এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • নিউনর্মাল করোনাকালীন পর্ব উনত্রিশ

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১৪ জুন ২০২৩ | ৫৬৮ বার পঠিত
  • সকালবেলা ইউনিভার্সিটির চত্বর একেবারেই ফাঁকা। এমনিতেই বন্ধ। তারপর সকালের দিকে একটা হু হু করা শীত। কুয়াশা সাদা করে রেখেছে মাঠ ঘাট। দুটো সোয়েটারের ওপর উইন্ডচিটার পরেও ও কাঁপছিল। দুহাজার উনিশের ডিসেম্বর থেকে একুশের জানুয়ারি। একশো চৌত্রিশ মিলিয়ন ইনফেকটেড। উনত্রিশ মিলিয়ন মৃত। পৃথিবী কী দ্রুত খালি হয়ে যাবে নাকী!
    সেকেন্ড স্ট্রেইনে বাচ্চারাও ইনফেকটেড। প্রব্যাবলি ইটজ ডেডলিয়ার দ্যান দ্য ফার্স্ট স্ট্রেইন।
    হার্ড ইমিউনিটি! হার্ড ইমিউনিটি!
    হার্ড ইমিউনিটি অত সহজ নয়। যেমন সহজ নয় ভ্যাকসিন। ইট হ্যাজ টু বি টাইম টেসটেড।
    রুবিনা ইস্ট অ্যাংগলিয়ার প্রফেসর পল হান্টারের সঙ্গে একটা জূম মিট করেছেন ফ্যাকাল্টিকে নিয়ে। মাঝে ধূম উঠেছিল  এদেশে চিনে জুম তুলে দাও। ব্যান করো। সব ডেটা ওদের কাছে চলে যাচ্ছে। সেটা চলে গেছে।
    হান্টার হার্ড ইমিউনিটি স্পেশালিস্ট। বলছিলেন, যে কোনো সংক্রমণের ক্ষেত্রেই হার্ড ইমিউনিটি গেইন করা গেছে তখনি বলা যায়, যখন জনসংখ্যার পর্যাপ্ত লোকজন ইমিউনিটি গ্রো করে। এই ইমিউনিটি তারা পাবে একহয় ইমিউনাইজেশনের ফলে অথবা স্বাভাবিক সংক্রমণ যখন আর ভ্যালুকে একেবারে নিচে নামিয়ে আনতে পারবে তখন। তখন রোগ থামতে পারে ।
    হার্ড ইমিউনিটি এসেছে তখনি বলা যাবে যখন ইমিউনিটি লং লাস্টিং হবে। দীর্ঘদিন কোনো সংক্রমণ হবে না।
    পল হান্টার কথা বলতে বলতে চোখ পিটপিট করেন।
    অ্যাট প্রেজেন্ট উই ডোন্ট নো হাউ লং দি ইমিউনিটি জেনারেটেড বাই ইমিউনাইজেশন উইল লাস্ট নর হোয়াট ইমপ্যাক্ট দি ইমারজেন্স অ্যান্ড স্প্রেড অব নিউ ভ্যারিয়ান্টস উইল হ্যাভ অন ভ্যাকসিন ইফেক্টিভনেস।

