

আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগে ২০১৮ এর ১ মার্চ একটি সর্বভারতীয় দৈনিক পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম দলের একটি আভ্যন্তরীণ নথি ফাঁস করে। তাতে বলা হয়েছিল সিপিআই (এম) বাংলায় ৬০ থেকে ৮০ বছর বয়সের বৃদ্ধ নেতাদের সরিয়ে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সবকটি, মানে ২৩টি জেলা জুড়েই ৩০০ এরও বেশি তরুণ নেতা নিয়োগ করেছে। বয়স্ক নেতাদের সরিয়ে তরুণ মুখ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সিপিআইএম আশা করছে, এই যুব নেতৃত্ব দলে এবং রাজ্যে পার্টির গ্রহণযোগ্যতা বহু গুণ বাড়িয়ে দেবে। ওই দলিল অনুসারে, এই নতুন নেতারা সবাই ৫০ বছরের কম বয়সী এবং তাঁদের বেশিরভাগই রাজ্যের রাজনীতিতে অপরিচিত অথবা লাইটওয়েট। নতুন মুখ - যাঁদের বেশিরভাগেরই বয়স ৩০ থেকে ৪০ এর মধ্যে, তাঁরা দুই মাস ধরে সাংগঠনিক নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বে এসেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ১৯৫৩ সালে যখন দলের সেক্রেটারির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তখন তিনি মাত্র ৩৯ বছর বয়সী ছিলেন। সেই সময়ে দলীয় নেতৃত্বের গড় বয়স ছিল ৪০ বছর ছিল।
নেতৃত্ব বদলের সাম্প্রতিক প্রক্রিয়াটি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল, যখন এই অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট স্বীকার করে, দলে আগের তুলনায় তরুণ নেতাদের অভাব দেখা দিয়েছে। সাংগঠনিক প্লেনামে সিপিআইএম এর জাতীয় নেতৃত্বের সামনে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রতিবেদনের একটি অংশ বলেছে যে বাংলায় মাত্র ১৩.৫ শতাংশ সদস্যের বয়স ৩১ বছরের কম ছিল। এদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তখন বলেছিলেন “সত্তর শতাংশ ভারতীয়ের বয়স ৪০ বছরের নিচে। যুবা ছাড়া কারও ভবিষ্যত থাকে না। সিপিআই (এম) এরও ভবিষ্যৎ নেই,”। আজ পাঁচ বছর পর সেই প্রক্রিয়ার ফল ফুটেছে ব্রিগেডে। সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুর মত হাতে গোনা কয়েকজন প্রতিনিধিত্বমূলক বৃদ্ধ ছাড়া ব্রিগেড দাপিয়ে বেড়ালেন শতরূপ, ঐশী ঘোষ, বাদশা মৈত্রেরা। এঁদের স্টপগ্যাপ নেতা মহম্মদ সেলিম। এইসব ঝাঁ চকচকে উচ্চশিক্ষিত (জেএনইউ, জেউ বা টেকনোলজি ইউনি পাসআউট) ছেলেমেয়েরাই আগামী দিনে বাংলা কাঁপাবেন, জাতীয় স্তরে আলোড়ন ফেলবেন (শোনা যায় ভাল ইংরেজি বলতে না পারায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জাতীয় স্তরে কল্কে পান নি)। ধরে নেওয়া যায় এঁদের হাতে সিপিএমের ভবিষ্যত সুরক্ষিত। ব্রিগেডে তরুণ মুখের ঢল সে কথাই প্রমাণ করে। এই ঢলের প্রায় সবটাই পার্টির কাছাকাছি এসেছে গত পাঁচ বছরে, যখন পার্টির দুরবস্থা চলছে। কিন্তু এই ঢলটির এ দিকে আসার কারণ কী? গণআন্দোলনের জোয়ারে নয়। কেননা অস্তিত্বের সংকটে ভোগা সিপিএম তখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও কোনও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি।
এরা এসেছে কারণ নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্ম। তাদের গ্ল্যামার। তাদের শিক্ষাচ্ছটা। কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি, সব দলই মূলত অশিক্ষিত ভরা, যেখানে লুম্পেনরাজ চলে বলে স্বীকৃত। সেখানে মানিয়ে নেওয়া মানসিকভাবে মুশকিল। কিন্তু সিপিএমের এই তরুণ নেতৃত্ব দ্রুত বহিরঙ্গে সেই লুম্পেন্সির জ্যাকেট চড়িয়ে নিয়েছে। সারাক্ষণ বিজাতীয় মার্ক্স-লেনিন আর শ্রেণিসংগ্রাম আওড়াচ্ছে না। খিস্তি-হুল্লোড়-প্রেম আর অর্থবিলাস যে জীবনের অঙ্গ, মেনে নিয়েছে। সবচাইতে বড় কথা রাজনীতি যে কমিউনিস্টদের কাছেও একটি লোভনীয়, ঝুঁকিবিহীন পেশা, এটা প্রমাণ করতে পেরেছে। হারের পর আলগা সদস্যদের এক্সোডাস, এদের সামনে নতুন জগত উন্মোচিত করে দিয়েছে। যখন কোনও দলই নিউকামারদের এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ, সেখানে সিপিএম নিঃশব্দে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আর তাতেই শুকিয়ে যাওয়া প্রাণধারায় একটু হলেও জলসিঞ্চন হয়েছে।
সমস্যা অন্যত্রে। কমিউনিস্ট বলতে জনমানসে এক বিচিত্র স্টিরিওটাইপ রয়েছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত সৎ হবে, তারা বহুজনহিতায় জীবন উৎসর্গ করবে, তারা সর্ববিষয়ে আদর্শ হবে, তারা প্রতিস্রোত হবে, নীরব সেবাব্রতী হবে ইত্যাদি প্রভৃতি। সমস্যা হল সর্বগুণে গুণান্বিত সিপিএমের এই নব্যপ্রজন্ম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে নি। ফলে এই বিচিত্র স্টিরিওটাইপ তাদের অধিগতও নয়, আকাঙ্ক্ষিতও নয়। তারা অনেক বেশি বাস্তববাদী। তাদের রণকৌশলই তাদের রণনীতি। তারা বুদ্ধবাবুর “পে ব্যাক বাই দেয়ার ওন কয়েন” মন্ত্রে বিশ্বাসী। তাদের কোনও পিছুটান নেই। বেড়ালের রং কী তা বিবেচ্য নয়, ইঁদুর মারতে পারে কিনা সেটাই বিবেচ্য (সৌজন্য দেং শিয়াও পিং এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য)। পাশাপাশি এরা শিকড়বিহীন, আনুগত্যবিহীন ফ্লোটার। সিপিএম থেকে বিজেপিতে যেতেও এদের পলক পড়ে না (রিঙ্কু নস্কর বলেছিলেন আজকের দিনে কেউ আবার আদর্শ নিয়ে মাথা ঘামায় নাকি!)। যাদের জেতার সম্ভাবনা, তাদের সঙ্গে থাকাই নীতি। অতএব ঝাঁ চকচকে, উচ্চ শিক্ষিত, কর্পোরেট কেতাদুরস্ত অন্য যে কোনও বুর্জোয়া দলের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদীর প্রভেদরেখা ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির আইটি সেলের অনুকরণে সিপিএমেরও একটি আইটি সেল তৈরি হয়েছে। রীতিমতো অর্থের বিনিময়ে প্রায় আড়াই তিনহাজার ছেলেমেয়ে এই সেলগুলিতে কাজ করে বলে খবর। পার্টির হয়ে প্রচারই এদের মূল উদ্দেশ্য। সংখ্যায় কম হলেও অমিত মালব্যের আইটি সেলের চেয়ে এদের কার্যকারিতা অনেক বেশি। কারণ বিজেপির সেলের মতো নির্বোধ এবং অশিক্ষিত পরিপূর্ণ নয় এই সেল। তবে এরা গঠনগতভাবে বিজেপির আইটি সেলকেই অনুসরণ করে, কার্যবিধিতেও। সেই সম্ভাব্য বিরোধীদের কাছে ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো, যে কোনও বিরোধী পোস্টে একযোগে কমেন্ট করে (যার অধিকাংশেই শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে) ব্যক্তি আক্রমণ করা, ফেক ভিউয়ারশিপ দেখিয়ে টপ অব দা লিস্টে থাকা, এবং মিথ্যা তথ্য বহুজন মিলে ছড়ানো। কিন্তু এসব কাজে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। বিজেপি বা টিএমসি বা কংগ্রেসের এখনও টাকার জোগান অফুরান। কিন্তু সিপিএম কে টাকা জোগাচ্ছে কে? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
২
শত্রুর শত্রু আমাদের মিত্র। এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেস অন্য সব রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর টার্গেট। বামফ্রন্ট (সিপিএম), কংগ্রেস, আইএসএফ (আব্বাস), বিজেপি, মিম (ওয়েসি) সবাই চায় মমতাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে, পরাস্ত করতে। বাংলার মানুষ বাম থেকে তৃণমূলে এক্সোডাস দেখেছে। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এক্সোডাস দেখেছে। দলবদলের সময় নতুনদের তাগিদ থাকে কিছু একটা প্রমাণ করার। যারা এতকাল সিপিএমের বা তৃণমূলের হয়ে মুসলিমদের সঙ্গে গা ঘষাঘষি করে নিজেদের সেকুলারত্ব প্রমাণ করতো, গত লোকসভা নির্বাচনে তারাই রাতারাতি ঘোর হিন্দু হয়ে উঠেছিল। যারা পাড়ার বাইরে কিছু জানতো না তারাই হয়ে গেল আকণ্ঠ দেশভক্ত। তারা দেশভক্ত কারণ পাকিস্তান মুসলমানের দেশ। তারা ধার্মিক কেননা মুসলিমরা বিধর্মী। তারা দেশভাগের বাহাত্তর বছর পর সময় পেলো উদ্বাস্তুদের দুঃখে দুফোঁটা চোখের জল ফেলার। স্বাধীনতার ত্রিশ বছর পর মানুষ সময় পেয়েছিলো কংগ্রেসকে সরিয়ে জনতা পার্টিকে ক্ষমতায় আনতে। ১৯৭৭ সালে। তারপর বাজপেয়ী পাঁচবছর ধরে ভারতকে চকমকে (শাইনিং) করার পরও পাবলিক আবার ভোট দিয়ে কংগ্রেস কে ফিরিয়ে আনলো। পাবলিক সাংঘাতিক টলটলায়মান। কাল মোদীর সঙ্গে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে দিলে মোদী বা অমিত শাহ হয়তো তেমন বিপাকে পড়বে না। কিন্তু আজ যাঁরা দলবদলুঁ, কাল তাদের কী হবে? তাই প্রমাণ করার তাগিদ থাকেই। সিপিএম প্রবল ক্ষতি করেছিল। তৃণমূল তার থেকে বেশি ক্ষতি করেছে। আর বিজেপি তো আসার আগেই ক্ষতির তাণ্ডব শুরু করেছে। চূড়ান্ত ক্ষতির জন্য অপেক্ষা করছেন বাংলার মানুষ।
একথা সত্যি, মমতার প্রশ্রয়ে অভিষেক (ভাইপো), যে পরিমাণ রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার আর তার সঙ্গে পাবলিক মানি নয়ছয় করেছে বলে শোনা যায়, তার একাংশ সত্যি হলেও এই দুর্নামের জন্য মমতা নিজেই দায়ী। শুভেন্দু, মুকুল, অর্জুন সিং এরা যে অভিযোগ তুলে দল ছেড়েছেন তাতে অমিত শাহের সাম্প্রতিকতম বক্তব্য, নির্বাচন লড়ার জন্য একা মমতাই পড়ে থাকবেন তৃণমূলে, এটাই হয়তো সত্যি হতে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একা অভিষেক? ভোটের ঠিক এক দেড় মাস আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নৌকো ভেড়ানো নেতা মন্ত্রী সান্ত্রীরা বুঝতে পারলেন যে অভিষেক দুর্নীতিগ্রস্ত? একা মমতা তাঁর পরিবারকে গুরুত্ব দিয়েছেন? দশ বছর ধরে তাঁরা বুঝতেই পারলেন না। কী সরল! আচ্ছা সারদা নারদায় ফেঁসে মুকুল যখন জান বাঁচাতে বিজেপিতে গেলেন, তখন তাঁকে দলে নেওয়া নিয়ে বিজেপিতে প্রচুর জলঘোলা হয়েছিল না? অমিত শাহের হস্তক্ষেপেই তো “পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স” তাকে মেনে নিয়েছিল। এবং ঝুঁকি না নিয়ে তিনি তাঁর সুযোগ্য পুত্রকে তৃণমূলেই রেখে দিয়েছিলেন। সে ছেলের শ্লেট পরিষ্কার তো? জনতা কিন্তু অন্য কথা বলে। শুভেন্দু অভিষেকের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াই এ হেরে গিয়ে গুম মেরে বসে ছিলেন প্রায় পুরো সময়টা। পরিবহণ দফতরের মধু কম স্বাদু নয়। কিন্তু মেদিনীপুরের মানুষ “অধিকারী ফ্যামিলি” কাদের বলে? বাপ-ছেলে-জামাই, মানে ফুল ফ্যামিলি, দশ বছরে মমতার কাঁধে বন্দুক রেখে দুই মেদিনীপুরকে হাতের মুঠোয় পুরেছেন, এমনই বলে মন্দ লোকে। আজ চুষে ছিবড়ে হওয়া তৃণমূলকে ফেলে ফুল ফ্যামিলি বিজেপিতে। এবং তারাই সততার প্রতীক হয়ে উঠছেন। ব্যারাকপুর-ভাটপাড়া অঞ্চলে অর্জুন সিং এর দাপটে তটস্থ ছিল সাধারণ মানুষ। আজ তার পুত্র পবন সিং (সেও তৃণমূল থেকে নির্বাচিত বিধায়ক) এর দাপটে তটস্থ এলাকার মানুষ। শোভন এর নাম যে জল-শোভন, এ কোনও গোপন তথ্যও নয়। বৈশাখী দাবদাহও নতুনতর আবহাওয়া পরিবর্তন নয়। এমনকি সেচদফতর থেকে সরিয়ে বনদফতরে দেওয়াটাই রাজীবের গোঁসার কারণ, এমনই বলছে লোকে। প্রশ্ন এটা নয় যে অভিষেক শান্তনুর সঙ্গে মিলে, কিশোরের সঙ্গে মিলে, কত কামালো? প্রশ্ন এটাই যে সব কটা দুর্নীতিগ্রস্ত লোক (সব দলের কথাই বল্লাম) এর হাতে নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তুলে দিয়ে আমরা আরও কত কাল নিশ্চিন্ত থাকবো? রাজনীতি এক অদ্ভুত জগৎ। আমার এত বছরের জীবনে রাজনীতির সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থেকে মাত্র কয়েকজন রাজনীতিক দেখেছি যাঁরা সৎ থাকতে চান। পারিপার্শ্বিকতা তাঁদের সবসময়ে সে সুযোগ দেয় না। তাঁরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁদেরই একজন। সম্ভবত মমতাও। ইতিহাসের পরিহাসে তাঁদের প্রস্থান বিয়োগান্তকই হয়।
৩
প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাভাবিক বুদ্ধি যেখানে বলে বিজেপির ফ্যাসিজমকে পরাস্ত করাই আপাতত মূল কর্মসূচি হওয়া উচিত, সেখানে সিপিএমদের সেকুলার জোটের মূল লক্ষ্য বিজেপি না হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কেন? সমস্যা হলো এসব রাজনৈতিক দলের না আছে মূল্যবোধ, না আছে সততা, না আছে ধারাবাহিকতা। সিপিএমের নতুন প্রজন্ম তো স্বয়ম্ভূ। কোনওক্রমে একটা জোড়াতালি দেওয়া ছেঁদো যুক্তি সাজানো এবং তারপরেই বহু জন, বহু মঞ্চ থেকে সেটাকে বার বার বলে শ্রোতার মগজে তাকে যুক্তিসিদ্ধ করে দেওয়া। রাশিয়া প্রেম থেকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসের হাত ধরেছিল। বামফ্রন্টে ঢুকে তারা হয়ে গেল কংগ্রেস বিরোধী। হাজারের অধিক পার্টি কর্মী খুন হবার পর সিপিএম কংগ্রেস বিরোধী হয়েছিল। ভিপিকে সামনে রেখে জ্যোতিবাবুরা বাজপেয়ীর হাত ধরেছিলেন। তারপর এলো সমদূরত্বের লাইন। বাম ও বিজেপি, এই দু দলের সমর্থনে একদা কেন্দ্রে সরকার গড়া সম্ভব হলেও পরবর্তী সময়ে রাজ্যে তৃণমূল এসে মমতার নেতৃত্বে এই দুটো দলকেই বাংলা থেকে প্রায় উৎখাত করে ছেড়েছিল। মমতার তৃণমূল একটি আদ্যোপান্ত বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল। বুর্জোয়া ম্যট্রিক্সেই তার চলন গড়ন। প্রতিহিংসাপরায়ণ দুটো দল কংগ্রেস আর সিপিএম এবারের নির্বাচনে আদাজল খেয়ে লেগেছে মমতাকে উৎখাত করার জন্য। উত্তেজনায় এরা ভুলেই গেছে ঠিক কী কী কারণে বাংলার মানুষ এই দুটো দলকে গদিচ্যূত করেছিল। সেই অত্যাচার, লুণ্ঠন, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, সিন্ডিকেট রাজ, খাপ পঞ্চায়েতের ঢংয়ে লোকাল কমিটির বিচার সভা, সমাজজীবনের প্রতিটি স্তরে আধিপত্য বিস্তার করা, ঔদ্ধত্য, পণ্ডিতম্মন্যতা, কাটমানি, ডোল...অর্থাৎ আজ মমতার বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ তুলছে সিপিএম এবং কংগ্রেস, সবকটার উৎস এই দুটি দলের দিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করে। বুদ্ধ ভট্টাচার্য (চোরেদের ক্যাবিনেট) আর বিনয় চৌধুরীর (কনট্রাক্টর রাজ) সেই প্রবাদ হয়ে যাওয়া শব্দবন্ধ দুটি এই প্রসঙ্গে সাক্ষী। এই সবকটি দোষ তৃণমূল কংগ্রেসেও আছে। হয়তো একটু বেশি মাত্রায়ই আছে। কেননা মমতা সিপিএমকে হুবহু অনুসরণ করতে চেষ্টা করেন। একটা সময়ে বলা হত মমতা সিপিএমের সবচাইতে মেধাবী ছাত্রী। আর যেহেতু সিপিএমে সাম্যবাদ বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, ফলে মমতার অসুবিধে হয়েছে বলেও মনে হয় না। নির্বাচনে হারার পর সিপিএমে একটি নির্দেশিকা জারি হয়েছিল বলে শোনা যায়। সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে নত মস্তিষ্কে ভুল স্বীকার করতে হবে এবং সে সব ভুল সংশোধন করতে হবে। আজ খুব জানতে ইচ্ছে করে নত মস্তিষ্কে ভুল স্বীকার এবং সে সব ভুল সংশোধন করা হয়ে গেছে?
প্রশ্ন হলো সব বিরোধী দল, অন্য সব ইস্যু ছেড়ে, বিজেপিকে ছেড়ে, মমতাকে কেন? বিজেপির হিন্দুত্ব, ফ্যাসিজম, সংবিধান উল্লঙ্ঘন, ৩৭০ বিলোপ, এনআরসি সিএএ, ধর্মান্ধতা, পুলিশরাজ, গুণ্ডারাজ, অবাধ লুন্ঠন, কর্পোরেট জগতের সামনে আত্মসমর্পণ, সমস্ত লাভজনক সংস্থা বিক্রি করে দেওয়া, দাসপ্রথা ফিরিয়ে আনা, প্রাগৈতিহাসিক যুগ ফিরিয়ে আনা, এক প্রকাশ্য, হৃদয়হীন, স্বার্থান্ধ, নৃশংস বিভাজনের রাজনীতি, পরিব্যাপ্ত হয়েছে দেশ জুড়ে, সে প্রধান শত্রু নয়? বিশেষত বাঙালির বিরুদ্ধে? ভাষা ধর্ম বিভাজন শুধু নয়, বাংলাদেশ থেকে আগত বলে, সারা ভারতে বাঙালিদের ভুয়ো নাগরিক বলে চিহ্নিত করে দেওয়া হচ্ছে। সব অন্ধকারের জীবের গন্তব্য এখন বিজেপি। যে কটি নেতা বা কর্মী অন্য দল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকে অসৎ, ধূর্ত, সুযোগসন্ধানী, এবং কলঙ্কিত। এদের বিরুদ্ধেই এতকাল বিজেপি মুখর ছিল, আজ বিজেপিতে যোগ দেওয়া মাত্র তাদের ভূতশুদ্ধি হয়ে গেল? তবু বিজেপি প্রধান শত্রু নয়? বিজেপি ভারতীয় সভ্যতার জন্যই নয়, মানবসভ্যতার জন্যই বিপদ। জনপ্রিয়তা এবং বিশ্বস্ততার জায়গা থেকে এখনও পর্যন্ত মমতাকে বাদ দিয়ে বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়ার গতিরোধ করার স্পর্ধা এবং ক্ষমতা এ বঙ্গে কারও নেই।
ফলে সব আক্রমণ মমতার বিরুদ্ধে। এই আশঙ্কাও ব্যক্ত করা হচ্ছে যে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হয়ে গেলে বিজেপি মমতার দল ভাঙিয়ে সরকার গড়বে অথবা মমতা নিজেই বিজেপির সমর্থনে সরকার গড়বে। কিন্তু একথা বাংলার সব মানুষই জানে, এমনকি সংশ্লিষ্ট দলগুলিও জানে সিপিএম-কংগ্রেস-আব্বাসের ক্ষমতা নেই একক শক্তিতে সরকার গড়ার। সেক্ষেত্রে তারা কী করবে? বাম বিধায়কেরা কেউ দলবদল করে বিজেপিতে যায় নি এমন নয়। বিশেষত এই আন্দোলনবিহীন, ভোগবাদী সমাজের উৎপাদন, শিকড়হীন নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব? যারা মনে প্রাণে কামাওবাদী? আর যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেখানে বিজেপি এবং মমতা দুজনেই সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় সংখ্যার থেকে কম হচ্ছে, তখন এই জোট কাকে সমর্থন দেবে? ভোট দেবার আগে, সিদ্ধান্ত নেবার আগে, এগুলো তো জানা প্রয়োজন।
অসাধারণ ব্যাখ্যা।
সম্বিৎ | ০৫ মার্চ ২০২১ ১২:২৯103178বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা। কাউন্টার কোন ব্যাখ্যা থাকলে শুনতে চাই।
কয়েকটি প্রশ্ন তুলে দিলেন। কয়েকটি সম্ভাবনার কথা বললেন। ভাল। কিন্তু সিদ্ধান্ত কই? মানুষ (ভোটার) কি করবে তাহলে? কোন পক্ষের সাথে নিজেকে মেলাবে? না কি আদৌ কাউকে সমর্থন জানাবে না? বর্তমান আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিতে, খেয়ে পড়ে বাঁচার জন্য কোন সরকারটি গ্রহণযোগ্য হবে, সে বিষয়ে তো আলোকপাত করলেন না?
পার্থদার লেখাটায় কিছু স্ববিরোধিতা আছে। পার্থদা কারেক্টলি আইডেন্টিফাই করেছেন যে সিপিএমের নতুন প্রজন্ম ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ক্ষমতার আকর্ষণে পার্টি করতে আসেনি। তাহলে তারা একই সাথে কামাওবাদী হয় কী করে! আমার মনে হয় কামাওবাদী বলে দেওয়াটা অতিসরলীকরণ। শহর মফ:স্বলে সিপিএমে যে তরুণ প্রজন্ম যুক্ত হয়েছে তাদের স্পিরিটকে অসম্মান করার কোনো কারণ নেই। সমালোচনার জায়গাটা সঠিক যে এঁরা কোনো বড় গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যুক্ত হননি। কিন্তু বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি এবং তৃণমূলের এসএসসি টেট দুর্নীতি (যে চাকরির পরীক্ষাগুলোয় শহর মফ:স্বলের শিক্ষিত তরুণদের অ্যাসপিরেশন জড়িয়ে থাকে) শিক্ষিত তরুণদের একটা বড় অংশের মধ্যে অস্থিরতা ও হতাশা তৈরী করেছে। লকডাউনের পর্বে মূলত শ্রমজীবী ক্যান্টিন এবং এধরণের সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে এই জেনারেশনের একটা অংশকে সিপিএম কাছে টানতে পেরেছে। ফলে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যুক্ত না হলেও মানবিক কাজের মধ্যে দিয়েই তাদের সিপিএমে যুক্ত হওয়া। এটাকে অসম্মান করার কারণ দেখিনা।
একই সাথে সমালোচনার জায়গাটা হল এই প্রজন্ম চাকরি চায় ঠিকই কিন্তু বাংলায় চাকরি কোন পথে বাড়বে সে নিয়ে তাদের কাছে কোনো সুস্পষ্ট দিশা নেই। তৃণমূলের জায়গায় সিপিএম ক্ষমতায় থাকলে এসএসসি টেট দুর্নীতি হত না - এটা ধরে নিলেও তা দিয়ে যুব সমাজের চাকরির সমস্যা সমাধান হয়ে যেত না। কাজেই আরও কর্মসংস্থান এই নিওলিবারাল জমানায় কোন পথে হতে পারে সে নিয়ে খোলা মনে চর্চার প্রয়োজন। সমস্যা হল বিগত দশ বছরে সিপিএম নেতৃত্ব এ বিষয়ে নতুন কোনো দিশা দিতে পারেননি। তাঁরা করম্সংস্থানের কথা উঠলেই ফিরে গেছেন সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম মডেলে। সেই নিওলিবারাল মডেল কোথায় কংগ্রেস বিজেপির মডেলের থেকে আলাদা তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি। সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়েই এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে শিক্ষিত শাইনিং মধ্যবিত্ত যুবসমাজকে তা স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হলেও আসলে তা কর্মসংস্থানের বৃহত্তর প্রশ্নকে সমাধান করতে পারে না। তাই শাইনিং মধ্যবিত্ত তরুণদের প্রচুর সমর্থন সিঙ্গুর নিয়ে সিপিএমের প্রতি থাকা সত্ত্বেও সিপিএমের ভরাডুবি হয়েছিল। এখন যে তরুণ প্রজন্ম সিপিএমের সাথে আসছে তারা মননে এবং স্পিরিটে পজিটিভ হলেও দু:খজনকভাবে সিপিএম নেতৃত্ব তাদের কাঁধে সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের ক্রশটি চাপিয়ে দিতে চাইছেন - সুস্পষ্ট বিকল্প দিশার অভাবে। এটা একটা শর্টকাট রাস্তা। কর্মসংস্থানের গাজর ঝুলিয়ে নতুন প্রজন্মের অ্যাস্পিরেশনের সাথে কানেক্ট করার। এই শর্টকাটটা নেতৃত্ব জেনেবুঝেই নিচ্ছেন। এটা ব্যাকফায়ার করবে কিনা সময় বলবে। কিন্তু এজন্য নেতৃত্বকে দোষারোপ করা যায়। কোনোভাবেই নতুন প্রজন্মকে নয়।
ভাস্বতী | 223.235.***.*** | ০৫ মার্চ ২০২১ ১৫:৫১103181এই তরুণ প্রজন্ম সিপিএম এ কতদিন থাকেন অথবা আদৌ ফুল টাইম রাজনীতিতে কতদিন থাকেন সেটা দেখার। পার্থ বাবু ঋতব্রত র কথা বলেন নি , যিনি বেশ interesting উদাহরণ। প্রধান শত্রু পার্টি র আদর্শ বলে কিছু নেই এটা সত্যি, অপর দিকে সিপিএম এর আদর্শ ও এখন অতল তলে।
dc | 122.174.***.*** | ০৫ মার্চ ২০২১ ১৭:১০103182"আমার এত বছরের জীবনে রাজনীতির সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থেকে মাত্র কয়েকজন রাজনীতিক দেখেছি যাঁরা সৎ থাকতে চান। পারিপার্শ্বিকতা তাঁদের সবসময়ে সে সুযোগ দেয় না। তাঁরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁদেরই একজন। সম্ভবত মমতাও।"
সম্ভবত??!!?? হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে গেলাম, তবে মা সারদার কৃপায় কোমরে তেমন চোট পাইনি।
সম্বিৎ | ০৬ মার্চ ২০২১ ০৩:১২103190আমাদের সততার মাপকাঠিটা অদ্ভুত। সন্দীপনের আত্মজীবনীতে পড়েছিলাম ওনার কর্পোরেশনের চাকরি জীবনের কথা। খুব স্ট্রেট ফেসে লিখেছিলেন যে আমি কাজে ফাঁকি দিই - মানে আপিসে গিয়ে কিছুক্ষণ পরেই বেরিয়ে নিজের কাজ করি ইত্যাদি, কিন্তু কোনদিন ঘুষ নিইনি। অর্থাৎ কামচুরির মধ্যে অসততা নেই, সব অসততা ঘুষ খাওয়ায়।
এর দ্বারা বুদ্ধদেববাবু বা মমতা দেবী সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করা হলনা।
মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়। | 2401:4900:3827:e6a6:1cc4:1fff:3f5c:***:*** | ০৬ মার্চ ২০২১ ০৬:৫৭103191সব বেশ মিলে যাচ্ছে। অনেক ধন্যবাদ। দারুণ বিশ্লেষণ।
Aa | 2409:4060:210f:a432:e6f6:20c4:1fef:***:*** | ০৬ মার্চ ২০২১ ১৬:০১103199প্রথমত একটা দল যাদের ' দূরবীন দিয়েও দেখা যায় না ' তারা কি করলো তা নিয়ে এত মাথাব্যথার কারণ দেখিনা।
সিপিআইএম একটা ভিখিরি দল বলেই জানতাম, কৌটো না নাড়ালে সভা করার পয়সা জোটে না। ব্রিগেড অনেক কষ্ট করে চাঁদা তুলে করতে পেরেছে। আইটি সেলের পয়সা কোথা থেকে পাবে? কিছু ছেলেপিলে (বেশিরভাগ ই সমর্থক, ক্যাডার না) ব্যক্তিগত তাগিদ থেকে কিছু পেজ চালায়, কিছুজন কমেন্ট করে। নিজেদের অবসর সময়েই করে। এরা কেউ পয়সা পায় বলে শুনিনি।
আর JNU থেকে যারা পার্টিতে আসছে তারা না আসলেই আসলে ভালো। ওরা নিজের যোগ্যতায় ভালো মোটা মাইনের চাকরি পেয়েই যাবে। দেশের ভালো করতে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করছে। আসলে এখনও বোঝেনি যে ওদের এই sacrifice এর কানাকড়ি মূল্য আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা দেবো না। আমাদের জন্য ক্লাস ফোর পাস বা জালি ডিগ্রী নেতারাই ঠিক আছে।
MR | 2603:8080:ca04:c4df:4dfe:22c:2c1e:***:*** | ০৬ মার্চ ২০২১ ২১:৫২103202তাও সিপিএম এর জন্য এই পাতায় রাজনীতির কথা এলো নয়তো এটা তো গান সিনেমা শিল্প জাতীয়র পাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।সব সমস্যা মিটে গেচে কিনা ।রাজ্যে চপ শিল্পর জোয়ার এসেছে। প্রোমোটারি করে ঘরে ঘরে কোটিপতি !!আহা দেখলো ভালোলাগে !ওই একটাই সমস্যা ওনারা এখনো কাঁটা মুক্ত হতে পারেননি ।তবে আবার বাড়বাড়ন্ত হলে গামছা পরে নামবেন বৈকি মাঠে ।আর কিছু না পেলে কেন টুম্পা সোনা ব্যবহার হলো তাই নিয়েই দিস্তে ২ লিখে ফেলবেন !(আমি মনেকরি টুম্পা র উত্তরণ ঘটেছে যদিও )
Ss | 2402:3a80:a40:2a85:cc5d:9253:518f:***:*** | ০৭ মার্চ ২০২১ ০০:৫১103210লেখাটি সমস্যাজনক ,পরস্পরবিরোধিতায় পরিপূর্ণ। অনেকাংশেই ঘণ্ট। সংযুক্ত মোর্চার চেয়েও ঘাঁটা।
নিজের দেওয়া যুক্তিতে নিজের লেখাই কাটা পড়ে।
বিজেপিতে তৃণমূলের থেকে যারা গেছে তারা দুর্নীতিগ্রস্ত বলতে গিয়ে লিখলেন,"আচ্ছা সারদা নারদায় ফেঁসে মুকুল যখন জান বাঁচাতে বিজেপিতে গেলেন, তখন তাঁকে দলে নেওয়া নিয়ে বিজেপিতে প্রচুর জলঘোলা হয়েছিল না? অমিত শাহের হস্তক্ষেপেই তো “পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স” তাকে মেনে নিয়েছিল। এবং ঝুঁকি না নিয়ে তিনি তাঁর সুযোগ্য পুত্রকে তৃণমূলেই রেখে দিয়েছিলেন। সে ছেলের শ্লেট পরিষ্কার তো? জনতা কিন্তু অন্য কথা বলে। "
এই যুক্তিতে তৃণমূলে পড়ে থাকা ছেলেই দুর্নীতিগ্রস্ত বোঝাচ্ছে।
আবার,'যে কটি নেতা বা কর্মী অন্য দল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকে অসৎ, ধূর্ত, সুযোগসন্ধানী, এবং কলঙ্কিত। এদের বিরুদ্ধেই এতকাল বিজেপি মুখর ছিল, আজ বিজেপিতে যোগ দেওয়া মাত্র তাদের ভূতশুদ্ধি হয়ে গেল? তবু বিজেপি প্রধান শত্রু নয়? '
এই যুক্তিতে তৃণমূলে এতদিন এই 'অসৎ, ধূর্ত, সুযোগসন্ধানী, এবং কলঙ্কিত' নেতারা যখন ছিলেন (এবং আরো আছেন) ,তখন তৃণমূলও কি সেই কারণে আপনারই যুক্তিকে প্রধান শত্রুর ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করছিল না ?
এখানেই বা কী বোঝাতে চাইলেন,স্পষ্ট নয়। সারাক্ষণ বিজাতীয় মার্ক্স-লেনিন আর শ্রেণিসংগ্রাম আওড়ানো ভাল , হুল্লোড়-প্রেম খারাপ ,এরকম কিছু ? আর কোন দল আবার নিউকামারদের জমি ছাড়লনা !
"এরা এসেছে কারণ নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্ম। তাদের গ্ল্যামার। তাদের শিক্ষাচ্ছটা। কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি, সব দলই মূলত অশিক্ষিত ভরা, যেখানে লুম্পেনরাজ চলে বলে স্বীকৃত। সেখানে মানিয়ে নেওয়া মানসিকভাবে মুশকিল। কিন্তু সিপিএমের এই তরুণ নেতৃত্ব দ্রুত বহিরঙ্গে সেই লুম্পেন্সির জ্যাকেট চড়িয়ে নিয়েছে। সারাক্ষণ বিজাতীয় মার্ক্স-লেনিন আর শ্রেণিসংগ্রাম আওড়াচ্ছে না। খিস্তি-হুল্লোড়-প্রেম আর অর্থবিলাস যে জীবনের অঙ্গ, মেনে নিয়েছে। সবচাইতে বড় কথা রাজনীতি যে কমিউনিস্টদের কাছেও একটি লোভনীয়, ঝুঁকিবিহীন পেশা, এটা প্রমাণ করতে পেরেছে। হারের পর আলগা সদস্যদের এক্সোডাস, এদের সামনে নতুন জগত উন্মোচিত করে দিয়েছে। যখন কোনও দলই নিউকামারদের এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ, সেখানে সিপিএম নিঃশব্দে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আর তাতেই শুকিয়ে যাওয়া প্রাণধারায় একটু হলেও জলসিঞ্চন হয়েছে।"
এছাড়া , বামপন্থীদের নতুন প্রজন্মকে কামাওবাদী আখ্যা দেওয়ার কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়না। বস্তুত কোন ব্যাখাতে এটি আসেইনা। তাদের নিয়ে হাজারটি অন্য সমালোচনা থাকলেও। নিজেই যেখানে বলছেন " একথা বাংলার সব মানুষই জানে, এমনকি সংশ্লিষ্ট দলগুলিও জানে সিপিএম-কংগ্রেস-আব্বাসের ক্ষমতা নেই একক শক্তিতে সরকার গড়ার।"
সম্পাদিত প্রবন্ধে এমনিতেও এই সব কামাওবাদী জাতীয় শব্দের প্রয়োগ খুবই দৃষ্টিকটু। যেমন চোখে লাগে লেখা জুড়ে 'তারা বললেন' , 'ওরা করলেন' জাতীয় শব্দবন্ধ। চন্দ্রবিন্দুর কি চন্দ্রবিন্দুপ্রাপ্তি ঘটেছে ?
যাহোক,আপনাদের এখানে লেখা বেশ সমস্যার দেখছি। কোট করা অংশগুলির আগে পরে নানা বাক্যে নানারকম সাইজের ফন্ট এসে গেছে দেখছি,বদলানোর উপায় দেখলাম না। কষ্টেসৃষ্টে পড়ে নেবেন একটু।
ঘাঁটা নয়, বেশ ঘাঁটাও নয়। এ'লেখা ঘ্যাঁট পুরো।
আর, গুরুচণ্ডালী কর্তৃপক্ষ, -- মেহেরবানি করে ফন্টের গোলমালগুলো কাটানোর চেষ্টা করুননা। এখানে কিছু লিখতে গেলে দেখি, প্রথমটা ঠিকঠাক থাকে। দু'চার লাইন লেখার পরই চিত্তির ।
ছিহপিএম | 2405:8100:8000:5ca1::10b9:***:*** | ০৮ মার্চ ২০২১ ১৩:০৮103257ও মিথ্যেবাদী(M)রাস্কেল ( R) উদয় হয়েছে আবার। এপাতায় শিল্পসায়িত্য ছাড়া কিছু দেখেনি মিথ্যেবাদীটা। প্রতিভা সরকারের লাগাতার লেখাগুলো চোখে পড়বে না।এই খিস্তিবাজ আইটিসেলগুলো একে ত মেয়েমানুষের লেখা তায় আবার শিল্পে দূষণ এইসব নিয়ে লিখছে ওসব দেখতেই অয়াব না। সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ত দেখলেই এদের পোদ ফাটে। বাকীসবকে খিস্তি করার জন্য তন্ময় বাসব পারিজাত রাজদীপ বাহিনী রেডি আছে।
দেবাশিস | 103.75.***.*** | ০৯ মার্চ ২০২১ ১৩:৪১103322লিবেমুলি লেখা, লিবেমুলিদের কাছ থেকে এই রকম কথা অনেক পড়েছি, তাই নতুনত্ব কিছু পেলাম না, বিজেমুলের সাহায্যকারী শক্তি এই আপনাদের মত লিবেমুল।
অরা | 2001:67c:2660:425:92e2:baff:fe20:***:*** | ১০ মার্চ ২০২১ ০০:১৮103386এমনভাবে কি বলা যেতে পারে, আমাদের বাবা মা, পার্টি আমলে চাকরি পেয়েছিলেন, তাই আজকে আমরা সিপিআইএম করার বিলাসিতা অর্জন করতে পেরেছি।
ইন্টারনেটের মায়াবী জগতে যাদের সিপিআইএম নিয়ে বড় বড় কথা বলতে দেখি, তাদের দেখেই বললাম।
Arnab | 2402:3a80:196b:c3ab:678:5634:1232:***:*** | ১০ মার্চ ২০২১ ০০:২৮103389ইনি একজন আদ্যন্ত ইন্টেলেকচুয়ালি ডিজঅনেস্ট ব্যক্তি । সেটা লেখাটা অল্প পড়েই বোঝা যায় । যুক্তির ফাঁকগুলো অত্যন্ত বেশী প্রকট । দৃষ্টিকটূরকম প্যাট্রোনাইজিং । বেশিটাই কনজেকচার । বরং পড়ে মনে হয় সিপিএমের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এই লেখার জন্ম ( 34 বছর ক্ষমতায় থেকে এই দলটিও কম লোকের পশ্চাতে উৎপাত করেনি !! পাড়ায় মাতব্বরি থেকে কাটমানি , দূর্নীতি , তোলাবাজি সবটাই বেশ মেপে করেছে সেন্ট্রালাইজ কায়দায় । সুক্ষভাবে । নিজ অভিজ্ঞতায় বলছি ।) অবশ্য গুরুচন্ডালি থেকে এরকম খানিকটা আশা করাই যায় । নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় এই গুরুচন্ডালি থেকেই নানা কন্সপিরেসি থিয়োরির দিব্যি বেরিয়েছে লেখা আকারে ( প্রমাণ ছবিতে দিলাম ; আমেরিকা হলে একে দিব্যি ,অতি-দক্ষিনপন্থী Q-AN এর সাথে তুলনা করা হতো) ।
যাই হোক । ওনার যুক্তিতে কোথায় খামতি আছে অনেকেই এখানে বলছেন ।সেসব আর রিপিট করছিনা ।
উনি ,একটু স্থুলভাবে বললে, লাজুক তৃণমূল ( যদিও নিজেকে ফেসবুকে কমিউনিষ্ট ব'লে দাবী করেছেন । এই ঔদ্ধত্য আমি অনেক বামপন্থি রাজনীতি করা ব্যক্তিকেও বুক্ঠুকে বলতে শুনিনি ।) । মোদ্দাকথা : বামপন্থি দাবি করে মরাল সুপিরিওরিটির জায়গাটি ছাড়বেন না ,আবার সরাসরি 'তৃণমূলকে ভোট দিন' সোজাসুজি বলবেন না ,কারণ তাহলে তৃণমূলের আধা-সাম্প্রদায়িক , লুম্পেন রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন ।
যে ব্যক্তি সমর্থকদের সাথে ক্যাডারের তফাৎ বুঝতে পারেন না ( বা বুঝতে চান না ;এটার সম্ভাবনাই বেশি। ), তার লেখা কী করে গুরুচন্ডালী থেকে বেরোচ্ছে সেটাতে খানিকটা অবাক হতে হয় । আর কিছু না হোক ,মানে রাজনৈতিক প্রপাগ্যাণ্ডা করার জন্যও একটু পাকা মাথার লোক দরকার কিনা ।
তাছাড়া সিপিএমের সমালোচনার জন্য এতো কষ্ট করার প্রয়োজন ছিল না । আমিও কিছু এখনই না-ভেবে গোটা দশেক বিষয় বলে দিতে পারি । ( তারমধ্যে সাম্প্রদায়িকতা বিষয়টি থাকবে না অবশ্য ।)
উনি নিজেকে কমিউনিষ্ট বলছেন ,আবার একই সাথে ( যদি
ওনার ফেসবুক যদি ফলো করেন! ) গ্রামের খেটে-খাওয়া মানুষের ভাষা-উচ্চারণ নিয়ে মশকরা খিল্লি করেন । উচ্চ-বর্ণের হিন্দু হবার প্রিভিলেজ হতে পারে । আবার অন্য কারণও থাকতে পারে ।
aranya | 162.115.***.*** | ১০ মার্চ ২০২১ ০০:৫৫103395অর্ণব, লেখকের বদলে লেখায় ফোকাস করলে ভাল হয়।
ফেসবুকে এই লেখক কী লেখেন , তা এখানে আনার প্রয়োজন নেই তো । এখানে যা লিখেছেন , সেই বক্তব্য-কে কাটাছেঁড়া করুন
Arnab | 2402:3a80:196b:c3ab:678:5634:1232:***:*** | ১০ মার্চ ২০২১ ০০:৫৭103396এই মাত্র দেখলাম মহামহিম পার্থবাবু আমাকে ব্লক করিয়াছেন ফেসবুকে । কারণ ওনার এই ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅনেস্টির কথা বারবার গিয়ে লিখে আসছিলাম। উনি আমাকে আইটিসেল , আমার ভাষা ব্যবহারের অদক্ষতা ( যেটা আমিও অস্বীকার করি না ) ইত্যাদি অন্য বিষয় নিয়ে প্যাট্রোনাইজিংলি বলতে থাকেন , মূল রাজনৈতিক বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে ।
অবশ্য সবাই নিজেদের চারআশে হ্যা-বলা ব্যক্তিদের বলয় চান । হ্যা, এইসব উচ্চ-বর্ণের হিন্দু যিনি একইসাথে স্বঘোষিত 'কমিউনিস্ট'রাও ।
Arnab | 2402:3a80:196c:15d1:778:5634:1232:***:*** | ১০ মার্চ ২০২১ ১৩:১১103434aranya বাবুদের জন্য ।
দেখুন মশাই , একজন লেখককে তার ব্যক্তিজীবনের মানুষ থেকে আলাদা রেখে আলোচনায় বিশ্বাস করিনা । বিশেষত সেই লেখক যদি অন্যকে অনবরত স্যাংটামোনিয়াসলি জাজ করতে থাকেন প্রকাশ্যে ।
আর আপনার যুক্তি মেনে চললে :
1) পিটার হ্যান্ডকে-এর নাম শুনে থাকবেন । অস্ট্রিয়ার লেখক । ২০১৯-এ মনে হয় নোবেল পেয়েছেন সাহিত্যে ।
তা নিয়ে অনেকে সমালোচনা হয়েছিল । কারণ ? তিনি সাবেক যুগোস্লাভিয়ার দাঙ্গায় সার্বদের মুসলিম নিধনের হোতা স্লোবোদান মিলোসেভিচ এর সমর্থন করেছিলেন । এবং জেনোসাইড ডিনায়ার ছিলেন ।
2) একইভাবে ঐতিহাসিক ডেভিড আরউইনের লেখা নাতসি জার্মানি নিয়ে বই পড়ার আগে আপনাকে জানতে হবে উনিও একজন হলোকাস্ট ডিনায়ার ।
3) হিটলারের আঁকা পেইন্টিংও দেখে আহ্লাদিত হবেন না এবং হয়তো বলবেন , (আহা !) চিত্রকর কে প্রশ্ন কেনো , ওনার পেইন্টিংয় নিয়ে বলুন !!
4) কিংবা উইন্সটন চারচিল এর লেখা 'দ্য উইথরিং স্টর্ম ' বা হাউজ কমনজ-এর ভাষণ শুনে বাহঃ বাহঃ করবেন । কিন্তু লোকটি যে যুদ্ধবাজ এবং রেসিস্ট ছিলো ( তাছাড়াও বাংলায় 43-এর ফেমিনের জন্য দায়ী )সেসব নিয়ে কিছু বলা যাবেনা ।
তাই ব্যক্তি এবং লেখক কে আলাদা করে দেখা একটা সহজ এবং প্রচলিত পন্থা হতে পারে । কিন্তু একমাত্র পথ নয় । নৈতিক তো নয়ই।
dc | 2405:201:e010:501c:8d2:a666:2cd1:***:*** | ১০ মার্চ ২০২১ ১৩:৩৩103437এবার বুঝতে পারছি দাদুর লেখার শক্তি।
সিপিএম মরিয়া ভূত হইয়াও বারংবার প্রমাণ করিতে থাকে সিপিএম মরে নাই।
PM | 120.5.***.*** | ১০ মার্চ ২০২১ ১৪:৪৯103445হুম , যা বলেছেন। .অতিবামদের মনেই আমৃত্যু সিপিএম বেঁচে বর্তে থাকবে , যা দেখা যাচ্ছে :)
আমার একটাই কৌতূহল , ভোট হারলে রাজনীতিহীন তিনো দলটাও উঠে যাবে , শুধু বিজেপি ই পারে থাকবে । তখন এরা কি করবেন ?:) :)
PT | 45.64.***.*** | ১১ মার্চ ২০২১ ০০:৪৮103476এই সকল পান্ডিতেরা নিজেরা একটি অতি বিশুদ্ধ কমিউনিষ্ট পার্টি গঠন করতে পারেন না? নাকি এনারা চোখে আঙুল দাদা?
আশ্চর্য | 2402:3a80:a11:313b:edbb:aba4:c511:***:*** | ১১ মার্চ ২০২১ ১২:৩৩103490এই ট্রোলটা সর্বত্র নেচে বেড়াচ্ছে কেন? অদ্ভুত ইডিয়সিনক্র্যাট হয়ে উঠেছে তো!