এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কলতান ও ইলিনা - ২৪

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ নভেম্বর ২০২৫ | ২৯ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪
    (২৪)

    সকাল নটা নাগাদ কলতানের বাইক রওয়ানা দিল নিউ গড়িয়ার উদ্দেশ্যে। প্রায় সোয়া এক ঘন্টা পর ম্যাগনোলিয়া রেসিডেন্সির গেটের সামনে এসে থামল। সিকিউরিটি গার্ড এগিয়ে এল তার দিকে। এ সেই আগের দিনের মানুষটি নয়। তার বোধহয় এখন ডিউটির সময় নয়।
    হাসি হাসি মুখে বলল, ' কোথায় যাবেন ? '
    --- ' এল টেন বাই ফাইভ, এল ব্লক... ' কলতান সরাসরি বলল যেটা আগের দিনের সিকিউরিটির কাছে শুনে গিয়েছিল।
    --- ' মানে, টেনথ ফ্লোর ? '
    --- ' হ্যাঁ হ্যাঁ.... '
    --- ' কি নাম আছে স্যার? '
    --- ' বিক্রমজিৎ নিয়োগী, অশ্বিনী তেওয়ারি ... '
    --- ' একটু দাঁড়ান স্যার... লগবুক দেখছি... '
    সে কিয়স্কে ঢুকে জাবদা খাতা খুলে চোখ বোলাতে লাগল। খাতা বন্ধ করে বেরিয়ে এসে বলল, ' যান... আছে... '
    --- ' কে আছে ? '
    --- ' তা জানি না। এখন লোক আছে, এটুকু বলতে পারি। আসলে এরা সপ্তাহে একদিন আসে কিনা সন্দেহ। আপনার বোধহয় আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা ছিল, নইলে এভাবে চট করে এসে তো এনাদের পাওয়া যায় না। ফ্ল্যাটে কেউ থাকে না... কেন বিজনেস টিজনেস চালায় মনে হয়... আরে দূর আপনাকে এসব বলছি কেন... আপনি নিশ্চয়ই বিজনেসের ব্যাপারেই এসেছেন, সবই তো জানেন নিশ্চয়ই... আচ্ছা ঠিক আছে স্যার, কিছু মনে করবেন না... গ্রামের লোক তো, একটু বেশি কথা বলে ফেলি... হ্যাঃ হ্যাঃ... কী করব বলুন.... '

    কলতান বুঝতে পারল লোকটি একটু বাচাল প্রকৃতির। দশতলায় ওঠার আগে একে আরও একটু টোকা মেরে দেখা যেতে পারে। সিকিউরিটি আরও কী সব বলতে যাচ্ছিল, এই সময়ে একটা স্করপিও গাড়ি এসে থামল গেটের সামনে।
    সে শশব্যস্ত হয়ে ওদিকে এগিয়ে গেল। তাড়াতাড়ি গেট খুলে গাড়ি ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা করল। গাড়িটা ঢুকে গেলে, হাস্যমুখী রক্ষীমশাই আবার কলতানের কাছে ফিরে এল। তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে কলতানকে তার বেশ ভাল লেগে গেছে। শুদ্ধসত্ত্ববাবু অনেকবার বলেছেন, কলতানের সামগ্রিক উপস্থিতিতে একটা মনোরম চৌম্বক আকর্ষণ আছে। এখানেও বোধহয় চৌম্বক আকর্ষণ হল।
    সিকিউরিটিবাবু এসে হঠাৎ অকপটে বলল, ' আমার নাম হল তপন কপাট, লক্ষীকান্তপুর লাইনে বাড়ি। যেতে আসতেই চার ঘন্টার ওপর লাগে, বুঝলেন না... খরচ তো কিছু কম নয়, এই ক'টা টাকায় কী বা হয়, টানা খুব মুশ্কিল হয়ে যাচ্ছে বুঝলেন স্যার... আমি অনেককেই বলেছি ... কিন্তু কেউই ঠিক... '
    --- ' কী ? '
    --- ' ওই.... একটা চাকরির জন্য, মোটামুটি ডাল ভাত জোটাবার মতো। বড় মেয়েটার বিয়ে দিতে হবে... অনেক টেনশান... বুঝলেন না... '
    কলতান বুঝতে পারল এ কথাগুলো তপন কপাট অনেককেই বলে থাকে। কিন্তু তারা সম্ভবত, যেমন ঘটে সাধারনত, এ কান দিয়ে শুনে ও কান দিয়ে বার করে দিয়েছে ও সব নিবেদন।
    সে বলল, ' ও আচ্ছা... কিন্তু আমার তো তেমন জানাশোনা নেই। সাধারণ লোক আমি... '
    --- ' না মানে, যদি ওনাকে একটু বলেন... আপনি তো ওনার কাছেই যাবেন এল টেন বাই ফাইভে ... উনি সব পারেন... একটা চাকরি কোন ব্যাপারই না ঘটক স্যারের কাছে ... '
    হঠাৎ কে যেন আচমকা ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজিয়ে দিল। অপ্রত্যাশিতভাবে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা। কলতান মুহুর্তের মধ্যে গুছিয়ে নিল নিজেকে।
    সে সরাসরি কোন জিজ্ঞাসার মধ্যে গেল না।
    বলল, ' হ্যাঁ তা ঠিক। দাদা রাজনীতির লোক বলে কথা। বিলুদার হাত অনেক লম্বা। ক্ষমতা আছে কিন্তু বিলুদার... '
    তপন কপাট বলল, ' বিলুদা মানে বিল্বদল ঘটকের কথা বলছেন তো ? '
    মানে, কলতানের ছোঁড়া ঢিল ঠিক জায়গায় লেগে গেছে। পরিষ্কার বোঝা গেল ত্রিধারার মোহনা হল ম্যাগনোলিয়া রেসিডেন্সি। বিল্বদল, বিক্রমজিৎ এবং অশ্বিনী।
    কলতান ঠিক করে নিল এখানে এখন না ঢুকলেও চলবে। কালীঘাটে অনুষ্ঠানসূচী তো ঠিকই হয়ে আছে। বাইকে সওয়ার হয়ে গাড়ি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া শুরু করতেই তপন কপাট বলল, ' একি... চলে যাচ্ছেন স্যার! ভেতরে যাবেন না ? '
    --- ' হ্যাঁ যাব একটু পরে। উনি এখনই এলেন তো। আমি একটু ঘুরে আসছি ... '
    কলতানের বাইক গতিষ্মান হল। তপন কপাট গলা তুলে বলল, ' ঠিক আছে, আমার কথাটা একটু মাথায় রাখবেন স্যার ... '

    কলতান রেড রোড দিয়ে ধর্মতলার দিকে আসছিল। রাস্তার মাঝে বুঝতে পারল মোবাইলে একটা মেসেজ ঢুকেছে। এই সময়ে প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। এক মিনিটও নষ্ট করা যায় না। সে রাস্তার একপাশে ময়দানের ধারে বাইক দাঁড় করাল। মোবাইল বার করে মেসেজে চোখ বোলাতে লাগল হোয়াটসঅ্যাপে। তমাল ঘোষের পাঠানো ল্যাবরেটরি রিপোর্ট। তাড়াতাড়ি জেনে নেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে কলতানকে। লিখেছে হার্ড কপি নিয়ে পরে আসবে তার কাছে।
    কলতান ময়দানের ধারে বাইকে বসে মন দিয়ে তোয়ালে রুমাল, থকথকে রক্ত আর চুলের ডি এন এ রিপোর্ট পড়ে নিল বার তিনেক। তারপর মুচকি হেসে মোবাইলটা পকেটে রেখে দিল। স্বগতোক্তি করল, ' জানাই ছিল। অঙ্কের হিসেব। দুইয়ে দুইয়ে তো চারই হয়... '
    বাইকে স্টার্ট দিতে যাবে, এই সময়ে মনে হল একটা ফোন করা যাক। না না, তমালকে নয়। নাটকের আর এক চরিত্রকে। অমৃতাংশুর অভিন্নহৃদয় বন্ধু দেবপ্রভ রাহাকে। ফোন তুললেন এক মহিলা। কলতান বুঝতে পারল ঋতাভরী ফোন ধরেছে। তার মানে, দেবপ্রভ আজ অফিসে যায়নি। অবশ্য অন্য কোন মোবাইল নিয়েও যেতে পারে।
    মৃদুস্বরে আওয়াজ এল, ' হ্যালো... '
    কলতান বলল, ' মিসেস রাহা বলছেন ? '
    মৃদুস্বরে উত্তর এল, ' হ্যাঁ। আপনি? '
    --- ' কলতান গুপ্ত বলছি... '
    এবার স্বরগ্রাম স্বাভাবিক হল।
    --- ' হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি... বলুন... '
    --- ' মিস্টার রাহা কি আজ বাড়িতে ? '
    --- ' না... মানে, কী বলব হ্যাঁ... বলতে পারেন... '
    --- ' তার মানে ? '
    --- ' অফিসে যায়নি। তবে এখন বাড়িতে নেই... '
    --- ' বিকেলের মধ্যে ফিরবে তো ? '
    --- ' ঠিক বলতে পারছি না। ফেরা তো উচিত... অ্যাকচুয়ালি... কোথায় গেছে ঠিক বলে যায়নি...'
    --- ' সঙ্গে কোন মোবাইল নিয়ে গেছে নিশ্চয়ই ... '
    --- ' হ্যাঁ ... গেছে হয়ত... '
    --- ' নাম্বারটা দিন না... একটু কথা বলতাম... '
    --- ' এঃ... সরি মিস্টার গুপ্ত... ওটার নাম্বার আমার জানা নেই... '
    --- ' সেকি! তাহলে দরকার হলে কন্ট্যাক্ট করবেন কী করে ? '
    --- ' সেটাই তো। কী যে করে না... কেন যে নাম্বারটা দেয় না... '
    --- ' যাই হোক, বাড়ি ফিরলে আমাকে কল করতে বলবেন। আরজেন্ট দরকার আছে... '
    --- ' কিন্তু কখন ফিরবে সেটা তো জানি না... '
    --- ' কোন অসুবিধে নেই। আমার ফোন সারারাত খোলা থাকে... ', অপ্রতিরোধ্য ভঙ্গীতে বলল কলতান।
    ঋতাভরী দেবী একটু সময় নিয়ে ধীর এবং বাধ্য স্বরে জবাব দিলেন, ' আ...চ্ছা... '

    ( ক্রমশ)

    ********
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন