এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ভ্রমণ  দেখেছি পথে যেতে  খাই দাই ঘুরি ফিরি

  • বাজার আগুন—৩০ হাজার কিসিমের ফুলের রঙে!

    সুকান্ত ঘোষ
    ভ্রমণ | দেখেছি পথে যেতে | ১২ নভেম্বর ২০২০ | ৩৪৩১ বার পঠিত
  • পর্ব - ১ | পর্ব - ২
    তামাশা-এ-গুলশন, তমন্না-এ-চিদন/বাহার-আফরিনা গুনাহগার হ্যায়ঁ হম! বাগান অবলোকন, বাসনায় চয়ন/বাসন্তী দেবী, পাপী যে এ মন! হায় মির্জা গালিব, বাগান থেকে ফুল ছেঁড়ার অনুশোচনায় এমন কবিতা, ফুল চয়নের এই বহর দেখলে না-জানি কী লিখতেন জনাব! এক ছাদের তলায় ২২০০ বিঘার বাজার—শুধু ফুল আর ফুল। বছরে বিকিয়ে যায় ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি পিস্‌ ফুল! হল্যান্ডের আল্‌সমীরসুকান্ত ঘোষ



    আল্‌সমীর বাজারে গোলাপের মেলা। ছবি সুকান্ত ঘোষ


    এমন কোনো আচ্ছাদিত বাজারে গেছেন কি যার ব্যাপ্তি প্রায় ২০০টি ফুটবল মাঠের সমান? আর যদি বলি এই পুরো বাজারটাই ফুলের, তাহলে কি একটুও অবাক হবেন না? এতেও যদি অবাক না হন তাহলে নীচের বিষয়গুলিও জানিয়ে রাখি:

    এই ফুলের বাজারে যত ঠান্ডা ঘর আছে সেগুলোর সব ক্ষেত্রফল যোগ করলে প্রায় নটি ফুটবল মাঠের সমান হবে। মজার কথা কি জানেন যে দেশে এই বাজারটি বসে, সেই দেশের বাকি সমস্ত রেফ্রিজারেটার এবং ফ্রিজারগুলির ক্ষেত্রফল যোগ করলে এর কাছাকাছি আসবে না!

    এই বাজারের জন্য স্পেশাল ‘জীবজন্তুর’ অ্যাম্বুলেন্স আছে। এই বাজারে বিক্রি হবার জন্য আনা ফুল এবং গাছের ভিতর থেকে মাঝে মাঝেই পাওয়া যায় ট্যারান্টুলা, বা গাছে বাস করা বিষাক্ত ব্যাং, চাইকি মাঝে মাঝে ছয় ইঞ্চি সাইজের গঙ্গাফড়িংও। বাজার থেকে ডাক পড়লেই অ্যাম্বুলেন্স হাজির হয় এদের নিয়ে যাবার জন্য!

    এই ফুলের বাজার এত বড়ো যে এদের নিজস্ব ফায়ার ব্রিগেড থেকে শুরু করে সাইকেল সারাইয়ের দোকান, মাছ বিক্রেতা, চুল কাটার সেলুন সব কিছু আছে। বাজারের ভিতরে যাতাযাতের জন্য সাইকেল ছাড়া ভাবাই যায় না!

    কোন্‌ দেশের ফুলের বাজার এটা? বিশ্বের বৃহত্তম ফুল রপ্তানিকারী দেশ—হল্যান্ড বাদ্য নেদারল্যান্ডস। গত বছর হল্যান্ড বিদেশে ফুল রপ্তানি করেছিল প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার! হ্যাঁ, ঠিকই পড়লেন—৩৫ হাজার কোটি টাকা!

    বাজারটিতে কেবল ফুলের নিলাম হয়। এবং নিলামের পর সেই ফুল সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। পৃথিবীর সর্বমোট ফুল এবং গাছের বাণিজ্যের শতকরা ৬০ ভাগের বেশি এই হল্যান্ডের নিলাম ঘরের মারফত যায়। ফুলের বাহার দেখে আপনার চোখ ধাঁধিয়ে যাবে—হাত নিশপিশ করবে টুক করে কিনে নেবার। কিন্তু সেই বাজার তো নিলাম করার জন্য! ফুল কিনতে হলে আপনাকে বাইরের খুচরো দোকানে যেতে হবে।

    হল্যান্ডের চাষিদের এই ফুলচাষ দিয়ে আসছে অনেক দিন ধরে সুরক্ষা এবং স্বছন্দ। তাই বলাই বাহুল্য নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে এই ফুলচাষিরা সংগঠিত হবে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো আজেবাজে পার্টি-পলিটিক্স করে নয়, ওদের চাষিরা প্রকৃত অর্থে সংগঠিত হয়ে এই ফুল ব্যাবসাকে স্ট্রিম-লাইনড করতে উদ্যোগী হয়। অর্থাৎ, চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে ফুল কেনা থেকে শুরু করে সেই ফুলের বিশ্বের বাজারে ভালো দামে বিক্রি ইত্যাদি।

    আর ফুল ব্যাবসায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কি জানেন? সঠিক ভাবে সঠিক সময়ে ফুলের পরিবহণ। এ তো আর চালের বস্তা নয় যে আপনি গোডাউনে ফেলে রেখে দিলেন! ফুল খুব কম সময়ের জন্য তাজা থাকে—আর অনেক ফুল তাজা থাকা এক বিশেষ তাপমাত্রায়। তাই আপনাকে সেই সব ভেবে নিয়ে ফুলের ব্যাবসার ভিতরে ঢুকতে হবে এবং ফুল নেতিয়ে পড়ার আগেই ক্রেতার আছে পৌঁছে দিতে হবে।



    টিউলিপ ফেরি করি পাড়ায় পাড়ায়! ছবি সুকান্ত ঘোষ


    তো হল্যান্ডের বুকে চাষিদের স্বার্থ রক্ষার্থে যে সংস্থা এই ফুলচাষ ব্যাপারটা দেখে সেটি হল ‘রয়্যাল ফ্লোরা হল্যান্ড’—এই সংস্থা প্রায় ১০০ বছরের প্রাচীন। হল্যান্ডে বড়ো বড়ো সংস্থাগুলোর একটা বাতিকই আছে নামের আগে ‘রয়্যাল’ কথাটা জুড়ে দেওয়া—রাজারাজড়াদের ব্যাপার! যেমন ‘রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইনস্‌’, ‘রয়্যাল ডাচ শেল’ ইত্যাদি।

    এই ‘রয়্যাল ফ্লোরা হল্যান্ড’-এর নিলাম কেন্দ্র (অকশন হাউস) আছে পাঁচটা। তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো এবং সবচেয়ে বিখ্যাত অকশন হাউসটি ‘আলস্‌মীর’ বলে একটা জায়গায় অবস্থিত যা আমস্টারডম শহরের থেকে মাত্র কিছু দূরে। ‘আলস্‌মীর’ বেশ পরিচিত টুরিস্ট স্পট—কিন্তু যেতে হবে আপনাকে বেশ সকাল সকাল। আগে থেকে বুক করে ট্যুর এর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন—গাইড ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবে।

    এই ‘আলস্‌মীর’ নিলাম কেন্দ্রটি এক সুবিশাল জায়গা জুড়ে আছে—প্রায় ২১২ হেক্টর ( প্রায় ২২০০ বিঘা) জায়গা জুড়ে সেই ইন্ডোর মার্কেট। মাথার উপর ছাদ দেওয়া এটাই নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো বাজার!

    এই ‘রয়্যাল ফ্লোরা হল্যান্ড’ কত টাকার বিজনেস করে প্রতি বছরে সেটা তো আগেই লিখেছি। হিসেব মতো এরা বছরে প্রায় এক লক্ষ ১০ হাজার কোটি পিস ফুল/ছোটো গাছ বিক্রি করে। সব চেয়ে বেশি টাকা কামায় এরা গোলাপ এবং টিউলিপ ফুল বিক্রি করে। আর এরা যে পাঁচটি দেশের সবথেকে বেশি ফুল রপ্তানি করে তারা হল—জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি এবং বেলজিয়াম। এবং সব মিলিয়ে এরা কারবার করে প্রায় ৩০ হাজার প্রজাতির ফুল/ছোটো গাছ নিয়ে।

    ‘আলস্‌মীর’ নিলাম কেন্দ্রটি বাইরে থেকে দেখে বিশেষ কিছু মনে হবে না। কিন্তু ভিতরে ঢুকে চক্ষু ছানাবড়া! কি ফুল ছেড়ে আপনি কি ফুল দেখবেন! আর কত অজানা অচেনা ফুল—আপনি রীতিমতো ফুল-বিশেষজ্ঞ হলেও মনে হয় কিছু অচেনা ফুল পেয়ে যাবেন। এখানে বিক্রির দিকে থেকে প্রথম পাঁচটি ফুলগুলি হল—গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, টিউলিপ, লিলি, জারবেরা। চোখ ধাঁধিয়ে দেবে হাইড্রানজিয়া—নানা বর্ণের।

    যাঁরা ফুল ভালোবাসেন তাঁরা নিশ্চিত ভাবেই ফুলের গন্ধও ভালোবাসবেন। তো এই নিলাম কেন্দ্রে ঘুরতে যাবার আগে অনেকেই ভাবেন যে শুধু ফুল দেখে চক্ষু সার্থক করা নয়, ফুলের স্বর্গীয়ে সুগন্ধেও নিমজ্জিত থাকা যাবে! ব্যাপারটা এখানেই একটু জটিল—প্রথমে ঢুকলেই আপনি অবশ্যই ফুলের গন্ধ পাবেন। আপনি হয়তো পৃথক করে শুধু গোলাপের গন্ধ পাবেন না, নাকে আসবে মিশ্র গন্ধ নানা রকমের ফুলের। যারা এখানে নিলামে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা চাইলে গন্ধ শুঁকে দেখতে পারবেন ফুলের—কিন্তু ছোঁয়া যাবে না। আমি নিজে ঘড়ি দেখে নির্ধারণ করিনি—কিন্তু প্রচলিত আছে যে ফুলের গন্ধ আপনি বড়োজোর মিনিট পাঁচেক উপভোগ করতে পারবেন হয়তো! তারপরেই আপনার নাক নিজেকে মানিয়ে নেবে সেই গন্ধের সাথে—তাই আলাদা করে আর তেমন কোনো পৃথক গন্ধানুভূতি থাকবে না।

    সেই নিলামে ঢুকে দেখবেন সব কিছু চলছে কেমন নিখুঁত ভাবে—আমাদের মাছ বা সবজি বাজারের মতো হইচই নেই। বেশিরভাগ জিনিসই হচ্ছে যান্ত্রিক ভাবে। ক্রেট-এ ফুলের ট্রে রাখা—আর তারপর সেই ট্রে এবং বাক্স নিয়ে ফর্কলিফট গাড়ি ঘুরে ঘুরে ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে জিনিস। একটা রেললাইনের মতো ট্র্যাক পাতা আছে, সেই ট্র্যাক দিয়ে ফুলের ট্রে ঢুকে যাচ্ছে অকশন রুমে।



    ফুলের নিলাম। ছবি সুকান্ত ঘোষ



    এই অকশন রুমটি খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখে নিতে পারেন। তবে বোরিং ব্যাপার। সারা পৃথিবীর ট্রেডার্সরা নিজেদের কম্পিউটারের সামনে বসে আছে সেই ঘরে। সামনে গোটাকতক খুব বড়ো বড়ো স্ক্রিন। সেই স্ক্রিনে একের পর এক ভেসে উঠছে সেই ফুলের বিস্তারিত তথ্য যার নিলামের পালা। একজন সামনে দাঁড়িয়ে একটা স্তবক তুলে হয়তো দেখিয়ে দিচ্ছে টাটকা ফুলটা। বাকি সব তথ্য নিলামে যারা অংশগ্রহণ করছে তাদের নিজেদের কম্পিউটারে ভেসে উঠবে। তার পর যে সবচেয়ে বেশি দাম দেবে ফুল তার। গোটা ব্যাপারটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে ঘটে যায়। এক এক ব্যাচের ফুল বলতে গেলে হয়তো ৩০ সেকেন্ডের মতো সময় পায় নিলামে।

    এ তো গেল পাইকারি ফুলের নিলাম কেন্দ্র, সেখানে ইচ্ছে করলেও আপনি ফুল কিনতে পারবেন না নিলাম থেকে। কিন্তু নিজের ইচ্ছামতো ফুল কিনতে চাইলে কী করবেন? আসুন একটু সেই গল্প হয়ে যাক। আপনি যদি ফুল ভালোবাসেন তাহলে হল্যান্ড গেলে দুটি জায়গা আপনার যাওয়া উচিত—এক তো ওই ফ্লোরা হল্যান্ড যার কথা আমি আগেই লিখেছি, আর দ্বিতীয় ‘ক্যুকেনহফ’ টিউলিপ গার্ডেন। ফ্লোরা হল্যান্ড বছরের যে-কোনো সময় আপনি যেতে পারবেন—কিন্তু ক্যুকেনহফ খোলা থাকে বছরের একমাস মাত্র, সেই মার্চ-এপ্রিল-মে মাস নাগাদ। তাই ক্যুকেনহফ দেখতে হলে আপনাকে ওই সময়েই যেতে হবে।

    আপনি যদি ক্যুকেনহফ এবং ফ্লোরা হল্যান্ড দেখে ফেলেন, তাহলে আপনার আর আমস্টারডামের সেই আর-এক বিখ্যাত ‘ভাসমান ফুলের বাজার’ না দেখলেও চলবে। কিন্তু যদি আপনার ক্যুকেনহফ এবং ফ্লোরা হল্যান্ড না দেখার সুযোগ হয়, তাহলে তো আমি বলব, আপনার আমস্টারডামের ফুলের বাজার দিয়ে অবশ্যই ঘুরে আসা উচিত যদি ওদিকে যান। হালকা একটা আইডিয়া পেয়ে যাবেন ফুল ডাচেদের জীবন এবং অর্থনীতিতে কতটা জায়গা জুড়ে আছে। ‘ক্যুকেনহফ’ গার্ডেনের গল্প অন্য একদিন করব, আজকে শুধুই আমস্টারডামের ফুলের বাজারের গল্প।

    আমস্টারডমের ভাসমান ফুলের বাজারের স্থানীয় নাম ‘ব্লোমেনমার্কট’ (Bloemenmarkt) । আপনি যদি ভালো ডাচ্‌ ভাষা জানেন তাহলে এই উচ্চারণ একটু অন্য হবে—কিন্তু আমাদের কাজ চালানোর জন্য এটাই ঠিক আছে। নয় নয় করে এই ফুলের বাজারের বয়স অনেক হয়ে গেল—সেই কোন ১৮৬২ সালে শুরু এই বাজার। ‘সিঙ্গেল’ ক্যানালের ধারেই এই মার্কেট—সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে মিনিট ২৫ হেঁটে গেলেই আপনি পৌঁছে যাবেন সেখানে। আগেকার দিনে আমস্টেল নদী দিয়ে নৌকা ইত্যাদি নিয়ে ফুল চাষিরা এইখানে ফুল বিক্রি করতে আসত। তখন ছিল প্রকৃত ভাসমান বাজার, যেমনটা আপনি আজও থাইল্যান্ড, কাম্বোডিয়া বা ভিয়েতনামের কিছু জায়গায় ঘুরতে গেলে দেখতে পাবেন। আজকের আমস্টারডামের এই ফুলের বাজার ভাসমান বটে, কিন্তু ‘ফিক্সড’ স্ট্রাকচার—মানে পার্মানেন্ট নোঙড় করে দোকানগুলো বসানো আর কি।



    আমস্টারডামের ভাসমান ফুলের বাজার ‘ব্লোমেনমার্কট’


    আর একটা ব্যাপার, যদিও বলা হয় যে এই মার্কেট টুরিস্ট এবং লোকাল লোকেরা ব্যবহার করে এবং জিনিসপত্র কেনে—কিন্তু আজকের দিনে প্রায় ৯৫% যারা এই মার্কেটে যায় তারা টুরিস্ট। খুব খুব কম স্থানীয় ডাচ্‌ লোককে এখানে আপনি জিনিস কেনাকাটা করতে দেখবেন। কারণ একটাই—এখনকার এই ভাসমান ফুলের বাজার শুধুমাত্র টুরিস্টদের কথা ভেবেই পরিচালিত। না হলে ফুল কেনার আরও অনেক ভালো জায়গা আছে আমস্টারডামে—এবং দামেও অনেক সস্তা।

    উইন্ডমিল, কাঠের জুতো এবং টিউলিপ এই তিন জিনিস হল গিয়ে আজকের দিনের হল্যান্ডের সিম্বল বলতে গেলে— বিশেষ করে বিদেশিদের কাছে। আপনি যদি হল্যান্ডের ভিতরে নাও ঢোকেন, যদি আপনি ‘স্কিপোল’ এয়ারপোর্টে প্লেনে ট্রান্সফার করেন, তাহলে সেখানেও লক্ষ করলেই এই তিন জিনিসের আধিক্য দেখবেন। আর তাই সেই ভাসমান ফুলের বাজারে যে আজকাল শুধু ফুল বিক্রি হয় তা নয়—সেখানে আপনি পেয়ে যাবেন সব ধরনের সুভ্যেনিয়ার, চাইলেই সংগ্রহ করে নিতে পারেন।



    টিউলিপ আর টিউলিপ। ছবি সুকান্ত ঘোষ


    ভালো কথা, এই যে আজকের টিউলিপ নিয়ে হল্যান্ডবাসীদের এত গর্ব, সেই টিউলিপ কিন্তু এখানকার স্থানীয় (নেটিভ) ফুল নয়। প্রায় ৪০০ বছর আগে এই টিউলিপ এসেছিল ওটোমন সাম্রাজ্য (আজকের তুরস্ক) থেকে হল্যান্ডে। তবে টিউলিপের সেই রোমাঞ্চকর গল্প লিখব বিস্তারে যখন ক্যুকেনহফ আসবে সামনে। আমি ঠিক সব ফুলের বাংলা প্রতিশব্দ জানি না—তাই ইংরাজি প্রচলিত নামেই লিখি—এই মার্কেটে টিউলিপ ছাড়াও পাওয়া যায় গোলাপ, স্নো-ড্রপ, কার্নেশন, ভায়োলেট, নানা ধরনের অর্কিড, পিয়োন, নার্সিসাস ইত্যাদি। শুধু ফুল নয়, আপনি চাইলে ছোটোখাটো গাছ, ফুল/ফলের বীজ, বা ফুল গাছের বাল্‌ব (কন্দ)—এই সবই কিনতে পারবেন। তবে একটু ভেবেচিন্তে কিনবেন, কারণ অনেক দেশের কাস্টমসে জীবিত গাছপালা আনতে দেয় না বিশেষ ডিক্লারেশন ছাড়া। আচ্ছা আর একটা কথা—হল্যান্ডের টিউলিপ ফুল চাষিরা বেশি অর্থ আয় করে ওই টিউলিপের ‘বাল্‌ব’ বেচে, ফুল বেচে নয়! বরং বেশি টিউলিপ ফুল বড়ো হলে তা কন্দের পুষ্টির অনেকটা নিয়ে নেবে বলে অনেক সময় টিউলিপ ফুল ছেঁটে দেওয়া হয়। মানে ফুলে বেচে উপরি পাওনা আর কি!

    স্থানীয় লোকেরা ফুল কেনে অন্য জায়গা থেকে—সপ্তাহের কিছু নির্দিষ্ট দিনে আমস্টারডামের নানা জায়গায় বসে ওপেন মার্কেট। সেই ওপেন বা ফারমার্স মার্কেটে চাষিরা নিজেরা ভ্যানে করে ফুল বিক্রি করতে আসে। এদের কাছে ফুল অনেক সস্তা আর ফ্রেশ। এ ছাড়া প্রত্যেক স্ট্রিটে আপনি তো ফুলের দোকান পেয়ে যাবেনই। আর এমন কোনো ডাচ লোকের বাড়ি আপনি দেখবেন না যেখানে বড়ো করে বইয়ের আলমারি নেই, আর ডাইনিং বা সেন্টার টেবিলে টাটকা ফুলে সাজানো ফুলদানি নেই!

    আমি প্রত্যেক শনিবার ফুল কিনতাম বাড়ির সামনের সেই শনিবারের মার্কেট থেকে। আমার বাড়ির দিকে থেকে মার্কেটে ঢোকার মুখেই ছিল একটা দোকান, শীত হোক বা গ্রীষ্ম এর দোকানের সামনে সকাল সাতটা থেকে লাইন পড়ে যেত স্থানীয় লোকেদের। আমিও সেখানে গিয়ে লাইন দিতাম—বেলা ন-টার মধ্যে তার সব ফুল শেষ, গাড়ি গুছিয়ে বাড়ি চলে যেত সে। এ ছাড়াও সেই মার্কেটে অন্য দোকান বসত বই-কি। দেরিতে গেলে সেই অন্য দোকান থেকে কিনতে হবে আপনাকে যদি চান। তবে আজ এইটুকু থাক, শনিবারের সেই মার্কেটের গল্প হয়তো অন্য কোনোদিন।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    পর্ব - ১ | পর্ব - ২
  • ভ্রমণ | ১২ নভেম্বর ২০২০ | ৩৪৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শিবাংশু | ১২ নভেম্বর ২০২০ ২০:৩৭100063
  • ফুলের আগুন লাগলো .... দুর্দান্ত , 

  • i | 203.22.***.*** | ১৪ নভেম্বর ২০২০ ১১:৩৯100186
  • উজ্জ্বল একটি লেখা-
    খুব ভাল লাগল। 

  • সম্বিৎ | ১৪ নভেম্বর ২০২০ ১৩:০৩100189
  • গুলিস্তান হমারা।


    হাওড়ার ফুলের হাটের কথা মনে পড়ল। মোল্লার দৌড় আর কদ্দুর হবে!

  • | ১৪ নভেম্বর ২০২০ ২২:১৮100227
  • দারুণ দারুণ। 


    এই ব্লোমেনমার্কেটটাই  শুধু দেখেছি আমি।

  • সুকি | 146.196.***.*** | ১৫ নভেম্বর ২০২০ ০৮:০২100234
  • সকলকে ধন্যবাদ এই ফুলের নিলাম এক দেখার জিনিস এই বটে


    ন্যাড়াদা, মোল্লার দৌড় এই ক্ষেত্রে আটল্যান্টিক এর ওই পাড়! 

  • সম্বিৎ | ১৫ নভেম্বর ২০২০ ০৮:০৭100235
  • মোল্লাটি তো আমি। আমার দৌড় ট্রেডার জো'জ ফ্লাওয়ার সেকশন।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন