সেই দিন সেই মন - পর্ব দুই : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২২ মার্চ ২০২৫ | ১০৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
নদীর নাম ইছামতী। খুব বড় নদী নয়, খুব ছোটোও নয়; এপার ওপার দুপারই পরিষ্কার দেখা যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে এই শান্ত নদী মাতাল হয়ে উঠে। কালবৈশাখী ঝড়ে এর রূদ্র রূপ চমক লাগায়। বর্ষায় এ হয়ে উঠে ভয়ংকর – পাড়ের জমি ভেঙ্গে পড়ে নদীর বুকে, গাছপালা বাড়ী ঘর কারো রেহাই নেই। বসিরহাটে আমাদের বাড়ী ছিল এই নদীর ধারে। ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের বাড়ীর সামনে বেশ বড় একটা বাগান, গাছ পালা ভর্তি। সেই বাগানে আমরা খেলাধুলা করতাম। বাগানের শেষে নদীর পাড়। প্রতি বছরই ইছামতী এই বাগানের ভাগ নিত একটু একটু করে। প্রতি বর্ষায় নদীর পাড় ভাঙত; ইছামতী গ্রাস করত জমি। নদীর ধারে একটা বকুল গাছ ছিল। গ্রীষ্ম কালে প্রচণ্ড গরমে গুমোট ঘরে থাকা যেত না; পড়ায় মন বসত না। সন্ধ্যাবেলা এই বকুল গাছের নীচে মাদুর বিছিয়ে হারিকেনের আলোতে পড়শুনা করতাম। নদীর ধারে মৃদু হাওয়া শরীর জুড়িয়ে দিত --- কি অভাবনীয় প্রশান্তি! একদিন সকালে উঠে দেখি সেই বকুল গাছটার শিকড় উপড়ে গেছে; পদচ্যুত বৃক্ষ মুখ থুবড়ে ইছামতীর জলে পড়ে আছে। মনটা আমার খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল সেদিন। পরে সরকার নদীর পাড় বাঁধাবার কাজে উদ্যোগী হয়েছিল। ইছামতী করুণা করে আমদের বাড়ী গ্রাস করে নি; কিন্তু মানুষ করেছিল। মানুষের হাত থেকে আমরা রেহাই পাই নি।
সেই দিন সেই মন - পর্ব তিন : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৯ মার্চ ২০২৫ | ৯০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ভারতবর্ষ তখন স্বাধীন। একদিন বিকাল বেলা গোলাগুলির শব্দ শুনে আমরা অনেকে রাস্তায় বেরিয়ে এলাম। দেখি কয়েকটা গাড়ী এক সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এতদিন পরে স্পস্ট মনে পড়ছে না, তবে আবছা মনে হছে দেখেছিলাম একটা পতাকা, তাতে লেখা ছিল – আর সি পি আই (R C P I – Revolutionary Communist Party of India)। গাড়ী গুলো ভর্তি মানুষ। সকলের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, রাইফেল বা রিভলবার। সব বাড়ি থেকে লোক বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়, তাই একটা ছোটখাট ভীড়। আমাদের দেখে একটা গাড়ি থেকে এক যুবক নামল – হাতে রাইফেল। আমাদের সামনে এগিয়ে এসে উঁচু স্বরে বলল – আপনারা সকলে বাড়ির ভিতরে চলে যান। আপনাদের কোন ভয় নেই।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম সেই যুবক আমাদের তারাপদদা। গাড়ি গুলো কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হল। পরে শুনেছিলাম এরা বসিরহটের কোর্ট কাছারি ট্রেজারী থানা দখল করে বন্দুক গোলা গুলি হস্তগত করে, বসিরহাটকে স্বাধীন ঘোষনা করে এগিয়ে গেছে। কলকাতা যাওয়ার পথে প্রায় পয়ত্রিশ মাইল দূরে ডানলপ ফ্যাক্টরি অধিকার করে ও সেখানকার এক স্বেতাংগ ফোরম্যানকে জ্বলন্ত ফারনেসের মধ্যে ফেলে দেয়। এ ঘটনা সেসময় দেশে খুব উত্তেজনার সৃস্টি করে। বলা বাহুল্য, অচিরেই এই উত্থানকে দমন করে তারাপদদা সহ সব বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার করে সরকার। এদের নেতা পান্নালাল দাসগুপ্ত অবশ্য পলাতক হন এবং প্রায় দুবছর আত্মগোপন করে ছিলেন। সরকারের গোয়েন্দারা কিন্তু বসিরহাটের ক্লাব আর যুবকদের উপর সর্বদা নজর রেখেছিল। আমি যখন কলকাতায় স্কটিশচার্চ কলেজের ছাত্র তখন কেন যেন আমার মনে হত কেউ যেন আমায় চোখে চোখে রেখেছে।
সেই দিন সেই মন - পর্ব চার : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৫ এপ্রিল ২০২৫ | ১১৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এই মরুভূমিতে হালদার আমার মরুদ্যান। সময় পেলে ওর সঙ্গে বসে রবীন্দ্র সঙ্গীত ও রবীন্দ্রচর্চা করতাম। … কোনো মানুষকে আমি অশ্রদ্ধা করিনা। বরং আমি জানি তথাকথিত উপরতলার মানুষগুলোর থেকে এদের মধ্যে মনুষ্যত্বের অংশ বেশী। এই মানুষগুলো স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই কৃতি ও দক্ষ। এরা মুখ্যতঃ টাকা আর মেশিন ছাড়া আর কিছু জানে না। এদের কাছে পৃথিবীর অন্য কিছুর অস্তিত্ব সপ্রমাণ করতে গেলে এরা বাঁকা হাসি হেসে এমন ভাবে তাকায় যেন মনে হয় আমি একটা নির্বোধ, এখনো সার বস্তু জানতে পারিনি বলে কৃপার যোগ্য। বুঝি পৃথিবী জুড়ে এই দারুন অর্থনৈতিক বৈষম্যের যুগে শিক্ষা, রুচি,সংস্কৃতি --- এগুলো শুধু কথার কথা, প্রহসনের নামান্তর। কিন্তু তবুও আমি বুঝতে পারছি না। প্রতি মুহূর্তে আমি চেষ্টা করছি এই অমিলটাকে মানিয়ে নিতে আর প্রতি মুহূর্তেই হারছি। ভয় হচ্ছে ক্রমশঃ এই হারটা আমার চরিত্রের উপর একটা কুৎসিত স্ফোটক হয়ে দেখা দেবে। হয়ত সিনিক হয়ে যাব, মানুষের উপর শ্রদ্ধা ভালবাসা হারাব, নির্লজ্জ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে সুরুচি সবকিছু বর্জন করব। হয়ত এমন কিছু হব যা এখন অকল্পনীয় তখন অনিবার্য।
সেই দিন সেই মন - পর্ব পাঁচ : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ৭৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
চাকুরীর সন্ধানে আসানসোলে গিয়েছিলাম। তখন আলাপ হল। এই পাঁচ বছরে সম্বন্ধটা আরো গভীর হয়েছে, সহজ হয়েছে। অনেকদিন থেকে ভেবেছি ওর কথা লিখে রাখবো। কেননা আমার জীবনের অনেকখানি, বিশেষ করে চরমতম ট্রাজেডি ও হতাশার সেই দিনগুলোতে ও আমাকে জুগিয়েছে অনেক কিছু --- সাহসের মতো দুর্লভ কিছু, সাহচর্যের মতো ভরাট কিছু এবং অত্যন্ত স্থুল কিন্তু সেকালে নিতান্ত প্রয়োজনীয় যা সেই-- অভাবে অর্থ সাহায্য। লিখবো লিখবো করেও লেখা হয়নি। প্রত্যেকবার ভেবেছি ধীরে সুস্থে, প্রচুর সময় নিয়ে খুঁটিনাটি সবকিছু লিখে রাখবো। শুধু ঘটনা নয় আমার মানসিক চিন্তার সব আলোড়ন, স্থিতি এবং টানাপড়েন। কিন্তু লেখা হয়ে ওঠেনি। যেহেতু সেই সুস্থতা ও সময় কখনো পাইনি। আজও লেখা হবে না সবটুকু। তবু সূচনাটুকু লিখে রাখি, কি জানি আর যদি কখনো সময় না পাই, তবে হয়তো লেখাই হবে না কোনদিন। অন্তত এই মুখবন্ধ টুকুই আমাদের পরিচয়ের অভিজ্ঞান হয়ে থাকবে, ভবিষ্যতে যদি কখনো লেখা নাই হয় আর।
সেই দিন সেই মন পর্ব ৮ : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১৭ মে ২০২৫ | ৮২৫ বার পঠিত
সেটা বোধ হয় ১৯৫৮ সাল। ঠিক মনে নেই, দু এক বছর এদিক ওদিক হতে পারে। মহম্মদ আলি পার্কে বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের বিরাট আয়োজন। বোধহয় তৃতীয় দিন। সে দিন এক দুর্ঘটনা ঘটল। সারা প্যান্ডেল আগুনের গ্রাসে ধুলিসাৎ হয়ে গেল। কর্মকর্তাদের মাথায় হাত। আবার নতুন করে সাজাতে হবে সব- প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন। একটা আকর্ষণীয় কিছু করা দরকার যা সেই সময় অভাবনীয় এবং অর্থাগমের উপায় হবে। ওঁরা শিশির ভাদুড়ীর দ্বারস্থ হলেন। ভাদুড়ী মহাশয় তখন বৃদ্ধ- অভিনয় প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন, স্টেজে নামেননি অনেক কাল। ওঁদের অনুরোধে রাজী হলেন। কাগজে খবরটা দেখে আমি উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম। শিশিরবাবুর কথা এত পড়েছি এত নাম শুনেছি। নিউ ইয়র্কে সীতা নাটক করে সাড়া ফেলেছিলেন। কিন্তু ওঁর অভিনয় কখনো দেখিনি। নিজের চোখে শিশির বাবুকে দেখব, নিজের কানে শিশির বাবুর কন্ঠস্বর শুনব সে তো ভাবতেই পারিনি। এমন লোভ সামলাতে পারলাম না।
সেই দিন সেই মন পর্ব ৯ : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৪ মে ২০২৫ | ৭১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ইতিমধ্যে ভারতীয়করণের ফলে বিদেশি কোম্পানিগুলোর পরিচালনা ভারতীয়দের হাতে চলে আসে। (এ বিষয়ে আমি অন্যত্র বিস্তারিত আলোচনা করেছি)। সেদিনের বাংলায় বড় বড় বিদেশি কোম্পানিদের মধ্যে ছিল জেসপ, ডানলপ, জি কে এন, ব্রেথওয়েট, বার্ড এন্ড কো প্রমুখ সংস্থাগুলি। নানা কারণে সেই সময়ে টিটাগড় ও বাংলার জুটমিলগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ভারতীয় শিল্পপতিরা সেগুলো কিনে নিচ্ছিল। সেই জুটমিলগুলো রূপান্তরিত হয়ে অন্য পণ্য উৎপাদন করতে শুরু করেছিল। এইরকম একটা রূপান্তরিত জুটমিলের নতুন মালিকেরা এক ইংরেজ কোম্পানির কোলাবোরেশনে সেখানে স্প্রিং ও নানা রকম ওজনের যন্ত্র নির্মাণ শুরু করল। সে কোম্পানি জর্জ সল্টার। এই কোম্পানির এক গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করতাম আমি। আমি তাই খুব কাছ থেকে অনেক কিছু দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।
সেই দিন সেই মন পর্ব ১০ : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ৩১ মে ২০২৫ | ৫৯৩ বার পঠিত
নতুন দেশ, নতুন জীবন। আবার সব প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। জীবন ধারণের জন্য অর্থ উপার্জন, আকাঙ্ক্ষার রূপায়ণ, মা-ভাই-বোনদের সংসারের চিন্তা -আমার সমস্ত সময় ও শক্তি লুটে নিয়েছিল। দেশের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে গেল। তবু মাঝে মাঝে দু-একজনের চিঠি পেতাম। আর দেশে গেলে দেখা হতো। শুধু দীপু একমাত্র ব্যতিক্রম। চিঠি, টেলিফোন ও নিয়মিত সাক্ষাৎকার মিলিয়ে আমাদের হৃদ্যতা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে থাকল যা জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসেও অটুট আছে। দীপুকে প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। দেশ ছাড়ার পর দেশে যাইনি অনেক বছর। ও কেমন আছে, কী করছে কিছু ভালো করে জানতাম না। কফি হাউসের সেই অনার্সের বই বিক্রি করার ঘটনার পর দীপুর বিষয়ে কোনো সঠিক ধারণা ছিল না। কিছুদিন পরে শুনেছিলাম দীপু বাচ্চুকে (রীণা) বিয়ে করেছে।
সেই দিন সেই মন পর্ব ১১ : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ০৭ জুন ২০২৫ | ৪৬১ বার পঠিত
বিদেশ যাত্রার প্রস্তুতি সারা হল। বেশি জিনিসপত্র নেওয়ার ইচ্ছা নেই – আমার কিছু নেইও। দু-একটা শীতের জামাকাপড় আর আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। একটা বড় স্টিলের ট্রাঙ্ক আর আমার বন্ধুদের দেওয়া সেই স্যুটকেস। অনু বলল ওর হারমোনিয়াম আর তানপুরাও নিতে হবে। বুবাই তখন একেবারে শিশু। বললাম, এত সব আমি সামলাব কী করে? অনু বলল, তানপুরা আর হারমোনিয়াম না নিয়ে গেলে ও-ও যাবে না। বুঝলাম হারমোনিয়াম-তানপুরা ছাড়া ও স্বর্গে যেতেও রাজি নয়। সুতরাং একরাশি গানের খাতা, বই আর তানপুরা, হারমোনিয়ামও আমাদের সঙ্গী হল।
সেই দিন সেই মন পর্ব ১২ : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ১৪ জুন ২০২৫ | ৪৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
একদিন সন্ধ্যায় আমার শ্বশুর মহাশয়ের মৃত্যুর খবর এল। অনু কান্নাকাটি করছে, আমার মনটাও ভারাক্রান্ত। পর দিন সকালে অফিসে গেছি– মুখে একটা বিষাদের ছায়া আছে যা লুকানো যায় না। মিস্টার ফ্রেন্ড প্রতিদিন সকালে সকলকে “গুড মর্নিং” করেন, সেদিনও করলেন। আমার ডেস্কের কাছে এসে একটু দাঁড়িয়ে বললেন, “কী হয়েছে তোমার? মুখটা এত শুকনো কেন?” আমি বললাম কী হয়েছে। তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন, তারপরে দুঃখ প্রকাশ করে চলে গেলেন। লাঞ্চের পর তিনি আবার এলেন আমার কাছে। বললেন, তিনি আমার স্ত্রী ও দুই পুত্রের জন্য তিনটি টিকিটের ব্যবস্থা করেছেন, কলকাতা যাওয়ার জন্য। বলা বাহুল্য এর জন্য আমায় কোনো মূল্য দিতে হবে না। সে যুগে সদ্য-আসা আমার মতো কোনো বঙ্গসন্তানের তিনটি টিকিট কেনার মতো সামর্থ্য থাকত না। খবরটা শুনে আমার চোখে প্রায় জল আসে। কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাবো তা ভেবে পেলাম না। ভারি গলায় শুধু বললাম, “থ্যাঙ্ক ইউ, মিস্টার ফ্রেন্ড।” আশ্চর্য মানুষ! নতুন কাজে আমার তখনও ছ’মাস হয়নি সুতরাং আমার কোনো ছুটি নেই। অনুকে তাই দুটি ছেলেকে নিয়ে একাই যেতে হবে।
সেই দিন সেই মন - পর্ব ১৩ : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২১ জুন ২০২৫ | ২২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
তখনো আই সি এল পুরোপুরি ভারতীয়করণ হয়নি। আই সি এল-স্বার্থ লন্ডনের হেড অফিসই দেখাশুনা করত। ভারতীয়করণের পর একদিন ভারতবর্ষের আই সি এল স্বাধীন হল। ম্যানেজমেন্ট সব ভারতীয়, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এক পার্সী ইঞ্জিনীয়ার, প্রেম শিবদাসানী। কিন্তু লন্ডন আই সি এল তখনও ভারতীয় ব্যবসায়ের বড় অংশীদার এবং ভারতীয় আই সি এল দেখাশুনা করে। লন্ডনে আই সি এল-র ইন্ডিয়া অফিসের ডাইরেক্টর মিঃ জ্যাকসন। ইন্ডিয়া অফিস বা ইন্ডিয়া ট্রেডিং-র ম্যানেজার অমলেন্দু বিশ্বাস, আমি। এই পদের ক্ষমতা বেশি ছিল না কিন্তু মর্যাদা ছিল অনেক। সেই সঙ্গে ছিল অনেক দায়িত্ব ও কাজ। দুই দেশের ব্যবসায়িক আদান প্রদান এই অফিস তথা আমার মাধ্যমেই হত।
সেই দিন সেই মন পর্ব ১৪ : অমলেন্দু বিশ্বাস
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্মৃতিকথা | ২৮ জুন ২০২৫ | ১২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
কথাবার্তা শুরু হল। বেশীরভাগই কম্পিউটার বিষয়ক, উন্নয়ন ও পরিবর্তনের গতি, ভবিষ্যতে কি হবে বা হতে পারে ইত্যাদি। প্রফেসর অত্যন্ত ভদ্রলোক, সদালাপী, কথা বলতে ভালোবাসেন। ড্রিঙ্ক ও স্ন্যাক্সের সঙ্গে গল্প কথায় মশগুল হয়ে গিয়েছিলাম। সব মিলে বেশ ভালো লাগছিলো, নরম পরিবেশ, শিথিল চিন্তাহীন মস্তিষ্ক।
হালকা আমেজে ভরেছে মন।
“শ্যাল আই গেট ইয়ু এনাদার ড্রিঙ্ক।“
গ্লাসের উপর হাত রেখে বললাম, আর না, এবার উঠব। আচমকা হঠাৎ প্রোফেসর কালিজুরি জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা খাম বার করে আমার হাতে দিল। এতক্ষণ পরে কাজের কথা, বুঝলাম কি উদ্দেশ্যে এই মিটিং।
বলল, “দেখো, তুমি যা যা চেয়েছিলে তা সব আছে এখানে। সই করে দাও।”
আমি অবাক। কন্ট্রাক্ট পড়ে দেখি, সত্যি তাই। একটু চিন্তা করে বললাম, “আমি আমার ওয়াইফ-র সঙ্গে কথা না বলে সই করতে পারব না।"
প্রফেসর বলল, “আর সময় নেই, কাল ভোরেই আমি চলে যাচ্ছি। এখন সই না করলে আর হবে না।” প্রফেসর নাছোড়বান্দা।