ওরা মরা ডালে ফুল ফোটাচ্ছে।
৭ পৌষ দিনটা আগে ছিল ব্রাহ্মদের, তারপর ক্রমে আঁতেল হয়ে প্রায় আম বাঙালির ঘরে যখন ঢুকে পড়বার উপক্রম, সে সময়েই চলে এল করোনা। আর অমিত শাহ। এই দুই আতঙ্ক তথা বিপত্তিকে আংশিক ভাবে পরাজিত করা গেল। সৌজন্যে- বাংলা সাংস্কৃতিক মঞ্চ।
কথা হয়েই গিয়েছিল, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এ বছর পৌষমেলার আয়োজন করবে না। কারণ করোনা। দূরত্ববিধি মানতে হবে, জমায়েতে অসুখের আশঙ্কা বাড়বে, এমনই সব যুক্তিজাল ছিল। স্থানীয় শিল্পীরা কোন আতান্তরে পড়বেন বা না-পড়বেন, সে সব কর্তৃপক্ষের বিবেচ্য নয়, সে দেশ জোড়া লকডাউনের সময়েই দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে সভা হল। অমিত শাহের। সেখানে কয়েক হাজার মানুষের জমায়েতও হল। আদিবাসী মানুষের সঙ্গে মাখামাখিও নাকি করে ফেললেন এক সময়ের গুজরাটের তড়িপার, বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
যে মাঠে অমিত শাহের সভা হয়েছিল, সে মাঠটির জন্য বেশ কিছুদিন আগেই আবেদন করে রেখেছিল বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ। ২৩ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা মাঠ চেয়েছিল। বিকল্প এক উদ্যোগের জন্য।
অমিত শাহের সভার পর প্রথম কাজের দিনে, ২১ ডিসেম্বর তাদের মাঠ ব্যবহারের লিখিত অনুমতি দেয় বীরভূম জেলা পরিষদ। হাতে সময় দু দিন। তারই মধ্যে ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছে ২৩ থেকে ২৫ পৌষ পার্বণ অনুষ্ঠিত হবে ওই মাঠেই। যা কার্যত ছোটখাট এক পৌষ মেলাই বটে।
মঞ্চের তরফ থেকে জানান হয়েছে, ৭৫-৮০টি স্টল তৈরি থাকবে মাঠে। যোগ দেবেন সারা বীরভূমের হস্তশিল্পীরা। সারা দিন ধরে চলবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তাতে যোগ দেবেন লোকশিল্পীরাও। বাউল-ফকিরি-কীর্তন গানের পাশে থাকবে রবীন্দ্রগীতিও।
মঞ্চের পক্ষ থেকে তন্ময় জানিয়েছেন, এই কর্মসূচিতে আশ্রমিকদের মধ্যে থেকেও বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছে, তাঁরা যোগ দিতে চান এই পার্বণে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে রাজি হয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য সবুজকলি সেন। অনেক আশ্রমিকই এই উদ্যোগে দু হাত তুলে সাড়া দিচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে মঞ্চের তরফ থেকে।
অন্যান্য বছর পৌষমেলার নির্ধারিত মাঠ আকারে বড় হয়, সেখানে স্টল হয় প্রায় ৫০০-র মত। মেলার আয়োজন সেক্ষেত্রে লাভজনক হয়ে ওঠে, যেহেতু অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে মেলা কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এ বার কিন্তু তেমন হচ্ছে না। যাঁরা স্টল দিচ্ছেন, তাঁদের থেকে কোনও টাকা পয়সা দিতে হবে না। আয়োজনকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা মূলত ক্রাউডফান্ডিংয়ের উপরেই এ ব্যাপারে নির্ভর করছেন। প্রায় চার লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে এই আয়োজনে। অতিমারীজনিত প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বনের জন্য স্টলগুলির মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব তো রাখা হচ্ছেই, একইসঙ্গে উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।
এবারের স্টলের সংখ্যা জায়গার জন্য যেমন কম, তেমনই ঝাড়াই-বাছাইও হচ্ছে। প্লাস্টিকের খেলনাজাতীয় দ্রব্যের কোনও স্টল থাকবে না বলে জানানো হয়েছে। হস্তশিল্পী যাঁরা, যাঁরা অন্যান্য বছরগুলিতে পৌষমেলার অপেক্ষায় থাকেন, তাঁদের কিছু সংগতিসাধন এ পার্বণের অন্যতম উদ্দেশ্য।
তবে সর্বাপেক্ষা বড় চমক সম্ভবত বাসুদেব দাস বাউল। অমিত শাহের সভায় গান গেয়েছিলেন তিনি দিন কয়েক আগে। তাঁর শাপমুক্তি ঘটবে। অমিত শাহদের কর্মসূচির সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ এই পার্বণ, যেখানে হিন্দি-হিন্দু সংস্কৃতির আগ্রাসনের প্রতিস্পর্ধী বাংলার সংস্কৃতির উদযাপন হতে চলেছে, সেখানে গান গাইবেন বাসুদেব। থাকবে আদিবাসীদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও।
অন্য বছরগুলিতে পৌষমেলার গেট তৈরি হয় বোলপুর স্টেশন থেকেই। প্রতিস্পর্ধী কর্মসূচিতে তার ব্যত্যয় হচ্ছে না। স্টেশন থেকে শুরু করে পার্বণ প্রাঙ্গণ পর্যন্ত মোট চারটি গেট তৈরি হচ্ছে। যে নামেই ডাকা হোক, ৭ পৌষ থেকে মানুষের সমাগমের পরিসরটি থেকে এ বছর বঞ্চিত না করার ধুলোমুঠির এই প্রচেষ্টার জন্য বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ ধন্যবাদার্হ থাকছেন নিঃসন্দেহে। তাঁদের প্রত্যাশা, সমমনস্করা, যে যেভাবে পারবেন, পাশে থাকবেন, সাংস্কৃতিক সংহতিতে থাকবেন।
"তারই মধ্যে ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছে ২৩ থেকে ২৫ পৌষ পার্বণ অনুষ্ঠিত হবে ওই মাঠেই।"
২৩-শে পৌষ তো বহু দেরী। প্রায় মাঘ মেলার সময়। পৌষ মেলার সময় তো ৭ই পৌষ!
আচ্ছা এইবার -- বুঝেছি ২৩ থেকে ২৫ ডিসেম্বর উৎসব. পৌষটা পার্বনের সঙ্গে পড়তে হবে। তারিখের সঙ্গে না।
ছবি গুলো আসে নি। বা আমি অন্তত দেখতে পাচ্ছি না।
লোড হতে একটু সময় লাগছে। সেজন্য মনে হয়।