পার্লামেন্ট কেবলমাত্র কাদামাখা শুয়োরের খোঁয়াড়, এইরকম মনে করা নকশালপন্থী এখন আর বেশি টিকে নেই। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সংসদীয় ব্যাবস্থা মেনে নেওয়াই ঠিক কাজ হবে, এইরকম ভাবনাই বেশি। ছুটকোছাটকা বিরোধী মত অবশ্যই আছে,তারা খুব একটা জোরালো নয়। ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখন গরিষ্ঠ বাম এবং অতিবামের কাছে জায়েজ।
সিপিএমের কাছে অবশ্য এই দ্বিধা কখনোই ছিল না। জন্মলগ্ন থেকেই এই দল মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্বাচনকে রণকৌশলের বিষয় হিসেবে দেখেছে। যদিও আইনসভায় অংশ গ্রহণ না করেও যে রাজনীতি করা যায়, সিপিএমের নেতৃত্বে বামদলগুলির একটা জোট ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। আবার কখনো সাংবিধানিক অধিকার অনুসরণ করে সরকার গঠন করেছে তিন রাজ্যে। সরকারে না থাকলে সেই সংসদীয় ধারাতেই আইনসভায় বিরোধীর ভূমিকা পালন করেছে।
এই যে কমিউনিস্ট ভাবধারার একটি দলের নির্বাচনকে রণকৌশল হিসেবে ব্যবহার করা, এর সঙ্গে তার নীতি বা আদর্শের কোনো বিরোধ নেই। রণকৌশলগত কোনো বিষয়ের সঙ্গে মতাদর্শকে আমরা সাধারণ মানুষেরা অহরহ গুলিয়ে ফেলি বটে, কিন্তু বাস্তবে তা একেবারেই অনুচিত। কমিউনিস্ট নৈতিকতার উৎস কমিউনিস্ট মতাদর্শ। খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে তা হলো শ্রেণিহীন সাম্যবাদী অবস্থায় পৌঁছাতে পারা। এই পথে চলতে চলতে, সমাজবাদ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছবার আগে বার বারই সাম্যযোদ্ধাকে তার রণকৌশল বদলাতে হতে পারে। এই কারণে লেনিন ড্যুমায় যোগদানও করেছেন, আবার যোগদান করা থেকে বিরতও থেকেছেন। যদি সরকার গঠন করার সুযোগকে বাম রাজনীতির প্রসার বৃদ্ধিতে ব্যবহার করার কথা কোনো দল, তাহলে তা একেবারেই অমার্কসীয় হবে না, কারণ এই "শুচিতা" র কথা মার্ক্স কোথাওই বলেননি। ফলে সিপিএম কেন নির্বাচনের প্রাক্কালে হ্যানো করল, ত্যানো করল, তাতে তার ফোঁটা তিলক কাটা নৈতিকতার মান ক্ষুণ্ণ হল এইসব বলা বেকার। দেখতে হবে সংসদীয় ব্যবস্থার বিরোধী এমন কিছু দলটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আমদানি করল কিনা, যা সংবিধানেরও বিরোধী এবং দলটির ঘোষিত মূল মতাদর্শেরও বিরোধী ।
সবাই ভোটের বাজারে নেমে বিভিন্ন অস্ত্রে শান দিচ্ছে, খেলার নিয়মকানুন আউড়ে নিচ্ছে, সেখানে একটি দলকে নৈতিকতার দোহাই পেড়ে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকতে হবে, এটা চাপিয়ে দেওয়া খুব বড় চালাকি একটি। যেন ভোটের বাজারটিই নৈতিকতা প্রচারের সবচেয়ে বড় মান্ডি, যার ঠেকা নিতে বাধ্য করা হয়েছে একটি বিশেষ দলকে।
আসলে গেল গেল রব তোলাটা তাহলে খুব সহজ হয় যে!
নির্বাচনের আগে আমরা বড়জোর যা আশা করতে পারি তা হল কী ধরনের সরকার তারা আমাদের দেবেন, সে সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা। দলটির দ্বারা প্রকাশিত নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে সেটা পরিষ্কার ভাবে গুছিয়ে লেখা হয়েছে। কেরালা ফর্মুলায় বেশিরভাগ প্রার্থীই অল্পবয়সী এবং শিক্ষিত। এদের কোনো কলঙ্কিত অতীত নেই, আছে কেবল উজ্জ্বল ভবিষ্যত। ভারতীয় গণতন্ত্রের একিলিসের গোড়ালি, সাংসদ কেনাবেচার সর্বচারী প্রবণতা থেকে এরা মুক্ত বলেই মনে হয়। অন্তত বিকিয়ে যাবার সম্ভাবনা এদেরই সবচেয়ে কম। যে হারে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বিরাট সংখ্যা বিজেপির প্রলোভনের কাছে আত্মসমর্পণ করছে তাতে এই কথাটাই সবচেয়ে আগে মনে হচ্ছে যে যাকে নির্বাচিত করলাম, সে কাল রঙ পালটে নেবে না তো? সে আশঙ্কা সবচেয়ে কম মনে হয় এই তরুণ তরুণীদের ক্ষেত্রে। এদের মধ্যে কয়েকজন বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে প্রাণ বিপন্ন করে তবে এই জায়গায় পৌঁছেছে। লেসার ইভিল পার্লামেন্টে ওয়াক ওভার দেয়, আর ঐশী ঘোষ মাথায় বাড়ির পর বাড়ি খেয়েও এতো কথার কী আছে, এই টিটকিরি শুনতে বাধ্য থাকে।
নির্বাচন যখন সরকার গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, তখন কেবল প্রধান শত্রু বিজেপিকে নো ভোট, এইটা বলাই সব হতে পারে না। কাকে ভোট দেব সেকথা যদি উহ্য থেকে যায় তাহলে এই লাইন দ্বারা অনুপ্রাণিত মানুষজনের মধ্যে সরকার গঠনের দিকে সদর্থক ভোটের বদলে ভোট না দিতে যাবার বা নোটায় ভোট দেবার প্রবণতা বাড়বে। ভোটারদের মধ্যে কনফিউশান বা ধন্দ বাড়বে। নির্বাচিত কয়েকটি আসনে আমি লড়ব, বাদ বাকীগুলিতে প্রধান শত্রু বিজেপি ছাড়া আর যে কাউকে দাওগে যাও - এই নিদান সরকার গঠনের বিষয়টিকেই অবান্তর করে তোলে। ত্রিশঙ্কু বিধানসভার দিকে ঠেলে দেয়। যে পরিস্থিতি ঘোড়া কেনাবেচার স্বর্গরাজ্য। যদি বামেদের মধ্যে অনৈক্যের কারণে বিজেপি আসে, তাহলে পুরো বাম আন্দোলনই মার খাবে। বিজেপির লেঠেলরা অতো মেপেজুকে মারে না, কে সিপিএম, কে এমএল, এইসব বিবেচনা তাদের থোড়ি আছে। কার আমলে কে ইউএপিএ খেয়েছে, তাই সে সকল প্রশ্নের অতীত হয়ে নির্বাণ প্রাপ্ত হয়েছে, তাকে আর ছোঁয়া যাবে না, তার অভিপ্রায় নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না, এইরকম চিন্তা বিজেপি করবে বলে মনে হয় না। তার কাছে সকল 'ব'-ই সমান প্রহারযোগ্য, সে বিশ্ববাংলাই হোক আর বামের নানা রকমফের।
যে বামশক্তিটি দীর্ঘকাল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল, তাকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছিল নানা বিচ্যুতির কারণে। নাহলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, পুঁজির অবাধ খেলা, বিজেপির অত্যাগ্রহ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ, মিথ্যা প্রচার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনশন, কোনটাই এই হারে সফল হতো না বলে আমার ধারণা। কিন্তু তার পরেও তো কোন নতুন বাম শক্তির পুঞ্জীভূত হওয়া দেখতে পেল না এই দুর্ভাগা রাজ্য। এতো বাম দল, তাদের কমন পয়েন্ট তারা সরকারি বামের ওপর বেজায় খাপ্পা, তবুও সরকারি বামকে একেবারে অকেজো প্রমাণ করে নতুন বামশক্তি আত্মপ্রকাশ করল না কেন? আর কিছু না হোক, তারা তো ১৯৭২-৭৭ এর ধারায় আন্দোলন জারি রাখতে পারত। তাহলে হঠাৎ করে ভোটের আগে ভোটারদের মধ্যে তাহলে কাকে ভোট দেব এই ধন্ধ না বাড়িয়ে, দলে দলে নতুন বাম শক্তিকেই ভোট দেবার কথা বলা যেত। বিজেপির বিরুদ্ধে বাম, এর কোনো বিকল্প তো নেই। আর কেউই বিজেপি বিরোধিতায় ১০০ শতাংশ দেবে না। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তেতাল্লিশ রকম বাম ছড়ি ঘোরায়, কিন্তু নতুন বাম শক্তিকে সংহত করার বেলায় কেউ নেই, বংশের বাতি দিতে তাই হাতে থাকে ঐ সরকারি বামই। সে যাতে ভোট না পায়, তার জন্য ছলেবলে, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে চেষ্টা করে যাবার মধ্যে নৈতিকতা তো নয়ই, এমনকি রণকৌশলগত সাধারণ জ্ঞানও চোখে পড়ে না।
ফলে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বা ত্বহা সিদ্দিকির 'ধর্মনিরপেক্ষতা' বা মণিরুল ইসলামের 'মানবতা'য় বেসরকারি বামেদের আপত্তি না থাকলেও আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে তারা বড়ই বিব্রত। লোকটা ধর্মগুরু, ফলে বাম জোটে ঢোকে কিভাবে, মেয়েদের সম্বন্ধে আজেবাজে কথা বলে, অন্য দলগুলি এতো চেষ্টা করেও তাকে নিতে পারল না, শেষ অব্দি বামে ভিড়লো? ছিছিক্কারে ভরে গেল দুনিয়া যেন বাম দলটির ধর্মনিরপেক্ষতার পরীক্ষা আর কোনোদিন কোনোভাবেই হয়নি, প্রমাণের জন্য বাকি ছিল আব্বাস সিদ্দিকিকে দলে নেওয়া না নেওয়ার অগ্নিপরীক্ষা। ৩৪ বছরের শাসনকালে দাঙ্গা হতে না দেওয়া ধর্তব্যের মধ্যেই নয় যেন। এই দাঙ্গা লাগলো বলে, আইএসআই, দায়ুদ ইব্রাহিমের চর ইত্যাদি সুললিত বচনামৃত যাদের মুখে শুনতে পাচ্ছি, তারা নিশ্চয়ই জানেন এ রাজ্যে দাঙ্গা হয়েই চলেছে। তেলেনিপাড়ায় বার বার আগুন লাগে, আসানসোলের ঘটনা আমরা সবাই জানি, ধুলাগড়, হাজিনগর, নৈহাটি, একের পর এক। এ-ই তেলেনিপাড়াতেই কিন্তু গোটা রাত থানায় জেগে বসে থেকে জ্যোতি বসু দাঙ্গা লাগতে দেননি। বিভেদকামী দাঙ্গাবাজ শক্তিকে প্রতিহত করবার মতো প্রশাসনিক সদিচ্ছা নেই এখন। থাকতেও পারে না। এক প্রবল বিভেদকামী ধর্মোন্মাদ শক্তিকে ধর্মকাঁটাতেই বিদ্ধ করে হঠাবার চেষ্টা বাতুলতা নয় কি? হনুমান চালিশার জবাব কি উল্টোডাঙার আকাশ ছোঁয়া হনুমান মূর্তি হতে পারে? বরং তাদের আশংকা সত্যি করে যদি আব্বাস সিদ্দিকির মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা লুকিয়ে থাকে, তাকে সঙ্গে নিয়ে সেটা ঝেড়ে ফেলার কাজ বামশক্তি ছাড়া আর কে করবে! সংযুক্ত ফ্রন্টে যোগদানের পর তাকে কোনো আপত্তিকর কথা বলতে শোনা যায়নি। বরং শাসকের নাগপাশ থেকে স্বাধীনতা, সাংবিধানিক অধিকার, সম্প্রদায় নির্বিশেষে ঐক্য, এইসবই উঠে এসেছে তার ভাষণে। ওয়ায়েসির মিমকে সে প্রত্যাখ্যান করেছে, যদিও ফেসবুক পোস্টে ছয়লাপ যে মিম আর আইএসএফের নির্বাচনী সিম্বল নাকি এক। তা আবার হয় নাকি এই ভেবে হেসে নেবার আগে সুকৌশলে এইসব কথা ভাসিয়ে দেবার পেছনে যে চতুরতা হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটিতে তার লাগাতার ব্যবহার হয়েই চলেছে। যেহেতু মিমের সিম্বল ঘুড়ি, সেটা কমজনেরই জানা আছে, ঘুড়ির একটা আবছা ছবি দিয়ে বা না দিয়ে নেহাত সাদৃশ্যগত মিলকে কেমন কাজে লাগিয়ে দেওয়া হলো! কাজটা ডেসপারেশন বা মরিয়া ভাবকে কতদূর টেনে নিয়ে যাওয়া যায় তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। ওয়ায়েসির মিমকে ঘরে পাঠিয়ে আব্বাস সিদ্দিকি অন্তত একটি কাজ এর মধ্যেই করে ফেলেছে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে আড়াআড়ি হিন্দু মুসলমানে ভাগ হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে। পীরজাদা ধর্মগুরু হিসেবে তার লক্ষণ রেখার ভেতরে আব্বাসের পদচারণা এখন খুব কম, সে রেখার বাইরে দাঁড়াবার আবেগই যেন বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যে কারণে এ অব্দি আইএসএফের ঘোষিত প্রার্থী সংখ্যার বেশিরভাগই অমুসলমান।
তবু তার ওপর নজর রাখা ঠিক আছে, কিন্তু শুরুতেই এতো ছিছিক্কারে না ভরিয়ে দেওয়াই ভাল। সে ধিক্কার নাহয় মুলতুবি থাক সংযুক্ত মোর্চা ভুল প্রমাণিত হলে। তার আগেই সাব অল্টার্ন মুসলমানের বর্ণ হিন্দু অধ্যুষিত রাজনৈতিক দলের তাঁবেদারি না করে, নিজের দল গড়ে অধিকার ছিনিয়ে নেবার এই প্রচেষ্টা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের হাতে গুন্ডা সমাজবিরোধী হিসেবে ব্যবহৃত না হবার এই প্রথম প্রয়াসকে ডাস্টবিনে ফেলে দিলে আমাদের ছুপা সাম্প্রদায়িক এবং এলিটিস্ট মুখটাই সামনে আসে।
ধার্মিক লোক ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে কিনা এটা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে সংবিধান বলে নিজের নিজের ধর্মাচরণের স্বাধীনতা সকলেরই আছে। যতোক্ষণ নিজের কারণে অন্যের ধর্মাচরণে তুমি বাধা না হচ্ছো, ততক্ষণ তুমি ধর্মনিরপেক্ষ। আব্বাস সিদ্দিকি এর উল্টো করেছে বলে জানা নেই। অবশ্য সংবিধান এবং গণতন্ত্রের রেফারেন্স দিলে এখন তথাকথিত বামমনস্করাও প্রশ্ন তোলে, ওগুলো আবার কী? ওসব খায় না মাথায় মাখে?
আমি তাদের উল্টো জিজ্ঞাসা করি তবে আমাদের লড়াই কিসের জন্য? শুধু বিজেপি হটানো? পরিষ্কার তো জানাই আছে তারা শত্রু নাম্বার ওয়ান। কিন্তু প্রতি পদে যারা গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার কোনো চেষ্টাই করে না,আপাদমস্তক ডুবে থাকে দুর্নীতি আর মিথ্যায়, তাদের দু নম্বরের বিপদ বলে চিহ্নিত করা যাবে না? পাছে একের সুবিধে হয়ে যায়, তাই? এককে হটিয়ে এ রাজ্যের শাসনভার কাকে তুলে দেওয়া হবে? লেসার ইভিল দুইকে? তাতে আম এবং ছালা দুটোই যাবে কিনা ভেবে দেখেছি তো আমরা! কেন আমরা তৃতীয় শক্তির কথা ভাববো না? চে-র টাট্টু খোদাই একজন অসৎ মানুষ বিজেপিতে গেছে বলে এতো এতো খিল্লি ! তার মতোই আর কয়েকজনও বিজেপিতে গেছে। কিন্তু লেসার ইভিলে যে পাল্লা অনেক ভারি! পয়সা ছড়িয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে কিনে নিলে, ট্রেন্ড দেখে যার সম্ভাবনা খুবই বেশি বলে সবাই বলছে, তখন কী হবে? তখন আবার বামের ওপর উল্টো চাপ আসবে - সর্বশক্তি নিয়ে তৃণমূলের পক্ষে ঝাঁপাও, এ আমার, এ তোমার লড়াই।
উঠতে বসতে সিপিএমকে গালমন্দ ক'রে তারপর সেই দলের নেতা হান্নান মোল্লার উক্তি বিজেপি শ্রেষ্ঠ শত্রু এই বাক্যে নো ভোট টু বিজেপির জয় খোঁজার মতো হাস্যকর কাণ্ড আর কতো দেখব। কৃষক আন্দোলনের গোড়া থেকে আন্দোলনের নেতাদের নীতি তারা সমস্ত রকম রাজনৈতিক সংস্রব থেকে নিজেদের দূরে রাখবেন। কোনো ছুপা অ্যাজেন্ডা তাদের কখনই ছিল না, এখনও নেই। বিহারে তেজস্বী, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ, কাউকে জেতানোর ভার তাদের ওপর নেই। সেইজন্যই পার্টি নেতা হয়েও হান্নান মোল্লা পার্টির ওপরে উঠতে পেরেছেন, কৃষক মঞ্চে দলীয় প্রচার পরিহার করেছেন। আবার পরদিনই দলীয় প্রার্থীদের পদযাত্রায় হেঁটেছেন। তিনি যাই-ই করুন, কৃষকদের সংগঠিত করার কাজে বিভিন্ন রাজ্যে সিপিএমের লাগাতার চেষ্টা ও সাফল্য তাতে অনর্থক হয়ে যায় না। এই যে কৃষকদের সংগঠিত করা তা কিন্তু দলীয় ব্যানারেই হয়েছে। কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বে বিজেপি তো থাকবে না জানাই কথা, কিন্তু একজন তৃণমূলী নেতাও কী আছে ?
ফলে অকারণে আনন্দিত হয়ে লাভ নেই, সিপিএম ছাড়া এই সাংগঠনিক চর্চা এই ব্যাপকতা নিয়ে আর কোনো রাজনৈতিক দলের অন্দরে উপস্থিত আছে কিনা নিজেকেই প্রশ্ন করুন।
বিজেপির বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী মূলত কুশাসন আর প্রতিশোধপরায়ণতা। ভোটার কারো কেনা নয়, কোনো পার্টি ভোটারের মা-বাপ নয়। তাহলে কংগ্রেসি জমানা এ রাজ্যে ফুরতো না। নেতারা বলবে তবে ফুলে ছাপ দেবে এতো বশংবদ ভোটার কোথাও দেখেছেন নাকি? তার জন্য পঞ্চায়েত ইলেকশনের তাণ্ডব, ঘর পোড়ানো, মানুষ কেটে টুকরো করা যথেষ্ট নয়? চলে যাওয়া যেতে পারে কেশিয়ারিতে বা দাঁতনে। ওখানে মিলেমিশে যৌথ পঞ্চায়েত চালাচ্ছে তৃণমূল আর বিজেপি। প্রধান এক দলের তো উপপ্রধান আরেক দলের। যৌথ উদ্যোগে ১৫ একর জমি দেওয়া হয়েছে আর এস এসের বেদরক্ষক আর্য গুরুকুল বিদ্যালয়কে। রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে গোমূত্র। ব্যবসাতে যুক্ত সব রঙের কর্মীরাই। এইটাই কিন্তু নীল নকশা। বিধান সভার ক্ষেত্রেও।
এইরকমই হয়। ক্ষমতার যে কতো রকম উপায় আছে মানুষ কিনে নেবার! তাই দেখবেন ভাঙা কুলোতে ছাই ফেলবার চেষ্টায় নিজের চেহারাই না ধূলি ধূসরিত হয়ে যায়! অতীতের ভুল শুধরে নতুন স্বপ্ন দেখা যদি এতোই কঠিন হয় তাহলে রাকেশ টিকায়েতের চোখের জলের কোনো মূল্য আছে কি নেই, এই প্রশ্ন রইল।
দক্ষিণপন্থী দুটো দলই সেটিং করে চলছে। দুটো দলই ভাবছে লোক দেখানো একে অপরের বিরোধিতা করে বামপন্থীদের অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া যাবে। তাই বলা যায় যে একদিক থেকে তৃণ ও বিজেপি একে অপরের পরিপূরক। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষকে ই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষ করে একবার অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলে পুঁজিবাদী শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ উঠবে না, যে alternative না থাকায় উত্তরপ্রদেশ বা পাঞ্জাব এর কৃষক তিন মাস রাস্তায় বসে থাকার পর ও শাসক পাত্তা দেয় না বা আসামে nrc নামক চরম অমানবিকতার কোনো প্রতিবাদ হয় না।
তৃতীয় ফ্রন্টের প্রচার কই?কোথাও কিছু চোখে পড়ছে না।শুধু টুম্পা সোনা গান শোনালে হবে?
সম্পুর্ন একমত। এটাই আমাদের মতো পাতি সিপিএমদের কথা। মুজাফফরনগরের সাম্প্রদায়িক অশান্তি নিয়ে রাকেশ টিকায়েতের ভূমিকা বেশ ধোঁয়াশা ছিলো। কিন্তু সেই রাকেশ টিকায়েতই কৃষক আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছে। সুতরাং অতীতে কে কী করেছে এবং তার জন্যে ভবিষ্যতে সে কী করবে, তা এখুনি জাজ করা যায় না। তাছাড়া আব্বাসকে আমার মতো অনেকেই জাস্টিফাই করেনি, করতে যায়ওনি। শুধু এটা বুঝেছি, ভোটের রাজনীতিতে টিকতে হলে কিছু ক্ষেত্রে আপোষ করতে হয় নাহলে স্রেফ ফুটে যাবো।
আর আব্বাসের সাথে জোট না বাঁধলে এই সমালোচকরা কী ভোটটা সিপিআইএম-কেই দিতো? তা কিন্তু নয়। ২০১৬'র জোট আর এখনকার সিপিএম... প্রার্থীতে, প্রচারে, কমিউনিকেশনে আকাশপাতাল তফাত।
আরেকটা কথা, সিপিএমকে আমিও কম গালি দিই না। কিন্তু এখন চুপ থাকি। অদ্ভুত যেটা লাগছে, নোভোট্টুরা রোজই দেখি সিপিএমকে খিস্তি দিয়ে থ্রেড খুলছে আর মুখে বলছে, "বিজেপি ছাড়া যাকে ইচ্ছে দিন"....মানেটা কী!! অদ্ভুত সব প্রজাতির মানুষজন।
বিজেপি কে তাড়াতে হবে কারণ ফ্যাসিসম চাই না, অথচ বিজেপি র প্রথম ও প্রধান বিরোধী যারা নীতিগত ভাবেও আ্যন্টি ফ্যাসিস্ট এবং পুঁজিবাদ বিরোধী তাাদের কে গাাল দেব, নো ভোটেদের সবটাই বড্ডো আঁতেল মার্কা উপর চাালাকি।
সার্বিক পরিস্থিতি খুব সূচারুভাবে আপনার লেখায় তুলে ধরেছেন।এজন্য আপনাকে প্রথমে সেলাম জানাতেই হয় আর সেটা অবশ্যই লাল সেলাম।
তথাকথিত বুদ্ধিজীবির ভান করে ধরি মাছ না ছুই পানি ধরনের চালাকিমারা লেখা এটা নয়।যার যা চরিত্র সেটা যুক্তি সহকারে সত্যটাই দেখিয়েছেন।আরো ভালো লাগতো যদি কেন্দ্র রাজ্য শাসকের কর্মসংকোচন নীতি,চাকরি দেওয়াতে কোনো রকম স্বচ্ছতার তোয়াক্কা না করাটা উল্লেখ করলে।আজ নির্বাচনের প্রধান ইস্যু হোক ধর্ম নয় কর্ম।কর্মসংস্থান নিয়ে প্রতিটি দল বলুক তাদের কি নীতি?যদিও বিজেপি ররাষ্ট্রীয় সংস্থা বিক্রি করার অবাধ ধ্বংসাত্মক নীতি কর্মসংস্থানের পরিপন্থী।এরপর বেকারদের বিস্ফোরন ঘটবে,ঘটবেই।বিজেপি,তৃণমূল মানুষের বিনা মূল্য শিক্ষা,স্বাস্থ্য,খাদ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাটাই তুলে দিতে চায়।এক্ষেত্রে লেসার ইভিল তত্ত্বের মালিকরা চুপ কেন?
আর তৃণমূলের দূর্নীতিবাজ নেতাদের স্বাভাবিক আশ্রয়স্থল বিজেপি। তারা দল বদল করেও কত স্বচ্ছন্দ।কারন নীতির মিল দুটো দলকে খুব কাছাকাছি এনেছে।আর দুটোই তীব্র বাম বিরোধি ও স্বৈরতন্ত্রী শাসক হতে ভালোবাসে।দুটো দলই কৃষক স্বার্থে কোনদিন কোন লড়াই করেনি।
"এতো বাম দল, তাদের কমন পয়েন্ট তারা সরকারি বামের ওপর বেজায় খাপ্পা, তবুও সরকারি বামকে একেবারে অকেজো প্রমাণ করে নতুন বামশক্তি আত্মপ্রকাশ করল না কেন?........বংশের বাতি দিতে তাই হাতে থাকে ঐ সরকারি বামই।
এই "তেতাল্লিশ রকম বাম" ও তাদের তাত্বিক সমব্যথীরা এই বিষয়ে আলোকিত করলে ভাল হয়। একদা তাদের অনেকেই কংশাল হয়েছিল আর এদানিং তিনোশাল হয়ে গেছে। এটা নিঃসন্দেহে গবেষণার বিষয়।
"ভোটার কারো কেনা নয়, কোনো পার্টি ভোটারের মা-বাপ নয়।"
আনন্দ পেলাম পড়ে।
আমার নো-ভোট-টু-বিজেপি নিয়ে যেটা বলার, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পরবর্তী সিপিএম বিরোধিতার সাথে বর্তমানের এই বক্তব্যের মধ্যে ফারাক - তখন সিপিএম ক্ষমতাসীন দল, তাকে প্রত্যাখ্যানের ডাক দেওয়া আর রাজ্যের নির্বাচনে বিরোধী দলকে প্রত্যাখ্যানের ডাক একই ফলাফল দিতে পারে না।
রাজ্যের নির্বাচনে বিরোধী দলকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন, খুবই ভালো কথা - আবার ঠারেঠোরে জানিয়েও দিচ্ছেন, তৃণমূল সিপিএমের চেয়ে আলাদা করে তেমন একটা খারাপ কিছু নয় - তাহলে, সরকারের 'পরে বিরক্ত যাঁরা, তাঁরা ভোট দেবেন কোথায়?
আস্তে আস্তে যেটা বুঝতে পেরেছি, বামপন্থা খুবই মহৎ ব্যাপার - এবং কারা সেই মহত্বের সহি ঠিকাদার, সেটিই আসল গুরুত্বের। বাকি সব রসাতলে যাক, খাঁটি মার্ক্সীয় উপবীত রক্ষা পাওয়া চাই। এবং, সহি বামের কাছে সংশোধনবাদী ও ফ্যাসিবাদী, কোনটি গ্রহণযোগ্য, বলা মুশকিল - সম্ভবত দ্বিতীয়টিই কম পরিত্যাজ্য - মানে, ইনি ফ্যাসিবাদের খুব কাছাকাছি হলেও ফ্যাসিবাদী নন, ইনি খুব দুর্নীতিগ্রস্ত হলেও আধা-সামন্ততান্ত্রিক সমাজে একটু-আধটু ওর'ম হতেই পারে, এসব আলোচনা চলতে থাকে - কিন্তু, সংশোধনবাদীর হাত ধরা মানেই এক্কেবারে জাতিচ্যুত হওয়া - সেক্ষেত্রে গোবরের পরিবর্তে জিভে কী ছুঁইয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়, রেড বুক হাতের কাছে নেই, থাকলে চেক করে বলে দেওয়া যেত।
তো শেষমেশ যেটা হয়, লক্ষ্মীবাবুর এত এত আসলি সোনা-চাঁদি কা দুকান হয়ে যায়, সরলপ্রাণ পাব্লিক ফুটপাত দিয়ে দুচারবার পায়চারি করে - কোনটি যে সত্যি আসলি দুতল্লা দুকান, একটু বোঝার চেষ্টা করে - তারপর অন্য পাড়া থেকে কেনাকাটা করতে যায়, যেখানে এত আসলি ও সহি আদর্শ নিয়ে কামড়াকামড়ি নেই।
সে যা-ই হোক, আদর্শ রক্ষা পেলেই হলো। পার্লামেন্ট শুয়োরের খোঁয়াড় হয়েছে কিনা জানা নেই - কিন্তু খোঁয়াড় যদি খুঁজে পেতেই হয়, বামদলসমুহের অফিসের আয়নায় তার সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা কিছু কম নয়।
The essence of the piece has been correctly pointed out the fact that participation in parliamentary system is all about strving to form a government . It is not tokenism , nor is it to prove the purity of a party's stand without analysing the reality .Any such attempt only serve to dissocate the party , because how pure their ideology is( in theMarxist yardstick) is of no concern to the people at large . They are simply concerned with daily problems of emplyment , bread and butter issues এটিকে।
Interestingly , after it was revealed that the standing committeeon farmers' issue led by sudip banerjee of tmc whle heartedly supported the essential commodity amendment act , 'no vote to bjp' group has demanded from sudip banejee to "clarify his stand ' IS THRE ANYTHING LEFT TO FURTHER CLARIFY?
THIS VERY PEOPLE VOTED FOR TMC I 2011 . 2014,2016,2019 AND NOW ESSENTIALLY CAVASSING FOR TMC AGAINST THE LEFT LED SANJUKTA MORCHA !
MARX ONCE SAID " THANK GOD I AM NOT A MARXIST!"
আবার একটি বুবুভা, আরও একটি রাজনৈতিক প্যামফ্লেট এবং সাকুল্যে ১৭৫৬ শব্দসংখ্যার এই অ্যাক নতুন পোবোন্দো! পোবোন্দো বাইওয়ালা খ অবশ্য এতে খুশিই হবে কারণ আগাপাশতলা এই পোবোন্দো খ-এর রাজনৈতিক স্ট্যান্ডকে সমোত্থোন করছে!! এতে মার্ক্স আছেন, পার্লামেন্ট শুয়োরের খোঁয়ার আছে, আব্বাসের আবশ্যিক উপস্থিতিও আছে --- শুধু জোটসঙ্গী কংগ্রেসের উল্লেখমাত্র নেই!!!
কাদের জোট? সিপিএমের সঙ্গে কং ও আব্বাসের, নাকি সিপিএমের সঙ্গে কং-এর, নাকি বামের সঙ্গে কং-এর ও আব্বাসের - তার বিশ্লেষণও স্বাভাবিকভাবেই নেই। আব্বাস প্রার্থী দিচ্ছেন কং-এর বিরুদ্ধে। ফব খোলাখুলি কং-এর বিরুদ্ধে শুধু প্রার্থীই দাঁড় করাচ্ছে তাই নয়, একেবারে খুল্লম খুল্লা নোটায় ভোট দিতে বলছে। লেখকের এসবে নজর পড়ছে না (তাতে প্যামফ্লেট নেকা যায়নাকো)।
নো ভোট টু বিজেপি বলা মানেই অতিবাম ধরে নেওয়ার সরলীকরণ আছে অথচ লিবারেশন যে সুজন চক্রবর্তীকে সমর্থন করছে তার উল্লেখ নেই। তেমনই লেসার ইভিল হিসেবে তিনোকে না বিবেচনা করে সিপিএমকে করলে তাদের ধোয়া তুলসিপাতা ধরে নেওয়ার সম্ভাবনা এ পোবোন্দের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে। মানে তখন লেসার ইভিল তত্ত্বটি জায়েজ!
গুরু যে ক্রমেই ফেসবুকের পোবোন্দো রচয়িতাদের ভরসাস্থল হয়ে উঠছে, সেটা দেখে বেশ আশ্বস্ত বোধ করছি।
'ঘোষণা থাকা প্রয়োজন সে সব মতামতগুলির সঙ্গে গুরুচণ্ডা৯ সহভাগী নয়, সর্বদা'
- এটা তো জানা কথা, আলাদা করে উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল না। বিশেষতঃ অন্য বুবুভার ক্ষেত্রে যখন এমন কোন ঘোষণা চোখে পড়ে নি।
আর একটা কথাও আশা করি, পাঠকরা খেয়াল রাখবেন যে, 'গুরুচন্ডালি' বলতে এখানে কিছু হাতে গোনা লোক - যারা বুবুভা-তে কী লেখা বেরোবে সেটা ঠিক করেন, তাদের কথাই বলা হচ্ছে। সামগ্রিক ভাবে গুরুসাইটে যারা লেখেন / আড্ডা মারেন, তাদের কথা বলা হচ্ছে না।
আপনি যে বইতে বিদ্যাসাগরের মুখোশ খুলে দিয়েছেন এবং দুই বাংলায় যার বিপুল বিক্রি শুনতে পাচ্ছি, সেটা আগে যোগাড় করে পড়ি তারপর আর একটি পোবোন্দ নামাব না হয়। যাই হোক আশ্বস্ত হলাম আপনি কংশাল হলে হতেও পারেন। জোটসঙ্গীরা জোটের নিয়ম মেনে থাকবে, আপ্রাণ চেষ্টা করবে জোট বজায় রাখবার। না পারলে ভেঙে যাবে, তখন নাহয় উদবাহু হয়ে নাচানাচি করবেন। তার আগে তো নয়।
কংগ্রেস ছাড়াও আরো দল আছে জোটে, তাদের নিয়েও তো কিছু বলিনি। আব্বাসকে নিয়ে গেল গেল তাই তার কথা এবং মুখ্য দলকে নিয়ে কিছু আলোচনা। সব ছেড়ে কংগ্রেসের প্রতি এ-ই টানের কারণ কী !
মহায়, যে বিদ্যাসাগরকে বধ করে তাকে কি পোবন্দোকার বধের নিমিত্ত এ-ই বিপুল টিটকিরি শোভা পায়!
আপনার নেক্সট টার্গেট হোক রামমোহন, নিদেন পক্ষে রবীন্দ্রনাথ। আরে মশাই আপনি জায়েন্ট কিলার, ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করছেন !
অরণ্যার কথায় সহমত। রাইডারটি দেখে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছি। আর কারো বেলায় দেখিনি তো। তবে কি যে বিশেষ গুরু অন্যের বিরুদ্ধে আরে আরে ঠারে ঠারে লেখার অভিযোগ তুলতে চান, তিনিই আরে আরে ঠারে ঠারে নিজের তরমুজত্ব প্রমাণ করলেন !
আমি গুরুর সম্পাদক মন্ডলীর কাছে জানতে চাইব কেন তাঁরা এ-ই লেখাটিতে এইরকম চেতাবনি দিলেন। যদি এটি ব্যক্তিবিশেষের উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত হয় তাহলে এটা বাতিল করবার দাবী রইল।
বাঃ, পুরোদস্তুর ব্যক্তি আক্রমণে নেমে পড়লেন! যুক্তির ভাঁড়ারে টান পড়লে এমনটাই হয়ে থাকে অবিশ্যি। জানলাম আমি কংশাল, জানলাম জোট ভেঙে গেলে আমি উদ্বাহু হয়ে নাচব, জানলাম আমার কংগ্রেসের প্রতি হেব্বি টান। কিন্তু বাম বাদে সর্বাধিক আসনে প্রার্থী দেওয়া কংকে নিয়ে কেন একটিও বাক্যি নেই, কেন সুজন চক্রবর্তীকে সমর্থন করার প্রসঙ্গটির উল্লেখ পর্যন্ত নেই সেসব বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন এড়িয়ে পাতি এলসিএসদের মতো খেউড় আর উদ্ধত নির্দেশ! খাসা মাইরি!!
এলেবেলেবাবুর লোকের লেখায় শব্দসংখ্যা মেপে বেড়ানোর অভ্যেসটি আর গেলোনা!
এম্মাইরি কষ্ট করে গুনিচি, অত হে হে করবেন না। সতেরোশো ছা প্পা ন্ন। বল্লে হবে খর্চা আচে।
বেশ বেশ। আপুনাকে লিখতে দেখে ভারী আমোদ লাগচে। নো খিল্লি।
তা বটে তা বটে। ব্যক্তি আক্রমণ আপনি একেবারেই করননি কিনা। সাব অল্টার্ণ মানুষের উচ্চারণ রীতিকে বিকৃত করে শব্দসংখ্যা গুনে টুনে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আপনি প্রথমেই করেননি কিনা। গুরুকে এ-ই পোবন্দের জন্য দুচ্ছাই, না না তাইই বা আপনি করলেন কখন।
মৃত মহাপুরুষেরা বেঁচে থাকলেও পাটকেল ছুঁড়তেন না। আমি পাতি পোবন্দোকার, পাটকেল ছোঁড়া আমার জন্মগত অধিকার। ব্যক্তিগত আক্রমণ বলে কাঁদবেন না, আপনার জ্ঞানগর্ভ লেখায় তো আমি কমেন্ট করতে যাই না। আপনি পাতিস্য পাতি লেখায় এতো কমেন্ট করার মতো সময় পান কিভাবে।
তবে এ-ই রাইডারটি দেখলাম গুরুর সব প্রবন্ধেই থাকে। আসলে যেটি আগে দেওয়া হয়েছিল সেটা নিয়ে কনফিউশান এই ভুল বোঝাবুঝির উৎস। পালটে দেওয়া হয়েছে, আমার আর কিছু বলার নেই
আর সিপিএম সাপোর্টারদের মুখ খোলবার যো টি নেই। খুললেই ঔদ্ধত্যের চার্জ লাগে। অথচ কতখানি ঔদ্ধত্য থাকলে এলেবেকে এতোটা ঘৃণা দেখিয়ে, খিল্লি করে কারো বক্তব্য নস্যাৎ করতে পারেন ?
অন্যকে সহবত শেখাবার আগে দেখতে হবে না নিজে তা অনুসরণ করি কিনা।
এই লেখাটির সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো লেখকের স্পষ্ট অবস্থান। অতীত খুঁজতে গেলে এদেশে কোনও রাজনৈতিক দলকেই ভোট দেওয়া যায় না। কিন্তু তার মানে নোটা নয়। একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে থাকবো। তার থেকে লভ্য সুবিধেগুলো উপভোগ করবো। অসুবিধেগুলোর জন্য প্রতিবাদ করবো। কিন্তু 'কাউকে' ভোট দেবো না। এর থেকে বড়ো দ্বিচারিতা আর কিছু হয় না। ভোট দেবার শর্ত এই মুহূর্তের বাস্তবতার উপর নির্ভর করে। ফ্যাসিবাদীদের তরফে যুক্তিটা যেমনভাবে দেখানো হয়। এক হাজার বছর আগে মাহমুদ গজনি নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছিলো, সেই অপরাধে এখন আমরা 'মাহমুদ' নামক কোনও ব্যক্তিকে পেলেই আক্রমণ করবো। এই প্রদেশে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নির্বাচন প্রতীক ছাড়া আর কিছুই আলাদা নয়। সে ব্যাপারটা বিশেষ আমল পায় না। কিন্তু তৃতীয় দলটির 'নীতিবোধ', 'আদর্শপরায়ণতা' নিয়ে তাঁদের রাতে ঘুম আসছে না। কে জিতবে, তা জানাটা জ্যোতিষীদের এলাকা। সাধারণ মানুষের জন্য রয়েছে শুধু একটি মাত্র ভোট। তার সদ্ব্যবহার হোক, এটাই কামনা।
আমি নোটাপন্থী নই।
কিন্তু দ্বিচারিতার কী আছে? রাষ্ট্রের দায় এবং দায়িত্ব আমাকে পরিকাঠামো,শিক্ষ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দেওয়া। মানে ঐ জন্যেই তো হাতি পোষা। সেসব ঠিকমত না হলেআমি প্রতিবাদও করবো। এই রাষ্ট্র ব্যাবস্থা হয়তো আমার মনের মত নয়। ধরুন আমি আসামের বাঙালী। ডান বাম কেউই আমার ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়া আটকাতে আগ্রহী নয়। কিন্তু আমার ভোট না দেওয়া দ্বিচারিতা?
নোটা নিয়ে আমার অন্য আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের সুবিধে নিচ্ছি বা তার কাজে প্রতিবাদ করছি বলে সেটা দ্বিচারিতা, এ হয় না। নোটাতে কাজের কাজ কিছু হয় না, এইটা আমি মনে করি যদিও। একটি মানুষের একটি ভোটের সদ্ব্যবহার হওয়া কাম্য, একদমই তাই।
লেখা ওপেন ফোরামে পাবলিশ হয়ে গেছে। সেখানে যাঁরা জীবনে গুরুতে কমেন্ট করেন না তাঁরা যেমন মন্তব্য করার হকদার, তেমনই গুরুতে যাঁরা অনিয়মিত হলেও কমেন্ট করেন তাঁরাও খিল্লি করার হকদার। তাতে 'আমি তো আপনার লেখায় কমেন করি না আমনি কেন করছেন' জাতীয় গোঁসার কী অর্থ? পোবোন্দোতে শব্দসংখ্যা যদি ১৭৫৬ হয় তবে সেটা গোণা কি নাজায়েজ নাকি ওটাকে বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৫৫৬ বলতে হবে?
সাব-অল্টার্ন মানুষদের উচ্চারণরীতিকে অক্ষম নকল করতেই বা যাব কেন? আর এখানে খামোখা সাব-অল্টার্ন জাতীয় লব্জ ব্যবহারের বা প্রয়োজন পড়ছে কেন? তার মানে আপনি মেনে নিচ্ছেন 'ভদ্রলোক'দের বাচনভঙ্গি আলাদা? বাঃ!
তাই ফব-র নোটা প্রসঙ্গ বাদ দেন? ফব-র সঙ্গে কং-এর কুস্তি বাদ দেন? কং-এর সঙ্গে আব্বাসের জোট না হওয়া বাদ দেন? নো ভোট টু বিজেপিওয়ালাদের পাইকারি হারে দাগিয়ে দেন? দিয়ে আশা করেন তা নিয়ে কেউ তাচ্ছিল্য করতে পারবে না?
তাই বুঝি মন্তব্যকারীকে পরবর্তী বিষয়বস্তু ঠিক করে দেন? এটা ঔদ্ধত্য নয়? ও, হবেও বা। তা পাটকেল ছুঁড়তে থাকুন - কংশাল বলে!
যদিও মন্তব্যকারী এখানে লেখকের আগের লেখায় মালকানগিরি সম্পর্কে কিছুই বলেননি কিন্তু তবুও আপনি বিদ্যাসাগর থেকে ভায়া রামমোহন হয়ে রাবীন্দ্রিক পাটকেল ছুঁড়তে থাকুন। শুধু সেগুলো যে প্রত্যেকটাই নিশানাভ্রষ্ট হবে এটাই যা দুক্কু।
আমার ২৪ মার্চ ২০২১ ২১:৫১-র মন্তব্যটিতে 'সাব অল্টার্ণ মানুষের উচ্চারণ রীতিকে বিকৃত করে' কী কী শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে জানতে পারলে বড়ই সমৃদ্ধ হতাম।
ভোট না দেওয়া একটি 'নিষ্ক্রিয়'' অবস্থান। আমি নির্বাচন নিয়ে উদাসীন।
নোটা একটি 'সক্রিয়' অবস্থান। আমি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি যে এবারের ভোট চাইতে আসা একজনকেও মনে ধরেনি।
সয়ম্বর সভায় কারও না কারও গলায় মালা দিতেই হবে? ভোট দেয়ার অধিকারের মধ্যে None of the above অপশন থাকবে না?
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আমরা সবাই ট্যাক্স দিচ্ছি তো? গরীব মানুষও দেয়, ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স, প্রতিটি জিনিস কেনার মাধ্যমে।
তবে শিবাংশুর বক্তব্যটি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় একটি চর্চিত দৃষ্টিকোণ যাতে রাষ্ট্রকে নেসেসারি ইভিলের জায়গায় খানিকটা বেনেভোলেন্ট অটোক্রাট হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কাউকেই পছন্দ হয়নি বলে নোটায় ভোট দেওয়া বা ভোট না দেওয়া যেতেই পারে, কিন্তু তার সুফল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দক্ষিনপন্থীরা পায়। ভোট নষ্ট করবেন না, জায়গামতন ফেলুন, এবং লেসার ইভিলকে জেতান।
নোটাপন্থীদের মধ্যে একটা "হোলিয়ার দ্যান দাউ" ব্যাপার আছে। যে কিনা এক্কেবারে নতুন ক্যান্ডিডেট তাকেও "মনে ধরেনি" একটা অদ্ভুত অবস্থান। আবার ক্যান্ডিডেটকে মনে ধরলেও তার পার্টি "সংশোধনবাদী" ইত্যাদি ইত্যাদি........!
২০১৬ তে কৌস্তভ আর পার্থ চাটুজ্জের ভোটের ব্যবধান ছিল ৮৮৯৬। তার মধ্যে নোটার অবদান ৪১৩৭ আর সুসির ১৪৯৪!!
@এলেবেলে
এত কান্ডের পরেও পোকিত বামেরা কেন সরকারি বামেদের বিকল্প না হয়ে দক্ষিণপন্থী দলগুলোর তাঁবেদার হয়ে গেল তাই নিয়ে একটা নিবন্ধ নামান দেখি। ছোট করে, গোদা বাংলায়, কটুক্তি ছাড়া লিখবেন। এক্জন যেমন কানের গোড়ায় দেবেন বলে প্রথম খিস্তি নামিয়েছেন। সেটার বাংলা অনুবাদ ও সারাংশ করতে দিয়েছি এক বন্ধুকে। ওরকমটা নয়।
লেখিকা যে CPIMকে ভোট দিতে বলছেন স্পষ্ট বোঝা গেলো কিন্তু লেখাটিতে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলো না |
১) CPIMআসলেই সম্পূর্ণ ভাবেই একটি সেন্ট্রাল পলিটবুরিও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দল যারা দিল্লির সেন্ট্রাল পলিটবুরিও কথাকেই বেদবাক্য মনে করে | এই ভাবেই এই দলটির বাংলার (এবং কেরালার ) মানুষ কি চায় সেই সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবে অগগ্য, নীরব ও নিশ্চুপ | তাহলে বাংলার মানুষ কেন এই দলটি নিয়ে মাথা ঘামাবে বিশেষ করে এই দলটির ৩৪ বছরের অপশাসন বাংলাকে শেষ করে দেবার পর ?
২) কলকাতায় এখন হিন্দিভাষীদের তুলনায় বাঙালিরা সংখ্যালঘু | এই চরম ইস্যুটি বাঙালির সবচেয়ে বড়ো সমস্যা যেইখানে বাংলা আস্তে আস্তে তাকে পূর্ব বিহার করে দেবার দিল্লীশ্বরদের ষড়যন্ত্রের শিকার | এই সমস্যাটি নিয়ে CPIMকি বলে সেটা কিন্তু জানা গেলোনা | লেখিকা কি মনে করেন যে CPIM সেন্ট্রাল পলিটবুরিও তাহলে দিল্লীশ্বরদের বাংলাকে আস্তে আস্তে পূর্ব বিহার করে দেবার ষড়যন্ত্রে সামিল ? লেখিকা এই রাজ্যের বিহারি সমস্যা নিয়ে কোনো সমাধান বললে ভালো হতো |
৩) আমার মতে CPIM এর মূল সমস্যা হলো যে এটি সম্পূর্ণ ভাবেই দিল্লীনিয়ন্ত্রিত একটি দল যারা বাঙালির সমস্যা সম্বন্ধে সম্পূর্ণভাবেই বিচ্ছিন্ন | সেন্ট্রাল পলিটবুরিও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই দলটি যতদিন না বাঙালিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হবে ততদিন তারা বাঙালির সমাজ ও সমস্যা সম্বন্ধে সম্পূর্ণভাবেই অগগ্য থাকবে | লেখিকা CPIM এর এই মূল সমস্যা নিয়ে কিছু বললে ভালো হতো |
আরেক টি কথা |CPIM এর বিরোধী অথচ বামপন্থী ও মার্ক্সবাদী মানুষদের CPIM এর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে CPWB(ম) করতে বাধা কোথায় ? লেখিকা কি মনে করেন যে CPIM এর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে CPWB(ম) তৈরী হয়ে যাওয়া উচিত ?
@হুতো ও রঞ্জন,
নোটা বিষয়ে নিজের অবস্থানটি জানিয়ে রাখি।
যদিও আমাদের দেশে 'পলিটিক্সে' যাবতীয় যুক্তি ও সম্ভ্রমের আবহ ধ্বংস হয়ে গেছে বহুকাল আগেই, তবু 'রাষ্ট্র'কে ভোগ্যপণ্য হিসেবে ভাবতে কষ্ট হয়। কারণ আমাদের সংবিধান মতো 'রাষ্ট্র' ব্যাপারটি মানুষের অধিকার সৃষ্ট। সেটি কোনও বণিকের কারখানার পণ্য নয়। পছন্দ হলে কিনবো, না হলে বর্জন করবো এই হিসেবটা বোধ হয় চলে না। রাষ্ট্রের জন্য আমরা নাগরিক, কোনও খরিদ্দার নই। শুধু ট্যাক্স দিলেই 'দায়িত্ব'টি নির্বাহ হয় না। 'নোটা' প্রস্তাবটি পলিটিক্সের কর্পোটারাইজেশনের একটি প্রতীক মাত্র। আমার সামনে যতোগুলি পণ্য রাখা হচ্ছে, কোনওটাই আমার পছন্দ হলো না। অতএব আমি সবাইকে প্রত্যাখ্যান করে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলুম। এতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বাদ মর্যাদা পায় বটে, কিন্তু কোনও একটি বিপজ্জনক শক্তি আবার নব উদ্যমে ক্ষমতায় ফিরে আসে। তার বয়েই গেলো দেখতে ক'জন অনিচ্ছুক ভোটার নোটায় ছাপ দিয়েছে। আমাদের দেশের মতো নখদন্তে হিংস্র পলিটিক্যাল আবহে এই সব শৌখিন 'প্রতিবাদ' কারো উপকার করে না।
অবস্থান একটা নিতেই হবে। সেটা কার পক্ষে হবে, সে স্বাধীনতা সবার আছে। সুষ্ঠুভাবে সেটার প্রয়োগ হোক।