ধন্যবাদ সকলকে। আমি বেশ ভাল ভাবেই ঢাকা পৌঁছেছি। কলকাতা ঘুরার ইচ্ছা ছিল অনেক আগে থেকেই। যে ঝটিকা সফর করে এলাম এমন করে এত ঐতিহ্যবাহি একটা শহর চোখের দেখা দেখা যায় অনুধাবন করা যায় না। আমার ভিসার মেয়াদ আছে নভেম্বর পর্যন্ত। এর মাঝে অন্তত আরেকবার যাওয়ার ইচ্ছা আছে। ইচ্ছা আছে কলকাতা না, ভারতের আরও ভিতরের দিকে কোথাও ঘুরে আসার। কলকাতায় আমি যে খুঁজে খুঁজে কেউ যায় না, জানে না এমন জায়গায় গিয়েছি এর প্রধান কারণ হচ্ছে নানা সময়ে নানা গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ পড়ে পড়ে তীব্র একটা আবেগ তৈরি হওয়া। সুনীলের ট্রিলজি, সমরেস শীর্ষেন্দুর বিখ্যাত উপন্যাস গুলা যখন পড়ি মানে সেই আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে, তখন থেকেই মনের ভিটরে লালন করে চলছি যে আমি কলকাতা গেলে সবার আগে এই সব জায়গায় যাব।আমি এর জন্য কৃতজ্ঞ সমরেস বসু, আবুল বাসার, সুনীল, সমরেস, শীর্ষেন্দুদের প্রতি। এঁরা এত চমৎকার করে কলকাতাকে আমার চোখের সামনে তুলে এনেছে যেন আমি চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পারি কলকাতাকে। ঢাকা আমার প্রাণের শহর। এর জ্যাম, গরম, প্রচণ্ড জোরে হর্ন বাজানো, উদ্ভট সুরে ফেরিওয়ালার চিৎকার সবই আমার কাছে মধুর লাগে, মনে হয় এই সব না থাকলে ঢাকা বুঝি মরেই যাবে। আর কলকাতাকে মনে হত সব সময় স্বপ্নের শহর। এর জন্য কৃতিত্ব দিতেই হয় সেই সব লেখকদের। আমি কলকাতার সিনেমা দেখি না বললেই চলে। তাই বর্তমানের কোন সিনেমা পরিচালকদের অবদান আছে তা বলতে পারছি না।
সেই ঘোর লাগা এক চোখ নিয়ে আমি বনগাঁ লোকালে শেয়ালদাহ স্টেশনে নেমে ছিলাম। ঘোর লাগা চোখে দেখার ফলেই আমার চোখে অনেক কিছুই ধরা পড়েনি। বা আমি চাইনি এমন কিছু লিখতে যা এই শহরকে কোন ভাবে ছোট করে। শুধু এই কয়দিন ঘুরে দেখে যা লিখছি তা না, আমি কোনদিনই এমন কোন কিছু লেখি নাই যা কলকাতা বা কলকাতাবাসীদের ছোট করে। মজা করেও সম্ভবত আমি লেখি নাই। আমি জানি এই শহরে অনেকেই আছেন এদিক থেকে গিয়েছেন, প্রচণ্ড কষ্ট চাপা দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। অনেকের মনেই এই বাংলা নিয়ে দারুণ ফ্যান্টাসি কাজ করে, তীব্র আবেগ কাজ করে। আমি অত বড় পাষণ্ড হয়ে যাই নাই যে তাঁদের সেই আবেগকে, স্মৃতিকে কষ্ট দিব, নষ্ট করব। আমার বিন্দুমাত্র লাভ লোকসান নাই এতে। কিন্তু যখন এখানে, এই বাংলাদেশে তীব্র ভাবে ভারত বিরোধী একটা স্রোত চলমান থাকে, সেই স্রোতে পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতাবাসীদেরও ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়, সবাইকেই একই কাতারে হিসাব করে ঝাঁপিয়ে পরে অনলাইন যোদ্ধারা, তখনও আমাকে, আমার পরিচিত লোকজনদের কাছে আমার গালি খাওয়ার খুব সম্ভাবনা থাকার পরেও আমাকে তখন লিখতে হয় সাম্যের কথা, সৌহার্দ্যের কথা। কারণ আমি জানি ওইখানে কোথাও কোন মাসিমা পূর্ববঙ্গে তাঁর বাবার বাড়ির একশ কিলোমিটার দূর থেকে আসার কারো জন্যও স্নেহের ডালী মেলে ধরে। আমি এই আবগকে কে বুঝি, শ্রদ্ধা করি।
যতটুকু লেখছি তা আমার কাছে মনে হয়েছে লেখা জরুরি, তাই লেখছি। যদিও আমি লেখা না লেখায় খুব একটা পার্থক্য হবে এমন আমি ভাবিও না, আর তা আমার ভাবার কাজও না।
এরপরে গেলে দক্ষিণেশ্বর যাব, আনন্দবাজারের আর্কাইভ দেখব। আর হিল্লি দিল্লী যে দিকে চোখ যায় চলে যাব। সবাই ভাল থাকবেন।