আব্বাসের সাক্ষাৎকার লোকে হাঁ করে গিলেছে। পক্ষের লোক, বিপক্ষের লোক, আমার মতো সিনিক, সব্বাই। ব্রিগেডের মূল তারকা ছিলেন আব্বাস। মিডিয়া থেকে বামপন্থী, সবাই সেভাবেই ফোকাস করেছেন। শুক্রবারও, একটি রাজনৈতিক সাক্ষাৎকার, শেষ কবে এত লোক এত মন দিয়ে শুনেছেন, বলা কঠিন। আব্বাসের এই আকর্ষণের রহস্য কী? একটা কারণ, দেখেশুনে মনে হচ্ছে, উনি একজন জননেতা, মানে নিজের পিছনে লোক জমা করতে পারেন। সুমন আজকের সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বললেন, ব্রিগেডের জনসমাবেশের জৌলুস অনেকটাই আব্বাসের অবদান। আব্বাস নিজেই ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আরেকটু সময় পেলে দ্বিগুণ লোক করে দিতেন। এসবের সত্য মিথ্যা যাচাই করা অবশ্য খুবই কঠিন, অন্তত যতদিন না আব্বাস নির্বাচনে সাফল্য পাচ্ছেন, বা তাঁর অনুপস্থিতিতে বাম ব্রিগেড খাঁখাঁ করছে। কিন্তু যেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, আব্বাসের মূল আকর্ষণ তাঁর টাটকাপনায়। রাজনীতির জলে তিনি একেবারে নতুন মাছ। ক্ষমতার আকাশে নতুন পাইলট। সাক্ষাৎকারে সেটা তিনি স্পষ্ট করে বললেন। বললেন, যে, রাজনীতিটা তিনি বুঝতেন না, সদ্য এখন এসে বুঝছেন। সেটা সত্যি হোক বা মিথ্যে, এই নতুনত্ব, এই টাটকাপনাই তাঁর আকর্ষণ।
বামরা অনেকদিন মাটির কাছাকাছি লোককে ফোকাসে আনেনি। টিভিতে যে মুখগুলি, সবই শিক্ষিত। যেটুকু নড়াচড়া, তাও শিক্ষিত অংশটিকে নিয়েই। কেন, সে অবশ্য বোঝা মুশকিল, দেবলীনা হেমব্রমের মতো নেত্রী থাকতেও। কিন্তু সে অন্য কথা। যে কোনো কারণেই হোক, আব্বাস, এই কাঁচা আনকোরা মাটির গন্ধটি সরবরাহ করছেন। তিনিই এখন পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের প্রতিভূ। আনকোরা এক তাজা রক্ত। যদিও তিনি গরিব তো ননই, অশিক্ষিতও নন; ধর্মতত্ত্বে মাস্টার্স, অন্তত যা শোনা গেল। কিন্তু উচ্চারণে অপরিশীলিত, ভাবে সরল। উচ্চারণে র ফলার অপপ্রয়োগ নিয়ে তাই আর কারো বিশেষ মাথাব্যথা নেই। আব্বাস নিজেও এই ইমেজটি সচেতন প্রচেষ্টায়, অথবা চেষ্টাহীন ভাবে ধরে রেখেছেন। ভঙ্গিটি বিনয়ী, উচ্চারণ গ্রাম্য, এবং জটিল প্রশ্নের উত্তর দেন অত্যন্ত সরল ভঙ্গিতে। সাক্ষাৎকারে তাঁর সবকটি বিতর্কিত ভিডিওই এক এক করে দেখানো হয়। সবকটির উত্তরই আব্বাস এমন ভাবে দেন, যেন তিনি গ্রামের ছেলেটি। হুট করে রাজনীতিতে ঢুকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছেন। অত জানতেনও না। কিছু কথা ভুল করে বলে ফেলেছেন, না-জানাটুকুও তিনি স্বীকার করে নেন। রাজনীতিকরা সচরাচর যা করেননা। ফলে আক্রমণাত্মক প্রশ্নের উত্তর যথাযথ না হলেও তাঁর ভাবমূর্তি, পছন্দের লোকদের কাছে, একরকম করে অটুটই থেকে যায়। কিছু মধ্যবিত্ত হাসে। কিন্তু তাঁর আবেদন তো এই মধ্যবিত্তের কাছে না।
সমস্ত প্রশ্নোত্তরের মধ্যে এই সারল্য সর্বোচ্চ শিখরে ওঠে দুটি ক্ষেত্রে। প্রথম, যখন তিনি অকপটে জানান, যে, তিনি মমতার কাছে ৪৪ টি আসন চেয়েছিলেন। কিন্তু মমতা দিতে রাজি না হওয়ায় বামজোটে গেছেন। প্রশ্নকর্তা সুমন, শুনে হাঁহাঁ করে ওঠেন, যেমন করারই কথা, সে কী, এ তো দলবদলুদের মতোই সুবিধেবাদ। দিদি টিকিট দেননি বলে আপনি অন্যদিকে চলে গেলেন? যেটা সুমন বলেননি, সেটা হল, মুসলিম আইডেন্টিটির ধারক ও বাহক না হলে তো সোজা বিজেপিতেই চলে যেতেন। প্রশ্নটা সুমন করেননি, কারণ, ভদ্রলোকের সঠিকত্ব বা ভাবমূর্তি রক্ষার একটা দায় থাকে। সরল গ্রাম্যতার সে দায় নেই। তাই আব্বাস অকপটে বলেন, তা প্যারাফ্রেজ করলে এরকম দাঁড়ায়, "যখন গিয়েছিলাম, তখন তো রাজনীতি জানতাম না। দিদিকে ভালো ভেবেছিলাম। তারপর রিসার্চ করে দেখলাম উনি ভালো না।" কথাটা শুনতে ভালই। আব্বাসসুলভও। কিন্তু ততটা সরলও না। ফলো আপ প্রশ্ন যা হতে পারত, কিন্তু হয়নি, "আপনি রাজনীতি জানেননা, দল খুলে ফেললেন, জোটের প্রস্তাবও করে ফেললেন, কোনো রিসার্চ না করেই? উনি রাজি হয়ে গেলে কী করতেন?" একেবারে প্রশ্নটা আসেনি তা নয়, একটু ঘুরিয়ে এসেওছে। এবং এর উত্তরটা খুব অজানা নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোটে রাজি হয়ে গেলে এই সরল বালক বামদের বিরুদ্ধে বলতেন। অন্য একদল তাঁকে ডিফেন্ড করতেন। এখনকার সমর্থকরা র-ফলার ভুল ধরতেন এবং ভিডিও ভাইরাল করতেন। সেটা সবাই জানেন, এবং কেউই স্বীকার করবেন না। আব্বাসও ততটা সরল বালক নন, যে, এই বাস্তব চিত্রটা জানেন না। তিনি সরকারের চারটে পায়ের একটা পা হতে চান। ব্যস। ফলে শুধু সারল্য নয়, তিনি এইসময়ের জোট এবং দলবদলের রাজনীতির প্রতীকও বটে, যেখানে টিকিট না পেলে হাসতে হাসতে দল পাল্টে ফেলা যায়। যেখানে এক হাতে চে'র উল্কি নিয়ে অন্য হাতে পদ্মফুল ধরা যায়। এও অবশ্য সারল্য, এক অদ্ভুত সারল্য, যে, ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছতেই হবে। কোনো এক রাস্তা দিয়ে। রাস্তাটা যাই হোক তাতে কিছু এসে যায় না। সে ব্যাপারে আব্বাসের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে বলে মনে হয়না। তিনি দেবলীনা হেমব্রম নন।
দ্বিতীয় যে প্রশ্নটির উত্তর আরও সোজা ব্যাটে এবং ততোধিক সারল্যের সঙ্গে আব্বাস দেন, সেটি হল সেই বিখ্যাত গাছে বেঁধে পেটানোর উক্তি প্রসঙ্গে। তিনি যা বলেন, তার মর্মার্থ হল, বদ লোক হলে পেটাতে হবেনা? পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়ে আসামীকে পেটায় না? জেলে পেটায় না? ভাবতে অবিশ্বাস্য লাগে, পুলিশের পেটানো যে বেআইনি সেটা তিনি জানেননা। বলা মাত্রই সেটা মেনেও নেন, এবং দুঃখপ্রকাশও করেন। যেটা আজকের রাজনীতিতে বিরল। তারপরেই তিনি আরও একটি চমকপ্রদ কথা একই নিঃশ্বাসে বলে ফেলেন। কী সেটা? হিন্দুদের মসজিদে যাওয়া এবং মুসলমানদের মন্দিরে যাওয়া উচিত নয়। আবারও সঞ্চালকের হাঁহাঁ। এবং এবার পরিণত রাজনীতিকের মতোই কথা ঘুরিয়ে ফেলেন আব্বাস। কিন্তু বোঝা যায়, যে, সহিষ্ণুতার যে পাঠটি আমরা দিতে এবং নিতে অভ্যস্ত, আব্বাসের চিন্তার বৃত্ত তার বাইরে। সেই ভাবনারও নিশ্চয়ই কিছু খদ্দের আছেন। কিন্তু কথা হল, ধর্মনিরপেক্ষতার এই পাঠ, বামরা হজম করবেন কী ক'রে। যে তৃণমূল রামনবমীকে অ্যাডাপ্ট করে ফেলে বিজেপিকে ঠেকাতে, তাদের পক্ষেও এই ছোঁয়াছুঁয়ির এই গোঁড়ামিকে ধর্মনিরপেক্ষতা হিসেবে মেনে নেওয়া সম্ভব না। তাহলে বামরা?
বামরা খুব সম্ভবত ভাবছেন, নিশ্চিত করে জানা নেই, এ হল নরম কাদার তাল। এই সারল্যকে নিজের মতো করে গড়েপিটে নেওয়া যাবে। পুলিশের পেটানো যে বেআইনি, মহিলাদের গাছে বেঁধে ঠ্যাঙাব বলা যে অনুচিত, এসব শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু হিসেবে একটা ভুল হওয়া খুবই সম্ভব। শহুরে মানুষরা দূর থেকে দেখে গ্রাম্যতাকে সারল্যের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। গ্রাম্য চাষিভাই মানেই সরল ও গোলগাল নয়। বরং উল্টোটাই। চাষি মাত্রেই ভাই নন, তাঁদেরও উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং হিসেবনিকেশ থাকে। সেখানে শহুরেদের যেকোনোদিন নিজের মাঠে তিন গোল দিতে তাঁরা সক্ষম। এখানে উচ্চাকাঙ্ক্ষাটি খুব সহজ। সরকারের চারটি পায়ের মধ্যে একটি হয়ে ওঠা। ওঠার পথটি সিঁড়িমাত্র। আব্বাসকে কেউই সেভাবে চেনেন না, আশা করা যায় জোটসঙ্গীরা চেনেন। আব্বাস বা আরও কোনো বড় খেলোয়াড়ের হাতে তাঁরা স্রেফ সিঁড়ি হয়ে যাবেন না।
এখানেও টুকে রাখি। "ইমামদের বলছি ভাতা নেবেন না ছেলেমেয়ের চাকরির জন্য লড়াই করুন।" বললেন আব্বাস। ধর্মান্ধ? হবেও বা। আপাতত এইটুকু শুনেই খুশী আমি। ইনি কালেদিনে জিন্নাহ হবেন কিনা সে সময়ই বলবে। তবে জিন্নাহের জিন্নাহ হয়ে ওঠার পেছনেও কঙগ্রেসের হিন্দুলবির কিছু অবদান ছিল। দেখা যাক।
সিদ্দিকুল্লা ও তিনোর মাখামাখি নিয়ে কোন পোবন্দো নামানো হয়েছে এর আগে কখনো ?
আব্বাস নিজেও থাক বক্তৃতা
নেমে গেছে, সিদ্দিকুল্লা নিয়ে রচনা
ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত
যে ইসলামিক মৌলবাদের প্রতি বামেরা নরম মনোভাব দেখাচ্ছে, গোটা মধ্য এশিয়া জুড়ে সেই ইসলাম কিন্তু কমিউনিস্টদের গিলে খেয়ে ফেলেছে।
কমিউনিস্ট নেত্রী ইলা মিত্রর উপরে মুসলিম লীগের নৃশংস অত্যাচার কি এদের স্মরণে আছে?
মানুষকে ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে সরিয়ে আনা বামপন্থীদের কাজ। বঙ্গীয় বামেরা উল্টো পথে হাঁটছেন। ওটা ভুল পথ। আত্মঘাতী পথ।
আব্বাস কি মৌলবাদ করল? তার বক্তৃতা তেই আজকের হারিয়ে যাওয়া ' জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে' বারবার আসে। কত বক্তৃতা তো শুনলাম।
সংবিধান কে সম্বল করে অধিকার ফিরে পাওয়ার যে লড়াইয়ে বাংলায় ওরা লড়ছেন সেটা সম্মানের দাবি রাখে।
আমরা কারো পাশেই থাকলাম না। না উমর খলিদ না পীরজাদা। রেভারেন্ড হলে হয়তো বা বুঝতাম সমানাধিকারের দাবী একজন যাজকের মুখ থেকেও আসতে পারে।
"আব্বাস কী মৌলবাদ করলো?"
~~
শুধু পীরজাদার ভোটের মিষ্টি কথায় ভুললে চলে? ল্যাঞ্জা ইজ ডিফিকাল্ট টু হাইড
বিপ্লব রহমান এটার সাথে মৌলবাদের কোন।সম্পর্ক নেই। ডিসক্রিমিনেটরি সিএএ আইনের বিপক্ষে যে তৃণমূল সাংসদ রা ভোট দেয়নি নুসরত ছিলেন তাদের একজন। এতে গায়ে পড়ে তার পেশা নিয়ে ফতোয়া দেওয়া হয়নি কোন। খেয়াল
রাখবেন উনি ওখানে ভোটে জিতে ছিলেন অভিনেত্রী হিসেবে ই।
ডিটেনশন ক্যামপে যাদের প্রিয় জনের গতি হতে পারে তাদের কাছে কতটা ভদ্র তা আশা করা যায় নিশ্চিত ঘরে বসে?
নিজেদের ই কারো ছড়ানো ভিডিও এব,ং সময় কাল যখন সিএএ, যখন পোশাক দেখে ঝামেলা চেনা যায়, যখন তবলিগী কোভিড, যখন গোলি মারো সালো কো।
"রাখবেন উনি ওখানে ভোটে জিতে ছিলেন অভিনেত্রী হিসেবে ই।'
তো? অভিনেত্রী মানেই দেহ বিক্রেতা!?
পীরজাদা না হারামজাদাই ছহি? ছাগু ইজ গুড ফর কাচ্চি বিরিয়ানি! =))