এখন তো বছরের সেই সময়টা শুরু হয়ে গেছে জাপানে যখন লক্ষ লক্ষ বিদেশী পর্যটক সেই দেশে পাড়ি জমায়। জাপান বছরের মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিন মাসের মধ্যে খুব সময়ের জন্য সেজে ওঠে চেরী ফুলের সম্ভারে, যাকে ওরা বলে ‘সাকুরা’। সেই সাকুরা দেখতেই পর্যটকদের আগমন। আজ তো নতুন বছরের প্রথম দিন, ভাবলাম সেই চেরী ফুলের গল্প ভাগ করে নেওয়া যাক।
অনেকে বলে সেই সাকুরা দেখতে পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার যদি আপনি মাত্র কয়েকদিনের জন্য প্ল্যান করে যান। এর মূল কারণ হচ্ছে চেরী ফুল বেশী দিন ফুটে থাকে না। কুঁড়ি ফোটা থেকে শুরু করে ফুল ঝরে যাওয়া – গোটা ব্যাপারটা ঘটে যায় মাত্র দু-সপ্তাহের মধ্যে। ‘ফুল ব্লসম্’ মানে চেরী পরিপূর্ণ ফোটা তো মাত্র থাকে সাত দিন মত। কুঁড়ি ফুটতে থাকা চেরী ফুলের গাছ দেখতে সম্পূর্ণ অন্যরকম পূর্ণ ফোটা চেরী ফুলের গাছের থেকে। সেই যে কবির ভাষায়, “কাল ছিল ডাল খালি, আজ ফুলে যায় ভরে” টাইপের ব্যাপার আর কি। তো বলাই বাহুল্য, সবাই দেখতে চায় সেই পূর্ণ ফোটা চেরী ফুলের সাকুরা।
এই টাইমিংটাই বড় ব্যাপার – আপনাকে তো আর বলে কয়ে চেরী ফুল ফুটবে না! আর এমন নয় যে চেরী ফুটতে শুরু করেছে খবর পেয়ে আপনি প্লেনের টিকিট কেটে চড়ে বসলেন! সাকুরার সময়ে চেরী ফুল ফোটার বিখ্যাত বাগান গুলি যেখানে আছে সেই শহরের সব হোটেল এক বছর – ছয় মাস আগে থেকে বুক হয়ে যায়। আর এমনিতেই জাপান খুব খরচ সাপেক্ষ জায়গা। তার মানে আপনার সাকুরা দেখার ইচ্ছে হলে অনেক আগে থেকে প্ল্যান করতে হবে।
তো সেই ২০১৭ সালে ভাগ্য খুব সাথ দিয়েছিল – এপ্রিলের শেষদিকে। এমনি জাপান দেশটা আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটার মত লম্বাটে। চেরী ফুল ফোটা শুরু হয় জাপানের দক্ষিণ থেকে আর তার পর ক্রমশ এগিয়ে যায় উত্তর দিকে। মানে ধরুণ দক্ষিণে ফুকোওকা, কিয়োটো, ওসাকা হয়ে আপনি এগিয়ে যাবেন টোকিও-এর দিকে এবং তার পর এক দম উত্তরে সাপোরো শহরে।
বলা হয় জাপানে প্রায় ২০০ প্রজাতির চেরী গাছ আছে – এবং তাদের সব ফুল ফুটেই সাকুরা। নানা রঙের ফুল – তবে বেশীর ভাগের রঙ সাদা বা গোলাপী। সে এক অবিষ্মরণীয় অভিজ্ঞতা। জাপানের অনেক কিছু মধ্যে এখনো একটা মিষ্টিক ব্যাপার জড়িয়ে আছে – মানে এদের সংস্কৃতি, সামাজিক আচার আচরণ বাইরের দেশের লোকেদের কাছে এই আজকের দিনেও বেশ রহস্যজনক লাগতে পারে। তাই চেরী ফুল ফোটা বা সাকুরা এতো বড় একটা উৎসব, আর তা নিয়ে জাপানীদের কোন ট্রাডিশন থাকবে না, সেটা তো আর হতে পারে না! পরিপূর্ণ ভাবে ফুটে ওঠা চেরী ফুল দেখতে আসা জাপানীদের কাছে একটা সামাজিক ব্যাপারও বটে – এবং এরা সেই উৎসবকে বলে ‘হানামি’। পরিবার, বন্ধু, প্রিয়জন, মনের মানুষ – সব একসাথে এসে চেরী গাছের নীচে বসে পিকনিক করা, মাথার উপরে গাছে ডাল ভরে চেরী ফুল, মাঝে মঝে হাওয়া দিলে ঝরে পড়ছে ফুলের পাপড়ি – সে এক অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা।
সাকুরা দেখতে গেলে টোকিও খুব জনপ্রিয় এক শহর – এত বেশী পর্যটক এখানে দেশ বিদেশ থেকে এসে জড়ো হয় যে হোটেল পাওয়াই চাপের – মিনিমাম ছয় মাস আগে থেকে বুকিং করলে মনমত বা নিজের বাজেট মত হোটেল পেতে পারবেন। টোকিও-তে অনেক গুলি বিখ্যাত বাগান আছে যেখানে সাকুরা খুব জনপ্রিয় – আপনি একটা বাগানেই সারাদিন কাটাতে পারেন – আবার ঘুরে বেড়াতে পারেন এক বাগান থেকে অন্য বাগানে। সমগ্র জাপানে, বিশেষ করে টোকিও-তে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট খুব ভালো, তাই কিভাবে ঘুরব সেই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না আপনাকে, খালি ভীড়ের ব্যাপারটা মনে রাখতে হবে। তবে আমাদের যাঁড়া শিয়ালদহ লাইনের ট্রেনে যাতাযাত করার অভ্যাস আছে, তাদের কাছে জাপানের চরম ভীড়ের ট্রেন ফাঁকা লাগতে পারে একটু!
টোকিও-তে নয় নয় করে প্রায় গোটা দশেক পার্ক আছে যেখানে সাকুরার সময় লোকজন ভীড় করে – ১) সিনজুকু গোয়েন, ২) উনো পার্ক, ৩) কোইশিকাওয়া কোরাকুয়েন, ৪) চিদোরি-গা-ফুচি, ৫) মেগুরো নদী, ৬) সুমিডা পার্ক, ৭) আশুকায়ামা পার্ক, 8) ইনোকাশিয়ারা পার্ক, ৯) ইয়োগি পার্ক, ১০) কোইশিকাওয়া বোটানিক্যাল গার্ডেন। এদের মধ্যে সিনজুকু, উনো বা কোইশিকাওয়া পার্ক তো যাকে বলে প্রাইম অ্যাট্রাকশন।
টোকিও বেশ কয়েকটা পার্কেই ঘুরেছিলাম সাকুরার সময় – হয়ত মনে হতে পারে চেরী ফুল দেখব তাতে করে কোন পার্ক তার সাথে কি সম্পর্ক! ব্যাপারটা সোজা নয় অত – আসলে চেরী ফুলের সাথে মিশে যায় সেই পার্কের বৈশিষ্ট। তাই মনে হয় এক পার্কের সাকুরার সাথে অন্য পার্কের সাকুরার বেশ পার্থক্য আছে – আপনি যত গুলোতে যাবার সময় পাবেন, গিয়ে হানামি করতে পারেন – উপভোগ করবেন। সাকুরার গল্প শুরু করা যাক উনো পার্ক দিয়ে।
উনো পার্ক মনে হয় টোকিও তে সাকুরার দেখার জনপ্রিয় পার্ক গুলির লিষ্টে একদম উপরের দিকে থাকবে। স্থানীয় লোকেরা বলে যে উনো পার্কে নাকি চেরী গাছের ফুল টোকিওর অন্য জায়গার থেকে একটু আগে ফোটে! সেই ১৬শ শতাব্দী থেকে উনো পার্কে সাকুরা দেখতে আসছে জাপানীরা। আগে এখানে চেরী গাছ ইত্যাদি থাকলেও সেই ভাবে পার্ক বলে পরিচিত ছিল না, বরং ছিল কানে-জি এর মন্দির। এই সব জমি আগে ওই মন্দিরের সম্পত্তি ছিল। ১৮৭৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে উনো পার্কের সূচনা হয়। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী এই বাগানে বছরে নাকি প্রায় এক কোটি করে পর্যটক ঘুরতে আসে! সেই হিসাবে সমগ্র জাপানে শহুরে পার্কগুলির মধ্যে এটাতেই সবচেয়ে বেশী পর্যটকদের আনাগোনা। এলাকা হিসাবে দেখতে গেলে এই পার্ক আছে প্রায় চারশো বিঘা এলাকা জুড়ে।
