এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • নিউনর্মাল করোনাকালীন পর্ব তেতাল্লিশ

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১০ জুলাই ২০২৩ | ৮৭৭ বার পঠিত
  • পর্ব উনষাঠ।

    এই যে এই অডিওতে যা বলছে সব সত্যি? মানে এটা ম্যানমেইড ভাইরাস? এর পেটেন্ট নেওয়া আছে।ওয়েবসাইট দিয়ে দেবে বলছে!পৃথিবীর ধনকুবেরদের ষড়যন্ত্র?অডিও বলছে পৃথিবীকে কর্পোরেট স্টেট বানাতে চায় এরা।
    - কী জন্য? হোয়াই?
    - ডিপপুলেশন অব দ্য ওয়ার্ল্ড।  বলছে তো তাই।মানুষ কমিয়ে দেবে?
    - তো ? স্রেফ স্মোকিং এর জন্য এর চেয়ে বেশি লোক মারা যায়।
    - সিম্পলি বাজে বোকো না। আনআইডেন্টিফায়েড কেস কত আছে, হিসেবের বাইরে, তুমিও জানো, আমিও জানি।ফার্মিং উইদাউট ফার্মার্স, এজুকেশন উইদাউট টিচার্স,হেল্থ উইদাউট ডকটর্স, এইসব কথা উঠে আসছে কেন? প্রোগ্রাম অব ডিপপুলেশন শুরু হয়ে গেছে।এরপর আর মানুষ দরকার নেই।অ্যাপ উইল ডু এভরিথিং। এরপর ম্যান উইল বিকাম আ প্রডাক্ট। এরা বলছে সমস্ত প্রফিট আর প্রডাকশন হবে কৃত্রিমভাবে।
    - তুমি ওদের শেখানো বুলি বন্ধ করবে টুপুর? এটা প্রোপাগ্যান্ডা।
    ঈশান একটু উষ্নভাবেই বলে উঠলো।
    তারপর হাসলো।
    - কী বলতে চাইছো বলো। এরপর ভালোবাসার জন্যেও হয়তো মানুষের আর মানুষকে দরকার হবে না।অ্যাপ দেবে সবকিছু।
    - আর ইউ টকিং অ্যাবাউট সেক্স ডলস? দে আর অলরেডি ইন!
    - নাহ্
    ঈশান একটা জোরে নিঃশ্বাস ফেললো।
    আই অ্যাম নট টকিং অ্যাবাউট সেক্স। ইমোশনাল চাহিদার কথা বলছি। সেটাও কী অ্যাপ করে দেবে টুপুর?

    টুপুরের মরিচ রঙের চুল অনেকটা উঁচু করে বাঁধা। গরম যথেষ্ট। ঘাড়ের ওপর চুল ভালো লাগে না একেবারে। কানে দুটো অক্সিডাইজড রূপোর গয়না। চোখে ফিকে কাজল। বাকী মুখ দেখা যায় না। দুজনেরই নাক থেকে থুৎনি পর্যন্ত এন ফর্টিফাইভে ঢাকা।
    নার্সিংহোম ফেরত দুজনে হেঁটে চলেছে রবীন্দ্র সরোবরের ফুটপাথ বরাবর। ঘন সবুজের ব্যাকগ্রাউন্ডে ঈশানের  কালচে মেরুণ খদ্দরের পাঞ্জাবী। টুপুর আড়চোখে দেখল।

