

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাল্টে দিতে পারে আসন্ন নির্বাচনের গতিপথ। যদি এ সংক্রান্ত সব প্রশ্ন ও তার জবাব দেশের মানুষের কাছে পৌঁছয়, তবেই এমনটা হবে। মানুষ যদি বুঝতে পারে যে, রাজনীতিতে কালো টাকা দূর করার জন্য নয়, বরং কালো টাকা সাদা করার জন্য এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতি পদে কেন সরকার নির্বাচনী বন্ডের পরিসংখ্যান আড়াল করার চেষ্টা করেছে তা জনগণ যদি জানতে পারে। দিবালোকে এই ডাকাতির পুরো সত্য প্রকাশ পেলে এই নির্বাচনী বন্ডের এই ব্যাপক দুর্নীতির তুলনায় বোফর্স বা ২জি-এর মতো দুর্নীতির ঘটনাগুলো ছেলের হাতের মোয়ার মত তুচ্ছ মনে হবে। অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকরা বোফর্সে ৬৪কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগ করেছিলেন, যা সরকার কখনওই স্বীকার করেনি এবং আদালতে প্রমাণিত হয়নি। ইউপিএ সরকারের আমলে ২জি কেলেঙ্কারির অভিযোগ ক্যাগ-এর অনুমানের উপর ভিত্তি করে হয়েছিল, তাও আদালতে প্রমাণ করা যায়নি। নির্বাচনী বন্ড ইস্যুই তো শুরু হয়েছে আদালতের নির্দেশে। যেখানে সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখার দরকার নেই- পুরো সত্যিটা সবার সামনেই আছে।
আসল প্রশ্ন এই নয় যে এই নির্বাচনী বন্ড কেলেঙ্কারি থেকে কত টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। অবশ্য, এখনও অবধি ঘোষিত ১৬,৫১৮কোটি টাকার পরিমাণ নিঃসন্দেহে ব্যাপক। এটুকু ধরে নেওয়া যেতে পারে যে পাঁচ বছরে, প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ শুধুমাত্র একটি লোকসভা কেন্দ্র এবং গড়ে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতি নির্বাচনী এলাকায় ১০ জন প্রার্থীর সর্বোচ্চ নির্বাচনী ব্যয়ের চেয়েও বেশি। তবুও এই পরিমাণের অঙ্কটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন নয়। সত্যিটা এই, যে কোনও ব্যবসার মতোই রাজনৈতিক পরিসরের মোট খরচেরও একটি ক্ষুদ্র অংশই সাদা টাকায় করা হয়, যা আটাতে দেওয়া নুনের পরিমাণের মতো। আসলে কেলেঙ্কারির অঙ্কটা শুধু ১৬,৫১৮কোটি টাকার নয়। এ হল রাজনৈতিক ধান্ধার একটি ক্ষুদ্র অংশ যা দুর্ঘটনাক্রমে আইনের নজরে এসে পড়েছে। আসলে পুরো অর্থের পরিমাণ লক্ষ কোটি টাকার।
নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের কতটা বিজেপির কাছে গেল তা আসল প্রশ্ন নয়। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে, বিজেপি ৮২৫০কোটি টাকার বন্ড পেয়েছে। অর্থাৎ বিজেপি একাই তত টাকা পেয়েছে যতটা অন্য সব দল একসঙ্গে মিলে পেয়েছে। এটি বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত বা দেশের বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কের অনুপাতের চেয়েও বেশি। যদি আমরা প্রতি প্রার্থীর পরিপ্রেক্ষিতে তহবিলে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ দেখি তবে বোঝা যাবে বিরোধী প্রার্থীর প্রাপ্ত তহবিলের টাকার অঙ্কের তুলনায় বিজেপির প্রত্যেক প্রার্থীর টাকার পরিমাণ বহুগুণ বেশি। যদি নির্বাচনী ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ এবং পিএম কেয়ার ফান্ড নামক প্রতারণামূলক তহবিল যোগ করি, তবে বিজেপির নির্বাচনী তহবিলে টাকার পরিমাণ সমস্ত বিরোধীদের তুলনায় বহুগুণ বেশি।
কিন্তু এও আসল প্রশ্ন নয়। প্রতিটি নিয়ম, মর্যাদাকে শিকেয় তুলে রেখে কীভাবে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে টাকা উশুল করা হলো, সেটাই আসল প্রশ্ন। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা সমস্ত সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে এই নির্বাচনী অনুদানের ব্যবস্থাকে টাকা উশুলের ধান্ধায় পরিণত করা হয়েছে। এটা এই যোজনার অপব্যবহার বলা যাবে না। সত্যিটা হল এমন কাজ করার জন্যই এই পরিকল্পনাটা করা হয়েছে। যা করতে গিয়ে সংবিধানকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। আর দেরিতে হলেও যখন সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে আঙুল তুলেছে, তখন প্রতিটি সরকারি সংস্থাই সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। এটা শুধু ব্যাপক রাজনৈতিক দুর্নীতির মামলা নয়। এটা দুর্নীতিকে বৈধ করার এবং দিনে দুপুরের ডাকাতিকে এক স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত করার মামলা। আর ঠিক এই কারণেই, নির্বাচনী বন্ড স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি।
এই ডাকাতির কিছু উদাহরণ দেখুন। ইডি ২ এপ্রিল ২০২২-এ ফিউচার গেমিং নামে একটি লটারি সংস্থায় অভিযান চালায়। পাঁচ দিন পরে, কোম্পানিটি ১০০ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কেনে। একইভাবে, ডক্টর রেড্ডি নামে একটি ফার্ম ১৩ নভেম্বর ২০২৩-এ আয়কর দপ্তর অভিযান চালায় আর ঠিক ১৭ নভেম্বর ২১ কোটি টাকার বন্ড কেনা হয়। একইভাবে, বন্ড ক্রয়কে চুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করার উদাহরণটি দেখুন। যখন সিএম রমেশ আগে টিডিপি নেতা ছিলেন, তখন ঋত্বিক প্রজেক্ট নামে তাঁর কোম্পানিতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তারপর তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন এবং ৪৫ কোটি টাকার বন্ড কেনেন। আদিত্য বিড়লা গ্রুপ ৫৩৪ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। ওই গ্রুপের গ্রাসিম নামক একটি কোম্পানি ৩৩ কোটি টাকার বন্ড নেয়। এরপর সরকার অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করে, যা ওই কোম্পানিকে প্রচুর লাভ এনে দেয়। এরপরই হিমাচলের ১০৯৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি পায় ঐ সংস্থা। একইভাবে, কেভেন্টর নামক একটি কোম্পানি বিভিন্ন নামে ৬১৭ কোটি টাকার বন্ড কিনলেও সেই কোম্পানির মোট মুনাফা ১০ কোটি টাকাও ছোঁয়নি। সেই বন্ডগুলি কোন দলকে দেওয়া হয়েছিল তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি, তবে অনুমান করা কঠিন নয় যে ওই ব্যাপক অর্থ বিজেপির কাছেই গেছে।
প্রতিদিনই এই ব্যাপক কেলেঙ্কারির নতুন দিক প্রকাশ্যে আসছে। প্রতিনিয়ত সরকার কোনও না কোনও ভাবে এ সত্যকে এড়াতে বা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সুপ্রিম কোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে মিডিয়া এই খবরকে কিছুটা জায়গা দিয়েছে, কিন্তু আন্না হাজারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ যেভাবে জনগণের সামনে ২৪ ঘণ্টা ধরে খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল এমন কিছু করার সাহস এখন কারও নেই। যে কারণে, এখনও অবধি খুব কম সংখ্যক মানুষ এই কেলেঙ্কারি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। যদি ইন্ডিয়া জোট এই কেলেঙ্কারিকে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ইস্যু করে তুলতে পারে এবং প্রতিটি মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারে, তাহলে এই নির্বাচনে এক চমৎকার ঘটনা ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অরিন | 119.224.***.*** | ২৪ মার্চ ২০২৪ ০১:৩৪529738
কোনটা মূষিক? | 2401:4900:3de3:9c11:98bd:b3ff:fec8:***:*** | ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩১529744
অরিন | 119.224.***.*** | ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৯:১০529745
বিভীষণ | 2409:40e0:17:43b6:a831:61ff:fea2:***:*** | ২৭ মার্চ ২০২৪ ২১:৫০529876
dc | 2402:e280:2141:1e8:a403:6d63:9314:***:*** | ২৭ মার্চ ২০২৪ ২২:১৪529878
স্যাটেলাইট অকশন আর বন্ড স্ক্যাম? | 2401:4900:3141:f1ad:fc41:fdff:fe13:***:*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৮:২৯529889
মূষিক প্রসব প্রসঙ্গে | 2401:4900:3141:f1ad:fc41:fdff:fe13:***:*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩৮529890
কয়টা মিডিয়া আর কীভাবে কভার করেছে? | 2401:4900:3141:f1ad:fc41:fdff:fe13:***:*** | ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৯:০৯529894
সিভিল সোসাইটির দায়িত্ব | 2409:40e0:5f:10aa:2cb9:20ff:fe6c:***:*** | ২৯ মার্চ ২০২৪ ০১:১৯529927
অরিন | 119.224.***.*** | ২৯ মার্চ ২০২৪ ০১:৩৫529928
Debu | 2603:8001:3300:691b:cd36:3331:5c52:***:*** | ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৫:৪৩529929
r2h | 165.***.*** | ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:৪২529932
অরিন | 119.224.***.*** | ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫২529935
Pk | 49.207.***.*** | ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫৮529938
dc | 2402:e280:2141:1e8:71aa:d897:1ade:***:*** | ২৯ মার্চ ২০২৪ ১০:০৭529939
dc | 2a02:26f7:d6c1:680d:0:1159:e47e:***:*** | ২৯ মার্চ ২০২৪ ১১:১৬529942
অরিন | 119.224.***.*** | ২৯ মার্চ ২০২৪ ১২:০০529945
এবারের ১০০০০ কোটি ঢুকতে চলেছিল! | 2401:4900:38c6:993a:8877:d3ff:fe3d:***:*** | ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:১৯530135
ভাল বিশ্লেষণ | 2401:4900:3de4:4c92:6873:c1ff:fe93:***:*** | ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৩৪530575