এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • নিউনর্মাল করোনাকালীন পর্ব ৯

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০৩ মে ২০২৩ | ৪৭০ বার পঠিত
  • পর্ব একুশ

    কমিশন এজেন্টরা ঠিক কী করেন? হোয়াই আর পিপল, আই মিন দ্য ফারমার্স সো ওয়রিড অ্যাবাউট কমিশন এজেন্টস উইদ দ্য পাসিং অব দ্য ফারমার্স বিল?

    ও প্রশ্নটা নিকিকে জিজ্ঞেস করেছিল। নিকি এমন একজন মানুষ, যে সারাদিন বাড়িতে থাকে। এক হয় নিজের ঘর। বেশির ভাগ সময় বিশাল লিভিংরুমের এক প্রান্তে। যেখানে টেরাকোটার ছোট ছোট টাইলস বসিয়েছেন সযত্নে সুনন্দিতা। যামিনী রায় প্যাটার্ণের মেয়েদের মুখ। টানা চোখ বেরিয়ে আছে কানের পাশটি দিয়ে। পোড়া ইঁটের রঙের সঙ্গে কনট্র্যাস্ট করে উঠিয়ে দিয়েছেন সবুজ ক্রিপার। ভারি মায়াময় একটি কোণ যেখানে নিকির আধুনিকতম ডেস্কটপ রাখা আছে। গোল চশমার পাওয়ার অনেক। নিকি হুইলচেয়ারে বসেই কাজ করে যায়। অক্লান্ত ভাবে। হয়তো বাইরে যাওয়ার ব্যাপার নেই বলে দুনিয়াকে ডেস্কটপে ধরে নিতে চায়।

    নিকিকে প্রশ্ন করা চলে। খুব স্বচ্ছ মেয়েটি। উইদ আ গ্রেট সেন্স অব হিউমার। এবং ও কখনো সেটা মিসইউজ করে না। ঠিকঠাক সময়ে ব্যবহার করে। খুব পেনিট্রেটিভ দৃষ্টি ওর। কথা বলে ঝর্ণার মত।
    - কমিশন এজেন্টস হিসেবে অনেকে কাজ করেন। লাইক বসুন্ধরা আন্টিজ সন। দে অ্যারেন্জ ফিনানশিয়াল লোনস ফর দ্য ফারমার্স।  ফির টাইমলি প্রকিওরমেন্ট। অ্যাডিকোয়েট প্রাইসেস। ঠিকঠাক দাম পায় যাতে কৃষকরা। এটা খুব খুব ইম্পরট্যান্ট। কর্পোরেটস অত সিমপ্যাথেটিক হবে না। দ্যাট উইল বি অ্যান এন্ড টু দি অ্যাশিওরড প্রকিওরমেন্ট অব দেয়ার ক্রপস অ্যাট এম এস পি। এক একজন কমিশন এজেন্টের ওপর প্রায় পঞ্চাশ থেকে একশোজন কৃষক নির্ভর করেন।

    ক্রিপারটির পাতা ঝিরিঝিরি। ডীপ গ্রিন। এটাকে কী বটল গ্রিন বলা চলে? দেবরূপ রঙ চেনে না অত। গাছ, লতা তেমন চেনে না। মালবিকা অনেক বেশি চেনেন। যখন ছোট ছিল, তখন মায়ের কাছে বিশ্বভারতী, কলাভবন, সঙ্গীতভবনের গল্প শুনতো দেবরূপ।
    কিন্ত নিকির ব্যাকগ্রাউন্ডে ঐ ঝিরিঝিরি পাতার ক্রিপারটা বেশ ভালো লাগছে। টেরাকোটার টাইলসের মেয়েটির টানা নাক। স্বপ্নালু চোখ। যেন কথা বলে উঠল।
    - গ্র্যানি ইজ রাইট। জানো কেন এই আন্দোলন হচ্ছে? দিজ ল' জ উইল গ্র্যাজুয়ালি এন্ড দ্য মান্ডি সিসটেম।
    হয়তো প্রাইস এক্সপ্লয়টেশন যাতে না হয়, সেজন্য কিছু প্রোটেকশনের ব্যবস্থাও থাকবে কিন্তু প্রাইস ফিক্সেশনের কোনো মেকানিজম থাকবে না। কমিশন এজেন্টদের সঙ্গে ফার্মার্সদের একটা হিউম্যান আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। বোঝাপড়া। কর্পোরেটস উইল নট অ্যালাউ দ্যাট। গভমেন্ট গ্যারান্টি উইল বি দেয়ার। বাট ইন রাইটিং অনলি। গট ইট?

    নিকি আজ একটা সাদা ঢিলে ঢালা শার্ট পরেছে। বয়জ কাট চুলে হাইলাইট আছে। পার্পল। স্ট্রাইপড পাজামা। ওকে স্পষ্ট করে দেখতে কোনো অসুবিধে হয় না। কারণ ও ভীষণ স্বচ্ছ।
    দেবরূপ হাসল।
    - গট ইট।
    - মাই ফাদার ইজ আ বিল্ডার। বাট বেসিক্যালি উই আর ফার্মার্স। ফার্মার্স ফ্রম লাহোর। দেন দ্য ফার্মার্স অব পাঞ্জাব। এখনো আমাদের খেতিবাড়ির সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। আমরা ছুটিতে লোধি যাই। দেশের বাড়ি। নট ইক্জ্যাক্টলি দ্য ফার্মহাউস টাইপ। ফার্মহাউস আছে। জেঠজির। বাট দ্য মেইন হাউস ইস ইন ভিলেজ। পাক্কা পাঞ্জাবী ঘর। চাইলে যেতে পারো। উইন্টার ইজ গ্রেট ওভার দেয়ার।
    উইন্টার ইজ গ্রেট ওভার দেয়ার। যাবে?

    কে যেন কবে কোথায় কাকে বলেছিল। ঠিক মনে পড়ছে না অথচ ঝাপসা ভাসছে। শীত পড়ে গেছে বেশ। তাপমাত্রা কমছে। খোলা আকাশের নিচে মাটির মানুষেরা জমায়েত হচ্ছেন কৃষির দাবী নিয়ে। অলিভ গ্রিন টি শার্ট আর কালো ট্র্উজার পরেছে অদিতি। ওর গাঢ় বাদামি চোখে হাল্কা কাজলরেখা। কোঁকড়া চুল পিছনে টেনে পানি টেইল করে বাঁধা। কপালে কয়েকটা উড়োখুড়ো চুল। গলার সোনার চেইন দেখা যায় মাঝেমাঝে।

    লেটস গো টু কোদাই দিস উইন্টার। খৃষ্টমাসে ওরা কোদাইকানাল গেছিল। সেই প্রথম দুজনের একসঙ্গে বেড়ানো। ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছিল সেদিন। আর বৃষ্টি মাথায় করে ভিজছিল দুজনে। ছাতা নেই। কে নেবে ছাতা? দৌড়ে দুজনে মিসেস স্টিভেনসনের বেকারির সামনে। এই লম্বা টানা বেকারির সামনের লনে কাঠের গুড়ি ছেঁটে রাখা আছে বসার জন্য। কাঁচের বড় বড় দরজা আর জানালা দিয়ে ভেতরে অসম্ভব ভিড়ের উষ্ণতা নিচ্ছিল ওরা ভিজতে ভিজতে। যে কোনো বেকারির সামনে দিয়ে গেলেই একটা মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়। ক্রিম জবজবে। রসালো। লেবু লেবু সুঘ্রাণ। ক্র্যানবেরির গন্ধ। ওয়াইন। ঝাঁঝালো। মেয়োনিজ। র্যাস্পবেরি। ক্রিপারের সবুজ রঙের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে অদিতির বটল গ্রিন রঙ।
    কে যেন কাকে কোথায় বলেছিল।
    সুনন্দিতার হাত পিঠে।
    - খেয়ে দ্যাখো তো কেমন হয়েছে?
    একটা লেমন কেক বেক করে নিয়ে এসেছেন।
    ও তখন ভিজছে। ভীষণ ভিজছে। কোদাইকানালের সবুজ ফার্ণের ছোঁয়া গালে। অদিতি রুমাল দিয়ে মুছিয়ে দিচ্ছে চোখ। চশমা। কিন্ত রুমালও তো ভেজা। হাসছে দুজনে। খুব হাসছে। হাসতে হাসতে অদিতির নাকের পাটা লালচে বেগুনি।

