(১)
এয়ারপোর্টের বুকস্টলে দু-মিনিট দাঁড়ালেই একতাক ভর্তি হিতোপদেশের বই দেখা যাবে, টেন হ্যাবিটস অফ মারকাটারি সাকসেসফুল পিপল, অথবা দ্য ঝুঁটিকাকা হু ফেইলড হিজ ওয়ে টু দ্য টপ।
এমন-ই একটি বই 'গুড টু গ্রেট', ২০০১ সালের লেখা, জিম কলিন্স, নামকরা আমেরিকান লেখক। লেখক সেখানে প্রায় হাজার দেড়েক কোম্পানির থেকে বেছে নিয়েছেন এগারোটি সবথেকে সফল কোম্পানি, তাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গুনেগেঁথে টোটকা দিয়েছেন সাফল্যের চাবিকাঠির। বই বিকিয়েছে 'লাইক হট কচৌরিস' ... কিন্তু তবুও, তবুও এই "অ্যানালিসিস", আসলে শুধুই খুব-ই মুষ্টিমেয়ের ইতিহাস, আসলে সারশূন্য ! যে চাবিকাঠি দিয়ে একটি সাফল্যের দরজা খুলে গেছে একজনের জন্য, অন্য একশো জনের জন্য হয়তো সেই দরজার ওপারে ছিলো খাদ ... পার্থক্য এই যে সেই একশোজনের গল্প আমাদের কান অব্দি পৌঁছয়নি, আমরা শুধুই ফোকাস করেছি যাঁরা সফল হয়েছেন, ভাগ্য, চেষ্টা অথবা অন্য কোনো কারণে শেষ অব্দি পেরিয়ে এসেছেন মাঠের শেষ অব্দি ... তাও হয়তো নয়, জিম কলিন্সের সেই গ্রেট এগারোখানা কোম্পানির মধ্যে ছখানা কোম্পানি-ই ক্ষতি করেছে বেশ কিছু, গড়ের থেকে নীচে চলে গেছে তাদের লাভের অঙ্ক ...
অবশ্য এয়ারপোর্টে না গিয়ে বিখ্যাত লোকের সাক্ষাৎকার শুনলেও চলে, বাড়ি থেকে বেরোনোর হ্যাপা নেই। স্টিভ জবস-এর গল্প গোটা দুনিয়া জানে, কলেজ ড্রপ-আউট করে বন্ধুকে নিয়ে গ্যারেজে খুলে ফেললেন একটা কোম্পানি, যা একদিন হয়ে যাবে "a ding in the universe" ... জুকারবার্গের গল্প-ও কাছাকাছি, আর এই যে গল্পটা আপনি পড়ছেন, সেটাও কি সম্ভব হতো, যদি না তিনি হার্ভার্ড ছেড়ে দিয়ে নিজের নতুন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সাইট-টিকেই নিয়ে পড়ে না থাকতেন?
অথচ, আমি-আপনি দিব্যি জানি একজন স্টিভ জবসের পাশাপাশি একশোজন জবলেস (সংখ্যাটা বেশীই হবে) আছেন যাদের প্রতিভা কিচ্ছু কম ছিলো না, শুধু তারা সাফল্য পাননি, কোনো একটা কারণে যা আমাদের অধিগত নয়। একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট কোম্পানি (সম্ভাবনাময় স্টার্ট-আপ দের যাঁরা মূলধন যোগান) ক্যালকুলেট করে দেখেছেন, আমেরিকার একটি স্টার্ট-আপের গ্যারেজ থেকে শুরু করে আইপিও (অর্থাৎ ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) অব্দি পৌঁছনোর চান্স মাত্র ১৩% এর আশেপাশে।
ব্যাপারটা তো জলের মতন সহজ, তবুও ভুল তো লোকে করে, এয়ারপোর্টের বুকস্টল-ই বলুন আর কৃতী ছাত্রদের সাক্ষাৎকার, মানুষ শোনে তো মন দিয়ে সেই সব টোটকা আর ভাবে এই তো সকাল পাঁচটায় উঠে চিরতার জল খেলেই আমিও আজ ফেরারি-বেচা মঙ্ক ... ভুলটা তাহলে কোথায়?
ভুলটার নাম সার্ভাইভার বায়াস। শুধুমাত্র সফল উদাহরণগুলিই দেখলে মনে মনে যে ছবিটা আঁকা হয় সেটা সত্যিটার থেকে কয়েক পোঁচ বেশী উজ্জ্বল, ব্যর্থতার মলিনতা তাকে যে বাস্তবের মাটিতে দাঁড় করায় সেটা অস্বীকার করার মাশুল কম কিছু নয়।
বিশেষ করে সেই মাশুল যদি হয় মানুষের প্রাণ !
(২)
প্রাণের মাশুল অর্থাৎ যুদ্ধ ।
সেই গল্প করার আগে পরিচয় করিয়ে দিই, এই গল্পের সবথেকে বর্ণময় চরিত্রটির সাথে, যাঁর নাম আব্রাহাম ওয়াল্ড - রাশিবিজ্ঞানের জগতে যাঁর তূল্য প্রতিভা কজন এসেছেন হাতে গুনে বলা যায় বোধহয় ! ওয়াল্ডের জন্ম ১৯০২ সালে, তৎকালীন ট্রান্সিল্ভ্যানিয়ায়, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের শেষদিকে। ধর্মপরায়ণ একটি ইহুদি পরিবারের ছেলে ওয়াল্ড ইস্কুলের পাঠ নিয়েছিলেন বাড়িতেই বাবা-মার কাছে, তারপর সোজা কলেজের পাট চুকিয়ে ভিয়েনায় অধ্যাপনার চাকরি নেন। ব্রিলিয়ান্ট গবেষক, কিন্তু ততোদিনে অস্ট্রিয়ার ইহুদিদের উপরে শুরু হয়েছে ভয়ানক অত্যাচার, নাৎসিজমের কালো মেঘ প্রায় ঢেকে ফেলেছে ইয়ুরোপের অস্তমিত সূর্য। ওয়াল্ড ১৯৩৮ সালে চলে এলেন আমেরিকায়, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতির অধ্যাপকের চাকরি নিয়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এর পরেপরেই, ওয়াল্ড সেইসময় যোগ দেন Statistical Research Group (SRG)-তে, সামরিক কৌশলের সাথে বৈজ্ঞানিক চিন্তার সূত্র খুজঁতে।
আমেরিকান মিলিটারির প্রধান শিরঃপীড়া তখন যুদ্ধবিমানের ক্ষয়ক্ষতি। মিলিটারি কর্তারা দেখলেন যে যুদ্ধবিমানগুলো ফিরে আসতে পেরেছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে, তাদের বেশীরভাগের-ই সবথেকে বেশী বুলেটের গর্ত দুই ডানায় আর ল্যাজে, অথচ ইঞ্জিনগুলি প্রায় অক্ষত। (বুলেট হোলের ম্যাপটি খানিকটা নীচের ছবিটি দেখলে আন্দাজ পাওয়া সম্ভব।) মিলিটারি কর্তারা ভাবলেন, এর একমাত্র অর্থ দুই ডানা আর ল্যাজ-ই দুর্বল জায়গা, অতএব ওইগুলি-ই আরো শক্তপোক্ত করা উচিত।
ওয়াল্ড এইসময় লিখলেন তাঁর উপদেশ। কর্তারা যা বলেছেন, তার ঠিক উলটো - ডানা/ল্যাজের আর্মার বাড়িয়ে কাজ নেই, বরং ইঞ্জিনের আর্মার বাড়ালে উপকার হবে।
বম্বার বিমানে বুলেট-হোলের (কাল্পনিক কিন্তু বাস্তবানুগ) ম্যাপ, উইকিপিডিয়া থেকে |
ওয়াল্ড যেটা বুঝেছিলেন, আর কর্তারা বোঝেননি, সেই অদৃশ্য এফেক্টটির-ই নাম সার্ভাইভার বায়াস। ওয়াল্ড বলেছিলেন, মিলিটারি-কর্তারা শুধু সেই এয়ারক্র্যাফটগুলিই দেখছেন যেগুলি মিশন থেকে ফিরেছে প্রাণ বাঁচিয়ে, অর্থাৎ সার্ভাইভ করেছে যেগুলি । যে বোমারু বিমানগুলি গুলির আঘাতে ধ্বংস হয়েছে, অথবা হারিয়ে গেছে, সেগুলির কোনো তথ্যই পাওয়া সম্ভব নয়। আরেক ভাবে বললে, বুলেট হোলের ম্যাপ যা দেখাচ্ছে তা বিমানের দুর্বল অংশ নয়, উলটে এমন অংশ যেখানে বুলেটের ক্ষত নিয়েও ফিরে আসতে পেরেছে সেই বম্বার প্লেনগুলি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধবিমানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো অপরিসীম, ৮৮০০০ বোমারু বিমান হারিয়ে যায় বা নিখোঁজ হয় মিলিটারি ক্যাম্পেইনে গিয়ে - ওয়াল্ডের উপদেশ না মানলে সেই সংখ্যাটা কোথায় যেতো তা ভাবতেও আঁতকে উঠতে হয়।
(আব্রাহাম ওয়াল্ডের আরোও অনেক গল্প বলার আছে, সময় পেলে সেসব হবে কখনো। শুধু এই যুদ্ধকালীন গবেষণার খুঁটিনাটি নিয়েই কত গল্প করা যায়। এই অসম্ভব প্রতিভাবান বৈজ্ঞানিকের অকাল্মৃত্যু হয় মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে, ভারতে বেড়াতে এসে নীলগিরি পর্বতের কাছে বিমান দুর্ঘটনায়। মৃত্যু না হত্যা, সেই নিয়ে কিছু রহস্য এখনো রয়ে গেছে। এটাও বলে রাখা যায়, ওয়াল্ড পৃথিবীর একমাত্র বিজ্ঞানী নন যিনি রহস্যজনকভাবে বিমান দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়ে যান।)
(৩)
সার্ভাইভার বায়াসের উদাহরণ কিন্তু চারিদিকে চোখ মেললেই বিস্তর প্রাঞ্জল দেখতে পাওয়া যায়।
ওয়াল্ডের আগেই, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যেমন। ব্রডি হেলমেটের প্রচলনের পরেই দেখা যায়, যেসব সৈনিক ওই হেলমেট-টি পরে যুদ্ধে গেছিলেন, অনেকেই মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে ফিল্ড হাস্পাতালে ভর্তি। আর্মির লোকে ভেবেছিলেন নিশ্চয়ই পিথ হেলমেটের ডিজাইনেই কিছু গণ্ডগোল আছে, যতক্ষণ না একজন স্ট্যাটিশটিশিয়ান শুধরে দেন। ব্রডি হেলমেট মাথায় পরা সৈনিকরা তাও তো হাসপাতালে পৌঁছেছেন, যারা পরেননি তাদের ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে যুদ্ধের মাঠেই।
আরো অনেক অনেক আগে পিছিয়ে যাওয়া যায়। ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে পম্পেই ধ্বংস হয়ে গেছিলো ৭৯ খ্রীস্টপূর্বাব্দে। লাভাস্রোতের তলায় চাপা পড়া পম্পেই-এর ধ্বংসাবশেষ থেকে যে কঙ্কাল পাওয়া যায়, তাদের করোটি এবং দাঁতের গড়ন থেকে ঐতিহাসিকরা সিদ্ধান্ত করেন রোমান সাম্রাজ্যে সবার দাঁত নিশ্চিত খুব খারাপ ছিলো, দোর্দণ্ডপ্রতাপ রোমানদের মুখে যে দুর্গন্ধ হতো সে কথা প্রায় প্রচলিত রসিকতা হয়ে গেলো সময়ের সাথে। শেক্ষপীরের লেখায় দেখি, রাণী ক্লিওপেট্রার সবথেকে বড়ো ভয় ছিলো রোমান প্রেমিকের দন্তরুচির গন্ধ, ("in their thick breaths, / Rank of gross diet, shall we be enclouded, / And forced to drink their vapour?")। ওভিডের আর্ট অফ লভ-এও দেখি উপদেশ দিয়েছেন, একটিও দাঁত কালো থাকলে প্রেয়সীর সামনে দন্তপাটি না ক্যালানোই শ্রেয়।
বলাই বাহুল্য, আমাদের থেকে প্রাচীন রোম্যান-দের দাঁত যে একটু হলেও বেশী খারাপ ছিলো সে নিয়ে সন্দেহ নেই, কারণ হাজার হোক তাদের টুথপেস্টে নুন ছিলো না। কিন্তু ঐ যে ঐতিহাসিক-রা পম্পেই-এর করোটি দেখে ভাবলেন সবার দাঁত পচা? সেইটেও আসলে সিলেকশন বায়াস। অগ্ন্যুৎপাতে যাঁরা পালাতে পারেননি, সেই বৃদ্ধ-অশক্ত লোকের দাঁতের গড়ন দেখেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। পরের দিকে লোকে দেখেছেন, খারাপ ছিলো বটেই, তবে বয়সের তুলনায় আর পাঁচ জায়গায় যেমন ছিলো তেমনি, আলাদা কিছু নয়।
শুরু করেছিলাম ওয়াল স্ট্রীট গুরুদের টোটকা-বইয়ের কথা বলে, সেই একটি শাখায় সার্ভাইভার বায়াস এতোই প্রচলিত যে এই ২০২০ সালেও দেখছি একের পর এক সায়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্ট ভুল প্রমাণিত হচ্ছে, শুধু এই একটি গ্যাঁড়াকলের জন্য। সবটাই যে অজ্ঞতা তা নয়, যেই এক্সপেরিমেন্টেই সাবজেক্ট-রা ভলাণ্টিয়ার করেন, সে ডায়েট হোক, দৌড় হোক ... সেখানেই একরকমের সিলেকশন বায়াসের সম্ভাবনা থাকে, তবে এও ঠিক যে এইসব বায়াস থেকে বাঁচার উপায় স্ট্যাটিশটিশিয়ান-রাই বের করে গেছেন। লোকে তাদের কথা শোনে কম, সে এক অন্য কথা।
শেষ করবো দুটি কথা বলে।
প্রথমটা করোনা ভাইরাস নিয়ে মিস-ইনফর্মেশন, বিভ্রান্তি। যেখানে যতো সার্ভাইভাল রেটের ক্যালকুলেশন দেখছেন, বিশ্বাস করুন প্রায় সব-ই সত্যিকারের রেটের থেকে একটু হলেও বেশী, অর্থাৎ অপটিমিস্টিক। প্রথমতঃ, প্রচুর লোকে কোভিড টেস্ট না করেই অন্যান্য কারণে মারা যাবেন, যাচ্ছেন, ভাইরাসের ডেথ কাউন্টের হিসেবে তারা পড়েন না, পজিটিভ হোন বা না হোন। আর দ্বিতীয়টি তো শাসকরা অপব্যবহার করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন, যদি টেস্ট-ই না করা হয়, কাউন্ট বাড়বে কেমনে?
আর দ্বিতীয়টা এই যে পৃথিবীতে যেখানে যতো ভয়ানক প্রতিযোগিতার জায়গা আছে, সিনেমা বলুন, অ্যাথলেটিক্স বলুন, বা আমাদের সময়ে একটা একটু ভালো, স্বাচ্ছন্দ্যের চাকরি। শুধু যাঁরা হাতে অনির্বচনীয় হুণ্ডি পেয়েছেন, তাদের দিকে তাকালে ভুল হবে। পাশে সেইসব অজস্র উদাহরণ দেখতেই হবে যা গণনার বাইরে। নাসিম নিকোলাস তালেবের ভাষায় সেই সব অসফল মানুষ, ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা যা ঢাকা থাকে ঔজ্জ্বল্যের আড়ালে, তা-ই আমাদের 'সাইলেন্ট এভিডেন্স', 'নির্বাক প্রমাণ'?
আরো সাদামাটা ভাষায়, কবিত্ব কাটিয়ে দিয়ে বললে, সমস্ত সফল মানুষের দুটিই মাত্র কমন হ্যাবিট, এক সার্ভাইভার বায়াস, দুই ভাগ্য।
সেই বো বার্ণহ্যাম যেমন বলেছিলেন, "Taylor Swift telling you to follow your dreams is like a lottery winner telling you to liquidize your assets and buy Powerball tickets.”
অথবা জর্জ অরওয়েল যেমন বলে গেছেন আমাদের, 'keep the aspidistra flying' ! আমরা যাঁরা লিখবো লিখবো বলেও লেখক হয়ে উঠিনি কোনোদিন, হাতছানি পেয়েও সব ছেড়ে ঝাঁপ দিইনি মঞ্চের আলোর বৃত্তে। সার্ভাইভারশিপ বায়াস বুঝে গেছিলাম বড্ডো ভালো করে? হয়তো বা !
সূত্রঃ
১) Marc Mangel & Francisco J. Samaniego (1984) Abraham Wald's Work on Aircraft Survivability, Journal of the American Statistical Association, 79:386, 259-267, DOI: 10.1080/01621459.1984.10478038
২) https://www.scientificamerican.com/article/how-the-survivor-bias-distorts-reality/
৩) M., Han, L., MD, P., & Singhal, S. (2020, May 27). Major challenges remain in COVID-19 testing.
Retrieved July 27, 2020, from https://www.mckinsey.com/industries/healthcare-systems-and-services/our-insights/major-challenges-remain-in-covid-19-testing
ভালো লাগলো। ওয়াল্ডের গল্প করুন দু চাট্টে। আর অন্যদের গল্পও।
আরও শুনতে চাই। "আপনাকে তো কাল্টিভেট করতে হচ্ছে মশাই"।
কিছুই জানতাম না। সারভাইভার বায়াস নিয়ে আরও কিছু জানান ।আমার কর্ম জীবনে দুটো বিচিত্র উদাহরণ দেখেছি । একটি আমেরিকান ব্যাংকে কাজ করেছি যেখানে আপামর কর্মীকে ট্রেনিং দেয়া হত সেই সব বিষয়ে যাতে এঁদের জ্ঞান ছিল স্বল্প অথবা শূন্য । সকলকে সব বিষয়ে সমান দক্ষ করার সাধন। পরে একটি ব্রিটিশ ব্যাংকে দেখেছি ট্রেনিঙের মুখ্য উদ্দেশ্য অন্য রকম । যে যেটা জানে সেটা আরও ভালো করে শিখুক, জানুক যা জানে না সেটা শেখানর প্রয়োজন কি ? সবাইকে হরফান মউলা করা যায় না ।
মনে হল এই দুই চিন্তাধারার মধ্যে কোথাও ওই সারভাইয়ার বায়াসের যোগ আছে ।
পুঃ ওয়েলডের জন্ম কি ক্লুজ / ক্লাউসেনবেরগ ?
পুরো ইতিহাসটাই তো সারভাইভার বায়াস, তাই না? যারা জয়ী হয়েছে তাদের ইতিহাস লেখা হয়েছে, যারা হেরেছে তাদের কথা কেউ মনে রাখেনি।
" যতদিন পর্যন্ত সিংহ তার আপন ঐতিহাসিক পাচ্ছে, ততদিন শিকারের ইতিহাস লিখবে শিকারিরা " বলেছিলেন চিনুয়া আচেবে
নাইজেরিয়ান লেখক
@b - ওয়াল্ডের গল্প অবশ্যই করবো। একটা দারুণ বই পড়ছিলাম, দেবব্রত বসুর একটা স্মৃতিচারণ আছে, ওয়াল্ডের সঙ্গে প্রথম এবং শেষবার দেখা নিয়ে। অদ্ভুত সুন্দর বর্ণনা।
@Ranjan Roy-দা: এই মানবজমিন কাল্টিভেট করলে সোনাটোনা ফলবে না, দু-চারটে থানকুনি পাতা পেতে পারেন। :D
@বাইরে-দূরেঃ সার্ভাইভার বায়াস এতোই জড়িয়ে আছে আমাদের জীবনে যে অলমোস্ট অবচেতনে চলে গেছে। খুব খেয়াল না করলে চট করে ধরা মুশকিল।
আপনি যেটা বলছেন, সেটার সাথে আরেকরকমের বায়াসের যোগ আছে কি? যেটার নাম হেলদি ইউজার বায়াস - মানে ধরুন আপনি সার্ভে করছেন যে সকালে উঠে কেল চিবুলে শতায়ু হওয়া যায় কি না - কিন্তু যাঁরা ভলান্টিয়ার করলেন তাঁরা হয়তো এমনিতেই আরো পাঁচখানা জিনিষ করেন, সকালে উঠে যোগব্যায়াম, বিকেলে প্রাণায়াম এটসেটেরা। সেইরকম, যে যেচে ট্রেনিং নেবে সে হয়তো অমনি আগ্রহী লোক, সে শিখবেও তাড়াতাড়ি, যার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে - সে উলটো। ঠিক বললাম কি না জানিনা।
+ চিনুয়া আচেবে অত্যন্ত প্রিয় লেখক :)
@dc: ঠিক, ইতিহাস মাত্রেই বিজয়ীর ইতিহাস। Howard Zinn-এর একটা বই পড়েছিলাম গ্র্যাজুয়েট স্কুলে (সেই স্কুলে এই বইটা পরে ব্যান করা হয়) -- তখন পড়ে মনে হয়েছিল পুরো ইতিহাস-টাই যেন মিথ্যা, একপেশে একটা গল্প।
@বাইরে-দূরেঃ হ্যাঁ, ক্লুজ (Cluj-Napoca), উইকি করে দেখলাম।
আমার উদাহরনের সংগে আপনার উততর মিলছে না । আপনি অন্য জায়গায় চলে গেলেন । আমেরিকান ব্যাংকে বলা হত তুমি বনড কেনা বেচা করো। ভালই করো। কিনতু তুমি সেভিংস ব্যংকের কাজ জান না। সেটাও শেখ। আমরা চাই সবাই সব কিছু শিখুক । বিলিতি ব্যাংকে বলল তুমি বনডের ব্যবসা জানো দেখছি। এবার সেটা আরো ভাল করে শেখ। মানে চেনা বসতুর দক্ষতা বাড়াও। যা মোটে চেন না সেখানে গিয়ে হাতে খড়ি করা নিররথক । সেটাকে আমি সারভাইভার বায়াসের সংগে তুলনা করছিলাম।
ধন্যবাদ।
হ্যাঁ এটা আলাদা। সার্ভাইভার বায়াস কিনা একটু ভেবে দেখতে হবে। মানে আসল কথা হচ্ছে যে রেশিও-র ডিনমিনেটর-টা আসলে বড়ো, আমরা ভাবি ছোটো।
কিন্তু আপনার অভিজ্ঞতা আমার সাথে এক - আমি অল্পদিন বার্ক্লেজ ব্যাঙ্কে কাজ করেছিলাম পি-এইচ-ডি করার আগেঃ ওই যা বললেন সেইটাই দেখেছি আর কি।
ক্লুজ বা কলসভার যখন ওয়েলড জার্মান ভাষী ছিলেন নিঃসন্দেহে । কলসভারের কয়েকশ বছরের ইহুদি ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ । ১৯৪৪ অব্দি
এই লোকটাকেও নিয়ে গ্যাছে!!! আমাদের হোমি ভাবাকেও! বিমান দুর্ঘটনায় ভ্যানিশ!
মহাশয়, রহস্যজনকভাবে বিমান দুর্ঘটনায় ভ্যানিশ, এরকম বিখ্যাত বিখ্যাত লোকেদের তালিকা আর সঙ্গে এঁদের সম্পর্কে কিছু---এই জিনিসটা যদি একটা লেখায় দেন, চমৎকার একটি জিনিস পাওয়া যায়। আগাম ধন্যবাদ।
বেশ ভালো লাগলো পড়ে, মানুষের ভাবনায় বদল আনা দরকার।
চমৎকার লেখা। গুরুর পাতা তো রাজনীতির কচকচি আর হাত পাকানোর সাহিত্যে ভরপুর। তার মাঝে যুক্তি তক্কোর এমন গপপো অন্য স্বাদে মন ভরিয়ে দিল। পরবর্তীর অপেক্ষায় রইলাম।
@অ্যাম্পারস্যান্ডঃ "রহস্যজনকভাবে বিমান দুর্ঘটনায় ভ্যানিশ, এরকম বিখ্যাত বিখ্যাত লোকেদের তালিকা" - এইটা একটা ভালো আইডিয়া দিয়েছেন। ভেবে দেখবো। আমাদের ঘরে ঘরে পরিচিত নয় কিন্তু খুব-ই নাম করা বৈজ্ঞানিকরা একাধিকবার এই ভাবে মারা গেছেন। খুব রিসেন্ট ঘটনাও আছে। তবে কোনটা কন্সপিরেসি থিওরি, কোনটা নয় সে আর আমাদের মত সাধারণ মানুষ কি করে জানবে?
@রমিতঃ ভাবনায় বদল আসবে এমন দুরাশা করি না কিন্তু ওই একটু একটু করেই তো সব-ই হয়।
@অনিন্দিতাঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ - খুব সত্যি বলতে আমার-ও হাত পাকানো লেখাই আর বেশ ভয়েই ছিলাম লেখাটা পোস্ট করার আগে, তবে এতে সাহস বেড়েছে, আমি আরও এইরকমের লেখা লিখবো।
@বাইরে-দূরেঃ হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছেন। ক্যান্টর'স প্যারাডাইসেই বোধহয় (একটি ব্লগজাতীয় জিনিষ) এই বিষয়ে একখানা লেখা পড়েছিলাম কিছুদিন আগে, লিং পেলে এই সুতোতেই পোস্ট করবো।
ভালো লাগলো। প্রত্যাশাও বাড়লো ....
বাহ বাহ চমৎকার।
যদুবাবু, অন্যান্য বায়াস নিয়েও আলোচনার অপেক্ষায় আছি। যেমন ধরুন সিলেকশান বায়াস আর হিডেন ভেরিয়েবল বায়াসও ভারি ইন্টারেস্টিং আর হামেশাই দেখা যায়। আরেকটা হলো কানফার্মেশান বায়াস, যার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এগুলো নিয়ে দ্বিতীয় ভাগ লিখে ফেলার অনুরোধ করলাম।
@ শিবাংশু, দ - ধন্যবাদ :)
@dc: এরপরের কিস্তিতেই সিলেকশন বায়াস নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। তারপর কনফার্মেশন। আপনারা উৎসাহ দিলেন - খুব-ই এনথু পেলাম যা হোক। আসলে লিখতে গেলেই মনে হয় বোরিং হয়ে যাচ্ছে। এই হপ্তার মধ্যেই পরেরটা নামানোর চেষ্টা করবো।
অনেক ধন্যবাদ যদুবাবু। হ্যাঁ, শুধু বৈজ্ঞানিকই না, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী-এইরকম বহু লোকও বিমান দুর্ঘটনায় ভ্যানিশ হয়েছেন মনে হয়। এইটা নিয়ে বড় লেখা পেলে খুবই ভালো লাগবে।
না না, মোটেই বোরিং হচ্ছেনা। আমার মত অদীক্ষিত লোকও একটানা পড়েছে। নিসংকোচে লিখুন প্লীজ । অপেক্ষায় রইলাম।
অসাধারণ বিষয় এবং লেখনী। আরও জানতে চাই।
বেশ লাগলো, আরো চাই । এই সেলফ হেল্প বই-প্রীতি আর চাড্ডিপনার মধ্যে কো-রিলেশন দেখেছি । না'কি এও কোনো বায়াস আমার?
আগেও পড়েছি এটা, আবার পড়েও সেইরকমই চমৎকার লাগল। এরকম লেখা মাঝেমধ্যে দিস, তাহলে আমিও কিছু কিছু শিখতে পাই।
অরিজিৎ -- ধন্যবাদ ! চাড্ডিপনার সাথে সরাসরি কোরিলেশন আছে কি না জানিনা, তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় চাড্ডিপনার সাথে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং-এর অভাবের ভালোই সম্পর্ক আছে, আর ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং-এর অভাবেই বায়াস মাথাচাড়া দেয়। কাজেই হয়তো কিছু আছে। (সেলফ-হেল্প বই অবশ্য নন-চাড্ডিরাও পড়েন, বিশ্বাস করেই পড়েন, তবে তর-তম থাকবে।)
মাল্লো -- হ্যাঁ, এই সিরিজে কয়েকটা লেখা লিখবো। তেমন ভালো হবে না জেনেই লিখবো। একটা অ্যালগোরিদমিক বায়াস নিয়েও লেখার ইচ্ছে আছে। ঐটা একটা জিনিষ যেটা খুব বেশী আলোচনা হয়নি বাংলায়, বা হলেও আমার চোখে পড়েনি।
'যদুবাবু'-চিত লেখা। মাইরি, মাঝেমধ্যে ভাবলে অবাক লাগে, তোর রুমমেট ছিলুম।
লেখাটা আগের চেয়েও ভালো লাগছে।
আরে অনি, ধুর কী সব ! এখানে এসে পড়ে আবার কমেন্ট করলি বলে থেঙ্কু তো দেবো না, তবে আমি একটা টান কম দেবো কাউণ্টারে। :D
দেখি কদ্দূর যায় বলটা গড়াতে গড়াতে।
লেখাটি প্রকাশের সাথে সাথেই পড়েছিলাম - খুবই ভালো লেগেছিল আগে বলা হয় নি। এমন লেখা বাংলায় আরো বেশী করে দরকার। আমি গণিতজ্ঞ নই বলে এই নিয়ে লেখার সাহস হয় না ঠিক - তাই যেগুলো পারি এমনভাবে বাঙলায় লেখার চেষ্টা করছি ইদানিং।
তবে একটা ব্যাপারে দ্বিমত - আপনি লিখেছেন ভুলটা তাহলে কোথায়? ভুলটার নাম সার্ভাইভার বায়াস।
আপনি যেই উদাহরণগুলো দিয়েছেন সেগুলো কি ঠিক ভুল বলা যায়? মানে ধরুণ ওই স্টিভ জোবসের উদাহরণটা। সার্ভাইভার বায়াস আছে অনেকটা তো বটেই, কিন্তু এর বাইরের অনেক কিছুর প্রভাবও আছে। আছে মানুষের সাইকোলজি-র অনেক এফেক্ট
@সুকিঃ অজস্র ধন্যবাদ !! আমার লেখাটা নবিশী কিন্তু এই কথাটা ১০০% একমত যে এই চর্চাটা দরকার। আপনার লেখাগুলো খুঁজে খুঁজে পড়বো - আর যদি দু-একটা লিংক নীচে দিয়ে দেন তাহলে খুব-ই ভালো লাগবে। আমি আসলে গুরুর সাইটে একটু দিশেহারা হয়ে থাকি, যদিও বহুবছর লার্ক করছি।
আর ঠিক-ই বলেছেন। 'বায়াস' কে ভুল বলা যায় কি না এ নিয়ে ভাবা উচিত ছিলো আরেকটু। বায়াস-এর সরাসরি বঙ্গানুবাদ করলে বোধহয় পক্ষপাতিত্ব বা প্রবণতা - এইরকম কিছু হবে,এখানে যেমন সার্ভাইভার-দের দিকে পাল্লা ঝুঁকে যাচ্ছে সমান না থেকে। যুদ্ধজাহাজের উদাহরণে যেমন 'ভুল' বলা যায়, কিন্তু "সাফল্যের চাবিকাঠি"-টা সেই এক-ই অর্থে 'ভুল' নয়।
আর সাইকোলজি-র প্রভাব তো বটেই - অনেক রকমের বায়াসের কথা তো আমরা জেনেইছি বিহেভিয়রাল সায়েন্টিস্ট-দের মৌলিক ভাবনাচিন্তার ফলে। এই ধরণের বায়াস যেজন্যেই আমার অমনিপ্রেজেন্ট মনে হয়।
খুব সুন্দর