বিশ্বাসের সওদাঃ সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে ভাঙিয়ে এমন কত যে প্রতারক বণিক বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়ে যাচ্ছেন, তার হিসাব কেউ জানতেও পারেন না। বিশ্বাসে বিকিয়ে যায় কত যে মিথ্যা! দূরদর্শনে বা সংবাদ মাধ্যমে, ভালো অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা বলেন বিখ্যাত তারকা মানুষরা। তাঁদের কথায় সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন, “ধনাগম যন্ত্র” কিনে ঘরে রাখলেই প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা ঝরে পড়ে, “নজর-রক্ষা” কবচ পরলেই শত্রুর কুনজর এড়িয়ে ব্যবসা এবং চাকরিতে অবারিত সাফল্য মেলে। বিখ্যাত বহুজাতিক সংস্থার স্বাস্থ্যপানীয় – যার কথা আগেই বলেছি - বেড়ে ওঠা বাচ্চারা এই পানীয় রোজ পান করলেই সুপুরুষ ও সুনারী, স্বাস্থ্যবহুল এবং তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী হবে। কিছু কিছু শীতল পানীয় আছে, যা পান করলেই “নায়ক” হয়ে ওঠা যায়।
এই “বিশ্বাস” বিষয়টাই খুব গোলমেলে। আজকের অধিকাংশ মানুষই রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের গল্প-গাছায় বিশ্বাস করেন না। তাঁরা বলেন এখন বিজ্ঞানের যুগ, ওসব বুজরুকি-ভাঁওতার কথা আর মানবো না। নিঃসন্দেহে খুবই যুক্তিযুক্ত কথা। কিন্তু এই বিজ্ঞানমনস্ক মানুষরাই বাণিজ্যিক সিনেমা ও সিরিয়ালের ভাঁওতায় গভীর বিশ্বাস রাখেন। ওই সব সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের সুপারহিট সিনেমাগুলিও যে সুপার ভাঁওতা সেটা ভুলে যান। নায়কদের চলন-বলন-হাসি-কান্না-প্রেম-লড়াই সবটাই যে সাজানো – কেউ গল্প লেখেন, কেউ চিত্রনাট্য করেন, কেউ নকল মারামারি বানান, অন্য কেউ গান করেন। চোখের আড়ালে থাকা কিছু মানুষের নির্দেশ মতো– নায়ক-নায়িকারা শুধু চোখের সামনে নাচানাচি করেন। পুরাণের কাহিনীতে বিশ্বাস না করলেও, বহু মানুষ আধুনিক এই পুরাণ কাহিনীতে দিব্যি মুগ্ধ হয়ে রয়েছেন। সেই সুযোগে সাজিয়ে তোলা নায়ক-নায়িকাদের পণ্য করে বিশাল বাণিজ্য করে চলেছে চলচ্চিত্র শিল্প। প্রতিষ্ঠিত নায়কদের এই বাণিজ্যে হাত পড়লে, আজকাল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিশ্রুতিবান নবীন নায়ক-নায়িকাদের হত্যাও করা হচ্ছে, বলে শোনা যায়।
পুরাণকারেরা অলীক কাহিনী দিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষদের মজিয়েছিলেন। আজকের চলচ্চিত্র পুরাণকারেরাও আমাদের বিনোদনের মোড়কে মজিয়ে রাখছেন, সত্যের জয় ও অন্যায়ের বিনাশ নামক সেই একই অলীক কাহিনী দিয়ে। গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপে বসে রামলীলা শোনা বড্ডো গ্রাম্য ব্যাপার, কিন্তু এসি সিনেমা হলে উদ্ভট চলচ্চিত্রে মজে থাকাটা অত্যন্ত আধুনিকতা বৈকি!
আতঙ্কে বিশ্বাসআজকাল সারা বিশ্বেই বিশেষ কিছু গোষ্ঠীর মানুষ, ধর্মের নামে আতঙ্কেই বিশ্বাস রেখেছেন। তাঁদের আতঙ্কবাদী বলা হয়ে থাকে। এই আতঙ্কবাদীরা ভারতবর্ষেও তাঁদের ক্ষমতা দেখিয়ে চলেছেন বারবার। জনবহুল এলাকায় বহু সাধারণ মানুষকে হত্যা করে এঁরা ধর্মের সাধনা করে থাকেন। এই আতঙ্কবাদী বিশ্বাসও বেজায় ছোঁয়াচে – আজকাল হিন্দুধর্মের বেশ কিছু কট্টরপন্থীও আতঙ্কবাদী হয়ে উঠে পালটা আঘাতে বিশ্বাস রাখছেন।
অতএব, আধুনিক যুগে “বিশ্বাস” শব্দটির তাৎপর্যই বদলে গিয়েছে এবং যাচ্ছে। একদিকে আমরা কাউকেই বিশ্বাস করছি না। না ঈশ্বরকে, না কোন দেবদেবীকে। না পরিজন, বন্ধুবান্ধব, নেতা-নেত্রীদেরকে। না নিজেকে বিশ্বাস করে হয়ে উঠতে পারছি আত্মবিশ্বাসী। অন্যদিকে সব ধর্মের মানুষের মনে বেড়ে উঠছে “ধর্মবিশ্বাস”-এর নেশা। তাঁরা নেশাগ্রস্ত অপ্রকৃতিস্থ মানুষের মতোই – হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য, অপরিণামদর্শী, বিবেকহীন – তাঁদের হাতেই এই দেশ, এই বিশ্বজুড়ে একের পর এক ঘটে চলেছে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ-গণধর্ষণ।
৫.৮.৭ আধুনিক ভোগসাধন ও ভোগসিদ্ধিহিন্দু ধর্মের চতুর্বর্গ- ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষকে, আধুনিক যুগের চতুর মানুষেরা আবার ত্রিবর্গে নামিয়ে এনেছেন - ধর্ম, অর্থ আর কাম। এই গ্রন্থের প্রাককথায় “ধর্ম” শব্দের একটি ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলেছিলাম, ধন পূর্বক ঋ ধাতুতে মক্ প্রত্যয় দিলে ধর্ম হয়। এই অর্থে ধরলে ধর্ম মানে যা থেকে ধন লাভ ঘটে। এই ধন পার্থিব টাকা-পয়সা, জমি-জায়গা হতে পারে, আবার অপার্থিব আধ্যাত্মিক চৈতন্যও হতে পারে। অর্থাৎ “ধর্ম” ও “অর্থ” এখন সমার্থক, আর “কাম” শব্দের অর্থ সব ধরনের কামনা বা লালসা, তার মধ্যে আছে যৌন-কামনাও (sex)।
সাধারণ মানুষ যতদিন পর্যন্ত নিশ্চিন্ত ভোগের উচ্চস্তরে ঢুকতে না পারছেন, ততদিনই তাঁদের দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ। ততদিন এগারো বা একুশ টাকার দক্ষিণা আর পঁচিশটাকার ডালা সাজিয়ে, মন্দিরে দেব-দেবীদের পায়ে মাথা ঠোকাঠুকি, দেব-দেবীদের অনুগ্রহ ভিক্ষা। নয়তো রত্ন, ধাতু বা শিকড় ধারণ। যোগসাধনার উচ্চ পর্যায়ে মুনি ঋষিরা যেমন সিদ্ধযোগী হয়ে উঠতেন, তেমনই একবার যিনি ভোগসাধনের উচ্চস্তরে পৌঁছে যান, তিনিই সিদ্ধভোগী।
সিদ্ধভোগীরা মন্দিরের দেব-দেবীদেরকেই অনুগ্রহ করেন। দেব-দেবীকে সোনার অলংকারে - মুকুট, কণ্ঠহার, জিভ এবং নানান অঙ্গ-ভূষণে ভূষিত করেন। তাঁরা ভিআইপি, তাঁদের জন্যে মন্দিরের দ্বার অবারিত। স্বয়ং প্রধান পুরোহিত কৃতার্থ হাসিতে তাঁদের অভ্যর্থনা করে, দেব-দেবীর মূর্তির চরণ স্পর্শ করান অর্থাৎ direct contact করিয়ে দেন। সপরিবারে, সবান্ধবে এবং সপারিষদে সিদ্ধভোগী দেব-দেবীকে ইচ্ছামতো দর্শন করেন, দর্শন দেন। অন্যদিকে বদ্ধ খাঁচায় বন্দী কয়েকশ’ বা কয়েক হাজার দর্শনার্থী, তখন দেব বা দেবী দর্শনের অপেক্ষায় ধৈর্যের পরীক্ষা দেন। যদিও তাঁদের মনেও একদিন ওই রকমই আরেক “সিদ্ধভোগী” হয়ে ওঠার প্রবল বাসনা। সেই কামনা নিয়েই তাঁরা মন্দিরে এসেছেন। যে মন্দিরে যত বেশি সিদ্ধভোগী পদধূলি দেন, সেই মন্দিরের দেব-দেবী ততই জাগ্রত হন। সেই মন্দিরের মহিমা বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে দর্শনার্থী সংখ্যা। মন্দিরের দানপাত্র ভরে ওঠে।
সুখ-দুঃখ, শীত-গ্রীষ্ম, শোক-আনন্দ, স্বাচ্ছল্য-দারিদ্র্য সব কিছুতেই সিদ্ধযোগীগণ উদাসীন, নির্বিকার এবং সমদর্শী হতেন। আমাদের যুগে সিদ্ধভোগীরাও একই রকম সমদর্শী ও উদাসীন থাকেন। মামলা-মোকদ্দমা, সিবিআই, ইডি, সিআইডি তদন্তে তাঁরা অনুদ্বিগ্ন। তাঁরা জানেন নিম্নতম আদালত থেকে উচ্চতম আদালতের সুদীর্ঘ যাত্রাপথে বিছানো আছে যে জটিল আইনের বিস্তৃত জাল, তাতে আছে বিস্তর ফাঁক-ফোকর। সেই ফাঁক গলে অনায়াসেই নিষ্কলুষ হয়ে বেরিয়ে আসা যায়। আসলে তাঁরাও “পরমহংস”-এর মতোই, কদর্য পঙ্কিল পথেই তাঁদের সাধনা, কিন্তু তাঁদের শুভ্র বসনে কোন দাগ ধরে না।
আমরা সকলেই জানি, মন্দিরের পুরোহিত এবং ওই সিদ্ধভোগীরাও জানেন, ঈশ্বর অনন্ত ঐশ্বর্যবান। এই চরাচর বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড তাঁরই ঐশ্বর্য। তিনি ওই তুচ্ছ অলংকার, অর্থ বা নৈবেদ্য কোনদিনই গ্রহণ করেন না। তিনি নির্বিকার - এই সব দানে তাঁর কিছুই এসে যায় না। কিন্তু যিনি দান করেন তিনি আরো বেশি ভিআইপি হয়ে ওঠেন, তাঁর যশের সৌরভে মন্দিরের পুরোহিত মহল সুরভিত হয়। শোনা যায় ভারতবর্ষের বেশ কিছু মন্দির বিপুল বৈভবের অধিকারী, একত্র করলে নাকি ভারতীয় রাজকোষকেও টেক্কা দিতে পারে! অথচ আমাদের গ্রাম, শহর ও নগরের বহু মানুষের জন্যে নব বর্ণাশ্রমের প্রচলন করতে হয়েছে রেশন-কার্ড দিয়ে,
১. দারিদ্র সীমার ওপরে (Above Poverty Line, APL) – বার্ষিক আয়ের হিসেব অনুযায়ী এই কার্ডের অনেকগুলি স্তর আছে, তাদের রঙ সাধারণতঃ সাদা, নীল, পিংক বা লাল।
২. দারিদ্র সীমার নিচে (Below Poverty Line, BPL) – এর রং হলুদ।
৩. অন্তোদয় (Antyodaya, AAY – the poorest of the poor people) – এর বর্ণ সবুজ।
অতএব আমাদের এখনকার একমাত্র পথ আর ভক্তিপথ নয়, যোগপথ নয় বরং ভোগপথ। যেভাবে হোক, ভোগের সাধনায় সিদ্ধভোগী হয়ে উঠতে হবে। এই সাধনা নির্জন অরণ্য, শ্মশান, নদীতীরে করা যায় না। এই সাধনার প্রশস্ত পীঠ হল, জনবহুল গ্রাম, শহর, মহানগর। প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, সহযাত্রী সক্কলকেই প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে হবে, ভাবতে হবে তারা সকলেই সম্ভাব্য প্রতিযোগী। ধাক্কা দিয়ে, ঠেলে সরিয়ে - দু-দশজন চোট বা আঘাত পায় পাক, দু-একজন হতাশায় আত্মহননের পথে যায় যাক – একনিষ্ঠ সাধনায় দৌড়ে চলতে হবে সিদ্ধির পথে। যোগ সাধনার প্রাথমিক শর্ত ছিল ষড়রিপুর ত্যাগ বা দমন, এখন তারও কোন প্রয়োজন নেই। বরং ত্যাগ করতে হবে ষড়গুণ - নীতি, সত্য, বিবেক, দয়া, মায়া, বিশ্বাস। সিদ্ধিলাভ করে একবার সিদ্ধভোগী হতে পারলে, চোখের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায় অনন্ত ঐশ্বর্য। তখন তিনিই ধর্ম, তিনিই ধর্ম-বাবা, তিনিই আতঙ্কবাদীদের আশ্রয়। তিনিই সকল দুর্নীতির স্রষ্টা ও পালয়িতা, তিনিই প্রকৃত শাসক, তিনিই প্রশাসন, তিনিই দুর্নীতির তদন্ত – তাঁর অনন্ত বিভূতি। তাঁর অনুগ্রহ লাভের আশায় চারপাশে সমবেত হবেন অজস্র ভোগী সাধক।
অতএব সাতশ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা যে সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে এগিয়েছিলেন, আমাদের অত্যাধুনিক সমাজ তার থেকেও অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে সামগ্রিক দুর্নীতির দিকে। স্বপ্ন দেখতে ভালোই লাগে, এই চরম অবক্ষয়ের অবসান নিশ্চয়ই কোন একদিন হবে। যদিও কোন জ্যোতিষীই বলতে পারবেন না, সে দিনটি আসবে কবে? কিংবা কোন রত্ন ধারণ করলে এই অবক্ষয়কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
৫.৯ উপসংহারদুশ্চিন্তা ও আশঙ্কা থেকে মানসিক মুক্তি পেতে অজস্র দেব-আত্মার কল্পনা করেছিলেন আমাদের আদিম পূর্বপুরুষেরা। বহিরাগত আর্য মানুষরাও নিয়ে এসেছিলেন অনেকগুলি দেবতা। শেষমেষ অনার্য ও আর্য দুপক্ষের সকল দেবতাদের মিলিয়ে-মিশিয়ে আপন করে নিয়ে, ভারতীয়রা একটি মতেই বিশ্বাস রেখেছিল। আরবী বণিকরা এই দেশের নাম রেখেছিলেন হিন্দুস্তান, আর এখানকার অধিবাসীদের হিন্দু। ঊণবিংশ শতাব্দীতে হিন্দুদের সনাতন বিশ্বাস ও প্রথাকেই নাম দেওয়া হল “হিন্দুধর্ম” (Hinduism)। আমরা ভুলে গেলাম, বিশ্বের অন্য ধর্মের মতো হিন্দু-বিশ্বাসের উদ্ভব, কোন একক ব্যক্তির মতাদর্শ থেকে নয়। এই বিশ্বাস সুদীর্ঘ কালের সামাজিক চিন্তাভাবনা, মনন ও রীতিনীতির নিরবচ্ছিন্ন ঐতিহ্য।
জন্মসূত্রে আমরা হিন্দু হলেও, সেই নিরবচ্ছিন্ন ঐতিহ্য সম্বন্ধে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের খুব একটা স্বচ্ছ ধারণা কোনদিনই নেই। আশৈশব পিতা-পিতামহ, মাতা-মাতামহী এবং লোকমুখে শুনে, যাত্রা ও টিভি সিরিজ দেখে, অথবা রামায়ণ-মহাভারতের নির্বাচিত কিছু গল্প পড়েই আমাদের ধারণা এবং বিশ্বাস গড়ে ওঠে। মানুষ বিশেষে সে বিশ্বাসের রূপও আলাদা হয় – কেউ বলেন “সবই বুজরুকি”, অনেকে বলেন “গর্ব করে বলো, আমি হিন্দু”। আবার কেউ কেউ একটু দ্বিধাগ্রস্ত, তাঁরা বলেন, “কে জানে, আগেকার কালে হয়তো হতো”।
আমার এই লেখায় সেই বিশ্বাসটিকেই ধরতে চেষ্টা করেছি, বুঝতে চেয়েছি বেশ কয়েক হাজার বছর ধরে অজস্র মনীষীর মনন ও চিন্তন এবং তাঁদের সামাজিক উদ্দেশ্যসমূহকে। কতদূর সফল হয়েছি সে কথা বলবেন আপনারা।
সুদীর্ঘ এই লেখায় নিরাকার ঈশ্বর-ব্রহ্ম কিংবা সাকার ঈশ্বর ও দেব-দেবীরা আছেন কিনা আদৌ খুব স্পষ্ট হল না। তবে এটুকু বুঝেছি, ঈশ্বর – সে তিনি নিরাকার বা সাকার হন - পরীক্ষা পাশের মেড-ইজি নন। তিনি দূর যাত্রাপথের নিশ্চিন্ত ট্রাভেলিং এজেন্ট নন। তিনি আমাদের সুস্থ রাখার মেডিকেল-সেন্টার নন। তিনি আমাদের চাকরি দেওয়ার এমপ্লয়মেন্ট-এক্সচেঞ্জ নন। তিনি আমাদের নিরাপত্তার পুলিশ স্টেশন নন। তিনি ন্যায় বিচারের সুপ্রিম কোর্টও নন। তিনি আমাদের শুভ লাভ বাণিজ্যের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নন। আমাদের ক্ষুদ্রতম সাফল্য – সে মৃৎপাত্র নির্মাণই হোক কিংবা বৃহৎ সাফল্য চন্দ্রাভিযানে যাওয়া মহাকাশ যানই হোক। অথবা লাঠির আঘাতে সব মৃৎপাত্র ভেঙে ফেলাই হোক কিংবা কয়েক মূহুর্তে আমেরিকার টুইন-টাওয়ার ভেঙে ফেলাই হোক। আমাদের এই সৃষ্টি বা ধ্বংস কার্যে ঈশ্বরের কোন হাত নেই, তিনি নির্বিকার, উদাসীন – দ্রষ্টা মাত্র। ভবিষ্যতের কোন পরমাণু যুদ্ধে মানব সভ্যতার সার্বিক ধ্বংস যদি ঘটে, তখনও তিনি উদাসীন থাকবেন। কোন ঈশ্বর কিংবা তাঁর পরিবর্ত কোন গ্রহরত্ন দিয়ে সে ধ্বংসকে রোধ করা যাবে না।
মন্দিরে মসজিদে না থাকুন, ঈশ্বর আছেন আমাদের মননে, চিন্তায়, দৃষ্টিতে, অনুভবে। সে উপলব্ধি আমাদের অন্তরে আসে অহরহ। তিনি আছেন, শরতের নির্মল আকাশ ও সোনালী রোদ্দুরে। তীব্র গ্রীষ্মের পর ঘন বর্ষার প্রভাতে। শীতের শুকনো-ঝরাপাতা বওয়া হিমেল হাওয়ায়। বসন্তের পলাশ-রাঙা অরণ্যের অভিলাষে। সমুদ্রের ব্যাপ্তিতে, পর্বতের মহিমায়। প্রতিটি শিশুর দৃষ্টি ও হাসিতে। নিরন্ন মানুষের ক্ষুন্নিবৃত্তিতে। মায়ের মমতায়, পিতার হাত ধরে উৎসবের মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানোয়। ভ্রাতৃ দ্বিতীয়ায় কপালে দিদি বা বোনের অনামিকার স্পর্শে, প্রিয়ার মুখ চুম্বনে।
সেই ঈশ্বরই নিরন্তর বাস করুন আমার, আপনার এবং বিশ্বের সমস্ত ধর্মের মানুষের অন্তরে। এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার দায়িত্ব তাঁর নয় – একমাত্র আমাদের।
অষ্টম পর্ব সমাপ্তসমাপ্ত “ধর্মাধর্ম” [1] Total defence budget accounts for 15.49 per cent of the total central government expenditure for the year 2020-21: vide Government of India, Ministry of Defence: Defence Budget 2020-21, dated 02.02.2020.