    - ভালোবাসা মানে বলতে চাইছো ইমোশনাল শেল্টার তো! আয়াম টায়ার্ড অব লিসনিং টু দ্যাট। তোমার মনের মতো হয়ে উঠতে হবে, তোমার পছন্দমতো কথা বলতে হবে , তোমার ক্রাইসিসে শেল্টার দিতে হবে এটসেটরা এটসেটরা। হুঁ।মনে হয় অ্যাপ করে দিতেই পারবে এসব। বেটার দ্যান হিউম্যান বিংন্গস। হিউম্যান হ্যাপাগুলো থাকবে না।
    মাস্কের নিচে মানুষের ঠোঁট কী বলছে বোঝা যায় না।কিন্ত চোখ কী বলছে বোঝা যায়। কিন্ত আপাতত দুজনের চোখেই রোদচশমা।তাই কে কী বলছে, বলার অন্দরে কী ভাবছে বোঝা গেল না।
    অডিওটি খুব পপুলার হয়েছে কিছুমহলে।বন্দনা শিভাকে রেফার করছে ওরা।কৃত্রিমভাবে প্রফিট ও প্রডাকশন বাড়ানোর দুষ্ট ধনতান্ত্রিক হিসেব দিচ্ছে।বেশি প্রডাকশনের অর্থ জিনিসের দাম কম। মানুষের কাজ যন্ত্র করে দেবে।মানুষের ভালোবাসাও কী যন্ত্র বেসে দেবে?
    বিকেলের রোদ।তবু বেশ চড়া। আরো গরম আসছে।
    কারা যেন বলেছিল এই ভাইরাস গরমে বাঁচে না?
    যা গরম পড়তে চলেছে তাতে ভাইরাসের আগে মানুষ ঘায়েল হবে।একে হাতে কাজ নেই।পেটে খিদে।
    - হিউম্যান হ্যাপা মানে ?
    ঈশান একবার ঘড়ি দেখে নিলো টুক করে।
    পোস্ট কোভিড ট্রমা সেন্টারে যেতে হবে একবার। কোথাও বসে একটা ঠান্ডা কিছু খেলে হত। স্টেট ব্যাঙ্কের আগেই জুস শপটা বেশ ছিল।এখন বন্ধ।খোলেই নি আর লকডাউনের পরে।
    - মানে এই যে আমার এখন ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে। তোমার হয়তো জুস। একজনের ইচ্ছের কাছে আরেকজনকে সারেন্ডার করতে হবে।তবেই পেরেম টিকবে।
    ভ্যাঙ্গালো।মাস্কের অন্দরে।
    - কেন? তুমি ফুচকা খাও , আমি জুস। টু বি মোর সেনসিবল, এখন বাইরে দুজনেই কিছু খাবো না। সংযত হব। তবেই প্রেম টিকবে।
    হাসলো। দুজনে দুজনের দিকে চেয়ে। ঢাকা মুখেও বেশ বোঝা গেল।
    এতটা সংযত হওয়া কী ঠিক?
    টুপুর ঘামছিল। জঘন্য একটা চ্যাটচ্যাটে ভাব।এইরকম ঘামলেই রক্তিমের কথা মনে আসে। বিশ্রী একটা অনুভূতি।মাস্কের নিচে মুখের অংশ ঘেমে একশা।ঈশান কী বুঝতে পারছে যে ওর রক্তিমের ফ্যাকাশে হাসি, নির্লিপ্ত যৌনতা ও সেডিজমের সঙ্গে হাঁটছে এখন? মনের ডাক্তার আফটার অল। বুঝলে বুঝুক। এখন টুপুর যা , তার জন্য রক্তিমের অনেক অবদান। এই সংযম।এই মেচুওরিটি।অত তিক্ততার মধ্যে দিয়ে না গেলে টুপুর আজও ছেলেমানুষ থাকতো।ভালনারেবল।যেন এখন খুব শক্ত হয়ে গেছে ! রাস্তার পাশে একজন উন্মাদ মানুষী বসে আছে।ওখানেই থাকে।বা চায়ের দোকানের পাশে। একটা কুরকুরের ছেঁড়া প্যাকেট হাতে।মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা।কে ছাঁটল ? টুপুর ভাবলো। এই দীর্ঘ করোনাকালে ওর মুখে মাস্ক কোনোদিন ছিল না।রাস্তাতেই শুয়ে থাকে।ওর করোনা হয়নি।বা হলেও ও বোঝেনি । ও বেঁচে আছে দিব্যি। বাবা কী পারবে বাঁচতে ?
    ঈশান একটু অন্যমনস্ক।  বুকের মধ্যে রক্ত চলকে উঠল টুপুরের।বুঝতে পারলো ও বেসিক্যালি ভালনারেবল।এখনও।
    ক্রসিং এ দাঁড়িয়ে যখন!ওরা  , সামনে দিয়ে মিছিল গেল।ইলেকশন। নেতা ভোল ও দল পাল্টে  বড় অভিনেতা হয়েছেন। তাঁর মুখে মাস্ক আছে।কিন্ত মিছিলের অনেকের মুখেই নেই।

    ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে মুম্বইয়ের কাছে অমরাবতীতে ডাক্তাররা আতঙ্কিত হয়েছিলেন। অমরাবতী একটি কার্পাস উৎপাদনের জায়গা।সেখানে হঠাৎই বেড়ে গেছিল কোভিড রোগীর সংখ্যা।
    জানুয়ারিতে সব প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল। কোভিড রোগী প্রায় নেই।
    ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে পাল্টে গেল সব কিছু।
    সাংবাদিক সুনীল যাদব লিখলেন, জানুয়ারিতে যে হাসপাতালের বেড শূন্য, ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা ভরে গেল।সুনামির মত রোগ ধেয়ে এল।পাবলিক হেল্থ এক্সপার্ট অনিল ভান বললেন, উই ডিডন্ট লার্ন এনিথিংগ ফ্রম দ্য ফার্স্ট ওয়েভ।
    একটা বিপদ থেকে বেরিয়ে মানুষ ঝট করে দ্বিতীয়বার বিপদের কথা ভাবে না। তখন মাস্ক পরছে না অনেকেই।পরলেও থুৎনির নিচে।সোশ্যাল গ্যাদারিংএর মা বাবা নেই আর।জমকালো বিয়েবাড়ি। শ্রাদ্ধ।অন্নপ্রাশন। অসংযত মেলামেশা।
    ভ্যারিয়ান্টসের কথা জানতো না সাধারণ মানুষ। শুকনো কাশি , শ্বাসকষ্ট আর জ্বরে তো এমনিতেই মানুষ ভোগে। ডরনা ক্যা হ্যায়?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১০ জুলাই ২০২৩ | ৮৭৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন