে খিচুড়ি ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে, যেন জন্মদিনের কেক থেকে মোমবাতি নেভাচ্ছে সব। চোখ কিন্তু রয়েছে দরজার দিকে। বেগুনী আসছে কি? হালকা খয়েরি রঙের মুচমুচে বেগুনীর সঙ্গে সোনালী রঙের খিচুড়ির একটা অদ্ভুত মেলবন্ধন ছিল। বাড়িতে এই কম্বিনেশন বেশি হত না বলেই বোধ হয় স্কুলে এটা এত প্রিয় ছিল। মাথা পিছু দুটো কি তিনটে বেগুনী বরাদ্দ। আমরা খবর রাখতাম কার বেগুনে অ্যালার্জি, তার পাশে বসলে দু-একটা এক্সট্রা বেগুনী জুটবে। তার পরে আসত বাঁধাকপির তরকারি, টমেটোর চাটনি। আর প্রথম আইটেমটার মতই আকর্ষণ থাকত শেষটার - বোঁদে।
বোঁদের মত একটা সাধারণ খাবার নিয়ে মারপিট হত বললে খুব ভুল হবে না। এক বার খবর পেয়েছিলাম বোঁদে বেঁচে গেছে এক নৌকো। রাখা আছে একটা ছোট ঘরে। পুজোর পর দিন সে ঘরের তালার চাবি জোগাড় করে কয়েক জন মিলে খুড়িতে করে গাদা গাদা বোঁদে খেয়েছিলাম। খবরটা গোপন রাখা হয়েছিল, তবু পরের দিকে পাঁচ কান হয়ে যায়। পরে যারা এসেছিল তারা আর বিশেষ কিছু পায়নি। ফলে হ্যাভ আর হ্যাভ নট-দের মধ্যে মারামারি লাগবার উপক্রম।
কেন এত ভাল লাগত সেই খিচুড়ি বেগুনী বোঁদে? আসলে ওগুলো তো আর সামান্য বেগুনী ছিল না, ছিল রুটিনের বাইরে যাওয়ার আনন্দের উপকরণ। বোঁদে নয়, ছিল বন্ধুদের সংগে সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা দিন কাটানোর মজা। বাঁধ ভাংগার মজা। ক্লাস নাইন - সিগারেটে হাতে খড়ি হল সরস্বতী পুজোর দিন। ছিল আরও একটা বিশেষ কারণ - শাড়ি। ক্লাসের সেই মেয়েটি স্কুল ড্রেসের বদলে আজ শাড়ি পড়ে এসেছে। সে কি কোন সাধারণ দিন হতে পারে? সেদিনের খিচুড়ির স্বাদ কি কখনও অন্য দিনের মত হয়, না হওয়া সম্ভব?
কি মায়াময় শৈশব! এই ভোররাতে লেখাটি পড়ে সত্যিই খুব খিচুড়ি-বেগুন ভাজার খিদে পেয়ে গেল।
জীবনটাকে রিস্টার্ট দিতে চাই
ধন্যবাদ বিপ্লব। তবে জীবন তো আর রিস্টার্ট হয় না, স্টার্টটা চালু থাকলেই হবে, মাঝে মধ্যে গতি আসবে, আবার কখনও চলবে ঢিমে তেতালায়। তবু চলাটাই আসল।