    একটা ন্যাড়া গাছ সামনে। একেবারে পত্রহীন। শুকনো। কী গাছ এটা? তলায় দাঁড়াল কিছুক্ষণ। ডিপার্টমেন্ট এখান থেকে হেঁটে আরো মিনিট দশেক। এই ঠান্ডার জন্য কী সেকেন্ড ওয়েভ বেড়ে যাবে?
    ড.লুইসে ডাইসন, এপিডেমিওলজির অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক ছিলেন জুম মিটিং এ। ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির গবেষণা বিভাগের প্রধান। পরিস্কার বলেছেন, ভ্যাকসিন ডাজনট অ্যাপিয়ার টু বি  ইনটেরনালি কনসিসটেন্ট।
    নতুন করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের গঠন আলাদা। বৈজ্ঞানিকরা চেষ্টা করছেন, ভ্যাকসিনে এমন স্পাইকস থাকা দরকার যেটা অবিকল ইনফেকশনকারী ভাইরাসের মত। গ্লাইকোবায়োলজি এটাই বলে। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রা জেনেকা ভ্যাকসিন তৈরি করেছে।
    আমাদের শরীরের কোষগুলি আসলে ছোটখাট কারখানা। তাতে ভাইরাল স্পাইকস তৈরি হবে। সেটিই ইমিউন রেসপন্সকে ট্রিগার করবে রোগ নির্মূল করার জন্য। ভ্যাকসিন ইজ ডুইং ইটজ জব। জেনারেটিং দি মেটিরিয়াল দ্যাট উই নিড টু প্রেজেন্ট টু আওয়ার ইমিউন সিস্টেম।
    এস এ আর এস কোভ নাইন্টিনের স্পাইক্সগুলো সুগার কোটেড। ওদের গ্লাইকানস বলে। মানুষের ইমিউন সিস্টেমের ভাইরাল প্রোটিনকে ওরা ঢেকে দেয় পরমযত্নে। যে কোনো ক্ষতিই পরম যত্নে হতে পারে। ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবছিল। অ্যাস্ট্রা জেনেকা অ্যাডেনভাইরাস একটা সেফ ভার্শন শোনা যাচ্ছে। নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
    ডিপার্টমেন্টে পৌঁছে ও খুলে ফেলেছেন উইন্ড চিটার। বাবার সঙ্গে লোহরির দিন কথা বলা হয়নি। কিন্ত খুব কষ্ট হচ্ছিল। বুকের মধ্যে একটা দমচাপা ভাব। বাবা কী অসম্ভব একা হয়ে গেছে! পরমপ্রতাপের পাশে যেন আরো নিষ্প্রভ। আজ একটা মেসেজ করেছে ত্রিদিবকে ও। টেক ভ্যাকসিন অ্যাজ সুন অ্যাজ ইট ইজ অ্যাভেইলেবল। মায়ের কথা একবার লিখবে ভাবলো। তারপর লিখলো না। থাক। যে যার নিজের দায়িত্ব নিজে নিক। আলাদা করে নিজেই লিখবে মা' কে।
    রুবিনা অলরেডি মিটিং এ বসে গেছেন। অক্সফোর্ড ওয়র্কের টেরেসা ল্যাম্বি, পেইজুন জ্যাং, সারা গিলবার্ট, প্রফেসর ম্যাক্স ক্রিসপিন অনলাইনে আছেন। ফ্যাকাল্টির সবাই ফিজিক্যালি প্রেজেন্ট আজ।
    ক্রাইয়ো ইলেকট্রন মাইক্রোস্কপি।
    সংক্ষিপ্তভাবে ক্রাইওর।
    এটা একটা সিস্টেম। যেটা ব্যবহার করে ঘন নিবন্ধ প্রোটিন স্পাইকস গুলি দেখা যায়। ডেনস অ্যারি অব স্পাইকস দ্যাট হ্যাড বিন ম্যানুফ্যাকচারড অ্যান্ড প্রেজেন্টেড অন দ্য সারফেস অব দ্য সেলস।
    এই সিস্টেম নিয়ে আজ মিটিং।
    ক্রতিকা নতুন ফাইল ধরিয়ে দিল ওর হাতে। ব্লু আইলাইনারে বেশ কুহকিনী দেখাচ্ছে ওকে। খুব শিগগিরই ভারতে আসতে চলেছে কো ভ্যাকসিন আর কোভিশিল্ড।
    বাট দিজ আর নট টাইম টেস্টেড।
    ভাইরাসের স্পাইকসের গঠন পরিবর্তিত হয়েছে সেকেন্ড ওয়েভে। এত তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন পাল্টাতে পারবে না। সো দিজ মাইট নট বি ইফেক্টিভ ফর দ্য সেকেন্ড ওয়েভ। রুবিনা চশমা খুলে বললেন।
    ওর চোখের সামনে কদমফুলের মত ভাইরাস ঘুরছে মনিটরে। প্রোটিন স্পাইকস গুলো বিভিন্ন আকৃতির। এখন মিটিং চলবে ঘন্টাখানেক দেড়েক। তারপর যে যার মত ল্যাবে ঢুকে যাবে। কিন্ত কিছুক্ষন ল্যাবে কাজ করার পর ওর চোখে যন্ত্রণা শুরু হচ্ছে ইদানীং। কাউকে বলে না। হাত কাঁপে। মুড ঠিক থাকে না। একটা অদ্ভুত বিরক্তি কাজ করে।
    ঠিক কিরকম স্পাইকস অদিতির শরীরকে অকেজো করে দিয়েছিলো? ঠিক কোন সময়ে শরীরে প্রবেশ করেছিল তারা? অদিতির ল্যাপটপ তার কাছে। অচ্যুত দিয়ে দিয়েছেন। লোহরির রাতে সেই  ল্যাপটপ খুলেছিল সে। এ কোন সিন্ডরেলাদের ইন্টারভিউ করতে গিয়েছিল অদিতি? মুম্বাই ব্রথেলস ইন লকডাউন টু থাউজ্যান্ড টুয়েন্টি। বাই অদিতি শিবরামণ।
    ওর একটা ভয় হচ্ছে। নিউরোলজিকাল প্রবলেম তৈরি হচ্ছে নাকি?
    কোভিড আক্রান্ত পেশেন্টদের মধ্যে নিউরোলজিক্যাল মেন্টাল হেল্থ সাংঘাতিক ভাবে খারাপ হচ্ছে। অ্যাংজাইটি। মুড ডিজঅর্ডার। ডেমেনশিয়া। ফর্টিফোর পার্সেন্ট বেড়ে গেছে কোভিড সারভাইভারদের মধ্যে।
    আমার কী তবে তাই হয়েছে?
    ভাবতেই শীতের মধ্যেও ও ঘামতে শুরু করে। একটা সোয়েটার খুলে ফেলে টেনে।
    একটু পরে জেনেরাল ক্লাসটা আছে।
    আজ কী সেই ভয়েসটা আসবে?
    যার প্রোফাইল পিকচারে একজোড়া গ্লাস স্যান্ডাল?
    সে কী বলতে চায় তাকে? কেনই বা বলতে চায়?
    কে এই সিন্ডেরেলা?

    ( চলছে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১৪ জুন ২০২৩ | ৫৬৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন