এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • ক্যালিডোস্কোপে দেখি - বৃষ্টি

    অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৬৮৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়



    তিন আয়নাভরা একটা নলের এক প্রান্তে কয়েকটা রঙ্গীন, হালকা, টুকিটাকি টুকরো–ভাঙ্গা চুড়ি, ছোট পুঁতির দানা। নল ঘোরালে, আয়নারা ঘোরে, টুকরোরা ঘুরে ঘুরে রচনা করে ছবির পর ছবি, অজস্র, অফুরান; এক লহমার ছবি পরের মুহুর্তে হারিয়ে যায়। ছোটবেলার সবচেয়ে প্রিয় খেলনাগুলোর একটি। অনলাইন লেখক সমাবেশে এই স্মৃতিচারণ শুরু করার দিনগুলোয় লেখক বন্ধু আয়নামতি সন্ধান দিয়েছিলেন একটি কবিতার–জীবন রঙ্গীন কাঁচ। কবি ইন্দিরা দাশ। কবিতার ধরতাই–“চলো ক্যালিডোস্কোপ‘টা ভরে জীবনটা দেখে নিই একবার।” সেই শুরু।

    ক্যালিডোস্কোপ ঘুরে চলেছে। নির্দিষ্ট কোন পরম্পরার বাধ্য-বাধকতা নয়। যখন যেমন ইচ্ছে করবে, যখন যেমন মনে পড়বে। এক-ই ঘটনা হয়ত উঠে আসবে, বারে বারে, অন্য অন্য ছবি হয়ে। শুধু আমার নিজের জীবন-ই দেখব কি? কে জানে! হয়ত অন্য কোন দেখা জীবন ও … কোন শোনা জীবন …। দেখতে থাকি।

    আমার সচেতন স্মৃতির শুরু যে বাসাটি থেকে, সেটির অবস্থান ছিল দমদম ক্যান্টনমেন্টের এক তিনতলা পাকা বাড়ির একতলায়, এক ধারে, মাত্রই দুটি ঘরে। কিন্তু আমার কাছে পুরো বাড়িটাই ছিল যেমন ইচ্ছে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা। অপরাপর ভাড়াটে কা্কিমা-কাকুরা, বাড়ির মালিক দাদু-দিদা, তাদের ছেলে মেয়ে নানা বয়সের কাকু-পিসিরা, বড়দের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক যেমনই হোক, আমার কাছে তার কোন ধারণা ছিল না, তার জন্য কোন আগ্রহও ছিল না। আমার জন্য সে যেন এক বিশাল পরিবার। বড়দের হিসাব মত আমি অবিবেচক ছিলাম না। ফলে তাদের সস্নেহ প্রশ্রয়ে ঐ বাড়ির প্রায় সমস্ত ঘরে, সব বারান্দায়, এমনকি ছাদে, নিজের নিরাপত্তার হিসাবটুকু মনে রেখে, চলে যেতে পারতাম, যেতাম। দোতলার বারান্দার রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে নিচের উঠোন দেখা, ছাদের কোথাও বড়ি শুকোতে দেওয়া হয়েছে, কোথাও আচার, আকাশ জুড়ে ঘুড়িদের ওড়াউড়ি, কি পাখিদের ভেসে যাওয়া, আমার মনও ভেসে গেছে। উপরে দিদার খাটে বসেছিলাম। গুনগুন করে গাইছিলাম সেই সময়ে বারে বারে শুনতে পাওয়া এক গান। বড়রা ছিল এদিক-ওদিক। শোভনকাকু উৎসাহ দিয়ে বলেছিল, ভালো করে শোনাতে। সবার প্রচুর হাসি আর আহ্লাদে ফুলে ঢোল হয়ে আমি নেমে এসে মাকে জানিয়েছিলাম কেমন মস্ত গাইয়ে হয়েছি আমি। হাতের কাজ থামিয়ে মা জিজ্ঞাসা করল,
    –  কি গান গাইলি তুই?
    –  বোল রাধা বোল সঙ্গম হোগা কি নেহি…
    মা চোখ বড় বড় করে কয়েক মুহুর্ত আমার দিকে তাকিয়ে রইল, বাবার দিকে ফিরল, তারপর যেই কাজ করছিল সেটায় ফিরে গেল। মা-বাবা কারো আমার সঙ্গীত প্রতিভা নিয়ে কোন আগ্রহ দেখা গেলনা। বড়দের সব সময় বোঝা যেত না।

    যেমন বুঝতে পারিনি ঐ বাড়ি ছেড়ে আমাদের কেন চলে যেতে হবে! বাবার চাকরিতে উন্নতি হয়েছে, তাই বদলি হয়েছে। মানে কি তার?

    তৃতীয় শ্রেণীর বাৎসরিক পরীক্ষার পরে এই বাড়ি ছেড়ে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে কুচবিহারে যে বাড়িটিতে গিয়ে উঠলাম সেটি বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে বানানো একটি একতলা বাড়ি। যেদিন বাড়িটিতে ঢুকেছিলাম, সেদিন সেভাবে বুঝিনি, ধাক্কা লাগল পরের দিন সকালে। অনেকগুলি ঘর নিয়ে হলেও দুদিকে গড়ানো ঢেউ খেলানো টিনের কি অ্যাাসবেস্টসের ছাদে ঢাকা, মাত্রই একতলা একটি বাড়ি। তিনতলা পর্যন্ত উঠে যাওয়ার সিঁড়ি কোথায়? হেঁটে বেড়াবার মত ছাদ! নেই! এ কোথায় এলাম? কবে ফিরে যাব আগের বাড়িতে? কখনো না! সেই মানুষেরা, তাদের কাছেও আর যাওয়ার উপায় নেই! আর আমার পাড়া, আমার বন্ধুরা! সব চলে গেল?

    উদ্বাস্তু হওয়া কাকে বলে সে আমার জানা ছিল না। বাবা-মা-ঠাকুমা উদ্বাস্তু ছিলেন। আত্মীয় স্বজনদের এক বড় অংশ তাদেরই মতন বাস্তুহারা হয়ে অজানা অচেনা মাটিতে এসে যার যার জীবনকে দাঁড় করাচ্ছিলেন। বড়দের মুখ থেকে শুনে এই কথাটির সাথে পরিচয় হবে আরও কিছুকাল বাদে। তার আগেই কুচবিহারের সেই প্রথম সকালে তখনও অজানা শব্দটি আমার অনুভূতির জগতে বসতি করে নিল। চলতে চলতে এক সময় এমন লোকের জীবনের সাথেও জুড়ে গেছি যিনি জমিদার পরিবারের ঘরে বারান্দায় খেলে বেড়ানো বালকের জীবন থেকে উপড়ে এসে আটকে গিয়েছিলেন দমদম, পাইকপাড়ার দুই ঘুপচি ঘরের এক ঠাঁইয়ে, আর সুরসিক, হৃদয়বান, অতীব বিদ্বান মানুষটি সেখানেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর দীর্ঘ জীবনের বেশির ভাগটা। এমনতর অসংখ্য ছিন্নমূল মানুষদের বেদনার পরিমাপ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। কুচবিহারে গিয়ে পড়া বালকটির স্মৃতি দিয়ে তার একটু আভাষ মাত্র পাই।

    সিঁড়ি বেয় উপরে উঠতে না পারার দুঃখ আস্তে আস্তে অনেকটাই ভুলিয়ে দিয়েছিল দৌড়ে বেড়াবার অঢেল জায়গা। নাম নিউটাউন, গ্রাম থেকে শহর হয়ে উঠতে তার তখনো অনেক বছর বাকি। সেই পরিবেশে আমাদের বাসাটি দাঁড়িয়ে ছিল অনেকটি জায়গা নিয়ে। বাড়ীর মালিক কোন চা বাগানের ম্যানেজার। সেখানেই থাকেন। এখানে এই বাড়িটিতে একটি থাকার ঘর এবং একটি রান্নাঘর তাদের জন্য তালাবন্ধ থাকে। বাকি বাড়ির সবটুকু জুড়ে আমাদের অবাধ বিচরণ। আয়তাকার জমির সামনের প্রায় পুরোটা আর পাশের বাহুর অর্ধেক জুড়ে উঁচু ভিতের উপর থাকার ঘরগুলি, তারপর পাশের বাহুর বাকি অর্ধেকে চাপাকল, স্নানঘর, হাগুঘর ইত্যদি পার হয়ে উঠানের অপর প্রান্তে পিছনের বাহুর প্রায় পুরোটা জুড়ে একটু নিচু ভিতের উপর দুটি রান্নাঘর, তার একটি আমাদের। তারপর কিছুটা জায়গা ছেড়ে বাড়ির পিছনের বেড়া। উঠানের ডানদিক জুড়ে পুরোটাই লম্বা বেড়া। বাড়ির সামনেও রাস্তা আর বাড়ির মাঝে ঘাসে ছাওয়া বেশ বড় একটি মাঠের মতন উঠান। পরে সেখানে ব্যাডমিন্টনের, হাডুডুর কি দরিয়াবন্ধার কোর্ট পড়বে। নিজেদের চৌহদ্দির মধ্যেই দৌড়ে বেড়ানোর অঢেল ব্যবস্থা। আমাদের তিন ভাইয়ের জীবনে সেই প্রথম। তার ব্যবহার করতে আমরা একটুও দেরী করিনি। বাড়ির ভিতরেই উঁচু ভিত আর নীচু উঠান – কুমীর তোর জলকে নেমেছি – এ খেলার এমন আদর্শ জায়গা ক’জন কোথায় পায়! সেই সব খেলার গল্প আজ নয়, আরেকদিন।

    আমি পড়ি তৃতীয় শ্রেণীতে, মেজ ভাই প্রথম শ্রেণী। ছোটজন ঘরে খেলা করে। কোন কিন্ডার গার্টেনের গল্প ছিল না আমাদের। কোন প্রাইভেট টিউশন-এর বেদম দৌড় ছিল না। আমরা দৌড়তাম উঠানে, মাঠে, রাস্তায় রাস্তায়। আমার জীবনে বাংলার মাটির সবচেয়ে অন্তরঙ্গ ছোঁয়া ছিল উত্তরবঙ্গের সেই অসামান্য দিনগুলো। এই লেখা প্রথম লেখার সময় প্রায় অর্ধশতাব্দী পিছিয়ে সেই দিনগুলো দেখতে বসে প্রথমেই মনে ভেসে এসেছিল – বৃষ্টি।

    উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে পর্যন্ত বৃষ্টির কথা বলতে আমার মনে পড়ে সামান্য কয়েকটি দেখার আর বাঁচিয়ে চলার স্মৃতি। একটা কালো ছাতার সাহায্যে নিজেকে বাঁচানো, বই-খাতার ব্যাগ বাঁচানো। ছাতার আকার ভালই ছিল, ভিজতে হত না। দূর থেকে লোকেরা সম্ভবতঃ দেখত, একটা ছাতা ছোট ছোট পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। মেজ ভাই সাথে থাকলে এক জোড়া পায়ের বদলে দু’ জোড়া পায়ের উপর ছাতাটির অল্প অল্প নড়ে চড়ে এগিয়ে যাওয়া। দু-একটা ছুটির দিনে বাসার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলের স্রোতে ভাসিয়েছি, না কোন কেয়া পাতার নৌকো নয়, নিতান্তই অপটু হাতে বানানো, কাগজের নৌকো। বেশি দূর যাওয়ার আগেই তারা স্রোতের পাশে ডাঙ্গায় আটকে গেছে। কোন কোন দুর্লভ মুহুর্তে জল ছপছপিয়ে বাইরে থেকে বাড়ি ফিরার সু্যোগ হত। কিংবা, অনেকক্ষণ ধরে ঝুলে থাকা মেঘ একসময় জলকণা হয়ে নেমেই এলে বাঁধানো ঘাটের ধার থেকে দৌড়ে বাড়ি আসতে গিয়ে কয়েক মুহুর্ত থেমে পিছন ফিরে পুকুরের জলের উপর বৃষ্টি-ফোঁটার চলমান ঢেউয়ের সর দেখে নেওয়া–এই, এর বেশি খুব কিছু মনে পড়ে না।

    উত্তরবঙ্গের দিনগুলোতে বৃষ্টিকে আমি দেখেছি তার আহা-মরি-মরি সৌন্দর্যে, দেখেছি তার ভয়াল-ভয়ংকর-প্রলয়নাচনে। আশে পাশে অনেক বাড়িই ছিল মাটির দেয়াল, টালির ছাদ। আমাদের বাসা ছিল ইঁটের গাঁথুনির পাকা দেয়াল, কিন্তু টিনের চাল (কিংবা অ্যাসবেস্টসের)। দুপাশ থেকে চাল উঁচু হয়ে উঠে গেছে মাঝ বরাবর। দেয়ালের উচ্চতায় চালের নীচে ঘরজোড়া ছাদ। ছাদ আর চালের মাঝখানে হাওয়ার আস্তর শীত-গ্রীষ্মে ঘরের তাপমাত্রা সহ্যের মধ্যে রাখত। কিন্তু সেই হাওয়ার স্তর-ই ধুম বৃষ্টির সময় সৃষ্টি করত – শব্দের অনুরণন। চালের উপর অতি দ্রুত বড় বড় ফোঁটা পড়ার অবিশ্রাম চড়চড় শব্দ। তাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিত চাল আর ছাদের মাঝখানের হাওয়া-বাক্স। আমি সহ্য করতে পারতাম না। বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে এক কান তোষকে চাপা রেখে আর এক কান-এর উপর বালিশ চাপা দিয়ে রীতিমত কান্নাকাটি করতাম। আর মা পাশে বসে সমানে গায়ে হাত বুলিয়ে শান্ত করত তার অবুঝ সন্তানকে। ছোট ভাই দুটোর কিন্তু কোন ভয় নেই। তারা দিব্যি ছুটে ছুটে এ জানালা ও জানালা করছে। এখন অবাক হয়ে ভাবি কেন অত ভয় পেতাম আমি? জানি না। তবে এটুকু জানি, আমার ইচ্ছে হলেই যে ঐ অবিরাম আওয়াজ থামিয়ে দিতে পারছিনা সেটাই আমাকে বেশী অস্থির করে ফেলত। ধীরে ধীরে অবশ্য বুঝতে পেরে গেলাম এটাই জীবন। এখন থেকে বেশীর ভাগ সময়ই যা ইচ্ছে করছে তা ঘটবে না। যা ঘটবে তাতে আমার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আস্তে আস্তে ভয় কেটে গিয়েছিল। বা বলা যায়, ভয়কে সাথে নিয়ে চলতে শিখে গিয়েছিলাম। ভয় কেটে যাওয়ার পর চোখে পড়ল বৃষ্টির অন্য রূপ।

    প্রকৃতি একটু একটু করে খুলে দিচ্ছিল তার জাদু-দরজা। ঘরের একদিকের দেয়ালের পাশে ছিল লম্বা লম্বা পাতার কিছু গাছ। তাতে অদ্ভুত দেখতে কিছু কলি। ধীরে ধীরে কলিরা বড় হচ্ছিল। হঠাৎ এক সকালে দেখি, কলি নয়, ফুল। কি অবিশ্বাস্য সুন্দর ফুল! বাবাকে গিয়ে ধরলাম, কি ফুল বাবা? বাবা বলল, কলাবতী। এমন ও ফুল হয়, এমন ও নাম হয়! আমার চেতনার কূল ভাসিয়ে বাজতে থাকে কলাবতী, কলাবতী, কলাবতী। তারপর একদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামে। গায়ে সেদিন অল্প অল্প জ্বর।
    মা বলে,
    –  আজ আর দুজনের কারো, স্কুলে গিয়া কাজ নাই।
    আমি চাদর মুড়ি দিয়ে হাত-পা ঢেকে বিছানায় বসে থাকি, জানালার পাশে। দেখি, কলাবতী বৃষ্টিতে স্নান করে। পাতার গা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে – টুপ – – টুপ, টুপ টুপ। ফুলের গা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে – টুপ – – টুপ, টুপ টুপ।
    ঠাকু’মা এসে পাশে দাঁড়ায়।
    –  কেমন আছ অহন?
    –  ভালো।
    –  জলীয় বাতাস লাগাইও না। জ্বর বাড়ব।
    জানালার পাল্লা অনেকটা বন্ধ হয়। একটু ফাঁক রাখা থাকে–নাতির জন্য, কলাবতীর জন্য।
    ছোট দু’ ভাই এবার ঘিরে আসে,
    –  ঠাকুমা গল্প বলো।
    ঠাকু’মা বিছানায় উঠে আসে।
    বৃষ্টি বাড়ে।
    তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে ছুটে চলে রাজপুত্রের ঘোড়া, উড়ে চলে। গল্প বলতে বলতেই ঠাকুমা আস্তে করে একটা লেপ বিছিয়ে দ্যায় আমার গায়ের উপর। পাশ ফিরিয়ে দেয় আলতো করে। পক্ষীরাজ ঘোড়ার পিঠে চড়ে উড়ে চলি আমি।

    তারপর একদিন হাতে আসে একটা বই, আশ্চর্য বই। ঠাকুমার গল্পগুলো ঝুলি ভরে তুলে দিয়েছেন লেখক। এক বৃষ্টিভেজা, আঁধার হয়ে আসা দুপুরে উপুড় হয়ে পড়তে থাকি –
        কলাবতী রাজকন্যা মেঘ-বরণ কেশ,
        তোমার পুত্র পাঠাইও কলাবতীর দেশ।
        আনতে পারে মোতির ফুল ঢো-ল-ডগর,
        সেই পুত্রের বাঁদী হয়ে আসব তোমার ঘর।
    একসময় বুদ্ধুবানরের ঘরে আসে কলাবতী কন্যা। তার বুদ্ধিতে বুদ্ধুবানর হয়ে ওঠেন বুধকুমার। তখন কি আর জানি, রূপকথা আয়না ধরেছে জীবনের চুপ-কথার। বুদ্ধু বানরদের বানরছাল পুড়িয়ে মানুষ করে তুলতেই কলাবতীদের এ ধরাধামে আগমন নির্ধারিত হয়েছে! আর তারপরেও “সেই পুত্রের বাঁদী হয়ে আসব তোমার ঘর।” শুধু কি তাই? সমাজ, সংসার, কত যে বুধকুমার তার বানরছাল তুলে দেয় কলাবতীর গায়ে, সেই ছাল দিনে দিনে চেপে বসে, আটকে যায়, কবে থেকে যেন কলাবতীকে আর কেউ মানুষ বলে চিনতে পারে না।

    ক্লাসরুমে বসে দেখতাম টিনের চালের উপর দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট উড়ে যাচ্ছে সোজা লাইন ধরে। একটার পর একটা লাইন তৈরী হচ্ছে, হতে হতে দৌড়াচ্ছে, দৌড়াতে দৌড়াতে উড়ে যাচ্ছে। উড়ে যেত আমার মনও। এবং ক্লাসটেস্টের খাতায় উত্তর লেখার মহা মূল্যবান সময়। মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মন ভাল হয়ে যেত – সুগন্ধে। পথের ধার ধরে সার দিয়ে মাটিতে পড়ে আছে, কদম ফুল। গোল বলের মত পুষ্পাধারের গোটা গা জুড়ে ফুটে আছে অজস্র সাদায়-হলুদে মেশানো ছোট ছোট ফুল। প্রকৃতির নিজের পমপম। পরিস্কার দেখে কয়েকটাকে তুলে নিতাম হাতে। প্রস্ফুটিত কদম ফুলে হাত রেখেছি আমি, ছোঁয়া নিয়েছি গালে, চোখে, ঠোঁটে তুলে নিয়েছি তার শিরশিরে কোমলতা। এখন থেকে সমস্ত পরম স্পর্শ মাপা হয়ে চলবে এই ছোঁয়ায় ছোঁয়ায়, চাই বা না চাই।

    কদমফুলের বলটি থেকে একটি একটি করে ফুল ছাড়িয়ে নিয়ে তাদের একটি ফুলের মধ্যে আরেকটিকে, সেটির মধ্যে আরেকটি এই করে করে লম্বা বিনি-সুতোর মালা গেঁথে খাতার পাতার ভিতর, বইয়ের পাতার ভিতর রেখে দিতাম, আমরা অনেকেই – শুকনো ফুলের স্মৃতি। একসময় পরস্পরের থেকে পাওয়া আরো অন্যান্য ফুলের এমন স্মৃতিরা জায়গা করে নেবে, বইয়ের পাতার ফাঁকে, কারো বা জীবন খাতার পাতায়।

    বর্ষার ঋতু এসে গেলে মনে হত, সে বুঝি আর যেতেই চাইছে না। দিনের পর দিন সকাল থেকে ছায়া ঘন হয়ে আছে। বৃষ্টি কখনো থেমে থেমে, কখনো একটানা ঝরছে ত ঝরছেই। ভিতরের খোলা উঠানে জামা-কাপড় শুকানো অসম্ভব হয়ে যেত। উঠান আর ভিতর-দেয়ালের মাঝের চওড়া পাকা বারান্দায় উঠে আসত তারা। এই দেয়াল থেকে ঐ থাম, এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত, দড়ির পর দড়ি টাঙ্গিয়ে জামা-প্যান্ট-সায়া-শাড়ি। তাতে অবশ্য অন্য একটা জগতের দরজা খুলে যেত-টাঙ্গানো শাড়ির পরতে পরতে হারিয়ে যাওয়ার, লুকিয়ে পড়ার রোমাঞ্চের জগতে অকারণেই ঘুরে বেড়াতাম আমরা।

    শুধু ভেজা জামা কাপড়ই নয়, বৃষ্টির দিনে সেই বারন্দায় উঠে আসত যত রাজ্যের কেঁচো, জোঁক, আরো গুচ্ছের পোকা-মাকড়। জোঁক নিয়ে খুব সতর্ক থাকতে হত। গায়ে বসলে সহজে টের পাওয়া যেত না। গা থেকে জোঁক ছাড়ানোর বা পড়ে থাকা জোঁক মারার জন্য জোঁকের গায়ে নুন ঢেলে দেওয়া হত। একবার মা হঠাৎ দেখে তার পায়ের পাতায় একটা জোঁক আটকে আছে। আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে চিমটি কাটার মত করে জোঁকটা তুলে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। ব্যাস। মা একেবারে আপ্লুত, কি সাহস ছেলের! কতজনকে যে গল্প করেছে! আমিও ধরে নিয়েছিলাম খুব বীরত্বের কাজ হয়েছিল। এখন ভাবি, শ্রোতারা মা-ছেলে দুজনকেই বোধহয় মনে মনে বলত–কি আদিখ্যেতা!

    তবে, আমার কাছে খুব ভয়ের ছিল–সাপ। শীতকাল ছাড়া আর সব সময় নজর রেখে চলাফেরা করতাম। গরমে আর বর্ষায় বিশেষ করে। যতদূর মনে পড়ে, জোঁক দেখলেই মেরে ফেলা হত। কিন্তু সাপের অন্যরকমের মর্যাদা ছিল। সাপের খবর পাওয়া মাত্রই রে রে করে তাকে মারতে ছুটে আসত না কেউ। বরং মনে করা হত সে আমাদের জীবনের একটি অংশ। তাকে ঘিরে নানা গল্প। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানে তাদের সমর্থন পাওয়া যায়নি। কিন্তু সেইসময়ে আমাদের জীবনে গল্পেরই রাজত্ব। অবশ্য এখনো, এমনকি বড়দের জীবনেও নানা কিসিমের অপ-রূপকথাদের রাজত্ব কি আর চলছে না!

    ফিরে যাই সেই সব দিনের গল্পকথায়।

    রাত্রিবেলায় সাপ কথাটা উচ্চারণ করতে নেই। বলতে হয় লতা। একবার ভুল করে সাপ বলে ফেলেছ কি সে এসে তোমার সামনে-পিছনে-পাশে, যেখানে পারবে, হাজির হয়ে যাবে। মনে রেখো, সব সাপ জোড়া্য জোড়ায় থাকে, একজনকে মেরে ফেলেছ কি অন্যজন তুমি যেখানেই যাও না কেন, তোমায় এসে ছোবল দেবে, দেবেই। এই গল্পের ফলে সাপেদের বেঁচে থাকায় কিছুটা সাহায্য হত হয়ত। কিন্তু আমাদের কে বাঁচাবে? কেন সেই মা মনসার ছেলে আস্তিক মুনির গল্প জানো না? সাপেদের যিনি বাঁচিয়েছিলেন? তাঁর কথা কোনো সাপ ঠেলতে পারে? রাত্রিবেলা সাপের ভয় আছে এমন জায়গা দিয়ে হাঁটতে গেলে লাঠি ঠুকে ঠুকে বা জোরে জোরে আওয়াজ করে হাঁটবে আর বলবে-আস্তিক, আস্তিক, আস্তিক। তার পরেও যদি কামড়ায়? চিন্তার কিছু নেই। ওঝা ডাকতে হবে। খাঁটি ওঝা এসে ঝেঁটিয়ে আর এন্তার কড়া কড়া গালাগালি দিয়ে বিষ নামিয়ে দেবে, পাথর দিয়ে বিষ শুষে নেবে। সাপ নিজে এসে মুখ লাগিয়ে বিষ টেনে নেবে। শোন নি, কাকে যেন কলার ভেলায় করে ভাসিয়ে বাঁচিয়ে তুলেছিল! সেই যেমন বেহুলা বাঁচিয়েছিল লখিন্দর কে। কিন্তু আমি বেহুলা কোথায় পাব? আমার ত বিয়েই হয়নি! বেহুলা লাগবে না। কপালে মরণ লেখা না থাকলে ওঝা তোমায় বাঁচিয়ে দেবেই দেবে। হায় রে, সময়মত সে ধন্বন্তরি ওঝা আমার কপালে যে জুটবে তার গ্যারান্টি কে দেবে? “না, কাটেনা কারোই ফাঁড়া!”

    ফাঁড়া নিয়েই জীবন যাপন। বাড়ির ভিতরের উঠানে ছিল ইঁটের পাঁজা। বেশ বড়। মাঝে মাঝে সেখানে, কখনো বা বাড়ির পিছনে ছাইগাদায় বা কলতলা দিয়ে চলে যেত বিভিন্ন রং-এর আর চেহারার সাপ। লতানে গাছের মাচা থেকে নেমে যেত লাউডগা। হুক-কৃমির থেকে বাঁচতে বাড়ির মধ্যে আমাদের চলাফেরা ছিল কাঠের খড়ম পরে। ঘর থেকে বের হবার সময় জোরে জোরে খড়মের আওয়াজ করতাম। সাপেরাও হয়ত অভ্যস্ত ছিল আমাদের চলাফেরায়। কখনো কাউকে ফণা তুলতে বা আমাদের দিকে ছুটে আসতে দেখি নি। আমরা এসে পড়লে সর-সর করে দ্রুত সরে যেত তারা। একবার বেশ চমকে গিয়েছিলাম। বাবা মাঝে মাঝে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় জ্যান্ত মাছ কিনে আনত, কই, মাগুর, শোল। সারা রাত বড় কাঠের পিঁড়ি ঢাকা একটা বালতিতে কলতলায় বা রান্না ঘরে রাখা থাকত তারা। পরদিন মা সেই মাছ কেটেকুটে রান্না করত। সেদিন ভোরবেলা বাথরুমে গিয়েছি, ঘুম-চোখ। দেখি একটা খালি বালতি, বালতির পাশে পিঁড়ি আর বালতি থেকে লাফিয়ে বাইরে এসে পড়ে আছে একটা বড় শোল মাছ। আমি সেটা তোলবার জন্য নীচু হয়ে হাত বাড়ালাম। মাছটা মুহুর্তে যেন শরীরের এক প্রান্ত থেকে ভাঁজ খুলে অতি পরিচিত একটা এঁকেবেঁকে চলা লম্বা শরীর হয়ে গেল। আমি তিন লাফ দিয়ে বাইরে।

    পালিয়ে গিয়ে যে বিপদের থেকে কোন পরিত্রাণ ছিল না, বাস্তবেই সে ছিল ভয়ানক। ক্রমাগত অফুরান বৃষ্টির পরিণাম – বান, বন্যা। আমরা ছোটরা এটা বিশেষ বুঝতাম না। বড়রা খুব-ই উদ্বিগ্ন আলোচনা করত। আমাদের বাড়ির মাইল খানেক কি দুয়েক তফাতে বয়ে যেত তোর্সা নদী। দু’পাড়ে তার মাটির বাঁধ। শীতকালের বিকেলে আমরা আমাদের দিককার বাঁধের উপর হেঁটে বেড়াতাম। শান্ত সুন্দর নদীটি। কিন্তু বর্ষাকালে অন্য কাহিনী। ঐ অঞ্চলে সেই আমলে বিদ্যুৎ ছিলনা। ঘরে ঘরে কেরোসিন তেলের কুপি, হারিকেন, সেজবাতি। সন্ধ্যা পার হলেই রাত আসত ঘন হয়ে। ধীরে ধীরে চারিদিক শান্ত, ছমছমে। আর তখন জানালার পাল্লায় কান রাখলে পরিস্কার শুনতে পাওয়া যেত দূরাগত আওয়াজ। একেক রাতে আওয়াজ বেড়ে যেত। তোর্সা ডাকছে। ডাক ত নয়, গর্জন। মা-বাবা উদ্বিগ্ন মুখে রাস্তার দিকের জানালায় গিয়ে দাঁড়ায়, কান পাতে, পরস্পরের মুখের দিকে তাকায়। রাত্তিরে বাঁধ ভেঙ্গে যাবে না ত?

    কখনো সারাদিন ধরে একটু একটু করে বাড়ির চারপাশে জল জমে উঠত। উঠানে কি সামনের মাঠে নামা বারণ। স্কুল যাওয়াও বন্ধ। সব বাড়িই ছিল একটু উঁচু ভিতের উপর। আমরা ঘর-বারান্দার এ মাথা ওমাথা ঘুরে ঘুরে নজর করতাম, ঘোষণা দিতাম – আরো দু’ আঙ্গুল বেড়েছে। বড়োরা আতঙ্কে থাকত, জল ঘরে ঢুকে আসবে না ত? মাঝে মাঝে রাত্রিবেলা হঠাৎ করে চারিদিক ছাপিয়ে জল এসে হাজির হত। বাঁধ ভেঙ্গে না উপচে জানি না। হয়ত দুই-ই। অথবা শুধুই বাঁধের থেকে নীচু জমির জল যা নদীতে গিয়ে পড়ার সু্যোগ পায়নি, দিশাহারা চলার পথে এসে হাজির হয়েছে, দ্রুত ভরে ফেলছে চরাচর। সকালে উঠে দেখি মেঝের থেকে একটু নীচের উচ্চতায় ভিতের চারপাশ দিয়ে জল বয়ে চলেছে, বাড়িগুলো সব দ্বীপ হয়ে গেছে। কাগজের নৌকা ভাসালে যেগুলো জলে পড়ে কাত হয়ে ডুবে না যেত, অনেকেই বেশ দূর পর্যন্ত চলে যেত। ছোট ছোট চৌকো কাগজের টুকরোও ছেড়ে দিতাম-ভেলা। স্রোতের টানে টানে বাড়ির চৌহদ্দি ছাড়িয়ে এগিয়ে যেত তারা। কোন কোন দ্বীপের সংলগ্ন বাগান থেকে কলাগাছ কেটে বানানো ভেলায় চড়ে এ বাড়ি ও বাড়ির বড় বড় দাদারা এক জায়গা থেকে আর-এক জায়গায় চলে যেত বাঁশের লগি ঠেলে ঠেলে। আমি স্বপ্ন দেখতাম, আমিও একদিন ঐরকম লগি ঠেলে ঠেলে ঘুরে বেড়াব।

    স্বপ্ন সফল হয়েছে। লগি-ই ত ঠেলছি। এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটে। গর্জন বাড়ছে। মোহনা কাছে আসছে।





    ক্রমশ...




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৬৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৩০531098
  • খুব নরম, মেদুর, নস্টালজিক লেখা। বৃষ্টি খুব ভালোবাসি। অনেক ছবি দেখতে পেলাম।
  • পাপাঙ্গুল | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪২531102
  • ভালো এগোচ্ছে সিরিজ yes
  • অঞ্জনা ঘোষাল | 116.206.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৪৯531108
  • এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। আজ বুঝি একসাথে ভাইবোনদের সাথে জল থৈ থৈ বৃষ্টির দিন কত আনন্দের ছিল। পুকুর ভেসে জলের সাথে উঠোনে উঠে আসা কই মাছ ধরার আনন্দ পরের দিন বায়োলজির ব্যবহারিক পরীক্ষায় কতটা সাহায্য করেছিল জানিনা।মাছ ধরার আনন্দ ছিল অপরিসীম। তোমার লেখা পড়ে একটা জিনিস  ভাবছি তুমি গানের চর্চা  নাকরে যে বয়সে যে গান গেয়েছ আমার ছেলেকে 30টাকায় বানীচক্রে ভর্তি করার পর তার মুখে ঐকটা গান ই ছিল। "রুক্মিনী, রুক্মিনী, সাধি কা বাদ কে কা হুয়া, কোন হারা কোন জিতা? "ভাবছি সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে। 
               আমরা যেখানে বাস করতাম সেখানে খুব খুব সাপ ছিল পুকুর পাড়ে বাড়ি ছিল তো। আমার মেজদা লেখাপড়া বাদ দিয়ে শরৎচন্দ্রের মেজদার মতোই ছিলেন। সব সাপের মাথায় কৃষ্ণের পায়ের ছাপ দেখতে পেতেন। কাজেই সব সাপ ই ছিল কেউটে কিম্বা শঙচূড়। আমরা বিস্ময়ে মেজদার  সাহসী মন কে প্রশংশা না করৈ পারতাম না। 
     সবশেষে বলি তোমারস্মৃতিচারণণের মধ্যে  দিয়ে নিজেদের খুঁজে পাই, তাই অপেক্ষায় থাকি, থাকবো। 
  • অভিজিৎ চক্রবর্তী। | 103.87.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০০:০৫531109
    • কুচবিহারের স্মৃতি এক অনন্য সাধারণ
    • তা মুক্তা হয়ে স্মৃতি চারণে ঝড়ে পড়ছে। সতীশ ওঝা আর রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলে র এক বার্ষিক আনন্দ অনুষ্ঠান চলাকালীন আকাশ ঝেঁপে বাজ-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির তুমুল নাচন যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়েছিল, তা এখনো ঝিলিক দেয়। যাক, এই অনবদ্য লেখা ভীষণ স্মৃতি মেদুর করে তুলল। 
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৪২531111
  • অপূর্ব। ক্যালিডোর এই পর্বে অন্যান্য পর্বের থেকে একটা আলাদা ফ্লেভার পেলাম। একটা হালকা বিষণ্নতার ছোঁয়া, ঠিক বিষণ্নতা বললে ভুল বলা হবে, যেন এক ঝাপসাটে সিপিয়া টোন খেলা করছে ক্যানভাস জুড়ে। লেখাটা একটা ট্যাকটাইল ফিডব্যাক দেয়। শোল মাছ ধরতে চাওয়া, চালে বৃষ্টির শব্দ, আলতো খোলা জানলা দিয়ে কলাবতী ফুল, বন্যা - প্রত্যেকটাই যেন পড়তে পড়তে এক্সপেরিয়েন্স করলাম, এক ভিজুয়াল সেন্সরি এক্সপেরিয়েন্স।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৯531120
  • kk, পাপাঙ্গুল, অঞ্জনা, অভিজিৎ, রমিত, পড়া এবং ভালো লাগা জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।
  • যোষিতা | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২০531124
  • ফোটো এলো না কেন?
     
    চমৎকার স্মৃতিচারণ।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২৯531134
  • "চালের উপর অতি দ্রুত বড় বড় ফোঁটা পড়ার অবিশ্রাম চড়চড় শব্দ . . . আমি সহ্য করতে পারতাম না . . . এখন অবাক হয়ে ভাবি কেন অত ভয় পেতাম আমি? জানি না। তবে এটুকু জানি, আমার ইচ্ছে হলেই যে ঐ অবিরাম আওয়াজ থামিয়ে দিতে পারছিনা সেটাই আমাকে বেশী অস্থির করে ফেলত। ধীরে ধীরে অবশ্য বুঝতে পেরে গেলাম এটাই জীবন। এখন থেকে বেশীর ভাগ সময়ই যা ইচ্ছে করছে তা ঘটবে না। যা ঘটবে তাতে আমার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।"

    এই অদ্ভুত ভয় - অমিতাভ‌র ছোট ভাইদুটির মতো আমি‌ও কখনো পাইনি। তবে ক্রমশ উপলব্ধি হ‌ওয়া ভয়ের কারণ বর্ণনা বেশ ইন্টারেস্টিং।

    "বোল রাধা বোল সঙ্গম" - আমি‌ও শুনেছি বছর চারেক বয়সে - বনগাঁ‌য় থাকতে। তখন ওটা বেশ হিট - খোলস ছাড়া নব‍্য তরুণ‌দের মুখে মুখে ঘুরতো। সে গানের মানে বোঝার বয়স তখন নয়। গানের মাঝে রাধা‌র ঠোনা মারা স্বরে "হুঁঃ" - "যা যাঃ" এবং অবশেষে নাছোড় প্রেমিকের দৌলতে হালছাড়া রাধা‌র কাতর স্বরে "হোগা হোগা হোগা"  শুনে‌ - প্রাককৈশরে কেয়া হোগার তাৎপর্য না বুঝে‌ও বেশ মজা লাগতো। wink

     
  • অশোক সাহা | 2600:1700:2660:4490:7926:fb2b:7fee:***:*** | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:০৪531145
  • বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল।
  • যদুবাবু | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪০531147
  • খুব ভালো লাগলো অমিতাভদা! অনেক ছবিই চেনা! আবার দুয়েকটা যেন সেই মায়ের মুখে শোনা গল্পের মত, সে গল্পে যে আসলে কার ছোটবেলা সে আর ভেবে পাই না। 
    অনেকগুলো আলাদা ইমোশন খেলা করে তোমার লেখায়, কাচের টুকরোর মতোই, এই এতগুলো তার একসাথে বাজাতে পারা চাট্টিখানিকথা নয়। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২০:২০531154
  • ক‍্যালিডোর লেখাগুলি কোন দরকারি কিছু নয়। অসংখ্য স্মৃতিকথার আসরে  একেবারে পিছনে, যেখানে হাজির লোকগুলি চিত্র করের তুলিতে একটি কালো চওড়া ধূসর দাগে জায়গা করে নেয়, সেখানেই মিশে থাকে, মূল্যে কানাকড়ি। পড়াশেষে পাঠকের যদি মনে হয় সময়টা তার একেবারে বরবাদ হয়নি, আমার জন্যে সে বড় স্বস্তির কথা। তার পরেও যারা বিশেষ কোন ভালো লাগার কথা জানালেন তাদের সবাইকে অনেক কৃতজ্ঞতা। 
  • যদুবাবু | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৩৮531161
  • না না খুব দরকারি। খুবি। না হলে, 'দিন রাত ওদের ঐ হিদ্‌‌‌‌‍‌হিদ্ হিদিক্কারে আমার পাঁজঞ্জুরিতে তিড়িতঙ্ক লাগে'। সেই পাঁজঞ্জুরির কথা ভেবে চালিয়ে যান। এমন লেখা তো যাকে বলে টাকফাটা গরমের দিনে মাটির কুঁজোর জল ও বাতাসা। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৩২531163
  • ধন্যবাদ যদুবাবু‌! জলসত্র চালু রাখি তা হলে, যতদিন পারি, তবে বাতাসা ক‍ম, জল বেশি হওয়ার বিস্তর সম্ভাবনা। 
  • kk | 172.58.***.*** | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০১:০৩531165
  • "দরকারি লেখা" কাকে আবার বলে অমিতাভদা? এই রকম সব লেখা আমার কাছে অন্তত খুবই দরকারি! আর উঁচুনীচু, পাথর-কাঁটা ওয়ালা, শুকনো রাস্তায় বাতাসার থেকে জলের দরকারই বেশি, সেটাও আমার মনে হয়।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০১:২৯531166
  • অনেক আদর-আহ্লাদ নিও, কেকে। সামনের শনিবারের জন্য জল আনতে যাই তবে। smiley
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৩৪531168
  • জলসত্রে মাঝে মাঝে জলের সঙ্গে কচি ডাব রাখবেন। আর, ব্রাহ্মদের জন্য আনা সন্দেশ আছে বললেন না? ঃ-)
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৩৭531169
  • না হে কবিমশাই, এ জলসত্র অতি গরীব, কোনমতে জল-বাতাসা। ডাব, সন্দেশের যোগাড় নেই। smiley@&/
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৪৬531170
  • ছাতিফাটার মাঠ পেরিয়ে জল-বাতাসাই অমৃত। আর কেমন দিব্যি ছায়াও আছে, মস্ত বড় বটগাছের। ঃ-) খুব প্রাণ জুড়োনো লেখা। ছোটোবেলার স্মৃতির কোনো তুলনা হয় না কোনোদিন।
    আমাদের ছোটোবেলায় শেখানো হয়েছিল সাপসঙ্কুল জায়্গায় বলবি, 'দোহাই আস্তিকমুনি দোহাই আস্তিকমুনি।' আমরা তাড়াতাড়ি বলতে গিয়ে বলতাম 'দোয়াস্তিকমুনি,দোস্তিকমুনি' ঃ-)
    অনেক পরে বড় হয়ে 'ভারত প্রেমকথা'য় জরৎকারু আর অস্তিকার গল্প পড়লাম। তার আগে মহাভারতে অবশ্য জন্মেজয়ের সর্পযজ্ঞ অংশে আস্তিক ছিলেন, কিন্তু ওর জীবনের গল্প অমন ডিটেলে ছিল না।
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৪৮531171
  • মানে মূল মহাভারতে থাকলেও আমাদের এক্তিয়ারেরগুলোতে বিশদে ছিল না। সংক্ষেপে সব।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৫৮531172
  •  'দোয়াস্তিকমুনি,দোস্তিকমুনি' laugh
    ভারত প্রেমকথা কত যে অলস মধ‍্যাহ্ন দুপুরকে অন্য এক জগতে নিয়ে চলে যেত! 
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০২:০৮531173
  • একসময় বাংলা সাহিত্যের জগৎটা কতটাই চমৎকার ছিল! 'ভারত প্রেমকথা'র মতন বই তো লেখা হয়েছে তখন! কী ভাষা, কী ভাব! সবই মহাভারত থেকে, অথচ কত নতুন! ভূমিকায় একজন লিখেছিলেন কুসুমেরতনে গাঁথা মালা। সুশোভনা, সুমুখ, সুপ্রভা, সুলভা, গুণকেশী, উতথ্য, সুবর্চ্চা, ভাস্বতী, শ্রুবাবতী, চান্দ্রেয়ী---মনে হত চারপাশে যেন মায়া-অরণ্য আর ওরা যেন সেইখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঃ-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন