করোনার দিনগুলি #৪
করোনা মহামারী নিয়ে লোকজন ভীষণ আতংকিত। এসময় ছ্যাবলামি মার্কা এই পোস্টের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। দয়া করে পড়ার পর গালি দেবেন না।
প্রথমে পিছিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম লিখব না। পরে ভাবলাম সত্যি কথা লিখতে ভয় কি। দু’চারটে গালি না হয় খাব। তবে আমি যাহা লিখিব, সত্য লিখিব। সত্য বই জল মিশাইয়া মিথ্যা লিখিব না।
সপ্তাহের সাত দিনই দুপুরে বাড়িতে রোগী দেখি। আজ জনতা কারফিউ এর স্বার্থে দুপুরের চেম্বার বন্ধ রেখেছিলাম। বহুদিন বাদে দেড় ঘণ্টা টেনে ঘুমালাম। সন্ধ্যেবেলায় ঘরে ভাজা একগাদা পাঁপড় আর পেঁয়াজি খেলাম। তারপর থেকেই পেটটা গুড়গুড় করছিল আর বুক জ্বলছিল।
বক্ষ দহন থেকে রক্ষা পেতে বাবার স্টক থেকে চারছিপি এন্টাসিড সিরাপ ঢকঢক করে খেলাম। খাওয়ার পর অবাক হয়ে দেখলাম এন্টাসিড বলে যেটা খেয়েছি সেটা আসলে ল্যাক্সিট প্লাস সিরাপ।
ওদিকে রাত্রি নটার চেম্বার খোলা রাখতে বাধ্য হয়েছি। যদিও কাকুকে বলে রেখেছি জ্বর আর এমারজেন্সি ছাড়া কোনো ক্রনিক রোগী না রাখতে। কাকু ফোনে তাড়া দিচ্ছে, তাড়াতাড়ি আয়। না হলে ভিড় জমে যাবে। পেটের মধ্যে ততক্ষণে মোচড় শুরু হয়েছে। চার চামচ ল্যাক্সিট প্লাসের আফটার এফেক্ট। যা থাক কপালে, জয় মা কালী বলে বেরিয়ে পড়লাম।
কপালে ভালো কিছু ছিল না। খুপরিতে প্রথম রোগী দেখার সময়ই বুঝতে পারলাম জীবনের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছি। যে করেই হোক এই পরীক্ষায় সফল হতেই হবে। নইলে আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে প্রথম আসা নিম্নচাপ সামলে নিলাম। রোগীর বাড়ির লোক জ্বরের ধারা বিবরণী দিচ্ছিলো। আমার মুখের অবস্থা দেখে নির্বাক হয়ে গেল। ওষুধ পত্র লিখে তার হাতে প্রেস্ক্রিপশান ধরিয়ে বললাম, আগে ওষুধ খাও। না কমলে বাকি গল্প শুনব। ততক্ষণে আবার নিম্নচাপ আসছে।
ভাগ্যভালো রোগী বেশি ছিল না। পঞ্চাশ মিনিটের মধ্যে চৌদ্দজন রোগী দেখা শেষ করলাম। ততক্ষণে জামা ঘামে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। কত রোগী মুখের উপর কেশে দিলেন, সর্দি লাগা হাত টেবিলের কভারে মুছলেন, আমি করুণ মুখ করে দেখে গেলাম।
করোনার কথা ততক্ষণে মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে । জীবনের সব রঙ, রস, সফলতা তখন তুচ্ছ।
৮৫ কিলোমিটার বেগে স্কুটার চালিয়ে বাড়ি এলাম। স্কুটারের স্টার্ট পর্যন্ত বন্ধ করলাম না। ব্যাগ নিয়েই বাথরুমে ঢুকে গেলাম। মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তটার জন্য আমি আজন্মকাল অপেক্ষা করে আছি।
কিন্তু এই শান্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। খেতে বসে আবার পেটে মোচড়।
তারপর লিখব না লিখব না করেও লিখতে বসেছি। কিন্তু এখানেই শেষ করতে হবে।
তবে শেষ করার আগে কোনরকমে বলে যাই, করোনা মহামারী আটকানোর জন্য সব রকমের সরকারি নির্দেশ মেনে চলুন। অযথা আতংকিত হবেন না। আর যদি বেশি আতংকিত লাগে, চার ছিপি ল্যাক্সিট প্লাস খেয়ে নিন। করোনা মহামারীর কথা আর মাথাতেই থাকবে না। গ্যারান্টি।
(দয়া করিয়া এই সত্য ঘটনাটিকে কেহ সিরিয়াসলি লইবেন না। ধন্যবাদ)
Sir apnar ei lekhagulo ,amara koronar por jeno boi akare pai.