এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো  summer24

  • ওয়েথসাম

    উপল মুখোপাধ্যায়
    গপ্পো | ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১২৩২ বার পঠিত

  • ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়



    বাড়ি কোথায় খুঁজে না পেয়ে অহনাকে বললাম, 'বাড়ি কোথায় বলত ?'
    -    কার?
    -    কার আবার।
    -    কার?
    -    আমার, আমার।
    -    অত আমার আমার করছ কেন?
    -    তবে কী করব?
    -    কিছুই করবে না।
    -    করব না?
    -    না।
    -    কিছু না করে থাকতে পারব কি?
    -    জানি না।
    এই বলে অহনা হাঁটতে আরম্ভ করে দিল। সে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের খাঁজে চলে গেল। দু পাহাড় যেখানে জোড় খেয়েছে আর দুটো দেশ তৈরি হয়েছে গাছেদের। হ্যাঁ, গাছেদের আর বৃষ্টিদের। সেখানে প্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেইখানে অহনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখব বলে বলে ভাবছি আর দেখি সে অন্য একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটা দিয়েছে। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। অনেকটা পাহাড় দেখার মত এক দূরত্ব। মনে হয় কাছে কিন্তু দূরত্বটা বেশ। যত কাছে যাওয়া যায় ততো দূরত্বটা থেকে যেতে থাকে, থেকে যেতে থাক – দূরত্বটা শেষ হয় না। বোঝা যায় না পাহাড়টা দূরে, বোঝা যায় না পাহাড়টা কাছে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়। সে রকমই হচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না জোরে কথা বলব না আস্তে কথা বলব। তাই দেখতে লাগলাম। প্রথমে গাছেদের এ ওর পাশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। তারা ফুল দেয় না আর দিলেও দেখাতে চায় না যে ফুল দিয়েছে। ছোট ছোট গাছ না কিন্তু তাদের ছোট ছোট লাগে। পাশে একটা বড়ো গাছ ছিল। সেই গাছ দেখে আশ্বস্ত হয়েছি, সেখানে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম গাছ কথা কইছে আর আওয়াজ হচ্ছে কথাদের। সেই আওয়াজে গাছ কেঁপে কেঁপে উঠল। আমি আরো হেলান দিয়ে সেই কম্পন বুঝছি। এমন সময় দেখি অহনা আসছে তার সঙ্গে একটা ছেলে আর মেয়ে। আমাকে ওইভাবে গাছে সম্পূর্ণ হেলান দিয়ে থাকতে দেখে সে হেসে উঠল। তার সঙ্গে সঙ্গে ওই দুটো ছেলেমেয়েও হাসতে লাগল। আমি হাসির আগের মুহূর্ত দেখতে থাকি। কেমন করে হাসি শুরু হয় সেটা লক্ষ্য করি। হাসির শুরু দেখতে পেয়ে আমার খুবই আনন্দ হয়। আর লক্ষ্য করি আমিই হাসছি। অহনা হাসি থামিয়ে দিয়ে, আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি হাসছ কেন?
    -    তোমাদের হাসতে দেখে।
    -    আমরা তো তোমাকে দেখে হাসছিলাম। কেমন অদ্ভুত ভাবে ভ্যাবাচ্যাকা মেরে দাঁড়িয়ে থাকছ তো থাকছই আর মাঝে মাঝে গাছটাকে প্রায় জড়িয়েই ধরছ আর ছেড়ে দিচ্ছ।
    -    তাই?
    -    নয়তো কী? এরা হল আমার বন্ধুরা। এরা জলপ্রপাত দেখতে দেখতে অনেকদূর চলে গিয়েছিল।
    -    তারপর?
    -     সেখান থেকে ফিরে আসার সময় রাস্তা হারিয়েছিল।
    -     তারপর ?
    -    তখনই হঠাৎ আমার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। আমি ওদের রাস্তা দেখাতে দেখাতে এখানে নিয়ে এসেছি।
    আমি বললাম, 'চলুন চা খাই। তারপর বাড়ি খুঁজতে হবে।' অহনার এক বন্ধু বলল, 'বাড়ি?' অহনা ওদের বোঝাতে থাকে, ‘তোরা যেমন জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলি। কিছুতেই এক রাস্তা থেকে ঠিক রাস্তায় না যেতে পারে কেবলই অন্য রাস্তার দিকে চলে যাচ্ছিলি, অনেকটা সে রকমই হয়ে গেছে আর কি। ওইজন্য বাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না বলে যাচ্ছে সমানে।’
    -    সত্যিই বাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না।
    -    ওই দেখ বার বার একই কথা বলছে।
    এই শুনে অহনার বন্ধুরা আবার হাসতে আরম্ভ করে দিয়েছে আর গাছ যেন কেঁপে কেঁপে উঠেছে এটা বাস্তব। সেই সব কিছু থেকে ভুলে আমি আবার বললাম, 'চলুন।'
    -    কোথায়?
    -    চা খাই।
    -    চলুন।
    এই বলে আমরা সম্পূর্ণ অপরিচিত আর পরিচিতরা কিছুক্ষণের জন্য চা খেতে চললাম।
    সেদিন চা-এর সঙ্গে সঙ্গে আমরা অপূর্ব বিস্কুটও খাই। তারপর হাঁটা দিই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'আমরা কোথায় যাচ্ছি?' অহনা বলল, 'জলপ্রপাত'। অহনার বন্ধুরা বলল, ‘হ্যাঁ, জলপ্রপাতেই বারবার যাওয়া যাক।' শুনে আমি বলেছি, সেকি!'
    -    কেন?
    -    বারবার ওরা জলপ্রপাতেই যাবে?
    -    তবে কোথায় যাবে?
    -    বাড়ির দিকে যাওয়া যায় না?
    -    জলপ্রপাতের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ঠিক বাড়ি পৌঁছে যাব।
    -    যাব?
    -    নিশ্চয় যাব।
    -    জলপ্রপাতের ব্যপারে এতটা নিশ্চিত হচ্ছ কেন?
    -    কারণ ওটা আছে।
    -    কোথায়?
    -    এসো দেখি।
    -    চল।
    এই বলে আমরা চারজনে হাঁটা শুরু করলাম। ঘন পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম আর জঙ্গল এসে গায়ে গায়ে পড়ছিল। সে পড়ায় গা শিরশির করে ওঠে আর আমি একটা অস্ত্র দিয়ে সেই গায়ে পড়া জঙ্গল কাটছিলাম। কাটার ফলে গাছেরা শিউরে ওঠে আর চারিদিকে কান্নার রোল উঠল। সে কান্না খুব আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে আর ফুলেরা সেই সকালে ফুটে উঠে আবার কান্নার আওয়াজে কুঁড়ি হয়ে গেল। চারিদিকে প্রচুর কুঁড়ি দেখে অহনা আশ্চর্য হল। যে বলল, 'দূর থেকে ফুল দেখছি আর কাছে আসতে না আসতে কুঁড়ি।' তার দুই বন্ধু, যারা একজন ছেলে ও অপরজন মেয়ে, একসঙ্গে কথা বলছে তারা, 'সত্যিই তো কুঁড়ির মতো লাগছে।'
    -    কুঁড়ির মতো লাগছে বলিস না।
    -    তবে?
    -    কুঁড়িই।
    -    এতো?
    -    হ্যাঁ।
    -    কী করে?
    -    ফুলগুলো কুঁড়ি হয়ে যাচ্ছে।
    -    সে কী করে হবে?
    -    হচ্ছে তো।
    -    তাই?
    -    হ্যাঁ।
    আমি কিছু বলি না। শুধু দূর থেকে ফুল দেখি আর তার ডালপালা জঙ্গল হয়ে গায়ে পড়লে এক অদ্ভূত তলোয়ার দিয়ে কাটতে থাকি। সে কাটায় শিউরে শিউরে উঠে ফুলেরা কুঁড়িতে ফিরে যায়। সেটা বুঝতে পারছে না দেখে অহনা আর তার দুই বন্ধু আশ্চর্য হচ্ছে কিন্তু আমি হচ্ছিনা। এটা অহনা লক্ষ্য করেছিল। সে অনায়াসে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেঁটে আসছে বন্ধুদের সঙ্গে সঙ্গে আর আমি হেঁটে চলেছি আগে অথচ তারা কথা বলতেই থাকছে আশ্চর্য হতেই থাকছে এটা সে আর কতক্ষণ সহ্য করবে ? তাই সে বলে উঠল, 'তুমি কিছু বলছ না কেন? কোন কিছুই কি বলবে না বলে ঠিক করেছ?' আমি কোন উত্তর দিতে পারি না। জঙ্গল পরিষ্কার না হলে রাস্তা হবে না, রাস্তা না হলে আমরা এগোতে পারব না, পাহাড়েরা জলপ্রপাতেরা কত কাছে মনে হবে অথচ সেখানে পৌঁছনই যাবে না। অথচ জঙ্গল কাটলে গাছেরা শিউরে উঠবে, কান্নার বোল উঠবে, ফুলেরা আবার কুঁড়ি হয়ে যাবে এই সব দোটানায় আমি চুপ করে জঙ্গল কেটে যাই। কিন্তু অহনা ছাড়ার পাত্র নয় সে বলল, 'আমরা সবাই এতো আশ্চর্য হচ্ছি আর তুমি হবে না?' আমি বললাম, 'কেন হব?'
    -    মানে ?
    -    কেন হব?
    -    আশ্চর্য হবে না?
    -    কেন?
    -    দেখছ না?
    -    কী ?
    -    ফুলেরা কাছাকাছি এলে কুঁড়ি হয়ে যায়।
    -    আর জঙ্গল?
    -    সে তো অনবরত একটা হচ্ছে – তুমি কাটছ?
    -    আমি?
    -    হ্যাঁ।
    -    তুমিও তো কাটতে পার। এই নাও ধরো।
    এই বলে আমি এক অস্ত্র ধরিয়ে দিতে যাই অহনার দিকে। অহনা সেই অস্ত্রের বর্ণনায় আরো আশ্চর্য হয়। আমি বলি, 'ধরো।'
    -    কী করে ধরব।
    -    এই অস্ত্র দুজনে ধরতে পারে?
    -    মানে?
    -    এই দেখ দুটো ধরার জায়গা আছে।
    -    একই সঙ্গে?
    -    একই সঙ্গে দুজনে।
    -    এটা এতো লম্বা কেন?
    -    খুব।
    -    এতো লম্বা।
    -    হ্যাঁ।
    -    আর ধারালো?
    -    একটা দিকেই এর ধার।
    -    কেমন ধার?
    -    খুব। দেখছ না জঙ্গল সাফা হয়ে যাচ্ছে। গাছেরা শিউরে উঠছে।
    -    শিউরে?
    -    গাছেরা। তাই ফুলেরা সে জন্য কুঁড়িতে ফিরে যাচ্ছে।
    -    ফুলেরা ফেরে?
    -    হ্যাঁ, এই অস্ত্র ফেরাতে পারে।
    -    এতো লম্বা কেন?
    -    জানি না।
    -    লম্বা লম্বা গাছ তাড়াতাড়ি কাটতে পারে বলে?
    -    হবে। শুধু গাছ কেন আরো অনেক কিছু এ কাটে।
    -    এ একাই কাটে?
    -    একাই। দুজনে ধরতে পারে। তুমি ধরবে?
    অহনা এবার কুঁড়ি বা ফুল ছেড়ে অস্ত্রের দিকে তাকাতে থাকে। সেই তরবারি অথচ লম্বা বর্শার মত অস্ত্র, যা দুজনে ধরা যায় তার একটা নাম আছে আর সেই নামটা অহনার দিকে তাকিয়েছিল। সেই দেখে ও বলল, ' এ আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছে কেন?
    -    কে?
    -    এই লম্বা মতো ধারালো অস্ত্র। এ যেন কথা বলতে চায়। আমি এর সঙ্গে কথা বলব। তুমি এর নাম বল।
    -    ওয়েথসাম।
    -    আমি ওয়েথসামের সঙ্গে কথা বলতে বলতে যাব।
    -    তুমি এর দুটো হাতলের একটা ধরতে পার।
    -    না। আমি একে ছুঁলে এ আর কথা বলে উঠবে না।
    -    আমি একাই কি জঙ্গল কাটব?
    অহনা বা তার বন্ধুরা কোন উত্তর দেয় না। আর শুনি পেছন পেছন ও ওই ওয়েথসাম অস্ত্রের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আসছে অথচ অস্ত্রটা আমার হাতেই ধরা। ওঠা অনবরত জঙ্গলে উঠছে আর পড়ছে। আমি দরদর করে ঘামতে থাকছি অস্ত্রের ভারে। আমার হাতের শিরারা ফুলে ফুলে উঠছে। পেশি টনটন করছে, সব টাকা আমি খরচ করে ফেলছি। সব পেট্রোল আমার পোড়ানো হয়ে গেছে। এক অলীক আগুনে নেভানোর জন্য আমি আরো পেট্রোল ঢেলে চলেছি তো চলেছিই। সেই আগুনের ভেতরে ও ভেতরে কোথাও অস্ত্র তৈরি হবার মতো উত্তাপ বেড়ে চলেছে তো চলেছেই। এমন এক অস্ত্র যার দুটো হাতল, দুজন ধরতে পারে অথচ ধরে না - লম্বা, একদিক ধারালো, ক্ষুরধার। প্রাচীন লোহা গলানোর যন্ত্রে সেই অস্ত্রের লোহাকে পোড় খাওয়ানো চলছে তো চলছেই। কোথায় সেই অস্ত্র বানানোর কাহিনি। সেই সন্ধান করতে করতে আমরা জঙ্গল পেরিয়ে পেরিয়ে অসংখ্য সিঁড়ির কাছাকাছি এসে পড়ি। হাজার হাজার সিঁড়ি আমাদের পেরতে হয়, তবু হাজার হাজার সিঁড়ি পেরনো বাকি থাকে। কে তাদের তৈরি করে আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখে দেয়। এতো সিঁড়ি দেখে অহনার বন্ধুরা উৎফুল্ল হয়। তারা ছুটে ছুটে নামতে থাকে আর আমরা ওদের পেছন পেছন যাই – আমি ও অহনা, অহনা ও আমি। আমার হাতে সেই প্রাচীন অস্ত্র ওয়েথসাম ধরা ছিল আর অহনা তার সঙ্গে কথা বলে বলে বেশ বন্ধুত্ব করে ফেলেছে। সিঁড়ি এসে পড়ায় আর জঙ্গল কাটতে হয় না কারণ তা আগেই কাটা হয়ে গেছে। অহনা বলল, 'এবার ওকে ছেড়ে দাও?'
    -    কাকে?
    -    অস্ত্র। ওয়েথসাম।
    -    সে কী?
    -    হ্যাঁ।
    -    ও চলে যাবে।
    -    কী করে বুঝলে?
    -    আমার সঙ্গে কথা হয়েছে।
    -    কার?
    -    অস্ত্রের।
    -    কখন?
    -    এতক্ষণ আমি ওর সঙ্গেই কথা বলেছি।
    -    সে কী?
    -    হ্যাঁ।
    -    বুঝেছ?
    -    কী?
    -    ওর কথা?
    -    হ্যাঁ।
    -    সব?
    -    স্পষ্ট বুঝিনি কিন্তু ওকে তুমি ছেড়ে দিলে তখন আবার চলে যেতে পারবে সে বুঝেছি।
    -    আর যদি না আসে?
    -    আসবে।
    -    যদি জঙ্গল কাটার দরকার হয়?
    -    হবে না।
    -    যদি বাড়ি যাবার রাস্তা পরিষ্কার করতে হয়?
    -    সামনেই জলপ্রপাত, তার তার পাশেই আসলে বাড়ি।
    -    কে বলল?
    -    জলের শব্দ?
    -    কে?
    -    ওয়েথসাম। অস্ত্র বলেছে।
    -    কী?
    -    জলপ্রপাতের ধারে রাস্তা আর তার পাশেই আমাদের বাড়ি।
    -    ওই জন্য!
    -    কী ?
    -    ওই জন্য জঙ্গলের দিকে তাকাতেই শব্দ শুনছিলাম।
    -    কখন?
    -    যখন বাড়িতে ছিলাম।
    হাজার হাজার সিঁড়ির পর আরো সিঁড়ি পেরতে পেরতে অবশেষে আমরা জলপ্রপাতের সব কটা ধাপ শেষে পৌঁছলাম। তখন আর সিঁড়ি নেই এটা তো বুঝেছি। শুধু জলের স্পর্শ পাওয়া যায়। সে জলের ধারে বসলাম। কখনও জল আস্তে যাচ্ছিল, কখনও তীব্রতম স্রোত। সেই স্রোতে ওয়েথসামকে ফেলে দিলাম। ঝপাং করে আওয়াজ হল। খানিকটা জল এসে আমাদের চারজনের মুখে চোখে ছিটিয়ে গেল। সেই জলের ভেতর দিয়ে জল ছাড়া ওয়েথসামকে দেখা গেল স্থির হয়ে ভাসছে, নড়ছে না চড়ছে না। এক লম্বা স্থির, দুই হাতলওলা, প্রাচীন, পোড় খাওয়া ইস্পাতের তরবারির থেকে অনেক বছরের রক্ত ধুয়ে ধুয়ে জল লাল লাল হয়ে যাচ্ছে। তারপর সেই তীব্র রক্তের মতো জলেরা কমে আসায় আবার ধীরে জল বইছে, জলপ্রপাতের জল। আর ভেজা ভেজা চশমার বিন্দু বিন্দু জলকণার মধ্যে দিয়ে দেখছি ওয়েথসাম অস্ত্র ভেসে ভেসে যাচ্ছে। চারিদিক কুয়াশা। জলের শব্দ শুনতে পাই অথচ জলপ্রপাত দেখিনি। চারজন আমরা চারদিকে মুখ করে আছি অথচ পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম কোণটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সেই সব কোণের একটায় আমাদের দুজনের বাড়ি। অহনা আর আমার, তাতে আরো দুই বন্ধুকে নিয়ে যাবার জন্য আমরা পা বাড়ালাম। অসংখ্য সিঁড়ি সেই ঘন দূর্ভেদ্য কুয়াশার মধ্যে জেগে জেগে রয়েছে। সিড়িতে পা বাড়াতে যাব অহনা বলে ঊঠল, 'ওদিকে নয়, সিঁড়ি নয়।' আমি বললাম, 'জঙ্গল, গাছপালা, ফুলেরা, কুঁড়ি।' অহনা বলল, 'আর কাটতে হবে না।' নদীর কোল ঘেঁসে ঘেঁসে আমরা নদী ছেড়ে এক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। অথবা বাড়ি। বড় একটা জানলা ছিল বাথরুমে। সেখানে সুন্দর কপাট। আর কপাটের আগে, ওপরে পর্দা। সেই পর্দা সরানো যাচ্ছে না, সরালেই যদি রোদ্দুর এসে পড়ে। সেখানে এতো ছায়া আর বাষ্পময় সকাল যে বিকেলের আগে বাড়ি পৌঁছব বলে কিছুতেই মনে হচ্ছে না। আর বাড়ির কথা ভাবছি তো ভাবছিই। সকাল থেকে বিকেল তারপর রাত্রি আসে না। বাড়ি পৌঁছতে না পারায় ঘুরছি হ্রদের আশপাশ, প্রপাতের আগে ও পরে। ওয়েথসাম অস্ত্রের কথা মনে পড়ছে। অহনা কথা বলেছে। ওটা নাকি আর দরকার পড়বে না।
    (ওয়েথসাম হল বর্শার মতো সূঁচালো ও লম্বা দুই হাতল বিশিষ্ঠ প্রথাগত খাসি তলোয়ার)



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১২৩২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Naresh Jana | ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৫৮530668
  • সম্মোহনের মত পড়ে গেলাম। অনবদ্য একটা গদ্য। নিজের কাছে দাঁড় করিয়ে দেয়। ভালো থাকুন, আরও আরও লিখুন।
  • Prativa Sarker | ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ২১:০১530675
  • ভালো লাগল। দুধারি তলোয়ার। যেতে এবং আসতে কাটছে পাঠকের বোধকে।
  • ইন্দ্রাণী | ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২৯530696
  • দোটানার কনসেপ্ট টা মারাত্মক লেগেছে। তেমন মেধাবী নির্মাণ। ওয়েথসাম যেন এক অলীক প্রপ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন