গুরুবাবু,
প্রথম পয়েন্টে দুটি ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা নেবেন। ভুলটা আমারই, যে বইটি থেকে আমি তথ্যগুলি নিয়েছিলাম সেটি ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত। তারপরে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। তথ্যগুলি ব্যবহারের আগে “গুগ্ল” থেকে চেক করে নেওয়া, আমার অবশ্যই উচিৎ ছিল । যাই হোক ভুলদুটি শোধরানোর চেষ্টা করেও পারলাম না, “সম্পাদনা করুন” টিপলে পেজটি খুলছে, অন্য সব কিছু দেখাচ্ছে - কিন্তু “বিষয়বস্তু” অংশটি ব্ল্যাংক থেকে যাচ্ছে। আমার পাণ্ডুলিপিতে আমি ঠিক করে নিয়েছি, আপনাদের শুভেচ্ছায় গ্রন্থ হয়ে বেরোলে সঠিক তথ্যই প্রকাশিত হবে।
২. সিন্ধু সভ্যতার পতনের প্রধান কারণ আক্কাদিয় সাম্রাজ্যের পতন – একথা আমি লিখিনি – এটি গৌণ কারণ। সিন্ধু সভ্যতার পতনের প্রধানতম কারণ ওই অঞ্চলে বারবার ঘটে যাওয়া বেশ কিছু প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যেগুলি আমি সবিস্তারেই লিখেছি।
কিন্তু রোম সাম্রাজ্যের পতনে উত্তরভারতের বাণিজ্যে সত্যিই বেশ বড়োসড়ো ধাক্কা এসেছিল। বাণিজ্য-প্রবাহ অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে পড়েছিল। সেই প্রবাহটুকুও প্রায় রুদ্ধ হয়ে এল ইসলামিক আরব-বণিকদের প্রভাবে।
৩. ভারতের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্যিক সমুদ্রপথ ছিল Arabian Gulf হয়ে। তারপর স্থলপথে* কিছুটা গিয়ে, ভূমধ্যসাগরের তটে আবার জাহাজে চাপিয়ে ইটালি, গ্রিস ও ইওরোপের নানান দেশে বাণিজ্য সম্ভার পৌঁছে যেত। মুসলিম আরব-বণিকরা এই সমুদ্রপথটিকে সম্পূর্ণ আয়ত্ত্ব করে নিয়েছিল এবং স্থলপথেও একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এই আধিপত্যের জন্যেই ভারতীয় বণিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হত প্রতি নিয়ত, চরম লোকসানেও পড়তে হত।
এই লিংকে রোম ও ভারতের Sea-trade-route গুলি দেখা যাবে।
‘
এর সঙ্গে মনে করুন ক্রুসেডের যুদ্ধগুলির কথা – খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১০৯৫ সি.ই.-তে, মুসলিম অধিকৃত পবিত্র জেরুজালেম শহরের অধিকার নিয়ে। শেষ ক্রুসেড যুদ্ধ হয়েছিল মোটামুটি ১৬৯৯ সি.ই.-তে। পৃথিবীর ইতিহাসে ধর্ম নিয়ে এত দিন ধরে, এত নৃশংস যুদ্ধের নজির আর একটিও নেই।
তবে সরাসরি বাণিজ্য বন্ধ হওয়াতে, শুধু যে আমরাই বিপদে পড়লাম তা নয়, বিপদে পড়েছিল ইওরোপীয়রাও! ইওরোপীয় বণিক ও জণগণ বুঝতে পারছিল মুসলিম বণিকরা তাদের বঞ্চনা করছে, উপরন্তু ভারতীয় বণিকদের তীব্র আতঙ্ক ও অনীহার জন্যে তাদের চাহিদামতো পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহও তারা পাচ্ছিল না। এই সময়ে তাদের সর্বপ্রধান চাহিদা ছিল ভারতের মশলা ও মসলিনের।
মনোমত দামে মনোমত পণ্য পাওয়ার জেদ থেকেই ইওরোপিয়রা নতুন সমুদ্রপথে ভারত-অভিযানের কথা চিন্তা করতে শুরু করল। কারণ ইওরোপের মানুষ ততদিনে জেনে গেছে পৃথিবী গোল – সমুদ্রপথে কোন না কোন ভাবে পৃথিবীর সর্বত্র পোঁছে যাওয়া সম্ভব । বহু অভিযাত্রীর অনেক নিষ্ফল অভিযানের পর সফল হল ভাস্কো-ডা-গামার ভারত অভিযান। একই উদ্দেশে বেরিয়ে, কলম্বাস উল্টোদিকে আমেরিকায় গিয়ে ঠেকলেন, আর ভাস্কো গোটা আফ্রিকা ঘুরে ১৪৯৮ সালে ভারতের কালিকটে এসে পৌঁছলেন।
ভাস্কো-ডা-গামার - অভিযান পথটি দেখতে পাবেন, নিচের লিংকে -
সেই দিনই ভারতবর্ষ, ভারতীয় জনগণ (হিন্দু এবং মুসলিম)-কে শোষণ করার রাস্তাটি ইওরোপের সামনে খুলে গেল, পরবর্তী কালে যার সম্পূর্ণ ফায়দা লুটবে ব্রিটিশ-রাজ।
ইতিহাসের কোন ঘটনাই বিচ্ছিন্ন নয়, সমাপতন বা আকস্মিকও নয় – প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে তার আগের এবং পরের ঘটনাগুলি নিবিড়ভাবে সংযুক্ত।
শরদিন্দুবাবুর ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলি আমারও খুব প্রিয় - বহুবার পড়েছি...কিন্তু ...ইতিহাস হিসেবে...
*এই স্থলপথেই পূর্ব আফ্রিকা থেকে হোমো ইরেক্টাস, লিয়াণ্ডারথাল, হোমো স্যাপিয়েন্সরা ইওরোপ ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন এটি সুয়েজ ক্যানেলের জন্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।