এই উনো পার্কে প্রায় ৮০০ টি চেরী গাছ আছে – ৮০০টি গাছ ফুলের ভারে নুয়ে পড়ছে – সে কেমন দৃশ্য বুঝতে পারছেন আশা করি! চেরী গাছের নীচের জায়গা হট প্রপার্টি – লোকজন নীল রঙের পলিথিক এবং টেপ দিয়ে জায়গা ঘিরে দখল করে রেখেছে দেখবেন পিকনিক করার জন্য। কাছাকাছি উনো স্টেশন থেকে নেমে হেঁটেই চলে যেতে পারেব পার্কে। যদি চেরী গাছের নীচে বসে পিকনিক করার শখ থাকে তাহলে একদম সকাল সকাল গিয়ে জায়গা ধরে ফেলুন। এখানে বসে তো আর রান্না করতে পারবেন না – তাই সাথে করে খাবার নিয়ে আসুন। তবে এত ভীড় থাকলেও বাগানা নোঙরা নেই দেখবেন একটু – বিশাল শৃঙ্খলার সাথে সবাই বর্জ্য জিনিস পত্র ডাষ্টবিনে রাখছে – কাউকে বলতে হচ্ছে না। আমরা গিয়েছিলাম লাঞ্চের পর – সে এক দেখার জিনিসই বটে!
পরের দিন গেলাম সিনজুকু গোয়েন পার্কে। সিনজুকু পার্কের পুরো বা অফিসিয়াল নাম “সিনজুকু গোয়েন ন্যাশানাল গার্ডেন” – আর নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এটা কোথায় অবস্থিত। এখনকার টোকিওর সিনজুকু এবং সিবুয়া নামক দুই ব্যস্ত এবং প্রধান অঞ্চলের মধ্যে এই পার্ক। জাপানের অনেক কিছুর মত এই পার্কের ইতিহাসও অনেক প্রাচীন – সেই ১৭৭২ সালে এডো সাম্রাজ্যের সময়ে এই বাগানটি বানানো সম্পূর্ণ হয়। এর পরে কয়েকশো বছর ধরে এটা সেটা পাল্টাতে থাকে – নানা সম্রাটের ইচ্ছে মত এটার ডিজাইন বদলাতে থাকে। আজকের দিনে বাগানটা যে ডিজাইনে দেখা যায় সেটা সম্পূর্ণ হয়েছিল ১৯০৬ সাল নাগাদ। আগে এই বাগানটা কেবল সম্রাট এবং রাজ পরিবারের ব্যবহারের জন্যই ছিল – বলা হত ইম্পিরিয়াল গার্ডেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বোমারু বিমানের আঘাতে এই বাগানের অনেক ক্ষতি হয় – শেষে ১৯৪৫ সাল নাগাদ তো বোমার আঘাতে বাগানটি প্রায় ধ্বংসই হয়ে যায়। যুদ্ধের পর এই বাগানটিকে আবার তিল তিল করে নতুন করে গড়ে তোলা হয়। ১৯৪৯ সালে এই পার্ক খুলে দেওয়া হয় সাধারণের জন্য এবং তার পর থেকে এটা পাবলিক পার্ক বলেই বিবেচিত হয় এবং দেওয়া হয় আজকের নাম “সিনজুকু গোয়েন ন্যাশানাল গার্ডেন”।
উনো গার্ডেন এর বেশীর ভাগ চেরী ফুলের রঙ ছিল সাদা। কিন্তু এই সিনজুকু-তে সাদা ছাড়াও ঈষৎ গোলাপী বা পুরো গোলাপী চেরীর দেখা পেলাম। এখানে প্রায় ১২ রকমের চেরী গাছ আছে। সব মিলে প্রথম দেখায় মুখ হাঁ হয়ে যাবারই কথা। উনো পার্কে গিয়েছিলাম লাঞ্চের পরে – কিন্তু সিনজুকু গার্ডেনের নামডাক শুনে সারা দিন এখানে কাটাবো ঠিক করি – এবং কাটানোর পর বুঝতে পারি যে সেই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না! সকাল দশটার দিকে হাজির হয়েছিলাম – শুয়ে বসে, লাঞ্চ খেয়ে, ঘোরাঘুরি করে খুব সুন্দর কেটেছিল – আবহাওয়াও খুব ভালো ছিল সেদিন – সেটাও একটা বড় ব্যাপার উপভোগ করার জন্য। আর বাই দি ওয়ে, সিনজুকু গার্ডেন হচ্ছে টোকিওর সবচেয়ে জনপ্রিয় চেরী ব্লসম দেখার পার্ক।
উনো পার্কের থেকে এই সিনজুকু অনেক বেশী সাজানো গোছানো এবং প্ল্যান করে বানানো। প্রায় সাড়ে তিনশো বিঘা জায়গা জুড়ে আছে এই পার্ক – পরিধি প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার। এই বাগানে তিনটে পৃথক স্টাইল দেখতে পাবেন ল্যান্ডস্কেপের - উত্তর দিকে ইংলিশ স্টাইলে বানানো, দক্ষিণে জাপানের ঐতিহ্য মেনে বাগান এবং আর আছে ফরাসী স্টাইলে ল্যান্ডস্কেপ করা। এই বাগানের মধ্যে জাপানী স্টাইলের টি-হাউসও পাবেন একটা।
সবমিলিয়ে এই বাগানে গাছ আছে প্রায় ২০,০০০ এর বেশী – আর শুধু চেরী গাছ ধরলে তা আছে প্রায় ১৫০০। যেহেতু এখানে নানা ধরণের চেরী গাছ আছে, তাই তাদের ফোটার সময়েরও একটু তফাত থাকে – এবং সেটা এই সিনজুকু গার্ডেনকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। মার্চের শেষ দিকে ফোটে সিডায়ার (উইপিং চেরী), এপ্রিলের প্রথম দিকে ফোটে সোমেই (টোকিও চেরী) আর এপ্রিলের শেষ দিকে ফোটে কানজান চেরী।
এখানে যে জাপানীজ ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেনটা আছে সেখানে বেশ কতকগুলো ছোট ছোট ডোবা বা পুকুরের মত আছে – এবং কাঠের ব্রীজ দিয়ে এরা একে অপরের সাথে জোড়া। চারপাশ বিশাল যত্ন করে প্রায় ম্যানিকিওর করে বানানো – চারপাশের গাছের মাঝে বেশ কিছু প্যাভেলিয়ন টাইপের আছে এবং আছে কিউ গোরেতেই (আবার এটাকে তাইওয়ান প্যাভিলিয়ানও বলা হয়) যেটা বানানো হয়েছিল এক সম্রাটের বিবাহ উপলক্ষ্যে।
তার পরের দিন গেলাম চিদোরি-গা-ফুচি নামক জায়গায় সাকুরা দেখতে। সাকুরা নিয়ে বাগানে চেরী গাছের তলায় বসে পিকনিক, রাতের বাগানে রঙীন আলো জ্বালিয়ে উৎসব – চেরী গাছের বাগানের আশে পাশে অস্থায়ী মেলা বসে যাওয়া নানাবিধ দোকান নিয়ে – এই সবই তো আগে লিখেছি। তাহলে বাকি থাকে কি? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, সব কিছু ডাঙায় হলে হবে নাকি? কিন্তু জলে ঘোরার ব্যবস্থা না থাকলে কেমন যেন খালি খালি থেকে যাবে না ব্যাপারটা! মানে ধরুণ নদী বা প্রশস্ত খালের ধারে সারি সারি চেরী গাছ ফুলে ভরা – আর সেই নদী দিয়ে আপনি বোটিং করছেন – গায়ে ঝড়ে পরছে চেরীফুল। রোমান্টিকতার চরম শিখর যাকে বলে – তবে প্রেমিক/প্রেমিকা কেবল মাত্র নয়, আপনার মনে সাংসারিক চাপ যদি প্রেম ভাব কমিয়ে আনে, গ্যারান্টি যে এই চেরী ফুল ঘেরা নদীতে ঘুরলে আবার সেই প্রেম ভাব জেগে উঠবে।
টোকিও-তে নদীর ধারে চেরী ফুল ফোটা বা সাকুরা দেখার দুটো প্রধান জায়গা আছে, একটা মেগুরো নদী আর অন্যটা চিদোরি-গা-ফুচি যার গল্প আজকে লিখতে বসেছি। আমার নিজের মেগুরো নদীর থেকেও চিদোরি-গা-ফুচি নদী এবং তৎসংলগ্ন পার্কই বেশী ভালো লেগেছে দিনের বেলা। তবে হয়ত রাতের বেলা গেলে মেগুরো নদী আরো অপরুপ লাগবে নানা রঙের আলো দিয়ে সাজানো থাকার জন্য। আসলে সব জায়গারই নিজের সৌন্দর্য্য আছে – তাই ওই ভাবে ঠিক তুলনা হয় না।
আর চিদোরি-গা-ফুচি ঠিক নদী নয় – এটা আসলে একটা পরিখা – টোকিও শহরের ইম্পিরিয়াল প্যালেসের চারিদিকে সুরক্ষার জন্য যে পরিখা খোঁড়া হয়েছিল, এই পার্ক তার এক প্রান্তেই গড়ে উঠেছে। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এই চিদোরি-গা-ফুচি যেখানে অবস্থিত সেই পরিখাটি আগেকার ‘এডো দুর্গের’ চারিদিকে, ইম্পিরিয়াল প্যালেসের উত্তর-পশ্চিমে। মানে এই পরিখা দিয়ে বোট নিয়ে ঘুরলে আপনি ইম্পিরিয়াল প্যালেসকে এক চক্কর দিয়ে ফেলতে পারবেন!
তবে এই পুরো পরিখা জুড়েই কিন্তু চিদোরি-গা-ফুচি নয় – এক বিশেষ জায়গায় প্রায় ৭০০ মিটার লম্বা একটা স্ট্রেচ যেখানে প্রায় ২০০ মত চেরী গাছ লাগানো আছে – সেটাই পার্ক, আর তার নীচে বয়ে যাওয়া পরিখায় বোটিং এর ব্যবস্থা। সূর্য অস্ত যাবার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এখানেও চেরী গাছের আশপাশ আলো জ্বালিয়ে রঙিন করে তোলা হয়। বলা হয় প্রতি বছর নাকি এই জায়গায় চেরী ব্লসম দেখতে গড়ে দশ লক্ষ লোক আসে!
আপনি হেঁটেও দেখতে পারেন – কিন্তু চিদোরি-গা-ফুচি সবচেয়ে ভালো ভাবে চেরী ব্লসম দেখতে হলে বোট ভাড়া করাই উচিত। দুই ধরণের বোট পাওয়া যায় ভাড়া – প্যাডেল করে বা দাঁড় বেয়ে। যেমন পছন্দ বেছে নিন – প্যাডেল করা বোট নিলে দুই হাত খালি থাকবে, ইচ্ছে মত ছবি তুলতে পারবেন। শুধু মাত্র ফুল ভর্তি গাছের ছবিই নয় – সেই চেরী ফুলের পাপড়ি জলে ঝরে পরে আরো এক অদ্ভূত সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি করেছে।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন পিক সিজনে কিন্তু বোট রাইডে প্রচুর লাইন লেগে যায়। অনেক সময় নাকি দুই-তিন ঘন্টা লাইনে আপেক্ষাও কোন ব্যাপার নয়। তবে দেখা গেছে লাঞ্চের পর বিকেলের দিকে ভীড়টা বেশী হয় – তাই যদি ভীড় এড়াতে চা, সকাল দশটার আগে ঘুরে আসুন। এগুলো সব চয়েসের ব্যাপার – এই জায়গাটাতে সারাদিন অতিবাহিত করার মত কিছু নেই, তাই সেই মত প্ল্যান করবেন। কারণ এখানে সকালে এলে অন্য কোন স্পটে আপনি বিকেলে যাবেন – সেখানেও বেজায় ভীড় হবে! বোটিং করতে চান কিনা সেইমত ঠিক করবেন – শুধু হাঁটতে চাইলে যেকোন সময় গেলেই হবে। রাত আটটা পর্যন্ত বোট সার্ভিস চালু থাকে – কিন্তু প্রচুর ভীড় থাকলে অনেক সময় সন্ধ্যে ছয়টার মধ্যেই আর নতুন করে লাইনে দাঁড়ানো বন্ধ করে দেয়।
মোট কথা যখনই যান, টোকিওতে সাকুরা দেখতে গেলে চিদোরি-গা-ফুচি পার্কে ঘুরে আসতে ভুলবেন না!
তো এই হল হালকা করে টোকিও শহরের সাকুরার গল্প। পরে অন্য কোন সময় জাপানের অন্য শহরের সাকুরার গল্প করা যাবেক্ষণ।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।