অগাস্ট মাসের পনেরো তারিখ এসে পড়লো। এই দিন নিয়ে আজ অনেক কিছু লেখা হবে। স্বাধীনতা নিয়ে, তিন-রঙা পতাকা নিয়ে, সংগ্রামীদের নিয়ে। আমিও পনেরই অগাস্ট নিয়ে একটা গল্প শোনাতে পারি। কিন্তু একদম অন্যরকম গল্প। এতে পতাকা নেই। চাঁদ আছে। আর তীর-ধনুক।বললাম না অন্যরকম গল্প?
এই অগাস্টের পনেরো তারিখ আরো একটা দেশে একটা বিশেষ দিন। সে হলো চীন। এদিন ওখানে মস্ত উৎসব হবে। চাঁদের উৎসব। চাঁদের উদ্দেশ্যে নাচগান হবে। নানা রকম ভালো খাবার সাজিয়ে দেওয়া হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে স্পেশ্যাল হলো 'মুনকেক'। এই উৎসবকে ওঁরা বলেন ‘মাঝ-শরতের চাঁদনী পরব’। ঠিক যে অগাস্ট মাসের পনেরো তারিখেই তা নয়। তবে আট নম্বর মাসের মাঝের দিনে ঠিকই। চীনের চাঁদ- সূর্যের ক্যালেন্ডার মেনে ঐ সময়ে যে পূর্ণিমা পড়ে সেইদিনেই চাঁদের পরব হবে। সেটা সেপ্টেম্বর মাসেও পড়তে পারে, কিম্বা অক্টোবরেও। কিন্তু এসব তারিখের কচকচানি নিয়ে কী হবে? আসল হলো এই উৎসবের পেছনে যে গল্পটা আছে সেটা । চীনে মাইথোলজির গল্প। বলছি।
চাঁদের গল্প বলতে গেলে কিন্তু আগে বলতে হবে সূর্যের কথা। না, গ্রীকদের মত সূর্য এখানে চাঁদের যমজ ভাই নয়। সূর্য সূর্যই । কিন্তু সে ছিলো একটা নয়, দশটা। দশ সূর্য , পূব আকাশের দেবতা 'দিজুনের' দশটি ছেলে। আমি তো চীনে ভাষা জানিনা, 'দিজুন' কথাটার মানে 'হারাধন' কিনা তাই বা কে জানে! সে যাইহোক, একেক দিনে একেক সূর্যের কাজের পালা পড়তো। সে সেদিন উঠে আকাশ পাড়ি দিতো। পৃথিবীকে আলো দিতো, গাছপালার খাবার যোগাতো। কোন দিন কোন সূর্যের পালা পড়বে তা ঠিক করার জন্যও ব্যবস্থা ছিলো। ক্যালেন্ডার নয়, ফোনে পিড়িং করে নোটিফিকেশন নয়, এই কাজটা করতো দশটা কাক। হ্যাঁ, কাক। ভুষুন্ডীর মত।
পূবের দেশে নদীর পাশে বিশাল এক গাছে কাকগুলো থাকে। এক এক জন কাকের দায়িত্বে এক একটা সুর্য্য। যেদিন যার পালা সেদিন সেই কাক রাত শেষ হলে গাছের মগডালে উঠে "কা কা কা" করে খবর পাঠায়। সেই কাকের সুর্য্য তখন তৈরী-টৈরী হয়ে কাজে নামে। এমনি চলছে আবহমান কাল ধরে। একদিন কী যে হলো, কাকগুলোর মাথা গেলো বিগড়ে ! সেদিন নিয়ম-কানুন সব চুলোয় পাঠিয়ে সবকটা কাকই একসাথে ডেকে ডেকে সারা হয়ে গেলো। সুর্য্যরা, দশজনেই তড়িঘড়ি কাজে নেমে এসেছে। তাদেরও বুদ্ধি তেমনি, একবারও মনে হলো না এমন অনর্থটা কেন ঘটছে? যাই হোক, তারা অভ্যেসের আর নিয়মের দাস। তার বাইরে যাবেনা! তো হলই অনর্থ! দশটা সুর্য্য যদি একসাথে আকাশে ওঠে তাহলে ফলটা কী হবে বুঝতেই পারছো। গরমে, রোদ্দুরে পৃথিবী পুড়ে ছারখার হয় প্রায়। গাছপালা, নদী, খালবিল সব শুকিয়ে কাঠ। মানুষ কোথায় লুকিয়ে বাঁচবে তাই ভেবে পায় না! সবাই আকূল হয়ে প্রার্থনা করছে, দয়া ভিক্ষা করছে। প্রার্থনা শুনতে পেলেন 'জেড সম্রাট'। তিনি স্বর্গের রাজা। কোনো কোনো গল্পে এও বলে যে ঐ দশ সুর্য্য তাঁরই ছেলে। তো যাই হোক, পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য তিনি স্বর্গের সবথেকে নামকরা তীরন্দাজকে ডেকে পাঠালেন।
এই তীরন্দাজের নাম ছিলো 'হৌয়ি'। তাঁর মত লক্ষ্যবেধ করতে কেউ পারেনা। জেড সম্রাট বললেন "সুর্য্যগুলোকে একটু শিক্ষা দিয়ে এসো তো"। হৌয়ি তো তীর-ধনুক নিয়ে পৃথিবীতে নেমে এসেছেন। কিন্তু সেখানে অবস্থা তখন চূড়ান্ত! সৃষ্টি নাশ হলো বলে! হৌয়ি বুঝলেন দেরী করা যাবেনা। মস্ত ধনুকটা তুলে নিয়ে একটা তীর ছুঁড়লেন। সেটা সোজা গিয়ে বিঁধলো এক সুর্য্যের বুকে। সে অমনি খসে পড়ে গেলো আকাশ থেকে। এমনি করে ন'বার তীর ছুঁড়লেন হৌয়ি। স্বর্গের অমর তীরন্দাজ। তাঁর নিশানা কখনো ফস্কায়না। ন’ ন'টা সুর্য্য খসে পড়লো। শুধু একজনকে রেহাই দিলেন। বিনা সুর্য্যতে তো আর চলবেনা? ও একাই এখন থেকে রোজ উঠবে, অস্ত যাবে। আলো দেবে, তাপ দেবে, গাছপালাদের সবুজ দেবে।
মানুষ, গাছ, পশু-পাখী তো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। কিন্তু গন্ডগোল লেগেছে অন্য জায়গায়। সুর্য্যরা যে সে ছিলোনা। তারা সবাই স্বয়ং দিজুনের ছেলে। নয় ছেলেকে হারিয়ে দিজুন অসম্ভব রেগে গেলেন। নেহাত জেড সম্রাট নিজে তাকে এ'কাজে পাঠিয়েছেন, নাহলে কী হত বলা যায়না। কিন্তু শাস্তি হৌয়িকে পেতেই হবে। তাঁকে বলা হয়েছিলো সুর্য্যদের শুধু "শিক্ষা দিতে"। এর নাম শিক্ষা?! তা দিলেনও শাস্তি দিজুন। একেবারে স্বর্গ হইতে বিদায়। হৌয়িকে পৃথিবীতে গিয়ে মানুষদের মত থাকতে হবে। স্বর্গ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মানেই তাঁর অমরত্বও খারিজ হয়ে গেছে। এখন থেকে তিনি মানুষদের মতই মরণশীল। শুধু এতেই দিজুনের রাগ মিটলো না। হৌয়ির স্ত্রী 'চাং-য়', তাঁকেও অমরত্ব বিসর্জন দিয়ে হৌয়ির সাথে মর্ত্যে গিয়ে থাকতে হবে। এই বলে দিজুন ফতোয়া জারি করে দিলেন। এই চাং -য় কে কেউ বলে 'চাং-ই', কেউ বলে 'চাং-উ'। চীনেভাষার উচ্চারণ বড্ড গোলমেলে! চাং-য় কোনো দোষই করেননি। কিন্তু তাতে আর কী যায় আসে? দোষ তো সেভাবে দেখলে সুর্য্যরাও করেনি। আসল দোষী ছিলো ঐ কাকগুলো। একজনের দোষে অন্য কারুর শাস্তি পাওয়া কোনো নতুন কথা নয়। বিশেষ করে যেখানে দেবতাদের রাগ জড়িত আছে!
হৌয়ি আর চাং-য় পৃথিবীতে এসে রয়েছেন। দিন তো কেটে যাচ্ছে একরকম করে। নিজেদের দুর্ভাগ্যের কথা তাঁরা দিনরাত ভাবেন, কিন্তু মেনে নেওয়া ছাড়া আর উপায় কী? তার থেকেও বেশি ভাবনা আছে হৌয়ির মনে। তিনি কিছুতেই ভুলতে পারেননা যে আজ হোক কাল হোক মৃত্যু এসে ওঁদের দরজায় টোকা দেবে। স্বর্গের সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দ গেছে তো গেছে, কিন্তু অমরত্ব যাওয়ার মত ভয়ানক ব্যাপার তাঁর কাছে কিছু নয়। আকাশের সেরা তীরন্দাজ মরণকে ভয় পান? কী জানি, কার ভয় যে কিসে! হয়তো অমরত্ব আছে এই জানাটাই তাঁকে এতদিন বেপরোয়া করে রেখেছিলো। কিম্বা হয়তো .... যাক গে, জল্পনা করে আর কী হবে? মোটকথা, কবে যে তাঁকে মরণের ঘরে কুড়ায়ে নেবে সেই দুশ্চিন্তা তাঁকে ছিঁড়েখুঁড়ে শেষ করে দিতে থাকে।
পাগলের মত উপায় খুঁজতে খুঁজতে হৌয়ি একদিন একটা খবর পেলেন। পশ্চিমদেশে নাকি এক রাণীমা থাকেন। তাঁর কাছে অমৃত আছে। পশ্চিমদেশ বড় কাছে নয়। রাস্তাও খুব দুর্গম। কিন্তু সেসবের বাধা হৌয়িকে আটকাতে পারবে নাকি? হাজার হাজার ক্রোশ রাস্তা পেরিয়ে, বন-জঙ্গল, পাহাড়-সমুদ্র ডিঙিয়ে, সব বিপদ-আপদ তুচ্ছ করে তিনি রাণীমার দরবারে গিয়ে পড়লেন। রাণীমা তাঁর সব কথা শুনলেন ধৈর্য্য ধরে । শাস্তির কথা, ভয়ের কথা, হাজার কষ্ট আর বিপদ মাথায় নিয়ে এতদূর আসার কথা। কিন্তু অমৃতের মত জিনিষ বিনা দামে পাওয়া যায়না। রাণীমা এক স্ফটিকের শিশি হৌয়ির হাতে দিয়ে বললেন -- "এর মধ্যে অমৃত আছে। কিন্তু একটা ধাঁধাও আছে। তার উত্তর মেলাতে পারো তো সেই হলো এর দাম।" হৌয়ির মুখে কথা সরেনা? ধাঁধাটা কী?
-"সেটা তো তোমাকেই বুঝতে হবে। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে এর মধ্যে যে অমৃত আছে তা খেলে একজন সশরীরে স্বর্গে যেতে পারবে। শুধু একজন।"
হৌয়ি বুঝতে পারেন। ধাঁধাটা আসলে অনেকগুলো প্রশ্ন। একজনই শুধু যদি স্বর্গে যেতে পারে তাহলে সেটা কার প্রাপ্য? কে এই অমৃতের যোগ্য অধিকারী? তিনি না চাং-য়? কিম্বা যদি অর্ধেক করে দুজনে খান, তাহলে কী ফল হবে? হয়তো স্বর্গে যাওয়া হবেনা, কিন্তু অমর হয়ে পৃথিবীতে থাকা যেতে পারে! নাকি অর্ধেক খেলে কারুরই কোনো কাজ হবেনা? উত্তর সহজ নয়। সহজ হলে কী আর তাই দিয়ে অমৃত পাওয়া যেতো?
"ভেবে দেখতে হবে। অনেক ভেবেচিন্তে তবে সিদ্ধান্তে আসতে হবে" -- মনের মধ্যে চিন্তার ভীমরুলগুলোকে নিয়ে, ছোট্ট স্ফটিকের শিশিটা আংরাখার মধ্যে লুকিয়ে হৌয়ি চাং-য়'র কাছে ফিরে এলেন।
চাং-য়'র তো তর সয় না। হৌয়ি এদিকে শিশিটা উঁচু শিকেয় তুলে রেখেছেন। প্রশ্নগুলোর সমাধান না হলে কী করে ঠিক হবে অমৃত কে খাবে? তিনি রাতদিন ভেবেই চলেছেন, কিন্তু কিছুতেই বুঝে ওঠা যাচ্ছেনা ঠিক কী করা দরকার। রাণীমা ঠিকই বলেছিলেন, দাম দেওয়াই বটে!
সময় চলে যাচ্ছে। চাং-য়'র অসহ্য লাগে দিনগুলো। এখানে, এই মর্ত্যে, এত গরম, ভীড়, কাজের লোক পাওয়া যায়না, সন্ধ্যে হলেই মশা কামড়ায়! না ঠিক এগুলো কোথাও লেখা নেই। কিন্তু এরকমটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক না? বিনাদোষে এরকম শাস্তি কার ভালো লাগতে পারে? আর লোকটাকে দেখো! এত কষ্ট করে ওষুধ আনলে তো আনলে, তা তুলেই রেখে দিলে কার কী চতুর্বর্গ লাভটা হচ্ছে শুনি! চাং-য় মনে মনে অস্থির হয়ে ওঠেন। শেষে একদিন, হৌয়ি যখন বাড়ি নেই, তখন আর থাকতে না পেরে চাং-য় শিকের থেকে স্ফটিকের শিশিটা পেড়ে আনলেন। তিনি ধাঁধার কথা অতশত জানেননা। তিনি শুধু এটুকু জানেন যে এতে যে ওষুধ আছে তা খেলে স্বর্গে ফেরা যাবে। আর কিছু না ভেবেই চাং-য় শিশি খুলে তরলটা গলায় ঢেলে দেন। তাঁর ধারণা ছিলোনা মাত্র এক ঢোকেই পুরোটা শেষ হয়ে যাবে। হৌয়ির জন্য কিছুই আর বাকী থাকবেনা! ঢক করে গিলে ফেলার পরেই একটা ভয় তাঁকে চেপে ধরলো। হৌয়ি, তাঁর ভালোবাসার হৌয়ি,তার কী হবে? তাকে কী একলা এখানে পড়ে থাকতে হবে?!!
কিন্তু ততক্ষণে ওষুধ কাজ শুরু করেছে। চাং-য় দেখেন তাঁর শরীরটা আস্তে আস্তে আকাশ পানে উঠে যাচ্ছে। তিনি ভয়ে চিৎকার করে ঘরের খুঁটি আঁকড়ে ধরতে চান -- "না না হৌয়িকে ফেলে যেতে পারবো না। আমি একা একা স্বর্গে যেতে চাইনা। কেউ আমাকে নামাও। কেউ দয়া করো"। কিন্তু তাঁর বুকফাটা চিৎকার কেউ শুনতে পেলো না। হৌয়ি তখন বাড়ি থেকে অনেক দূরে। চাং-য়'র সব আকুলি-বিকূলি, সব চেষ্টা বিফলে গেলো। রাণীমা যেমন বলে দিয়েছিলেন, অমৃত তাঁকে সশরীরে আকাশে পৌঁছে দিলো। কিন্তু আকাশের কোথায়? জেড সাম্রাজ্যে বিতাড়িত লোকের ফিরে আসার নিয়ম নেই। স্বর্গ তাঁকে নির্বাসন দিয়েছে। মর্ত্য তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চাং-য় গিয়ে পৌঁছলেন পূর্ণিমার মস্ত চাঁদটার মধ্যে। এক বিরাট শ্বেতপাথরের প্রাসাদ সেখানে। বিশাল, খাঁ-খাঁ, জনমানবশূন্য । চাং-য় চিরকালের মত সেখানে আটক হয়ে রয়ে গেলেন। নির্বাসনেরই তো শাস্তি ছিলো তাঁর। দেবতার শাপ মিথ্যে হয়না।
হৌয়ি এদিকে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন চাং-য় নেই। কোথ্থাও নেই। শুধু ওঁর জুতোজোড়া পড়ে আছে, আর ফাঁকা শিশিটা। ব্যাপার বুঝতে তাঁর বাকি রইলোনা কিছু। হৌয়ির একূল-ওকূল দুইই ভেসে গেলো। অমরত্ব আর চির ভালোবাসার মানুষটি দুইই বরাবরের মত তাঁর জীবন থেকে দূরে চলে গেলো। দেবতার শাপ।
হৌয়ি আকাশের দিকে তাকান। আট নম্বর মাসের মাঝের দিন আজ। মস্ত থালার মত চাঁদ উঠেছে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলেন "চাং-য়, চাং-য়"। কোথাও একটা তক্ষক ডাকে "ঠিক ঠিক ঠিক ঠিক"। রেশমের রুমাল পেতে হৌয়ি তার ওপরে মধুর পাত্র সাজিয়ে দিলেন, পদ্মবীজের পুর দেওয়া পিঠে, মিষ্টি ফল। যা কিছু চাং-য়'র পছন্দের খাবার ছিলো। চাঁদের উদ্দেশ্যে ভালোবাসা উজাড় করে দিলেন। নিবেদন। শুরু হলো ‘মাঝ শরতের চাঁদনি পরব’। সেই প্রথম।
গল্পটার আরো একটা ভার্শন আছে। কেউ কেউ বলেন যে হৌয়ি আর চাং-য় এ ওকে এতটাই ভালোবাসতেন যে অন্যজনের সাথে কোনোভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে সেটা তাঁদের কাছে অকল্পনীয় ছিলো। সেই জন্যেই মৃত্যুকে এত ভয়। মৃত্যু এসে একজনকে অন্যজনের থেকে কেড়ে নেবে বলে। যখন অমৃত পেলেন, তখন কেউই না খেয়ে ওঁরা শিশিটা তুলে রেখেছিলেন। যদি কোনোদিন অন্য কোনো উপায়ে আরেকজনেরও স্বর্গে যাবার পথ মেলে, সেই ভেবে। কিন্তু গন্ডগোল বাধলো অন্যদিক দিয়ে। হৌয়ি তো নামকরা তীরন্দাজ। তাই তাঁর কাছে অনেকে তীর ছোঁড়া শিখতে আসতো। এই রকমই একজন ছাত্র ছিলো 'পেং-মেং'। সবথেকে প্রিয় ছাত্র ওঁর। সবথেকে কাছের। গুরুর বাড়িতে অমৃত এনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, সেই খবর পেং-মেং এর অজানা রইলোনা। হয়তো হৌয়ি নিজেই বিশ্বাস করে তাকে বলেছিলেন। কিন্তু পেং-মেং এর মাথায় জাগলো দুষ্টুবুদ্ধি। শেষে একদিন হৌয়ি যখন শিকারে গেছেন, তাঁরই প্রিয় ছাত্র মস্ত এক মোটা লাঠি নিয়ে চা-য়'র ওপর চড়াও হলো। ঐ অমৃত তার চাই। অমর হয়ে সারা দেশের ওপর কর্তৃত্ব করবে। আর না হলে চাং-য়'র আজ আর নিস্তার নেই। চাং-য় পালাবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পেং-মেং এর গায়ের জোর আর ক্ষিপ্রতা কোনটাই কম নয়! ঘোর বিপদের থেকে আর কী করে বাঁচবেন ভেবে না পেয়ে চাং-য় অমৃতের শিশি গলায় উপুড় করে দিলেন। তাঁকে ওভাবে আকাশে উঠে যেতে দেখে দুষ্টু পেং-মেং ঘাবড়ে গিয়ে পিঠটান দিলো। হৌয়ি এসে ওকে দেখলে যে আর প্রাণে বাঁচতে হবেনা তা সে ভালোই জানতো!
চাং-য়কেই পরে সবাই চাঁদের দেবী বলে জানতো। ঐ বিশাল জগতে, বিশাল প্রাসাদে একলা দুঃখী দেবী। একদম একলা নয় অবশ্য। ওঁর একজন বন্ধু ছিলো সেখানে। সে হলো চাঁদের খরগোশ। দেখোনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে কখনো তাকিয়ে? ভালো করে তাকালে দেখতে পাবে চাঁদের মধ্যে খরগোশ একটা পাত্রের মধ্যে কী যেন তৈরি করছে।
এই চাঁদের খরগোশের নিজস্ব একটা গল্প আছে। সেও সুন্দর গল্প। আচ্ছা বলবো ক্ষণ সে একদিন। সময় পেলে। এখন পদ্মবীজের পুর দেওয়া পিঠে একটা খাবে নাকি? মুনকেক?
এই উৎসবকে তো "the festival of qixi"ও বলে না? এই উৎসব তো প্রেমের উদযাপনের উৎসব ,valentines day র মতোই।
মুনকেক খাবো
প্রত্যয় ভুক্ত,
ফেস্টিভ্যাল অফ কিক্সিস এই একই সময়ে হয় ঠিকই। হ্যাঁ, ভ্যালেন্টাইনস ডে'র মত, প্রেমের উৎসব। কিন্তু তার ব্যাকগ্রাউন্ড গল্পটা অন্য। সেই সুর্য্যের মেয়ে আর এক রাখাল ছেলের ভালোবাসা আর বিচ্ছেদের গল্প। পাখির সাঁকোর গল্প। ছায়াপথের গল্প।
দ দি,
কী ঝামেলার রেসিপি এই মুনকেক এর! কোনদিন সাহস সঞ্চয় করে বানিয়ে উঠতে পারলে বলবো তোমাকে কেমন হয়েছিলো :-)
খুব ভালো।
এলাম যখন কয়েকটা নিটপিকিং করেই যাই।
সূর্য। দীর্ঘ ঊ। য-ফলা অপশনাল কিন্তু দীর্ঘ ঊ-তে কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।
হয় পুব নয় পূর্ব। "পুব হওয়াতে দেয় দোলা" পশ্য।
এবং লক্ষ্যভেদ। লক্ষ্য বেধ করা আবার কি?
:|: সাহেব,
খুব ভালো করেছেন ভুল ধরিয়ে দিয়ে। সূর্য্য বানান কিন্তু কক্ষণো আমি হ্রস্ব-উ দিয়ে লিখিনা, মাইরী বলছি! কী করে যে এই ভুলটা করলাম কেজানে! মনে হয় খুবই অন্যমনস্ক ছিলাম।
কিন্তু 'বেধ' মানে বিদ্ধ করা এটা চলন্তিকায় দেখেছিলাম যেন!
মাইরি বানান নির্ঘাত হ্রস্ব-ই! মাতা মেরি থেকে এসেছে কিনা। এখন বলতে পারেন মেরী নয় কেন, এই যে উইকি https://tinyurl.com/s286radn
অভ্যু,
এত বানান ভুলের কী শাস্তি হয়? দশবার করে লিখতে হয়, না? বাড়িতে খাতায় লিখলে হবে? :P
নাহ আমাদের মুনকেক খাওয়াতে হবে :)
আপনি বলায় খুঁজে দেখলুম। বেধেরও ব্যবহার আছে লক্ষ্যের পরে; যদিও খুব সীমিত। কাজেই ওটা দশবার করে লেখার লিস্ট থেকে বাদ গেলো। আর চাঁদের গপ্পে সুজ্জোর বানাম্ভুল ঠিক আছে।
খুচরো যেটুকু থেকে গেলো, সেজন্য মুনকেক খাইয়ে দিলেই হবে।
নাআআআ...খালি দুখুঃ..খালি বিরহ... হ্যাঁ গো চিরন্তন প্রেমের থিমসং বুঝি"মিলন হবে কত দিইনেএএ.....?
ওফ এই চাইনিজ ইলাস্ট্রেশন গুলো সেই সুন উখোঙ এর বইতে পেতাম। দারুণ পছন্দের ছিলো, নিজেও অনেকবার আঁকতে চেষ্টা করেছি।
এইবারের পর্বও খুব পছন্দ হল। চীনের বইগুলোতে এইরকম কত লেজেন্ড পড়েছি। ইয়াং সিকিয়াং নদীগুলোর উৎপত্তি নিয়েও একটা গল্প ছিল না? সেই সরোবরের তলা থেকে মাকড়সার মুখ থেকে মুক্তো উদ্ধার করে গিলে ফেলে ফিরে আসার পথে আস্তে আস্তে পাহাড়ের মত বড় হয়ে গিয়ে নদীর জন্ম দেয়া। বইটা হাতের কাছে নেই।
থ্যাংকু শংখ। ইয়াংসিকিয়াং নদীর গল্পটা পড়িনি। মাকড় ভয় পাই!! :(
গল্পটা পেয়েছি গো। 'পানির বীজমুক্তা' নামের গল্প। তবে ইয়াংসিকিয়াং না, ইয়ানকাং নদী। স্মৃতি কেন জানি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আলমারিতে একটু খুঁজতেই পেলুম।