    কে যেন কবে কোথায় বলেছিল। শীতে বৃষ্টিতে ভিজতে ভীষণ ভালো লাগে।
    নিকি কেক মুখে নিয়ে বলছে, মম ইজ দ্য বেস্ট বেকার। ওর ঠোঁটের পাশে ক্রিম। সুনন্দিতা ওড়না দিয়ে মুছিয়ে দিচ্ছেন যত্ন করে।
    ও হাসছে কিন্ত ভেতরে ভেতরে গলা ধরে যাচ্ছে।
    সুনন্দিতা বললেন, এখানে আসার পরে এই প্রথম তোমাকে এত হাসিখুশি দেখলাম বাবু! কিপ স্মাইলিং লাইক দিস।
    ও চমকে উঠল। জেগে উঠেছে ঘোর থেকে। 

    বড়দিন আসছে। সুনন্দিতার প্রস্তুতি শুরু। কোনো পার্টি হবে না এবার। ছোটখাট গেট টু গেদার। কাজের সঙ্গেই তাঁর নিজস্ব বিনোদন। মালবিকার ছেলেটা বড্ড লাজুক। আজ হাসল দেখে খুশি হলেন সুনন্দিতা। কেক নিয়ে ঢুকলেন আমেলিয়ার ঘরে। অন্য কাউকে দিয়ে পাঠালে গোঁসা হবে তাঁর। এই রিস্ক সুনন্দিতা নেবেন না। নিজেই ট্রে তে করে সাজিয়েছেন। কাঠের ট্রে সাদা কুরুশ কাজের ঢাকনিতে আবৃত। সাদা প্লেটে একটুকরো উজ্জ্বল হলুদ মাখন পেলব কেক। কাঁটা। চামচ। জলের গ্লাস।

    আমেলিয়ার ঘরে ঢুকতে ঢুকতে সুনন্দিতার মনে হল, দিনহাটার বাড়িতে মা একা পড়ে আছেন। পায়ের ব্যথার জন্য ইদানীংকার চলাফেরা খুব কম। রাতে শুধু না, দিনেও বেডপ্যান। ঝিকি নামক মেয়েটি আছে বলে মা টিঁকৈ আছেন। দাদা বউদি কোচবিহারের বাড়িতে। অনেকদিন হল।
    মা এখন একা। সুনন্দিতার ছোটবেলাতে মায়ের কাছে বায়না ধরতেন। কেক বানাও মা। তখন অত সরঞ্জাম কোথায়? আভেন, ওটিজি, হুইপ ক্রিম , ব্লেন্ডার কিছুই নেই।
    তবু মা ময়দা আর ডিম ঘুঁটে, নিউমার্কেট থেকে সংগৃহীত বেকিং পাউডার দিয়ে, স্টোভে প্রেশার কুকার বসিয়ে, তাতে বালি দিয়ে কেক বানাতেন। একটু শক্ত। মোটা। ভেতরটা অত মসৃণ নয়।
    তবু সুস্বাদু।
    আভেনে একশো আশি প্রথমে, পরের কুড়ি মিনিট একশো পঞ্চাশ। ব্লেন্ডারে মাখন মসৃণ উপাদানে লেবুর রস। কেকের সুস্বাদু গন্ধ নিতে নিতে সুনন্দিতার ভীষণ মায়ের জন্য মন খারাপ লাগছিল। মেয়েসন্তান বলে তিনি কোনোদিন বঞ্চিত হননি। মায়ের জন্য। অথচ এখন নিজে কেমন শাশুড়ি, বর, ছেলে মেয়েদের নিয়ে মেতে আছেন! মা একা ঐ বাড়িটাতে। আর ঝিকি। এখন আসে, তখন যায়।
    আমেলিয়ার সামনে ফোল্ডিং টেবল পেতে দিলেন সুনন্দিতা। ট্রে রাখছেন।
    খুব ইচ্ছে করছে নিজের মা কে কিছুদিন অন্তত কাছে এনে রাখেন। এই করোনার সময়ে তাও সম্ভব হবে না। মনের মধ্যে একরাশ কান্না চেপে চোখে হাসি নিয়ে আমেলিয়ার দিকে তাকালেন সুনন্দিতা। ঠিক যেমন বাবু তাকিয়েছিল একটু আগে।
    অনেক উজ্জ্বল হাসি, আপাত সফলতা আর আনন্দের পেছনেও একবুক দীর্ঘশ্বাস থাকে। গাঢ় অভিমান থাকে। কখনো না বলতে পারা অভিযোগ থাকে। শীত যখন মেহতা হাউসের সদর দরজা বা কিচেন গার্ডেনের পিছন দরজা দিয়ে ঢুকে, কাশ্মীর গালিচার ওপরে হামাগুড়ি দিতে থাকে, ওয়ারড্রোব খুলে পরমের স্যুট, সুমনের উইন্ড চিটার, নিকির পোলোনেকগুলো রোদে দেবার জন্য বাঈকে ডাকেন সুনন্দিতা, তখন মায়ের শীর্ণ মুখটা মনে পড়ে। দুর্বল , কাঁপা হাত। সেই পুরোনো কাঠের সদর দরজা তাঁদের। কী করে সব ভুলে যে এই বৈভবের সঙ্গে মিশে গেলেন তিনি!
    আমেলিয়া তাঁর দিকে চোখ তুলে বললেন,
    - হোয়াটস রং সানি? হোয়াই আর ইউ ক্রাইং?
    সুনন্দিতা খেয়াল করেন নি। কখন চোখ বেয়ে বেয়াক্কেলে জল গড়িয়ে পড়েছে দুফোঁটা।
    আলতো করে হাতের উল্টো পিঠে মুছলেন। 
    - আই থিংক দ্যাট বয়, বাবু ইজ ইন ডিপ গ্রিফ মাম্মিজি।
    - বাট হোয়াই?
    - আই হ্যাভ টোল্ড ইউ মাম্মিজি। হি ইজ ইন আ ট্রমাটিক স্টেজ। ট্রাইং টু রিকাভার।
    আমেলিয়া খাচ্ছেন না। তাকিয়েছিলেন সানির দিকে।
    সুনন্দিতা দ্রুত নিজের চোখের জল, মনখারাপ ঢেকে ফেলছেন দেবরূপের দুঃখ দিয়ে। নিজেকে বলছেন, শান্ত হও, শান্ত হও।

    সুনন্দিতা একটু ইতস্তত করেছেন। মালবিকার কাছে শুনেছেন কিছুটা। তবে মনে হয়েছে মালবিকার কাছে সবকিছুর হদিশ নেই। বলবেন আমেলিয়াকে? অনেক কিছু ভুলে যান আজকাল।উল্টো পাল্টা বকেন। সোডিয়াম পটাশিয়াম এদিক ওদিক হয়ে যায়। আবার অনেক কিছু স্পষ্ট মনে রাখেন। সেনসিবল কথা বলেন।
    - বোলো সানি? হোয়াট হ্যাপেন্ড টু দ্য বয়?
    - হি ওয়জ ইন লাভ উইদ আ গার্ল।
    - হোয়াই ওয়জ? হ্যাভ দে সেপারেটেড?
    আমেলিয়ার অভিধানে ব্রেক আপ শব্দটি নেই।
    সুনন্দিতার আঙুলে একটি হীরকখচিত আংটি। ঝকঝক করছে।
    - দ্য গার্ল পাসড অ্যাওয়ে। শি ডায়েড ইন কোভিড। 

    আমেলিয়ার চোখে বিস্ময়। বিস্মিত হলে তাঁর চোখে হিরের দ্যুতি।
    - সো হোয়াই ডু ইউ সে "ওয়জ ইন লাভ"? সে "হি ইজ ইন লাভ"। দ্যাটস হোয়াই হি ইজ ইন গ্রিফ।
    সুনন্দিতা চমকে উঠেছেন। তাই তো।
    অদিতি নেই। তাই বলে বাবুর ভালোবাসা তো পাস্ট টেন্স হয়ে যেতে পারে না! সে এখনো ভালোবাসে। চেতনে না হোক। অবচেতনে। তাই সে কষ্ট পাচ্ছে।
    - লেট হিম বি ইন গ্রিফ। লেট হিম গেট সোক্ড ইন স্যাডনেস। দেন হিম উইল স্মাইল।
    নিজের মনেই যেন বলছেন আমেলিয়া।
    ভালোবাসা মানেই তো অনেকটা কষ্ট পাওয়ার কন্ডিশন। হি শুড পাস দ্য ফেজ।
    অনেকটা ভালোবাসার সঙ্গে অনেকটা কষ্ট। অল্প ভালোবাসার সঙ্গে অল্প কষ্ট। আর যদি সবটাই ভালোবাসার গল্প হয় তখন সবটাই কষ্ট।

    এই বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই গেটের পাশে একটা দেবদারু গাছ দেখছেন সুনন্দিতা। মস্ত ঝাঁকড়া হয়ে গেছে গাছটা। একটা বুলবুল গান গায় কাছাকাছি কোনো বাগান থেকে। অমলতাস অছে। মার্চ এপ্রিলে ফুলে ভরে থাকে। পন্চশীল মার্গ থেকে সুনন্দিতা নিয়ে এসেছিলেন। কোভিডের পর থেকে আর যান নি ওদিকে। মনে হয় ঐ গাছটি ওর বাসা। আবার দেখাও যায় না। তাঁর পিতৃগৃহেও এমন পাখির ডাক ছিল। আরো অজস্র পাখির ডাক। সব ভুলে গেছেন তিনি। আচমকা মনে পড়ল। বোধহয় মায়ের কথা মনে পড়ছে বলেই। বেচারা মা। একা নিঃসঙ্গ। ফাঁকা বাড়িতে। পরম এত ব্যস্ত যে সুনন্দিতার মায়ের কথা ঠিক সেইভাবে জিজ্ঞেস করেন না। একটু যেন ফর্মাল। উনি এলে খুশি হবেন ঠিক। আদর যত্নের অভাব হবে না। কিন্ত নিজে থেকে কখনো বলেননি যে তোমার মা কে এসে থাকতে বলো কিছুদিন। অনেক চাপা অভিমান গিলে খেতে হয়। ঘুঙুরের বোলে চাপা দিয়ে দেন। পরমকে দোষ দেন না। খুব ব্যস্ত থাকেন মানুষটি। জিজ্ঞেসও করেন, হাউজ শি ? ব্যস। ঐটুকু। সেইভাবে তো যাননি কখনো দিনহাটা। বিয়ের আগে ঐ তরফে একটা প্রবল প্রতিরোধও ছিল। এইসব নিয়েই সুনন্দিতা মেহতা হাউসে আটকে গেছেন। এই প্রকান্ড বাড়ির একটি বিষন্ন বিধুরতা আছে। দিনহাটার তাঁর বাবার খোলামেলা টিনের চালের বাড়ি, পিছনে পুকুর, তার পিছনে চাষের জমি। আরো দূরে রেললাইন। আরো আরো দূরে পরিস্কার দিনে পাহাড় দেখা যায়। চারদিকে বাতাস খেলছে। সেখানে কোনো বিষন্নতা নেই। একটু বড় হবার পর আর সেখানে থাকতে চাইতেন না। এখন বোঝেন, ঐ খোলামেলা বাতাস কোথাও তাঁর ভেতরে থেকে গেছে। মাঝেমধ্যেই মাথা কোটে। মুক্তি চায়। তখন নাচে ঘূর্ণি ওঠে।

    পরমের, নিকির লাঞ্চ তৈরি করবেন। আমেলিয়াকে খাইয়ে বেরিয়ে এলেন সুনন্দিতা।
    স্যান্ডউইচ বানাচ্ছেন নিপুণ হাতে।
    একটা ব্রাউনব্রেডের ওপর মাখন পড়ল। তারপরের রুটির ওপর সালামি। প্রেস করে তার ওপর সালাদ। একটা দুঃখের পরতের পর একটা আনন্দের লেয়ার। একটার পর একটা ব্রেড সাজাচ্ছেন। প্রেস করবেন। লেটুসের সবুজ। মাখনে, চিজে, মেয়োনিজে, সালাদে মিশে প্রেসড হয়ে একটা আশ্চর্য গন্ধ ছড়াচ্ছে। জীবনের গন্ধ। ভালোবাসার।

    মেয়েরা কী এমন করে ছেড়ে আসে সব! নাকি দূরত্বই বাধা হয়ে গেল! কে জানে। নিকি। নিকি কখনো তাঁকে ছেড়ে যাবে না। যেতে পারবে না। হাঁটতেই তো পারে না মেয়ে। ভালো হয়েছে।নিকি তাঁর কাছে থাকবে। সবদিন। ভাবতেই শিউরে উঠলেন সুনন্দিতা। মা হয়ে একী ভাবছেন তিনি! কতরাত বিনিদ্র কাটিয়েছেন তিনি ও পরম। মেয়ের চিন্তাতে। কী রাক্ষসী মা তিনি। নিকিকে আটকে রাখার কথা এমন করে ভাবে কেউ!

    একটা পোড়া গন্ধ এলো নাকে।
    কেউ কী পাচ্ছে গন্ধটা?

    ( চলছে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৩ মে ২০২৩ | ৪৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন