নো-ভোট-টু-বিজেপি একটি আন্দোলনের নাম। পরিষ্কার কথা, যাকে খুশি ভোট দিন, বিজেপিকে নয়। ভোটটা বিজেপির বিরুদ্ধে দিন। কারণ বিজেপি’র মতো হিংস্র ও ভয়ানক এই মুহূর্তে কোনও দল ভারতবর্ষে নেই। এই আন্দোলন নজর কেড়েছে মানুষের। আসন্ন নির্বাচনের জন্য ভোটের কথা আসছে বটে, কিন্তু এই-স্লোগান নিছক ভোটের স্লোগান নয় বলেই আমার মনে হয়। ভোট গুরুত্বপূর্ণ আয়ুধ, আবার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই তার বাইরে গিয়েও লড়তে হবে। জনমানস থেকে, জনসমাজ থেকে ক্রমশ গেঁড়ে-বসা বিভাজনের রাজনীতিকে উপড়ে ফেলতে হবে। বে-পরোয়া এই শক্তির সিংহভাগ শক্তি আসে মন্ত্রী-সান্ত্রী-পুলিশ-হাকিম-মিডিয়াসহ জেড-ক্যাটিগরির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলয় থেকে, এই ক্ষমতাবলয় থেকে এদের দূরে রাখতে পারলে বেলুনের হাওয়া বেরিয়ে যায় অনেকটাই। এই হাওয়া বার করতে ভোট একটা মস্ত অস্ত্র বটে! যাইহোক, ‘যাকে খুশি ভোট দিন, বিজেপিকে নয়’, এখানেই হয়েছে কেলো, সিপিএম এতে ক্ষুব্ধ। ক্রুদ্ধ। সরকারিভাবে দলের ক্রোধ কিনা জানি না, ফেসবুকের সিপিএম-নামধারী ভক্ত-ক্যাডাররা খুব ক্রুদ্ধ। সরাসরি তাঁরা তীব্র ট্রোলিং-এ নেমে পড়েছেন এই ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে গিয়ে পোস্টার-ছেঁড়া বা উপরে-অন্য-পোস্টার-চাপিয়ে-দেওয়া অবধি গড়িয়েছে সেই ক্রোধ। নো-ভোট-টু-বিজেপি প্রচারে বিজেপি কতটা ক্রুদ্ধ জানা নেই, কিন্তু ক্যাডাররা দৃশ্যত ক্রুদ্ধ। সরকারিভাবে দল যদিও এই স্ট্যান্ডের বাইরে গিয়ে কথা বলেনি বা ক্যাডারদের এমত ট্রোল-আচরণের প্রতিবাদও করেনি।
আচ্ছা একটু পিছে মুড়কে দেখা যাক, কীভাবে শুরু হল এই ক্রোধ-লকলক বিরুদ্ধ প্রচার? মূলত নো-ভোট-টু-বিজেপি অংশ, সিপিআইএম লিবারেশন ও দীপঙ্কর ভট্টাচার্য – সবটা মিলিয়ে সম্প্রতি একটা মণ্ড তাঁরা বানিয়েছেন আর তার নাম দিয়েছেন লিবারেল। দীপঙ্কর ছিল তাঁদের প্রথম টার্গেট। কেন? গত বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ১২টি সিট জিতে মুহূর্তে উল্লেখযোগ্য বাম দল হিসেবে, দেশে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় চলে আসে ভাকপা-মালে। দীপঙ্কর বলেন, বাংলায় তৃণমূলের থেকে বড় শত্রু বিজেপি। ব্যস, সেই বাক্য হল না হজম, শুরু হল সিনে মে জ্বলন।
তারপর নো-ভোট-টু-বিজেপি ক্যাম্পেইন জোরদার হল বাজারে। লেফট লিবারেলগণ, মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায়, সমর্থন করলেন দীপঙ্কর-উবাচ ও নো-ভোট-টু-বিজেপি প্রচার। বাংলায় লিবারেশনের কোনও স্টেক ছিল না অ্যাদ্দিন, কিন্তু সহি-বাম হিসেবে ভাকপা-মালের এন্ট্রি যেন শুরু হয়েছে বাংলায়, দীপঙ্কর ও তাঁদের দলের গ্রহণযোগ্যতা যেন ক্রমবর্দ্ধমান, আঁচ পেয়ে বিপন্নতাবোধ তাড়িয়ে বেড়াল ক্যাডারদের। সঙ্ঘী রাজনীতির ভয়াবহতা উপেক্ষা করে তারা পেছনে পড়ল লেফট লিবারেলদের। ‘লিবারেল’ শব্দকে গালি হিসেবে ব্যবহার করলে, নিজেকে যে কনজারভেটিভ হিসেবে দেগে দেওয়া হয়, সেই বোধও গেল হারিয়ে!
ট্রোলিং যে-একটি মানসিক বিকার, সমবেত ট্রোলিং যে-একটি মাস হিস্টিরিয়া, বেমালুম লোপাট হল মস্তিষ্ক থেকে! গোলি মার ভেজে মে! উল্টে তাদের স্বর মিলে গেল আরেসেস-বিজেপির স্বরের সঙ্গে! সঙ্ঘের বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধাচারণ করা জনপ্রিয় স্লোগানের বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা সঙ্ঘের সহায়ক শক্তি হয়ে উঠল, এটাই ট্র্যাজেডি। নিতান্তই অপরাধবোধে সম্ভবত, অতি সম্প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় সিপিএম ক্যাডারদের পক্ষে দু-একটি পোস্ট দেখা যাচ্ছে, বিজেপিকে একটিও ভোট নয়, সম্ভাব্য বিজেপিকেও নয়। তাই সই, সকলেই চায় কমিউনিস্ট পার্টি গর্জে উঠুক আরেসেস-বিজেপির মতো সংগঠিত শক্তির বিরুদ্ধে, কিন্তু হা হতোস্মি, সেই প্রচারের সংখ্যার স্বল্পতা ও সদিচ্ছার অভাব দেখেই মালুম, বাঁ হাতে ফুল ছুঁড়ছেন চাঁদবণিক!
বাস্তবতা এমনই, সদিচ্ছা ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি মানুষ আজ পরিষ্কার স্ট্যান্ড নেবেন, যে দল যে-কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী তাকেই ভোট দেওয়া হবে। যদি তৃণমূল হয় তৃণমূল, যদি সিপিএম হয় সিপিএম, কংগ্রেস হলে কংগ্রেস। সিধা হিসাব। বিরোধী দল রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে জোট করতে না-পারলে, মানুষই করবে মহাজোট। কিন্তু এই পরিষ্কার স্ট্যান্ড সিপিএমের না-পসন্দ। কিন্তু কেন? তার কারণ পানীয় জলের মতো পরিষ্কার, গত ভোটের হিসেব কষলে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যাবে হাটের মাঝে, দু’বছর আগের লোকসভা ভোটে ৪২ আসনেই তাদের জামানত জব্দ হয়েছে, ২৯৪ বিধানসভা আসনের একটিতেও তাদের লিড নেই! ১৬৪-তে এগিয়ে তৃণমূল, ১২১-এ বিজেপি, সিপিএমের জোটসঙ্গী কংগ্রেস এগিয়ে বাকি ৯টিতে, সিপিএম ০। গত বিধানসভা ভোটের পাটিগণিত ধরলেও গুনতিতে আসে না পার্টি। ফলত ‘যে দল যে-কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী’ বললেই সিপিএমের নাম আর থাকে না, তৃণমূল (এমনকী কংগ্রেসের নামও) এগিয়ে আসে। কোনও অবস্থাতেই তারা এই অবস্থাকে মেনে নিতে পারবে না। তাই তাদের আবদার নো-ভোট-টু-বিজেপি’র লগে লগে বলতে হবে ভোট-ফর-লেফট বা নো-ভোট-টু-টিএমসি। মামারবাড়ির আবদারের থেকেও এককাঠি বেশি আবদার!
বস্তুত, ডিভিডেন্ড পাবে তৃণমূল, এমন কোনও অবস্থাকে তারা মানবে না। তৃণমূল দলটি একটি ক্লাব গোছের, নেত্রীর ফ্যানক্লাবও বলেন অনেকে। দলগতভাবে তৃণমূলের যা বৈশিষ্ট বা অবস্থান, আপাতত তারা ডিভিডেন্ড পেলেও, ভবিষ্যতে, লড়াইয়ের মাঠে থেকে সেই ডিভিডেন্ড ছিনিয়ে আনা অপেক্ষাকৃত সহজ। অন্তত বিজেপির থেকে ছিনিয়ে আনার থেকে সহজতর। এই সত্য জানার জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু এই সত্য বোঝার মতো মানসিকতা বা বাস্তববোধ আজ সরকারি বামকুলের লুপ্ত।
এমনকী যে-কৃষক আন্দোলন নিয়ে দু’দিন আগেও ক্যাডাররা সোশ্যাল মিডিয়ার পাতা কাঁপাত, সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতাদের বাংলায় আসন্ন আগমন নিয়ে তারা স্পিকটি নট, কারণ কৃষক নেতৃত্ব রাজ্যে আসবেন মূলত বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার করতে। কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বে পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লা থাকা সত্ত্বেও ক্যাডারকুল মন থেকে মানতে পারছে না, কৃষক-নেতৃত্বের আসন্ন বাংলা-আগমন। কাঁটা আরও বিঁধছে কারণ কৃষক-নেতৃত্ব যাবেন দুই মাইলফলক সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে, জমায়েতে বলবেন বিজেপির বিরুদ্ধে। আগ্রাসী মনোভাব দেখে অনেকের আশঙ্কা, কৃষকদের না-আবার চালচোর বলে গালি দিয়ে দেয় অবিমৃষ্যকারী ক্যাডারকুল! অবশ্য কৃষকদের গালি দিলে ঝুঁকি আছে, তাঁরা আবার পাল্টা জমিচোর বলে দিতে পারেন!
কিন্তু কেন এই দশা হল ‘কমিউনিস্ট’ নামধারী একটি দলের? এই উত্তর খোঁজার জন্যও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ক্ষমতা হারানোর জ্বালা আজ দাউদাউ ঈর্ষা ও যন্ত্রণায় পরিণত। আর ঈর্ষার কোনও ইস্তেহার হয় না। আমরা তো সাতের দশকের সেলিম-জাভেদের হিন্দি সিনেমা দেখে-দেখে জেনে গিয়েছি, বুকের আগুন মাথায় উঠলে একমাত্র প্রতিহিংসাই পারে সেই আগুন নেভাতে! তাই হা-রে-রে-রে প্রতিহিংসা, এখন নেতা থেকে ক্যাডারে সংক্রমিত। ধর্মান্ধ হুজুরের খুঁট ধরতেও তাই কাঁপে না হাত! সোশ্যাল মিডিয়া দেখলে মনে হয়, অরাজনৈতিক অসূয়াজনিত এই সংক্রমণ কখন যে ক্যাডারকে ভক্তে পরিণত করেছে, সে ধরতেও পারেনি!
অবস্থা আজ এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে, প্রগতিশীল বাম আন্দোলন উচ্ছন্নে যায় যাক, বাংলার মাটি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির রক্তে ভিজলে ভিজুক, বাংলার সংস্কৃতির সাড়ে-সব্বোনাশ ঘটলে ঘটুক, এনার্সি-লাঞ্ছিত মানুষের হাহাকারে ভরে যাক ডিটেনশন ক্যাম্প, কোই পরোয়া নেই! এমনকী নিজে মরলে মরব, তাও ভি আচ্ছা, তবু মেরে মরব!
ফলত বুকে বোম-বাঁধা আত্মঘাতী জঙ্গির মতো এগিয়ে চলেছেন ধুতি-পরা বৃদ্ধ স্ট্যালিন। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে টুম্পা-সোনা নামক নয়া-ইন্টারন্যাশানাল! ক্রমশ সেই সুর ফেয়ারওয়েল। বেহালা-বিধুর।
আপনারা নিজেদের সাদা সারির আড়ালে না লুকিয়ে সরাসরি ওনার প্রচার করুন। আগেও তো সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম নিয়ে অনেক শিহরিত গল্প লিখেছেন। মানুষ কে ভুল বুঝিয়ে বেকার দের পেটে লাথি মেরেছেন।
যাই হোক মুদ্দা কথায় আসি #NoVoteToBJP তো বুঝলাম, তাহলে ভোট টা কাকে দিবো তৃণমুল কে? কেনো বলতে পারেন, নাকি যাতে আপনাদের চাল চুরি করতে সুবিধে হয়। সেই তো তৃণমুল জিতলেও বিজেপি তেই যাবে।
তৃণমুল লেসার ইভিল, তাই ওদের ভোট দেও এই তত্ত্ব আর চলবে না, বিজেপি তৃণমুল দুটোই এক। এক কথায় বিজেমুল।
আর হ্যাঁ, একটু মেরুদন্ডটা সোজা করুন, নিজেদের চটির তলায় বিলিয়ে দেবেন না।
ভালো লেখা।
আরেকটা বিষয় এখানে বলা যায়। নেতা/ মতাদর্শ/ দল বাদ প বংগে যত প্রবল ভারতে আর কোথাও কেন নেই? এই সিপিএম ই সারা ভারতে বিজেপির বিরুদ্ধে সর্ব শক্তি দিয়ে লড়ছে। কেরল বা ত্রিপুরা তেও তাদের পচন অনেক কম। কেন?
এক শিক্ষিত বেকার এর সঙ্গে একমত। লেখক কি করে ভুলে গেলেন তৃনমূল এ টিকিট না পেয়ে তৎকাল বিজেপি হওয়া নেতারা তো টিভি র পর্দায় গত কয়েক দিনের সবচেয়ে বড় খবর। যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী তত্ত্ব প্রথম নিয়ে আসলো সেই তৃনমূল করবে nrc র বিরোধিতা? কৃষক আন্দোলনে tmc র ভূমিকা যে ফোন করে পাশে আছি বলা ছাড়া আর কিছু নয় সেটা ও কি ভুলে গেলেন? কয়লা চুরি, কোকেন কেলেঙ্কারি, নারদ, সারদা কোনো তদন্তের ই কিনারা হয় না কেন? সেটিং নয় তো?
"কারণ বিজেপি’র মতো হিংস্র ও ভয়ানক এই মুহূর্তে কোনও দল ভারতবর্ষে নেই।"
এ-তো-ও-ও-ও দিন লাগল বুঝতে? সিঙ্গুরের অনশন মঞ্চে বিজেপির নেতা নেত্রীদের উপস্থিতির সময়ে নিবন্ধকারের বা অতিবামেদের এই বোধোদয় হয়নি?
যারা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে UPAর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল, তাদের গোঁসা হবেই। দেখা যাক আব্বাসকে এনে বিজেপির বাক্সে হিন্দু ভোট কতটা এককাট্টা করা যায়।
মমতা ফ্যাসিস্ট নয়, কোন কিছুই নয়। আদর্শহীন ক্ষমতালোভী এক মহিলা, এ তো ঠিকই। কিন্তু এ-বারের ভোটে একটাই জোট, বিজেপি-বিরোধী জোট। আমি যেখানে ভোট দেব, সেখানে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দী মমতার দল। মমতা যদি হারে তাহলে বিজেপিই জিতবে বলে আমার ধারণা, অতএব নিজের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তেই মমতার দলে টিপ। যদি চণ্ডীতলার ভোটার হতুম, সম্ভবত সেলিমকেই দিতুম। সি-পি-এম-এর ক্যাডারদের মগজে এ কথাটা না-ঢোকার কথা নয়। না যদি ঢোকে, বাংলায় বিজেপিকে জেতাবার দায় তাদের নিতেই হবে। ইতিহাস কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও বলবে না বলেই আমার বিশ্বাস।
মমতা ফ্যাসিস্ট নয়, কোন কিছুই নয়। আদর্শহীন ক্ষমতালোভী এক মহিলা, এ তো ঠিকই। কিন্তু এ-বারের ভোটে একটাই জোট, বিজেপি-বিরোধী জোট। আমি যেখানে ভোট দেব, সেখানে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দী মমতার দল। মমতা যদি হারে তাহলে বিজেপিই জিতবে বলে আমার ধারণা, অতএব নিজের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তেই মমতার দলে টিপ। যদি চণ্ডীতলার ভোটার হতুম, সম্ভবত সেলিমকেই দিতুম। সি-পি-এম-এর ক্যাডারদের মগজে এ কথাটা না-ঢোকার কথা নয়। না যদি ঢোকে, বাংলায় বিজেপিকে জেতাবার দায় তাদের নিতেই হবে। ইতিহাস কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও বলবে না বলেই আমার বিশ্বাস।
শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়ের পোস্টকে দু'হাত তুলে সমর্থন! এই কথাটাই।
যে কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে যার জেতার সম্ভাবনা বেশি-- সিপিএম বা কংগ্রেস বা আব্বাস বা মমতা তাকেই।
প্রবলেমটা হল আমার কোলকাতার বাড়িতে দু'জন স্থানীয় সিপিএম প্রতিনিধি এসেছিলেন-ভোটার স্লিপ ও চাঁদা। তা বাড়ির লোক সানন্দে দিল। কিন্তু তাঁরা বললেন-- এবার আমরা ক্ষমতায় ফিরে আসার বিশ্বাস নিয়ে সর্বশক্তিতে ঝাঁপাচ্ছি।
এই বিশ্বাস থেকেই তাঁরা নো বিজেপি ক্যাম্পেইনের বিরোধী। ওঁরা চান শুধু বামজোটকে সমর্থনের কথা বলা হোক। তাই রেগে যাচ্ছেন।
আগামী সপ্তাহে উত্তর ভারত থেকে কৃষক মোর্চার প্রতিনিধিরা আসবেন কোল্কাতায় এবং বঙ্গের কয়েকটি কেন্দ্রে। তাঁরা কিন্তু নো ভোট টু বিজেপিই বলবেন। তাঁরা ব্যাখ্যা করবেন কেন এমএসপিকে আইনিভাবে বাধ্যতামূলক করার দাবি কেন বঙ্গেরও ছোট এবং গরীব চাষিদেরও দাবি।
"বাংলায় "বাংলায় বিজেপিকে জেতাবার দায় তাদের নিতেই হবে।"
ও লা, লা......!!
"কারণ বিজেপি’র মতো হিংস্র ও ভয়ানক এই মুহূর্তে কোনও দল ভারতবর্ষে নেই।"
এ-তো-ও-ও-ও দিন লাগল বুঝতে? ব্রিগ্রেডে জ্যোতিবাবুরা যখন বাজপেয়ীর হাত উঁচু করে তুলে ধরেছিলেন তখন থেকে এতদিন।
সিপিএম রাগ করছে কারণ সিপিএম মনে করছে ওটা আসলে তৃণমূলের হয়ে ভোট চাওয়ার আউটফিট।
এইসব ছবি এখন ক্লিশে হয়ে গিয়েছে।
আরো পিছিয়ে গেলে দেখবেন যে এরাই একসঙ্গে জরুরী অবস্থার বিরোধীতা করেছিল। অবিশ্যি আপনি জরুরী অবস্থার সমর্থক হলে অন্য কথা।
কিন্তু পব থেকে একজনই অট্লদাকে মাসীমার মালপো খাইয়ে কেন্দ্রের মন্ত্রী সভায় জায়গা করে নিয়েছিল।
তক্ক করার আগে এট্টু ইতিহাস পড়তে হবে তো!
ঠিক, আর অন্যেরা নিঃস্বার্থে ২ থেকে বিজেপিকে ৮৬-তে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল।
জরুরি অবস্থার সময়ের সঙ্গে ১৯৮৯ সালের লোকসভা ভোটের সময়ের কী কী সমতা ছিল, সেটা একটু ইতিহাস সচেতনরা ব্যাখ্যা করবেন নাকি! ট্রোল নয়, ব্যাখ্যা।
একটা ইস্যুভিত্তিক জোট, আর মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার মধ্যে অনেক তফাৎ। সেটা যদি কেউ না বোঝেন তাহলে তার কথা উপেক্ষা করাই শ্রেয়।
ও হ্যাঁ, মমতা কিন্তু জরুরী অবস্থারও পক্ষে ছিলেন।
সত্যি, আপনি ছাড়া কেউ ইতিহাস পড়েনি। তাই জরুরী অবস্থা যে এনেছিল তারই নাতির হাত ধরে ফ্রন্ট বানিয়েছেন। তখন ঘরে সিপিআই এবং বাইরে সোভিয়েতের ওয়ারশ' প্যাক্টের দেশগুলো ছিল জরুরী অবস্থার সমর্থক। অবশ্য জ্যোতিবাবুর অটলবাবুর হাত ধরে অঙ্গীকারের ছবিটি আজ ফিকে হয়ে গেছে মনে হয়।
কেউ ইতিহাস প্ড়ে , কেউ সেটা ঘেঁটে ঘ করে। সেটা গুরুতে তক্ক করতে এসে টের পেয়েছি।
হ্যাঁ, উপেক্ষা শ্রেয়। মানুষ (ছাগল নয়) তাই করেছে, ২০১১ থেকে।
১৯৬৯ সালে কংগ্রেস ভেঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী বেরিয়ে এসে কংগ্রেস(i) বানালেন বামেদের সাপোর্টে। ১৯৬৯-১৯৭১ এ ইন্দিরা গান্ধীর সরকার গড়া বামেদের সাপোর্ট ছাড়া অসম্ভব ছিল।
তাহলে কি বামেরাই হাতে ধরে পাঁচ বছর পরের (১৯৭৫-১৯৭৭) এমার্জেন্সি ডেকে এনেছিল? অবশ্যই নয়।
তারপরে বামেরা কংগ্রেসের (ইন্দিরা কংগ্রেসের) তীব্র বিরোধিতা করেছে প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে।
এর পরে আবার কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলায় ২০১০ এর পর থেকে।
এই যে হাত মেলানো, হাত ছাড়া, আবার হাত মেলানো - এসব তো বামেদের কাছে নতুন নয়।
মমতা কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে তৃনমূল কংগ্রেস তৈরি করেন। তারাপরে বিজেপির মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। তারপর বিজেপি ছাড়েন। এখন বিজেপিই তার প্রধান বিরোধী।
এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। বামেদের তো নেইই।
জরুরী অবস্থার সময় মমতার বয়েস ২০। তখন কংগ্রেসে মমতার গুরুত্ব কতটুকু? আর ওনার কোন ইডিওলজি নেই। ভিসন নেই।
যাদের ছিল সেই সিপি আই আজ ফ্রন্টের শরিক। আর সেই অত্যাচারের জন্যে দায়ী কংগ্রেস সিপিএমের পর ফ্রন্টের বড় শরিক।
আজ সারা দেশ জুড়ে বিজেপির বিরোধীশূন্য করার এবং বিজ্ঞান বিরোধী মানবাধিকার বিরোধী আগ্রাসী নীতির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে হচ্ছে --যে আসে আসুক, বিজেপি যেন না আসে।
সাধারণ অবস্থা হলে স্বাভাবিক হত রুটি পালটে দাও। যে আসে আসুক, যারা ক্ষমতায় আছে তারা এবার যাক।
রঞ্জন, নাতির হাত ধরার যুক্তিটা সেই নেকড়ে বাঘের মত শোনাল। তুই না করলেও তোর দিদিমা করেছিল।
জরুরী অবস্থার সময় মমতা বালিকা ছিলেন যুক্তিটাও হাস্যকর। তা বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়েও কি উনি বালিকা ছিলেন? বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় যোগদানের ব্যাপারটা তার পরের।
এনিওয়ে, সিপিএম যদি তার সাত পার্সেন্ট ভোট নিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়, এবং মমতা যদি বিজেপি তাড়াতে খুব আন্তরিক হয়, তাহলে মমতার উচিত সিপিএমকে আদর যত্ন করে রাজী করানো। এদিকে ফিশফ্রাই আর ওদিকে সিপিএম কর্মীদের খুন করা কাজ করবে বলে মনে হয়না।
একমাত্র সুরজিৎ ই দেখলাম ঠিকঠাক লিখেছেন।
এবারের ইলেকশনে বাম+কংগ্রেস জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া মুশকিল, কিছু ভোট কাটবে, সেটা কাকে ফেভার করবে বলা যাচ্ছে না, বিজেপির সুবিধে করতে পারে, আবার তৃণমূলের সুবিধেও করতে পারে। আবার তৃণমূল বা বিজেপি কোনো পক্ষ সুইপিং ভোট পেয়ে গেলে তেমন ম্যাটার নাও করতে পারে।
মমতা বিজেপির সাথে জোট করলে বিজেপি সেফ . উনি কংগ্রেস দল করলে ইমার্জেন্সির দায় মুছে যায় . জোট করলেও তাই . খামোখা এত ঝগড়া .
"যে আসে আসুক, বিজেপি যেন না আসে।"
এমন নাটক হচ্ছে যেন মনে হচ্ছে যে পবতে বিজেপিকে বাড়তে দেওয়ার পেছনে তিনোদের কোন অবদান ছিলনা। যারা এখন বামেদের সমর্থনের জন্য লাফাচ্ছে তারা গত দশ বছর ধরে পার্টি অফিস গুলো দখল হওয়ার সময় কি চক্ষু মুইদ্যা ছিল?
ঠিক, এইটা হল আসল রাজনৈতিক যুক্তি। ওরা আমাদের পার্টি অফিস দখল করেছিল, আমরা এমন বাঁশ দেব, এমন লোকেদের সাপোর্ট দেব, যারা ওদের পার্টি অফিস দখল করতে পারে।
এবার আর কোনও রাখঢাক নয়, সরাসরি গেরুয়া শিবিরের হাত ধরলেন জাকির বল্লুক। তাঁর হাতে দলের পতাকা তুলে দিলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ।
জাকির বল্লুক। উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সিপিএম সদস্য। এলাকার দাপুটে নেতা। ভোটের মুখে বিজেপিতে যোগ দিলেন একদা সিপিএমের স্ট্রংম্যান। আমডাঙার সদ্য সিপিআইএম ত্যাগী বিজেপি নেতা জাকির বল্লুক জানান, ‘‘আমার সিপিএম নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। কিন্তু, তৃণমূলকে হঠাতে বিজেপিকে আনা প্রয়োজন। আমার ভাইকে মেরেছে। পঞ্চায়েত আমাদের দখল করতে হবে। না হলে ওঁর আত্মা শান্তি পাবে না। পঞ্চায়েত দখলে আনতে হলে বিজেপিকে দরকার ৷’’
মমতা নিজেই বামেদের মাথা তুলতে দেবে না। বাম শক্তিশালী হলে তার দিন শেষ। তার চাইতে বিজেপি শ্রেয় তিনো দের কাছে। কেননা তারা দুজনে মিলে বাম ও কনগ্রেস কে আটকে রাখতে পারবে। এটা বুঝতে ইতিহাসবেত্তা হওয়ার দরকার নেইl
পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ তে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল, বামফ্রন্ট হয় প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু ১০ বছর বাদে এখন বিজেপি হয়ে গেছে প্রধান বিরোধী দল। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট প্রধান বিরোধী দলের পজিশনটা নিজেদের দখলে রাখতে পারল না। শেষ ভোটের (২০১৯ লোকসভা) পরিসংখ্যান অনুযায়ী বামফ্রন্ট ছিল চতুর্থ পজিশনে। এটা হতাশাজনক। কেরালায় কিন্তু এমনটা হয় নি। কেরালার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বামেদের এটা তফাৎ। এর জন্য তৃণমূল বা মমতাকে দোষ দেওয়াটা শুধু নিজেদের ব্যর্থ্তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়াই নয়, চূড়ান্ত হাস্যকর।
কেননা তারা দুজনে মিলে বাম ও কনগ্রেস কে আটকে রাখতে পারবে।
~~
তিনো (৪৩%) আর বিজেপি (৪০%) মিলে ভোট আটকাবে বাম (৬%) ও কংগ্রেস (৫%) এর।
এই খোরাক পাবলিকগুলো কারা, কোথা থেকে আসে? মাইরি গুরুচন্ডালির পাবলিক পুরো ফ্রেমে বাধিয়ে রাখার মতন।
কেরালায় তিনোমুল জাতীয় কোন দল নেই যারা বিজেপির সাহায্য নিয়ে কংগ্রেসকেও ভেঙ্গে টুকরো করতে পরে। বামেদের নিয়ে খুব হাসুন কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তিনোদের ধান্দাবাজি পাশ কাটালে চলবে না।