নো-ভোট-টু-বিজেপি একটি আন্দোলনের নাম। পরিষ্কার কথা, যাকে খুশি ভোট দিন, বিজেপিকে নয়। ভোটটা বিজেপির বিরুদ্ধে দিন। কারণ বিজেপি’র মতো হিংস্র ও ভয়ানক এই মুহূর্তে কোনও দল ভারতবর্ষে নেই। এই আন্দোলন নজর কেড়েছে মানুষের। আসন্ন নির্বাচনের জন্য ভোটের কথা আসছে বটে, কিন্তু এই-স্লোগান নিছক ভোটের স্লোগান নয় বলেই আমার মনে হয়। ভোট গুরুত্বপূর্ণ আয়ুধ, আবার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই তার বাইরে গিয়েও লড়তে হবে। জনমানস থেকে, জনসমাজ থেকে ক্রমশ গেঁড়ে-বসা বিভাজনের রাজনীতিকে উপড়ে ফেলতে হবে। বে-পরোয়া এই শক্তির সিংহভাগ শক্তি আসে মন্ত্রী-সান্ত্রী-পুলিশ-হাকিম-মিডিয়াসহ জেড-ক্যাটিগরির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলয় থেকে, এই ক্ষমতাবলয় থেকে এদের দূরে রাখতে পারলে বেলুনের হাওয়া বেরিয়ে যায় অনেকটাই। এই হাওয়া বার করতে ভোট একটা মস্ত অস্ত্র বটে! যাইহোক, ‘যাকে খুশি ভোট দিন, বিজেপিকে নয়’, এখানেই হয়েছে কেলো, সিপিএম এতে ক্ষুব্ধ। ক্রুদ্ধ। সরকারিভাবে দলের ক্রোধ কিনা জানি না, ফেসবুকের সিপিএম-নামধারী ভক্ত-ক্যাডাররা খুব ক্রুদ্ধ। সরাসরি তাঁরা তীব্র ট্রোলিং-এ নেমে পড়েছেন এই ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে গিয়ে পোস্টার-ছেঁড়া বা উপরে-অন্য-পোস্টার-চাপিয়ে-দেওয়া অবধি গড়িয়েছে সেই ক্রোধ। নো-ভোট-টু-বিজেপি প্রচারে বিজেপি কতটা ক্রুদ্ধ জানা নেই, কিন্তু ক্যাডাররা দৃশ্যত ক্রুদ্ধ। সরকারিভাবে দল যদিও এই স্ট্যান্ডের বাইরে গিয়ে কথা বলেনি বা ক্যাডারদের এমত ট্রোল-আচরণের প্রতিবাদও করেনি।
আচ্ছা একটু পিছে মুড়কে দেখা যাক, কীভাবে শুরু হল এই ক্রোধ-লকলক বিরুদ্ধ প্রচার? মূলত নো-ভোট-টু-বিজেপি অংশ, সিপিআইএম লিবারেশন ও দীপঙ্কর ভট্টাচার্য – সবটা মিলিয়ে সম্প্রতি একটা মণ্ড তাঁরা বানিয়েছেন আর তার নাম দিয়েছেন লিবারেল। দীপঙ্কর ছিল তাঁদের প্রথম টার্গেট। কেন? গত বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ১২টি সিট জিতে মুহূর্তে উল্লেখযোগ্য বাম দল হিসেবে, দেশে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় চলে আসে ভাকপা-মালে। দীপঙ্কর বলেন, বাংলায় তৃণমূলের থেকে বড় শত্রু বিজেপি। ব্যস, সেই বাক্য হল না হজম, শুরু হল সিনে মে জ্বলন।
তারপর নো-ভোট-টু-বিজেপি ক্যাম্পেইন জোরদার হল বাজারে। লেফট লিবারেলগণ, মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায়, সমর্থন করলেন দীপঙ্কর-উবাচ ও নো-ভোট-টু-বিজেপি প্রচার। বাংলায় লিবারেশনের কোনও স্টেক ছিল না অ্যাদ্দিন, কিন্তু সহি-বাম হিসেবে ভাকপা-মালের এন্ট্রি যেন শুরু হয়েছে বাংলায়, দীপঙ্কর ও তাঁদের দলের গ্রহণযোগ্যতা যেন ক্রমবর্দ্ধমান, আঁচ পেয়ে বিপন্নতাবোধ তাড়িয়ে বেড়াল ক্যাডারদের। সঙ্ঘী রাজনীতির ভয়াবহতা উপেক্ষা করে তারা পেছনে পড়ল লেফট লিবারেলদের। ‘লিবারেল’ শব্দকে গালি হিসেবে ব্যবহার করলে, নিজেকে যে কনজারভেটিভ হিসেবে দেগে দেওয়া হয়, সেই বোধও গেল হারিয়ে!
ট্রোলিং যে-একটি মানসিক বিকার, সমবেত ট্রোলিং যে-একটি মাস হিস্টিরিয়া, বেমালুম লোপাট হল মস্তিষ্ক থেকে! গোলি মার ভেজে মে! উল্টে তাদের স্বর মিলে গেল আরেসেস-বিজেপির স্বরের সঙ্গে! সঙ্ঘের বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধাচারণ করা জনপ্রিয় স্লোগানের বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা সঙ্ঘের সহায়ক শক্তি হয়ে উঠল, এটাই ট্র্যাজেডি। নিতান্তই অপরাধবোধে সম্ভবত, অতি সম্প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় সিপিএম ক্যাডারদের পক্ষে দু-একটি পোস্ট দেখা যাচ্ছে, বিজেপিকে একটিও ভোট নয়, সম্ভাব্য বিজেপিকেও নয়। তাই সই, সকলেই চায় কমিউনিস্ট পার্টি গর্জে উঠুক আরেসেস-বিজেপির মতো সংগঠিত শক্তির বিরুদ্ধে, কিন্তু হা হতোস্মি, সেই প্রচারের সংখ্যার স্বল্পতা ও সদিচ্ছার অভাব দেখেই মালুম, বাঁ হাতে ফুল ছুঁড়ছেন চাঁদবণিক!
বাস্তবতা এমনই, সদিচ্ছা ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি মানুষ আজ পরিষ্কার স্ট্যান্ড নেবেন, যে দল যে-কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী তাকেই ভোট দেওয়া হবে। যদি তৃণমূল হয় তৃণমূল, যদি সিপিএম হয় সিপিএম, কংগ্রেস হলে কংগ্রেস। সিধা হিসাব। বিরোধী দল রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে জোট করতে না-পারলে, মানুষই করবে মহাজোট। কিন্তু এই পরিষ্কার স্ট্যান্ড সিপিএমের না-পসন্দ। কিন্তু কেন? তার কারণ পানীয় জলের মতো পরিষ্কার, গত ভোটের হিসেব কষলে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যাবে হাটের মাঝে, দু’বছর আগের লোকসভা ভোটে ৪২ আসনেই তাদের জামানত জব্দ হয়েছে, ২৯৪ বিধানসভা আসনের একটিতেও তাদের লিড নেই! ১৬৪-তে এগিয়ে তৃণমূল, ১২১-এ বিজেপি, সিপিএমের জোটসঙ্গী কংগ্রেস এগিয়ে বাকি ৯টিতে, সিপিএম ০। গত বিধানসভা ভোটের পাটিগণিত ধরলেও গুনতিতে আসে না পার্টি। ফলত ‘যে দল যে-কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী’ বললেই সিপিএমের নাম আর থাকে না, তৃণমূল (এমনকী কংগ্রেসের নামও) এগিয়ে আসে। কোনও অবস্থাতেই তারা এই অবস্থাকে মেনে নিতে পারবে না। তাই তাদের আবদার নো-ভোট-টু-বিজেপি’র লগে লগে বলতে হবে ভোট-ফর-লেফট বা নো-ভোট-টু-টিএমসি। মামারবাড়ির আবদারের থেকেও এককাঠি বেশি আবদার!
বস্তুত, ডিভিডেন্ড পাবে তৃণমূল, এমন কোনও অবস্থাকে তারা মানবে না। তৃণমূল দলটি একটি ক্লাব গোছের, নেত্রীর ফ্যানক্লাবও বলেন অনেকে। দলগতভাবে তৃণমূলের যা বৈশিষ্ট বা অবস্থান, আপাতত তারা ডিভিডেন্ড পেলেও, ভবিষ্যতে, লড়াইয়ের মাঠে থেকে সেই ডিভিডেন্ড ছিনিয়ে আনা অপেক্ষাকৃত সহজ। অন্তত বিজেপির থেকে ছিনিয়ে আনার থেকে সহজতর। এই সত্য জানার জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু এই সত্য বোঝার মতো মানসিকতা বা বাস্তববোধ আজ সরকারি বামকুলের লুপ্ত।
এমনকী যে-কৃষক আন্দোলন নিয়ে দু’দিন আগেও ক্যাডাররা সোশ্যাল মিডিয়ার পাতা কাঁপাত, সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতাদের বাংলায় আসন্ন আগমন নিয়ে তারা স্পিকটি নট, কারণ কৃষক নেতৃত্ব রাজ্যে আসবেন মূলত বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার করতে। কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বে পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লা থাকা সত্ত্বেও ক্যাডারকুল মন থেকে মানতে পারছে না, কৃষক-নেতৃত্বের আসন্ন বাংলা-আগমন। কাঁটা আরও বিঁধছে কারণ কৃষক-নেতৃত্ব যাবেন দুই মাইলফলক সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে, জমায়েতে বলবেন বিজেপির বিরুদ্ধে। আগ্রাসী মনোভাব দেখে অনেকের আশঙ্কা, কৃষকদের না-আবার চালচোর বলে গালি দিয়ে দেয় অবিমৃষ্যকারী ক্যাডারকুল! অবশ্য কৃষকদের গালি দিলে ঝুঁকি আছে, তাঁরা আবার পাল্টা জমিচোর বলে দিতে পারেন!
কিন্তু কেন এই দশা হল ‘কমিউনিস্ট’ নামধারী একটি দলের? এই উত্তর খোঁজার জন্যও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ক্ষমতা হারানোর জ্বালা আজ দাউদাউ ঈর্ষা ও যন্ত্রণায় পরিণত। আর ঈর্ষার কোনও ইস্তেহার হয় না। আমরা তো সাতের দশকের সেলিম-জাভেদের হিন্দি সিনেমা দেখে-দেখে জেনে গিয়েছি, বুকের আগুন মাথায় উঠলে একমাত্র প্রতিহিংসাই পারে সেই আগুন নেভাতে! তাই হা-রে-রে-রে প্রতিহিংসা, এখন নেতা থেকে ক্যাডারে সংক্রমিত। ধর্মান্ধ হুজুরের খুঁট ধরতেও তাই কাঁপে না হাত! সোশ্যাল মিডিয়া দেখলে মনে হয়, অরাজনৈতিক অসূয়াজনিত এই সংক্রমণ কখন যে ক্যাডারকে ভক্তে পরিণত করেছে, সে ধরতেও পারেনি!
অবস্থা আজ এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে, প্রগতিশীল বাম আন্দোলন উচ্ছন্নে যায় যাক, বাংলার মাটি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির রক্তে ভিজলে ভিজুক, বাংলার সংস্কৃতির সাড়ে-সব্বোনাশ ঘটলে ঘটুক, এনার্সি-লাঞ্ছিত মানুষের হাহাকারে ভরে যাক ডিটেনশন ক্যাম্প, কোই পরোয়া নেই! এমনকী নিজে মরলে মরব, তাও ভি আচ্ছা, তবু মেরে মরব!
ফলত বুকে বোম-বাঁধা আত্মঘাতী জঙ্গির মতো এগিয়ে চলেছেন ধুতি-পরা বৃদ্ধ স্ট্যালিন। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে টুম্পা-সোনা নামক নয়া-ইন্টারন্যাশানাল! ক্রমশ সেই সুর ফেয়ারওয়েল। বেহালা-বিধুর।
Ranjoy Roy বাবুদের জন্য কোনও প্রমাণই যথেষ্ট নয় । হয়তো উচ্চ-বর্ণের হিন্দু ব'লে চন্ডীমন্ত্র নিয়ে একটু দূর্বলতা আছে । তাই রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে এসবের ব্যবহার সাম্প্রদায়িক মনে হচ্ছে না । একই কারণে বিজেপি তাদের রাজনীতির ম়ঞ্চ ,মিছিল, সমাবেশ থেকে 'জয় শ্রী রাম'-এর মতো বাজে শ্রুতিকটু একটা স্লোগান দিতে দুবার ভাবে না ।
আসল প্রশ্ন বিশ্বাসযোগ্যতার , ধারাবাহিকতার , সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে আপোষহীনতার ।
লিবেররাল কিংবা লিবেরেশনের আগুনখোর বিপ্লবীদের নিয়ে সমস্যাটা এখানেই । ইতিহাস , যুক্তি ম্যাটার করেনা তাদের কাছে - এমনকি নিজেদের ইতিহাস ( লিবেরেশনের দিদি-সার্টিফায়েড 'আসল কমিউনিস্ট'রা বিহারে কংগ্রেসের সাথে জোট করে বসে আছেন , ভুলে যান । )। অথচ অন্যকে ছোট করে চিপ পয়েন্ট স্কোর করা , এবং একটা হাস্যকররকম আত্নশ্লাঘা তাদের বত্রিশআনা ।
এই বিতর্ক একভাবে মিনিংলেস । এই গোষ্ঠীর সারা বাংলায় হাতে-গোনা যে কজন আছেন তারা দিদির রাজনৈতিক প্রোটেকশনে চলেন। কেন বলতে পারেন । 2011-এর পর থেকে লাগাতার সিপিএম সহ বামফ্রন্টের উপর য অত্যাচার তৃণমূল থেকে নেমে এসেছে । পার্টি অফিস দখল , এলাকার পার্টি নেতাদের উপর হামলা , থাকতে হলে জরিমানা , জমি দখল , পুকুর দখল , ঘরছাড়া করা মহিলাদের উপর অত্যাচার , মিটিং-মিছিলে লাগাতার আক্রমণ -কিছুই বাদ যায়নি । এর সবটাই গিয়েছে বামফ্রন্টের উপর দিয়ে ।
অথচ খেয়াল করে দেখবেন। এই লিবেরেশনের উপর কিন্তু তৃণমূলের কোনো আক্রমণ করার খবর এই 10 বছরে একবারের জন্যও খবরে আসেনি।
এছাড়া তৃণমূলের এই লুম্পেন রাজনীতির , ভয়াবহ দূর্নীতি , এলাকায় মাতব্বরি , কাটমানি , আইডেন্টিটি পলিটিক্স এসবের কথা আসল কমিউনিস্ট বা লাজুক তৃণমূলরা আলোচনায় আনবেন না । গত 10টা বছর বাদ দিয়েই এখন রাজনীতি হবে । মানে 1977 থেকে 2011 অবধি ( এই সময়েও তাদের মাই-বাপ তথা বিপ্লবের কান্ডারী মমতা দেবী যেসময়জুড়ে বিজেপির সরকারের শরিক , কান্ডারী স্বয়ং মন্ত্রী, 2001/২০০৬/২০০৪-এ জোট করে ভোট লড়া- সেগুলোও বাদ দিতে হবে ) ,তারপর সোজা 2021 । বিজেপি হঠাৎ 2021 -এ আকাশে থেকে পড়েছে বাংলার রাজনীতিতে ।
এই ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅনেস্টি যাদের অস্ত্র ,তাদের সাথে আলোচনা পন্ডশ্রম মাত্র ।
আব্বাস সিদ্দিকী ধোয়া তুলসী পাতা -কেউ বলছে না । লোকটার আপব্রিংগিং হয়েছে ধর্মের অচলায়তনে । লোকটি অসাম্প্রদায়িক - এও বলার মতো সময় আসেনি । তবে এও ঠিক , উনি ব্রিগেডের মঞ্চে কোরআন পাঠ করেন নি , কোনও ধর্মীয় সিম্বলিজম এর ব্যবহার করেন নি । এই দুটোই স্বীকার করতে যে নৈতিক সততার প্রয়োজন সেটা এই আগুনখোর বিপ্লবীদের কাছ থেকে আশা করা বোধহয় অন্যায় দাবী করা হবে।
আরও একটা বিষয় এই লাজুক তৃণমূলীরা এড়িয়ে যেতে চায় - এবং এটাই সেন্ট্রাল বিষয়বস্তু হওয়া উচিত সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কোনো সৎ আলোচনায় - তা হলো: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেনো নিজের হিন্দু পরিচয় জাহির করে ভোট চাইতে হচ্ছে ? কেন রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে সরস্বতী মন্ত্র , চন্ডীমন্ত্র পাঠ করতে হচ্ছে ?? বাংলায় হিন্দুরাজনীতি কি কম পড়িয়াছিল ??
এখানে একজন মহাজ্ঞানী সিপিএমকে ফ্যাসিস্ট বললেন । তারা ইতিহাস এবং রাজনীতিবোধের প্রশ্ংসা না করে পারছিনা ।
বুঝলে বিজেপির উত্থান হয় কি করে? পন্ডিতেরা কত বোঝাচ্ছে বিজেপি খারাপ তবু পাবলিক কাতারে কাতারে তাদের ভোট দিচ্ছে কেন?
আরে, পিছিয়ে পড়া সিপিএম এখানে এখনও! এদিকে খাদেজা বানুর সাক্ষাৎকার বেরিয়ে গেল, আইএসএফ-জোটকে তুলোধোনা করেছেন। উনি চালচোর কিনা, সেটা নিয়ে চর্চা করবেন না!
লাজুক তৃণমূলীদের সুবিধা অনেক । কোনও সিরিয়াস আলোচনার পাবেন না তাদের । সাইড-কমেন্ট , বক্রোক্তি দিয়েই তাহারা উদোম লেনিনবাদী বিপ্লব মারাবেন । নন্দীগ্রাম যেমন মারিয়েছিলেন। আরএসএস করা শুভেন্দু , মুকুলদের নিয়ে বা প্রাক্তন বিজেপির জোটসঙ্গী মমতার হাত ধরে !
যাই হোক , চন্ডীমন্ত্র সহযোগে লেনিনবাদী মমতা-সারটিফায়েফ 'আসল কমিউনিস্ট' বিপ্লব নামুক এই হতভাগাদের দেশে ।
ফেসবুক সিপিএম সিরিয়াস আলোচনা খুঁজছে! ওয়াও!!
এই বিতর্ক একভাবে মিনিংলেস । সিপিএমের সারা দেশে যে কজন আছেন তারা ভাজপার রাজনৈতিক প্রোটেকশনে চলেন। কেন বলতে পারেন । 2014-এর পর থেকে লাগাতার তৃণমূল সহ বিরোধী মুখগুলোর উপর অত্যাচার বিজেপি থেকে নেমে এসেছে । সিবিআই , ইডি , পার্টি নেতাদের জেলে ভরা , ইনকাম ট্যাক্স রেড , মিডিয়ায় , মিটিং-মিছিলে লাগাতার আক্রমণ -কিছুই বাদ যায়নি । এর সবটাই গিয়েছে অন্যদের উপর দিয়ে ।
অথচ খেয়াল করে দেখবেন। এই সিপিএমের উপর কিন্তু ভাজপার কোনো আক্রমণ করার খবর এই 7 বছরে একবারের জন্যও খবরে আসেনি।
অর্ণববাবু
আমি খোলাপাতায় ব্যক্তি নিয়ে নয়, বক্তব্য নিয়ে আলোচনা পছন্দ করি। তবু আপনি খামোখা আমাকে উচ্চ্চবর্ণ হিন্দু , লিবারেশনের সমর্থক, মমতার পোষ্যপুত্র ইত্যাদি ধরে নিিয়ে খড়েের মানুষ দাঁঁড় করিয়ে অনেকগুলো প্যারাগ্রাফ খরচ করলেন। এই বুঝি সিরিয়াস আলোচনা?
এর বিপরীতে পলিটিশিয়ানের পোস্টগুলো, ব্যক্তিনির্বিশেষে বক্তব্য ধরে কাউন্টার করা, আমার পছন্দ হোক বা না হোক। ভাবতে বাধ্য হই।
এবার আমার কথা।
1 পাঁড় নাস্তিক, শ্রাদ্ধ করিনি। কেউ অসুস্থ হলে ঠাকুরকে ডাকিনা।
2 উচ্চবর্ণ নই, সম্ভবত আগুরি বা পোঁদ। কৌলিক পদবী ময়মনসিংহ ইন্দ্র।
এগুলো গুরুতে বাঙালবাড়ি ধারাবাহিকে বলা আছে।
3 আজকের রাজনৈতিক বিশ্বাসে কোন সশস্ত্র বিপ্লবে এবং কোন রঙের (লাল, নীল বা গৈরিক) ডিকটেটরশিপে বিশ্বাস করিনা। কাজেই লিবারেশনের বা কোন নকশালগ্রুপের সমর্থক নই। আমার নভেলগুলো তার দলিল। তাই অনীক ও এবং জলার্ক পত্রিকা তেড়ে গাল দিয়েছেন।
4 থাকি ছত্তিশগড়ে ও দিল্লির আশপাশে, পালা করে। তাই তিনো পোষ্যপুত্র নই। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আন্দোলনে সাধ্যমত যুক্ত হই।
5 আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস বহুদলীয় সোশ্যাল ডেমোক্রাট ওয়েলফেয়ার স্টেটে, এটা আমার ব্যক্তিগত বন্ধু পিটি স্যার জানেন। এগুলো কোন কমিউনিস্ট দেশে অসম্ভব।
চন্ডীমন্ত্র সহযোগে লেনিনবাদী বিপ্লবের কপিরাইট তো হরিশ চ্যাটার্জি রোড থেকে আপনারাই পেয়েছেন ।
ফেসবুক সিপিএম আর আপনারা মমতা-সারটিফায়েড 'আসল কমিউনিস্ট' । এই আত্নশ্লাঘা নেই থাকার যে কমফর্টই আলাদা ,সেটা আপনাদের মতো লাজুক তৃণমূলদের না দেখলে বোঝা যেত না ।
এই গোস্বামী লোকটি কার্ডধারী তৃণমূল হলে অবাক হবো না । টিভির বিজন-গোছের। যুক্তির সাথে আদায়-কাচকলায় ওনার । সাম্প্রতিক কেরালা কিংবা ত্রিপুরায় যা হচ্ছে , সেসবের খবর রাখার প্রয়োজন মনে করেন না ।
তবে 2018 তে বিজেপি ত্রিপুরায় পাওয়ারে আসার পর থেকে বিপ্লবের কান্ডারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ত্রিপুরার রাজনীতি থেকে নিজেকে এবং তার দলকে তুলে নিলেন কেনো ,সেই উত্তর নিশ্চয় 'আসল কমিউনিস্টরা' দেবেন না।
যাই হোক ,আগে নন্দীগ্রামে যেমন আরএসএস করা শুভেন্দু, মুকুল-দের নিয়ে লেনিনবাদী বিপ্লব আসিয়াছিল নেমে ।এবারও আশা করছি চন্ডীমন্ত্র দিয়েই 'দারুণ বিপ্লব মাঝে' সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তীব্ব পোতিবাদ চলবে ।
অর্ণববাবু
গোস্বামী নিকের আড়ালের ভদ্রলোক কার্ডধারী তিনু নকু মিম সবই হতে পারে। তাতে কি ওঁর এই পাতায় লেখার অধিকার খারিজ?
আমাকেও ছত্তিশগড়ের আর এস এস সহকর্মীরা সিপিএমের কার্ডহোল্ডার মনে করে। আমার সিপিএম বন্ধুরা হাসে।
খামোখা কারও কুষ্ঠিঠিকুজি খোঁজা ছেড়ে বক্তব্য কাউন্টার করুন বা ফালতু ভেবে ইগনোর করুন। ল্যাটিন চুকে যায় ।
*ল্যাঠা
সেটা খারাপ বলেন নি । ইগনোর করেলেই হয় । কিন্তু এদের অন্তসারশূন্য আত্নশ্লাঘা ব্যাপারটা নোংরামীর স্টেজে চলে গিয়েছে।
"অথচ খেয়াল করে দেখবেন। এই সিপিএমের উপর কিন্তু ভাজপার কোনো আক্রমণ করার খবর এই 7 বছরে একবারের জন্যও খবরে আসেনি।"
কারণ সেই কম্মগুলো তাদের হয়ে তিনোরাই করে যাচ্ছে। একটু চোখ খুলে দেখুন!!!
হিন্দুধর্মের ঠেকা নেওয়ার ভূমিকা বিজেপি করছে। কিন্তু বস্তুত হিন্দুধর্ম বিজেপির পরিচিতিমূলক রাজনীতির থেকে ভিন্নতর। উপাসনা, করুণা, ঈশ্বরপ্রেম ইত্যাদি তার মূল ভিত্তি। দেশের লাখো হিন্দুর কাছে ধর্ম মানে মুসলমানের উপর আধিপত্য নয়, নিজের বাড়িঘরের প্রতি মমত্ব, অন্যকে ভালোবাসা, অদেখাকে দেখার আকুলতা। মমতা সেই জায়গাটাকে অ্যাসার্ট করে খুবই ভালো করছেন।
"মমতা সেই জায়গাটাকে অ্যাসার্ট করে খুবই ভালো করছেন"
একটা সময় অবধি তো ধর্মকে রাজনীতির থেকে আলাদা করেই দেখা হতো। সেপারেশান বিটুইন চার্চ অয়ান্ড স্টেট। তাহলে এখন উল্টোদিকে চলার কি দরকার?
মমতার চণ্ডীস্তোত্রপাঠের নিন্দা করুন, কিন্তু সামান্য হলেও একটু জোটসঙ্গীর নুসরত সম্পর্কিত প্রকাশ্য বক্তব্যের প্রকাশ্য নিন্দা করুন। দেখাবে ভাল। নাহলে পরে আপনাদের গোপন সঙ্গীরা কিন্তু ক্যালাতে পারে, ওই ২০২৬ এ আপনারা ক্ষমতায় আসার আগেই
ও তো ইউরোপে, এইদেশের ইতিহাস অন্যরকম
ডিসি খাগড়াগড় পদ্য পড়ে নাই? এখন বড়বিজ্ঞান ছোটবিজ্ঞানের উল্টোদিকে চলতে হবে। সাম্রাজ্যবাদের বুকের ওপর বসে তার দাড়ি ওপরাতে হবে।
য়ুরোপ আর এদেশ আলাদা কেন? যেটা ভালো সেটা সবার জন্যই তো ভালো জানতাম। ধর্মের প্রচলন আস্তে আস্তে কমিয়ে আনাই তো লক্ষ হওয়া উচিত মন হয়। এমনিতেও পৃথিবীর নানান দেশে অয়াগনস্টিক, এথেইস্ট বা ধর্মে বিশ্বাস করেন না এরকম লোকের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের দেশেও সেটা হওয়া উচিত মনে করি।
সে তো সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণায়নও বাড়ছে, সারা পৃথিবী জুড়ে বাড়ছে মানেই ভালো এমন তো না। মানবসভ্যতার প্রায় সমস্ত অর্জনই ধর্মের মধ্যে নিহিত আছে, সেটাকে কমিয়ে ফেলা ভালো কেন হবে?
আর এই দেশের গণ-রাজনীতি সিপাহি বিদ্রোহ থেকে গান্ধিজি সবই ধর্ম যবে শংখ রবে করিবে আহ্বান হয়ে থেকেছে, তাকে ফেলে দেবই বা কেন? কিন্তু ধর্ম যদি শুধু পুঁজিবাদের গোলামি আর বিভেদের কাজে ব্যবহার হয়, ধর্মের সেই ঠিকেদারদের থামাতে হবে বৈকি
এদিকে আমি জানতাম মানবসভ্যতার সমস্ত অর্জনই বিজ্ঞান এর মধ্যে নিহিত আছে। ধর্মের প্রভাব যতো কমানো যায় ততো ভালো।
বিজ্ঞান বাদ দিয়ে অর্জ্ন নেই নাকি!!!
আমার সেরকম চোখে পড়ে না :-)
আর ইয়ে, ধর্ম বিভেদের কাজে ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার হয়েছে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে সেরকম কিছুও খুঁজে পাইনি :-)
মানবজীবনে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা লিখ - ১০ নম্বর।
এরকম রচনা আমাকে কেউ লিখতে দিলে একটা লাইনও লিখতে পারবো না। সিরিয়াসলি।
এখানে কিছু লিখেছিলাম- https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=13703
তিরুপতির লাড্ডু। রাধাবল্লভী। সীতাভোগ । পুরীর জগন্নাথের মালপোয়া। @ ডিসি।
পড়লাম, কিন্তু বেশীর ভাগ ইস্যুতেই আপনার আর আমার অবস্থান ভিন্ন :-)
"ধর্ম হলো নিপীড়িতের দীর্ঘশ্বাস" - এরকম আমার একেবারেই মনে হয়না। আমার মতে ধর্ম আর বিজ্ঞান - এই দুটোই মানুষের অনুসন্ধিৎসার ফসল। মানুষের কনশাসনেশ (যাক কিনা পেনরোজের মতে মস্তিষ্কের মাইক্রোটিউবিউলে কিছু বিশেষ কোয়ান্টাম এফেক্টের ফলে উদ্ভব হয়েছে), মানুষকে প্রশ্ন করতে শিখিয়েছিল, আর তার ফল ধর্ম আর বিজ্ঞান নামের দুটো নলেজ ফ্রেমওয়ার্ক। তবে ধর্ম নামের ফ্রেমওয়ার্কের কিছু ইনকনসিসটেন্সি আছে,, যা আপাতত বিজ্ঞানের নেই, ফলে ধর্মকে বিজ্ঞান দিয়ে রিপ্লেস করতে পারলে ভালো হয়।
ধর্ম মানুষের মঙ্গলের কথা বলে, এরকম আমার আদৌ মনে হয়না। মানে এমনিতে বলে, এইন র্যান্ডএর মতো করে বলে, তাতে লাভ কিসু হয়না। তার চেয়ে বরং চাকা, আগুনের ব্যবহার, কৃষি, চিকিৎসা বিজ্ঞান ইত্যাদি নানা আবিষ্কারে অনেক বেশী মানুষের মঙ্গল হয়েছে। এক গুটেনবার্গ মানব সভ্যতার যা উপকার করেছে, সেরকম মঙ্গল সব ধর্ম মিলিয়ে করতে পারেনি। এমনকি ভিন্ট সার্ফ আর টিম বার্নার্স-লি ও ওই লিস্টে ধর্মের ওপরেই থাকবেন। লুই পাস্তুর তো আছেনই।
নিজের দেশের দরকারকে মাথায় রেখে নিজের দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস বেছে নিয়েছিলেন আমাদের প্রপিতামহ-পিতামহরা। সেইরকমই সচেতন ভোক্তা হওয়া আজও আমাদের খুব দরকারের - আমি একেবারেই এর বিপরীতে। আমি পৃথিবী জুড়ে ফ্রি ট্রেডের পক্ষে, যেকোন রকম রিজিওনালিজম এর বিপক্ষে। সব দেশের লোক যতো বেশী বিদেশী জিনিস কিনবে, সব দেশের ততো ভালো হবে বলে মনে করি। (আচ্ছা, ডগলাস রিকার্ডোকেও ওপরের লিস্টে ঢুকিয়ে নিলাম)।
আরও অনেক কিছু লেখা যেত, কিন্তু আপাতত বেরোতে হবে :-)
কীর্তন ক্যারল?
b, আর কালীপুজোর পাঁটা প্রসাদ আর সরস্বতী পুজোর খিচুড়ি ভোগ? :p
এই যুগে এসেও ধর্মের পক্ষে যুক্তি শুনে ভালোই লাগছে । আবার হাসিও পাচ্ছে ।
ধৰ্ম ব্যাপারটা বেসিকালি একরকম কুস্ংস্কার । সে স্বামীজির হিন্দু ধৰ্ম হোক আর দিলীপ ঘোষের হিন্দু ধর্মই হোক । একই কথা প্রযোজ্য অন্য ধর্মগুলোর জন্য ।
স্বামীজির মতো হাস্যকররকম সেলফ-কন্ট্রাডিকটরি লোককে ভগবানের জায়গায় রেখেই বাঙালী হিন্দুর এই অবস্থা ।
আমরা যেটাকে হার্মলেস ধৰ্ম বলছি , মানে অমৌলবাদী অংশ যেটা , সেটা যেমন অন্ধবিশ্বাস থেকে জন্ম হয়েছে , তেমনি গডসে বা লাদেনের ধৰ্মও সেই অন্ধবিশ্বাসের হার্মফুল এক্সটেনশন মাত্র ।
ধৰ্ম সমাজের দেহে এপেন্ডিক্স এর মতো ।যুগের সাথে সাথে এরও ডারউইনের নিয়েমে লুপ্ত হওয়ার কথা ছিল ।